ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার অর্থাৎ সরকার সমস্ত নাগরিকের স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব নিক এই দাবি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রচার শুরু হয়েছিল 2013'র ফেব্রুয়ারি মাসে। শুরুতে পিপল ফর হেলথকেয়ার নামে একটি ঢিলেঢালা নেটওয়ার্ক প্রচার শুরু করলেও 2014 থেকে মূল দায়িত্ব ছিল শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ এবং ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির ওপর। 26 আগস্ট 2015-তে গঠিত হয়েছিল সারাবাংলা সবার জন্য স্বাস্থ্য প্রচার কমিটি বা অল ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ ফর অল ক্যাম্পেন কমিটি।
গত 23 শে জুন রবিবার শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের প্রয়াসে ক্যাম্পেন কমিটির এক শিক্ষাশিবির অনুষ্ঠিত হলো ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি হেলথ অ্যাসোসিয়েশন এর সভাগৃহে। 2017-তে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য সাথী আর 2018'র দেশ জোড়া আয়ুষ্মান ভারত এই দুটি বীমা প্রকল্প নিয়ে প্রচার রত সংগঠনগুলির বোঝাপড়া পরিষ্কার করাই ছিল শিক্ষা শিবিরের উদ্দেশ্য।
উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের প্রায় কুড়িটি সংগঠনের প্রতিনিধিরা ছিলেন এই শিক্ষা শিবিরে। শুরুতে শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগে র অনিন্দিতা দাস সাড়ে ছয় বছর ব্যাপী প্রচার আন্দোলনের এক বিবরণ দেন। পরবর্তী বক্তা সুজয় বালা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কিভাবে বেসরকারিকরণের দিকে গেছে এবং বেসরকারী হাসপাতাল ও বীমা কোম্পানিগুলোর কবলে পড়েছে তার বিবরণ দেন। পুণ্যব্রত গুণ বলেন আর এস বি ওয়াই, স্বাস্থ্য সাথী ও আয়ুষ্মান ভারত নিয়ে। বক্তাদের বক্তব্য এ বারবার এ কথা উঠে আসে যে বীমা ব্যবস্থা দিয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা হতে পারে না, কেননা স্বাস্থ্য বীমা গুলো প্রাথমিক চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় না, কেবল লাভজনক দ্বিতীয় ও অন্তিম স্তরের চিকিৎসা দেয়। অথচ প্রাথমিক স্তরের আউটডোর চিকিৎসাতেই মানুষের খরচ হয় সবচেয়ে বেশি। সরকার বীমা কোম্পানিকে প্রিমিয়াম না দিয়ে সে অর্থ নিজস্ব পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে লাগাক এই দাবি উঠে আসে বারবার।
রেশনাল মেডিসিন নেটওয়ার্কের রাহুল মুখার্জি যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস এর উদাহরণ দিয়ে বোঝান কেন সমস্ত নাগরিকের জন্য এক অভিন্ন ব্যবস্থা থাকা উচিত। স্বাস্থ্যের অধিকার নিয়ে ডাক্তারদের দাবি সনদ পড়ে শোনান ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের অর্জুন দাস গুপ্ত।
মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর শ্রোতাদের কথা শোনার পালা। রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অনিরুদ্ধ কর স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে অন্যান্য দপ্তরের সমন্বয়ের কথা বলেন। ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার দেওয়ার জন্য ই এস আই এর পরিকাঠামো ব্যবহারের পক্ষে বলেন তিনি।
অ্যালায়েন্স অফ ডক্টরস ফর এথিক্যাল হেলথ কেয়ার এর পক্ষে সঞ্জীব মুখার্জি বলেন ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার এর জন্য চাই এথিক্যাল হেলথ কেয়ার।
রাজ্যের প্রাক্তন বিশেষ স্বাস্থ্য সচিব তাপস ভট্টাচার্য মেডিকেল শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো বন্ধ করার দাবি তোলেন তিনি।
এরপর বক্তা ছিলেন জলপাইগুড়ি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের অমল রায়, ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি র তন্ময় চক্রবর্তী, অল ওয়েস্ট বেঙ্গল সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভস ইউনিয়নের আশীষ কুসুম ঘোষ, এ পি ডি আর নৈহাটি র অরূপ ভৌমিক, মদন মুখার্জি স্মৃতি জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রের শুভ্রাংশু মুখার্জি, ভাস্কর রাও জনস্বাস্থ্য কমিটির শুভজিত ভট্টাচার্য্য, হেলথ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের অর্ণব সেনগুপ্ত, প্রভৃতিরা।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম এর বিষাণ বসু। সব বক্তাই স্বাস্থ্যের অধিকারের কথা মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে বলেন, মানুষ যাতে সচেতন হন, স্বাস্থ্যের জন্য সংগ্রাম করেন।
এই আলোচনার সারসংক্ষেপ করেন সিদ্ধার্থ গুপ্ত। রাজ্যব্যাপী প্রচারকে ব্যাপকতর করার উদ্দেশ্যে কতগুলি জেলা কমিটি তৈরি করে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়।
15 ই ফেব্রুয়ারি 2019 এর ডাক্তারদের যুক্ত মঞ্চ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যে স্বাস্থ্য সংক্রান্তদাবি সনদ পেশ করেছিল সেটি কে আগামী প্রচার এর মূল বিষয় করা হবে বলে ঠিক করা হয়।
ডাক্তারদের দাবী সনদ
জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস