এবার বোঝা গেল দেশান্তরী শ্রমিকদের ফিরে আসবার পথে এতো কাঁটা বিছানো কেন ! বোঝালো কর্ণাটকের সরকার। আগামীতে আরো বোঝাবে যে রাজ্যে ক্ষমতায় বিজেপি আছে সেই রাজ্যগুলো।
বেঠ বেগারি বা বন্ধুয়া শ্রমিক কী বস্তু আমরা জানি। প্রথমটিতে বলপূর্বক শ্রমদান চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে প্রবল আন্দোলন দেখেছিল উনিশ শতক। সেই উলগুলানে কম রক্তপাত হয়নি। আর দ্বিতীয়টি হলো ঋণের ফাঁদে আটক শ্রমিক। কবে দাদা পরদাদা ধার করেছিলো, গায়ে খেটে শোধ করো। বংশানুক্রমিক ভাবে। বান্ধুয়ার মুক্তির জন্য আইন পাস হয়েছিল সেই কবে ১৯৭৬ সালে। আজ অব্দি চোরাগোপ্তা বান্ধুয়া বা বাঁধা শ্রমিক প্রথা প্রচলিত আছে এই দেশে। এবার নতুন শক্তি পেয়ে এই কুপ্রথা রমরমিয়ে উঠবে করোনার কল্যাণে ।কোনো চক্ষুলজ্জা বা আড়ালের দরকার হবে না।
প্রথম থেকেই দেশের সরকার একটার পর একটা অজুহাত খাড়া করে পরিযায়ী শ্রমিকের ঘরে ফেরা নিয়ে প্রচুর তানানানা করেছে। মালিক একটি পয়সা ছোঁয়ায়নি, প্রাপ্য মাইনের ভগ্নাংশও দেয়নি,সরকার চুপ থেকেছে। বাড়িওয়ালা ভাড়া মকুব না করে ঘর থেকে বার করে দিয়েছে,সরকার রা কাড়েনি। উপোসী শ্রমিক খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পুলিশের লাঠি খেয়ে মারা গেছে,সরকারের কোনো বক্তব্য ছিল না। হাঁটতে হাটঁতে নিজের রাজ্যের সীমান্তে পৌঁছে যাওয়া শ্রমিক দলকে পুলিশ ফের উল্টোবাগে হাঁটিয়েছে,পোকামাকড়ের মতো গায়ে কীটনাশক স্প্রে করেছে, এমন পুলিশি অত্যাচার চলেছে যে যমুনার তীরে অবাসযোগ্য এলাকায় নির্ণীয়মান সেতুর নীচে শ্রমিক দল বেঁধে থাকতে বাধ্য হয়েছে,কেউ ভয়ে পালাতে গিয়ে যমুনার জলে পড়ে মারা গেছে। সরকার কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। ঘরে ফিরতে চাওয়া শ্রমিকের কতোজনের মৃত্যু হয়েছে সেই সঠিক সংখ্যা বোধহয় কেউই জানে না।
শেষ পেরেক পোঁতা হয়েছে নিরন্ন শ্রমিকের কাছ থেকে রেল ভাড়া আদায় করার বাসনায়। সনিয়া গান্ধী ঘোষণা করলেন কংগ্রেস সব পরিযায়ীর ভাড়া দিয়ে দেবে। সিআইটিইউ শ্রমিকের পাশে দাঁড়ালো, তবু কেন্দ্রীয় সরকার গোঁ ছাড়ে না। ১৫% ভাড়ার ফ্যাঁকড়া ঝুলিয়েই রেখে দিলো। এর্ণা্কুলাম থেকে ওড়িশা বিহার পর্যন্ত টিকেট বেচে রে্লের আয় হলো ৩২ লক্ষ টাকা।
কেন এতো বাগড়া তা খোলসা হলো আজ ইয়েদুরাপ্পার নেতৃত্বে ,কর্ণাটক সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য সমস্ত ট্রেন ক্যানসেল করার পরে।
মূলত বিল্ডারদের সঙ্গে বৈঠকের পর কার্ণাটকী সরকারের এই সিদ্ধান্ত। এবং একদিন সময় না দিয়েই তার রূপায়ণ। রেলমন্ত্রককে তুরন্ত চিঠি লেখা হয়ে গেল যে কর্ণাটক থেকে আর একটি শ্রমিকও রাজ্যের বাইরে যাতে যেতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে। ছ’ তারিখে পরিযায়ীদের নিয়ে তিনটে ট্রেন ছাড়বার কথা ছিল,সঙ্গে সঙ্গে তিনটেই ক্যান্সেল। যে শ্রমিকরা ঘরে ফেরার জন্য গাঁঠরি বেঁধে দূরদূরান্ত থেকে নির্দিষ্ট স্টেশনখানিতে হাজির হয়েছিল হতাশা তাদেরকে কোথায় নিয়ে যাবে ! এমনিতে তো মরছেই , বিশেষজ্ঞদের মতে দলে দলে আত্মহননেচ্ছু হয়ে পড়বে পরিযায়ীরা।
এদের প্রাণের কোনো দাম কি সত্যিই আছে ?
বান্ধুয়া আর বেঠ বেগারিদের যেমন মালিকের আর্থিক বোলবোলাওয়ের জন্য আটকে রেখে জোর করে শ্রম দেওয়ানো হতো, রাজ্যও এখন তার অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটকে রেখে তাদেরকে শ্রমদানে বাধ্য করাতে পারবে। অবশ্যই বিনে পয়সায় নয়। কিন্তু সেটাও মালিকের ইচ্ছাধীন। কাজ সত্যি শুরু হলে ফ্যালো কড়ি, কোনো বাধা এলে এক পয়সাও নয়। এই যে অর্থনীতির অছিলায় জোর খাটানো ,অনিচ্ছুক মানুষকে আটকে রাখা এটা বিশ্বের বৃহত্তম জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রে সম্ভব হচ্ছে কী করে!
ব্যাপারটা হচ্ছে , বিল্ডার শিল্পপতিদের সরকারে ওপর প্রভাবের কথা নিও লিবেরাল জমানায় সবাই জানে। বিশেষ করে কর্ণাটকের মতো রাজ্যে যেখানে নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দেওয়া যায় টাকার জোরে, ঘোড়া কেনাবেচার চক্করে। মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পার বাণীটি একবার অনুধাবন করা যাক--'অন্য রাজ্যের তুলনায় এরাজ্যে কোভিড সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। রেড জোন ছাড়া সর্বত্র ব্যবসা ,নির্মাণশিল্প এবং অন্যান্য শিল্পভিত্তিক কাজকারবার সবই শুরু করে দিতে হবে। এই প্রেক্ষিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের অপ্রয়োজনীয় চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে'।
পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে করোনা অতিমারীকে অবৈধভাবে শ্রমিক আটকে রাখার একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ট্রেনে সোশাল ডিস্ট্যান্সিয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গ্রামে পৌঁছলে চোদ্দ দিন আইসোলেশনের ব্যবস্থা ছিল। বরং শ্রমিককে কাজের জায়গায় যে ভাবে রাখা হয়,খুপরি ঘরে গাদাগাদি করে অনেকজন,বা ঘিঞ্জি বস্তিতে ,তাতেই করোনা বেশি ছড়াবার কথা। রাতারাতি তার জন্য বিল্ডার স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থা ,রোগ প্রতিহত করবার মতো ব্যবস্থা করে দেবে এটা ভাবাও বাতুলতা।শ্রমিক নিজেও এই ভয়টি পাচ্ছে। একে তো তার অন্নাভাব। কেরালা ছাড়া কোন রাজ্যই পরিযায়ীদের জন্য সন্তোষজনক ব্যবস্থা করে উঠতে পারেনি। উপরন্তু মৃত্যুভয়। দেশগাঁও থেকে বহুদূরে,আপনজনের মুখ না দেখে দূর নির্বাসনে মরতে কারই বা মন চায় ! তাই ঘড়ি মোবাইল বেচেও সে ট্রেনভাড়ার যোগাড় করেছে। কেউ সেটা বহন করলে ঠিক আছে, না করলেও কোনো পরোয়া নেই। এই ঐকান্তিক ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করে কোন স্পর্ধায় তার চলাচলকে অপ্রয়োজনীয় (unnecessary travel) বলা হচ্ছে?
কতো শ্রমিকদরদী এই সরকার তা আমরা আগেই দেখেছি। প্রধানমন্ত্রী নিজের বিলাসবহুল প্রাইভেট প্লেনের জন্য খরচ করবেন ৮৬০০ কোটি টাকা। আর কর্ণাটকে যে বাসগুলো শ্রমিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে ঠিক হয়েছিল,তাতে ওঠার জন্য বেঙালুরু বাস টার্মিনাসে পৌঁছে তারা দেখে বাসের ন্যুনতম ভাড়া ২০০০ টাকা। পথে কাঁটা ছড়াবার চেষ্টার বিরাম নেই, তাই পার কিমি বাসের ভাড়া ধার্য করা হয় ৩৯ টাকা, যেখানে কর্ণাটকে এসি গাড়ীর ভাড়া পার কিলোমিটার ১৫ টাকা। বলা বাহুল্য বাসের ভেতর বা বাস স্ট্যান্ডে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং বজায় রাখবার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এটা কি সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোভিড১৯ ছড়াবার পরিকল্পনা? যাতে সব বেটাকে ছেড়ে বেড়ে ব্যাটাকে ধরবার সুবিধে হয়? হয় চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মুনাফা তোলার জন্য বাধ্যতামূলক শ্রম, নয় মৃত্যু, বিজেপির এটাই কি পরিযায়ীদের প্রতি শেষ কথা?
সুরাতে ঘরে ফিরতে চাওয়া শ্রমিকদের ওপর চূড়ান্ত পুলিশি অত্যাচারের কথা আমরা কাগজে দেখেছি। সেখানে গাঁটের পয়সা খরচ করেই ট্রেনের টিকেট কাটতে হয়েছে পরিযায়ীদের। ৮৫% ছাড়ের গল্পকথা শুনেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে সেই মুষ্টিমেয়দের যারা সৌভাগ্যবশত ঘরে ফিরতে পেরেছে। যারা পারেনি তারা আবার কবে পারবে কেউ জানেনা। কর্ণাটকের উদাহরণ সব বিজেপি রাজ্যগুলোই অনুসরণ করবে এটাই স্বাভাবিক। অবিজেপি রাজ্যগুলো চাইলেও পারবে কিনা সন্দেহ, কারণ রেল চলাচল কেন্দ্রের ইচ্ছাধীন । আর অন্যত্র কাজ শুরু হয়ে গেলে শ্রমিকদের রেখে দেবার জন্য এই সরকারগুলোর ওপরও প্রচন্ড চাপ আসবে। ফলে পরিযায়ী শ্রমিকের ভাগ্য বোধহয় যে তিমিরে সে তিমিরেই।
এখানে আর একটি কথা বলতেই হচ্ছে।পশ্চিমবঙ্গ বিজেপিশাসিত রাজ্য না হয়েও পরিযায়ীর ট্রেন ভাড়া মেটাবার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগই নেয়নি। শুধু সমালোচনা করেই ক্ষান্ত হয়েছে। আবার মহারাষ্ট্র থেকে শ্রমিক ফিরে এলে তাকে গ্রহণ করবে না জানিয়ে দিয়েছে। প্রাথমিক আপত্তি থাকা সত্বেও উত্তর প্রদেশ রাজি হয়ে গেল, আর পশ্চিমবঙ্গ বাঙালি শ্রমিকদের ফেলে রাখবেই মহারাষ্ট্রে যেখানে মৃত্যুর হার অত্যন্ত বেশি, এ বড় আশ্চর্যকথা।
অথচ সমীক্ষা দেখাচ্ছে গত একমাসে শ্রমিকদের ৭৮ % কোনো মাইনেই পায়নি। বাদবাকীরা পেয়েছে ভগ্নাংশে। এদের সঙ্গে বাস বা ট্রেন ভাড়া নিয়ে দর কষাকষি এবং শেষে ট্রেন ক্যান্সেল করা দেখিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি পরিযায়ীদের ঘরে ফেরা আটকাতে কতটা মরীয়া। এবং সেটি পুরোপুরি কর্পোরেটের স্বার্থে। শ্রমিকরা বাড়ি ফিরে গেলে হয়তো করোনা থেকে বাঁচবে, কিন্তু শিল্পপতি এবং বিল্ডাররা কাজ করাবে কাকে দিয়ে ? তাদের মুনাফার কি হবে? আর রাজনীতিকরা এদের বিরাগভাজন হলে নির্বাচনী পাশা উলটে দিতে অর্থ আসবে কোথা থেকে? হোটেল ভাড়া? ঘোড়ার দাম? অন্যান্য অনৈতিক টুকিটাকি?
ফলে বিজেপি শাসিত রাজ্য থেকে বেঠ বেগার আর বন্ধুয়া শ্রমিকদের ঘরে ফেরা দূর অস্ত! তবে কী অপেক্ষা আর একটি উলগুলানের? রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের? মানুষের সৎ স্বাধীন ইচ্ছায় বাধা দিলে কী হয় শাসক জানে না?
পুনশ্চ : ট্রেন ক্যান্সেল করার পর বেঙালুরু থেকে দলে দলে শ্রমিক বেরিয়ে পড়েছে পায়ে হেঁটে। বেশির ভাগের গন্তব্য উত্তর প্রদেশ, ঝাড় খন্ড। এতো বড় দেশের দক্ষিণ থেকে উত্তর বা পূবে পায়ে হেঁটে যাওয়া তো অল্পকথা নয়। অনেকের মৃত্যু হতে পারে। তবু শাসকের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে আমার দেশ হাঁটছে। আসুন আমরা আরাম কেদারায় বসে এই 'রঙ্গ' প্রাণভরে উপভোগ করি।
রাশিয়ায় ভূমিদাস প্রথা উঠে গেছে শতাধিক বছর আগে।
আমাদের এই দুর্ভাগা দেশে আজও তা চলছে। এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না।
কি শ্রমিক দরদী সরকার! এদের ধিক্কার জানালেও বোধহয় ধিক্কারের অপমান হয়!
#
গুরু কর্তৃপক্ষকে বিনীতভাবে বলছি, যদি সম্ভব হয় ছবিগুলোর যথার্থ সূত্র দিন, "ইন্টারনেট" মাধ্যম হতে পারে, ছবির সূত্র নয়। অন্যখায় এই লেখায় ছবি থাকা জরুরি নয়।
প্রথমে সবার কথা না ভেবে পরিকল্পনাহীন লকডাউন । তারপর থালাবাজানো, মোমবাতি জ্বালানোর নাটক । তারপর উদারতার ছলে এই নানারকম নির্মম কার্যাবলী !! অসহনীয় !
উলগুলান হবেই---
বনপথে শর্টকাটে পরিত্যক্ত রাস্তায় পাড়ি দিতে গিয়ে একবছরের শিশু সহ যে পরিবার শহিদ হল --তাদের নাম কোথাও লেখা থাকবে না --ঈশ্বর পুষ্পবৃষ্টি করবেন আকাশপথে !!!!
প্রথমে সবার কথা না ভেবে পরিকল্পনাহীন লকডাউন । তারপর থালাবাজানো, মোমবাতি জ্বালানোর নাটক । তারপর উদারতার ছলে এই নানারকম নির্মম কার্যাবলী !! অসহনীয় !
উলগুলান হবেই---
বনপথে শর্টকাটে পরিত্যক্ত রাস্তায় পাড়ি দিতে গিয়ে একবছরের শিশু সহ যে পরিবার শহিদ হল --তাদের নাম কোথাও লেখা থাকবে না --ঈশ্বর পুষ্পবৃষ্টি করবেন আকাশপথে !!!!
প্রথমে সবার কথা না ভেবে পরিকল্পনাহীন লকডাউন । তারপর থালাবাজানো, মোমবাতি জ্বালানোর নাটক । তারপর উদারতার ছলে এই নানারকম নির্মম কার্যাবলী !! অসহনীয় !
উলগুলান হবেই---
বনপথে শর্টকাটে পরিত্যক্ত রাস্তায় পাড়ি দিতে গিয়ে একবছরের শিশু সহ যে পরিবার শহিদ হল --তাদের নাম কোথাও লেখা থাকবে না --ঈশ্বর পুষ্পবৃষ্টি করবেন আকাশপথে !!!!
খুব গুরুত্বপূর্ণ লেখা....
কদিন আগে ফেবুতে ইন্দ্রনীল দাশগুপ্ত লিখেছিলেন যে এরা কিছুতেই শ্রমিকদের ফিরতে দিচ্ছে না কারণ ভয় পাচ্ছে যে একবার ফিরে গেলে আর একই মজুরীতে এদের হয়ত ফেরত আনা যাবে না।
দেখা যাচ্ছে সত্যিই হয়ত তাই।
এটাও থাক
কদিন আগে ফেবুতে ইন্দ্রনীল দাশগুপ্ত লিখেছিলেন যে এরা কিছুতেই শ্রমিকদের ফিরতে দিচ্ছে না কারণ ভয় পাচ্ছে যে একবার ফিরে গেলে আর একই মজুরীতে এদের হয়ত ফেরত আনা যাবে না।
দেখা যাচ্ছে সত্যিই হয়ত তাই।
এটাও থাক
"আসুন আমরা আরাম কেদারায় বসে এই 'রঙ্গ' প্রাণভরে উপভোগ করি" --- একটা জোরাল থাপ্পড় যেন।
চরম লজ্জিত আমি। লজ্জায় লাল হয়ে আছে দুটি কান।
