আমরা আধুনিক মানচিত্রের সাহায্যে কিছুটা আন্দাজ করার চেষ্টা করব হেনরি মর্টান স্ট্যানলে-র যাত্রাপথ। কাজটা কঠিন। কারণ, এই পথে এমন অনেক জায়গার নাম রয়েছে যার আজ কোনো অস্তিত্বই নেই। এই অধ্যায়ে বর্ণিত অভিযানের সেই অংশ যেখানে বাগামোয়ো থেকে ‘উসেগুহহা’-র রাজধানী সিম্বামওয়েন্নিতে পৌঁছোনোর কথা বলা হয়েছে। উসেগুহহা বলে কোনো স্থান বা প্রদেশ আজ আর নেই। এমনকি বোঝাও মুশকিল সেই অঞ্চলের বিস্তৃতি ঠিক কী ছিল। তবে সিম্বামওয়েন্নি নামে একটি ক্যাম্প-সাইট এখনও রয়েছে তানজানিয়ার মোরোগোরো শহরের কাছে। আন্দাজ করা যেতে পারে এই সিম্বামওয়েন্নি-র কথাই স্ট্যানলে বলছেন। সম্পাদক
‘সোফারি— সোফারি লিও! পাকিয়া, পাকিয়া!’ চতুর্থ দিনের সকালে কিরণগোজি প্রফুল্ল কণ্ঠে হেঁকে উঠল, — ‘যাত্রা শুরু—আজ যাত্রা শুরু! বেরিয়ে পড়ো!—বেরিয়ে পড়ো!’ আমার ব্যক্তিগত ভৃত্য সেলিমের কণ্ঠেও সেই কথাই প্রতিধ্বনিত হল। আমরা এই দিনটিতে যাত্রা শুরু করতে স্থিরসংকল্প ছিলাম। সবাইকে তাড়া দিয়ে কাজে লাগালাম, তাঁবু খোলার কাজে সোৎসাহে নেমে পড়লাম। মনে মনে ঠিক করেছিলাম যে, আমার কাফেলা যদি ঠিকমতো চলে, তবে তিন মাস শেষ হওয়ার আগেই আমরা ইউন্যানয়েম্বেতে পৌঁছে বিশ্রাম নেব। সকাল ছ-টার মধ্যে আমাদের প্রাতঃরাশ দিয়ে দেওয়া হল। গাধা এবং কুলিরা গোনেরার শিবির থেকে সার বেঁধে বেরোতে আরম্ভ করল। এই সাত সকালে, এই গ্রামদেশেও একদল কৌতূহলী আদিবাসী এসে ভিড় জমিয়েছে। আন্তরিক ভাবেই তাদের বিদায় সম্ভাষণ জানান হল। মালবাহী দলের কোয়ার্টার-মাস্টারের ভুমিকাপালনের জন্য আমার পিঙ্গল ঘোড়াটার কোনো তুলনা নেই; আমি নিজেকে কোয়ার্টার-মাস্টার হিসেবে ভাবতেই বাধ্য হয়েছিলাম। শেষ গাধা শিবির ছেড়ে রওনা না দেওয়া পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করতাম, তারপর কয়েক মিনিট ঘোড়া ছুটিয়ে আমি দলের মাথায় চলে যেতাম, শ-র উপর পিছন দিক সামলানোর দায়িত্ব থাকত।
সরু পায়ে চলার পথ। বিস্ময়জনক রকমের উর্বর মাটি, খুবই হেলাফেলায় বীজ বোনা ও চারা পোঁতা হলেও একশো গুণ শস্য আর শাকসবজি ফলেছিল। মাঠে মেয়ে–পুরুষেরা দায়সারা ভাবে কাজ করছিল, তাদের পরণে এতই কম কাপড় যে তাদের তুলনায় ডুমুর-পাতার পোশাক পরা আদম-ইভকেও পুরো-পোশাক পরা বলে মনে হবে। নগ্ন-গাত্র দেখতে অনভ্যস্ত অপরের আগ্রাসী দৃষ্টির সামনে তারা মোটেও লজ্জা পাচ্ছিল না, অপরিমিত কৌতূহলের উত্তরে যে কৌতূহল-ভরে তাকিয়ে থাকা ছাড়াও আরও কিছু করা উচিত তাও তাদের বোধের অতীত। উসুঙ্গু কাছে আসার সঙ্গে সঙ্গে তারা কাজ ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে; রোদ-আকান আটকানোর টুপি, যাকে সোলার হ্যাট বলে, সাদা ফ্ল্যানেল এবং ঘোড়ার বুট পরা চেহারাটা যে কী কিম্ভূত! মানুষের দেহের গঠন, শরীরের রূপরেখা শিখতে হলে এ যে কী দারুণ জায়গা! আমরা গম্ভীর মুখে তাদের পাশ দিয়ে চলে গেলাম, তারা হেসেই অস্থির, তাদের চোখে যা কিছু বিস্ময়কর বা উদ্ভট, সেসব দিকে আঙুল তুলে দেখাচ্ছে আর হাসছে।
