নিজের ঘরে ফিরেও রংবেরঙের সেই বেলুনগুলোকে ভুলতে পারছিল না নিমাই। একবার নিজের হাতের দিকে তাকাল সে। এই হাত দিয়েই সে স্পর্শ করবে তার সার্টিফিকেট। কোথায়, কত দূরে রয়েছে সেই কাগজের টুকরোটি? দুটো হাতই মুঠো করল সে। তারপর চোখ বুজে আবারও ভাবল সেই রঙিন বেলুনগুলোর কথা। এখানে, এই হৃদয়পুর দ্বীপে সার্টিফিকেট নিতেই এসেছে সে। আর যখনই সার্টিফিকেটের কথা ভাবছে, ওই রঙিন বেলুনগুলোই তার চোখে ভেসে উঠছে!
সামনের জানলার কাছে এসে দাঁড়াল সে। সারি সারি ঝাউ গাছের ভেতর, একচিলতে ফাঁকা জমিতে ছোট্ট একটা কাঠের বাংলো। একটাই ঘর। জানলা দিয়ে দেখা যাচ্ছে, নীল সমুদ্র, সাদা ফেনা, অবিরাম ঢেউ। দ্বীপের হইচই থেকে অনেক দূরে এই জায়গাটা। সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। অসম্ভব নির্জন। এখানে মাইলের পর মাইল জুড়ে শুধু ঝাউ আর নারকেল গাছ। আর সেই গাছগুলোর গায়ে রঙিন বেলুন। মুহূর্তের জন্য চোখ বুজল নিমাই। আবার খুলল। সমুদ্র এখানে ধনুকাকার। দূরে একটা লাইটহাউস দেখা যাচ্ছে। আরও একটু দূরে একটা প্রাচীন দুর্গ। তার ঠিক সামনেই একটা মস্ত কামান।
ঘরের মেঝেতে ডাঁই করা ফাইলের স্তুপ। এক পাশে দেয়ালের গা দিয়ে রাখা একটা খাট। পাশেই একটা ছোটো কাচের টেবিল। সেই টেবিলের ওপর রাখা একটা ফুলদানি। ফুলদানির গায়ে সর্বশক্তিমানের ছবি। ফুলদানিতে কয়েক গুচ্ছ প্লাস্টিকের লাল গোলাপ। ফাইলের ভেতরেই মুখ গুঁজে বসেছিল এতক্ষণ। এখন একটু ক্লান্ত লাগছে। জানলা দিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে রইল সে। আর তখনই সেই রংবেরঙের বেলুনগুলোর কথা মনে পড়ল তার, যার আড়ালে থাকা মানুষটাকে প্রথমে সে দেখতেই পায়নি!
নিমাই সকালেই হৃদয়পুর নামের এই দ্বীপে এসেছে। এখানেই থাকেন সর্বশক্তিমান। এই দেশটির অবস্থান একদম সমুদ্রের মধ্যে। অনেকগুলি দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে এই দেশ। আর ঠিক মাঝখানে, কেন্দ্রস্থলে, রয়েছে এই হৃদয়পুর দ্বীপটি। গোটা দেশের ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন দ্বীপে এই দ্বীপটিকে নিয়ে মানুষের কৌতূহল আর রহস্যের শেষ নেই। এই দ্বীপের বিভিন্ন উৎসব, প্রথা, নাচ, মিনার, স্তম্ভ, ভবন, রাস্তা, মোড় ছবি হয়ে বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে শোভা পায় অন্য দ্বীপগুলোয়, সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরগুলোয়, বড়ো বড়ো হোটেল আর বিনোদনক্ষেত্রে।
এই দ্বীপে আসার পথে হঠাৎ সেই লম্বা, সরু, অন্ধকার করিডোরটির কথা মনে পড়ে গেছিল নিমাইয়ের। চাকরির দরখাস্ত হাতে গতকালও সারাদিন কেটে গেছিল সেখানে। খুব বেশি এগোতে পারেনি। গরমে, ঘামে নাস্তানাবুদ হয়ে গেছিল। তার সামনে পিছনে ছিল তারই বয়সি হাজার হাজার ছেলেমেয়ে। কুঁকড়ে, গুটিয়ে থাকা একদল সরীসৃপ যেন। অন্ধকারের মধ্যে আরও ঘন অন্ধকার হয়ে মিশেছিল। এরাই এই দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। তাদের ভাঙাচোরা মুখ, কর্কশ গলার স্বর, অশ্রাব্য মুখের ভাষা। কোনোরকমে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চায় তারা। নিজেদের মর্যাদা, সম্মান, মেরুদণ্ড, এসব নিয়ে ভাবেই