এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা

  • কলিম খান, গরুর রচনা ও তর্কশীল বাঙালি

    দেবতোষ দাশ লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৭ জুন ২০১৮ | ৯২৩২ বার পঠিত
  • অকস্মাৎ আকাশ হইতে টুপ করিয়া কলিম খানের আবির্ভাব ঘটিল এই বঙ্গদেশে এবং তিনি নিত্যনতুন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে সুধীবৃন্দকে চমকে দিচ্ছেন, ব্যাপার এমন নয়। যাস্ক, পাণিনি ও অন্যান্য কোষকার, প্রাচীন ভারতবর্ষের ভাষা-বিষয়ক জ্ঞানভাণ্ডারের হোতা। নীরব নিষ্ঠায় একালে এঁদের অনুসরণ করেছেন 'বঙ্গীয় শব্দকোষ' প্রণেতা হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কলিম খান এই সমৃদ্ধ কিন্তু বিস্মৃত জ্ঞানভাণ্ডারের যোগ্য উত্তরাধিকার। কিন্তু কলিম কেবল ভাষাতত্ত্ব নিয়ে থেমে থাকলেন না, পুনরুদ্ধার-করা শব্দতত্ত্ব নিয়ে ঢুকে পড়লেন প্রাচীন ভারতবর্ষের ইতিহাসে। এই ঢুকে-পড়াটাই হয়ে গেল বিপজ্জনক। একে অন্তর্ঘাত হিসেবেই চিহ্নিত করা যায়। কেমন সেই অন্তর্ঘাত? উদাহরণ ইস্তেমাল করে দেখা নেওয়া যাক। ‘গো’ নিয়ে ইদানিং যথেচ্ছ গরু খোঁজা চলছে, আমরা এই ‘গো’ শব্দটি দিয়েই শুরু করতে পারি।

    হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর 'বঙ্গীয় শব্দকোষ'-এ 'গো' শব্দের ৪১টি অর্থ দিয়েছেন। তার মধ্যে একটি অর্থ গরু। এছাড়া গো মানে বৃষরাশি, সূর্য্য, চন্দ্র, ইন্দ্রিয়, ঋষিবিশেষ, গায়ক, গৃহ, পৃথিবী, আকাশ ইত্যাদি। প্রথমেই গো শব্দের অর্থ দিয়েছেন বাক্যের সাহায্যে - যে যায়। কেবল গো-এর ক্ষেত্রে নয়, বেশিরভাগ শব্দের ক্ষেত্রেই তিনি বাক্য-অর্থ দিয়েছেন। তারপর দিয়েছেন তার অন্যান্য প্রতিশব্দ। কেন এমন করলেন তিনি? বর্তমানে চালু আমাদের কোনও বাংলা অভিধানে তো এই রীতি মানা হয় না! তাহলে? ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ মন্থন করে কলিম খুঁজে পেলেন এর উত্তর। এক্ষেত্রে হরিচরণ নিশ্চল নিষ্ঠায় অনুসরণ করেছেন আমাদের দেশের প্রাচীন বৈয়াকরণদের। তাঁর পূর্বসূরীদের। আমাদের দেশে শব্দের মানে শব্দের বাইরে ছিল না, ছিল শব্দের ভেতরেই। শব্দের ভেতর থেকে অর্থ-নিষ্কাশন একটি কৌশল, প্রাচীন ভারতে এই কৌশলের নাম 'নির্বচন'। শব্দের ব্যুৎপত্তি নির্ণয় করে যা করতে হয়। আমাদের বাংলা ব্যাকরণের সমাস ও তার ব্যাসবাক্য নির্ণয়ের মধ্যে যার কিছুটা ভগ্নাংশ এখনও রয়ে গেছে। শব্দের ভেতরের অর্থটিকে বাক্যের সাহায্যেই প্রকাশ করা হয়। বৌদ্ধযুগের 'অমরকোষ' এই কাজটি করেছেন নিখুঁতভাবে। পরে অন্যান্য কোষকারগণ এই রীতিই মেনেছেন।

    সমাজের অগ্রগতির সঙ্গে বাচক-অর্থ বা অন্যান্য প্রতিশব্দের মাত্রা বেড়েছে, পেছনে পড়ে গেছে 'বাক্য-অর্থ'। হরিচরণও নিষ্ঠার সঙ্গে তাই করেছেন। শব্দের ব্যুৎপত্তি নির্ণয় করে যে বাক্য-মানে বেরোয় সেই বাক্যটি লিখেছেন। তারপর এক এক করে দিয়েছেন অন্যান্য বাচক-অর্থ বা প্রতিশব্দ। সেই প্রতিশব্দ প্রদানেও তিনি স্বেচ্ছাচারী হননি। ওই অর্থ তিনি কোথা থেকে পেয়েছেন, সেইসূত্রও উল্লেখ করেছেন তিনি। কোনও অর্থই তাঁর স্বকপোলকল্পিত নয়। ভারতীয় উপমহাদেশে যত কোষগ্রন্থ ও অভিধান রচিত হয়েছিল, প্রায় সবগুলিই তিনি অনুসরণ করেছেন।

