বহুকাল বাদে আবার লিখতে বসলাম। প্রায় এক বছর। তাতে ইহজগতের কোনো ক্ষতি হয় নি, খালি আমার লেখার অভ্যেসটা অনেকটাই চলে গেছে। সমস্যা হল, যে যায় সে আর সহজে ফেরে না। যদিওবা ফেরে, যে গেছিল আর যে ফিরল, তারা বোধহয় আর এক থাকে না। হিন্দি সিনেমায় বলে বটে, "সুবাহ কা ভুলা আগর শাম কো ওয়াপস আ যায়ে" ইত্যাদি ইত্যাদি, কিন্তু সকালে যে উড়ে গেছিল, আর যে ফিরে এল বিকেল বেলায়, সেই দুজন কি এক? কে জানে।
এর মাঝখানে লিখতে যে বসি নি এমনটা নয়, কিন্তু লিখে উঠতে পারি নি। ইপ্সিতাদি অনেকবার তাড়া দিলেও কোনো কাজ হয় নি। আজ মনে হল আর কিছু না হোক, অন্ততঃ লিখতে না পারার কারনটুকুন লিখে রাখা দরকার। তারপর বস্টনে বঙ্গে ইতি টানলেও ক্ষতি নেই।
বস্টনের পাট গুটিয়ে দেশে ফিরে এসেছি বেশ কিছুকাল হয়ে গেল। তা এই ফিরে আসার জন্য ভেবেছিলাম পদ্মশ্রী-টদ্মশ্রী কিছু একটা পাবো, কিন্তু হল না। আচ্ছা আপনারাই বলুন, দেশ ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছে বা আশঙ্কা কথায় কথায় প্রকাশ করার জন্য যদি কিরন রাওয়ের বাড়ির সামনে হামলা হতে পারে তাহলে তার উল্টোটা করার জন্য আমায় পুরস্কৃত করা হবে না কেন? আমি জানি হবে, শুধু খবরটা ঠিক জায়গায় ঠিক সময়মত পৌঁছতে পারলেই হবে। তবে সম্ভবত আমার গে-ত্ব প্রকাশ করা চলবে না, কেননা সেক্ষেত্রে বাবা রামদেব আপত্তি তুলতে পারেন। অবিশ্যি রামদেব আপত্তি তুললে শ্রী শ্রী সাপোর্ট করবেন, তাতে আবার মোহন ভাগবতের রাগ হবে, তার উত্তরে দত্তাত্রেয় বলবেন যে হোমোসেক্সুয়ালিটি ক্রাইম নয় তবে মেন্টাল অসুখ আর তাতে সুব্রমনিয়ম স্বামী বলবেন যে না না এটা আসলে জেনেটিকাল ডিসর্ডার। সুপ্রীম কোর্ট বলবে যে এই বিষয়ে পার্লামেন্টে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। তাই শুনে শশী থারুর বিষয়টি পার্লামেন্টে উত্থাপনের চেষ্টা করবেন কিন্তু আমাদের সংসদ আলোচনা শুরুর আগেই আলোচনার প্রস্তাব খারিজ করে দেবে। মজার ব্যাপার হবে এই যে কংগ্রেস সভানেত্রী ও সহসভাপতি মিডিয়ার সামনে ৩৭৭ এর বিরোধী স্টেটমেণ্ট দিলেও অধিকাংশ কংগ্রেস সাংসদ ভোটাভুটির সময় অনুপস্থিত থাকবেন। আর অবশ্যই মনের কথার কথক বাকি বিষয়ের মত এই প্রসঙ্গেও মৌন থাকবেন।