প্রায় আধা ঘণ্টার মধ্যে আমরা লম্বা লম্বা মাতামা, তরমুজ, শসা এবং ম্যানিওকের খেত ছেড়ে চলে এলাম; নলখাগড়া ভরা জলাজমি পেরিয়ে, আবলুস ও ক্যালাবাসের বনে হাজির হলাম। জঙ্গলের গভীরে অনেক অনেক হরিণ, রাতের বেলা কিঙ্গানির জলহস্তীরা ঘাসের লোভে এখানে আসে। আরও এক ঘণ্টার মধ্যে আমরা সেই বন ছেড়ে বেরিয়ে এলাম, সেখানে উপর থেকে কিঙ্গানির প্রশস্ত উপত্যকা দেখা যাচ্ছে। আমার অক্ষম কল্পনায় যেমন ছবি আঁকা ছিল, তার থেকে যে কত আলাদা! মধুর হতাশা! কী যে স্বস্তি পেলাম।
রুভু নদী। এ সময়ের ছবি। ঊনবিংশ শতকে এরই নাম ছিল কিঙ্গানি নদী
উপত্যকাটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে চার মাইল ছড়ানো, আর উত্তর-দক্ষিণে প্রায় আট মাইল, উর্বর মাটিতে ঘাসের বন্য বৃদ্ধি—যে-কোনো সভ্যজগতেই গবাদি পশুপালনের জন্য চারণভূমি হিসেবে এরকম জায়গার ভারী দাম—ঘাসজমির প্রান্তভাগে দিগন্তরেখার উপর কম্পাসের প্রতিটি বিন্দুই ঘন অরণ্যে তমসাবৃত, তারও পরে বৃক্ষ-আচ্ছাদিত শৈলশিরার ভাঁজে ভাঁজে মিলিয়ে গেছে উপত্যকা।
কাফেলার শব্দে, আমাদের ডাইনে-বাঁয়ে লাল রঙের হরিণেরা ছুটে পালাচ্ছে, ব্যাঙেরা গ্যাংর গ্যাং থামিয়ে চুপ করে যাচ্ছে। সূর্য ধারালো হয়ে উঠেছে। উপত্যকাটি অতিক্রম করার সময় প্রকৃত আফ্রিকান তাপ কাকে বলে তা কিছুটা অনুভব করলাম। প্রায় অর্ধেক পথ পেরোনোর পর একটা জমে থাকা জলের খাতের সামনে হাজির হলাম। আমাদের কাফেলার রাস্তার ঠিক উপরে একটা প্যাচপ্যাচে দহ। কুলিরা সেতু পেরিয়ে চলে গেল। বহুদিন আগে, কিছু কাঠ ফেলে ওয়াশেন্সি-গোষ্ঠীর উপকারী বন্ধুরা এই চটজলদি সেতুটা বানিয়েছিলেন। সে এক অত্যাশ্চর্য ব্যাপার। এবড়োখেবড়ো গাছের গুঁড়িগুলো নড়বড়ে চেরা কাঠের স্তুপের উপর ফেলা, স্পষ্টতই অনেক মাল-বোঝাই ন্যাম্বেজি কুলির ধৈর্যের পরীক্ষা হয়েছে এখানে, যেমনটা হল আমাদের কাফেলার কুলিদেরও। আমাদের দুর্বল প্রাণীগুলির পিঠ থেকে বোঝা নামানো হল। বাগামোয়ো এবং গোনেরার মধ্যের ডোবা পার হওয়ার অভিজ্ঞতার ফলে আমরা এই সুবুদ্ধিটুকু অর্জন করেছিলাম। তবে সেজন্য খুব বেশি দেরি হয়নি; শ-র তত্ত্বাবধানে সবাই ঝপাঝপ কাজ করেছিলেন।
কাদাঘোলা জলের কিঙ্গানি নদী জলহস্তীর জন্য বিখ্যাত। অল্প সময়ের মধ্যেই সেখানে পৌঁছে গেলাম। নদীর ডান পারে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পথ চলা শুরু হল। কাল কাদামাটির অসীম গভীর সরু নালাটা আমাদের থামতে বাধ্য না করা পর্যন্ত সে পথেই চলছিলাম। চওড়ায় মাত্র ফুট আটেক, কিন্তু এটা আমাদের ভয়ানক সমস্যায় ফেলল। আমাদের দুপেয়ে কুলিরা সেটা পেরোতে পারলেও, ঘোড়াদের কথা তো বাদই দিলাম, দলের গাধারাও দুটো গুঁড়ির উপর দিয়ে পেরোতে পারবে না। আর খালের মধ্যে দিয়েও নিয়ে যাওয়া সম্ভব না, তাহলে তারা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ডুবে যাবে। সাবধানে খাল পেরনোর একটাই উপায়, একটা সেতু—এই সংরক্ষণপ্রবণ এলাকায় উসুঙ্গুর হাতের কাজ হিসেবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে টিকে থাকবে এমন একটা সেতু। হাতের কাছে অন্য কোনো সাহায্য তো নেই, আমেরিকান কুঠার দিয়ে সেতু বানানো শুরু হল, পৃথিবীর এই চত্বরে এইরকম কাঠ কাটার শব্দ এই প্রথম শোনা গেল। তাড়াতাড়িই কাজটা হল, সভ্য সাদা চামড়ার মানুষের সামনে সমস্যাগুলো হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। ছয়টা মোটাসোটা গাছের গুঁড়ি খালের উপর ফেলে ব্রিজটি তৈরি হল। এর উপরে আড়াআড়িভাবে পনেরোটা ঘোড়ার জিন ফেলে তার উপর মোটা ঘাসের স্তর ফেলা হল। সবকটা পশু নির্বিঘ্নে পেরিয়ে গেল। তারপর সেই সকালে তৃতীয়বারের মতো আমরা জল ছপছপিয়ে চলার পর্ব সাঙ্গ করলাম।
কিঙ্গানি নদী এখানে উত্তরবাহিনী, আমাদের চলার পথটি নদীর ডান তীর ধরে চলেছে! দৈত্যাকার নলখাগড়া আর নিবিড় লতার জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে প্রায় আধ মাইল মত নদীর দিকে হেঁটে আমরা ফেরিঘাটে পৌঁছালাম। সেখানে জন্তুদের পিঠের বোঝা আবার নামাতে হল। সেই গভীর ঘোলা জল দেখে আমার সত্যি সত্যিই মনে হল যে আমার যদি জাদুলাঠি-হাতে মোজেসের মতো ক্ষমতা থাকত—এমনকি আলাদিনের জাদু-আংটি পেলেও কাজ চলে যেত, তাহলে কোনো ঝামেলা ছাড়াই দলবলসমেত নদীর অপর পারে চলে যেতে পারতাম; কিন্তু হায়, আমার কাছে তো সে সব কিছুই নেই। অগত্যা তখনই পার হওয়ার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিলাম, কারণ এই বিরক্তিকর দৃশ্যের সামনে অত মহৎ ব্যাপারস্যাপার আশা করাই অশুভ।
কিংগওয়েরে, শালতির মাঝি, নদীর উলটোতীরে তার গোপন জায়গা থেকে আমাদের উপর নজর রাখছিল। আমাদের ডাকে সে ভালোভাবেই সাড়া দিল আর আমরা যেখানে অপেক্ষা করছিলাম সেখানে ১১৩ খানা বিশাল ফাঁপা গাছকে দক্ষহাতে নদীর ঘুর্ণিস্রোতের উপর দিয়ে নিয়ে এল। একদল যখন নৌকায় মালপত্র তুলছিল, অন্যরা পশুদের গলায় বাঁধার জন্য একটা লম্বা দড়ি বানাচ্ছিল, ওই দড়ি ধরে টেনে তাদের নদী পার করানো হবে। কাজটা ঠিকঠাকভাবে শুরু হয়েছে দেখে, আমি একটা লড়ঝড়ে নৌকোয় চেপে বসলাম, শিকারের মজা নিতে। ১২ নম্বর মসৃণ-নলের বন্দুকের সাহায্যে জলহস্তীর মোটা মাথা ঝাঁঝরা করার মজা! আমাদের কনস্ট্যান্টিনোপলের মন্ত্রী, সম্মানিত এডয়ার্ড জয় মরিসের উপহার দেওয়া ৪৪ ক্যালিবারের উইনচেস্টার রাইফেল দিয়ে জলহস্তীদের গায়ে টোকা মারার বেশি কিছু হল না, ছেলেদের গুলতির গুলিতে যেমন আঘাত লাগে ব্যাপারটা তেমনই হল। ১২ নম্বর মসৃণ-নলের লক্ষ্য নির্ভুল, পরপর দশবার আমি জলহস্তীদের দু-কানের মাঝে মাথার উপর গুলি লাগালাম। একজন সাধুর মতো দেখতে বুড়ো জলহস্তীকে ডান কানের কাছে বুলেট দিয়ে আলতো টোকা দেওয়া হয়েছিল। আর দশজনের মতো টুপ করে জলে ডুব দেওয়ার বদলে সে শান্তভাবে মাথাটি ঘুরিয়ে তাকাল, যেন জিজ্ঞাসা করতে চাইল, “এত দামি কার্তুজ আমাদের উপর এভাবে বাজে খরচ করছ কেন?” সাধুপুরুষের এই নিঃশব্দ প্রশ্নের উত্তর ছিল সোয়া আউন্সের মসৃণ-নল বন্দুকের বুলেট, গায়ে লাগতে সে যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠল। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই সে মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগল। তার আর্তনাদ এতই করুণ ছিল যে তারপর থেকে আর অপ্রয়োজনে প্রাণীবধ করিনি—এই উভচর প্রাণীর দলকে শান্তিতে থাকতে দিলাম।
যে সামান্য সময়টুকু ফেরিতে আটকে ছিলাম, তার মধ্যেই আফ্রিকার এই বিতিকিচ্ছিরি জলজ বাসিন্দাদের সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান অর্জন করেছিলাম। অজানা শব্দ তাদের বিশ্রামে ব্যাঘাত না করলে, তারা শরীরের সমুখাংশ উষ্ণ রোদে মেলে দিয়ে নদীর পারের বালুচরে, অল্প জলে আরাম করে। জমাটি বিশ্রামের সময় তাদের দেখলে মনে হয় যেন বিশাল বড়ো শূকরের ঝাঁক। অনধিকার প্রবেশকারীর আওয়াজ শুনে হকচকিয়ে গেলে, ঝটপট জলের গভীরে ঝাঁপ দেয়, নদীর জল হলদে ফেনায় ভরে যায় আর জলহস্তীরা জলতলের নীচে নিজেদের ছড়িয়ে দেয়। তারপর আবার নাকের থেকে জল ঝাড়তে ঝাড়তে একজন দুজন মাথা তোলে, টাটকা বাতাস টেনে নেয়, সতর্কভাবে চারপাশটা দেখে নেয়, আর সেই সময় শুধু তাদের কান, কপাল, চোখ এবং নাকের ডগাটুকু দেখতে পাওয়া যায়—যেহেতু তারা তাড়াতাড়ি আবার ডুব দেয়, সেই স্বল্প সময়ে তাদের গুলি করতে খুব স্থির আর দ্রুত হাত লাগে। জলে ভাসমান জলহস্তীর আকার সম্বন্ধে আমি অনেক উপমা শুনেছি। জলহস্তী স্বচক্ষে দেখার আগে কয়েকজন আরব আমাকে বলেছিল যে তাদের নাকি স্রোতে ভেসে যাওয়া মরা গাছের মতো দেখতে লাগে। যারা অন্যত্র শুয়োর দেখেছে, তারা বলেছে যে জলহস্তীদের শুয়োরের মতো দেখতে। তবে আমার মনে হয়েছে, সাঁতার কাটার সময় তাদের অনেকটাই ঘোড়ার মতো দেখায়—তাদের বাঁকানো ঘাড় এবং ছুঁচোল কান, টানা টানা চোখ চওড়া নাসারন্ধ্র, সব মিলিয়ে এই তুলনাটাই বেশি মেলে।
রাতের বেলা জলহস্তীরা নদীর পাড়ে আসে এবং থরে থরে সাজানো ঘাস অবাধে উপভোগ করতে করতে ডাঙ্গায় মাইলের পর মাইল ঘুরে বেড়ায়। বাগামায়ো শহরের মাইল চারেকের মধ্যেই (কিঙ্গানি সেখান থেকে আট মাইল দূরে) তাদের চওড়া পায়ে চলার পথ দেখা যায়। প্রায়শই, মানুষের শব্দে ঘাবড়ে না গেলে, তারা স্থানীয় চাষিদের ফলন্ত ভুট্টা খেত আক্রমণ করে এবং এক ডজন জলহস্তী মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে একটা বড়ো খেতের গাছ পুরো তছনছ করে দেয়। তাই, ফেরিতে অপেক্ষা করার সময়, কচি গমের খেত থেকে কাক তাড়ানোর জন্য ইংল্যান্ডের গোলাপি-গালের চাষি-ছেলেরা যেমন শোরগোল করে, ভুট্টাখেতের মালিকদের তেমন জোরে জোরে হইচই করতে শুনে আমরা একটুও অবাক হইনি।
(ক্রমশ... পরের অংশ পড়ুন আগামী বৃহস্পতিবার)