কবি বললেন – ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।‘
আমরা বললাম – থামো, থামো। সারা পৃথিবী লকডাউন আর সোশ্যাল আইসোলেশানে ভুগছে, বসন্ত শতবার কড়া নাড়লেও কেউ দরজা খুলবে না।
কবি বললেন – ‘তব অবগুন্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে কোরোনা বিলম্বিত তারে।‘
আমরা বললাম – বল কী! বিলম্বিত তো হতেই হবে। সারা পৃথিবী যখন করোনার রোজনামচা গাইছে বিলম্বিত না হয়ে উপায় কী?
কবি বললেন – কিন্তু তোমরা তো সুইডেনে!!!
আর তো কিছু বলার যো নেই। আমরা তো সুইডেনে! এই করোনার দুর্যোগে-আক্রান্ত পৃথিবীতে যে কটি দেশ সাংবিধানিক নির্দেশচারিতায় লকডাউন বা তালাবদ্ধ নয়, তাদের সংখ্যা হাতের পাঁচ আঙ্গুলের চেয়েও কম। আর সুইডেন হল তাদের মধ্যে একটা! তাই করোনা-অধ্যুষিত এই জোড়া-কুড়ি বছরেও এদেশে বসন্তের অবাধ, অনায়াস বিচরণ। তার যৌবন ক্রমবর্ধমান দিনের উজ্জ্বল রোদের সোনালি কিরণে, তার সোচ্চার আগমন শীতের শ্বেতশুভ্র আবরণ খসিয়ে ঘুম ভাঙা ঘাস্ফুলের হলুদ-বেগুনী রঙে, তার জয়গান পাখিদের কণ্ঠে নতুন ঘর বাঁধবার গানে গানে। আর মানুষজন? তারা তো সারা বছর ধরে এই আলো, এই উষ্ণতা, এই বসন্তেরই প্রয়াসী। তারা বিশ্বাস করে প্রকৃতিকে, আদর করে আগলেও রাখে। বাতাস যেন দূষিত না হয়, শ্বাসবায়ু যেন সদাই থাকে পর্যাপ্ত, শহর হোক আধুনিকতা আর প্রযুক্তিতে অগ্রণী, কিন্তু বনভূমি যেন হয় দিগন্তচুম্বি, আকাশ যেন থাকে রেশমি নীলাম্বরীর মতোই সুনীল, জলের মতো চিকন! এহেন দেশ, যেখানে সবার সমান অধিকার সার্বজনীন মতে স্বীকৃত, যেখানে ব্যাক্তিস্বাধীনতাকে দেওয়া হয় সর্বোচ্চ সন্মান, সে দেশে যে সহজে রাজনীতিক বা সাংবিধানিক বাহুবলে লকডাউন হবে না - এতে আর আশ্চর্য কী?
তিন তিনটে মাস পেরিয়ে আমরা এখন ২০২০ এপ্রিলে। করোনার কথা যখন প্রথম শোনা গেল তখন সবে জানুয়ারির মাঝামাঝি। শোনা গেল যে চীনের ইউহান প্রদেশে সহস্রাধিক মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। আমরা তখন ভাবছিলাম চীন তো ইউরোপ থেকে অনেক দূর! এত পাহাড়, সমুদ্র, মরুভূমি পেরিয়ে করোনার আঁচ এতদূরে আসবে কী করে? কিন্তু, হায়রে সভ্যতা, হায়রে গ্লোবালাইজেশান! চীন পর্যটকদের বাহন করে করোনা এসে গেল ইউরোপে। জানুয়ারির শেষ দিকে উত্তর ইতালিতে করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। কিন্তু সরকারি বিধিনিষেধ সত্ত্বেও দু-তিন সপ্তাহের মধ্যেই ইতালিতে করোনারোগীদের সংখ্যা কয়েক হাজার পেরোলো, মৃতের সংখ্যাও বাড়তে লাগলো পাল্লা দিয়ে। ইতালির সেই সঙ্কটবার্তা ছড়িয়ে পড়ল সারা পৃথিবীতে। সুইডেনে আমরা তখনও সিন্দুরে মেঘ দেখে ডরাই নি। কাগুজে আর বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমে পড়া আর সব ধ্বংস, দুর্ভিক্ষ ও মহামারীর খবরের মতই ভেবেছি যে এও ওদেরই বিপদ, ওদেরই দূরদর্শিতার অভাব ও তার ফলাফল। এই যে প্রবল সঙ্কট এই ‘মুকুট‘-রূপী মৃত্যুবাহনে – সে আমার নয়! কিন্তু আমাদের সব জল্পনার আবসান ঘটিয়ে করোনা ঢুকে পরল সুইডেনেও।