    যাস্ক, পাণিনি, মুগ্ধবোধ, অমরকোষ, শব্দকল্পদ্রুম, মেদিনীকোষ ইত্যাদি সবই তিনি আত্মস্থ করেছিলেন। বেদ-পুরাণ-রামায়ণ-মহাভারত, সাংখ্য-যোগ-তন্ত্রবিষয়ক গ্রন্থাদি থেকে রবীন্দ্রকাব্য পর্যন্ত নানা গ্রন্থে শব্দসমূহের ব্যবহার অধ্যয়ন করে তিনি তাদের অর্থ সরবরাহ করেছেন। একটি শব্দের বহু অর্থ, আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি, তিনি কেবল সততার সঙ্গে তা লিপিবদ্ধ করেছেন। হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগানোর মতো কলিম খান শব্দ ও তার শেকড় খুঁড়ে বের করতে চাইলেন ইতিহাস। একটি সচল ভাষা তো ধারণ করে ইতিহাস। গো শব্দের ৪১টি অর্থ তো একদিনে তৈরি হয়নি! সমাজবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয়েছে নানা অর্থ। কয়েক হাজার বছরের ঐশ্বর্য এই অর্থভাণ্ডার। মহাপুরুষ হরিচরণ তাঁর বঙ্গীয় শব্দকোষে ৪১টি শব্দের পুরো তালিকাটাই লিপিবদ্ধ করেছেন। আর এইযুগের স্বেচ্ছাচারী অভিধানকারেরা 'গো'-এর ৪০টি অর্থ ফেলে কেবল 'গো মানে গরু' লিখে দিলেন। ছিঁড়ে ফেললেন আমাদের অসীম উত্তরাধিকারের সূত্রগুলো। কলিমের ভাষায়, একেই বলে 'বাপের নাম ভুলিয়ে দেওয়া'। এইভাবে আমরা নিজেরাই নিজেদের অ-নাথ করেছি, করে চলেছি।

    আমরা যে হ্যাঁগো, ওগো, কীগো ইত্যাদি বলি কথায় কথায়, কেন বলি? এই ‘গো’টি কে বা কারা? এই গো মানে কি গরু? স্ত্রী স্বামীকে বলছেন, হ্যাঁগো আজ অফিস যাবে না? বা চাষি মাঝিকে বলছেন, ওগো তুমি কোথা যাও কোন বিদেশে, বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে। এখানে গো মানে নিশ্চয়ই গরু নয়! স্ত্রী স্বামীকে বলছেন, ও গরু আজ অফিস যাবে না? বা চাষি মাঝিকে গরু বলে সম্বোধন করছেন, এমন নিশ্চয়ই নয়! তাহলে কী? হরিচরণ অনুসরণ করে কলিম বলছেন, এখানে গো মানে গামী, 'হে গামী'-অর্থে সম্বোধন করা হচ্ছে চলমান কারুকে।

    যে যায়, সেই তো 'গো'। তার মানে, প্রতিটি গামী বা চলমান সত্তাই 'গো'। আমাদের পূর্বসূরী বাংলাভাষিগণ যে সমস্ত গামীকে গো শব্দে চিহ্নিত করেছেন, তার সংখ্যা তাই অনেক। সেগুলিকে বিচার করতে গিয়ে দেখা যায়, অতি উচ্চ মার্গের গামী যেমন রয়েছে, অতি নিম্ন মানের গামীও তেমনি রয়েছে।

    কলিম নির্দিষ্ট করছেন, গো শব্দের সর্বোচ্চ অর্থ হল তত্ত্বজ্ঞান ( theoretical knowledge ) এবং সর্বনিম্ন অর্থ হল গরু (cow)। মাঝে রয়েছে অনেক প্রকার অর্থ; সেগুলির মধ্যে ‘হে গামী’ (হ্যাঁগো, ওগো) অর্থে শব্দটির ব্যবহার সর্বাধিক। দ্বিতীয় স্থান ‘পণ্য’ অর্থে গো শব্দটির ব্যবহার। কালীপ্রসন্ন সিংহ মহাভারত-এ বলছেন – ‘গো প্রভৃতি পবিত্রতা- সম্পাদক পদার্থসমূহের মধ্যে সুবর্ণই সর্ব্বশ্রেষ্ঠ।’ তার মানে, এক কালে গরু বিনিময়ের মাধ্যম বা মুদ্রা রূপে ব্যবহৃত হত। টাকা সচল হয়, অচলও হয়; সচল টাকা তো ‘গো’ হবেই। মুদ্রারূপে ব্যবহারের কারণে সেই গো-এর ব্যবহারের আধিক্য ছিল স্বাভাবিক।

    ধরা যাক আরও দু'একটা শব্দ এবার, যেমন - গবেষণা। ছোটবেলায় সন্ধি করেছিলাম, গো + এষণা = গবেষণা। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের 'বাঙ্গালা ভাষার অভিধান'-এ দেখতে পাচ্ছি এষণা অর্থ ১. গমন বা ২. অন্বেষণ বা ৩. ইচ্ছা। গো যদি গরু হয় তাহলে কি গবেষণা মানে গরুর গমন বা গরু খোঁজা/অন্বেষণ বা গরু বিষয়ক ইচ্ছা বোঝাবে? তা তো বোঝায় না! গবেষণার অর্থ জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস দিয়েছেন, কোনও বিষয়ের তত্ত্ব নিরূপণার্থ অনুসন্ধান। ইংরাজিতেও বলে রিসার্চ, যেখানে সার্চ বা অনুসন্ধান শব্দটি আছে। নির্বোধ গো-রক্ষক কোনও সঙ্ঘ, স্নিফার সারমেয়র মতো ফ্রিজে গরু খুঁজতে পারেন, কিন্তু একজন পিএইচডি স্কলার নিশ্চয়ই পাঁচ বছর ধরে গরু খোঁজেন না! তাহলে এই ‘গো’ কী? এখানে খুব স্পষ্ট, গো মানে কেবল গরু নয়। তত্ত্ব-কথাও বোঝায়।

