এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • সবার জন্য স্বাস্থ্য প্রচার কমিটির শিক্ষাশিবির - একটি প্রতিবেদন

    সবার জন্য স্বাস্থ্য প্রচার কমিটি লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৮ জুন ২০১৯ | ১১০০ বার পঠিত
  • ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার অর্থাৎ সরকার সমস্ত নাগরিকের স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব নিক এই দাবি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রচার শুরু হয়েছিল 2013'র ফেব্রুয়ারি মাসে। শুরুতে পিপল ফর হেলথকেয়ার নামে একটি ঢিলেঢালা নেটওয়ার্ক প্রচার শুরু করলেও 2014 থেকে মূল দায়িত্ব ছিল শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ এবং ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির ওপর। 26 আগস্ট 2015-তে গঠিত হয়েছিল সারাবাংলা সবার জন্য স্বাস্থ্য প্রচার কমিটি বা অল ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ ফর অল ক্যাম্পেন কমিটি।
    গত 23 শে জুন রবিবার শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের প্রয়াসে ক্যাম্পেন কমিটির এক শিক্ষাশিবির অনুষ্ঠিত হলো ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি হেলথ অ্যাসোসিয়েশন এর সভাগৃহে। 2017-তে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য সাথী আর 2018'র দেশ জোড়া আয়ুষ্মান ভারত এই দুটি বীমা প্রকল্প নিয়ে প্রচার রত সংগঠনগুলির বোঝাপড়া পরিষ্কার করাই ছিল শিক্ষা শিবিরের উদ্দেশ্য।

    উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের প্রায় কুড়িটি সংগঠনের প্রতিনিধিরা ছিলেন এই শিক্ষা শিবিরে। শুরুতে শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগে র অনিন্দিতা দাস সাড়ে ছয় বছর ব্যাপী প্রচার আন্দোলনের এক বিবরণ দেন। পরবর্তী বক্তা সুজয় বালা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কিভাবে বেসরকারিকরণের দিকে গেছে এবং বেসরকারী হাসপাতাল ও বীমা কোম্পানিগুলোর কবলে পড়েছে তার বিবরণ দেন। পুণ্যব্রত গুণ বলেন আর এস বি ওয়াই, স্বাস্থ্য সাথী ও আয়ুষ্মান ভারত নিয়ে। বক্তাদের বক্তব্য এ বারবার এ কথা উঠে আসে যে বীমা ব্যবস্থা দিয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা হতে পারে না, কেননা স্বাস্থ্য বীমা গুলো প্রাথমিক চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় না, কেবল লাভজনক দ্বিতীয় ও অন্তিম স্তরের চিকিৎসা দেয়। অথচ প্রাথমিক স্তরের আউটডোর চিকিৎসাতেই মানুষের খরচ হয় সবচেয়ে বেশি। সরকার বীমা কোম্পানিকে প্রিমিয়াম না দিয়ে সে অর্থ নিজস্ব পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে লাগাক এই দাবি উঠে আসে বারবার।

    রেশনাল মেডিসিন নেটওয়ার্কের রাহুল মুখার্জি যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস এর উদাহরণ দিয়ে বোঝান কেন সমস্ত নাগরিকের জন্য এক অভিন্ন ব্যবস্থা থাকা উচিত। স্বাস্থ্যের অধিকার নিয়ে ডাক্তারদের দাবি সনদ পড়ে শোনান ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের অর্জুন দাস গুপ্ত।

    মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর শ্রোতাদের কথা শোনার পালা। রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অনিরুদ্ধ কর স্বাস্থ্য দপ্তরের সঙ্গে অন্যান্য দপ্তরের সমন্বয়ের কথা বলেন। ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার দেওয়ার জন্য ই এস আই এর পরিকাঠামো ব্যবহারের পক্ষে বলেন তিনি।

    অ্যালায়েন্স অফ ডক্টরস ফর এথিক্যাল হেলথ কেয়ার এর পক্ষে সঞ্জীব মুখার্জি বলেন ইউনিভার্সাল হেলথ কেয়ার এর জন্য চাই এথিক্যাল হেলথ কেয়ার।

    রাজ্যের প্রাক্তন বিশেষ স্বাস্থ্য সচিব তাপস ভট্টাচার্য মেডিকেল শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো বন্ধ করার দাবি তোলেন তিনি।

    এরপর বক্তা ছিলেন জলপাইগুড়ি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের অমল রায়, ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি র তন্ময় চক্রবর্তী, অল ওয়েস্ট বেঙ্গল সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভস ইউনিয়নের আশীষ কুসুম ঘোষ, এ পি ডি আর নৈহাটি র অরূপ ভৌমিক, মদন মুখার্জি স্মৃতি জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রের শুভ্রাংশু মুখার্জি, ভাস্কর রাও জনস্বাস্থ্য কমিটির শুভজিত ভট্টাচার্য্য, হেলথ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের অর্ণব সেনগুপ্ত, প্রভৃতিরা।

    সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম এর বিষাণ বসু। সব বক্তাই স্বাস্থ্যের অধিকারের কথা মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে বলেন, মানুষ যাতে সচেতন হন, স্বাস্থ্যের জন্য সংগ্রাম করেন।

    এই আলোচনার সারসংক্ষেপ করেন সিদ্ধার্থ গুপ্ত। রাজ্যব্যাপী প্রচারকে ব্যাপকতর করার উদ্দেশ্যে কতগুলি জেলা কমিটি তৈরি করে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়।
    15 ই ফেব্রুয়ারি 2019 এর ডাক্তারদের যুক্ত মঞ্চ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যে স্বাস্থ্য সংক্রান্তদাবি সনদ পেশ করেছিল সেটি কে আগামী প্রচার এর মূল বিষয় করা হবে বলে ঠিক করা হয়।

    ডাক্তারদের দাবী সনদ
    জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস

    • স্বাস্থ্য মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হোক।
    • স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার প্রধান দায়িত্ব রাষ্ট্রের। নাগরিকদের কাছ থেকে নেওয়া করের টাকায় সরকার এই পরিষেবা দেবেন।
    • জি ডি পি র অন্তত তিন শতাংশ সরকারকে স্বাস্থ্য খাতে খরচ করতে হবে।
    • স্বাস্থ্য পরিষেবা কে পণ্য হিসেবে গণ্য করা চলবে না। তাকে কনজিউমার প্রটেকশন অ্যাক্ট এর আওতা থেকে বার করে আনতে হবে।
    • নাগরিক পরিষেবা পাবেন প্রধানত সরকারি পরিকাঠামো থেকে। চিকিৎসক, চিকিৎসা কর্মী এবং স্বাস্থ্য কর্মী বেতন পাবেন সরকারের কাছ থেকে।
    • কোন ক্ষেত্রে যদি সরকারি পরিকাঠামো পর্যাপ্ত না থাকে তাহলে তাহলে সরকারকে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পরিকাঠামোর ঘাটতি পূরণ করতে হবে। ততদিন অবধি বেসরকারি পরিকাঠামো থেকে পরিষেবা কেনা যেতে পারে। কিন্তু এই পরিষেবা রোগী কিনবেন না, রোগীর হয়ে কিনবেন সরকার।
    • রোগীর কোন উপসর্গ থাকলে কি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে, কোন ওষুধ দিতে হবে, কখন বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করতে হবে, তা নির্দিষ্ট করার জন্য থাকুক স্ট্যান্ডার্ড ট্রিটমেন্ট গাইডলাইন।
    • ডাক্তার দেখানো, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, ওষুধ নেওয়া কোনটার জন্য রোগীকে খরচ করতে হবে না।
    • সরকার প্রাথমিক, দ্বিতীয় স্তর এবং অন্তিম স্তরের কোন কোন পরিষেবা দেবেন তা ঠিক করা থাক ন্যাশনাল হেলথ প্যাকেজে। রাজ্য বিশেষে এই প্যাকেজ-এর উপাদান আলাদা আলাদা হতে পারে।
    • ওষুধের ব্যবহার যুক্তিসঙ্গত হোক। প্রতিবেশী বাংলাদেশ যে কাজ 37 বছর আগে করতে পারে, তা আমাদের দেশ করতে পারবে না কেন? কেবলমাত্র অত্যাবশ্যক ওষুধগুলো উৎপাদিত হোক। অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকর এবং ফালতু ওষুধ উৎপাদন বন্ধ হোক। কেবলমাত্র জেনেরিক নামেই ওষুধ উৎপাদিত হোক। তাহলে চিকিৎসকরা ব্র্যান্ড নামে ওষুধ লিখতে পারবেন না।
    • স্বাস্থ্য পরিষেবার পণ্য রূপ লোপ পেলে চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের উপর হিংসার ঘটনা কমে আসবে।চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে হিংসার ঘটনা ঘটলে সরকার তাকে দৃঢ় হাতে দমন করুক।
    • মেডিক্যাল কমিশন নয়, গণতান্ত্রিক দুর্নীতিমুক্ত মেডিকেল কাউন্সিল চাই।
    • স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবসার বিষয় হতে পারে না। মেডিকেল, প্যারামেডিকেল, এলায়েড মেডিকেল শিক্ষা পুরোপুরি সরকারি নিয়ন্ত্রণে সরকারি প্রতিষ্ঠানে হোক। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাষ্ট্রায়ত্ত করা হোক।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৮ জুন ২০১৯ | ১১০০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন