আমরা আধুনিক মানচিত্রের সাহায্যে কিছুটা আন্দাজ করার চেষ্টা করছি হেনরি মর্টান স্ট্যানলে-র যাত্রাপথ। নইলে পাঠকের পক্ষে বোঝাই মুশকিল এইসব কাণ্ড ঘটছে কোথায়। কাজটা কঠিন। কারণ, এই পথে এমন অনেক জায়গার নাম রয়েছে যার আজ কোনো অস্তিত্বই নেই। বাগামোয়ো থেকে ‘উসেগুহহা’-র রাজধানী সিম্বামওয়েন্নিতে পৌঁছে এবারে উগোগো অঞ্চলের চুন্যু (চুন্যো) নামক জনপদের লক্ষ্যে চলেছে স্ট্যানলের কাফেলা। উসেগুহহা বলে কোনো স্থান বা প্রদেশ আজ আর নেই। এমনকি বোঝাও মুশকিল সেই অঞ্চলের বিস্তৃতি ঠিক কী ছিল। তবে সিম্বামওয়েন্নি নামে একটি ক্যাম্প-সাইট এখনও রয়েছে তানজানিয়ার মোরোগোরো শহরের কাছে। আন্দাজ করা যেতে পারে এই সিম্বামওয়েন্নি-র কথাই স্ট্যানলে বলছেন। কাজেই এখানে বর্ণিত যা-কিছু ঘটছে সবই মানচিত্রে নীল বুটি দেওয়া পথের আশেপাশেই।—সম্পাদক
মাকাটা উপত্যকায় একমাত্র তালগাছই যাও বা একটু ঘন ঘন চোখে পড়ে। এই গাছের আর-এক নাম বোরাসাস ফ্ল্যাবেল্লিফর্মিস। কিছু কিছু জায়গায় একসঙ্গে এতই বেশি জন্মায় যে বেশ একটা কুঞ্জবন গোছের হয়ে থাকে: আমরা যখন ওই এলাকা দিয়ে গিয়েছিলাম, তখনও ফল পাকার সময় হয়নি। নাহলে বেশ একটা নতুন জিনিস চেখে দেখা যেত! এ ছাড়া গাছপালা বলতে আছে বিভিন্ন ধরনের কাঁটা গাছ আর সুকুমার-কান্তি, পাতার ছাতায় মাথা ঢাকা চিরহরিৎ মিমোসা।
স্ট্যানলে যে অঞ্চলের বর্ণনা করছেন সম্ভবত বর্তমানে সেটি তানজানিয়ার মিকুমি জাতীয় উদ্যানের অন্তর্গত
উসাগারাতে প্রথম যে গ্রামটার কাছে শিবির করেছিলাম, তার নাম রেহেন্নেকো। চৌঠা মে, একটা হালকা ঢাল বেয়ে সেই গুরুত্বপূর্ণ গ্রামটির দিকে আরোহণ করতে শুরু করলাম। পাহাড়ের পায়ের কাছে গ্রামটা—গ্রামের সমৃদ্ধি আর পাহাড়ি বাতাস আমাদের মনে স্বাচ্ছন্দ্য ও আরোগ্যের প্রতিশ্রুতি বয়ে আনল। একটা চৌকোনো, ছোটোখাটো গ্রাম, মাটির মোটা দেয়াল দিয়ে ঘেরা—মৃৎ-প্রাকারের মধ্যে রয়েছে খড়-বাঁশের তৈরি শঙ্কুর মতো চালওলা কুঁড়েগুলো; প্রায় হাজার জনের বাস। আশেপাশের প্রতিবেশী গ্রামগুলোও বেশ ধনী ও জনবহুল, তাদের বাসিন্দারাও বেশ নিজেদের মতো থাকে—ঝামেলাঝাঁটি নেই। বিশুদ্ধ জলের ঝরনাগুলি গোল নুড়ি ও ঝকঝকে পাথরের উপর দিয়ে লাফিয়ে চলেছে—জল এখানে স্ফটিকের মতো টাটকা আর কাকচক্ষু—মিষ্ট, পানীয় জলের সন্ধানরত পরিব্রাজকের কানে তার কলকলধ্বনি যেন মধুর সংগীত!
রেহেন্নেকোর আশেপাশে যে বাঁশ গজায় সেগুলোর আকার বেশ কাজের, তাবুর খুঁটি হিসেবে বেশ পোক্ত আর সংখ্যায়ও অজস্র—একটা গোটা সেনাবাহিনীকেও অনায়াসে সরবরাহ করা যাবে। পাহাড়ের ঢালগুলি ঘন জঙ্গলে ভরা—উচ্চ মানের বাড়ি তৈরির কাঠের অঢেল বন্দোবস্ত।
এই মনোরম স্থানে আমরা চার দিন বিশ্রাম নিয়েছিলাম, খানিকটা নিজেদের গুছিয়ে নেওয়া যাবে আর অসুস্থ, দুর্বলদের কিছুটা সেরে ওঠার সময়ও মিলবে। উসাগাড়া পাহাড়ে চড়ার সময় তো আবার তাদের শক্তির পরীক্ষা দিতে হবে।
আট মে দেখা গেল, আমাদের ভয়ানক শ্রান্ত মানুষ ও জন্তুদের দল প্রথম সারির পাহাড়ের খাড়াই ঢাল বেয়ে উপরদিকে উঠছে। শিখরে উঠে এক দুর্দান্ত দৃশ্য দেখতে পেলাম—মাকাতার বিস্তৃত উপত্যকার এক অপূর্ব ছবি,—ছায়াহীন জলের গভীরে সুর্যের আলোর ঝলকে ক্ষিপ্রতোয়া জলধারাটি রুপোলি জরির মতো ঝিকমিক করছে--হাজারে হাজারে সুকুমার তালগাছ দৃশ্যটিকে আরও মধুর করে তুলেছে--দূরে বিশাল প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে থাকা আকাশনীল উরুঙ্গুরু ও উস্বপাঙ্গা পাহাড় এই প্রসারিত, দিগন্তছোঁয়া দৃশ্যটির এক অপরূপ মানানসই পশ্চাতপট তৈরি করেছে--সে পাহাড়ের উচ্চতা আর বিশালতার সামনে মাথা নত হয়ে যায়।
বর্তমানে মিকুমি জাতীয় উদ্যানের একাংশ
পশ্চিমে মুখ ঘুরিয়ে দেখলাম আমরা একটা পার্বত্য এলাকার মধ্যে ঢুকে গেছি, ভাঁজের পরে ভাঁজ, শিখরের পরে শিখর, শঙ্কু-শিখরগুলি একে অপরকে ধাক্কা মারছে, উত্তর–পশ্চিম-দক্ষিণ সকল দিকেই পর্বতশীর্ষ স্থিরতরঙ্গের মতন উঠছে- নামছে; গোটা দৃশ্যে কোথাও কোনো শুষ্ক, ধূসর জায়গা নেই। চারপাশের প্রকৃতিতে কোনো হঠাৎ বদল বা বড়োরকমের বৈসাদৃশ্য নেই—প্রতিটি শীর্ষ সবুজ গাছের আচ্ছাদনে আবৃত। ইতি আপনার বিশ্বস্ত, ডাব্লিউ এল ফারকুহর
দিনের পর দিন উপকূল অঞ্চলের সমতল ও তরঙ্গায়িত ভূমির উপর দিয়ে চলার পরে উসাগরার পার্বত্য অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের যাত্রাপথ আমার দলবলের কাছে বেশ একটা পছন্দসই বদল ছিল, তবে মাল-বোঝাই, দুর্বল প্রাণীদের জন্য খুবই কষ্টের। শিবিরে যখন পৌঁছালাম, ততক্ষণে দুটি প্রাণী কমে গেছে, তবে রেহেন্নেকো থেকে সাত মাইল দূরে মাকাতা নদী আমাদের প্রথম দফার ঋণজালে জড়াল। এখানে পাহাড়ের গভীর খাদে মিষ্টি ও পরিষ্কার জল অঢেল—কখনও শক্ত গ্রানাইটের নদীবক্ষের উপর দিয়ে, কখনো-কখনো ঘন লাল বেলেপাথরের উপর দিয়ে জল বয়ে যায়, নরম বেলেপাথরের বুকের ভিতর শীঘ্রই জলীয় কণা প্রবেশ করে আর পাথরের কণাগুলি অবিরত জলের সঙ্গে বয়ে যায় নীচের উপত্যকায়—তাকে সমৃদ্ধ করে; অন্যান্য গিরিখাতের ভিতর দিয়ে জল সবেগে, সগর্জনে গ্রানাইট ও কোয়ার্টজ শিলার উপরে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে বইতে থাকে।
৯ মে, আরও একবার এমন উচুঁ-নীচু পথ ধরে চলছিলাম--একবার করে পাহাড়ে চড়া আর তার পরেই অনেক নীচের উপত্যকার আবছা গভীরে নেমে যাওয়া—আচমকা মুকনডোকয়া এসে পৌঁছোলাম। সরু নীচু উপত্যকাটি সার সার নলখাগড়া, বেত আর কাঁটা ঝোপে ভরা, রুক্ষ ঝাউ গাছের সঙ্গে জড়াজড়ি করে আছে দানবাকার কলমিলতা—ঝাউ-এর কাণ্ড জড়িয়ে পাক দিয়ে উঠেছে—এমন শক্ত করে বেড় দিয়ে আছে যেন তাদের অবলম্বন হওয়ার জন্যই ঝাউ গাছটির জন্ম।
উপত্যকাটি কোথাও কোথাও মাত্র মাইলের এক-চতুর্থাংশ চওড়া—অন্যত্র আবার প্রস্থে প্রায় এক মাইল। দু-পাশের পাহাড়গুলি মিমোসা, বাবলা ও ঝাউগাছে ঢাকা, সটান খাড়া উঠে গেছে—একটি সাপের মতো এঁকেবেঁকে বয়ে যাওয়া নদী ও উপত্যকাকে ঘিরে রেখেছে পাহাড়।
মুকনডোকওয়া উপত্যকায় প্রবেশের অল্প পরেই, এমবুমি আর কাদেতামারের মধ্যে ১৮৫৭ সালে ক্যাপ্টেন বার্টন এবং স্পেকের চলা রাস্তাটি ধরলাম—কাদেতেমারেকে অবশ্য মিসংহি বলা উচিত, কাদেতেমারে তো গ্রাম-প্রধানের নাম। মুকনডোকওয়ার বাঁ-ধার ধরে চললাম। এই সময়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে আমাদের পথ বারে বারে দক্ষিণ পশ্চিম থেকে পশ্চিম, উত্তর, উত্তর-পুর্ব ইত্যাদি বিভিন্ন দিকে সরে যাচ্ছিল। তারপর আমরা নদী পারাপারের জন্য অগভীর জলের জায়গায় এসে পৌঁছালাম। নদী পেরিয়ে আরও আধ ঘণ্টা হেঁটে আমরা কিওরায় এসে পৌঁছালাম।
কিওরার এই গ্রামটা ছাগলের নাদি আর অজস্র বাচ্চাকাচ্ছায় ভরা—কুড়িটাও পরিবার বাস করে না এমন জায়গায় অত বাচ্চা যে কোথা থেকে এল! অতিশয় নোংরা গ্রাম। ঝাঁ ঝাঁ রোদ ঝাঁপিয়ে পড়ছে ছোট্ট একটু খোলা জায়গায়—কী তেজ রোদের! ১২৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেছে: মাছি এবং জানা-অজানা হরেক প্রজাতির পোকামাকড় থিকথিক করছে। যেমন শুনেছিলাম, এখানেই আমাদের তৃতীয় কাফেলাটির সন্ধান মিলল। বাগামায়ো থেকে কত যে প্রচুর জিনিস নিয়ে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল! এই কাফেলার দায়িত্বে অন্য কেউ না, স্বয়ং শ্বেতাঙ্গ ফারকুহর ছিল! সে পা ফুলে শয্যাশায়ী—হয়েছে ব্রাইটের অসুখ১, যে অসুখের উৎসে আছে অমিতাচার। আর নড়তে পারছে না, তার কাফেলার যা দশা সেজন্য যেন সে আর এগোতে অনিচ্ছুকও।
রেহেন্নেকোতে আমাশয়ে অসুস্থ থাকাকালীন অন্য যেসব কাফেলা আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, তাদের থেকে ফারকুহরের কাফেলার দুঃখজনক দশার বিবরণ শুনছিলাম। তাই শ-কে বলেছিলাম কাফেলার অবস্থার বিষয়ে যথাযথ তথ্য জানতে চেয়ে ফারকুহরকে চিঠি দিতে। সেই মতো শ সাহস করে নীচের চিঠিখানা লিখে ফেলেছিল—
প্রিয় ফারকুহার, মি. স্ট্যানলির অনুরোধে এই চিঠি লিখছি। আপনি কতখানি দুর্দশা ভোগ করেছেন, কতটা কাপড় খরচ করেছেন ও কতটা কাপড়ই বা বেঁচে আছে, ক-টা গাধা মারা গেছে ইত্যাদি সব বিশদে জানার উদ্দেশ্যে এই চিঠি। কতজন কুলিকে বরখাস্ত করেছেন আর কতজন দলের সঙ্গে আছে? গাধার পিঠের মালগুলো নিয়ে কী করেছেন? আপনার পথপ্রদর্শক কে? কী অবস্থা আপনার? জ্যাকোর কী হয়েছে, আর যে গাধাগুলো মরে গেল, তাদের কী হয়েছিল? আপনার শিবিরে এখন কী রকম মালপত্র আছে? আগামীকাল সকালে সারমিনকে উইলিমিঙ্গো ও বারিক্কার সঙ্গে ফেরত পাঠাবেন আর উপরের প্রশ্নগুলোর গুছিয়ে উত্তর দেবেন। দুই দিনের মধ্যে আমরা আপনার কাছে হাজির হব।
এই চিঠিটাতে যতই ব্যাকরণ ভুল থাক আর বানান ভুল থাক, আমার কাছে অন্তত এটা অনেক বেশি বোধগম্য। তৃতীয় কাফেলার নেতার কাছ থেকে এর যে উত্তরটি এল, সেটির সঙ্গে তুলনা করলে আমার ধারণা, পাঠকও তাই ভাববেন। তাতে এইরকম লেখা—
প্রিয় মি. স্ট্যানলি, সব ঠিক আছে, তবে কুলিদের পাওনা মেটাতে বেশ ভালো পরিমাণ কাপড় খরচা হয়েছে; এক গাঁটরি কাপড় পুরো খতম। আমার যে কিরনগোজি ছিল সে এক বদমাশ, তার থেকে তার কাপড় কেড়ে নিয়ে তাকে শিবির থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি। সে বলেছে যে সে আপনার কাছে যাবে। কিরাঙ্গাকে কিরনগোজি করেছি আর তাকে দশ ডটি দিয়েছি। এখানে খাবার খুব দামি; এক শুক্কায় মাত্র দুটি মুরগি মেলে, আর ছাগলের দাম পাঁচ ডটি। আমি এখান থেকে চলে যেতেও পারছি না।
গতকাল ছ-টা কুলি ভাড়া করেছি ও তাদের উরেদির সাথে পাঠিয়েছি। জুমা আপনার জন্য উগোগোয় অপেক্ষা করতে চেয়েছিল। জ্যাকোর শরীর খারাপ, কী হয়েছে জানি না—সে কিছুই করতে পারে না। ওয়েলমিংগো এখন আমার রান্না করে। আপনি কি আমাকে কিছু চিনি পাঠাতে পারেন? আপনার কোনো সাহায্য লাগলে বলবেন, তাহলে আমি আমার কুলিদের পাঠাব, আপনাকে সাহায্য করার জন্য। আপনি যেখানে আছেন আর আমার বর্তমানের জায়গাটির মাঝে আমার ন-টি গাধা মরে গেছে, একটা মাত্র বেঁচে আছে। সব কানিকি শেষ—কিছু মেরিকানি শুধু বাকি আছে।
মি. শ ও সেলিমকে আমার শ্রদ্ধা জানাবেন।
উদ্বিগ্ন হয়ে তার আর কাফেলার অবস্থা জানতে চাইলাম, আর পেলাম কিনা এমন মূল্যবান একটি প্রতিক্রিয়া। পুরো পাগল হয়ে গেলেও বোধহয় কেউ অন্যকে বিভ্রান্ত করার জন্য এর থেকে আরও ভালো কিছু ভাবতে পারে না।
প্রথম লাইনে বলেছে ‘সবকিছু ঠিক আছে’, অথচ তার পরেই যা লিখেছে তাতে তো সমস্ত কিছু ভুল বলেই মনে হয়। ব্যক্তিগত বিদ্বেষের জন্য কিরনগোজিকে তাড়িয়ে দিয়েছে; ও পঞ্চম কাফেলার প্রহরী জুমা নামের আমার এক এমগোওয়ানা সৈন্যকে চাইতেই সে দু-গাঁটরি মেরিকানি দিয়ে দিয়েছে—তার দাম ১৫০ টি স্বর্ণ-ডলার, ১৫০ ডটির কাপড় আছে তাতে, সেই দিয়ে পঞ্চাশটা লোকের কাফেলার বাগামোয়ো থেকে উন্যানইয়েম্বে-তক যাত্রার খাইখরচ মেটে। ‘তাঁর সমস্ত কানিকি শেষ’, কী ভয়ানক অসতর্কতা! সংক্ষেপে, এই চিঠিটা পড়ে কিছুই বুঝলাম না! ফারুকহর লোকটা কি জলাতঙ্ক রোগে পাগল হয়ে গেল! আর সেই জন্যই আমি তাড়াতাড়ি কিওরার প্রাচীরের ভিতরে এসে ঢুকলাম আর তার ছাগলের নাদির ঢিপির উপর খাটানো তাঁবুটি দেখলাম।
আমার গলা শুনে, ফারুকহর টলতে টলতে তার তাঁবু থেকে বেরোল। যে ফিটফাট সঙ্গীটি বাগামোয়ো থেকে যাত্রা শুরু করেছিল, সে কোথায়! পরিষ্কার দেখছি, টাঙ্গানিকার ওয়াবেম্বের২ মতো মোটা হয়েছে, আমরা যেমন ক্রিসমাস নৈশভোজের জন্য হাঁস ও টার্কিকে খাইয়ে দাইয়ে মোটা করি--বার্নামের৩ স্থূলকায়া মহিলাদের মতো শরীরের বিশেষ অঙ্গের ফুলে ওঠার একটি আকর্ষণীয় উদাহরণ হিসেবে আমি অবাক হয়ে ফারকুহরের ফুলো গাল ও ঘাড় দেখলাম। তার পাগুলিও বিশাল, হাতির মতো, গোদ হয়েছে বা যাকে বলে ড্রপসি: মুখটা মরা মানুষের মতো সাদা, সেটার কারণ অবশ্য শীঘ্রই বোঝা গেল যখন তার লোকরা জানাল যে সে দু-সপ্তাহ ধরে তাঁবুর বাইরে পা রাখেনি। সৈন্য ও কুলিদের যে ভাবে ইচ্ছে ব্যবহার করেছে—যে-কোনো সামান্য কাজও তাদের দিয়ে করিয়েছে। বদলে তাদের রোজ একটা করে ছাগল দিয়েছে, পাঁচ ডটি দাম এক-একটা ছাগলের! মাঝে মাঝে ছাগলের বদলে মুরগিও দিয়েছে।
কিওরা গ্রামকে পাত্তা না দিয়ে, একটি হাওয়া-বাতাস খেলা পাহাড়ের মাথায় আমরা শিবির করলাম। তাঁবু খাটানো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, জন্তুদের দিকে নজর দেওয়া হল আর কাঁটা ঝোপ দিয়ে জায়গা ঘিরে নেওয়া হল। তারপর চারজন লোক ফারকুহরকে আমার তাঁবুতে বহন করে আনল। তাকে অসুস্থতার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, সে বলেছিল যে সে জানেই না এটা কেন হয়েছে। তার মনে হয়েছিল, কোনো ব্যথা নেই। আমি যখন বললাম, ‘কখনো-কখনো ডান পাশে ব্যথা মনে হয় না?’—‘হ্যাঁ, ব্যথা করে মনে হচ্ছে; কী জানি, ঠিক জানি না।’—‘মাঝে সাঝে বাম স্তনের উপরে—একটা দ্রুত দপদপানি, সেই সঙ্গে শ্বাসকষ্টও হয়?’—‘হ্যাঁ, মনে হচ্ছে হয়। মাঝে মাঝেই দ্রুত শ্বাস নিতে হয়।’ তাও সে বলে যাচ্ছে যে তার একমাত্র সমস্যা পায়ে, সেটা ফুলে বিশাল আকার হয়েছে। খাওয়ার কোনো কমতি নেই, তবুও সে পায়ে জোর পায় না।
(ক্রমশ…)