    কিন্তু আমরা কিছুতেই বুঝব না, আমাদের বৈয়াকরণ ভাষাতাত্ত্বিক পণ্ডিতরাও বুঝবেন না! তাঁরা গো অর্থ কেবল গরুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবেন। ফলত পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া উত্তরাধিকার সামলাতে না-পেরে আমরা আজ দীন ভিখারি। আর এই সুযোগ নিয়ে 'ধর্ম বেওসায়ী ভক্ত'বৃন্দ গো-রক্ষা বাহিনী গড়ে ফেলেছেন পাড়ায় পাড়ায়। গরু-খেকো যবন ও ম্লেচ্ছদের ঢিট করে, দরকার হলে খুন করে, গরুকুলকে রক্ষা করতে হবে!

    যেমন গোবর্দ্ধন শব্দটি, যে বা যিনি গো-বৃদ্ধি করেন; অথবা, এখানে গো অর্থ পণ্য বা প্রোডাক্ট। গোবিন্দ = যিনি সর্ব প্রকারের গো-গণ বিষয়ে বিদিত। তিনি হলেন শ্রীকৃষ্ণ। গোবিন্দের সর্বোচ্চ অর্থ, যিনি তত্ত্বজ্ঞান-সমূহের রস দান করেন এমন এক বৃহস্পতি বা তত্ত্বদর্শী। গোবিন্দের সর্বনিম্ন অর্থ, যে রাখাল চাইলে ভাল দুধ জোগাতে পারে। কলিম তাই বলেন, গোবিন্দ'র গো কেবল গরু হলে অনর্থের আর সীমা থাকে না!

    গোস্বামী শব্দের গো মানে কী? যাঁরা গো-গণের স্বামী তাঁরাই গোস্বামী। এখানে গো মানে তত্ত্ব। গোস্বামী শব্দের সর্ব্বোচ্চ অর্থ, যিনি মানবজাতির অর্জিত জ্ঞানসম্পদের মুকুটমণি তত্ত্বসমূহের অধিকারী। সর্বনিম্ন অর্থে, যিনি গরুসমূহের অধিকারী বা মালিক। গোস্বামী'র গো যদি গরু হয় তাহলে রূপ গোস্বামী, সনাতন গোস্বামী কারা? গরুর পাইকার? আমাদের বঙ্গীয় ভাষাবিদেরা কী বলেন? একই নিয়মে, অতএব, গোবর-গোমূত্র বলতে সে গরুর মলমূত্রই বোঝে, এবং যেহেতু প্রসাদ হিসেবে খাওয়ার নিদান আছে, সবাইকে তা খেতেও হবে! আমরা ভাবি, নিঃসন্দেহে ঐ গোবর-গোমূত্রের ভিতরে অলৌকিক শক্তি আছে। অতএব, গোপথ্যি ও পঞ্চগব্য নিয়ে শেষমেষ ‘রাজসূয় যজ্ঞ’ শুরু হয়ে যায়। শুরু হয় রামদেবের রমরমা। কলিম খান বিস্মিত হন, এ কেমন শাইনিং ইণ্ডিয়া, যেখানে লোকেরা গরুর মলমূত্র খায় এবং প্যাকেটে ও বোতলে ভরে লেবেল সেঁটে বিক্রি করে? মহিষ, গাধা, ছাগল, ভেড়া সকলের দুধ খায় এরা, মাংসও খায় কিন্তু তাদের মলমূত্র খায় না। ওদিকে গরুর দুধ ও মলমূত্র সবই খায় কিন্তু তার মাংস খায় না!

    জ্ঞান ও জ্ঞানচর্চাকারীদের ভালোর জন্য বোঝাতে যে ‘গো-ব্রাহ্মণ হিতায়’ কথাটি বলা হত, এখন তার মানে দাঁড়িয়েছে, গরুর ও ব্রাহ্মণের ভালোর জন্য! যে ব্রাহ্মণ ব্রহ্মজ্ঞানের অধিকারী, ভারতবর্ষে যাঁর অর্জন বিশাল, ভাগ্য তাকে কিনা, নিয়ে গিয়ে দাঁড় করাল গরুর সমান মর্যাদায়!

    এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গো-মাতা শব্দের অর্থ-বিপর্যয়। গো-মাতা তো সুরভি, বশিষ্ঠের কামধেনু নন্দিনীর মা। সে তো কেবল দুধ, মাখন, মণ্ডা, মিঠাই প্রসব করত না; অস্ত্রশস্ত্র এবং সৈন্যসামন্তও প্রসব করতে পারত। কেননা, নন্দিনী তো আসলে মহর্ষি বশিষ্ঠ পরিচালিত বিপুল বাহ্যসম্পদ উৎপাদনকারী এক বলিষ্ঠ সম্প্রদায়। গো-মাতার সে সব অর্থ আমরা স্রেফ ভুলে গেছি। এখন গো-মাতা মানে যে-গরুর দুধ খাওয়া হয়। কিন্তু সমস্যা হল, যার দুধ খাওয়া হয়, তাকেই 'মাতা' বললে ছাগ-ভেড়া-গাধা-মহিষ-উট সবাইকেই 'মাতা' বলতে হয়; কেননা তাদের সকলের দুধও আমরা খাই। তাদের মাংস খেলেও তো 'মাতা'র মাংস খাওয়া হয়! না, সে সব যুক্তি-তর্কের অবকাশ নেই। ‘গো’ শব্দের অর্থকে শুধুমাত্র গরুতে স্থির করে নিশ্চল করে দিলে যে-যে দুর্গতি হওয়া সম্ভব তা সবই হয়েছে বা হয়ে চলেছে।

    এইসব প্রশ্ন করলে আমাদের ভাষাত্ত্বাতিক পণ্ডিতরা নিশ্চুপ থাকেন। এড়িয়ে যান। যে মহাপুরুষ হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মের সার্দ্ধ-শতবর্ষ পালন হল ২০১৭ সালে, তাঁর অভিধান সাহিত্য অ্যাকাডেমির সম্পদ হলেও, পণ্ডিতরা এই অভিধান পড়তে সরাসরি বারণ করেন। এক শব্দের বহু অর্থ তাঁরা মেনে নিতে পারেন না। অ্যাকাডেমিক জগৎ ছাত্রছাত্রীদের এই সম্পদ থেকে বঞ্চিত করে। কারণ, এটা মেনে নিতে পারে না পুঁজিও। বাজারের দুনিয়ায় এক শব্দের বহুরৈখিক অর্থ হলে বড় গোলমাল। ক্রেতা-বিক্রেতা দুজনেই পড়েন বিপদে। ক্যাপিটাল তা মানবে কেন? তাঁর চাই এক শব্দের একটাই অর্থ।

    বহুত্ব বা বহুরৈখিকতা পুঁজির পক্ষে বাধাস্বরূপ। ফলত, পুঁজির দালাল শিক্ষাকেন্দ্রগুলি হরিচরণকে ব্রাত্য করে রাখে। নমো-নমো করে জন্মের ১৫০ বছর তারা পালন করে বটে, তবে তা 'পূজা'র উদ্দেশ্যেই, তাঁকে অনুসরণের বিন্দুমাত্র আগ্রহ তাদের নেই। এক দেশ, এক জাতি, এক ধর্ম, এক আইনের ধারক-বাহকেরাও তাই চায়, বহুরৈখিক ভারতীয় সংস্কৃতি ধ্বংস হোক। পুঁজি, শিক্ষাকেন্দ্র আর মৌলবাদীদের এক নির্বিকল্প গাঁটবন্ধন গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে দাপাচ্ছে, হরিচরণের মতো মহর্ষির স্থান সেখানে কোথায়! কলিম খান এই অন্যায় গাঁটবন্ধনকে চিহ্নিত করলেন। ফলত, তাঁকেও ব্রাত্য করল অ্যাকাডেমি।

    এই বিকারগ্রস্ত সময়ে কলিম প্রায়ই বলতেন, ধর্মীয় মৌলবাদীদের হাত থেকে এই বাংলাকে রক্ষা করছে তিনটি শক্তি। কী সেই ত্রিশক্তি? বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতি ও রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, একটি সরোবর কত বড়ো ছিল, বোঝা যায় সেটি শুকিয়ে গেলে। আমরা সেই শুকনো সরোবরের তীরে দাঁড়িয়ে আছি এখন। ট্র্যাজেডি হল, এখনও বুঝতে পারছি না বা চাইছি না ক-ত জল ছিল একদা সেই সরোবরে। ভাষা ও সংস্কৃতির বিপুল উত্তরাধিকার হারিয়ে আমরা আজ ভিখারি। সুযোগ পেয়ে গো-রক্ষকদের তাণ্ডব তো চলবেই! রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'সভ্যতার সংকট'-এ লিখেছিলেন 'অতীতের সঙ্গে ভারতের নৃশংস আত্মবিচ্ছেদ'। নৃশংস শব্দ ছাড়া এই আত্মবিচ্ছেদকে সত্যিই বর্ণনা করা যায় না। আমরা ঐশ্বর্যহীন হয়েছি স্বেচ্ছায়, ফলত প্রতি পদে পদে সহ্য করতে হবে 'মুর্খ ভক্ত'দের তাণ্ডব। কলিম-বর্ণিত ‘ত্রি’ফলা’র ফলাগুলো নষ্ট করেছি বা করে চলেছি অহরহ। নিজেদের শক্তিহীন করে শত্রুর সঙ্গে লড়াই করব কীভাবে?

    ঠিক এই সন্ধিক্ষণেই, কলিম খান যখন ক্রমশ প্রয়োজনীয় ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছেন, চিরবিদায় নিলেন তিনি অকস্মাৎ। উপেক্ষা বা ব্যঙ্গ, এই সময় কোনও শস্ত্রই তাঁর দিকে না-ছুঁড়ে, তাঁর ভাবনা-ভুবনে সামান্য অনুপ্রবেশ করলে ক্ষতি কী? একটু চর্চা, ভাব-বিনিময় কি তর্কশীল বাঙালি করতে পারে না? অবশ্য বাঙালির সঙ্গে ‘প্রগতিশীল’ বা ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ খুব যায়, কিন্তু তর্কশীল? আপনি কী বলেন?