না। যে-কোনো মুহূর্তে তলিয়ে যাওয়ার, এই অন্ধকারে মিশে যাওয়ার ভয়ে মানসিক পঙ্গুত্ব মেনে নিয়েছে। চিন্তাভাবনা করার মানবিক অধিকারটুকুও বর্জন করেছে। গত সাত বছর ধরেই এরকম চলছিল নিমাইয়ের। আসলে সাত বছর আগে অভিনয় কলায় এ দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রি পেয়েও কোনো বিশেষ সুবিধা পায়নি সে। সেই লম্বা, সরু, অন্ধকার করিডোরটাতেই এসে দাঁড়াতে হয়েছিল তাকে। আরও হাজার হাজার ছেলেমেয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। দুপাশের অন্ধকার, ভাঙাচোরা দেয়াল থেকে স্যাঁতসেঁতে একটা গন্ধ ভেসে আসত। দিনের পর দিন সেই গন্ধ টেনে টেনে নিমাইয়ের বুকের ভেতরটা ভারী হয়ে উঠত। জোরে জোরে শ্বাস টানতে হত তাকে। প্রচণ্ড গরমে তার সারা শরীরে সারাদিন ধরে ঘামের স্রোত বয়ে যেত, অসম্ভব দুর্গন্ধ সেই আঠা আঠা ঘামে। আর তখনই তার মনে পড়ত সর্বশক্তিমানের কথা। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন বলেই এই ছেলেমেয়েরা বুকে ভরসা নিয়ে এই স্যাঁতসেঁতে অন্ধকারে এসে দাঁড়িয়েছে। সেদিন সর্বশক্তিমানের দ্বীপে আসার সময় লঞ্চের ভেতরে চোখ-ধাঁধানো আলো আর শরীর জুড়িয়ে যাওয়া ঠান্ডায় বারবার আরামে চোখ বুজে আসছিল নিমাইয়ের আর তখনই সে দেখতে পাচ্ছিল সেই লম্বা, সরু, অন্ধকার করিডোরটিকে। বাইরে প্রচণ্ড তাপ। নিমাই যে সোফায় বসেছিল তার ঠিক উলটোদিকেই দেয়ালে সোনার ফ্রেমে বাঁধানো সর্বশক্তিমানের ছবি। কতদিন স্বপ্নে এই মানুষটিকে দেখেছে সে। ওদের ছোট্ট দ্বীপে তাকে নিয়ে সবসময়ই চর্চা হয়। তিনি প্রেমিক, তিনি সাহসী, তিনি প্রথাবিরোধী, তিনি প্রতিবাদী, তাঁর যৌবন কোনোদিন ফুরোবার নয়। তিনি রূপকথার নায়ক। তাঁকে নিয়ে নানা গল্প। বীরত্বের কত কাহিনি। ত্যাগ ও উদারতার প্রতীক তিনি।
আর তাঁকে শুধু স্বপ্নের ভেতরই পাওয়া যায়। খুব কাছে নয়। তবু পাওয়া যায়। একটা আলোকমূর্তির মতোই তিনি হেঁটে যান দূর দিয়ে। সেই আলোর স্পর্শেই তাঁর উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। তখন তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ শোনা যায়। তখন তাঁর চরণের ধ্বনি সুর-তালে সংগীতের মতো বেজে ওঠে। দূরে এক রঙিন ক্যানভাসের ভেতর থেকে তিনি তাকিয়ে থাকেন। শ্রদ্ধায় মাথা নীচু হয়ে আসে তখন। খুঁজে খুঁজে এই দ্বীপের সবচেয়ে রঙিন, সুগন্ধি আর দুর্লভ ফুলটি তুলে আনতে ইচ্ছে করে তাঁর জন্য। তারপর স্বপ্নের ভেতরই, ঠিক তাঁর পায়ের কাছে সেই ফুলটি নিবেদন করে আসতে ইচ্ছে করে...
তারপর ওদের দ্বীপে সেদিন পৌছল তাঁর প্রতিনিধি। দূর থেকে সেই রাজকীয় লাল লঞ্চটিকে আসতে দেখা গেল। সবে সূর্য উঠেছে, আকাশটা ভরে রয়েছে আবিরের রঙে। গোটা দ্বীপে সাড়া পড়ে গেল। যেন আজ কোনো উৎসবের দিন। নিমাইরা সবাই গিয়ে দাঁড়াল বন্দরে। ধীরে ধীরে লঞ্চটা এসে দাঁড়াল। আলতো স্পর্শ করল বন্দরের মাটি। কিছুক্ষণ স্তব্ধতা চারদিকে। তারপর লঞ্চের সিঁড়ি দিয়ে ধীরে ধীরে একজন নাবিক নেমে এল। বন্দরের মাটিতে সে পা দিতেই তাকে ঘিরে ধরল একঝাঁক কৌতূহলী মানুষ।
আমরা একবার তাঁকে দেখতে চাই।
হ্যাঁ, অনেকদিন হয়ে গেল, এই দ্বীপে তিনি পা দেন না।
তিনি এই দ্বীপেরই মানুষ, মনে আছে তো?
এই দ্বীপ থেকেই তিনি প্রথম গিয়েছিলেন সমুদ্রে...
সেই শুরু আর তিনিই আজ সর্বশক্তিমান!
নাবিকটি কিন্তু একদৃষ্টে নিমাইয়ের দিকেই তাকিয়েছিল। কারও কোনো কথাই তার কানে ঢুকছিল না। একসময় সে নিমাইকে দেখিয়ে বলল, আপনিই নিমাই?
নিমাই মাথা নাড়ল।
নাবিকটি বলল, আপনি প্রস্তুত?
হ্যাঁ। আবারও সম্মতি জানাল নিমাই। গতকাল রাতেই সর্বশক্তিমানের দপ্তর থেকে ফোন এসেছিল। বুড়ো অভিনেতা তখন ওদের বাড়িতেই ছিলেন। নিমাই ছুটে গেছিল তাঁর দিকে। আর তিনি দু-হাত দিয়ে জাপটে জড়িয়ে ধরেছিলেন নিমাইকে। নিমাইয়ের মা বোবা চোখে ওদের দিকে তাকিয়েছিলেন। নিমাই গিয়ে তাঁর মাথার সাদা চুলে বিলি কেটে দিয়েছিল কয়েকবার।
বুড়ো অভিনেতার স্বরে খুশি ঝরে পড়ছিল। তিনি বলেছিলেন, এবার তাহলে তুমি সার্টিফিকেটটা পাচ্ছ!
নিমাই কোনোরকমে বলেছিল, আপনার জন্যই তো হল। আপনি চিঠি দিলেন বলেই...
হ্যাঁ, সর্বশক্তিমান আমার পুরোনো বন্ধু। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বুড়ো অভিনেতা বলেছিলেন। এখনও আমাকে ও মনে রেখেছে তাহলে! এখনও আমার কথাকে গুরুত্ব দেয়! সত্যি, সব বদলে যাবে এবার, সব...
নিমাইয়ের মা জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়েছিলেন। এবার জানতে চাইলেন, সব বদলে যাবে। কেন? কীভাবে? বুড়ো অভিনেতা তাঁর দিকে ফিরে বললেন, বলছ কী তুমি! সর্বশক্তিমানের সার্টিফিকেট! এটাই এদেশে সবচেয়ে বড়ো সরকারি স্বীকৃতি। চূড়ান্ত সাফল্য। এই সার্টিফিকেট একবার হাতে পেলে...
নিমাই মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, সাত বছর অপেক্ষা করেছি মা! মাত্র সাতটা বছর!
মাত্র? সাত বছর, মাত্র? নিমাইয়ের মা ঝাঁঝিয়ে উঠলেন। তোমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সাতটা বছর। ওই ভেজা, স্যাঁতসেঁতে, অন্ধকার করিডোরে! সাত বছরে তোমার মতো একটা প্রতিভা কত কী করে ফেলতে পারত! অথচ কিছুই করতে দেওয়া হল না তোমাকে...
অনেকে সারা জীবন অপেক্ষা করে, মা। তবুও ডাক পায় না। ওই অন্ধকার করিডোরে চাকরির দরখাস্ত হাতেই কেটে যায় গোটা জীবন।
সবাই তোমার মতো অভিনয় কলায় সর্বোচ্চ ডিগ্রি পায় না! নিমাইয়ের মা দৃঢ় স্বরে বললেন।
না, না, প্রতিবছরই কেউ না কেউ পায় মা। তাদের অনেকেই, এমনকি আমার আগে যারা ডিগ্রি পেয়েছে, তাদেরও অনেকে এখনও সার্টিফিকেট পায়নি। তারা অপেক্ষা করছে। গতকালও তাদের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। অন্ধকারে। আমরা সবাই কেমন অন্ধকারে মিশে যাচ্ছিলাম মা। ওঃ, তবু তো ওরা আমাকে শনাক্ত করেছে!
কেন এরকম করে ওরা? একটা সার্টিফিকেট দিলেই তো...
বুড়ো অভিনেতা সাদা দাড়িতে হাত বুলোতে বুলোতে এবার বললেন, এ অনেক জটিল ব্যাপার। একটা সার্টিফিকেট নিছক একটা কাগজের টুকরো নয়। যাকে সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে, তার প্রতি রাষ্ট্রের একটা দায়িত্ব এসে যায়। এত এত প্রতিভা! এত প্রতিভার দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা এই রাষ্ট্রের কোথায়? তা ছাড়া সব জায়গায় ডিগ্রি পাওয়া গুণী ছেলেরা বসে গেলে, যারা ধরাধরি করছে, ঘুষ দিচ্ছে, তেল মালিশ করছে, ফাইফরমাশ খাটছে, তাদের জায়গা কোথায় হবে, বল তো? গুণী ছেলেরা নিষ্ঠা দেখাবে। আর এরা দেখাবে আনুগত্য। আর সেই আনুগত্যের আড়ালে-আবডালে নিজেদের পকেট গোছাবে। রাষ্ট্র কোন্টা চায় বল তো?
হো হো করে হেসে উঠলেন তিনি।
নিমাইয়ের মা বললেন, গুণী ছেলেদের নিষ্ঠা দেশটাকে অনেক এগিয়ে দিতে পারত...
কে চায় এগোতে? বুড়ো অভিনেতা ফুঁসে উঠলেন। যার মেধা আছে, সে-ই এগোতে চায়। যার সৌন্দর্যবোধ আছে, সে-ই চায় দেশটাকে সুন্দর করে সাজাতে। ওসব নিয়ে কেউ ভাবে না, বুঝেছ? নির্বোধ, মগজহীন, সংকীর্ণ, স্বার্থপর সব মানুষ। তবু আমি খুশি হয়েছি। এই দ্বীপ, ‘মৃতের দ্বীপ’ নামেই পরিচিত। কেউ এর খোঁজ রাখে না। দুনিয়ার মানচিত্রে এই দেশের অন্য সব দ্বীপের খোঁজ পাওয়া যায়। শুধু একে পাওয়া যায় না। মুছে দেওয়া হয়েছে এই দ্বীপটাকে। সর্বশক্তিমানই মুছে দিয়েছেন। এখানে বসে সার্টিফিকেট পাওয়া সোজা কথা নয়...
কেন? নিমাইয়ের মা জানতে চাইলেন। এ তো ওঁর নিজের দ্বীপ!
সেই কারণেই! বুড়ো অভিনেতা বললেন। এই দ্বীপকে উনি হাড়ে হাড়ে চেনেন। তাই বেশি মাথা তুলতে দেন না। দাবিয়ে রেখেছেন। এই দ্বীপটাকে উনি বিশ্বাস করেন না। নিজের পক্ষে বিপজ্জনক ভাবেন!
আবার হো হো করে হেসে উঠলেন বুড়ো অভিনেতা। তারপর নিমাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, সার্টিফিকেটটা হাতে পাও একবার! গোটা দুনিয়ার চোখ পড়বে তোমার কাজের ওপর। এদেশের তরুণ প্রজন্মের অনেক সুবিধা হবে তখন। তোমার সততা, নিরপেক্ষতা আর বৈদগ্ধ্য তাদের কাছে একটা দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে। তুমিও তাদের হয়ে লড়বে, দশ জায়গায় তাদের কথা বলবে, তাদের এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করবে। এই গুণ তোমার আছে। প্রকৃত প্রতিভার প্রতি তুমি সুবিচার করবে। তাদের প্রতি তোমার সমবেদনার কথা আমি জানি। তোমার প্রেরণা নিরন্তর তাদের সাহায্য করবে। এতে দেশের মঙ্গল হবে। ভবিষ্যৎ পাকাপোক্ত হবে। গোটা দেশে একটা সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিবেশ গড়ে উঠবে।
নিমাই দৃঢ়স্বরে বলেছিল, আমি নিশ্চয়ই চেষ্টা করব।
নাবিকটির সঙ্গে নিমাই এগিয়ে গেল লঞ্চের সিঁড়ির দিকে। এই নাবিক তারই বয়সি হবে। মুখে বন্ধুত্বপূর্ণ হাসি। এর সঙ্গ ভালোই লাগছিল নিমাইয়ের। গলার স্বর শুনে বুঝতে পেরেছিল, গতকাল এ-ই ফোন করেছিল তাকে। লঞ্চের সিঁড়িগুলো তার কাছে স্বর্গের সিঁড়ি বলেই মনে হল। ভেতরে ঢুকেও কাচের জানলা দিয়ে একবার সে দ্বীপের দিকে তাকাল। দেখল, মার চোখে জল। বুড়ো অভিনেতার মুখে খুশি উপচে পড়ছে। দ্বীপের সবাই ওদের ঘিরে অভিনন্দন জানাতে ব্যস্ত। নিমাই কোনো শব্দ শুনতে পাচ্ছিল না। কিন্তু ইশারাগুলো বুঝতে পারছিল। আর সে দেখতে পাচ্ছিল শ্বেতপাথরের মন্দিরটিকে। এই মন্দিরটির স্থাপত্য ওর খুব প্রিয়। অনেকক্ষণ পর্যন্ত সেই স্থাপত্য আর শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে রইল নিমাই।