চীনের ইউহান ফেরত এক মহিলার সঙ্গে করোনার প্রথম আবির্ভাব সুইডেনে। দায়িত্বশীল নাগরিকের মতো নিজেকে অন্যের সংস্রব থেকে সরিয়ে রেখেও প্রায় সপ্তাহ খানেক পর শ্বাসনালীর কষ্ট, কাশি ও করোনা রোগের অন্যান্য লক্ষণ নিয়ে তিনিই প্রথম ভর্তি হন হাসপাতালে। এর পরপরই আসতে লাগলো আরও অনেকের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর। এদের অনেকেই ইতালি ফেরত, যারা বাচ্চাদের স্পোর্টস সপ্তাহের ছুটিতে ইতালির পাহাড়তলিতে স্কি করতে গেছিল। স্বাস্থ্যচর্চা করতে গিয়ে সঙ্গে নিয়ে ফিরেছে এই মারণ ভাইরাস। তারপর থেকেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে লাগলো করোনা রোগীদের সংখ্যা। দেখতে দেখতে ফেব্রুয়ারি কেটে গিয়ে মার্চ এসে গেল। আমরা সবাই জানতে পারলাম যে পৃথিবীর আরও আনেক দেশেই করোনার দাপট শুরু হয়েছে। আর সেগুলো শুধু গরীব দেশ নয়। ফ্রান্স, জার্মানি, ইংল্যান্ড, আমেরিকা – করোনা কাউকেই রেহাই দিচ্ছে না। জানতে পারলাম যে ইতালি তার সীমানা বন্ধ করে দিয়েছে। আর কারুর ঐ দেশে ঢোকা না বেরনো সম্ভব নয়। সুইডেনে তখনও এটাকে কোন গভীর সমস্যা বলে দেখা শুরুই হয় নি। আমরা তখনও নিশ্চিন্ত যে এদেশে এমনিতেই এত কম লোক যে এখানে ভয়ঙ্কর কিছু হবে না।
মার্চের শুরু থেকেই একটু একটু করে দৃশ্যপট পাল্টাতে লাগলো। খবরে দিন রাত বিভিন্ন দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের সমাচার। উত্তর ইতালির বেশ কিছু শহর বাইরে থেকে বিমানের যাতায়াত বন্ধ করল। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে ওরাই ইউরোপে প্রথম ঘোষণা করল লকডাউন। এর পরপরই আরও কিছু দেশ - জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স, এমনকি সুইডেনের নিকটতম প্রতিবেশি ডেনমার্কও চলে গেল লকডাউনের আওতায়। তারা সীমানা বন্ধ করল, সভাসমিতি নিষিদ্ধ ঘোষণা হল, বন্ধ হল সব অফিস-কাছারি, স্কুল-কলেজ। জরুরী গবেষণা আর কিছু অপরিহার্য পরিষেবাকে ছাড় দিয়ে আর সব কিছু বন্ধ ঘোষণা করা হল। সুইডেনে তখনও কী হতে চলেছে আমরা কেউ জানি না। সর্বত্র শুধু আলাপ-আলোচনা আর জল্পনা-কল্পনা। লকডাউন সম্বন্ধে কারুরই সঠিক ধারণা নেই। আমরা স্বাভাবিক ভাবেই কাজ করছি, ইউনিভার্সিটি সম্পূর্ণ খোলা, জনজীবনে এই মারণ-ব্যাধির কোন প্রতিফলন নেই। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তখনই ভয়ের বীজ পোঁতা হয়ে গেছে।
করোনার প্রথম ধাক্কা টের পেলাম মার্চের মাঝামাঝি সুপার-মার্কেটে গিয়ে। ভীষণ ভিড়,কিন্তু অনেক কিছুই অপ্রতুল। সবচেয়ে বিস্ময়কর হল এই যে টয়লেট পেপার আর নুডলস-পাস্তা একেবারে নিঃশেষ। আমাদের কুড়ি বছরের সুইডেনে থাকার ইতিহাসে এ এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। চারপাশ থম্থমে। কোনদিকে না তাকিয়ে যা কিছু পেলাম তা গাড়ি বোঝাই করে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। এসেই দেশে বা বাড়িতে ফোন, তোমরা কালই চাল-ডাল কিনে বাড়িতে রাখ। কী দিন আসছে তা জাননা। তারপর খোঁজ নেওয়া