নিজেও অসহায়, কিছু একটা করতে হবে কিন্তু করা হচ্ছে না, এই হতাশা মেরুদন্ড বাঁকা করে দিচ্ছে। আমরাও কেরাণীগোষ্ঠীর মানুষ, কিন্তু কলেজ-ভার্সিটি ঘুরে এসেছি বলে আতরের গন্ধে ঢাকা পড়ে গেছে শ্রেণীচেতনা। পাশাপাশি স্থায়ী মাইনে, বইপত্তর সিনেমার জাঁকজমকে শ্রেণী ব্যাপারটাই বিমূর্ত হয়ে গেছে আমাদের কাছে। পাশের কারখানা যখন বন্ধ হয়ে গেল তখন যে বিশাল গণআন্দোলন হওয়ার কথা তার রূপায়ণে শ্রম-কসরত কিছুই দিইনি। অসমে যখন সিএএ আনার ছলে এনার্সি হচ্ছিল, তখনও আন্দোলনে নামিনি। আহাউহু করেছি আর ছোটখাটো ড্যামেজ কন্ট্রোল করেছি। অথচ ফ্যাসিস্ট শাসকের নীলনকশা বুঝিয়ে দেওয়ার মত মাথার অভাব ছিল না। কেউই প্রতিবাদে সোচ্চার হতে পারিনি। চুপিসাড়ে প্রচারমাধ্যম, সেক্যুলার মানবজমিনের দখল নিল ওরা, যারা শুরু থেকেই বহুজাতিক-দেশী পুঁজিবাদের পুষ্য ঠ্যাংগাড়ে বাহিনী। নব্বই থেকে আজ দু'হাজার কুড়ি -- এতটা বছর আমাদের ঠিক কী হয়েছিল, বুঝতে পারছি না। এত বড় বড় হামলা নামিয়ে আনল সার্জিক্যাল নৈপুণ্য়ে আর আমরা টের পেলেও ফুটন্ত ভেকের মত কী এক জড়তায় এসব ওদের করতে দিলাম।
খুব অসহায় আমরা সত্যি, আরাম কেদারায় বসে লকডাউনে ইতালির ধাঁচে 'বেল্লা চাও' গেয়েই বন্দিদশার অসহায়তা ভুলি। নাকি অনেক কাজ পড়ে রয়েছে, বাঁকা হয়ে আসা মেরুদন্ডে হাত বুলিয়ে ফের পথে নামার সংগঠিত হওয়ার কাজ করতে পারি? নাকি পুঁজিবাদের ছত্রছায়ায়, ওদেরই ঠিক করে দেওয়া পথে যতটুকু প্রতিবাদ করা যায়, এনজিওপন্থার আদলে সামান্য কিছু ড্যামেজ কন্ট্রোলের কাজ করে বিবেকের কাছে পরিষ্কার হওয়ার চেষ্টা করি। না কি দেশের আনাচে কানাচে উলগুলান ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয়ে কাজ শুরু করি?
ভাবনা অনেক হল। ওদের কাছে গণমাধ্যম-প্রশাসন রয়েছে, বিচারবিভাগেরও প্রশ্রয় রয়েছে বলি শুনি, তা সত্ত্বেও এই ডেভিড-গোলায়াথিয় অসম যুদ্ধে নামার এখনই সময়। আটক মানুষের গোঙানি, পথে হাঁটতে থাকা বিপন্ন মানুষের আর্তনাদ, বুভুক্ষ জনতার দীর্ঘশ্বাস এ আর নেওয়া যাচ্ছে না। সত্যি!
যদি বিপ্লব হয় এখান থেকে পুঁজিপতির নাম চিরতরে মুছে দেয়া হবে বিপ্লব জিন্দাবাদ মেহনতী মানুষের রক্ত হবে নাকো ব্যর্থ
আজ ৮ই মে ঔরাঙ্গাবাদে ভোরবেলায় ১৭/১৮ জন পরিযায়ী শ্রমিক রেলে কাটা পড়ল। ঘরে ফিরতে চেয়ে হাঁঁটছিলো তারা, তারপর পথশ্রমে ক্লান্ত হয়ে লাইনের ওপরই ঘুমিয়ে পড়ে। পোকামাকড়ের মতো টিপে টিপে মারা হচ্ছে এদের। পুলিশের ভয়ে, ট্রাকের ভয়ে সড়ক বা খালি জায়গায় শোবার উপায় নেই। চলতে হচ্ছে অতি সন্তর্পণে। মরছেও যেন লুকিয়ে লুকিয়ে। আমাদের নাড়া দিচ্ছে না এই ভয়াবহতা।
দিদি, মহারাষ্ট্রে ট্রেনে কাটা পড়ে ১৬ জন অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর খবর সকালেই পড়েছি। এতো শস্তা মানুষের জীবন!!
#
প্রতিবাদ-প্রতিরোধের বুঝি এখনই সময় :
তীর ধনুকে দাও শান, আবার হবে উলু গুলান!...