এমন একটি সফরনামা দুনিয়ায় আর আছে বলে আমার জানা নেই। সম্ভবত এ সফর মুসাফিরের স্বতঃপ্রবৃত্ত সফর নয়। প্রায় মাথায় বাজ পড়ার মতো এক নবীন সাংবাদিকের ঘাড়ে চাপানো অ্যাসাইনমেন্ট। সরাসরি তাঁর কাজের জায়গা দ্য নিউইয়র্ক হেরাল্ড নামের ঊনবিংশ শতকের বিখ্যাত মার্কিন সংবাদপত্রের মালিকের পুত্র, হবু মালিকের নির্দেশে। আসল উদ্দেশ্য এক মহা-স্কুপ করে সারা দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দেওয়া। দুঁদে ব্যবসায়ীর মোক্ষম আন্দাজে সে উদ্দেশ্যে ষোলো আনা সফল হয়েছিলেন জেম্স গর্ডন বেনেট (জুনিয়ার)। কী স্কুপ? ১৮৪১ সালে ডেভিড লিভিংস্টোন (১৮১৩ – ১৮৭৩)১ আফ্রিকা অভিযান শুরু করেছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার আর খ্রিশ্চান ধর্মের প্রচার, এই দুই মূল উদ্দেশ্য নিয়ে।
ডেভিড লিভিংস্টোন। ১৮৬৪ সালে ছবিটি তোলেন টমাস অ্যানন।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত আফ্রিকা গ্রাস করেছিল তাঁকে। ইউরোপবাসীর কাছে একেবারে রহস্যাবৃত এই বিপুল মহাদেশকে জানাই হয়ে উঠল তাঁর নেশা। অভিযানের পর অভিযান। শেষে তাঁর মাথায় সওয়ার হল নীল নদের উৎস সন্ধানের ভূত। ততদিনে তিনি ব্রিটিশ জাতীয় হিরো, জীবন্ত কিংবদন্তি। ১৮৬৬ সালে শুরু হল নীল নদের উৎসের লক্ষ্যে অভিযান। ক্রমে বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে কমতে লাগল তাঁর যোগাযোগ। আর ১৮৬৯ সালের ৩০ মে একটা চিঠির পর থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। হইহই পড়ে গেল ইওরোপ আর মার্কিন মুলুকে। দুনিয়া লেগে পড়ল তাঁকে খুঁজতে। ব্রিটেনের রয়্যাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি নিজেই একটা অভিযান চালাল লিভিংস্টোনের খোঁজে। সব বৃথা। রটে গেল তিনি মৃত। কাজেই এই কিংবদন্তিকে খুঁজে বার করার মতো স্কুপ আর কী হতে পারে! এইখানেই হেনরি মর্টন স্ট্যানলে-র সফরনামার শুরু।
এ সফরনামা রোমহর্ষক। এবং তার থেকেও অনেক বেশি কিছু। ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগ— ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ইঞ্জিন ছুটছে দুর্বার গতিতে, এ সফরনামা আফ্রিকায় সেই ঔপনিবেশিক প্রসারের এক অনবদ্য দলিল। কিন্তু এ সফরনামা তার থেকেও আরও অনেক বেশি কিছু। বেশি কিছু এই কারণেই যে এ সফরনামা ইংরেজ শ্বেতাঙ্গ অভিজাত শ্রেণির বিশ্ববীক্ষণ আর একেবারে তার উলটো মেরুতে দাঁড়ানো এক ব্রিটিশ শ্বেতাঙ্গ যুবার বিশ্ববীক্ষণের মধ্যে সংঘাতের এক আশ্চর্য ছবি। যে ছবির পাঠের চাবিকাঠি আছে হেনরি মর্টন স্ট্যানলে নামের মানুষটার ব্যক্তিগত জীবনের অদ্ভুত কাহিনিতে।
হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। ১৮৭০-এর দশকের ছবি। (সৌজন্য ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ ওয়েল্স)
এই সাংবাদিকের নাম হেনরি মর্টন স্ট্যানলে নয়। জন রোল্যান্ড্স। জন্ম ১৮৪১ সালে ২৮ জানুয়ারি। তাঁর ‘বার্থ সার্টিফিকেট’-এ ছাপ মারা আছে ‘বাস্টার্ড’। কারণ কেউ আজও সঠিক জানে না তাঁর বাবা কে ছিলেন। জন্মের সময় তাঁর অবিবাহিত মা এলিজাবেথ প্যারি-র বয়স ছিল আঠারো। বাবা, সার্টিফিকেট বলছে, জন রোল্যান্ড্স। জন্মের পরেই মা শিশুটিকে কার্যত পরিত্যাগ করেন। পাঁচ বছর পর্যন্ত সে বড়ো হয় তাঁর নিম্নবিত্ত কসাই দাদুর স্নেহে। তাঁর মৃত্যুর পর অনাথ-আশ্রমে। কেমন কেটেছিল তাঁর কৈশোর? বিতর্ক আছে বিস্তর। অন্তত একজন ইতিহাসকারের মতে, সে কিশোরকে ক্রমাগত ধর্ষণ করত অনাথ-আশ্রমের হেডমাস্টার। পনেরো বছর বয়সে অনাথ-আশ্রম থেকে ছুট। তিন বছর যে কী করে কাটল ছেলেটির কেউ তেমন নিশ্চিত নয়। ১৮৫৯ সালে আঠেরো বছরের জন রোল্যান্ড্স লিভারপুল জাহাজঘাটা থেকে ‘ক্যাবিন বয়’ হয় চেপে পড়ল জাহাজে। সম্পূর্ণ অজানা, অচেনা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, ন্যূনতম পরিচিতিহীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে। নামল নিউ ওর্লিয়ন্সে।
তারপর? তারপর, লিখছেন স্ট্যানলে তাঁর আত্মজীবনীতে, দেখা হয়ে গেল এক ভারী উদার বিত্তবান ব্যবসায়ী হেনরি হোপ স্ট্যানলের সঙ্গে। তাঁর স্নেহের তত্ত্বাবধানেই কাটল কিছু বছর। কৃতজ্ঞ রোল্যান্ড্স নিয়ে নিলেন তাঁরই নাম। সম্পূর্ণ বকোয়াস—বলছেন তাঁর জীবনীকারেরা। এমন কিছুই ঘটেনি। কী ঘটেছিল? পরের অন্তত বছর দুয়েক নিয়ে নানা ইতিহাসকারের নানা মত। তারপর আগুন লাগল মার্কিন দেশে। ১৮৬১ থেকে ১৮৬৫। ভয়ংকর গৃহযুদ্ধ। স্বাধীনতাকামী ও দাসপ্রথা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর কনফেডারেট সেনা আর দেশের ঐক্যকামী ও দাসপ্রথা বিরোধী ইউনিয়ন সেনার মধ্যে। ভবঘুরে স্ট্যানলে লড়েছিলেন দু-পক্ষের হয়েই! ১৮৬৪-তে যোগ দিলেন মার্কিন ইউনিয়ন নৌসেনায়। ১৮৬৫-র ১০ ফেব্রুয়ারি তাঁর জাহাজ যখন নিউ হ্যাম্পশায়ার পৌঁছোল স্রেফ পালিয়ে গেলেন তিনি। ফের ভবঘুরে।
১৮৬৭-তে হয়ে গেলেন দ্য নিউ ইয়র্ক হেরাল্ডের সাংবাদিক। আর সেই সূত্রেই এই অ্যাডভেঞ্চার, যে সফর তাঁর প্রথম আফ্রিকা-যাত্রা। বিপুল খ্যাতি। ধরে গেল আফ্রিকার নেশা। একের পর এক অভিযান। হয়ে উঠলেন, আজকের তুমুল জনপ্রিয় সফরনামা কলমচি পল থেরু-র ভাষায়, ‘probably the greatest explorer ever to set foot in Africa’ (Stanley, I Presume. The New York Times. 