এই নাটক দেখে দেখে হেজে গেলাম মশাই। তাই সে কথা থাক। বরং আমার লিখতে না পারার কারন দিয়েই এই লেখা শেষ হোক।
এলজিবিটি আন্দোলনকে কিছু লোক শহুরে সৌখিনতা মনে করেন। অনেকে মনে করেন, আগে মানুষের খাদ্য-বস্ত্র-চিকিৎসার সমস্যা মিটুক, তারপর না হয় যৌনতা নিয়ে ভাবা যাবে। আবার অনেকের কাছে এটা অধিকারের প্রশ্ন, তার সাথে খাদ্য-বস্ত্র-চিকিৎসার কোনও বিরোধ নেই বরং অধিকারের প্রশ্নে একে অন্যের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে যুক্ত। আমি এই দু নম্বর দলে পড়ি। কখনো মনেহয় নি এলজিবিটি আন্দোলন অন্য কোনও অধিকারের আন্দোলনের থেকে আলাদা। কিন্তু গত একবছর ভারতে ফিরে এই প্রশ্নটা আমাকে বার বার বিব্রত করছে। খুলে বলি।
গত এক বছরে ভারতের বুকে সহিষ্ণুতা নিয়ে অনেক বিতর্ক, অনেক ঝড় বয়ে গেছে। এই বিতর্ক দেখতে দেখতে আমার মনে হয়েছে, ভাগ্যিস আমার নাম আমির খান নয়। তা না হলে আমাকেও পাঁচ পাব্লিকের গাল শুনতে হত। কেন না, লেখাটা এই কলামেই, কয়েক পর্ব আগে আমি-ই লিখেছিলাম ,
"গতবছর ডিসেম্বরে সুপ্রীম কোর্টের রায় আবার নতুন করে আমাকে ক্রিমিনাল করে দিয়েছিল।যবে থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই জেনে এসেছি এই ভারতে আমার বা আমাদের মত মানুষদের কোনো আইনসন্মত জায়গা নেই। বিভিন্ন সময়ে বন্ধুদের মুখে শুনেছি ‘ওইসব করতে হলে আমেরিকায় গিয়ে কর, ইন্ডিয়াতে করলে পুলিশে ধরবে’। তারা অনেক সময়েই কথাগুলো মজা করে বলেছে। আমি জানি, আমার যৌনপরিচয় না জেনেই বলেছে, কিন্তু কতটা ব্যথা দেওয়া সত্যি কথা বলে ফেলেছে সেটা তারা নিজেরাও বোঝেনি। তারা কখনো বোঝেনি, যে দেশকে ভালবাসার শিক্ষা ছোটবেলা থেকে সারাক্ষন দেওয়া হয়, সেই দেশকে ছেড়ে চলে যেতে বললে কতটা আঘাত লাগতে পারে। দেশ মানে তো আর শুধু এক ভূখন্ড নয়, দেশ মানে কখনো ছেড়ে আসা গ্রাম, কখনো স্কুলবাড়ী, কখনো গলির মোড়ে তেলেভাজার গন্ধ, কখনো বা একলা ঘরে আমার অভ্যেসহীন একলা থাকা। দেশ মানে কখনো নিবিড় ভালবাসা, কখনো দুশ্চিন্তা, কখনো একরাশ বিরক্তি। এই সব নিয়েই তো আমার সাথে আমার দেশের লেপ্টে থাকা সম্পর্ক। তাকে অস্বীকার করে কি দূরে সরে থাকা যায়? কে জানে, যখন আমরা কাউকে পাকিস্তানে চলে যেতে বলি, তারও হয়ত একইরকম মনে হয়। মনে হয় সত্যিই একদিন চলে যাব যেদিকে দুচোখ যায়..."
আমি কিরন রাও হলে, শুধু এই মনে হওয়ার জন্যই ফেসবুক আমাকে ছিঁড়ে কুটি কুটি করত, কেউ কেউ আমাকে চড় কষানোর পুরস্কারমূল্য ঘোষনা করে ফেলত আর কারোর কারোর দেশপ্রেমের বন্যাবেগকে সামলানোর জন্য আমার বাড়ির সামনে পুলিশ প্রহরা বসাতে হত। আর সেই পুলিশের ছবি দেখিয়েই আবার কেউ কেউ আমায় বলত, দেখেছিস, তুই আমাদের গালাগাল দিলি আর আমরা তোর সুরক্ষার জন্যই আমাদের করের টাকায় তোর বাড়ির সামনে পাহারা বসালাম। উফফফ, আমরা কি মহৎ। তাই ভাগ্যিস আমি কিরন রাও বা আমির খান নই।
তারও আগে লিখেছিলাম, "গত এক বছরে আমাদের চারপাশে হিংসা ও অসহিষ্ণুতার এক দুর্ভাগ্যজনক ঊত্থান লক্ষ্য করছি। জানি না, সেটা হয়ত সব সময়ই ছিল, হতে পারে আজকাল মিডিয়ার কল্যাণে সেটা বেশি করে নজরে পড়ছে। ধর্ষণ তো কখন যে গা সওয়া হয়ে গেছে, নিজেরাই বুঝতে পারি নি। ... যেকোনো রকম ‘অপর’-এর প্রতি আমাদের হিংসা যেন বেড়েই চলেছে। আর সব থেকে আতঙ্কের বিষয় হল কোন হিংস্রতা আমাদের মনকে নাড়া দেবে তা ঠিক করে দিচ্ছে কর্পোরেট মিডিয়া। কোন ‘অপর’ বেশি আপন আর কোন ‘অপর’-কে উপেক্ষা করা চলে, তা যেন কোনও এক অদৃশ্য সুতোয় নিয়ন্ত্রিত হয়ে চলেছে। যে সময়ে আমাদের আরো ধৈর্য্যশীল, আরো মমতাময় হয়ে ওঠার কথা ছিল, সেই সময়েই আমরা আরো বেশি করে অসহিষ্ণুতার চর্চা করে চলেছি।"
এই সব লেখাগুলো যখন লিখেছিলাম তখনও "অসহিষ্ণুতা" এত বিতর্কিত শব্দ হয়ে ওঠে নি। তখনও "অসহিষ্ণুতা" নিয়ে লিখলে পাব্লিক তেড়ে আসতো না। তখনও মনের কথা লেখা যেত, রেডিওতে শোনার দরকার পড়ত না। আমার ভালোলাগা পাকিস্তানি ছেলেটির কথা অকপটে লেখা যেত, তাতে কেউ আমাকে বরখা দৎ বলত না। তারপর পতিতোদ্ধারিনী নমামি গঙ্গে দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে, রামদেব নতুন ভারতের আইকন হয়ে উঠেছেন, আর চারিদিকে অপরাধী আর দেশদ্রোহীর সংখ্যা বিপজ্জনক ভাবে বেড়ে উঠেছে। তাই এখন মুখ খুলতে হলে ভেবেচিনতে খোলাই ভালো। তবে একটা ভালো কথা হল, অপরাধের সীমানা এখন আর আইনের বইতে আটকে নেই। মোটামুটি যদি উপস্থিত দশটা লোকের মনে হয় যে আপনি অপরাধী তো আপনি অপরাধী। আইন, আদালত কিসসুটির দরকার নেই। অপরাধীর জানারও দরকার নেই কি বা অপরাধ তার, আরাম সে বিচার হয়ে যাবে। সে অপরাধ যদি আইনের বইতে না থাকে, তবুও। সিনেমা হলে জাতীয়সঙ্গীতের সময় বসে ছিলেন, কিংবা ফ্রিজে মাংস রেখেছেন রবিবার সকালে খাবেন বলে, হঠাত করে দেশপ্রেম জাগবে আর আপনি ঘচাং ফু হয়ে যাবেন। অর্থাৎ শুধু স্রোতে ভাসুন, উল্টোদিকে সাঁতার কাটার খবরদার চেষ্টাও করবেন না। "লহরোঁ কে সাথ তো কোই ভি ত্যর লেতা হ্যায়..." ওসব দেশদ্রোহী আমীর খানের সিনেমার ডায়লগ, ভুলেও মনে রাখবেন না।
তাই লিখতে বসলে বার বার মনে হত, যেখানে কি খাব, কি বলব, কি পরব, কি লিখব, কি গাইব, সব ঠিক করে দিচ্ছে সমাজের ধ্বজাধারীরা, সেখানে যৌনতার অধিকার নিয়ে লেখালেখি সত্যিই কি শৌখিনতা নয়? যেখানে সরকারি পুলিশ জনগনের পয়সায় বিরিয়ানির গন্ধ শুঁকে দেখছে তাতে মাতৃমাংস আছে কি না, সেখানে যৌনতার অধিকার যে স্বীকৃতি পাবে না সেটাই তো স্বাভাবিক। বরং উল্টোটা হলেই আশ্চর্য হতে হত।
তাহলে উপায়? কিভাবে হবে প্রতিবাদ? সিরিজ প্রসেসিং না প্যারালাল প্রসেসিং? না কি মাল্টি প্রসেসিং? আগে ধর্মান্ধতা এবং অন্যান্য সামাজিক সমস্যার বিরূদ্ধে লড়াই, তার পর যৌনতার দাবীতে? না কি দুটো প্রতিবাদ চলবে হাত ধরাধরি করে, একে অন্যের পরিপূরক হয়ে? আর না কি চলবে পাশাপাশি কিন্তু ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই আমার লেখা বন্ধ হয়ে গেল। বন্ধ হয়ে গেল কেননা দেখলাম আমার মতের সাথে এলজিবিটি আন্দোলনের যারা অগ্রবর্তী সৈনিক তাঁদের অনেকের মতই মিলছে না। একটা উদাহরন দেই।
একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে, ক্যুইর মানুষজনের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। যখন আই আই টি মাদ্রাজে আম্বেদকার-পেরিয়ার স্টুডেন্ট গ্রুপ-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী হল, তখন আমি এই গ্রুপে একটা পোস্ট করি। তাতে একজন গুরুত্বপূর্ন সদস্য আমাকে বলেন যে আমি যেন অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে পোস্ট না করি। আমি জানতে চাইলাম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ কি করে একটি ক্যুইর গ্রুপের কাছে অপ্রাসঙ্গিক হতে পারে? আমি সত্যিই আশ্চর্য হয়ে গেছিলাম। "ফ্রীডম অফ চয়েস" যদি এলজিবিটি আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয় তাহলে "ফ্রীডম অফ এক্সপ্রেসন" কি করে অপ্রাসঙ্গিক হয়। তাতে আমাকে উনি বললেন যে আমি চাইলে অন্য একটি গ্রুপ খুলে তাতে নেপচুনের আবহাওয়া নিয়ে আলোচনা করতে পারি , কিন্তু এই গ্রুপে তা করা যাবে না। কেন না তাতে এই গ্রুপের শান্তি বিঘ্নিত হবে এবং তাতে করে এলজিবিটি আন্দোলন ডাইল্যুটেড হয়ে যাবে। অর্থাৎ, দুটো আলোচনাই চলতে পারে, কিন্তু পৃথক পৃথক ভাবে, একে অন্যের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে।
এই রকম আরো বহু উদাহরন রয়েছে, বাড়িয়ে লাভ নেই। তবে রামদেবের কথা না লিখলে কি বলতে চাইছি বুঝিয়ে উঠতে পারবো না। রামদেব নিঃসন্দেহে একজন প্রভাবশালী মানুষ যিনি শুধুমাত্র সরাসরি হোমোফোবিকই নন, যিনি সুপ্রীম কোর্টে আমাদের অধিকারের বিরূদ্ধে লড়ছেন, তাঁকে কি করে সাপোর্ট করা যায়? এই কলামের তৃতীয় পর্বে লিখেছিলাম কি ভাবে একটি ফাস্ট ফুড চেনকে আমেরিকায় তাদের হোমোফোবিক মানসিকতার জন্য গনপ্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছিল। "বিভিন্ন কলেজ-ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরা পিটিশন করে তাদের ক্যাম্পাসে মুর্গি-খার দোকান খোলা বন্ধ করিয়েছেন। বহু সমপ্রেমী মানুষ এবং তাদের সমর্থকরা এদের বিভিন্ন দোকানের সামনে ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ব্যারিকেড গড়েছেন। এমনকি বেশ কিছু হেটেরোসেক্সুয়াল ছেলেমেয়েরা শুধুমাত্র প্রতিবাদ করার জন্যই রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাদের সমলিঙ্গের বন্ধুদের ঠোঁটে চুমু খেয়েছেন (ওয়াও)। এদের সবাইকে আমার আনত অভিবাদন। এই সন্মিলিত প্রতিবাদের সামনে দাঁড়িয়েই এই বছরের জুলাই মাসে মুর্গি-খার তরফ থেকে বলা হয়েছে যে তারা সমলিঙ্গে বিয়ের ব্যাপারটা সরকার ও রাজনৈতিক বিতর্কের ওপরে ছেড়ে দিচ্ছেন।" অথচ এখানে মানে ভারতে এসে কি দেখলাম? অন্যদের কথা তো ছেড়েই দিলাম, এলজিবিটি সম্প্রদায়ের বহু মানুষজনও বাবাঞ্জলির ভক্ত। তাদের বক্তব্য, বাবা এবং বাবার প্রোডাক্ট এরা দুই আলাদা অস্তিত্ব। অনেকটা দেহ এবং আত্মার মত। দেহকে আঘাত করা যায় কিন্তু আত্মা ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে। বাবার ওপর রাগ করতে পারি কিন্তু বাবার প্রডাক্টের ওপর নৈব নৈব চ। অর্থাৎ ওই প্রোডাক্ট বিক্রির অর্থে যদি অঞ্জলি বাবা সুপ্রীম কোর্টে ৩৭৭ এর পক্ষে কেস লড়েন তবুও আমি ওই প্রোডাক্টগুলোই কিনব। মেরেছ কলসির কানা, তা বলে কি প্রেম দেব না?
