লৌহ-হৃদয় বানিয়া, হিন্দি, আরব এবং মিশ্র-বর্ণের লোকদের সঙ্গে কেনাকাটা করা আর সারাক্ষণ দরকষাকষি করাটাই সবথেকে কঠিন। যেমন ধরুন, আমি জাঞ্জিবারে বাইশটা গাধা কিনব। তাদের দাম চাইবে ৪০ থেকে ৫০ ডলার, তার থেকে বহু তর্কাতর্কি করে আমাকে দামটা ১৫ থেকে ২০ ডলারে নামাতে হবে। এত তর্কবিতর্ক, যুক্তিজাল তো কোনো ভালো কাজেও লাগানো যেত! দরদামের ব্যাপারে গাধা-ব্যবসায়ীরা যেমন, ক্ষুদ্র-ব্যবসায়ীরাও ঠিক তেমনই; এমনকি আলপিনের পাতাও প্রথমে যে দাম বলেছিল তার থেকে অন্তত পাঁচ শতাংশ কম দামে কেনা হয়েছিল, প্রতিটি সওদাতেই তাই অনেক সময় আর ধৈর্য ব্যয় হত।
গাধা কেনার পরে, দেখলাম যে জাঞ্জিবারে মাল বওয়ার উপযুক্ত জিন মেলে না। কিন্তু জিন ছাড়া গাধা দিয়ে কী করব? অগত্যা ক্যানভাস, দড়ি আর কাপড় দিয়ে আমি আর আমার শ্বেত-অনুচর ফারকুহর একটি জিন বানালাম।
জিন তৈরি করতে তিন বা চার ফ্রাসিলার কাপড় আর দশ থান (বোল্ট১) ক্যানভাস লাগবে। প্রথমে কেমন কাজ করে তা বোঝার জন্য নিজেই একটা নমুনা জিন বানালাম। পরীক্ষা করার জন্য একটি গাধাকে সেই জিন পরানো হল আর তার উপর ১৪০ পাউন্ডের মাল চাপানো হল। যদিও গাধাটা—উন্যামওয়েজির২ বুনো জন্তু একটা— প্রচুর দাপাদাপি করল আর ক্ষেপে গিয়ে দমাদ্দম লাথি মারল, মালের একটা দানাও তবু তার জিন থেকে ছিটকে বেরোল না। এইসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে, ফারকুহর একই ধাঁচের পরে আরও একুশটি জিন তৈরি করতে বসল। পশুদের গায়ে ঘষা লেগে ঘা হওয়া ঠেকাতে পশমের গদিও কেনা হল। আমি যে জিনটা বানিয়েছিলাম, তেমন একটা জিন তৈরির বুদ্ধি সম্ভবত এসেছিল ওটাগো জিনের থেকে। এই ওটাগো জিন ব্যবহার হত অ্যাবিসিনিয়ায় ইংরেজ সেনাবাহিনীর মালপত্র পরিবহনের কাজে।
জন উইলিয়ামস শ নামে একজন আমার কাছে কাজের জন্য আবেদন করেছিলেন। সে ইংল্যন্ডের লন্ডনের বাসিন্দা, আমেরিকান জাহাজ নেভাডার তৃতীয় মেট। যদিও তার নেভাডার থেকে ছাঁটাই হওয়ার কারণটা বেশ সন্দেহজনক ছিল, তবুও আমার যা যা দরকার ছিল সে সব গুণই তার ছিল। সে দড়িদড়া বাঁধাছাঁদার কাজে অভিজ্ঞ, ক্যানভাস মাপমতো কাটাকুটি করতে পারে, যথেষ্ট ভালো পথপ্রদর্শক, কাজ করতে প্রস্তুত ও ইচ্ছুক, পেশার প্রতি নিষ্ঠ। তাকে কাজে না নেওয়ার কোনো কারণ দেখিনি। সেই মতো উইলিয়াম এল ফারকুহরের অধীনে, দ্বিতীয় স্থানে। বছরে তিনশো ডলারের কড়ারে তাকে নিয়োগ করলাম।
ফারকুহর একজন দারুণ পথপ্রদর্শক, দুর্দান্ত গণিতবিদও; শক্তিমান, উৎসাহী এবং চালাক; তবে, খুবই দুঃখের কথা যে, সে গভীর পানাসক্ত। আমরা জঞ্জিবারে থাকার সময় প্রতিদিন সে একটা গোলমেলে অবস্থায় থাকত। আর এখানে সে যেরকম অসংযমী জীবনযাপন শুরু করেছিল, আফ্রিকার গভীরে প্রবেশের অল্প পরেই দেখা গিয়েছিল যে তার ফল অতি মারাত্মক।