30 September, 2007)। ব্রিটিশ দরবারের ‘নাইট’ খেতাব পেলেন। কিন্তু পেলে কী হবে। ব্রিটিশ অভিজাত শ্রেণি কিছুতেই হজম করতে পারছিল না এই ‘বাস্টার্ড’ লোকটার এমন উত্থান। দাসব্যাবসা, অফ্রিকানদের গণহত্যা, আফ্রিকান মহিলাদের ওপর যৌন অত্যাচার—অভিযোগের পর অভিযোগ। স্ট্যানলের সব থেকে বিখ্যাত জীবনীকার টিম জিল দেখিয়েছেন কীভাবে ব্রিটিশ সমাজের হর্তাকর্তারা তাঁর পিছনে লেগে পড়েছিল। যেসব অভিযোগের আগুনে ঘি ঢালছিলেন স্ট্যানলে প্রায়শই নিজে ‘জাতে ওঠার’ মর্মন্তুদ চেষ্টায়, নিজের লেখালিখিতে নানা গুলগপ্পো ছড়িয়ে।
এই সফরনামাতেও আছে তেমন অনেক অসত্য, যেগুলি চেষ্টা করেছি এখানে টীকা দিয়ে চিহ্নিত করতে। তবু, এই কাহিনি এক অদ্ভুত ইতিহাসের দলিল, সমাজের দলিল, আর আমার কাছে যা সব থেকে আকর্ষণীয়, এক আশ্চর্য মানুষের মনের নিরন্তর টানাপোড়েনের, অন্তর্দ্বন্দ্বের দলিল।
কেমন করে খুঁজে পেলাম লিভিংস্টোনকে
হেনরি মর্টন স্ট্যানলে
পর্ব ১।২
১৮৬৯ সালের ১৬ই অক্টোবর। সদ্য ভ্যালেন্সিয়ার মৃত্যুযজ্ঞ থেকে ফিরেছি। মাদ্রিদে আছি৪। ক্যাল ডি লা ক্রুজের বাড়িতে সকাল দশটায় জ্যাকোপো আমাকে একটা টেলিগ্রাম এনে দিল। তাতে লেখা, ‘প্যারিসে আসুন। জরুরি কাজ আছে।’ পাঠিয়েছেন জেমস গর্ডন বেনেট, জুনিয়র। দ্য নিউ ইয়র্ক হেরাল্ডে-র নবীন ম্যানেজার।
ঝটপট আমার তিনতলার ঘরের দেওয়াল থেকে ছবিগুলো নামিয়ে ফেলা হল। বই, স্যুভেনির সব ট্রাঙ্কে ঢুকে গেল। তাড়াহুড়ো করে জামাকাপড় জড়ো করা হল, তার কিছু আধা-ধোয়া, কিছু বা আধা-শুকনো অবস্থায় দড়ি থেকে তুলে আনা। কয়েক ঘণ্টার হুড়মুদুড়ুম যুদ্ধের পর বাঁধাছাদা শেষ হল। দামড়া চামড়ার ব্যাগটায় লেবেল লাগানো হল, ‘প্যারিস’।
মাদ্রিদ থেকে হেনডায়ের এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়ে বেলা তিনটের সময়। বন্ধুদের বিদায় জানানোর জন্য হাতে তখনও যথেষ্ট সময়। আমার এক বন্ধু থাকে ছয় নম্বর ক্যালেগোয়ার চারতলায়। লন্ডনের অনেক দৈনিকপত্রই তাঁর পাঠানো খবর ছাপে। তাঁর ছেলেমেয়েদের আমার বেশ পছন্দ। ছোট্ট চার্লি আর উইলি তো খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমার খুব বন্ধু হয়ে উঠেছিল। তারা আমার অভিযানের গল্প শুনতে ভালোবাসে। আমিও ওদের সঙ্গে গল্প করতে খুব ভালোবাসি। কিন্তু এবার তো বিদায় বলতে হবে।
মার্কিন সরকারের প্রতিনিধির দপ্তরেও আমার বেশ ক-জন বন্ধু আছেন। তাঁদের কথাবর্তা শুনলে মনে ভক্তি জাগে। সেসব আলাপ-আলোচনাও আচমকাই বন্ধ হল। তাঁরা বললেন, ‘চিঠি লিখো। তোমার খবরাখবর পেলে ভালো লাগবে।’ আমার সদা-ছুটতে-থাকা সাংবাদিকের জীবনে এমন সব কথা যে কতবার শুনেছি আর এই ঠিক এই রকমই বন্ধুবিচ্ছেদের যন্ত্রণা সহ্য করেছি!
তবে আমার মতো সাংবাদিকের জীবনে এসব কষ্ট গা-সওয়া। এরিনার মধ্যে গ্ল্যাডিয়েটর যেমন যুদ্ধের জন্য সদাপ্রস্তুত, সাংবাদিককেও তেমনই সবসময় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকতে হয়। শিউরে ওঠা বা ভয় পাওয়াও তার চলে না। গ্ল্যাডিয়েটর যেমন বুক পেতে ধারালো তরবারির আঘাত গ্রহণ করে, তেমনই উঠতি সাংবাদিক বা বিখ্যাত সংবাদদাতারা হুকুম মেনে নেয়, এমনকি সে হুকুম যদি তাঁকে সর্বনাশের পথে ঠেলে দেওয়া তাও। যুদ্ধই হোক বা ব্যাঙ্কোয়েট, তাঁর মন্ত্র একটাই—তৈরি হও আর চলো।
বেলা তিনটের মধ্যে বেরিয়ে পড়লাম। বায়োনে কয়েক ঘণ্টার জন্য থামতে বাধ্য হয়ে ছিলাম। প্যারিস পৌঁছাতে পৌঁছাতে পরের রাত। সোজা গ্র্যান্ড হোটেলে গিয়ে মি বেনেটের ঘরের দরজায় কড়া নাড়লাম।
আওয়াজ শোনা গেল, ‘ভিতরে আসুন।’ ঢুকে দেখি মি. বেনেট বিছানায়। জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কে?’
বললাম, ‘আমার নাম স্ট্যানলে’।
‘ও, হ্যাঁ! বসুন, বসুন। আপনার সঙ্গে আমার খুব জরুরি কাজ আছে।’
তাঁর ঘরে পরার জামাটা গায়ে গলিয়ে নিয়ে মি. বেনেট জানতে চাইলেন, ‘লিভিংস্টোন কোথায়? আপনার কী মনে হয়?’
জেম্স গর্ডন বেনেট, জুনিয়ার। ( সৌজন্য হার্ভার্ড থিয়েটার কালেকশন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়)
‘সত্যিই জানি না, স্যার।’
‘আপনি কি মনে করেন যে তিনি বেঁচে আছেন?’
‘থাকতেও পারেন, আবার নাও থাকতে পারেন!’ আমি উত্তর দিলাম।
‘শুনুন, আমার মনে হয়, তিনি বেঁচে আছেন, আর তাঁকে খুঁজেও পাওয়া যাবে। আর তাঁকে খোঁজার জন্য আপনাকে পাঠাব।’
‘কী?!’ আমি বললাম, ‘আপনি সত্যিই ভাবছেন যে আমি ডা. লিভিংস্টোনকে খুঁজে বার করতে পারব? মানে আমাকে মধ্য আফ্রিকায় যেতে বলছেন?’
উনি খানিক ভেবেচিন্তে উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ; সেটাই চাইছি। আপনি যান। উনি কোথায় আছেন বা ওঁর খবরাখবর জানুন, তারপর ওঁকে খুঁজে বার করুন। আর কে জানে! হয়তো বুড়ো মানুষটার কোনো প্রয়োজনও থাকতে পারে। এমন ভাবে তৈরি হয়ে যান, যাতে দরকারে ওঁকে সাহায্য করতে পারেন। আপনি অবশ্যই নিজের পরিকল্পনা মতোই চলবেন আর যেমন যেমন মনে হবে তাই করবেন—তবে লিভিংস্টোনকে খুঁজে বের করতে হবে!’
একটা লোক যে কিনা মারা গেছেই বলে বেশির ভাগ লোক ভাবে, তাঁকে খোঁজার জন্য মধ্য আফ্রিকায় পাঠানো হচ্ছে আর-একজনকে! আর কী শান্ত ভাবেই না সেটা বলা হচ্ছে! আমি তো হাঁ! বললাম, ‘এই একটা অভিযানের জন্য যে কী প্রচুর টাকা খরচ হবে, সেটা ভালো করে ভেবে দেখেছেন তো?’
‘কত খরচ হবে?’ তিনি আচমকা জিজ্ঞাসা করলেন।
‘বার্টন আর স্পেক৫ যখন মধ্য আফ্রিকায় গিয়েছিলেন, তখন খরচ হয়েছিল ৩০০০ থেকে ৫০০০ পাউন্ড। মনে হয় না এটা ২৫০০ পাউন্ডের কমে করা যাবে।’
‘বেশ, শুনুন। আপনি এখন এক হাজার পাউন্ড তুলুন। সেটা শেষ হয়ে গেলে আবার এক হাজার পাউন্ড তুলুন। সেটা খরচ হয়ে গেলে আবার হাজার পাউন্ড তুলুন। সেটাও ফুরোলে আরও এক হাজার তুলুন এইভাবে চলুক। মোদ্দা কথা, লিভিংস্টোনকে খুঁজে বার করুন।’
জানতাম, মিস্টার বেনেট একবার কিছু ঠিক করলে, সহজে তাঁকে সেখান থেকে নড়ানো যায় না। তাই তাঁর হুকুমে অবাক হলেও ঘাবড়ে যাইনি। তবু এও ভাবছিলাম যে এটা এমন একটা বিশাল ব্যাপার, উনি হয়তো সব ভালো-মন্দ দিকগুলো বিবেচনা করে উঠতে পারেননি। তাই বললাম, ‘শুনেছি যে আপনার বাবা মারা গেলে নাকি আপনি ‘হেরাল্ড’ বিক্রি করে দেবেন আর ব্যাবসা থেকে ছুটি নেবেন।’
‘ভুল শুনেছেন, নিউ ইয়র্ক শহরে দ্য নিউ ইয়র্ক হেরাল্ড’ কিনে নেওয়ার মতো যথেষ্ট টাকা নেই। আমার বাবা এটাকে, এ কাগজকে দারুণ সম্মানীয় একটা জায়গায় পৌঁছিয়ে দিয়েছেন, আমি একে আরও বড়ো করে তুলতে চাইছি। আমি একে একটা প্রকৃত অর্থে সংবাদপত্র হিসেবে খাড়া করতে চাই। বিশ্বের মানুষের কাছে আকর্ষণীয় যে-কোনো খবরই এখানে প্রকাশ হবে, তাতে যাই খরচ হোক না কেন।’
‘আর আমার আর কিছু বলার নেই। আপনি কি চান যে ড. লিভিংস্টোনের খোঁজ করতে আমি সোজা আফ্রিকা যাই?’
‘না! আমি চাই, আপনি প্রথমে সুয়েজ খালের উদ্বোধনে যান৬, তারপরে নীল নদ ধরে চলুন। শুনেছি বেকার৭ উত্তর মিশরের দিকে যাচ্ছেন। তাঁর অভিযান সম্পর্কে যতটা পারেন খবর নিন। যত নদী ধরে এগোবেন, তত পর্যটক-পসন্দ জিনিসপত্রের বিশদ বিবরণী পাঠাতে পারবেন। আর তারপরে দক্ষিণ মিশরের উপর একটা সত্যিকারের কাজে লাগার মতো গাইডবই লিখে ফেলুন। সেখানে দেখার মতো জিনিস কী কী আছে আর সেগুলো কীভাবে দেখা যায় সেসব জানান।
‘তারপরে আপনি জেরুজালেমেও যেতে পারেন। শুনছি ক্যাপ্টেন ওয়ারেন৮ সেখানে কিছু আকর্ষণীয় আবিষ্কার করেছেন। তারপরে কনস্ট্যান্টিনোপল যান, এবং খিদিভ৯ এবং সুলতানের মধ্যের ঝামেলাটা নিয়ে আরও খবর করুন।
‘তারপরে—দাঁড়ান, আমাকে ভাবতে দিন—আপনি ক্রিমিয়াও যেতে পারেন, ওখানকার পুরোনো যুদ্ধক্ষেত্র ঘুরে নিন। তারপরে ককেশাস পর্বত পেরিয়ে চলে যান কাস্পিয়ান সাগরে। সেখানে শুনেছি খিভার১০ উদ্দেশ্যে একটি রুশ অভিযান চলছে। সেখান থেকে আপনি পারস্য হয়ে ভারতে চলে যেতে পারেন। পারসেপোলিসের থেকে একটি আকর্ষণীয় চিঠি লিখতে পারেন।
‘আপনার ভারতে যাওয়ার পথের খুব কাছেই পড়বে বাগদাদ; ধরুন আপনি সেখানে গেলেন আর ইউফ্রেটিস উপত্যকার রেলপথ নিয়ে কিছু লিখলেন। তারপর, ভারত হয়ে আপনি লিভিংস্টোনের পিছনে ধাওয়া করলেন। হয়তো ততদিনে আপনি শুনতে পাবেন যে সেইসময়ে লিভিংস্টোন জাঞ্জিবার যাওয়ার পথে। তবে তা যদি নাও হয়, তাহলে আরও আফ্রিকার ভিতরে যাবেন আর তাঁকে খুঁজে বার করবেন। যদি বেঁচে থাকেন, তাহলে তিনি কী কী আবিষ্কার করলেন সেই সব খবর নিয়ে আসবেন। আর যদি তিনি মারা গিয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর মৃত্যুর যতরকম প্রমাণ জোগাড় করা সম্ভব সব আনবেন। ব্যস এইটুকুই। শুভরাত্রি। ঈশ্বর আপনার সহায় হন।’
‘শুভরাত্রি, স্যার,’ আমি বললাম, ‘মানুষের সাধ্যে যা কুলায় সেই অবধি আমি চেষ্টা করব। আর এটা এমনই একটা কাজ যে ঈশ্বর আমার সঙ্গেই থাকবেন।’১১
দারুণ উত্তেজনাময় একটি ধারাবাহিক। বিচ্ছিন্ন ভাবে পড়ছি
অপূর্ব। ধন্যবাদ।
পড়ছি
শ্রী হাজরার প্রতি -
রাজা লিওপোলডের হয়ে কংগোর জমি দখল করেছিলেন সট্যানলী । সেটা অপপ্রচার বা অসত্য নয়! তারপর যা হয় সকলের জানা। লিওপোলড একটা দেশের দখল নিলেন যার আকৃতি বেলজিয়ামের ৮০ গুন। পৃথিবীর ইতিহাসে একটা মানুষ এই প্রথম দেশ দখল করলেন। সহযোগিতায় হেনরী মরটন সট্যানলি ।
রবারের খোঁজে কতজন মারা গেছেন জানা যায় না । হয়ত তার সংখ্যা কোটির কাছাকাছি ।