আমরা আধুনিক মানচিত্রের সাহায্যে কিছুটা আন্দাজ করার চেষ্টা করছি হেনরি মর্টান স্ট্যানলে-র যাত্রাপথ। নইলে পাঠকের পক্ষে বোঝাই মুশকিল এইসব কাণ্ড ঘটছে কোথায়। কাজটা কঠিন। কারণ, এই পথে এমন অনেক জায়গার নাম রয়েছে যার আজ কোনো অস্তিত্বই নেই। বাগামোয়ো থেকে ‘উসেগুহহা’-র রাজধানী সিম্বামওয়েন্নিতে পৌঁছে এবারে উগোগো অঞ্চলের চুন্যু (চুন্যো) নামক জনপদের লক্ষ্যে চলেছে স্ট্যানলের কাফেলা। উসেগুহহা বলে কোনো স্থান বা প্রদেশ আজ আর নেই। এমনকি বোঝাও মুশকিল সেই অঞ্চলের বিস্তৃতি ঠিক কী ছিল। তবে সিম্বামওয়েন্নি নামে একটি ক্যাম্প-সাইট এখনও রয়েছে তানজানিয়ার মোরোগোরো শহরের কাছে। আন্দাজ করা যেতে পারে এই সিম্বামওয়েন্নি-র কথাই স্ট্যানলে বলছেন। কাজেই এখানে বর্ণিত যা-কিছু ঘটছে সবই মানচিত্রে নীল বুটি দেওয়া পথের আশেপাশেই।—সম্পাদক
১৪ মে, প্রথমে পাহাড়ের উপর সাত মাইল হাঁটা। সে পাহাড়ের বেলেপাথর এবং গ্রানাইট গঠনের ছবি এখানে-ওখানে মাটির উপরে চোখে পড়ে—এই এলাকার পাথুরে, শুকনো দিকটার ছবি প্রতিফলিত হয়েছে এখানকার প্রতিটি গুল্ম ও উদ্ভিদে। মুকনডোকোয়ার জলপ্রবাহ থেকে প্রায় আটশো ফুট উপরে উঠে এসে, উগোম্বো হ্রদটি দেখতে পেলাম—যে পাহাড়ের মাথা থেকে আমরা এই দৃশ্য দেখছি তার পায়ের কাছে এক জলের ধূসর চাদর বিছানো।
দৃশ্যটি সুন্দর বা শোভন নয়, তবে বেশ চাগিয়ে তোলার মতো; চারপাশের বিবর্ণ দৃশ্যাবলি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া চোখের উপর বেশ একটা স্নিগ্ধ পরশ বুলিয়ে দিল। তা ছাড়া অবশ্য হ্রদের আশেপাশের দৃশ্যাবলি কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়া—মোটেই খুব একটা উত্সাহব্যঞ্জক না; কোনো মাথা-চাড়া দেওয়া পাহাড় নেই, নেই কোনো নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্যও—হ্রদের পশ্চিমপ্রান্তে জলতলের থেকে প্রায় এক হাজার ফুট উঁচুতে একটি ধূসর-বাদামি শিখর, যার নাম থেকেই এই হ্রদের নাম, উগোম্বো—একটা নীচু মেটে-বাদামি রঙের ভাঙা ভাঙা পাহাড়ের শ্রেণি, হ্রদের উত্তরদিক বরাবর মাইল খানেক দূরে সেটা সমান্তরালভাবে বিস্তৃত—হ্রদের পশ্চিম পারের থেকে একটা নীচু সমতল যেটা এমপওয়াপওয়া পর্বতমালা ও মারেঙ্গা এমকালির দিকে চলে গেছে—এইসব ছাড়া আর কিছুই নেই। আমাদের সুবিধাজনক জায়গাটির থেকে এইসব দেখতে পাচ্ছিলাম—আর এই বিশাল মেটে-রঙ্গা এলাকা দেখার পরে শান্ত ধূসর জলের উপর দৃষ্টিপাত করে বেশ আনন্দ পেয়েছিলাম।
হ্রদের সীমারেখা দেখে মনে হল, একদম ওয়েলস বাদ দিয়ে ইংল্যান্ডের মানচিত্র। হ্রদের পশ্চিম প্রান্তটি, যেখানে রাশি রাশি জলহস্তী ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেটা একেবারে যেন নরদাম্বারল্যান্ড; জার্মান সাগরের ধারের সপাট বাঁক আর খাঁড়িওলা উপকূলের সঙ্গে হৃদের উত্তর তীরের প্রভূত মিল; জলাশয়ের সুদীর্ঘ পূর্ব দিকটি কেন্ট থেকে কর্নওয়াল পর্যন্ত বিস্তৃত ইংরেজ উপকূলের প্রায় হুবহু প্রতিলিপি।
হ্রদের পূর্বদিক প্রায় চারশো ফুট উঁচু পাহাড় দিয়ে ঘেরা—সেই পাহাড়ের মাথা থেকে নেমে এসে আমরা উত্তর তীর ধরে চলতে লাগলাম। পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্তে যেতে সময় লাগল ঠিক এক ঘণ্টা তিরিশ মিনিট। এই দিকটাই যেহেতু সবথেকে বড়ো, তাই সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম যে হ্রদটি লম্বায় তিন মাইল আর সবচেয়ে চওড়া জায়গাটা দুই মাইল বিস্তৃত। হ্রদের তীরের চারিদিকে, জলের কিনারা থেকে কমপক্ষে পঞ্চাশ ফুট দূরে, রয়েছে এক চলাচলের অযোগ্য জলাজমি, নলখাগড়া আর শরগাছে বোঝাই—নিশাচর জলহস্তীদের বিশাল বপুর চাপে জলার নরম মাটিতে তাদের চলার পথের দাগ দেখা যাচ্ছে। ‘এমবোগো’ (মহিষ), ‘পুন্ডা-টেরা’ (জেব্রা), ‘টুইগা’ (জিরাফ), শুয়োর, কুদু, হাইরাক্স১ বা শশক ও অ্যান্টিলোপের মতো ছোটোখাটো প্রাণীরাও এখানে রাতের বেলা জল খেয়ে তেষ্টা মেটাতে আসে। জলের উপরে অসংখ্য ধরনের জলচর পাখিরা ঘুরছে, কৃষ্ণ রাজহাঁস, হাঁস, সেক্রেড আইবিস, সারস, গগনবেড় আরও কত; আর শিকারের খোঁজে জলের উপরে চক্কর কাটছে মেছো-ইগল ও বাজপাখিরা, চারদিকে গিনি-ফাউলরা তীব্র শব্দে তাদের বাচ্চাদের ডাকছে, টুকানের২ কর্কশ চিৎকার, পায়রার বকমবকম, প্যাঁচার ‘টু- হুইট, টু-হু’ ডাক। কাছেই লম্বা ঘাসের মধ্যে থেকে ফ্লোরিক্যান৩, বনকুক্কুট এবং মেঠো-মোরগের খরখরে ক্যাঁচর-ম্যাচর শোনা যাচ্ছে।
এখানে দু-দিন থাকতে বাধ্য হলাম। কারণ হিন্দি কুপার জ্যাকো আমার সেরা কার্বাইনগুলোর একটা নিয়ে হাওয়া। সেই সুযোগে হ্রদের উত্তর এবং দক্ষিণ উপকূল ভাগ ভালো করে ঘুরে ফিরে দেখে নিলাম। উত্তর দিকে নীচু, কুঁজ-ওঠা পাহাড়ের পাথুরে পাদদেশে বর্তমান জলতলের থেকে প্রায় পনেরো ফুট উঁচুতে স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট রেখায় তরঙ্গরা নিজেদের অস্তিত্বের পরিচয় রেখে গেছে। পাহাড়ের পায়ের কাছ থেকে ওই সবুজ জলার ধার অবধি ভাঙা ঝিনুকের সরু রেখা দেখা যাচ্ছে—সমুদ্রতটের থেকে ঢেউ সরে গেলে সার বাঁধা ছোটো ছোটো কণার রেখা যেমন পরিষ্কার দেখা যায়। কোনো অভিজ্ঞ ভূতত্ত্ববিদ হয়তো বেলেপাথরের উপর আরও অনেক উঁচুতে, অনেক বেশি তরঙ্গচিহ্ন দেখতে পেতেন; আমার চোখে তো নেহাতই প্রাথমিক ধরনের দাগগুলো ধরা পড়ল। আর এই এলাকায় দু-দিন ধরে