এরপরেই ব্যস্ত হলাম রাস্তায় পাহারা দেওয়ার জন্য জনা-কুড়ি বিশ্বস্ত লোক খুঁজতে আর তাদের অস্ত্রশস্ত্র, সাজ-সরঞ্জাম জোগাড় করতে। আমেরিকান দূতাবাসের প্রধান দোভাষী জোহরির থেকে জানলাম যে ‘স্পেক’৩-এর ‘বিশ্বস্ত’ লোকজনদের হয়তো খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। আমার আগেই মনে হয়েছিল, সাহেবদের ধরনধারণের সঙ্গে পরিচিত কয়েকজনকে যদি দলে নিতে পারি, আর তারা যদি আরও কিছু ভালো লোককে দলে টানতে পারে, তাহলে বেশ হয়। বিশেষত আমি সিডি এমবারাক মোম্বের কথাই ভেবেছিলাম। এ ‘বোম্বে’ বলেই পরিচিত। এর ধারণা, এর মাথাখানা নিরেট আর হাতগুলো নড়বড়ে। একে সবাই ‘বিশ্বস্তদের মধ্যেও বিশ্বস্ত’ বলে মানেন।
আফ্রিকায় ব্রিটিশ অভিযাত্রী জন হ্যানিং স্পেক (১৮২৭-১৮৬৪)
দোভাষী জোহরির সাহায্যে, আমি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্পেকের দলের পাঁচজনকে কাজে বহাল করলাম। এরা হল উলেদি (ক্যাপ্টেন গ্রান্টের পূর্বতন নিজস্ব খানসামা), উলিমেঙ্গো, বারুটি, আম্বারি, মাবরুকি (মুইনি মাবরুকি—গোঁয়ার মাবরুকি, ক্যাপ্টেন বার্টনের অসন্তুষ্ট প্রাক্তন খানসামা)। উজিজির উদ্দেশ্যে আর-একটি শ্বেতাঙ্গ-অভিযানে যেতে ইচ্ছুক কি না জানতে চাইলে, তারা চটপট উত্তর দিয়েছিল যে স্পেকের যে-কোনো ভাইয়ের সঙ্গেই তারা যেতে প্রস্তুত। এই কথাবার্তার সময় ডা. জন কার্ক, ইংল্যন্ডেশ্বরীর জাঞ্জিবারের রাজদূত, হাজির ছিলেন। তিনি ওদের বললেন যে আমি মোটেই স্পেকের ভাই না; আমি শুধুই স্পেকের ভাষায় কথা বলি। অবশ্য এ কথা শুনে তাদের খুব একটা কিছু এসে যায়নি। তারা জানিয়ে দেয় যে, তারা সানন্দে আমার সঙ্গে যে-কোনো জায়গায় যেতে বা আমার ইচ্ছানুসারে যে-কোনো কাজ করতে প্রস্তুত।
মোম্বে, যাকে তার নিজের লোকেরা বোম্বে বলে ডাকে, তখন পেম্বায় ছিল। পেম্বা জাঞ্জিবারের উত্তর দিকে অবস্থিত একটি দ্বীপ। উলেদি নিশ্চিত যে মোম্বে অন্য কোনো অভিযানের কথা শুনলে খুশিতে লাফিয়ে উঠবে। তাই জোহরিকে বলা হল, আসন্ন সৌভাগ্যের কথা জানিয়ে পেম্বার ঠিকানায় মোম্বেকে চিঠি লিখতে।
চিঠি পাঠানোর পরের চতুর্থ সকালে, সুবিখ্যাত বোম্বে এসে হাজির, আর তার পিছন পিছন স্পেকের ‘বিশ্বস্ত’রা পদমর্যাদা অনুসারে, সার বেঁধে। তার আগের মনিব যে তাকে ‘নিরেট-মস্তক’, ‘কুমির-দেঁতো’ বলতেন, আমি সেই চিহ্ন খোঁজার কিছুটা চেষ্টা করলাম, কিন্তু পেলাম না। দেখলাম, একটি বছর পঞ্চাশেকের রোগা-পাতলা ছোটো মানুষ, একমাথা কাঁচাপাকা চুল, একটা অস্বাভাবিক উঁচু, সরু কপাল, খুব বড়ো হাঁ-মুখ, মুখের মধ্যে ত্যাড়া-ব্যাঁকা আর ফাঁকফাঁক দাঁতগুলো দেখা যাচ্ছে। উপরের পাটির সামনের দাঁতের মধ্যে একটা বিচ্ছিরি ফোঁকর। উগান্ডায় ক্যাপ্টেন স্পেক ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গিয়ে, শাস্তি হিসেবে, ঘুষি মেরে বোম্বের দাঁত ভেঙে দিয়েছিলেন। ক্যাপ্টেন স্পেক যে আসলে তাকে দয়া দেখিয়ে মাথায় তুলেছিলেন, সেটা বক্সিং-ম্যাচে বোম্বের তাঁর বিরুদ্ধে লড়বার দুঃসাহস থেকেই স্পষ্টত প্রমাণিত। তবে এটা আমি জানতে পেরেছিলাম, বেশ কয়েকমাস পরে, যখন আমার তাকে শাস্তি দেওয়ার দরকার পড়েছিল। বোম্বের মুখটা এবড়োখেবড়ো, হাঁ-মুখটা বিশাল বড়ো, চোখগুলো ছোটো ছোটো আর নাকটা চ্যাপটা। তবে প্রথম দেখায় আমার বোম্বেকে বেশ ভালোই লেগেছিল।
সে প্রথমেই বলল, ‘অস্-সালাম আলেইকুম’ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)।
‘ওয়ালেইকুম সালাম (আপনিও শান্তিতে থাকুন),’ আমি জবাব দিলাম, যতটা গম্ভীর হতে পারি ততটাই গম্ভীর হয়ে। তারপর বললাম যে, উজিজি অভিযানে আমার সৈন্যদের দলপতি হিসাবে তাকে আমার চাই। সে বলল, আমি যা বলব তাই করতে, যেখানে যেতে বলব সেখানেই যেতে সে তৈরি। মোদ্দা কথা, চাকরদের জন্য একদম ঠিক ছাঁচ আর সৈন্যদের আদর্শ! সে একটা উর্দি আর একটা ভালো বন্দুক চাইল। আমিও তাতে সায় দিলাম।
অন্য যেসব ‘বিশ্বস্ত’রা স্পেকের সঙ্গে মিশরে এসেছিল, খোঁজখবর নিয়ে জানলাম যে জাঞ্জিবারে মাত্র তাদের মধ্যে ছ-জনই আছে। ফেরাজ্জি, মকতুব, সাদিক, সুনগুরু, মান্যু, মাটাজারি, মাকাটা ও আলমাস মারা গেছে। উলেদি আর মাটামনি আছে উন্যানয়েম্বেতে, হাসান কিলওয়ায় চলে গেছে, আর ফারহানের উজিজিতে থাকার কথা।
ওই ছয় ‘বিশ্বস্ত’-এর প্রত্যেকেই ‘নীলনদের উৎস আবিষ্কারে’ সাহায্য করার জন্য পাওয়া মেডেল এখনও রেখে দিয়েছে। এদের মধ্যে একজন, হতভাগা মাবরুকির কপালে একটা করুণ দুর্ঘটনা ঘটেছিল—আমি ভয় পেয়েছিলাম যে এর ফলে হয়তো তার আর কাজ করার ক্ষমতা থাকবে না।
গোঁয়ার মাবরুকির একটি শাম্বা আছে। শাম্বা হল বাগানওয়ালা বাড়ি। শাম্বাটা তার গর্বের বিষয়। তার এক নিকট প্রতিবেশী সৈয়দ মজিদের সেনাদলে কাজ করে। ঝগড়ুটে মাবরুকির একবার তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। ফলে প্রতিবেশীটি দু-তিনজন সহকর্মীর সাহায্যে হিংসুটে মাবরুকিকে শাস্তি দেয়। এমনই শাস্তি যে কেবল একজন আফ্রিকানই তেমনটা ভেবে উঠতে পারে। তারা মাররুকির কবজি বেঁধে একটা গাছের ডালের থেকে ঝুলিয়ে দেয়। তুমুল অত্যাচার করে প্রতিশোধ নেওয়ার নৃশংস ক্ষিধে মিটিয়ে, মাবরুকিকে ওইভাবে ফেলে রেখে দিয়ে তারা চলে যায়, দুদিনের জন্য। দ্বিতীয় দিনের শেষে, দৈবাৎ তাকে আবিষ্কার করা যায়। সে এক নিদারুণ অবস্থা! হাতগুলো বিশাল হয়ে ফুলে গেছে, একটা হাতের শিরা ছিঁড়ে গেছে, সে হাত দিয়ে আর কোনোদিন কোনো কাজ করা যাবে না। বলাই বাহুল্য যে, সৈদ মজিদ যখন ঘটনাটি জানতে পারলেন, দুষ্কৃতীদের কঠোর শাস্তি দেন। ডা. কার্ক মাবরুকির চিকিৎসা করেছিলেন, একটা হাতকে কিছুটা আগের চেহারায় নিয়ে যেতে পারলেও, দুঃখের কথা এই যে অন্য হাতটার আর কিছুই করা যায়নি। ওই হাতটা চিরতরেই অকেজো হয়ে গেছে।
মাজিদ-বিন-সৈদ। জাঞ্জিবারের প্রথম সুলতান (রাজত্বকাল ১৮৫৬ – ১৮৭০)
যাই হোক, যদিও তার হাত অকেজো আর সে জঘন্য বাজে, দেমাকি লোক, তাও শুধুমাত্র স্পেকের ‘বিশ্বস্ত’ বলেই, মাবরুকিকে আমি কাজে নিয়েছিলাম। কারণ যদি সে আমার পক্ষে কথা বলে, চোখদুটো খুলে রাখে আর ঠিক সময়ে মুখ খোলে, তাহলেই তার থেকে কাজ বার করে নিতে পারব বলে আমার ভরসা ছিল।
বোম্বে, আমার রক্ষীদের দলনেতা, আরও আঠারো জন স্বাধীন মানুষকে আসকারি (সৈনিক) হিসাবে স্বেচ্ছায় আমাদের সঙ্গে যেতে রাজি করিয়েছিল, সে জানত যে এরা কখনও কাজ ছেড়ে পালাবে না। বোম্বে নিজেই এদের দায়িত্ব নিয়েছিল। এদের অত্যন্ত সুন্দর চেহারা, আফ্রিকার বর্বরদের সম্বন্ধে আমার যা ধারণা ছিল, তার থেকে অনেক বেশি বুদ্ধিমান চেহারা। এরা মূলত উহিয়াও থেকে এসেছিল, কেউ কেউ উন্যামওয়েজি থেকে, অন্যরা উসেগুহ্হা ও উগিন্ড থেকে এসেছিল।
ক্রীতদাস পাহারা দিচ্ছে ইউরোপিয়ানদের নিযুক্ত আসকারি সেনা।(ছবি সৌজন্য ওমান ভার্চুয়াল মিউজিয়াম)
প্রতিটি পুরুষের জন্য বছরে ৩৬ ডলার বা মাসে ৩ ডলার করে মজুরি ধার্য করা হয়েছিল। প্রতি সৈনিককে দুশো রাউন্ডের মতো পর্যাপ্ত বারুদ আর গুলি ছাড়াও একটি করে ফ্লিন্টলক গাদাবন্দুক, বারুদ-বওয়ার পাত্র (পাউডার হর্ন), গুলির থলি, ছোটো কুঠার (হ্যাচেট) দেওয়া হয়েছিল।
বোম্বের পদমর্যাদা বিবেচনা করে আর বার্টন, স্পেক ও গ্রান্টকে দেওয়া তার বিশ্বস্ত সেবার কথা মনে রেখে তাকে বছরে ৮০ ডলার দেওয়ার কথা হল। একটা পিস্তল, ছুরি আর ছোটো কুঠার ছাড়াও তাকে একটা ভালো মাজল-লোডিং রাইফেল আর তার মাইনের অর্ধেক অগ্রিম দেওয়া হল। অন্য পাঁচজন ‘বিশ্বস্ত’ যথা আম্বারি, মাবরুকি, উলিমেঙ্গো, বারুটি এবং উলেদিকে বছরে চল্লিশ ডলার দেওয়ার কথা হল। এ ছাড়াও সৈন্য হিসেবে যা কিছু সরঞ্জাম লাগবে সেসবও তাদের দেওয়া হবে।
পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকার বিষয়ে লেখা পূর্ব আফ্রিকা অভিযাত্রীদের সমস্ত বইপত্র মোটামুটি পড়ার পরে, আমার একটা ধারণা জন্মেছিল, ড. লিভিংস্টোনকে খুঁজতে গেলে মোটামুটি কী কী সমস্যা হতে পারে।
এই সমস্ত সমস্যা কীভাবে দূর করা যেতে পারে, মানুষের বুদ্ধিতে যতটুকু কুলোয়, তাই ছিল আমার সর্বক্ষণের ভাবনাচিন্তা আর লক্ষ্য।
আমি নিজেকে প্রশ্ন করছিলাম, ‘উজিজি পৌঁছে, তারপর? তাঞ্জানিকা হ্রদের অন্যপারের দিকে তাকিয়েই থাকব? আমিও কি রাজা কান্নেনার৪ ঔদ্ধত্যের কাছে বা হামেদ বিন সুলায়মের৫ খামখেয়ালিপনার শিকার হয়ে সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছেও হেরে যাব?’ এইসব অনিশ্চয়তার থেকে বাঁচার জন্য নিজের নৌকা নিজেই বয়ে নিয়ে যাব বলে ঠিক করেছিলাম।
ভেবেছিলাম, ‘যদি শুনি লিভিংস্টোন তাঞ্জানিকাতে আছেন, তবে আমি আমার নৌকো নিয়ে তাঁর পিছু নিতে পারব’।