চলল এখানে বন্ধুবান্ধবদের, ছাত্রছাত্রীদের। কে কোথায় আছে, কার কী দরকার আছে ইত্যাদি, প্রভৃতি। অনেক রাত পর্যন্ত ফোন আসতেই থাকল। বার বার একই আলোচনা। কাল থেকেই কি সুইডেনে লকডাউন হবে? কী খোলা থাকবে, কী থাকবে না, খাবার পাওয়া যাবে কিনা – এই সব। যারা বহুদিন যোগাযোগ রাখেনি তারাও সোশ্যাল মিডিয়াতে খোঁজ নিতে থাকল। সবারই মনে এক অনিশ্চিত চিন্তা আর ভয় – অবস্থা যে খারাপ সে তো সবাই জানি, কিন্তু কতটা যে খারাপ আর সেটা যে আমাদের কীভাবে প্যাঁচে ফেলবে কেউ তা জানে না।
এই অবস্থা চলল বেশ কদিন। সকাল হতেই সবাই করোনা স্টাটিসটিক্স দেখি – আর কতজন আক্রান্ত হল, আর মারা গেল কতজন। যারা মারা গেল তারা বৃদ্ধ না জোয়ান, আগে থেকে কোনো অসুখ ছিল কি? ইতালির কী পরিসংখ্যান, স্পেনেরই বা কী? সুইডেনের করোনা কার্ভ ওদের থেকে কতোটা পিছিয়ে? এমন নিত্য পর্যালোচনা। কিন্তু, সকলের জল্পনা কল্পনায় সম্পূর্ণ জল ঢেলে দিয়ে সুইডেনে লকডাউন হল না। আরও সপ্তাহ-খানেক পরে বিশ্ববিদ্যালয় আর উচ্চবিদ্যালয়গুলি ছাত্রদের ক্যাম্পাসে আসার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল, অনেক সরকারি এবং বেসরকারি সংগঠন তাদের কর্মীদের বাড়ী থেকে কাজ করার নির্দেশ দিল, কিছু কোম্পানি সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ হল না। ট্রেন ও বাস চলতে লাগলো। সমস্ত দোকান, বাজার, এমনকি রেস্তোরাঁ, স্পোর্টস ক্লাব, পাব সবই খোলা রইল। সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী টিভিতে এসে শুধু সকলকে নিজে সতর্ক থাকতে বল্লেন। বললেন যে যতটা পারেন বাড়িতে থাকুন, বাড়ি থেকেই কাজ করুন, অন্যের থেকে দূরত্ব রাখুন। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নির্দেশিকা দিল যে পড়াশোনা থামিয়ে রাখা বা পিছিয়ে দেওয়া চলবে না। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পড়ানো এবং পরীক্ষা নেওয়া চালাতে হবে। বাসচালকদের ফিতের গন্ডি টেনে যাত্রীদের থেকে পৃথক করে দেওয়া হল, কিন্তু পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ করা হল না। সুপারমার্কেটে মেঝেতে দাগ টেনে ক্রেতাদের দাঁড়ানোর জায়গা চিহ্নিত করে দেওয়া হল, কিছু কিছু দোকান বর্ষীয়ান ক্রেতাদের জন্য এক ঘন্টা আগে খুলে যেতে লাগলো, কিন্তু কিছুই বন্ধ হল না। বরং স্বাস্থ্যচর্চার হিড়িক বেড়ে গেল। জিমগুলোতে ভিড় পাবগুলোর চেয়েও বেশী। আর যেখানে যত বয়স্ক মানুষ আছেন তাঁরা সকাল নেই, দুপুর নেই, রাস্তায়,পার্কে হাঁটছেন। সবচেয়ে গোল বাধল এই আমাদের। মানে যাদের শরীরে বিদেশী রক্ত, আর মনে একরাশ পিছুটান। মাথার ব্যায়াম করে দিন কাটে আমাদের, কিন্তু শরীরের ব্যায়াম করে সময় ব্যায় করার মুর্খামি কোনদিন করিনি। আমরা কাজ করতে পিছপা নই, কিন্তু ভয় পাই এই বুঝি কেউ হাঁচে! কাশি হলে তো কথাই নেই। এর মধ্যে দুম করে ভারতবর্ষ, তার প্রায় দেড় বিলিয়ান মানুষ নিয়ে লকডাউন হয়ে গেল! এতে আমাদের মনোবল যাও বা ছিল, তাও আর অবশিষ্ট রইল না।
প্রথম প্রথম আমরা কেউ কেউ সুইডেনে লকডাউনের পক্ষে জনমত গঠনের চেষ্টা করলাম। কিন্তু বিধি বাম! যতই পরিসংখ্যান দেখাই আর উদাহরন দিই যে - ‘প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য, ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা‘ – আমাদের সুইডিশ বন্ধু আর সহকর্মীদের অধিকাংশই লকডাউন-বিরোধী যুক্তি ও সিদ্ধান্তে অনড়। সত্যি বলতে কী, এঁরা কেউই বিশেষ ব্যাতিক্রমী ব্যক্তি নন, সুইডিশ জাতিটাই এই গোত্রীয়। এঁরা এদের দেশের নেতৃত্ব ও তাদের দেশ পরিচালন নীতিতে একান্তই বিশ্বাসী। এটাই এঁদের বহু প্রজন্ম অর্জিত শিক্ষিত আচরণ। সঙ্কটের সময়ে তাঁরা সরকারি বিবৃতিতে বিশ্বাস করেন, রাষ্ট্রের নির্দেশ অনুসরণ করে চলেন ও অন্যান্যদেরও চলতে বলেন। গসিপ ম্যাগাজিন আর সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর ভিত্তি না করে এঁরা নিয়মিত জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং সংক্রামক রোগের বিশেষজ্ঞের নির্দেশাবলী টিভি ও রেডিওতে শোনেন। সেখানে রাজনীতিকদের বদলে এই দেশের বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীরা নিয়মিত বক্তব্য রাখেন আর এই জাতীয় সচেতন অথচ শিথিল ব্যবস্থার জন্য ন্যায়সঙ্গত যুক্তি দিয়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রাখেন। জনসাধারণের প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ করে দিলে ডাক্তার, নার্স, হাসপাতাল কর্মীরা তাদের বাচ্চাদের বাড়িতে ফেলে রোগীদের সেবার কাজ করবেন কী করে? আর সব রেস্তোরাঁ, দোকান-বাজার বন্ধ করে দিলে যত লোকের কাজ চলে যাবে, যে ভীষণ অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেবে, সেটা সামলানো যাবে কেমন করে? ফলে এঁদের অধিকাংশেরই সিদ্ধান্ত যে এঁরা শেষ অবধি লড়ে যাবেন। যতটা দূরত্ব রেখে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায় তাই করবেন। এই সঙ্কটকে গুরুত্ব দেবেন, কিন্তু ভয়ে গুটিয়ে থাকবেন না। তাই যথাসম্ভব সেলফ আইসোলেশান, ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্যে হাঁটাহাঁটি আর স্বাস্থ্য বিভাগের ছবি সহ নির্দেশিকা মেনে ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া - করোনার বিরুদ্ধে কিস্তিমাত করার জন্য এই চালই বেছে নিয়েছেন অধিকাংশ সুইডিশরা।
আর আমরা, মানে অধিকাংশ বাঙ্গালিরা কেমন আছি এই করোনা অধ্যুষিত সুইডেনে? সকাল হতেই মেসেঞ্জার–হোয়াটসআপে সতেরোটা মেসেজ। কেমন আছিস? কেমন আছো? কেমন আছেন আপনারা? খবর কী ওখানকার? এখনও লকডাউন করে নি? কী জানি বাবা, তোরা কিন্তু বাড়ি থেকে বেরোস না। অনলাইনে বাজার করা যাচ্ছে না? কদিন না হয় সেভাবেই চালিয়ে নে। ছেলে মেয়েদের কিন্তু একদম স্কুলে পাঠাস না। স্কুলগুলোই সব রোগের আখড়া ইত্যাদি, প্রভৃতি। আর আমরা রোজ সকালবেলা ব্যোম-ভোলার মতো দেরি করে ঘুম থেকে উঠে, কোনমতে টিশার্টটি গলিয়েই কফির কাপ হাতে ল্যাপটপের সামনে। কর্তা-গিন্নি দুজনে দুই ঘরে বসে ‘জুম‘স্থ হয়ে কিছু অদৃশ্য ছাত্র শ্রোতার উদ্দেশ্যে হাত পা নেড়ে লাগাতার বকে যাচ্ছি। পড়ানো শেষ হতে না হতেই লাঞ্চের চিন্তা। নিত্যদিন কী খাব এই নিয়ে এ কী লাঞ্ছনা! তাড়াতাড়ি খাওয়ার পাট শেষ করেই আবার পরের মিটিং, তারপরের মিটিং! মাঝে মাঝে যে এত কী বলিবার আছে ভেবে অবাক হই! হই বটে, কিন্তু ক্ষান্ত দিই না। পরের দিন আবার সেই একই চর্বিত চর্বণ! হায়রে, এই অত্যাগ্রসর দেশের গৌণ নাগরিক, আমাদের না আছে এদেশে মুরুব্বির জোর, না আছে সুস্বাস্থ্যের সাহস! আমরা তো কোনদিন সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিকেন্দ্রীকরণ পদ্ধতিতে বড় হই নি। আমরা সব সময়েই রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্রনায়কদের অঙ্গুলিহেলন বিনা বাক্যব্যায়ে মেনে নিয়েছি। সেই আমরা কেমন করে বুঝব, কী ভাবে মেনে নেব যে এই দেশে, এই কঠিন সঙ্কটকালেও, কী করে এই দুরবস্থাকে মোকাবিলা করে কাজ চালিয়ে যাওয়া হবে, তার সিদ্ধান্ত আমাদেরই নিতে হবে? আমরা অনেকেই মনে মনে নিশ্চিতভাবে চাই সাংবিধানিক লকডাউন, চাই যে এই করোনা পরিস্থিতি শুধরোনোর আগে আমাদের বাচ্চাদের যেন স্কুলে যেতে না হয়, আমাদের যেন কাজে যেতে না হয়, কিন্তু সেই মত প্রয়োগের, এমনকি প্রকাশেরও কোন সঠিক মাধ্যম নেই। ফলে আমাদের সঠিক অবস্থা ব্যাখ্যা করতে ফের কবিগুরুর দ্বারস্থ –
‘ঘরে যারা যাবার তারা কখন গেছে ঘরপানে,
পারে যারা যাবার গেছে পারে;
ঘরেও নহে, পারেও নহে, যে জন আছে মাঝখানে
সন্ধ্যাবেলা কে ডেকে নেয় তারে।‘
সত্যি, এটাই আমাদের পরিস্থিতির সঠিক বিবরণ – ’ঘরেও নহে, পারেও নহে, যে জন আছে মাঝখানে!’ তাই মনে আশঙ্কা তো থেকেই যায়। যদি সত্যি দিনের আলো ফুরোয় আর সাঁঝের আলো না জ্বলে? যদি আমরা কেউ করোনা আক্রান্ত হই আর ডাক্তার-হাসপাতাল না পাওয়া যায়? তবু সুদিনের আশা ছাড়তে পারি কই? তাই ভরসা রাখি – ‘তবু প্রাণ নিত্যধারা, হাসে সূর্য চন্দ্রতারা। বসন্ত নিকুঞ্জে আসে বিচিত্ররাগে।‘ একদিন আবার সব ঠিক হয়ে যাবে।
খুব ভালো লিখেছিস। সাবধানে থাকিস সবাই । জানিনা কবে শেষ হবে এই ধৈর্যের পরীক্ষা !
Khub bhalo laglo...actual abothata r byakhya pore ekta Samaj dorshan holo...India te lockdown er after effect je kibhave amra mokabila korbo...socio-economic conditions ki hobe bhavle sotti bhoy hochee...tobuo positive dristibhogi theke boli..we shall overcome
সকলকে ধন্যবাদ আমার কলমে সুইডেনে করোনার রোজনামচা পড়ার জন্য। অপূর্ব বাবুর সঙ্গে একেবারে সহমত - 'কম জনসংখ্যা আর শিক্ষিত সচেতন নাগরিক' বলেই সুইডেন লকডাউন না করার পরীক্ষা করতে পারে।
লোকজন মন দিয়ে সরকারি নির্দেশ শোনেন নাকি সরকার মন দিয়ে নাগরিকদের দাবিদাওয়া ইচ্ছে অনিচ্ছা শোনেন, কোনটি? এইটি একটু গুলিয়ে গেল। আর নাগরিকেরা কী চান, সরকার তাই বা জানেন কীভাবে? কাগজে পোল হয়?
তবে লেখাটা দিব্বি ভালো।
বেশ পরিস্কার ছবি পাওয়া গেল।
রৌহীনের সাথে একমত। বশ্যতা মানা পোষ্যের ব্যবহার আর দায়িত্বশীল মানুষের ব্যবহার ত এক হবে না।