চরে বেড়ানোর পর, বিশেষত পশ্চিমাঞ্চলের নীচু সমভূমিতে ঘোরাফেরার পর আমার তো একটুও সন্দেহ নেই যে উগোম্বোর এই হ্রদটি আদতে একসময়ের টাঙ্গানিকার সমান এক বিশাল জলাশয়ের অবশিষ্টাংশ—এ বিষয়ে আরও সুনিশ্চিত হলাম যখন উগোম্বো শীর্ষাভিমুখে অর্ধেক পথ উঠে দেখলাম পাহাড়ের পায়ের কাছে টানা নাবাল জমি, তিরিশ মাইল দূরের এমপাওয়াপাওয়া পর্বতমালার দিকে প্রসারিত আর তারপরে ঘুরে গেছে মারেঙ্গা এমকালির দিকে—প্রায় চল্লিশ মাইল চওড়া এক ছড়ানো এলাকা জুড়ে রয়েছে সে জমি, না-জানি কতটা লম্বা... চোখ বোলাতে বোলাতে ভাবছিলাম আরও বারো ফুট গভীরতা বাড়লে, হ্রদটা তিরিশ মাইল লম্বা আর দশ মাইল চওড়া হয়ে যাবে। আর গভীরতা তিরিশ ফুট বাড়লে এর দৈর্ঘ্য হয়ে যাবে একশো মাইলেরও বেশি আর চওড়ায় পঞ্চাশ মাইল হবে, কারণ পশ্চিমে উগোম্বো আর উত্তরেমারেঙ্গা এমকালি অবধি বিস্তৃত সমভূমিটি এমনই সমতল প্রকৃতির ছিল। এ ছাড়াও, পনেরো মাইল দূরের মাতামোম্বো খাঁড়ির জলের কষাটে স্বাদের সঙ্গে হ্রদের জলের কিছুটা মিল ছিল, চল্লিশ মাইল দূরের মারেঙ্গা এমকালির জলের সঙ্গে তার স্বাদের মিল আরও কম।
ঘাঁটি গেড়ে বসার প্রথম দিনের শেষে হিন্দি কুপার জ্যাকো শিবিরে ফিরে এল, বলে কি না সে নাকি ক্লান্ত হয়ে রাস্তার থেকে কয়েক ফুট দূরে একটা ঝোপের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছিল। তার জন্যে উগোম্বোর ক্ষুধাকাতর প্রান্তরে আমাদের আটকে থাকতে হয়েছে, তাই তাকে এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়ার মতো মনের অবস্থা ছিল না; পরে যাতে সে আর এইরকম আলসেমির মতলব না ভাঁজে, তাই পালাতে-চেষ্টা-করা শিকলে-বাঁধা ভৃত্যদের দলে তাকে ঢুকিয়ে দেওয়াটা দরকার মনে হল।
আরও দুটো গাধা মরে গেল, ফারকুহরের ওজন আর গাধার পিঠে চেপে ক্রমাগত এদিক ওদিক দুলতে থাকার দরুন আর-একটা গাধাও মারা গেল। পাছে কোনো মূল্যবান জিনিসপত্র পেছনে ফেলে যেতে হয় সেই ভয়ে ফারকুহরকে আমার নিজের গাধার পিঠে চড়তে দিতে বাধ্য হলাম—মাবরুকি বার্টনের দায়িত্বে, ত্রিশ মাইল দূরের এমপাওয়াপাওয়া গ্রামের দিকে চলল সে। নিজের কাজ কিছুই নিজে করতে পারে না, গোটা কাফেলার কাছে সে হাসির খোরাক হয়ে উঠেছিল। আধ ডজন লোকের সেবা পাওয়ার জন্য অসুস্থ বাচ্চাদের মতো ক্রমাগত চিৎকার করছে। তার ইংরেজিতে বলা কথা যদি তারা বুঝতে না পারে তাহলে বন্যার মতো যেসব গালাগাল দিতে থাকে তা কোনো খ্রিস্টান ভদ্রলোকের কানে শোনাও পাপ। তৃতীয় কাফেলা ছাড়ার সময় তাদের সঙ্গে রাঁধুনি হিসেবে যাকে পাঠিয়েছিলাম, সেই জাকোকে মেরেধরে, চাবুক পিটিয়ে একশা করেছে যতক্ষণ না সে প্রায় জড়বুদ্ধি হয়ে যায়, ওয়াংওয়ানার সৈন্যরা তো তার উন্মত্ত হ্রিংস্র হাবেভাব দেখে এমন ভয় পেয়েছিল যে তার কাছে যেতেই তারা ভয় পেত। এমনিতেও ফারকুহরের গলাকে কোনো সময়েই ভারী মিঠে বলা যায় না, আর এখন তো দিন-রাত তারস্বরে বেসুরে চেঁচামেচি, ঝগড়াঝাটি করে যাচ্ছে।