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ১৭ জুন ২০১৮ | ৯২৩২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ss | ***:*** | ২৫ জুন ২০১৮ ০৭:৫৫84469
  • পাঙ্গা!
    ক্রিববাদীদের চ্যানেঞ্জ-৩:

    ক্রিববাদীরা ধ্বনিবিজ্ঞান (ফোনেটিক্স) ও ধ্বনিতত্ত্ব (ফোনোলোজি) জানেন না। আগেই বলেছি, বর্ণ আর ধ্বনি ওনারা গুলিয়ে ফেলেন। এই গোলানোরফল কতটা খারাপ হতে পারে তা' নিচের বিবরণ থেকে টের পাবেন। ভাষাতত্ত্বের গো-এষণা মানব-কল্যানে কিভাবে কাজে লাগে, তাও বোঝা যাবে।

    হে "দার্শনিক, মনীষী, মহর্ষি" তুমি যদি আমার ব্যথাবেদনা, দুঃখকষ্ট ইত্যাদির উপশম নাই করতে পারো, তাহলে তুমি কেমন মহর্ষি?

    নিচের অংশটি দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোস্ট থেকে ঝাড়া।

    ________________

    শব্দদূষণের মারাত্মক ও ভয়ঙ্কর উদ্ভাসের দিনে, কানগরমকরা মোবাইল ফোনের বিকিরণে কান আর মগজ যখন প্রায় অকেজো, তখন একজনের কথা মনে পড়ছে খুব।

    Đorđe Kostić (1909-1995)

    ১৯৮৭ সালের কথা। নেহাতই ছাত্র তখন। আইএসআইয়ের আম্রপালিতে দেখা করতে গেলাম ভৌতবিজ্ঞানী জর্জি কস্টিচের সঙ্গে। শুধুমাত্র ধ্বনিবিজ্ঞান বা ফোনেটিক্স শেখবার তাগিদেই নয়, যে মানুষটা হিটলারের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে কাটিয়েছেন, সেই মার্ক্সবাদী মানুষটির সঙ্গে দেখা করবারও প্রবল ইচ্ছে ছিল। অধ্যাপক প্রশান্ত মহলানবিশ ওনাকে গত শতাব্দীর ছয়ের দশকে এই বরানগরে নিয়ে এসেছিলেন ভাষাতত্ব বিভাগের কাজে।

    ওনার সঙ্গে নিয়ে চলল ধ্বনি নিয়ে কথাবার্তা। উনি ধ্বনির শারীরতাত্ত্বিক উৎস আর ভৌত-তরঙ্গ (একোস্টিক কোয়ালিটি) নিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন। ধ্বনি ওনার কাছে স্রেফ বস্তু: ম্যাটার, অর্থাৎ পদার্থ। যেকোনো ভাষার ধ্বনির ভৌততরঙ্গগত বিশ্লেষণ তাঁর আরাধ্য বিষয়। আমরা তো ভাষাতত্বের ক্লাসে যন্তরপাতি পেতাম না, কিন্তু আইএসআইতে আছে সেসব জিনিশপত্তর। ধ্বনির শারীরতাত্ত্বিক দেখার জন্য যন্তরপাতি লাগে। যেমন ধরুন "ক" আর "ঘ"-এর তফাত মুখের ভিতরে ল্যারিঞ্জস্কোপি মিরর দিয়ে কিভাবে দেখতে হয় সেটা অতি যত্নে শিখিয়েছিলেন পেরি ভাস্কর রাও। আর কস্টিচ সাহেব শেখালেন ধ্বনির পদার্থবিজ্ঞান-সম্মত বিশ্লেষণ। বলা বাহুল্য, ধ্বনির তো কোনো মানে নেই। কিন্তু ধ্বনি-বস্তু বা পদার্থে কতকগুলো চারিত্রিক বৈশেষিকতা আছে। সেই বৈশিষ্ট্যগুলো জানা থাকলে কিভাবে তা দিয়ে শ্রবণ-অক্ষম ব্যাক্তির কানে ধ্বনি পৌঁছে দেওয়া যায় তা আবিষ্কার করেছিলেন কস্টিচ সাহেব।

    আমাদের প্রত্যেকের চশমার "পাওয়ার" যেমন আলাদা, তেমনি শ্রবণ-ক্ষমতা একেকজনের একেকরকম। অথচ শ্রবণ-অক্ষম ব্যাক্তিদের চশমার মতো আলাদা-আলাদা হিয়ারিং এইড দেওয়া হয়না। যার যতটুকু শোনবার ক্ষমতা, তাকে তো ধ্বনির amplification ঠিক ততটাই দিতে হবে। বাজার-চলতি হিয়ারিং এইড গুলো তখন একই মাত্রায় ধ্বনিকে amplify করত। কিন্তু কস্টিচ সাহেব তৈরী করলেন শ্রবণ-অক্ষম ব্যাক্তির প্রয়োজন অনুযায়ী কানের চশমা: SAFA (Selective Auditory Frequency Amplifier)।

    কস্টিচ সাহেবের কথায় বুঝলাম কাজ করতে হবে দায়বদ্ধতা নিয়ে। এমন কাজ করবার দরকার নেই যা কেবল গয়নার মতন শোভা পাবে। পীড়িত মানুষের জন্য তৈরী করা এই যন্ত্রের তাই কোনো পেটেন্ট নেননি মার্ক্সবাদী কস্টিচ সাহেব। ১৯৮৯-এর পর থেকে ইউগোস্লাভিয়ায় শুরু হলো নতুন গন্ডগোল। যৌবনের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের যন্ত্রণার পর আবার রাজনৈতিক ডামাডোলে নতুন করে যন্ত্রণা। উনি ওঁর প্রয়োজনীয় ওষুধপত্তর পাচ্ছেননা। সেসময়ে তাঁর ছাত্রী অধ্যাপকও ভাষাতত্ব বিভাগের তৎকালীন প্রধান অলকানন্দা মিটার ওষুধ জোগাড় করে ইউগোস্লাভিয়ায় পাঠাতে শুরু করলেন। আমার দায়িত্ব ছিল পোস্ট করবার। এই SAFA-ই আমাকে অনুপ্রাণিত করে ধ্বনির ত্বক-সংবেদী চরিত্রকে বুঝতে, অর্থাৎ ত্বক দিয়ে শোনা (tangible intelligibility)-র যন্তর বানাতে। ধ্বনির মালাতে যে সুর তৈরী হয়, সেই সুর কিভাবে শ্রবণ-অক্ষমদের কানে পৌঁছে দেওয়া যায়, সে কথা ভেবেই আমার এই যন্তরের পরিকল্পনা।

    না, আমি এই প্ৰকল্পিত যন্ত্রের পেটেন্ট নিতে ছাড়িনি।
    না, আমি এই যন্ত্র-তৈরির জন্য প্রযুক্তিবিদ পাইনি।
    ********না, আমি (ধ্বনি এবং বর্ণের) ভেতরে মানে আছে বলে কোনো হাস্যকর দাবি করিনি।
    না, কস্টিচ সাহেবকে আজ কেউ তেমন মনে রাখেনি।
    না, স্পিচ প্যাথলজির ক্ষেত্রে তাঁর অবদানকে আর তেমন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় নি।
    একজন ধ্বনিতাত্ত্বিক, পদার্থবিদ ছাড়াও তিনি ছিলেন কবি ও চিত্রকর।

    সূত্র: Speech Pathology, Phonetics
  • ss | ***:*** | ২৭ জুন ২০১৮ ০১:৩৩84471
  • উপপাদ্যে যেমনভাবে উল্টো কথা কয়ে প্রমাণ করা হয় তেমনিভাবে একটু ভাবি।
    (এরম না করলে স-তর্ক সংলাপী সমাজ ব'নে উঠবে কেমনে?

    আচ্ছা, যদি ধরে নেওয়া হয় যে, ক্রিববাদীরা যেসব বইয়ের নাম উদ্ধৃত করে তাঁদের তত্ত্বকতা ফাঁদেন, সেইসব বইগুলোয়
    ১. নাম (signifier) আর নামীর (signified) সম্পর্ক যাচ্ছেতাই (আরবিট্রারি) নয় লেখা আছে;
    ২. "ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থতত্ত্ব" আছে,
    তাহলেও কি আমরা কোনো যুক্তিতক্কো না করে মেনে নেবো ব্যাপারটা?

    মানে, সতীদাহ বা বিধবাবিবাহের অ-/সমর্থনে আজও শাস্ত্র ধরে লড়াই চালাবো?
    তনিকা সরকাররা বাবরি মসজিদ দুর্ঘটনার পর "আদত" রামজন্মভূমি খুঁজতে বেরিয়েছিলেন, তাঁরা যদি আদৌ খুঁজেও পেতেন, তাহলে কি সংঘ পরিবারের দাবি মানা যেত?
    বৃহস্পতি বলছেন, কেবলমত্তর শাস্তর আশ্রয় করে কর্তব্য ঠিক করা যায় না, যুক্তিহীন বিচারে শাস্ত্রহানিই ঘটে (এই উদ্ধৃতিটা আমি পেয়েছি রামমোহন রায়ের লেখাপত্তরে).

    নিরুক্ত থেকে ভর্তৃহরি এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলা মুশকিল ( ক্রিববাদীরাবলেন)।ভর্তৃহরি (এবং পরে নাগেশ) ব্যাকরণদর্শনে একটা paradigm shift. "প্রাচ্য" যেমন সমসত্ব ব্ল্যাঙ্কেট নয়, তার দর্শনও তেমন নয়-- তার মধ্যে প্রচুর ভাঁজ আছে ভর্তৃহরি বলছেন, ব্যাকরণের কাটাছেঁড়া বালবাচ্চাদের কাজ ("বালানামুপলানা"), প্রকৃতিপ্রত্যয় ইত্যাদি ব্যাপার "অপোদ্ধার" (অপ+উদ্ধার) মাত্র! মীমাংসক কুমারিল বলেন, "প্রকৃতিপ্রত্যযৌ সহার্থং ব্রুতঃ"-- প্রকৃতি আর প্রত্যয় কথা-বলা/শোনা-বিষয়ী (speaking/hearing subject) একসঙ্গেই বলে; কথা বলার সময় বিষয়ীর ঐসব বৈয়াকরণিক বালখিল্য কাজকম্মো মনে থাকে না. আগে ভাষা তৈরি হয়, তারপর ব্যাকরণবিদরা তার নামকরণ (এবং বর্গীকরণ) করেন, তাই এইসব বৈয়াকরণিক নামকরণ "অনু (পরে)+আখ্যেয়" অর্থাৎ ভাষা আগে আর বৈয়াকরণিক নামকরণ পরে.... অনু +আখ্যেয় ব্যাপারটাই এ আলোচনার প্রস্থানবিন্দু হোক।

