নতুন দশকে ল্যান্ড করতে না করতেই বিশ্ববাসীর নাকের ডগায় ট্রেণ্ডিং থার্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার। তৃতীয় বিশ্বের শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে লেপ কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে মধ্যবিত্ত উপভোগ করবে একের পর এক মজাদার মিম, রসালো ট্যুইট তা কি চাড্ডিদের ভাল লাগে? অবধারিত অপোগণ্ড তারা বাছুরের মতো চ্যাঁভ্যা করতে করতে হাজির হলো মার্কেটে উইথ সমস্তরকম গা জ্বালানো কাজকর্ম। দেশের শাসক সরকারের সর্বক্ষেত্রে হতাশাজনক ব্যর্থতার উপর ব্যান্ডেজ জড়াতে ফ্যাসিবাদী বাছুরবাহিনীর পুরনো অস্ত্র, দাঙ্গা। তবে এই দাঙ্গা মুজফফরনগর বা গুজরাত নয়, বরং এখনো অব্ধি দেশের সেই সমস্ত দুর্গ যেগুলো গোয়ালঘরে পরিণত হয়নি অর্থাৎ কিছু নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেইসবে ঢোকার আগে আমাদের কিছু পুরনো কথা মনে করতেই হবে।
দেশের কয়েকটি বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রেগুলার সঙ্ঘ অফিসে হাজিরা দিলে বা সারাদিন ফেসবুকে নকল ভিডিও এডিট করলে যেগুলোর প্রবেশিকা উত্তীর্ণ হওয়া বেশ কঠিন, সেগুলোর উপর গেরুয়া গাম্বাটদের আক্রোশ নতুন কিছু নয়। ফুট সোলজার থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কেউ এই তালিকার বাইরে নয়। কয়েকদিন পর রোহিত ভেমুলার হত্যার চার বছর সম্পূর্ণ হবে, নাজিবের অন্তর্ধানেরও চার বছর হয়ে যাবে এই বছরই। আজ পর্যন্ত কারোর কোনো শাস্তির কথা আমরা শুনেছি বলে সেভাবে মনে পড়ছে না, বরং অপরাধের তালিকা ক্রমাগত এত লম্বা হয়ে যাচ্ছে যে হিসেব রাখা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। নতুন বছর তার ব্যতিক্রম তো নয়ই বরং শুরু হলো আর এক জঘন্য ঘটনা দিয়ে।
দেশে আরেসেস, তার অগুনতি সংগঠন আর তাদের জম্বি সমর্থক ছাড়া প্রায় সবাই হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদী রাজনীতির শত্রুতে পরিণত হয়েছে। মুসলিম দলিত কমিউনিস্টরা তো ছিলই এখন প্রকাশ্যে বিজেপির রাজনীতির সমর্থন করা মানুষজনও অজান্তেই তাদের শত্রু হয়ে উঠছেন কাগজপত্রের ভিত্তিতে। মুসলিম তাড়ানোর এজেন্ডা থেকে তারা এসে পৌঁছেছে এসসি এসটি মুর্দাবাদে। তাদের সমস্ত শত্রু ক্যাম্প ঝাড়াই বাছাইয়ের পরেও যদি মনে করেন যে বেঁচে যাবেন কাল আরেসেসের একটি নতুন বাহিনীর উদয় হবে যাদের ম্যানিফেস্টোয় আপনার অন্য একটি বৈশিষ্ট্য (হয়তো বাঁ গালে আঁচিল) অভারতীয় হিসেবে গণ্য হবে এবং আপনারও জায়গা হবে