ছ-দিন ধরে এইসব বিরক্তিকর ব্যাপার সহ্য করলাম, গাধাগুলো বেঁচে থাকলে হয়তো আরও ক-দিন বেশিই সহ্য করতাম—তবে তারা সবাই দুর্বল, আর ফারকুহরের মতো একজন তাদের পিঠে চাপলে তারা একের পর এক মারা পড়বে—তাই অভিযানকে সর্বনাশের থেকে বাঁচাতে, অনিচ্ছাসত্ত্বেও এই সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য হলাম যে সে সঙ্গে থাকলে আমারও ক্ষতি আর তার নিজের আরোগ্যও অসম্ভব। তার থেকে আমার, তার ও সংশ্লিষ্ট সকলের ভালোর জন্যই তাকে কোনো একটা গ্রামের প্রধান জাতীয় লোকের কাছে রেখে যাওয়া হবে। সঙ্গে মাস ছয়েক চলার মতো কাপড় ও পুঁতিও দিয়ে যাওয়া হবে যাতে সে সুস্থ না হয়ে ওঠা অবধি চলে।
১৫ তারিখে প্রাতঃরাশের সময়, যথারীতি, ফারকুহর ও শকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। তাদের কর্কশ অভিবাদন থেকে স্পষ্ট বুঝলাম যে কিছু একটা হয়েছে—বা একটা কিছু ঘটতে চলেছে। দুজনেরই প্রচণ্ড বিরক্তি-ভরা মুখ—দেখেই মনে হল যে আমার জন্য খুশির খবর নেই। আমার ‘সুপ্রভাত’ জানানোরও তারা কোনো জবাব দিল না। তাদের দিকে সমনোযোগে তাকাতে মুখ ঘুরিয়ে নিল তারা। এতক্ষণে আমি বুঝলাম যে তাদের কথাবার্তা, মাঝেমাঝেই শুনতে পাওয়া উত্তেজিত কণ্ঠস্বর সব আসলে আমার সম্পর্কেই।
তাদের বসতে বললাম।
“সেলিম, ব্রেকফাস্ট আনো,” আমি বললাম।
প্রাতঃরাশ পরিবেশন করা হল, তাতে ছিল একটা ছাগলের এক চতুর্থাংশের রোস্ট, স্ট্যু করা লিভার, এক ডজন মিষ্টি আলু, গরম প্যানকেক ও কফি।
আমি বললাম, “শ, অনুগ্রহ করে মাংস কাটো, আর ফারকুহরকে দাও।”
“এটা কীরকম কুকুরের মাংস?” শ প্রশ্ন করল, এর থেকেও অসভ্য ভাবে কথা বলা কল্পনার বাইরে।
“মানেটা কী?” জানতে চাইলাম।
“মানেটা হচ্ছে এই যে স্যার, আপনি আমাদের সঙ্গে নিতান্তই জঘন্য আচরণ করছেন”, সে উদ্ধতভাবে আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল। “মানে, আমার নিজের কথাই ধরুন না কেন, আপনি আমাকে বড্ড বাজে রকমের খাটাচ্ছেন। ভেবেছিলাম যে প্রতিদিন আমাদের চড়ার জন্য গাধা থাকবে আর খিদমত খাটার জন্য চাকরও থাকবে। তার বদলে এখন কিনা রোজ এই চড়া রোদে হাঁটতে হচ্ছে, যাতে কিনা মনে হচ্ছে এই অভিযানে আসার থেকে বরং নরকে গেলেই ভালো হত; আর এই অভিযানের প্রত্যেকটা লোক যেন এই মুহূর্তেই সেখানে ডুবে যায়—হ্যাঁ সেটাই চাইছি, বুঝলেন!?