    নানান সমস্যায় জর্জরিত হয়েও আমরা এই যে ভাষা নিয়ে খণ্ডবাদী কাজিয়া করছি, তা বালবাচ্চাদের খেলা ("বালানামুপলানা") নয় তো?
  • Atoz | ***:*** | ২৭ জুন ২০১৮ ১২:৪১84470
  • বহুদিন থেকেই আমার মনে মনে একটা প্রশ্ন ছিল, "বিজল্প" মানে কী? কারুকে জিজ্ঞেসও করতে পারিনি ভয়ে। এক আঁতেল পত্রিকার নাম ছিল বিজল্প।
    এখন "জল্প" দেখে একটা হদিশের আভাস পেলাম। অনেক ধন্যবাদ ss।
    আপনার আলোচনাগুলো খুব মন দিয়ে পড়ছি। আবারও ধন্যবাদ।
  • Atoz | ***:*** | ০২ জুলাই ২০১৮ ০৮:১৪84472
  • ss, কোথায় আপনি? আলোচনাটা যে থেমে আছে! মন দিয়ে পড়ছিলাম তো,দীর্ঘকাল থেমে থাকলে খেই হারিয়ে যায়।
    আগাম ধন্যবাদ।
  • Atoz | ***:*** | ০৪ জুলাই ২০১৮ ০২:৩২84474
  • কলকাকলি কলম কলমা কলাবতী কল্যবর্ত কলহংস কহ্লার কলিঞ্জর(নাকি কালিঞ্জর?) কলস্বনা কলহান্তরিতা
    ঃ-) ঃ-) ঃ-)
  • ss | ***:*** | ০৪ জুলাই ২০১৮ ১২:৫৫84473
  • আমি তখন ইংল্যান্ড ফুটবল দলের কাপ্তান Harry Kane আর জাপানি 'হ্যারিকেন'-এর ভাষিক মিলজুল নিয়ে বিপুল ব্যস্ত ছিলুম। এমন সময় এক ক্রিববাদীর আবির্ভাব।

    ক্রিববাদী আমার সামনে বর্ণের পর্যায় সারণী ফেলে দিয়ে রেগেমেগে বললেন, "মান্যবর, দেখুন কি অসাধারণ আবিষ্কার! প্রত্যেক বর্ণের অর্থ আমরা যে করেছি, তার তালিকা।"

    আবার সেই ট মানে টঙ্কার!!!

    আমি কইলুম, "মোহাই, এই বর্ণের মানেগুলো কি নিশ্চিত ধ্রুব?"

    ক্রিববাদী সম্মতিসূচক মাথা নাড়লেন। (বিশেষভাবে মাথা নাড়ায় সম্মতি বা অসম্মতি বোঝায় তা আমি কোন বর্ণ দিয়ে বুঝলুম? ভাষাতত্ত্বে এই বিশেষ শরীরী সংকেতন নিয়ে কাজ হয় Kinesiology এবং Proxemics-এর আধারে)

    আমি বললুম, "বর্ণের মানে যদি ধ্রুবক (constant) হয়, তাহলে সেগুলোর এত্তো এত্তো মানে বেরোয় কী করে? বর্ণের মানে ধ্রুবক, আর শব্দের মানে চল (variable)? এই বহু অর্থের চল আর বর্ণের ধ্রুবকতার গণিতটা বোঝান দেকি।"

    ক্রিববাদী বললেন, "আপনার মাস্টারের পদবি যেমন বাঁড়ুজ্জে। বাঁড়া আর বাঁড়ুজ্জের মিল দেখেছেন?"

    -- কৈ দেকান দেকি। লিখিত কোনো নথি বা যাকে বলে written records আছে কি? পাথুরে প্রমাণ? যে কোনো সময় ভাষার গোত্র বিচার না করে, কাল্পনিক ভাবে সবকিচুর সমোসক্রিত উৎস ধরে নিয়ে, কুলুজির খোয়াব (genealogical fantacy রচনা নেশন স্টেটের কল্পনারই বিস্তার) দেকিয়ে, এটা থেকে ওটা এয়চে বললেই হলো আর কি!"

    ক্রিববাদী "বাঁড়া আর বাঁড়ুজ্জে" বলে তারস্বরে চেঁচাতে চেঁচাতে বেরিয়ে যেতে যেতে বললেন,"ভাষার কলি(ম)যুগের যে সূচনা হয়েছে, তাতে আপনারা, পেশাদার ভাষাতাত্ত্বিকরা বিপন্ন। তাই টাকা খেয়ে পোঙায় লেগেছেন।"

    আমি তীব্র pun-আসক্ত হয়ে পড়লুম। কলমি শাক, কলিকাল, কালান্তক যম ইত্যাদি শব্দ মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো।বেসিক্যালি আমি অভব্য লোক।
  • ss | ***:*** | ৩১ জুলাই ২০১৮ ১১:৪৩84475
  • বাংলা বানাম আর উশ্চারণ নিয়ে কিছু কতা। ক্রিববাদীদের সঙ্গে মিলবে না অবশ্যি।
    https://m.youtube.com/watch?feature=youtu.be&v=Z51AL0W110M
  • সম | ***:*** | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:৫৯84477
  • ভাষা-ভীমরতি, সমালোচক ও হ-য-ব-র-ল (প্রথম পর্ব)
    সৌরভ মিত্র

