- ঢের মনে আছে বাসন্তী রঙের শাড়ি পরা এক বিদূষী নারীর সামনে পা মুড়ে বসে নতুন স্লেটের ওপর চকখড়ির এলোমেলো টানে একটা বিচ্ছিরি 'অ' লিখেছিলাম। ঠিক হল কিনা বুঝতে বা, ভুলের জন্য অযথা কপালে বারকয়েক হাতজোড়া ঠেকিয়ে কি বলতে চেয়েছিলাম কে জানে, 'এবারের মতো ক্ষমা করে দাও মা' ? আজ আর মনে পড়ে না সবটা। 'হাতেখড়ি' কি আর বসন্তের আগমনী হয়ে বাঙলার ঘরে ফি বছর ফিরে ফিরে আসে ?
শুরু এভাবে হোক বা না হোক, পাঁচ ছ বছরের বাঙালি শিশুর মাথা যে শিক্ষা অশিক্ষার মাঝের পাঁচিলটা অনায়াসে ভেঙে ফেলে জীবনের আনন্দে ঢুকে পড়ে তার অন্যতম কারণ, প্রচলিত লৌকিক বাংলা ছড়া। যা মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়তে পাঠশালা বা শহরের স্কুলের হাজিরা খাতায় নাম তোলার প্রয়োজন হয় না। এতোটাই বাতাসে ভেসে বেড়ানোর রেওয়াজ ছিল বাংলা সাহিত্যের তুখোড় এই শৈলীর।
বসন্তের উৎসব পার করেই নতুন বাংলা বছরের গোড়াপত্তন। নানা ঋতুর নানা উৎসবের হাতছানি।
বাংলার সব ঋতু'রই আবাহন বিসর্জনের এক নিজস্ব ভাষা ভঙ্গি আছে। আবহমান কাল থেকে এই পরম্পরায় অভ্যস্ত হয়ে আছি আমরা। শিশুকাল থেকে পাওয়া এই একটা ব্যাপারে আমরা ভাষার কাছে ঋণী।
বাঙালি শিশু, যে শিশুকাল আমার মধ্যে ছিল , কোনোদিনও শরত এলে আমরা মুখে মুখে আওড়াতে ভুলিনি-
এসেছে শরৎ, হিমের পরশ/লেগেছে হাওয়ার প'রে
সকাল বেলায় ঘাসের আগায়/ শিশিরের রেখা ধরে।
এর স্বতস্ফূর্ত উচ্চারণে নির্গত অ্যাড্রিনালিনে নির্মিত হয়েছে বাঙালি শিশুর হৃদয়, যা অনায়াসে শরতের আকাশে উৎসবের রং ছড়িয়ে দিয়েছে এতকাল। সেই শিশু আমি বা আমরা গত কয়েক দশক পেরিয়ে অন্য ভুবনে হাঁটতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি এখন। আমাদের প্রজন্ম বহুকাল পার করে এসেছে যে শিশুকাল তার আদ্যন্ত কাঠামো ছিল মাতৃভাষায় ছড়া,ছড়া থেকে বাংলার রুপকল্পনা। ঋতু আসতো ছড়ায় ছবিতে কল্পলোকের ফানুস উড়িয়ে।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর যখন ছুটির ঘন্টা বাজে, একগুচ্ছ ফুল এক উর্দ্ধশ্বাস দৌড়ে ঝরে পড়ত পাঠশালার চৌহদ্দি ডিঙিয়ে সটান রাস্তায়। ওদের মুখে তখন-
'কী করি আজ ভেবে না পাই/ পথ হারিয়ে কোন বনে যাই..'..'আজ আমাদের ছুটি ও ভাই / আজ আমাদের ছুটি..আ হা হা হা হা ..
কখন যে হাত ফসকে বইএর ব্যাগ উধাও হয়ে গেল ঘরের কোণে, ছুটির আনন্দে সে তো কখনো মনে থাকতো না। ছুটি যে স্বাধীন করেছে শিশু ভোলানাথকে। ছুটি যে উৎসবে লাগাম ছাড়া আনন্দের গোড়াপত্তন তা ফুলেরা সম্যক বুঝে যেত।
খুব বেশিদিন নয়, মাত্র অর্ধশতক আগের কথা এসব। কোন্ বিত্তে এই ফুলের শিশুদের অবস্থান তা বোঝার বয়স তাদের ছিলনা। তাদের পাপড়ি মেলে জীবনের দিকে প্রথমবার চোখ তুলে তাকানোর সেই মধুর কালপর্বে মুখে মুখে ছড়ার অবাধ গতায়াত ছিল। যে বাংলা ছড়ায় তাদের বর্ণপরিচয়ের হাতেখড়ি সেই অ-এ অজগর সত্যিই তেড়ে আসে কিনা বা আ-এ আমটি পেড়ে খাওয়া কতটা সহজলভ্য তা তাদের কল্পনা শক্তিকে উস্কে দিতে যথেষ্ট ছিল। যে কল্পনায় রং তুলির কাজটা অনায়াসে করে দিত তাদের ঠোঁটের ফাঁক আলগা হয়ে বেরোনো মরমী বাংলা ছড়া। বা, বাস্তবের হাটের যে অতুলনীয় রূপকল্প যেমন, উচ্ছে বেগুন পটল মুলো/ বেতের বোনা ধামা কুলো/ সর্ষে ছোলা ময়দা আটা / শীতের রাপার নক্শা কাটা.., তা কি সংসার যাপন সম্পর্কে শিশু হৃদয়ে এক আবিলতা এনে দেয় না ? জীবনের সহজিয়াকে বুঝতে কোমল হৃদয়কে কি ছড়ার এই ছবি যথেষ্ট উৎসাহ দেয় না ?
যে ছড়াতে পল্লীবাংলার ঋতুবদলের ছবি শিশুমনকে প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে আসে তা তো স্মৃতিতে অমর হয়ে থাকার কথা। আমরা কি কোনো দিন ভুলে যাবো-
আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে/ বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে..। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ জড়িয়ে আছে যার পরতে পরতে। চিক্ চিক্ করে বালি, কোথা নাই কাদা,/ একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা। অথবা, আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভর ভর/ মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর।
এ তো গেল রবীন্দ্রনাথ জানার সহজপাঠ। বাংলার শিশু সমাজ যাঁকে এক কথায় হৃদয়ে জায়গা করে দিয়েছিল। কে যেন ততক্ষণে আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে অন্য কাড়ানাকাড়া। রিন্ রিন্ করে বেজে চলেছে সুকুমারের আবোল তাবোল।
বাবুরাম সাপুড়ে, কোথা যাস বাপুরে ?/ আয় বাবা দেখে যা, দুটো সাপ রেখে যা..
ঠিক এই 'আবোলতাবোলে' ই ছোটদের মজা পাওয়া, কৌতুকের বা হাস্যরসের অতলে যাওয়ার সুযোগ আসে।
আয়রে ভোলা খেয়াল-খোলা / স্বপনদোলা নাচিয়ে আয় / আয়রে পাগল আবোল তাবোল / মত্ত মাদল বাজিয়ে আয়।
এ এক অনাস্বাদিত আনন্দ। 'নন্ সেন্স' বা আবোল তাবোল বাক্যের মজায় ডুবে যাওয়ার আনন্দ। শিশুদের হৃদয় যেন বাস্তব অবাস্তবের অদ্ভুত খেলায় মেতে ওঠে।
পাঠের সুখ আর মনের জড়তা কাটিয়ে শিশুমনের স্বাভাবিক বিকাশের রাস্তা পাকা করে দেয় এসব লাইন।
বাংলার শিশুপাঠের কালজয়ী ছড়া মাতৃভাষায় শিক্ষার যে শক্ত বুনিয়াদ গড়ে তুলেছিল তা কোন্ বাপ মা অস্বীকার করবে? ছড়াই যেহেতু তাদের শিশুর মাতৃভাষায় প্রথম হাতেখড়ি, তাই ছড়ার বই হাতে হাতে পৌঁছে যাওয়ার রেওয়াজ ছিল কয়েক দশক জুড়ে। শিশুপাঠ্য ছড়ায় বাংলা ভাষা এমনই সমৃদ্ধ হয়েছিল। দুই বাংলার অগুন্তি ছড়ায় জমজমাট আনন্দ ছোটদের মাতৃভাষার প্রতি দুর্দমনীয় টান তৈরি করতে সময় নেয় নি। যা পাঠ্য তা খেলার ছলে জীবনের গভীরে চলে যেত শিশুর। কল্পনায় ভর করে বাঙালি শিশুর মনন এভাবেই ছড়ায় ছবিতে অভ্যস্ত হয়ে যায়।
ছড়া ছড়িয়ে পড়ে মাঠে ঘাটে শিশুর খেলাঘরে। বা, স্বপ্নের নিরবচ্ছিন্ন অবকাশে।
ছড়া ও ছড়াকারের ছড়াছড়ি ছিল দুই বাংলায়। শুধু শ্রুতির ওপর জোর দিয়েছিলেন অন্নদাশঙ্কর। তার ছড়ায় যে তীক্ষ্ম ব্যঙ্গ ছিল তা শিশু কিশোরের গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ' ইলশে গুঁড়ি ' বা 'দুরের পাল্লা', জসীমউদ্দীনের ' 'রাখাল ছেলে' কোন বাঙালি শিশুর মুখে মুখে ফেরেনি ?
কিন্তু, কাল যত তার নিজের গতিতে এগিয়েছে, জীবনের সহজিয়া, ছড়া থেকে প্রাপ্ত কল্পলোক শিশু মানস থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
আজ বাঙালি শিশুর জীবনে বাংলার অমর ছড়ার কোনো প্রভাব প্রায় নেই। তার কল্পলোক থেকে বাঙালি জীবনের ছন্দ ও চলন তাই গোড়া থেকে অনুপস্থিত।
ঠিক এই জায়গাতেই জমা হয়েছে যাবতীয় প্রশ্ন।
জাতি যখন তার স্বত্তার অহঙ্কার বা অভিমান থেকে অধিকারের দাবিতে স্বর উঁচুতে তুলে ধরতে চায় ঠিক তখনই আঘাত নেমে আসে। আমরা তখন প্রত্যাঘাতে কতটা প্রস্তুত তা নির্ভর করে জাতির নিজস্ব অস্মিতা কতটা জোরালো তার ওপর। এই অস্মিতা আসলে মাতৃভাষার প্রতি দুর্মর টান ছাড়া দানা বাঁধেনা। কোনো এক বা একাধিক প্রজন্মের দায়বদ্ধতা নয় এটা। কোনো নির্দিষ্ট কালের গণ্ডিতে বাঁধা পড়ে থাকার কথাও নয়। কাল থেকে মহাকালে যদি তাকে টেনে নিয়ে যাবার, তাকে চিরস্থায়ী করা সম্ভব করতে হয় তাহলে শিক্ষায় মাতৃভাষার চর্চা অবশ্য করণীয় হয়ে যায়।
শিশুকালকে তাই কোনোভাবেই মাতৃভাষা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা যায় না। শিশু হৃদয়ের সেই উদ্বেল ভাষাপ্রেম যদি স্বাভাবিক অনুশীলনে ধরে রাখা যায় তবেই জাতি ওপর আস্থা রাখা যায়। কিন্তু,শিশু হৃদয়ের বিকাশে বাংলা ছড়ার প্রভাব কি আর সেভাবে আছে ?
এ তো গেল একটা দিক। ছড়া প্রসঙ্গ থেকে একটু সরে খেলার মাঠে যদি একটু তাকানো যায়, তাহলে আরো একটা প্রশ্নের সামনে আমাদের পড়তে হবে।
শিশুকালের মস্তিষ্ককে চাপমুক্ত রাখতে হলে যে তাকে খেলার সময় দিতেই হয়, শাসনের এই সরল ব্যাকরণকে এখন প্রায় অস্বীকার করা হয়। কত গ্রামীণ খেলা যে ক্রমশ বিস্মৃত হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। কিছু কিছু বাল্য খেলার সাথে বাংলা ছড়া যেন অঙ্গাঙ্গী ভাবে মিশে আছে। যেমন, কানামাছি ভোঁ ভোঁ/ যাকে পাবি তাকে ছোঁ, বা এলাডিং বেলাডিং সইল/ কিসের খবর আইলো.. ইত্যাদি।
অলস দুপুর শিশু কিশোরের মনকে বহির্মুখি করে তুলে তাকে নানা বিচিত্র খেলায় জড়িয়ে নিত। গ্রামীণ বা কিঞ্চিত নগরকেন্দ্রিক সেসব খেলা হারিয়ে যেতে বসেছে এখন। ছেলেদের ড্যাংগুলি বা মেয়েদের চু কিত কিত কোথায় গেল ? কোথায় গেল হাডুডু বা বাকবন্দী ? গ্রাম শহর নির্বিশেষে দুপুর বিকেল জুড়ে শিশু কিশোরের উদ্দাম দৌড়ঝাঁপ কোথায়, যা একসময় বাংলার জাতীয় জীবনের কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদ নিয়ে হাজির হতো ? যাতে নজর থাকতো স্বাস্থ্য চর্চার খুঁটিনাটি উপকরণ গুলো।
একটা কোমল শিশু হৃদয় গড়ে তোলার জন্যে বাঙালি পিতামাতার আকুতি ছিলো শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে তার শিশুকে মাতৃভাষা চর্চা ও খেলাধুলোয় গড়েপিটে তোলা, অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু, সেই শুদ্ধ লক্ষণের কালপর্ব আমরা পেরিয়ে এসেছি। একালে এমন দৃষ্টান্ত বিরল।
যে বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটা জাতি তার নিজস্ব চরিত্রের ইমারত শক্ত করে তা হলো তার প্রবল মাতৃভাষা প্রেম। জীবনযাপনে তার অবিরাম চর্চা ছাড়া যার নাগাল পাওয়া কঠিন। কিন্তু, কালের গর্ভে সব হারানোর এক ভেল্কি বাঙালি গত অর্ধশতাব্দী ধরে দেখে আসছে। এ ভাষার নাকি অর্থনৈতিক শক্তি দুর্বল। তাই যুগের সঙ্গে তাল রাখতে বাপ মায়েরা বাধ্য হয়েছে মাতৃভাষা শিক্ষা থেকে তাদের সন্তানদের সরিয়ে নিতে। দুনিয়া প্রতিযোগিতামূলক- এই লব্ধ ধারণা থেকে তারা সন্তানের শিক্ষার ভার ইংরেজি মাধ্যম ব্যবস্থায় সমর্পণ করতে দ্বিধা করেননি। এই ব্যবস্থা মাতৃভাষা শিক্ষায় যে বিপদের দরজা খুলে দিচ্ছে তা দেখার ভার বাঙালির আধুনিক অভিভাবকরা নিতে রাজি হননি।
তাই যা হবার তা হয়েছে। নতুন শিশু কিশোর প্রজন্ম আর বাংলা ছড়ায় স্বচ্ছন্দ নয়। যত না তারা ইংরেজি রাইমে পোক্ত। বিকেলের খোলামেলা হাওয়ায় তাদের খেলা আর দেখা যায়না। তাদের এখন সেসবের সময় নেই।
ফলে, গত অর্ধশতাব্দী জুড়ে বাঙলা ও বাঙালি যে মহার্ঘ বস্তুটি খুইয়ে বসে আছে তা হল তাদের শিশুর কোমল বাঙালি হৃদয়ের নিগঢ় বা আর্কেটাইপ। ছড়া,ও খেলায় যা একসময় উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হয়েছিল। বাংলা ছড়ায় ভর করে তার কল্পনা আর জেগে ওঠে না খোকা মাছ ধরতে মায়াপুরের বিলে গেলে সত্যিই কি সেখানে ছিপ নিয়ে গেল কোলাব্যাঙে/ মাছ নিয়ে গেল চিলে ? একবিংশ শতাব্দীর মিশনারি ব্যবস্থায় তাদের কাছ থেকে এর জবাব পাওয়া সোনার পাথরবাটির মতোই লাগছে ! আমরা কি তবে শুধুই আর একবার সমস্বরে ফিরে আসার ডাক দেব তাদের- 'মত্ত মাদল বাজিয়ে আয় ?'
বেশ ভাল লেখা প্রবুদ্ধ।।।।।।।।।।।।।।।
আমাদের কৈশোরে স্বনামধন্য গায়ক শ্রী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে একটি গান শুনেছিলাম ।
গানটি হল- ছেলেবেলার গল্প শোনার দিনগুলি এখন কত দূরে।
আর আসেনা রাজারকুমার পক্ষীরাজে উড়ে।
লেখাটি পড়ে হঠাৎ মনে মনে গুনগুন করলাম।।
বর্তমানে হয়ত শিশুরা এই কল্পনা বা রূপকথার জগৎ থেকে প্রকৃতপক্ষেই অনেক দূরে । তাই সহজপাঠ আবোলতাবোল , কিশলয় বা হাসিখুুুুশি ইত্যাদি অমূূল্য বইগুলিরও খোঁজ করার তাগিদ
বিশেষ চোখে পড়েে না।
তবু স্মৃতি টুকু থাক ।যেখানে অন্তত নিজেদের ছন্দময় শৈশবকে খুঁজে পাবো আমরা।
"তা কি সংসার যাপন সম্পর্কে শিশু হৃদয়ে এক আবিলতা এনে দেয় না ? জীবনের সহজিয়াকে বুঝতে কোমল হৃদয়কে কি ছড়ার এই ছবি যথেষ্ট উৎসাহ দেয় না ?"
আবিলতাঃ মলিনতা
https://archive.org/details/in.ernet.dli.2015.356476/page/n113/mode/2up
লেখক কি এই অর্থেই ব্যবহার করতে চেয়েছেন?
প্রশ্নকর্তার পুরো পরিচয়টা পেলাম না। যাই হোক, এখানে সংসারে বৈভব যাপনের বিপরীত দিকটাই ভেসে ওঠে বরাবর যা আসলে 'আবিলতা' বা 'মলিনতা।
জীবনের সহজিয়া এর থেকে ভালো আর কি করেই বা বোঝানো যেত।
নিবন্ধটি আগ্রহোদ্দীপক। সমাজ সংসার বিদ্যালয় বন্ধু পরিমন্ডল সবই বৈরী এখন। ছড়া মুখস্থ বা ডাংগুলি চু কিতকিত খালার বদলে শিশুদের গেমস খেলা, ওটিপি প্ল্যাটফর্মের বিনোদনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠাই কপাললিখন।
ছড়া বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। সে বিষয়ে অনেক গবেষণামূলক লেখালিখি হলেও ছয় সাতের দশকের ছড়া নিয়ে এমন লেখা বিশেষ পড়িনি এর আগে।
লেখাটা খুব সুন্দর।
কিন্তু লেখার স্কোপটা বুঝতে একটু অসুবিধে হলো। রবীন্দ্রনাথ সুকুমার রায় সত্যেন দত্ত অন্নদাশঙ্কর অমূল্য বটে, কিন্তু লোকায়ত বলা বোধয় যায় না। প্রচলিত/ লোকায়ত ছড়া এখানে বেশ কম এসেছে দেখলাম। সত্যি বলতে কী, এই প্রশ্নটা আমার মাথায় ঘোরে, নাগরিক শিশুদের আধুনিক সাহিত্যের শিশুপাঠ্য বনাম গ্রামীন শিশুদের (এত সোজা না, অন্যান্য ফ্যাকটর তো আছেই, যেমন অভিভাবকদের শিক্ষা, কততম প্রজন্মের শিক্ষার্থী) লোকায়ত সাহিত্যের জিনিসপত্র - এই জিনিসটা একটা ডিসকানেক্ট তৈরি করেছে কিনা। লোকসংস্কৃতি বনাম শহুরে সংস্কৃতি - এই দুইয়ের ব্যবধান কি বাংলায় অন্যান্য সংস্কৃতি থেকে বেশি?
তবে আমাদের ছোটবেলায় আগের প্রজন্মের মুখে শুনেছি "আমাদের ছোটবেলায় শহরে হাতি ঢুকতো, রাতে চিতাবাঘ ঘুরতো, আমরা হাঁটতে হাঁটতে সিঙ্গারবিল চলে যেতাম, সন্ধ্যেবেলা চাকরেরা মাথা গুনে ঘরে তুলতো, ডুরিওলা প্যান্ট পরে স্কুলে যেতাম, তোরা তো এসব কিছুই দেখলি না" ঃ)।
আবিল শব্দটা পড়তে গিয়ে কিছু মনে হয়নি, কিন্তু b ২১:৪৪ পড়ে মনে হলো, সত্যি তো, বাক্যটাতে এখানে 'আগ্রহ' ধরনের কিছু হবে বলে মনে হচ্ছে।
আমাদের সেই ১৪০০ সাল। ভালো লিখেছ। ছড়ার ছন্দ , শিশুদের মন রবীন্দ্রনাথের ছেলেভুলোন ছড়া সংগ্রহ--- সব মনে পড়ে গেল।