আমার প্রশ্নের উত্তরে ব্রিটিশ কনসাল ছিলেন ড. জন কার্ক বললেন, “আসলে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুব কঠিন। মারাও গিয়ে থাকতে পারেন। কোনো ঠিকঠাক খবর নেই যার উপর ভরসা করা যায়। আমি এইটুকু জানি যে দু-বছরেরও বেশি কেউ তাঁর সম্বন্ধে নিশ্চিত করে কিছু শোনেনি। আমার মনে হয়, উনি জীবিত আছেন। আমরা সারাক্ষণই তাঁর জন্য কিছু না কিছু পাঠাচ্ছি। এই তো এখনও বগমোয়োতে একটা ছোটো অভিযানের ব্যবস্থা চলছে, শিগগিরই শুরু হবে। আমার তো মনে হয় ওঁর এবার বাড়ি ফেরা উচিত। জানেনই তো, বয়স হয়েছে—এরপর মারা গেলে পৃথিবীর কেউ তো ওঁর আবিষ্কারের কথা জানতেই পারবে না! আর উনি তো নোট বা ডাইরি কিছুই রাখেন না—কী দেখলেন না দেখলেন সেটাও কদাচিৎ লিখে রাখেন। একটা ম্যাপের উপর হয়তো একটা বিন্দু এঁকে রাখলেন বা শুধু দু-কথা লিখলেন। ব্যস—সেটা উনি নিজে ছাড়া আর কেউ বুঝবেও না। যদি বেঁচেও থাকেন, তাহলেও ওঁর এবার বাড়ি ফেরা উচিত। একজন কমবয়সি কারও ওঁর জায়গায় যাওয়া উচিত।”
জাঞ্জিবারে ব্রিটিশ (বাঁদিকে) ও মার্কিন কনসুলেট। আনুমানিক ১৮৭০। ছবিসৌজন্য মেরি ইভান্স পিকচার লাইব্রেরি
এতক্ষণে তো আমার আলোচনায় আগ্রহ জন্মে গেছে। জানতে চাইলাম, “সঙ্গী হিসেবে উনি ঠিক কেমন মানুষ, ডক্টর?”
“খুবই গোলমেলে ধরনের মানুষ। ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনোদিন ওঁর সঙ্গে ঝগড়া হয়নি; কিন্তু এত ঘন ঘন ওঁর সঙ্গে অন্য লোকের ঝামেলা হতে দেখেছি! আমার মনে হয় সে জন্যেই উনি নিজের সঙ্গে কাউকে থাকতে দেওয়া ঘোর অপছন্দ করেন।”
“আমি তো শুনেছি উনি খুবই বিনয়ী মানুষ, তাই কি?’’ আমি জানতে চাইলাম।
ড. কার্ক হাসতে হাসতে বললেন, “উনি নিজের আবিষ্কারের মূল্য খুবই ভালো করে জানেন। কেউ ওঁর থেকে সেটা বেশি ভালো জানে না। মানে উনি ঠিক দেবদূত গোছের মানুষ নন।”
“আচ্ছা ধরুন, আমি ঘুরতে ঘুরতে ওঁর দেখা পেলাম। মানে আমি যেদিকে যাচ্ছি, উনিও যদি সেইখানেই থাকেন, তাহলে তো মোলাকাত হতেই পারে, উনি ঠিক কেমন ব্যবহার করবেন বলে মনে হয়?” আমি প্রশ্ন করলাম।
“সত্যি কথা বলতে কী, মনে হয় না, উনি ব্যাপারটা খুব পছন্দ করবেন। বার্টন বা গ্র্যান্ট বা বেকার১ বা ওইরকম কেউ যদি ওঁর পিছু নিতেন আর উনি সেই খবরটা পেয়ে যেতেন, তাহলে আমি নিশ্চিত যে লিভিংস্টোন খুব তাড়াতাড়ি তাঁদের থেকে বিস্তীর্ণ জলাজমি পেরিয়ে অন্তত ১০০ মাইল দূরে চলে যেতেন। একদম দূরে চলে যেতেন, আমার তো তাই মনে হয়।’’
এই হল লিভিংস্টোনের ভূতপুর্ব সঙ্গী ড. কার্কের সঙ্গে আমার কথাবার্তার সার-নির্যাস। অন্তত আমার দিনলিপি আর স্মৃতি তেমনই সাক্ষ্য দিচ্ছে।
একথা নিশ্চয় আলাদা করে বলার দরকার নেই যে একজন মানুষ যিনি কিনা লিভিংস্টোনের সহচর ছিলেন, তাঁর থেকে এইসব শুনে আমার উৎসাহ বাড়ার থেকে ঝপ করে খানিক কমে গেল। বেশ হতাশ হলাম। ‘যাও, লিভিংস্টোনকে খুঁজে বার করো’, এমন হুকুম আমার ওপর না থাকলে হয়তো আমি সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে চলেই যেতাম। আর একটা ব্যাপারও ছিল, আমি যদিও প্রায় এককথায় লিভিংস্টোনকে খুঁজতে যেতে রাজি হয়েছিলাম, একথা কিন্তু একবারও ভাবিনি যে আমার মধ্য আফ্রিকায় যাওয়ার পথটি একেবারে কুসুমকীর্ণ হবে। যদিও অভিযান আর দুনিয়া আবিষ্কারের দুনিয়ায় আমাকে একজন বেশরম অনুপ্রবেশকারী হিসেবে, অকারণ হস্তক্ষেপকারী হিসেবে দেখা হল, সেজন্য একটু বকেও দেওয়া হল, বুঝিয়ে দেওয়া হল যে আমার উপস্থিতির চেয়ে অনুপস্থিতি তাঁর কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে, তবু আমার হাল ছাড়ার কিছু নেই। আমাকে হুকুম দেওয়া হয়েছে তাঁকে খুঁজে বার করতে— ব্যস। যদি উনি বেঁচে থাকেন, তাহলে খুঁজে বার করব। আর যদি বেঁচে না থাকেন, তাহলেও মানুষের যা জানার ও সংগ্রহে রাখার দরকার সেগুলো অন্তত নিয়ে ফিরব।
১৮৬৬ সালে ডেভিড লিভিংস্টোন জাঞ্জিবারে এই বাড়িটিতে বসবাস করেছিলেন।
ড. কার্ক খুবই সহৃদয়ভাবে আমাকে তাঁর সাধ্যমতো সব রকমের সাহায্য করার আশ্বাস দিলেন। এমনকি ওঁর যেসব অভিজ্ঞতা আমার কাজে লাগতে পারে, সেসবও আমাকে জানাবেন বলে ভরসা দিলেন। তবে কিনা, আমি মনে করতে পারছি না যে উনি আমাকে আদৌ কোন্ভাবে সাহায্য করেছিলেন, আমার দিনলিপিতেও এমন কিছু লেখা নেই। অবশ্য উনি জানতেন না যে আমার উপর ড. লিভিংস্টোনকে খুঁজে বার করার নির্দেশ আছে। সেটা জানলে মনে হয় উনি ওঁর কথা রাখতেন। উনি ভেবেছিলেন যে আমি রুফিজি নদী ধরে তার উৎস সন্ধানে যাব। কিন্তু কোন্ খবরের কাগজ রুফিজির মতো একটা তুচ্ছ নদীর উৎস সন্ধানে একজন বিশেষ সংবাদদাতা পাঠায়?
জাঞ্জিবারের আবহাওয়াকে মোটেই পৃথিবীর সবচেয়ে মনোরম আবহাওয়া বলা যায় না। শুনেছি আমেরিকান এবং ইউরোপীয়রা এর তুমুল নিন্দা করে। এও দেখেছি একদিনে শ্বেতাঙ্গদের গোটা কলোনির অর্ধেক লোক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মালাগাশের অগভীর খাঁড়ি থেকে মারাত্মক ম্যালেরিয়া ছড়িয়ে পড়ে। সবরকমের জমে থাকা নোংরা, জঞ্জাল, নাড়িভুঁড়ি, মরা শামুক, মৃত রাস্তার কুকুর, মরা বিড়াল, বিভিন্ন রকমের পচা মাংস, কবর না-দেওয়া মৃত মানুষ ও পশুদের অংশবিশেষ—সব মিলিয়ে জাঞ্জিবার এক মহা অস্বাস্থ্যকর শহর!
জাঞ্জিবার উপসাগরটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি, এর দক্ষিণ-পশ্চিম মাথায় শহরটি বিরাজমান। শহরের পূর্ব দিকের পুরো সীমানা জুড়ে রয়েছে মালাগাশ উপহ্রদ, সমুদ্রের সাথে জোড়া। শাঙ্গানি পয়েন্টের দক্ষিণে বা পিছন দিয়ে এই উপহ্রদের প্রান্ত ওপারের সমুদ্রের থেকে মাত্র আড়াইশ গজ দূরে। এই আড়াইশো গজ জায়গায় যদি একটা দশ ফুট খাদ কেটে দেওয়া যেত আর উপহ্রদে জল ঢোকার মুখটা খানিকটা গভীর করে দেওয়া যেত, তাহলে জাঞ্জিবার নিজেই একটা দ্বীপে পরিণত হত—এই দ্বীপের স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে পরিবেশ ভালো হত। দুর্যোগও এড়ানো যেত! এই কথাটা কাউকে বলতে শুনিনি। অথচ আমার মনে হয়েছিল জাঞ্জিবারে নিযুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা সুলতানের কাছে এই কথাটা তুলতেই পারতেন আর শহরটাকে নিরক্ষীয় অঞ্চলের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর জায়গা হিসেবে গড়ে তোলার কৃতিত্বও দাবি করতে পারতেন। তবে তখন আমার ক্যাপ্টেন ওয়েবের বলা কথাগুলো মনে পড়েছিল। এখানে প্রথম আসার পর আমি এখানকার ইউরোপিয়ান আর আমেরিকানদের উদাসীনতা আর জড়তা দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম। কোথায় গেল তাঁদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া প্রকৃতিগত অদম্য শক্তি? কোথায় গেল তাঁদের প্রগতিশীলতা আর কর্মচঞ্চলতা? এ তো স্নায়বিক রোগাক্রান্ত পঙ্গু, আবহাওয়ার মরণকামড়ে আশাহীন বিশ্বাসী একদল ম্লান প্রেতমূর্তি! ক্যাপ্টেন ওয়েবের কাছে খুব আপশোশ করেছিলাম যে গোটা-পৃথিবী-শাসন-করা ইউরোপিয়ান আর আমেরিকানদের মতো সাহসী আর হার-না-মানা মানুষগুলোর এ কী দশা!
ক্যাপ্টেন ওয়েব তখন আমাকে বলেছিলেন, ‘‘হ্যাঁ, কর্মক্ষমতা নিয়ে কথা বলা আপনাকে মানায়। তবে কী জানেন, এখানে খুব উদ্যমী মানুষেরাও তাঁদের কাজ করার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেন, কেউ আগে আর কেউ পরে! চার বা পাঁচ বছর এই দ্বীপে এখানকার লোকজনের মধ্যে কাটানোর পরে, মনে হবে যে চারপাশের এই সব উদাহরণের প্রভাবকে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করা বাতুলতা। যখন প্রথম প্রথম এখানে আসি, আমাদের সকলেরই অনেক উদ্যম ছিল। দেশে যেভাবে আমরা অভ্যস্ত সেই ভাবে কাজগুলো করার জন্য আমরা সবাই বীরের মতো লড়াই করেছিলাম। তবে কিছুদিন পরে দেখলাম যে আমরা গ্রানাইটের দেয়ালে মাথা ঠুকছি। এই লোকগুলো—এই আরব, বানিয়া আর হিন্দুস্তানি—আপনি যতই চেঁচামেচি বা অনুরোধ করুন না কেন, এঁদের নড়ানো অসম্ভব। একটা অজর শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার বোকামিটা আপনি শীঘ্রই বুঝে ফেলবেন। ধৈর্য ধরুন, হতাশ হবেন না। এটাই বলব, না হলে এখানে বেশি দিন টিঁকতে পারবেন না।
তিন-চারজন খুব ব্যস্ত মানুষ ছিলেন অবশ্য জাঞ্জিবারে, তাঁরা দিনের সবসময়ই বাইরে থাকতেন। একজনকে জানি, আমেরিকান; কনসুলেটের নীচের ফুটপাথে তাঁর দ্রুত পা চালানোর শব্দ শোনা যেত, প্রফুল্ল গলায় তিনি যাকেই দেখতেন তাঁকেই ‘ইয়াম্বো!’ বলে অভিবাদন জানাতেন। ইনি জাঞ্জিবারে বারো বছর ছিলেন।
আর-একজনকে জানি, শক্তপোক্ত স্কটল্যান্ডের লোক। খুব ভালো ব্যবহার আর সাদাসিধা মানুষ। কাজে ও কথাতে খুব আন্তরিকও। বেশ কিছু বছর জাঞ্জিবারে ছিলেন। কারবারের ওঠা-পড়া বা জলবায়ুর উষ্ণতা বা ক্লান্তি কিছুতেই তাঁর হেলদোল ছিল না। জাঞ্জিবারের অনুদ্যমী বাসিন্দাদের বিপরীতে তিনি মনে বড়োই সমীহ জাগান। ভারতীয় নৌবাহিনীর ভূতপূর্ব সদস্য ক্যাপ্টেন এইচ সি ফ্রেজারকেও কেউ কর্মদ্যোগহীন বলে অপবাদ দিতে পারবে না।
আমি আরও অনেকেরই কর্মদ্যোমের প্রমাণ দিতে পারি, তবে তাঁরা সব আমার বন্ধু। তাঁরা সবাই ভালো। আমেরিকান, ইংরেজি, জার্মান, এবং ফরাসি বাসিন্দারা আমার সঙ্গে যেরকম সৌজন্যপূর্ণ ও সদয় আচরণ করেছেন, তা আমি ভুলতে পারব না। মোটের ওপর, এখানকার শ্বেতাঙ্গদের থেকে বেশি উদার বা অতিথিপরায়ণ মানুষ উপনিবেশ দুনিয়ার অন্য কোথাও মেলা ভার ।
শাঙ্গানি পয়েন্টে একটা বিশাল উঁচু জাঁকজমকে ভরা বাড়িতে—মাথায় তার আবার ভারী অদ্ভুত চূড়া—বিশপ টোজার তাঁর শিষ্য, গানের দল আর চ্যালাচামুণ্ডাদের নিয়ে থাকতেন। ইনি নিজেকে ‘মধ্য আফ্রিকার মিশনারি বিশপ’ বলতেন। আমার দেখা সবচেয়ে মৃদুভাষীদের মধ্যে ইনি একজন। আমার যতদূর মনে পড়ে, একে ‘লড়ুয়ে পাদ্রি’ বলা হত—চোরাই খেতাব অবশ্য! আসলে ওয়েলিংটনের ডিউক ড. লিভিংস্টোনকে প্রথম এই খেতাব দিয়েছিলেন। তবে কথিত আছে যে বিশপ টোজার গির্জা যাওয়ার পথে একজন দুর্বিনীত গুন্ডার সঙ্গে মারামারি করেছিলেন; আর বক্সিং-ম্যাচে তাকে বেশ করে পেটানোর পরে তার সঙ্গীদেরও একের পর এক একইভাবে শাস্তি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সে প্রস্তাব তারা প্রত্যাখ্যান করেছিল। বিশপ টোজারের এই মুষ্টিযুদ্ধ নেকড়ের পালকে ভেড়ার বাচ্চায় পালটে দিয়েছিল—সে জন্যই বিশপ ওই উপাধিটি পেয়েছিলেন আর এই পছন্দের কাজটাও পেয়েছিলেন।
বিশপ উইলিয়াম জর্জ টোজার। ছবি চার্লস টমাস নিউকোম্ব। ১৮৬০-এর দশকে তোলা। ছবিসৌজন্য ন্যাশনাল পোর্টেট গ্যালারি, লন্ডন।