“শ ও ফারকুহর, শোনো। উপকূল ছেড়ে আসার পর থেকেই তোমাদের জন্য গাধার ব্যবস্থা ছিল। তোমাদের সেবা করার জন্য চাকর ছিল; অন্য কেউ তোমাদের জন্য তাঁবু খাটিয়ে দিয়েছে; রেঁধে দিয়েছে; আমি যেমন যা খেয়েছি তেমনি তোমরাও আমার সঙ্গে খেয়েছ; আমি যেরকম ব্যবহার পেয়েছি, তোমরাও তাই পেয়েছ। তবে এখন, ফারুকুহরের সব গাধা মারা গেছে; আমার নিজেরও সাতটা গাধা মরে গেছে—বেশ কিছু জিনিস ফেলে দিতে হয়েছে যাতে সবচেয়ে দরকারি জিনিসগুলো বয়ে নিয়ে যাওয়ার গাড়ির ব্যবস্থা করা যায়। ফারকুহর হাঁটতে পারছে না এতই অসুস্থ, তার জন্য গাধা লাগবেই; তাও আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আমাদের সমস্ত জন্তু মারা যাবে; তার পরে হয় মাল বওয়ার জন্য আরও কুড়িজনেরও বেশি কুলি ভাড়া করতে হবে, না হলে গাড়ির জন্য সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। তবুও, এগুলো জেনেও, তোমরা গজগজ করছ, আমারই খাবার টেবিলে বসে আমাকে গালাগাল আর অভিশাপ দিচ্ছ? নিজের জায়গাটা ভালোভাবে ভেবে দেখেছ? কোথায় আছ সেটা বুঝে বলছ? আপনারা জানেন তো স্যার যে আপনারা আমার মাইনে-করা লোক, আমার সঙ্গী নন?”
“চাকর হোক... ’’ সে বলল। তবে শ তার বাক্য শেষ করার আগেই সটান মাটিতে পড়ে গেল।
“তোমাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কি আরও কিছু করতে হবে?” জানতে চাইলাম।
“বলি কী, স্যার,” সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “মনে হয় আমার ফিরে যাওয়াই ভালো। ঢের হয়েছে, আর যাব না আপনার সঙ্গে। আমাকে ছুটি দিন।”
“ওহ অবশ্যই। এই, ওখানে কে আছ? বোম্বে, এদিকে এসো।”
বোম্বে তাঁবুর দরজায় হাজির হলে, তাকে বললাম, “এই লোকটার তাঁবু গুটিয়ে ফেলো (শ-র প্রতি ইশারা করে)। ও ফিরে যেতে চায়। ওর বন্দুক আর পিস্তলটা এখানে আমার তাঁবুতে নিয়ে এসো—এই লোকটাকে তার জিনিসপত্র শুদ্ধু শিবিরের বাইরে দুশো গজ দূরে নিয়ে যাও আর সেখানেই রেখে দিয়ে এসো!”
কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তাঁবু গোটানো হয়ে গেল, তার বন্দুক, পিস্তল পৌঁছে গেল আমার তাঁবুতে। বোম্বে চার জন সশস্ত্র লোককে নিয়ে আমাকে খবর দিতে এল।
“এবার যান স্যার। যাওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা দিলাম। এই লোকেরা আপনাকে শিবিরের বাইরে নিয়ে যাবে, আর সেখানে আপনাকে ও আপনার সব মালপত্র রেখে আসবে।”
সে বেরিয়ে গেল, লোকেরা তাকে পাহারা দিয়ে নিয়ে গেল, তার হয়ে তার জিনিসপত্র বয়ে নিয়ে গেল।
ক্রমশ…