ডিটেনশন ক্যাম্পে। কিন্তু আপনার গালের আঁচিলটির সাথে কোনরকম সম্পর্ক না থাকলেও সেটির অধিকারের জন্য সর্বাগ্রে যারা আওয়াজ ওঠাবেন তারা হলেন এই দেশের এখনো না বিকিয়ে যাওয়া শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীকুল। আর সেজন্যই বাছুরকুলের সমস্ত বিদ্বেষ হিংসা বিভিন্ন স্তরের পাথরের ভিতর দিয়ে পরিশ্রুত হয়ে এসে পৌঁছয় একেকটি জেএনইউ, যাদবপুর, আলিগড়, জামিয়া মিলিয়া ইত্যাদিতে।
অন্যান্য মৌলিক অধিকারের মতই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে সরকার ভর্তুকি দেবে যাতে দেশের যেকোনো জায়গার যেকোনো অর্থনৈতিক অবস্থার মানুষ এই দুটি পরিষেবার সুযোগ নিতে পারে এমনটাই কোনো সভ্য দেশের নিয়ম হওয়া উচিত। শিক্ষার ক্ষেত্রে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় এই আদর্শকেই দীর্ঘকাল ধরে বহন করে আসছে। স্রেফ যোগ্যতার ভিত্তিতে এখানে পড়াশোনা করতে পারেন এদেশের মানুষ সে তাদের পরিবারের মাসিক আয় বা পদবী যাই হোক না কেন। সভ্যতার এই সহজ ধারণাটির সাথে আরেসেসের বিরোধিতা প্রাচীন। এককালে তারা ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের দালালি করেছে। এখন দেশের ক্ষমতায় থাকা তাদের প্রধান সংগঠন বিজেপি অন্য সমস্ত ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশকে মুষ্টিমেয় কোটিপতিদের অবাধ বাণিজ্যের হাতে তুলে দিয়ে আধা সামন্ততন্ত্র ও খিচুরি ধনতন্ত্রের এক ল্যাবরেটরি বানাতে বদ্ধপরিকর। আর এই অর্থনৈতিক সমীকরণের মধ্যে ধর্ম ও জাতপাত ঢুকিয়ে দিয়ে একদিকে বর্বর সমাজব্যবস্থা ও সেটাকে হাতিয়ার করে উচ্চবর্ণ বণিক শ্রেণীর অন্তহীন মুনাফার সুব্যবস্থা করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। আর এই স্পষ্ট এজেন্ডার সামনে বাধার মতো দাঁড়িয়ে থাকে দেশের কয়েকটি চিহ্নিত শিক্ষাঙ্গন। যাদের ক্ষমতায় নিজেদের পেটোয়া উপাচার্য, শিক্ষক সমিতি বসিয়ে, যাদের প্রতিবাদী ছাত্রছাত্রীদের মিথ্যে ভিডিও বানিয়ে দেশের সামনে ভিলেন বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেও কোনোভাবেই দমিয়ে রাখা যায় না। হাজার অবদমনের পরেও তারা ফিরে আসে অধিকারের দাবীতে, এক রোহিতকে মেরে ফেললে একের পর এক ক্যাম্পাস ছেয়ে যায় রোহিতে। ক অক্ষর গোমাংস নেতা মন্ত্রীরা পড়াশোনা না করে দেশবিরোধী কাজের অপবাদ দেওয়ার পরেও যাদের শিক্ষাগত সাফল্যের ধারেকাছে পৌঁছনো যায় না সেই ছাত্রছাত্রীশক্তির উপর সবরকমভাবে যুদ্ধ ঘোষণা যে সঙ্ঘ করবেই তাতে আর আশ্চর্যের কি?
সেই নীল নকশার অংশ হিসেবে অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো হয় পড়াশোনার খরচ। ডাক্তারী বা ইঞ্জিনিয়ারিং এর মতো বিষয় যাতে কেন্দ্রীয় এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে ঢুকতে হয় সেসব ক্ষেত্রে আমরা বেশ কয়েক বছর ধরেই একটা জিনিস দেখে আসছি। পরীক্ষার সিস্টেম, প্রশ্নের প্যাটার্নের এমন পরিবর্তন সাধন করা গেছে যাতে সামান্য সরকারী স্কুল থেকে ১২ ক্লাসের বোর্ডের পরীক্ষার জন্য ভালভাবে পড়া থাকলেও বেসরকারী কোচিং ক্লাস না নিলে সেসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া প্রায় অসম্ভব। আর সেই সমস্ত কোচিং ক্লাসের খরচ বহন করার সামর্থ্য এদেশের অধিকাংশ বাবা মায়ের নেই। সরকারী শিক্ষা ব্যবস্থাকে লোক দেখানো টিকিয়ে রাখলেও উচ্চশিক্ষায় এ সমস্ত ক্ষেত্রে তৈরি করা গেছে এক ধুরন্ধর ব্যবসার ফাঁদ। শুধু স্নাতক স্তরেই না, নিজের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি পাঁচ ছয়বছর সরকারী মেডিক্যাল কলেজে খুবই কম খরচে পড়াশোনার পরেও অর্জিত জ্ঞান দিয়ে স্নাতকোত্তরের প্রবেশিকাটি পাশ করা এখন প্রায় অসম্ভব। সেইখানেও তৈরি হয়েছে কোচিং ক্লাসের এক জটিল ব্যবসা। এইভাবে সরকারী শিক্ষাকে আপাতভাবে টিকিয়ে রেখেও তার ধাপে ধাপে বিবিধ গ্যাঁড়াকল তৈরি করে উত্তরণের ক্ষেত্রে তাকে প্রায় একপ্রকার ইন্সিগ্নিফিক্যান্ট করে দেওয়া গেছে। ফলে সেই সরকারী শিক্ষাব্যবস্থাটির সুবিধাও নিতে পারছে কেবলই একশ্রেণীর প্রিভিলেজপ্রাপ্ত উচ্চ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত সমাজ। সাবসিডাইজড শিক্ষা পরিষেবা, সমস্ত সংরক্ষণ ব্যতিরেকেই চলে গেছে গরীব মানুষের ধরা ছোঁওয়ার বাইরে। গরীব ব্রাহ্মণের জেনেটিক চাকরিটি থাকলেও মেধা বুদ্ধি থাকা সত্ত্বেও অনেক যৌবনকে নেমে যেতে হচ্ছে ম্যানহোলের অন্ধকারে।
এই বাস্তবচিত্র থেকে বৈপ্লবিকভাবে বিপরীত অবস্থান নেয় জেএনইউ বা সমমনস্ক প্রতিষ্ঠানগুলি। স্বাধীনতার পর থেকে দেশের প্রথম দিককার নেতৃত্বের সুচিন্তাকে এখনও অবধি বিকিয়ে না দিয়ে আপহোল্ড করে রাখাই এদের একমাত্র অপরাধ। ফলে আজাদির স্লোগান বা অতিবাম রাজনীতির ধুয়ো তুলে এদের বিরোধিতা বা এগুলি তুলে দেওয়ার আহ্বানের পিছনে লুকিয়ে থাকে আসলে সঙ্ঘ ও তার সমর্থক বেনিয়াদের শিক্ষাকে দেশের সাধারণ মানুষের থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন। দলিত চাষার ছেলের পিএইচডি বা কাশ্মীরি মেয়ের এমফিল কোনোভাবেই গেরুয়া হিন্দুরাষ্ট্রের স্বপ্নের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। তাই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের শুরু হয় ফিস হাইক দিয়ে।
এদের অভিসন্ধি বুঝতে পেরে ছাত্রছাত্রীরা সম্মিলিতভাবে এর বিরোধিতা করে। কিন্তু প্রতিবারের মতোই দেশের সমাজের অন্যান্য সমস্যাও তাদের দাবী স্লোগানের বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে। যার অন্যতম হলো নাগরিক সংশোধনী বিল। কেন্দ্রীয় সরকারের ভাজা এই নতুন পিঁয়াজিটির বিরোধীতা সবচেয়ে বেশী করে ছাত্রসমাজ। ফলে তাদের হিংস্র অবদমনের মধ্যে দিয়ে এক ঢিলে দুই পাখি মারার ছক প্রস্তুত হয়ে যায়। বছর শেষের আগেই আমরা দেখেছি জামিয়া মিলিয়া বা আলীগড়ে পুলিশের কীর্তি। কিন্তু তারপর জেএনইউ তে যা হয় তা নজিরবিহীন। প্রথমে শিক্ষকদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে ঢুকে এলোপাথাড়ি মারধোর করে কিছু গুণ্ডা। পরেরদিন ক্যাম্পাসের আলো নিবিয়ে বাইরে দিল্লী পুলিশের বদান্যতায় দিল্লী পুলিশ জিন্দাবাদ স্লোগান দিতে দিতে মুখে তোয়ালে বেঁধে ক্যাম্পাসে ঢুকে দাঙ্গা চালায় কিছু ‘অ্যাক্টিভিস্ট’। মেয়েদের হস্টেলে লোহার হাতুড়ি রড লাঠি নিয়ে ঢুকে মার্ক করে রাখা ঘর বেছে বেছে আক্রমণ করেন তারা। বহুসংখ্যক ছাত্রছাত্রী শিক্ষককে এইমসে বেডের ব্যবস্থা করে দিয়ে আবার পুলিশবন্ধুদের সাহায্যে নিরাপদে বেরিয়েও যান তারা। এই খবর যখন অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য জায়গা থেকে মানুষজন জেএনইউ যাওয়ার চেষ্টা করলে দেখা যায় রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
অর্থাৎ বিভিন্ন স্তরে সুচারুভাবে প্ল্যান করে ঘটানো হয় ঘটনাটি। এরপর যথারীতি শুরু হয় বেচু মিডিয়ার ও ফেসবুক ট্যুইটারে আইটিসেলের কর্মীদের পোস্ট ট্রুথের খেলা। জি নিউজ জেএনইউর এসএফআই সভানেত্রীর রক্তাক্ত ছবির উপর লিখে দেয় আক্রান্ত এবিভিপি সমর্থক। বলা হয় টাকা পয়সা নিয়ে বামপন্থীদের অন্তরকলহ। কেউ বলেন ফিস হাইকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে থাকা পড়ুয়ারা নাকি আক্রমণ করেন রেজিস্ট্রেশন করতে আসা পড়ুয়াদের। আর অবধারিতভাবেই এসে যায় শাট ডাউন জেএনইউ হ্যাশট্যাগ। অর্থাৎ ঝুলির আসল বিড়াল। এক সঙ্ঘী লেখেন জেএনইউর বিরাট ক্যাম্পাস তুলে দেওয়া হোক বিদেশী ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির হাতে। যাতে আম্বানী আদানির মতো ব্যবসায়ীদের ছেলে মেয়েরা সোনায় বাঁধানো আইফোন হীরে বসানো জাঙিয়ার পাশাপাশি দামী দামী এমফিল পিএইচডি গলায় বেঁধে আইপিএলের মাঠের পাশে সোফায় বসে পেছন নাড়াতে পারে। চাষির ছেলে আশাকর্মীর মেয়ের হাতে এসব ডিগ্রী বেমানান কিনা।
অর্থাৎ সমস্ত ছোটখাটো খচরামো পেরিয়ে আমাদের বুঝতে হবে আসল গেমপ্ল্যান হলো ভারতবর্ষকে একটি শপিংমলে পরিণত করা। যার একটি তাকে থাকবে শিক্ষা, একটি তাকে রেল ও সমস্ত পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, একটিতে স্বাস্থ্য, আরেকটিতে ব্যাঙ্কিং এইভাবে সমস্ত দেশকে আপামর জনসাধারণের ছোঁওয়ার বাইরে নিয়ে গিয়ে দেশ নামক ধারণাটিকে একটি বিমূর্ত ভাবাবেগে পরিণত করা। দেশ বলতে আমরা অধিকার বুঝবো না, দেশ বলতে আমরা শুধুই বুঝবো আমার অধিকারের প্রশ্ন ইনভ্যালিড কারণ পাকিস্তানের অবস্থা আরও খারাপ। দেশে চাকরি নেই কেন প্রশ্ন করলে আমায় হাজার প্রতিকূলতা পেরিয়ে বাপের টাকায় বড়লোক বাচ্চার গুলুমুলু সাকসেস স্টোরি শুনিয়ে শান্ত করতে চাইবে পেটোয়া স্পিরিচুয়াল ধম্মবাপ আর আমি সেইসব না মানতে চাইলে বলবে পাকিস্তান চলে যাও। আরেসেস ও তার সহযোগী দল, বড় কর্পোরেট ও ধর্মগুরু ফাউণ্ডেশন সমূহের বানানো ডিনায়ালের খাঁচাটিকে প্রশ্ন করলেই আমাদের ঠ্যাঙ ভেঙে দেওয়া হবে।
এই লেখা লিখতে লিখতেই শোনা যাচ্ছে বিশ্বভারতীতে সঙ্ঘের পেটোয়া লোকজন নিয়ে ব্যবস্থা করা হয়েছিল এক সেমিনার যাতে সিএএ ও এনআরসির সুফল ব্যখ্যা করার কথা ছিল। সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় রড লাঠি নিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে আরেক গুন্ডাবাহিনী। বিশ্বভারতী থেকে আসা এই খবর কোনদিকে গড়াবে আমরা জানি না, কিন্তু গোটা দেশজুড়ে যে সমস্ত ক্যাম্পাসগুলিতে আরেসেস এবিভিপির যাতায়াত ছিল সীমিত সেগুলিতেই নানা ফিকিরে ঝামেলার পরিবেশ তৈরী করে এক একটা ফেনোমেনন বানাতে চাইছে তারা। কিন্তু তাদের এই বর্বরতা কোনোভাবেই শেষ কথা হয়ে যে উঠবে না তার প্রমাণ প্রায় প্রতি মুহুর্তে দিয়ে চলেছেন এই দেশের ছাত্রছাত্রীসমাজ ও তাদের পাশে দাঁড়ানো সাধারণ মানুষ। আরেসেস বিজেপি যত হিন্দুরাষ্ট্র বা অন্যকে টুকরে গ্যাঙের নাম করে আসলে নানাভাবে ভারতের বিভাজনে ব্রতী হবে ততোই তাদের স্বরূপ উন্মোচিত হবে এবং অতীত থেকে ফ্যাসিবাদকে মোকাবিলা করার শিক্ষা তাদেরও দেওয়ার জন্য একত্রিত হবেন এদেশের সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ। যে আজাদীর স্লোগান উঠে এসেছিল বিক্ষুদ্ধ কাশ্মীর থেকে আজ তা শোনা যাচ্ছে কলকাতায় মুম্বইতে সব জায়গায় এবং তা দিচ্ছেন সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ গৃহবধু বাচ্চা বুড়ো সবাই। ফয়েজের কবিতার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি বসাতে বাধ্য হচ্ছে ভীতু কর্তৃপক্ষ।
মনে হতে পারে এ শুধুই রোম্যান্টিক আশাবাদ, কিন্তু না। এ লড়াইয়ের ফল প্রকাশিত হবে না কোনো ভোটের রেজাল্টে, এ কোনো ক্ষমতা দখলের লড়াই নয়। এটা নিজের দেশকে ফিরে কেড়ে নেওয়ার লড়াই। ওঁরা বলছেন ওঁরা আমাদের নাগরিকত্ব দেবেন, তাহলে আমরা এখন কী? আর আমাদের নতুন করে নাগরিকত্ব দেওয়ার ওরা কে? আশেপাশের দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য শুধু আইন হলে এত আয়োজনের তো দরকার পড়তো না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝানো মিথ্যে কথা বলে সমর্থন আদায়ের জন্য মিসডকল দেওয়ার নাম্বার থেকে ডিটেনশন ক্যাম্প কিংবা মুসলিম ছাত্রকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর "নিজের দেশে" পাঠানোর প্রকাশ্য হুমকি। ফলে এই সমস্ত কিছুর প্রশ্ন মানুষ করবেন, জবাব চাইবেন, আর তাতে নেতৃত্ব দেবেন এই নির্ভীক ছাত্রছাত্রীরা। রোহিতের সহযোদ্ধারা, তার আত্মহত্যার চিঠিতে যে স্বপ্নের কথা সে বলে গেছে সেই স্বপ্নের জন্য। ফ্যাসিবাদের সমস্ত পাঁয়তারাই আমাদের দেখা হয়ে গেছে। তাদের মিথ্যের ব্যবসা থেকে গোপন উদ্দেশ্য সবই আমরা ধরতে পেরে গেছি। তাই কোনোভাবেই আর কাউকে ভয় পাইয়ে লোভ দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া যাবে না। হাম দেখেঙ্গে।