লাল পোশাক এবং ‘মধ্য আফ্রিকার মিশনারি বিশপ’ উপাধি (কেন অবশ্য তাঁকে এই উপাধিটি দেওয়া হয়েছিল তা আমি কল্পনাও করতে পারি না) ধর্মযাজক হিসেবে বিশপের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছিল, তিনি খুব খুশিও হয়েছিলেন। তবে এই হাই-চার্চের (খুব উচ্চ চার্চ নিঃসন্দেহে) প্রধান ধর্মযাজক, তাঁর লালরঙের পোশাক ও অদ্ভুতদর্শন উষ্ণীষ পরে জঞ্জিবারের রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন, বা ঝালাইওয়ালার দোকানে একটা টিনের পাত্রের দাম নিয়ে দরাদরি করছেন এর থেকে হাস্যকর দৃশ্য আমি ক্লাউন-শোয়ের বাইরে কোথাও দেখিনি। একজন শ্বেতাঙ্গ মানুষ হিসাবে এই হাস্যকর ব্যাপারটার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাই। ধর্মযাজকের পোশাক আর কাগজের টুপি পরে ঝালাইওলার দোকানে দাঁড়িয়ে-থাকা বিশপের ছবির মতনই হাস্যকর ছিল খালি গায়ে ঘুরে বেড়ানো কিংবা ইউরোপিয়ান টুপি পরা ডাহোমের৩ রাজার এই চমৎকার পোশাকে সাড়ম্বরে বিহার করা। বিশপমশাই তাঁর অসীম সারল্যে যতই ভাবুন না কেন তাঁর পোশাক বিধর্মী বর্বরদের মনে অসীম প্রভাব ফেলছে, আমি বলতে পারি যে আরবরা আর আনইয়ানেম্বেতে থাকা ওয়াঙ্গওয়ানাদের কাছে তিনি পরম হাস্যাস্পদ ব্যক্তি। এমনকি তাঁর সাদা-চামড়ার ভাইরাও অনেকেই এমনটাই প্রায় ভাবেন।
হায় প্রিয় বিশপ টোজার! জঞ্জিবারের মতো জায়গায় যদি আপনি হাইচার্চের২ রীতিনীতির এই রকম চূড়ান্ত হাস্যকর প্রদর্শনী না করতেন তবে আপনাকে ভালোবাসা যেত আর প্রশংসাও করা যেত।
ফরাসি মিশনারিরা কিন্তু সক্রিয়ভাবে কাজের কাজ করতে শুরু করেছেন। অসংখ্য মানুষ যাঁরা ধর্মবদল করছেন, তাঁদের কেবল ধর্মের নীতিগুলি শেখানোই নয়, তাদের জীবনের পথে চলার প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন। তাঁরা শিষ্যদের বিভিন্ন কাজ শেখাচ্ছেন; কৃষক, ছুতোর, কামার, নৌকানির্মাতা এবং যন্ত্র-প্রকৌশলী তৈরি করছেন। সেখানে বিভিন্ন শিক্ষাবিভাগে সক্ষম, দক্ষ এবং পরিশ্রমী শিক্ষকেরা রয়েছেন। জাঞ্জিবারে তাদের দোকানগুলি দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে পড়ে, নতুন লোকেরা সেগুলো দেখতে চায়। মূল ভূখণ্ডের বগমোয়োতে তাদের প্রচারকেন্দ্রটা বিশাল জমির ওপর। কেন্দ্রের সংলগ্ন জমিতে তরুণ শিক্ষার্থীরা চাষ করে, মানুষের উদ্যম দেখার একটা আদর্শ জায়গা; এবং সেখানে যা উৎপাদন হয় তা দিয়ে ওঁদের প্রতিষ্ঠানের যা কিছু প্রয়োজন সব তো মেটেই, আরও অতিরিক্ত থাকে। ধর্মান্তরী আর ছাত্র মিলিয়ে তাঁরা দুই শতাধিকেরও বেশিজনকে শিক্ষিত করছেন।
এই সিরিজটা বেশ ভালো লাগছে। পড়ে চলেছি।