    শব্দের মূলে নাকি ক্রিয়া, সেই ক্রিয়াই নাকি ঠিক করে শব্দের অর্থ! এই মতে বাংলাভাষার সংস্কৃত-ঘেঁষা শব্দগুলির হিল্লে হলেও শব্দভাণ্ডারের ‘দ্রাবিড়ীয়’, দেশী, বিদেশী শব্দগুলির অর্থ বাতলাতে গিয়ে চটকদার কিন্তু রহস্যময় কিছু বিষয়/ গল্প/ ধারণা উঠে আসে। উঠে আসে অদ্ভুত সব প্রায় অসম্ভব তত্ত্ব, -কৃষ্ণ আসলে কালো টাকা, বিষ্ণু আসলে পুঁজি (‘সেপারেশন অফ্ সারপ্লাস্’ বোঝানোর সময় এ’ কথা অবশ্য মার্কসসাহেবও তার ‘ক্যাপিটাল’-এ বলেছেন 1 ), জগন্নাথ হল ‘যন্ত্ররাজ বিভূতি’ - কি আশ্চর্য্য, ‘ইংলিশ ফ্যাক্ট্রি অ্যাক্টে’র আলোচনা করতে গিয়ে এ’ কথাও মার্কসসাহেব বলে গেছেন! 2 এরপর ‘শিক্ষিত’ শব্দের অর্থে যখন পাওয়া গেল ‘কোনও একটি বিষয়ে অল্পবিস্তর বিদ্যে আর বাকি ৯৯৯টি বিষয়ের আকাট মূর্খামির যোগফল’ –এমন জায়গায় আঘাত লাগে যে জনসমক্ষে বলা দায়!... এই পদ্ধতির নাম ‘ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধি’।
    পড়তে পড়তে প্রচলিত ধ্যান-ধারণাগুলি এমন ভাবে দুমড়ে মুচড়ে যায় যে কখনও মনে হয় ‘এই বুঝি জীবনের এক ইউরেকা মুহূর্ত’, আবার কখনও মনে হয়, -‘পুরোটাই আজগুবি অধিবিদ্যা বুঝি বা!’ বিষয়টি কতটা সাবেকি ‘শাস্ত্রসম্মত’ জানা নেই। এদিকে আধুনিক ভাষাতত্ত্বের ফোনিম-মরফিমের ডেফিনেশনের তোয়াক্কাও করে না! (ফলে) যথেষ্ট বিতর্কিতও বটে। কিন্তু একেবারে ফেলে দিতেও যে মন চায় না।... যাই হোক, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটাতে বাংলা মানেতত্ত্বের এই ‘সোনার হরিণ’টির পিছু ধাওয়া করেই দেখা যাক কিছুদূর। -কিন্তু, গন্তব্যের বদলে যাত্রাপথটিই যেখানে মূখ্য, ঝোলায় গুটিকয় বিজ্ঞানের পুঁথি নিলে কেমন হয়?... সঙ্গে এক দুঁদে সমালোচকও রইলেন অবশ্য, -লীলাখেলায় জটিলা-কুটিলা না থাকলে কি আর রগড় জমে! (নইলে ‘সংসারে’র নিয়ম-কানুনের দোহাই তুলে পদে পদে ভুল ধরবে কে!)
    পুরোটা পড়ুন।...http://www.guruchandali.com/default/2018/08/10/1533877920000.html
  • Atoz | ***:*** | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৯:২৬84479
  • কিন্তু কিন্তু কিন্তু ----
    মার্ক্সসাহেব কৃষ্ণ আর বিষ্ণুর কথা জানলেন কী করে?????
  • সম | ***:*** | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:৪০84480
  • যদ্দুর সম্ভব পড়াশোনা করে....
  • Atoz | ***:*** | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:৪৪84481
  • পড়শোনা করে কেষ্টবিষ্টু জেনে কোন্‌ দুঃখে তিনি সেসব অর্থনীতির লেখায় ঢোকাবেন????
  • সম | ***:*** | ০২ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:০২84482
  • কারণ ওই কেষ্ট-বিষ্টুর গপ্পের মধ্যে তিনি (আনবায়াসড্ চোখে) এমন কিছু দেখেছিলেন যা দিশি ভক্তিবাদী বা যুক্তিবাদীদের চোখে পড়ে না। তিনি প্রাচীন ভারতের শ্রম বিভাজনের কথাও বলেছিলেন (হ্যাঁ, বেদ-পুরাণ থেকেই)। আরো বিশদে জানতে প্ল্যানচেট করতে পারেন। :)

    …Enough, that the world still jogs on, solely through the self-chastisement of this modern penitent of Vishnu, the capitalist… - ‘Section 3: Separation of Surplus-Value into Capital and Revenue. The Abstinence Theory’, Capital, Volume – 1

    …they transform his life-time into working-time, and drag his wife and child beneath the wheels of the Juggernaut of capital… - ‘Section 4: Different Forms of the Relative surplus population. The General Law of Capitalistic Accumulation’, Capital, Volume – 1 …

    [juggernaut (n.) : “an idea, custom, fashion, etc., that demands either blind devotion or merciless sacrifice,” 1854, a figurative use of Juggernaut, 1630s (Iaggernat), “huge wagon bearing an image of the god Krishna,” … devotees allowed themselves to be crushed under its wheels in sacrifice. Altered from Jaggernaut, a title of Krishna (an incarnation of Vishnu), from Hindi Jagannath, literally “lord of the world.” This is from Sanskrit jagat “the world, men and beasts” (literally “the moving, all that moves,” present participle of *jagati “he goes” (from Proto-Indo-European root *gwa- “to go, come”) + natha-s “lord, master,” from nathate “he helps, protects,” from Proto-Indo-European root *nā- “to help.” The first European description of the festival is by Friar Odoric (c. 1321). – Online Etymology Dictionary]
  • Atoz | ***:*** | ০২ অক্টোবর ২০১৮ ০৮:৪৬84483
  • হে হরি !!!!! তাতেই বিষ্ণু হয়ে গেলেন পুঁজি ????? আর জগন্নাথ যন্ত্ররাজ বিভূতি??????

    ঃ-) ঃ-) ঃ-) ঃ-) হি হি হিঁ হিঁ হিঁ হিঁ ----
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন