ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হল আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রথম লক্ষ্য বাগামোয়ো শহরে পৌঁছে পাক্কা দেড় মাস আটকে সেখান থেকে একে একে রওনা হয়েছে অভিযানের মোট পাঁচটি কাফেলা। চলছে অভিযানের মূল কাহিনী। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। চলছে উজিজির পথে এগিয়ে চলার বর্ণনা। তরজমায় স্বাতী রায়
সর্দার একজন লম্বা শক্তপোক্ত লোক। তাকে ও তার দলবলকে বসার জন্য বললাম। তারা আমার দিকে, আমার মুখের দিকে, আমার জামাকাপড় ও বন্দুকের দিকে এমন খুশিভরা অবাক চোখে তাকাতে লাগল যে কী বলব! কিছুক্ষণ মন দিয়ে আমাকে দেখল, তারপর একে অপরের দিকে তাকাল, আর শেষে হো হো করে গলা ছেড়ে হেসে উঠল আর আঙ্গুল মটকাতে লাগল। তারা কিন্যামওয়েজি ভাষায় কথা বলছিল, আমার দোভাষী মাগাঙ্গাকে বললাম যে সর্দারকে জানাও আমি তাদের দেখে কত খুশি হয়েছি। কিছুক্ষণ সৌজন্য বিনিময়ের পরে, আর একে অপরের দিকে চেয়ে হাসার দারুণ একটা প্রতিযোগিতা চলার পরে, সর্দার আমার বন্দুক দেখতে চাইলেন। একটানা ষোলটা গুলি ছোঁড়ার উইনচেস্টার রাইফেল দেখে সর্দার উত্তেজিত হয়ে তার হাজার হাজার প্রশংসা করল; পুঁচকে প্রাণঘাতী রিভলভারের সৌন্দর্য আর কারিগরিকে তারা মানুষের তৈরি বলে ভাবতেই পারছিল না আর সেই দেখে তারা এতই কৃতার্থ হয়ে বকরবকর শুরু করল যে আমিও তাদের আরও জিনিসপত্র দেখাতে ব্যগ্র হলাম। দো-নলা বন্দুকের শক্তিশালী গুলির শব্দে তারা দারুণ চমকে লাফিয়ে উঠল আর তারপর হাসতে হাসতে ফের বসে পড়ল। ক্রমশই আমার অতিথিদের উৎসাহ বাড়ছিল আর তারা এমন একে অপরের তর্জনী চেপে ধরছিল করছিল, আঙুলে আঙুল প্যাঁচাচ্ছিল, টানাটানি করছিল যে আমি তো ভয়ই পাচ্ছিলাম যে আঙুল খুলে না আসে। তাদের সাহেব আর আরবদের মধ্যে পার্থক্য বোঝালাম। তারপরে আমার ওষুধের বাক্সটা টেনে বের করলাম, সুন্দর করে সাজানো সার সার ওষুধের শিশি দেখে একযোগে সোল্লাসে চেঁচিয়ে উঠল। সর্দার এর মানে জানতে চাইলেন।
“দওয়া,” আমি ছোট্ট করে গম্ভীর উত্তর দিলাম, এই শব্দটার মানে হতে পারে- ওষুধ। “ওহ-হ, ওহ-হ,” তারা সপ্রশংসভাবে বিড়বিড় করল। অল্পক্ষণের মধ্যে আমি অকুণ্ঠ প্রশংসা পেলাম, আর তাদের এযাবৎ দেখা আরবদের সেরাদের তুলনায়ও আমার শ্রেষ্ঠত্ব খুবই স্পষ্ট। “দওয়া, দওয়া,” তারা বলতে থাকল।
ওষুধ হিসেবে ব্যবহারযোগ্য ব্র্যান্ডির একটা শিশি খুলে আমি বললাম, "এটা হল কিসুঙ্গু পম্বে" (সাদা মানুষের বিয়ার);" এক চামচ নাও আর খেয়ে দেখো," এই বলে তার হাতে তুলে দিলাম।
" অ্যাঃ অ্যাঃ, ওহ, আঃ! কি এটা! এহ! সাদা মানুষরা কি কড়া পানীয় খায়! উঃ, আমার গলাটা কেমন জ্বলছে!"
"আহ্, তবে এটা খুব কাজের," আমি বললাম, " অল্প পরিমাণে খেলে মানুষ আবার শক্তি ফিরে পায়, সুস্থ বোধ করে; তবে বেশি খেলে সর্বনাশ, মরেও যায়।"
"আমাকে অল্প দাও," একজন বলল; “আর আমাকেও”, “আমাকেও”, “আমাকেও”, বলে সবাই হাত বাড়াল আর শীঘ্রই সবাই চেখে দেখল ।
এরপর আমি একটা ঘনীভূত অ্যামোনিয়ার একটি বোতল বার করলাম, বোঝালাম যে এটা সাপের কামড় এবং মাথা ব্যথার ওষুধ; সুলতান সঙ্গে সঙ্গে বলল যে তার মাথায় ব্যথা হচ্ছে, তাই তার অল্প একটু চাই। তাকে চোখ বন্ধ করতে বলে, আচমকা বোতলটা খুললাম আর মহামহিমের নাকের সামনে ধরলাম। ফল হল ম্যাজিকের মত। সে গুলি খাওয়ার মত পিছনে পড়ে গেল, আর তার শরীরটা এমন বেঁকে চুরে গেল যে বলার কথা নয়! তার চেলারা অট্টহাসি হেসে উঠল আর হাততালি দিয়ে উঠল, একে অপরকে চিমটি কাটতে লাগল, আঙ্গুল মটকাতে লাগল ও আরও অনেক মজার মজার কাজ করতে লাগল। পৃথিবীর যে কোনো মঞ্চে এ ধরনের দৃশ্য উপস্থাপন করা হলে, দর্শকদের ওপর তার প্রভাব তক্ষুনি দেখা যেত, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস ; আমি যেমনটা দেখেছি, তারা যদি সেটা দেখতে পেত, তাহলে সবাই হাসতে হাসতে পাগল হয়ে যেত। অবশেষে সুলতান ফের উঠে বসল, তার গাল বেয়ে চোখের জল ঝরছে, গোটা শরীরটা হাসিতে কাঁপছে, তারপর সে ধীরে ধীরে 'কালি' শব্দটা উচ্চারণ করল, গরম, কড়া, দ্রুত বা তীব্র দাওয়াই। তার আর দরকার নেই, তবে বাকি সবাই অন্তত একবার শুঁকে দেখার জন্য হুড়োহুড়ি করতে লাগল, আর যেই না শোঁকা, অমনি সবাই হোহো-হিহি শুরু করল, নিজেদের সামলাতেই পারছে না আর। গোটা সকালটাই এই রাষ্ট্রীয় সফরে কেটে গেল। সংশ্লিষ্ট সকলেই ভারি খুশি। বিদায় নেওয়ার সময় সুলতান বলল, “এই সাহেবরা সব জানে, আরবরা এদের তুলনায় কিস্যু না!”
সেদিন রাতে হামদাল্লাহ নামের একজন গাইড পালাল, সঙ্গে নিয়ে গেল তার মজুরি (২৭ ডটি কাপড়) আর একটা বন্দুক। সকালে তাকে অনুসরণ করে আর লাভ ছিল না। কারণ তাহলে আবার আমি আরও অনেক দিন আটকে পড়ব; অত সময় নষ্ট করা যাবে না। তবে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম যে আমি উপকূলে পৌঁছানোর আগেই জনাব হামদাল্লাহ সেই ২৭ ডটি কাপড়ের দাম উশুল করতে বাধ্য হবে।
বুধবার, চৌঠা অক্টোবর, আমরা গোম্বে নদীর দিকে চলছি। মান্যারা থেকে সোয়া চার ঘণ্টার পথ।
সবে আমার বন্ধু মা মান্যারার ঢেউ খেলানো ভুট্টা ক্ষেত ছাড়িয়েছি, দেখি এক ঝাঁক অভিজাত দর্শন জেব্রা। ঘণ্টা দুই পরে আমরা একটা বিশাল, বহুদূর ছড়ানো ঘাস জমিতে প্রবেশ করলাম - দিগন্ত ছড়ানো সবুজ ঘাস জমি , এখানে ওখানে ছোট ছোট ঝোপ ঝাড়, আর মাঝে মাঝে এক একটা ডালপালা মেলা গাছ - বিপুল বিস্তৃতি আর মহিমা-উজ্জ্বল রূপের কারণে দৃশ্যটা অবশ্যই আফ্রিকাতে দেখা সেরা দৃশ্যগুলোর মধ্যে একটা। এর সঙ্গে যোগ করা যাক, অজস্র মহিষ, জেব্রা, জিরাফ আর অ্যান্টিলোপের দল, দলের পর দল- প্রথমে দেখে তো আমি ছোট ছোট টিলা ভেবেছিলাম। আফ্রিকায় প্রথম পা দেওয়ার সময় যেমন উত্তেজনা হয়েছিল, এই সব জন্তুর দল দেখে তেমনই উত্তেজনায় আমার শিরার মধ্যে রক্ত ফুটতে লাগল। গোম্বের মন্থর স্রোতের তীর বরাবর নিঃশব্দে সমতলের উপর দিয়ে হেঁটে আমাদের শিবিরে পৌঁছলাম।
শেষ পর্যন্ত এখানেই মিলল শিকারির স্বর্গ! ওইসব ছোট হরিণ ও বুনো শুয়োরের পাশে আমার আগেকার শিকারগুলো কতই না তুচ্ছ আর নগণ্য , স্যাঁতসেঁতে ঘাস ও কাঁটাযুক্ত জঙ্গলের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ পথচলা যে আত্মশক্তির কী নির্বোধ অপচয়! উপকূল অঞ্চলে থাকাকালীন আফ্রিকার জঙ্গল বিষয়ে আমার প্রথমদিককার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা কি খুবই মনে ছিল না! কিন্তু এই ঘাস জমি- এই দৃশ্যের সঙ্গে সমান তালে তাল মেলাতে পারে এমন কোন অভিজাত মানুষের উদ্যান? এখানে কচি নরম, মখমল তুল্য ঘাসের বিস্তৃতি, ছড়ানো ঝোপের নীচের গা-জোড়ানো ছায়া; রাইফেলের সীমানার মধ্যে ঘুরতে থাকা বড় বড় বিভিন্ন রকমের শিকার - এই সব দৃশ্য চোখের সামনে দেখতে পাওয়াও যেন এত লম্বা দক্ষিণের ঘুরপথ ধরে যাওয়ার জন্য ক্ষতিপূরণ! শিকারিকে ভয় দেখাতে, আচ্ছা মত শিকারের পরে তাকে দমিয়ে দেওয়ার জন্য এখানে কোন কাঁটাঝোপ বা দুর্গন্ধযুক্ত জলাজমি নেই। নিজের পরাক্রম প্রদর্শনের জন্য কোনো শিকারি এর থেকে ভাল জায়গা আশা করতে পারে না।
গোম্বের খাড়ির বাঁকে একটা দহের সামনে শিবিরের জায়গা ঠিক করা হল। আমি আমার দো-নলা মসৃণ-নলের বন্দুক নিয়ে ঘাস জমিতে গিয়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরতে লাগলাম। একটা ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে দেখি শতখানেক গজের মধ্যে তিনটে নাদুস নুদুস স্প্রিং-বোক কচি ঘাসের মধ্যে নড়ে চড়ে বেড়াচ্ছে। আমি হাঁটু গেঁড়ে বসে গুলি চালালাম; একটা হতভাগ্য হরিণ আচমকা উপরের দিকে লাফিয়ে উঠল আর তারপরই মরে পড়ে গেল। এর দলের বাকিরা যেন বাতাসে উড়ছিল, প্রায় বারো ফুট লম্বা লম্বা লাফ দিচ্ছিল, যেন চারপেয়েরা জিমনাস্টিক অনুশীলন করছে, ভারতীয় রাবারের বলের মতন লাফিয়ে উঠে তারা অদৃশ্য হয়ে গেল; একটা ঝোপ তাদের চোখের আড়াল করে দিল। সৈন্যরা বন্দুকের শব্দ শুনে শিবির থেকে ছুটে এসেছিল, হইচই করে তারা আমার সাফল্যকে স্বাগত জানাল, আর আমার বন্দুকধারী বেয়ারা তার ছুরি জানোয়ারটার গলায় রেখে 'বিসমিল্লাহ' বলে চিৎকার করে ধর থেকে মুণ্ডু আলাদা করে দিল।
মাংস সংগ্রহের জন্য শিকারিদের এবার পূর্ব ও উত্তর দিকে যেতে বলা হল - প্রতিটা কাফেলায় সাধারণত ফান্ডিরা থাকে, যাদের বিশেষ কাজই হল শিবিরের জন্য মাংস শিকার করা। এদের মধ্যে কেউ কেউ জন্তুর পিছু নেওয়ার কাজে পটু, তবে তারা মাঝে মাঝেই খুব বিপজ্জনক অবস্থানে গিয়ে পড়ে, এদের অস্ত্রগুলো এতই ভুলভাল যে তাই দিয়ে জন্তু মারতে হলে যথেষ্ট কাছে না গেলে মোটেই চলে না।
স্প্রিং-বোকের মাংস, গরম গরম ভুট্টার পিঠে আর এক কাপ সুস্বাদু মোকা কফি দিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সারা হল। তারপর কালুলু ও মাজওয়ারা নামের দুই বালক বন্দুক বাহককে সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে হাঁটতে শুরু করলাম। যতই ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে চলছি, ছোট্ট পার্পুসিলা পোকারা খরগোশের মত আমার থেকে দূরে পালাচ্ছে; মধু-পাখিরা কিচির-মিচির করতে করতে গাছ থেকে গাছে উড়ছে, যেন আমি শুধুমাত্র তাদের সন্ধানে থাকা গুপ্ত মৌ-ভাণ্ডার খুঁজছি, কিন্তু না! আমি তো পারপুসিলা বা মধু কোনটাই চাইনি। আমি একটা বড়সড় কিছু খুঁজছিলাম। আঁকাবাঁকা গোম্বের নদীর পাশের গাছের মাথায় বসে থাকা ধারালো চোখের শঙ্খচিল ও বাস্টার্ড পাখিরা আমাকে দেখা মাত্র যেভাবে উড়ে পালাল তাতে মনে হয় দুদলের পাখিরাই ভেবেছিল আমি তাদের মারতেই এসেছি। আহ.... না! হার্টবিস্ট, জেব্রা, জিরাফ, ইল্যান্ড আর মহিষ ছাড়া আর কিছুই মারব না আজকে! গোম্বের পার ধরে প্রায় এক মাইল হাঁটার পরে, অনেকদিনের পরে নদীর জলের বিস্তার, আর অনেক দূর অবধি তার ছলছলিয়ে বয়ে যাওয়া দেখার আনন্দ দু'চোখ ভরে দেখতে দেখতে, এমন একটা দৃশ্যের সামনে এসে দাঁড়ালাম যে মন-প্রাণ ভরে গেল; মাত্র দেড়শ গজের মধ্যে পাঁচটা, ছটা, সাতটা, আটটা, দশটা জেব্রা তাদের সুন্দর ডোরাকাটা শরীর দুলিয়ে একে অপরকে কামড়াচ্ছে। এত সুন্দর, এত রোমান্টিক একটা দৃশ্য - আমি যে মধ্য আফ্রিকায় আছি সেটা এমন ভালভাবে আর কখনই বুঝিনি। ক্ষণিকের জন্য ভারি গর্ববোধ করলাম - এই এত্তখানি জায়গার মালিক আমি আর সেখানে এত দারুণ দারুণ প্রাণীরা থাকে। সীসার গুলির নাগালের মধ্যে থাকা এই এত সব সুন্দর সুন্দর প্রাণী, এরা হল গোটা আফ্রিকার গর্ব, এদের মধ্যে যে কোন একটাকে আমি পছন্দমত বেছে নিয়ে দখল করতে পারি। কোন অর্থ লাগবে না, কোন মূল্য দিতে লাগবে না, এরা শুধুই আমার; তবু, এটা জেনেও, আমি দুবার রাইফেল নামিয়ে নিলাম, এই রাজকীয় জানোয়ারদের ঘায়েল করতে ইচ্ছা হল না, কিন্তু - দুম! আর একজন রাজকীয় জানোয়ার মাটিতে পড়ল আর বাতাসে পা ছুঁড়ে ছুঁড়ে যুদ্ধ করতে লাগল। ইসস, দুঃখের ব্যাপার! কিন্তু, জলদি, গলার চারপাশের সুন্দর ডোরাকাটা দাগের ভাঁজের মধ্য দিয়ে তীক্ষ্ণ ধারালো ছুরি ঘুরিয়ে আনতেই; ইসস কি বিশ্রী গভীর ক্ষত! ব্যস, আমার পায়ের তলায় এখন একটা চমত্কার প্রাণী! হুররে! আজ রাতে উকোনোঙ্গো জেব্রার স্বাদ পাব।
ভেবেছিলাম একটা স্প্রিং-বোক আর একটা জেব্রা একদিনের শিকার হিসেবে যথেষ্ট, বিশেষ করে একটা লম্বা পথ পাড়ি দেওয়ার পরে। গোম্বে নদীতে অনেকটা জায়গা জুড়ে খুব গভীর জল, নদীটা সবুজ জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে উঁকি দিয়েই মিলিয়ে যাচ্ছে। শান্ত, ধীর নদী। পদ্মের পাতাগুলি আলতো করে তার বুকে ভাসছে, ভারি সুন্দর, মনোরম, গ্রীষ্ম দিনের স্বপ্নের মত প্রশান্ত। নদীটা আমাকে স্নান করার জন্য ডাকতে থাকল। একটা ছড়ানো মিমোসা গাছের নীচে সবচেয়ে ছায়াঘেরা জায়গাটা বেছে নিলাম, সেখান থেকে ঘাসে ঢাকা মসৃণ জমি ঢালু হয়ে নেমে গেছে স্থির, স্বচ্ছ জলের দিকে। আমি সবে পোশাক খুলে গোড়ালি-জলে নেমেছি আর জলে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য হাত দুটো জড়ো করেছি, এমন সময় দেখি কি, ঠিক যেখানে আমি ঝাঁপ দিতে যাচ্ছিলাম সেখানে একটা বিশাল লম্বা শরীর ভেসে উঠল। হায় ভাগবান, এযে একটা কুমির! আমি সঙ্গে সঙ্গেই পিছন দিকে লাফ মারলাম আর সেজন্যেই বেঁচে গেলাম , কারণ দৈত্যটা ভারি হতাশ হয়ে ফিরে গেল, ব্যাটার মুখের থেকে বেঁচে ফেরার জন্য নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ালাম আর সেই সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করলাম যে আর কখনো কোন আফ্রিকার নদীর বিশ্বাসঘাতক শান্ত রূপ দেখে ভুলব না।
(ক্রমশ)