এইসবের মাঝখানে পড়ে আমার ভাবনাচিন্তারা সব কেমন গুলিয়ে যেতে থাকল। মনের মধ্যে প্রশ্ন ওঠা শুরু হল, সত্যিই কি এই বিভিন্ন ধরনের অসাম্যের বিরূদ্ধে আন্দোলন হাত ধরাধরি করে চলতে পারে? কি ভাবে ক্যুইর আন্দোলনে একজন বামপন্থী (মতান্তরে ভাম্প্যান্টি) ও একজন দক্ষিনপন্থীর (মতান্তরে ভক্ত চাড্ডীর) সহাবস্থান হতে পারে? যখন সমকামী আন্দোলনের জন্য কথা বলছি তখন কি আমার অন্য রাজনৈতিক/সামাজিক পরিচয়টাকে সরিয়ে রাখতে হবে? তখন আমার শুধু একমাত্রিক পরিচয়, আমি একজন সমকামি? কিন্ত তাহলে, যে ঘেটোর বিরুদ্ধে এই আন্দোলন, সে গন্ডীই কি নিজের চারিদিকে টেনে নিচ্ছি না আমি? আবার লিঙ্গ-আন্দোলনকে যদি ডান-বামে ভাগ করি, তাহলে কি শক্তিক্ষয় করছি না নিজেদের? "মিনিস্কিয়ুল মাইনরিটি" কি আরো ছোট হয়ে যাচ্ছে না? যদি দেখি ক্যুইর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে শোভা পাচ্ছে স্পন্সর অনুপম খেরের কাট আউট, যিনি আমার মতে জে এন ইউ ইস্যুতে বাকস্বাধীনতার কন্ঠরোধ করতে চেয়েছিলেন, তখন কি করব? যেহেতু ক্যুইর ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল তাই তার সঙ্গে থাকব, না কি সরে আসব, আর না কি অপছন্দটাকে যথাস্থানেভ্য জানিয়ে রেখে চুপচাপ বসে যাব? আর না কি সন্ত টেরেসার মত বলব, টাকায় কোনও দাগ নেই? টাকা কোথা থেকে এল গুরুত্বপূর্ণ নয়, কি কাজে খরচ হল সেটাই আসল?
এই প্রশ্নচিহ্ন কন্টকিত লেখা পড়তে পড়তে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কি রকম ঘেঁটে আছি। এর মধ্যে কি আর লেখা হয়? তাই ভাবলাম এইসব প্রশ্নচিহ্ন দিয়েই এই লেখা শেষ হোক। যদিও শেষ করার কথা লিখছি, কিন্তু মনে হচ্ছে যেন এই তো সেদিন এই লেখা শুরু করলাম। কত কিছুই তো বলা বাকি থেকে গেল। মসালা গ্রুপের লোকেদের সাথে আপনাদের ঠিকভাবে আলাপ করানো হল না, রেখা-আলিশার যমজ বাচ্চাদুটো যে কি মিস্টি কি মিস্টি, সেকথা ভালো করে বলা হল না, শতাব্দি-অপর্না-পামেলার বাড়িতে বসে আড্ডা মারতে মারতে লেসবিয়ান জীবনের যে খুঁটিনাটি জেনেছিলাম তা শেয়ার করা হল না। বলা হল না বস্টনে থাকতে আলাপ হওয়া বিভিন্ন সমপ্রেমি দম্পতিদের কথা, বলা হল না বস্টনের অন্যান্য গে বারের গপ্পো, জানানো হল না সেই সব অনেক এলজিবিটি সিনেমার কথা যা হয়ত বস্টনে না এলে আমার অদেখা থেকে যেত।
যাক গে, সব কথা যে একবারেই বলে দিতে হবে এমন মাথার দিব্যি কি দিয়েছে। অতএব মিলতে হ্যায়, ব্রেক কে বাদ। ভালো থাকবেন।
কেউ কি বাংলা দেশের 'মিটু বিয়ে' কথাটা জানেন? ময়মনসিংহ অঞ্চলে পুলিশের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ বেশি ,তাও সেটি বহু আগে ৭০ এর শেসের দিকের কথা । এখনও নীরবে বাংলা দেশে ঐতিহ্যবাহী এ সম লিঙ্গ যৌনতার প্রাতিষ্ঠানিক রীতিটা রয়ে গেছে ,ওরা এল জি বি টি -কুয়ের বোঝে না বা পস্চিমা আর এনজিও এর মদদ চায় কি?কেননা ,এতে পূর্বে মীমাংসিত বিষয়টা নিয়ে অযথা জল ঘোলা করার চেষ্টা চলছে ,তাও করছেন পশ্চিমের অন্ধ অনুকরণ প্রিয় কিছু অর্বাচীন । আমি ঢাকায় নিম্ন আয়ের মানুষদের ভেতর এদের দেখেছি ,সকলেই সহনশীল ও নিঃস্পৃহ ভঙ্গীতে ব্যাপারটা নিয়ে থাকলেও ,আদি যুগ থেকেই ধর্ম বক্তাদের এরা সমীহ করে গেছে । এ যুগে পর্ণ ফিকেসান ,সাইবার সেক্স ,প্যরাফেলিয়া ইত্যাদি এই বিষয়টাকে ডিসারডার এ পরিণত করে ফেলল বলে মনে হয়। পর্ণাইজেসান-এর মহামারি সুদুর বিস্তারি প্রভাব নিয়ে সমাজ দেহকে কুলসিত করে ফেলবে । যাক বুলবুল ভাজার লেখার সাহিত্য মান বিচারের দায় আমার না হলেও ,সুখ পাঠ্য বলে মনে হয়েছে বাকিটা সময়ই যাচাই করবে । ধন্নবাদ ।
এটা বাংলাদেশ নয়। বর্নফ্রি বাংলাদেশের নয়। বাংলাদেশ ধর্মান্ধ মতবাদের জায়গা।
এখানে দেশ নিয়ে কথা হচ্ছে না , ''মিটু বিবাহ'' প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আসলো । ''বাংলাদেশ ধর্মান্ধ মতবাদের জায়গা''' তাই? আমাদের এখানে কিন্তু কখন কোন ধর্মীয় মৌলবাদী দল রাজনৈতিক বা সামাজিক ক্ষমতা পায়নি ,ভারতের মতন ,তাই না। হ্যাঁ ,বলুন কিছু ধর্ম ভীরু লোক আছেন হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টানের এবং ইন্ডিজেনাস পিপোল দের ভেতর ।তবে বিদেশী চরেরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা চালায় । এদের আমরা আবার বেশ চিনি ,'পশ্চিম বঙ্গীয়' দের মত ।
'মিটু বিবাহ' আবার কী বস্তু? #MeToo যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে গড়ে ওঠা আন্দোলন। যৌন হেনস্থা সম বিষম যে কোনও ওরিয়েন্টেশ্যানের লোকই একে অপরের বিরুদ্ধে করে থাকতে পারে।
আর সমপ্রেম নিয়ে আপনার বক্তব্য অত্যন্ত গোঁড়া o ভুলভাল। এই বিষয়ে পড়াশোনা করুন তারপর ভ্যাড়্ভ্যাড় করবেন নাহয়।