বিতণ্ডাটা চলছিল মূলত এইটা। যেটা ক্ষতিকর।
যারা বিরোধিতা করছিল, তারা সবকিছু ছাপিয়ে সাধারণ মানুষ, খেটেখাওয়া মানুষের জীবনজীবিকার কত সমস্যা হচ্ছিল বা হচ্ছে, সেটাতেই জোর দিচ্ছিল। আর যারা পক্ষে, তারা মূলত কোল্যাটারাল ড্যামেজের তত্ত্ব নামাচ্ছিল, রাস্তা খুঁড়লেও অসুবিধে হয় বলছিল, বাড়িয়ে দেখানো বা ভাবানোর কথা বলছিল, প্যানিকড হতে বারণ করছিল, এবং নিজেদের অকুতোভয়তার দৃষ্টান্ত দিচ্ছিল, কারণ তারাও সাধারণ মানুষ।
এবং তাদের কথায় যুক্তি আছে।
এ কথাটা অস্বীকার করার উপায় নেই, যেকোনও নতুন কিছু দাবী নিয়ে আসে। আমাদের সেই দাবী মেটাতে হয়। আমাদের, মানে সাধারণ মানুষদের। এই সাধারণত্ব যত সাধারণতর থেকে তমর দিকে গড়ায়, দাবীর বহর এবং মূল্য বাড়ে। সে নিয়ে দুঃখ ইত্যাদি করাই যায়, উচিতও বটে, কিন্তু এই প্রসঙ্গে সেসবে মত্ত হলে মূল বিষয়টা সাইডে চলে যায় এবং যাচ্ছিলও বটে।
মূল বিষয়টা তাহলে কি?
সরকার পাঁচশো-হাজার টাকার নোট তুলে নিচ্ছে। সেটা আচমকা জানিয়েছে। বক্তব্য, এতে কালো টাকা যা আছে দেশে বেরিয়ে আসবে। তাতে অর্থনীতির গতি বাড়বে। সাধারণ, তর এবং তমরা সুবিধা পাবে।
এই বক্তব্যটা নিয়েই কথা হওয়াটা জরুরি। মানুষের দুর্ভোগ, আচমকা কেন, আর হ্যাঁ সর্বোপরি, মোদীকে সরিয়ে।
হ্যাঁ, প্রথমটার সাথে সাথে পরের দুটোও বিরোধীরা বলছিলেন। বস্তুত, আচমকার সাথে দুর্ভোগটা জড়িত। আচমকা বলেই দুর্ভোগ। সমর্থকরা বলছিলেন, আচমকা না হলে উদ্দেশ্য সিদ্ধ হত না।
এবং এটাও সঠিক কথা। এই প্রসঙ্গে পরে আসছি। মোদীটা একটু বলে নিই।
ব্যক্তি দলের অধীন, দল সরকারের অধীন, সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রের অধীন। ভারতবর্ষের ক্ষমতাবিন্যাসের কাঠামোটা এরকম। এখানে দল আর সরকারের পার্থক্যটা খুব কম। ফলে অনেকসময় এদের পারস্পরিক অধীনতার সমীকরণটা উলটে যায়। কিন্তু বাদবাকি একই থাকে। এটা রাজতন্ত্র চলছে না। প্রধানমন্ত্রী নামক ব্যক্তিটি এই পুরো ব্যবস্থার মুখ হতে পারেন, এবং ওইটুকুই। মোদীভক্তদের তাকে হাইলাইট করার কারণ বোঝা যায়। কিন্তু, আপনারা, বিরোধীরাও যদি তাতে মাতেন, আদতে মাইলেজটা কিন্তু মোদীর ঘরেই ঢোকে। কালো হলেও। কালো মাইলেজ কিন্তু সিজ হয়নি!
মূল বক্তব্যে ঢোকা যাক।
সরকার কালো টাকা উদ্ধার করতে চায়। এতে কার কি আপত্তি থাকতে পারে রে বাবা? আমার তো নেই। প্রশ্ন আসছে পদ্ধতি নিয়ে। এবং সেই সূত্রে উদ্দেশ্য নিয়ে। বাঘ মারতে গুলতি নিয়ে গেছে? আদৌ বাঘ মারার ইচ্ছে আছে?? এরকম।
কালো টাকা উদ্ধার করা হবে কোথা থেকে? মানে কালো টাকাদের সাকিন কোথায়?
মূলত তিন জায়গায়। এক, বিদেশে। সুইস ব্যাঙ্ক জাতীয় জায়গায়। ডলার বা ইউরোরূপেণ সংস্থিতা।
দুই, এক্ষেত্রে সোনা, ফ্ল্যাট, জমি ইত্যাদি বহুরূপেণ সংস্থিতা। মানে বেহিসেবি টাকাগুলো এইসবে কনভার্ট করে নেওয়া হয় বা হয়েছে।
তিন, বাড়িতে, বা লোকে যেমন বলছে কমোডে, বালিশের ওয়াড়ে নোট হিসেবেই। আরও সুবিধার জন্য ধরে নিই পাঁচশো-হাজারের নোটরূপে বিরাজিত।
বোঝাই যাচ্ছে, সরকারের এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য কেবলমাত্র তিন নম্বরটা। নিন্দুকেরা বলছে, শতাংশের বিচারে এই তিন নম্বরটা নেহাতই নগণ্য। কত? মাত্র ৬ শতাংশ!! আচ্ছা, ছেড়ে দিন। আমি নিন্দুকের কথা বাদই দিই। কালো টাকার এক্স্যাক্ট স্ট্যাটিস্টিক্সটা যেহেতু ধোঁয়াশাপূর্ণ। তাই বেকার কুযুক্তির অবতারণা হতে পারে।
তর্কের খাতিরে, আই রিপিট, কেবল তর্কের খাতিরেই ধরে নিচ্ছি এর আনুপাতিক ভাগহার পুরো তিনভাগের একভাগ। সেটাই যদি উদ্ধার হয়, মন্দ কী?
এবং হবে না। সরকারের সেই সদিচ্ছা নেই। কারণ? আসুন দেখি। দুটো ঘটনা।
এক, এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর দু'দফায় ২০১৪ এবং ১৫ তে বিদেশে টাকা পাঠানোর, যদি এটাকে ভাষান্তরে কেউ পাচার করার বলে আমি নাচার, ঊর্ধ্বসীমা লক্ষ্যণীয়ভাবে বাড়ানো হয়েছে। যেটা ২০১৩ তে ছিল ৭০০০০ মার্কিন ডলার, সেটাকেই ২০১৪র ৩রা জুন নিয়ে যাওয়া হল ১২৫০০০ মার্কিন ডলারে এবং ২০১৫র ২৬শে মে ২৫০০০০ মার্কিন ডলারে। এই সরকারের অভিষেক হয়েছিল ২০১৪র ২৬শে মে। ২৫০০০০ মার্কিন ডলারের অর্থ প্রায় দু'কোটি টাকা। আর ২০১৫-১৬ তেই এইভাবে দেশ থেকে বেরিয়ে গেছে ৪.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৩০০০০ কোটি টাকা। ফুটনোট, সরকার ক্ষমতায় আসার আগে অন্যতম প্রধান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিদেশ থেকে টাকা ফিরিয়ে আনার।
দুই, গত এপ্রিল মাসে স্টেট ব্যাঙ্কের ইকনমিক রিসার্চ টিম একটা রিপোর্ট পেশ করে। তাতে বলা হয়, গতবছরের শেষ থেকে পাবলিকের হাতে থাকা ক্যাশের পরিমাণে অস্বাভাবিক বৃদ্ধির মূল কারণ ৫০০ এবং ১০০০ টাকার ডিমনিটাইজ হওয়ার আশংকায় অনেকেই হাতে ক্যাশ মজুত করছে সেই টাকাকে রিয়েল এস্টেট বা সোনায় পরিণত করার জন্য। বুঝতে পারছেন? হেদিয়ে মরি আর ভুগি আমরা ছাপোষা লোকগুলো। যে রাধাদের নাচানো হবে বলে এই সাত মণ তেল পোড়ানোর বন্দোবস্ত, তারা সেই কবে থেকে আঁটঘাঁট বাঁধছে। আর খবরেরও বলিহারি মাইরি! এত নাকি গোপন আর চমক জাগানো একটা সিদ্ধান্ত, সে সেই কবে থেকে ঠিক তাদের কাছে পৌঁছে গেছে!
