ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হল আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রথম লক্ষ্য বাগামোয়ো শহরে পৌঁছে পাক্কা দেড় মাস আটকে সেখান থেকে একে একে রওনা হয়েছে অভিযানের মোট পাঁচটি কাফেলা। চলছে অভিযানের মূল কাহিনী। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। চলছে টাঙ্গানিকা হ্রদে স্ট্যানলে ও লিভিংস্টোনের নৌযাত্রার কথা। এই পর্বে মধ্য আফ্রিকার বিবিধ প্রাণী, বিশেষ করে মাছের বিবরণ। তরজমা স্বাতী রায়
মধ্য আফ্রিকায় পালকওলা প্রজাতি অসংখ্য। যে পাখিগুলো আমরা দেখেছি তার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ছিল গোম্বে, এমপোকওয়া আর রুগুফুর ধারে ফিশ-ঈগল, বাস্টার্ড, চিল, শকুন, সাদা ঘাড়ের কাক, টার্টল-ঘুঘু, অরটোলান, স্যাডল-বিলড স্টর্ক: ট্যাঙ্গানিকায় আইবিস নিগ্রা ,আইবিস রিলিজিওসা, টুকান, বুনো হাঁস (তাদের ডানায় কাঁটা লাগানো), বুনো হাঁস, কালো মাদাগাস্কার হাঁস ও জলমোরগ: প্যাডি বার্ড, থ্রাশ, হ্যামার-হেডেড সারস, পেলিক্যান, সীসা-রঙের ঝুঁটিওলা ক্রেন, ডাইভার, কিংফিশার ও মিশরীয় হাঁস, কানওলা গ্রেব, টার্ন, গিনি-ফাউল, কোয়েল, টারমিগান ও ফ্লোরিকান। উগোগোতে কিছু উটপাখিও দেখেছি; উগম্বো হ্রদে রাজহাঁস; রুসিজি নদীর কাছে টাঙ্গানিকায় স্নাইপ এবং ওয়াগটেল; বড় ও ছোট পেঁচা ছাড়াও, বাদুড়, বারবেট, ব্যালেনিসেপস ও স্যান্ড-পাইপারও দেখেছি। আর যাদের চিনতে পেরেছি তারা হল হুপি, তোতা, জে, রেনস, রেডউইংস, গোল্ডেন ফ্লাইক্যাচার এবং লিটল এগ্রেটস। দেখতেই পাচ্ছেন, বিভিন্ন প্রজাতির সম্মিলিত বিবরণের মধ্যে ঢোকানোর জন্য বড্ড লম্বা একটা তালিকা।
সরীসৃপের মধ্যে দেখেছি একটি দীর্ঘ সবুজ সাপ, বোয়া ও একরকম ছোট রূপালী-পিঠের সাপ। গিরগিটি ছিল অসংখ্য; কচ্ছপ, ইগুয়ানা, জিমনোপাস, টোডস, ব্যাঙ আর টেরাপিনের সাথেও দেখা হয়েছিল।
পোকামাকড়ের মধ্যে প্রধানত দেখা যায় সাধারণ ঘরোয়া মাছি, মশা, নীলমাছি, উকুন, সেৎসে, গরু-ঘোড়ার রক্ত চোষা ডাঁশ মশা, বিশালাকার গুবরে পোকা, ড্রাগন-ফ্লাই, ট্যারান্টুলা, ঘরের-বাগানের বিভিন্ন রকমের মাকড়সা, হলুদ বিছে, কেন্নো, মাইরিয়াপিডিস, শুঁয়োপোকা, উই পোকা, সাদা-লাল-কালো পিঁপড়া।
টাঙ্গানিকায় হরেক রকমের মাছও মেলে।
১। প্রথমটা হল সিলুরে, জিজিরা যাকে সিংগা বলে। স্থানীয়দের কথা অনুসারে চার, এমনকি ছ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। আমি যেটার ছবি এঁকেছিলাম, সেটা সাড়ে আটত্রিশ ইঞ্চি লম্বা, ওজন দশ পাউন্ড, তবে কিনা এটা ছোট মাছ হিসাবেই বিবেচিত হয়েছিল। অত্যন্ত চর্বিযুক্ত মাছ, পিঠের রং গাঢ়-বাদামী, আর পেটের দিকটা হালকা বাদামী, প্রায় সাদাই হয়ে যাওয়া। এই মাছ আঁশবিহীন। নদীতে হ্রদে যেরকমটা আমরা পেয়ে থাকি, এটা সেই রকমেরই। গোম্বে নদীতে শ’য়ে শ’য়ে এই মাছ ধরা হয়, কাটাকাটি করে শুকানো হয় আর আরব, আচারে-ব্যবহারে মুসলমান হয়ে যাওয়া নিগ্রো ও সোয়াহিলিদের কাছে বিক্রির জন্য উন্যানেয়েম্বেতে নিয়ে যাওয়া হয়।
২। চেহারা ও গুরুত্বের দিক দিয়ে এর ঠিক পরেরটিই হল সাঙ্গারা, আঁশওলা মাছ। খাবার হিসেবে ভাল বলে মনে করা হয়। কাঠ খোদাই করা ছবিতে যে মাছটা আঁকা রয়েছে, সেটা ছিল তেইশ ইঞ্চি লম্বা, আর পুরো শরীরটাকে বেড় দিলে সাড়ে পনের ইঞ্চি। ওজন সাড়ে আটষট্টি পাউন্ড।
৩। এরপরেই আসবে এমভুরো, একটা মোটা, মাংসল মাছ, দারুণ খেতে। এইটাও আঁশওলা। পরের পাতার খোদাই করা ছবির মাছটা ১৮ ইঞ্চি লম্বা, সোয়া পনের ইঞ্চি শরীরের পরিধি, আর সোয়া পাঁচ পাউন্ড এর ওজন।
৪। 'চাই' নামের একটা আঁশওলা মাছেরও আমি স্কেচ করেছিলাম, এটা সোয়া নয় ইঞ্চি লম্বা, শরীরটা বেড়ে চার ইঞ্চি, এর পিঠে একটা সবজেটে আভা আর নীচের দিকটা হালকা রঙের।
৫। আরও একটা আঁশহীন মাছ, ৭ ইঞ্চি লম্বা, ৪ ইঞ্চি চওড়া, হালকা কালো দিয়ে ডোরাকাটা, ইঞ্চি খানেক চওড়া, পেটের দিকটা সাদা, সুন্দর দেখতে একটা মাছ, হ্রদে প্রচুর পরিমাণে মেলে। উজিজির জেলেরা প্রতিদিন এই মাছ অনেক অনেক ধরে আনে।
৬। আরেকটা আঁশছাড়া মাছ। ছয় ইঞ্চি লম্বা, রূপালী পেট, ট্রাউটের মতো স্বাদ, সবার খুব পছন্দের।
৭। পার্চ মাছ, সাধারণভাবে ইঞ্চি আটেক লম্বা, পরিধি আট ইঞ্চি। খুব শুকনো একটা মাছ, খুব গরীবরা ছাড়া এর কদর কমজনাই করে।
৮। একটি বেঁটেখাটো, মোটাসোটা ঈল, দারুণ স্বাদের মাছ। যে মাছটার ছবি এঁকেছিলাম সেটা ১৭ ইঞ্চি লম্বা, এবং ৪ ইঞ্চি গোলাকার শরীর।
উল্লিখিত প্রজাতিগুলি টাঙ্গানিকার মাছেদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
তবে আরও একরকম মাছ আছে যেগুলো সব চেয়ে ছোট আকারের হলেও মানুষে সব থেকে বেশি খায়, সেটা হল ছোট্ট "ডোগারা", মৌরলা জাতীয় একটা মাছ, হাজারে হাজারে জালে ধরা পড়ে। রোদে ছড়িয়ে শুকানো হয় বা নুনে জারানো হয় আর এইভাবে এমনকি দূরের উন্যানিয়েম্বে পর্যন্ত রপ্তানি করা হয়। এছাড়াও ফরাসি উপকূলের সার্ডিন মাছের ধরণের বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে যেগুলো ছিপে গেঁথে বা হাতজাল দিয়ে ধরা হয়। উজিজির বাজারগুলোতে বিক্রির জন্য চিংড়ি আর ঝিনুকও আসে।