বলুন তো, আচমকা কী লাগছে আর? যারা সিদ্ধান্তের চাঁদমারি, তাদের জন্য?
এর সাথে একটা সেক্টরের গল্প বলি। সরকারী ক্ষেত্রে বে আইনি অসংগঠিত শ্রমিক সম্ভবত সবথেকে বেশি আছে সরকারী কয়লাখনি গুলোতে। যদি প্রতি পিট পিছু যদি দশজন সরকারী শ্রমিক থেকে থাকে সেখানে কয়লা কাটতে নামে কম করেও ২৫০ শ্রমিক। এই বাকি ২৪০ জন সরকারী ভূত না থাকলে কোনো রেলের ওয়াগনের একটা কোণাও ভরবে না। এখন ওই দশ জন সরকারী ছাপ্পা মারা লোক কোনোদিন গর্তের নীচে নামেন না! এমনিতেই মজুরি পেয়ে যান, কারণ ওরা নীচে নেমে মরলে সরকারকে বহু টাকা তার পরিবারকে দিতে হবে। আর ভূতগুলোতো এমনিতেই ভূত ওরা মরলে জাস্ট ম্যাজিকের মত ভ্যানিশ! তবু এই ভূতেদের বাড়ির লোক মুখ বন্ধ রাখার জন্যে নিমেষে লাখটাকা পেয়ে যায় সাথে আরও একটা নতুন ভৌতিক চাকরি! এদের মজুরী আর কমপেনসেশনের টাকা কোথা থেকে আসে বলুন তো??!! পুরো স্বচ্ছ এবং সরকারী কারবার কিন্তু! কোনও প্রোমোটার বা বড়বাজারী গদির মালিকের কথা হচ্ছে না। জানতে ইচ্ছে করছে না, কালোটাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামা সরকার কালোকারবারের এই বিপুল ক্ষেত্রটা সম্পর্কে ভেবে কতগাছি চুল পাকালেন?
এরকম অগুনতি কালোকারবারের ক্ষেত্র রয়েছে। এই টাকাবিলোপের সিদ্ধান্ত আরও ণোটূণ কীছূ কালকারবারের ক্ষেত্র খুলে দিয়েছে। কিছুই সরকারের অজানা নয়।
অতএব, মূল সমস্যাটা উদ্দেশ্য নিয়েই।
এই যে একদিকটা এত গোছানো, আর অন্যদিকে নতুন কিংবা পুরনো চালু নোটের যোগান ঠিক রাখতে জাস্ট ভুলে যাওয়া, এটিএম মেশিনের সাথে দুহাজার টাকার নোটের মাপ মিলিয়ে নিতে খেয়ালই না করা, এগুলো অপদার্থতা নয়, নির্ভেজাল শয়তানি।
মাশুল দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। মৃত্যু ৫০ ছাড়িয়েছে এবং আমি ওটা ছেড়ে দিলাম। বিরোধীরা নাকি ডায়েরিয়াতে মরলেও ডিমনিটাইজেশনকে নন্দ ঘোষ ঠাওরাচ্ছে। কিন্তু এতদিনের এই যে এত শ্রমঘণ্টা এটিএম আর ব্যাঙ্কের লাইন খেয়ে নিল, দেশের অর্থনীতি এতগুলো দিন ধরে স্রেফ গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল, যোগ হবে না এগুলো ওই ১২০০০ কোটির সাথে? সারা দেশ জুড়ে নতুন এটিএম বসানোর খরচাটা? সেগুলোও কি কোল্যাটেরাল ড্যামেজ?
এরপরেও যারা ব্যালেন্স শিট দেখে ভুরু কুঁচকে রাতের ঘুম নষ্ট করে তারপর রায় দেওয়ার কথা ভাবছেন, তারা নিশ্চিন্তে থাকুন, অত কিছু করতে হবে না। একটা সুন্দর ব্যালেন্স শিট সরকার বাহাদুর পেশ করবেন আপনাদের সামনে। যাতে অনিবার্যভাবেই পকেট থেকে বেরনোর তুলনায় ঢোকার পরিমাণ অনেক বেশি থাকবে। আর আপনি নিশ্চিন্তে বগল বাজানোর সুযোগ পাবেন।
বলি আজ অব্ধি কোনও সরকারকে দেখেছেন, বলছে হ্যাঁ বাপু, আমরা এই যে এত টাকা খরচা করে এই কাজটা করলুম, এটা না ডাহা ফেল করায় জনগণের এতগুলো টাকা আমরা জলে ফেলে দিয়েছি? অসীম দাশগুপ্তের বছরের পর বছর ধরে ঘাটতিশূণ্য বাজেটের কথা কি একদম ভুলে গেছেন? এমনকি জনতা সরকারও তাদের ডিমনিটাইজেশন প্রকল্প খাতায়কলমে সফল দেখিয়েছিল!
এরপরে যদি অসীম দাশগুপ্ত আর অরুণ জেটলির বায়োডাটার তুলনা করে আপনার ঘুম নষ্ট হয়, তাহলে আপনার জন্য আমার শুভকামনা রইল!
উদ্দেশ্যর কথা বলছিলাম।
এটা তো জলের মতো দেখাই যাচ্ছে, ব্যাঙ্কগুলোর ভাঁড়ারে লক্ষ্মীর বদলে ভবানী ঢুকে পড়ছিল। সেটা প্রতিস্থাপন করাটা দরকার ছিল। এবং সেটা ভালোই হচ্ছে।
ব্যাঙ্ক টাকা নিয়ে কি করে? সোজা কথা, বাজারে খাটায়। লোককে ধার দেয়। তার সাথে কর মকুব করে। সুদের হার কমায়।
কাকে ধার? কার কর মকুব? কারই বা সুদের হার কমানো? আসুন দেখি...
৮ তারিখ থেকে আজকের মধ্যে...
১) স্টেট ব্যাঙ্ক আদানি গ্রুপকে খনি প্রকল্পের জন্য ১ বিলিয়ন ডলার মানে প্রায় ৬০০০ কোটি টাকা ধার দিচ্ছে। বাঃ, কত কর্মসংস্থান হবে! হ্যাঁ, অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে। প্রকল্পটা ওখানে তো!
২) আদানি গোষ্ঠীর পরিবেশবিধি লঙ্ঘনের জন্য ২০০ কোটি টাকা জরিমানা মকুব করেছে সরকার।
৩) স্টেট ব্যাঙ্ক বিজয় মালিয়া সমেত আরও কিছু লোকের ৭০০০ কোটি টাকার দেনা রাইট অফ করেছে।
৪) ব্যাঙ্ক ফিক্সড ডিপোজিটে সুদের হার ১% কমিয়েছে।
কাকতালীয়! কী বলেন? তাহলে আরও কিছু কাকতালীয় ঘটনার কথা বলছি। তার আগে রাইট অফ নিয়ে একটা কূটতর্ক আছে, সেটা একটু দেখে নিই।
হ্যাঁ, রাইট অফ মানে মোটেই ওয়েভ অফ বা মকুব নয়। বইতে লেখা আছে। এর মানে স্রেফ উদ্ধারের চান্স কম বলে ঘোষণা করা। বদ দেনা যাকে বলে। আর ভারতের বাস্তবতা বলছে, এতদিন ব্যাঙ্ক এমন যত দেনা রাইট অফ করেছে, তার ১০-১৫ শতাংশ উদ্ধার করতে পেরেছে। তাই তো বলছি, রাইট অফ মোটেও ওয়েভ অফ নয়, ৮৫-৯০ শতাংশ ওয়েভ অফ! কিন্তু এটা বইতে লেখা নেই!
হল। এবার আরও কিছু ঘটনা। কাকতালীয়।
এই সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুটো ক্ষেত্র রিটেল মার্কেট আর কৃষি। কেউ রিয়েল এস্টেটের কথা বলতে পারেন। কিন্তু যুক্ত যে কাউকে জিজ্ঞেস করুন, ও এমনিতেই ওভার স্যাচুরেটেড। যা চোষার চোষা হয়ে গেছে। যে দুটো ক্ষেত্রের কথা ববললাম, তারা আবার অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এদের সাথে ফিশারি জাতীয় সেক্টরগুলোও ধরতে হবে। দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ সহ অনেক জায়গারই সবজি মান্ডি বন্ধ হতে বসেছে শোনা যাচ্ছে, হাওড়ার মাছের পাইকারি বাজার বন্ধ হতে বসেছে, সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলগুলোয় মাছ ধরা বন্ধ। এখন সারাদেশেই ফসল কাটাবোনার সময়। আর এই সব লেনদেনটাই প্রায় নগদে হয়। ফলে অবস্থা অনুমান করতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই।
এইদুটো ক্ষেত্রই বহুদিন ধরে শকুনের দৃষ্টিধন্য। নানান তর্কবিতর্ক, ক্ষোভবিক্ষোভ, বাকবিতণ্ডা এবং রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে এতদিন খালি কিছু খুচরোখাচরা কনুই চালানোই গেছে। ঠিকঠাক হারেমে ঢোকানো যায়নি।
অসংগঠিত জায়গায় পুঁজি ঢালা বিপজ্জনক। আমি বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর খুলে বসে রইলাম, আর তুমি টুক করে হরি হালদার আর রামু শেখের কাছ থেকে আড়াইশো কাটাপোনা আর দুশো বেগুন কিনে নিয়ে চলে গেলে, মুশকিল! আমি জমিটমি কিনে বেশ করে ধানের বদলে সূর্যমুখী চাষ শুরু করলাম, আর রামু সামন্ত তার ১ বিঘা জমিতে নিজের বছরের খোরাকি ধানটা ফলিয়ে নিল, আরও মুশকিল! জমিও নেব না, ওর জমি ওরই থাকবে, শুধু বাধ্য ছেলের মত আমার কথা শুনে চলবে, সে হলে ভালো। এমনি এমনি তো হবে না! একটা ভয় ঢুকতে হবে। হাহাকার তৈরি করতে হবে। আর হাহাকারই যে দেবদূতদের আগমনপথ নির্মাণ করে, সে তো সবাই জানে!
হচ্ছে না ক্ষেত্র প্রস্তুত?
এখানে কোনও কালোটাকার গল্প নেই কিন্তু। পুঁজিপতিদের মুনাফা হয় শ্রমিকের শ্রম চুরি করে। আর সে চুরি ট্যাক্স রিটার্ন, ব্যালেন্স শিট কোথাও দেখা যায় না। ইনক্লুসিভ চুরি যাকে বলে। ওটা ধরে নিয়েই সিস্টেম। উপরি যা কিছু, যেমন কর মকুব, লোন, সেগুলোও সব সিস্টেমে। কাগজ যাকে বলে, বিলকুল সাদা। লালের ছিটে থাকতে পারে। কালো কিছুতেই নয়।
থাক। আমি বরং ঘটনাগুলোই বলি খালি। কাকতালীয়।
সরকার ইতিমধ্যেই একুশটা জিনঘটিত ফসলের পরীক্ষামূলক উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে। এবং বিজেপি বরাবরই জিনঘটিত ফসল উৎপাদনের সমর্থক। বলে রাখি, জিনঘটিত শস্যের ব্যাপারে বিজ্ঞানভিত্তিক কচকচি আমার উদ্দেশ্য নয়। কৃষিক্ষেত্রের রক্তচোষা মাল্টিন্যাশনালদের মনোপলির এটাও একটা অবিচ্ছেদ্য পার্ট। সেই হিসেবেই এটা উল্লেখ করা।
৮ তারিখ রাত সাড়ে আটটায় যখন এই নোট বাতিলের ঘোষণা হল, তখনই আমেরিকার মসনদে ট্রাম্পের আগমন সুনিশ্চিত হয়ে গেছে।
ট্রাম্পের পৃষ্ঠপোষক তালিকায় জ্বলজ্বল করছে ডুপন্ট, জেনারেল মিলস, কেলোগসদের নাম। এরা সবাই কৃষি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং খুচরো ব্যবসার রাঘববোয়াল।
আগামী বছরই ডুপন্ট আর ডাও কেমিক্যাল মিশে যাচ্ছে আরও বড় বড় দাঁও মারার লক্ষ্যে।
কী মনে হচ্ছে? সবটাই কাকতালীয়? অ্যাঁ? হবেও বা!
অন্ধ্র মহারাষ্ট্রের আত্মঘাতী কৃষকদের স্মৃতিতে দু'মিনিট নীরবতা পালন তো করাই যায়, নাকি?