১.
থার্ড সেমেস্টারে ইংরেজী সাহিত্যের ক্লাস নিচ্ছিলেন অধ্যাপক সুতপা সেনগুপ্ত। মিল্টন পড়াতে পড়াতে উল্লেখ করলেন, ‘মিল্টনই ব্ল্যাঙ্ক ভার্সকে ইংরেজি সাহিত্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠের আসনে বসিয়েছেন, যেমনটা বাংলা ভাষায় করেছেন মধুসূদন।’
‘ব্ল্যাঙ্ক ভার্স’ কী, তা জানতাম। মনে হল, এই প্রথম কোনো সংরূপ তথাকথিত পদ্যের যে প্রচলিত কাঠামো, তাকে ভেঙে বেরিয়েছে; কেন? ছাপাখানা এসে স্মৃতির যে আবশ্যক শর্তগুলি, তাদের ভাঙতে পেরেছে বলে?
দিদিকে প্রশ্ন করলাম, ‘ছাপাখানা প্রসারের পরে মধুসূদন অমিত্রাক্ষর ছন্দ সৃষ্টি করেছিলেন। সেই হিসেবে, ইংল্যান্ডে গুটেনবার্গের ছাপাখানার প্রসারের পরেই মিল্টনের Paradise Lost এর সৃষ্টি?’
দিদি একটু থমকে বললেন, ‘ভাল প্রশ্ন করেছ। দেখে জানাবো।’
দিন পনেরো পর ডেকে বললেন, ‘তুমি যা আন্দাজ করেছিলে, সেটাই ঠিক। সাল-তারিখ, ঘটনা পরম্পরা সব মিলে যাচ্ছে।’
আন্দাজটা ঠিক হতেই ভাবনা এগোতে শুরু করল।
২.
মনের ভাবপ্রকাশের জন্য মানুষ যা সৃষ্টি করেছে নিজের বাগ্যন্ত্রের মাধ্যমে, তা-ই হয়ে উঠেছে সাহিত্য। নিজের মনের ভাব অপরে জানুক, মনে রাখুক, তার ভাবপ্রকাশেও যেন আমারই ভাবের ছায়া পড়ে – এই আকাঙ্ক্ষা মানুষের চিরন্তন। হয়তো ব্যক্তিত্বের উন্মেষের সঙ্গে সঙ্গেই এই স্বকীয়তার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে মানব মননে। তখন থেকেই ভাষা গঠনের পর পরই ভাব প্রকাশের বাহ্যিক, প্রকাশিত রূপকে সংরক্ষণের চেষ্টাও শুরু, হয়তো। এই সংরক্ষণ করতে গিয়ে মানুষ বুঝল। সেইসব প্রকাশ্য রূপই সে মনে রাখতে পারছে, যেগুলি সে ঝোঁক দিয়ে বলছে, বলছে, ছন্দে, বলছে অন্ত্যমিলে। মৌখিক সাহিত্যের পরম্পরায় আমরা এর প্রমাণ পাই। এরই সঙ্গে আসছে ভাষার লিখিত রূপ, লিপি। কিন্তু মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের আগে সেই লিপি, বা ভাষার লেখ্য রূপ খুব কম সংখ্যক মানুষেরই আয়ত্ত ছিল। লিপিকরের সংখ্যাও ছিল অপ্রতুল। সংখ্যাগুরু মানুষ তাই সাহিত্যরস আস্বাদন করতে নির্ভর করেছেন মৌখিক সাহিত্যের ওপরেই।
এইভাবে যেসব সাহিত্য সৃষ্ট হয়েছে তার অধিকাংশই ছন্দে বিবৃত, মাত্রা-দল-পর্ব-অন্ত্যমিলের অবলম্বনে সৃষ্ট। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, যেমন ‘বেদ’-এর কিছু অংশ যেন প্রায় গদ্যে লেখা। কিন্তু এটা ভুললে চলবে না, বেদের অপর নাম শ্রুতি। এই বাণীগুলি মনে রাখার জন্য দশটিরও বেশি পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। এই পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করে বেদ প্রজন্মের পর প্রজন্মে প্রবাহিত হয়েছে হাজার হাজার বছর ধরে, হাজার হাজার বছর ধরেই মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের মধ্য দিয়ে।
১৫৪০ অব্দে ইংল্যান্ডে Earl of Surrey (আসল নাম Henry Howard) ভার্জিলের ‘ইনিড’ অনুবাদ করেছিলেন। ইনিডের দ্বিতীয় ও চতুর্থ খণ্ডের অনুবাদে অভূতপূর্ব এক সাহিত্যরূপের সন্ধান দিলেন তিনি। পাঠক এই অনুবাদ পড়ে বুঝতে পারল, যা পড়ছে, সেই সাহিত্যে অন্ত্যমিল নেই, নেই সুস্পষ্ট কোনো ঝোঁক, অথচ অদ্ভুত সুন্দর কাব্যময়তা আচ্ছন্ন করে রেখেছে এই পদ্যকে। হ্যাঁ, পদ্যে। কারণ, ততদিনে মুদ্রণযন্ত্র এসে গদ্যভাষা, অর্থাৎ, চলিত কথ্যভাষাকে কেজো দরকারের ভাষা হিসেবে চালু করে দিয়েছে। সাহিত্য তখনো রচিত হয়ে চলেছে পদ্যেই। এই নতুন রূপের নাম ‘ব্ল্যাঙ্ক ভার্স’।
‘ব্ল্যাঙ্ক ভার্স’ কী? ‘A Handbook of Literary Terms’ বলছে –
‘Blank Verse consists of lines of iambic pentameter (five stress iambic verse) which are unrhymed – hence the term ‘blank’. Of all English metrical forms it is closest to the natural rhythms of English speech, yet flexible and adaptive to diverse level of discourse; as a result it has been more frequently and variously used than any other form of versification.’
অর্থাৎ মিল না থাকার কারণে ব্ল্যাঙ্ক, এবং পদ্য বলেই তা ভার্স। ব্ল্যাংক ভার্সের পরই কবিতার অন্যান্য আধুনিক সংরূপ জন্ম নেয়। যেমন, Free Verse বা মুক্ত ছন্দ।
ইংরেজিতে ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের প্রচলনের পরপরই অন্যান্য ভাষাতেও এর প্রচলন শুরু হয়ে যায়। স্প্যানিশ, বাংলা, অহমিয়া, কন্নড় প্রভৃতি ভাষাতেও দেখা যায় এই সংরূপটি। লক্ষণীয়, ইংরেজিতে যেমন ‘pentameter’ থাকার কারণে ব্ল্যাঙ্ক ভার্স তাকে আশ্রয় করেই ‘iambic pentameter’ হয়ে ওঠে, তেমন বাংলা ভাষায় ব্ল্যাঙ্ক ভার্স ‘পয়ার’কে আশ্রয় করেই ‘অমিত্রাক্ষর ছন্দ’ হিসেবে গড়ে উঠেছে। কন্নড়েও দেখি, কন্নড় ভাষার ব্ল্যাঙ্ক ভার্স ‘সরল রাগালে’ গড়ে উঠেছে ‘ললিত রাগালে’র আদলে। অর্থাৎ এই সংরূপটি ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় ভিন্ন ভিন্ন পূর্বসূরীকে আশ্রয় করে, আত্তীকৃত করে বিকাশিত হয়েছে।
এখান থেকে একটি প্রশ্ন উঠে আসে, এরকম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে প্রথমে ইংরেজি ভাষায় উদ্ভূত নতুন একটি সংরূপ প্রত্যেক ভাষায় প্রাচীন আরেকটি সংরূপকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছে বলে তাকে কী ইংরেজি ভাষার প্রভাব বলে ধরা উচিত? সেভাবে ধরলে, প্রতিটি ভাষার কাব্যরূপের বিবর্তনের স্বাধীন গতিকে, সচলতার অধিকারকে নস্যাৎ করে দেওয়া হয় না কি?
আরেকটি প্রশ্নও উঠে আসে এরই পরে। প্রতিটি ভাষাই এভাবে ছন্দোবদ্ধতাকে, অন্ত্যমিলের শাসনকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা কোথা থেকে পেল? প্রায় প্রতিটি ভাষার কবিদেরই কেন মনে হল, ছন্দ-অন্ত্যমিলের কাঠামো আসলে মানুষের ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে? সমস্ত তন্ত্র যেমন প্রথমে কল্যাণকামী, পরে শৃঙ্খল, সেরকম? আমরা লক্ষ করে দেখব, প্রত্যেক ভাষাতেই একটা বিশেষ সময়ে কবিদের এরকম অনুভব হয়েছে। তার পেছনে কি মুদ্রণযন্ত্রের কোনো প্রচ্ছন্ন বা সুস্পষ্ট প্রভাব রয়েছে?
মুদ্রণযন্ত্র প্রচলিত হওয়ার আগে পুঁথিগত বিদ্যা ছিল অল্প কিছু মানুষের কুক্ষিগত। মুদ্রণযন্ত্রই প্রথম সেই অবস্থায় বদল আনে। মনের ভাবপ্রকাশের জন্য কোনো প্রচলিত ছন্দ-অন্ত্যমিলের কাঠামোর তোয়াক্কা না করে, লিপিকরের ভরসায় বসে না থেকে তা ব্যক্তির মুখের ভাষাকে নিমেষের মধ্যে শত সহস্র অনুকরণ করে ছড়িয়ে দিতে শুরু করল ক্রমাগত। লিপিকর, কথকের বেড়া টপকে লেখক ও পাঠকের সরাসরি সাক্ষাৎ ঘটল এভাবেই, মুদ্রণযন্ত্রকে আশ্রয় করে। সৃষ্টি হল গদ্যের। ভাবপ্রকাশের সহজ ও স্পষ্ট একটি মাধ্যম পেয়ে মানুষ কেনই বা পড়ে থাকবে কোনো পূর্বনির্ধারিত কাঠামোর আশ্রয়ে? আর মনের ভাষা স্পষ্ট কথায় গদ্যে মুক্তি পেলে কবিতাই বা কেন পড়ে থাকবে কাঠামোতে? কাঠামো ভেঙেও তা কবিতা থাকে কি না, তা পরখের ইচ্ছাও তো কবিদের মনে জাগতে পারে, হয়তো এভাবেই সৃষ্টি হল আধুনিক কবিতার? ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের?
অথবা, এ সমস্ত নেহাতই অবান্তর কাকতালীয় প্রশ্ন। মুদ্রণযন্ত্রের সঙ্গে কবিতার, বিশেষত ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের হয়তো সেরকম কোনো সম্পর্কই নেই, থাকলেও তা দূরকল্পিত।
এই দ্বন্দ্বের নিরসনে, প্রথমেই দরকার বিশ্বের জনবহুলতম কিছু ভাষায় ছাপাখানার প্রচলনের ইতিহাস, পাশাপাশি চাই, সেইসব ভাষায় ব্ল্যাঙ্ক ভার্স প্রচলনের ইতিহাস। নমুনা হিসেবে বেছে নিয়েছি এই আটটি ভাষাকে - ইংরেজি, হিস্প্যানিক, বাংলা, অসমিয়া, ওড়িয়া, হিন্দি, কন্নড়, তামিল।
৩.
১৩৯৮ সালে জার্মানীর মেনজ্ শহরে গুটেনবার্গ জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় স্বর্ণকার এই ব্যক্তি ১৪৩৯ সালে Movable Type বা স্থান অদলবদল করা যায় এমন হরফ দিয়ে মুদ্রণের পত্থতি আবিষ্কার করেন। অনেক পরিশ্রম ও বদলের পর ১৪৫০ সালে তিনি তাঁর ছাপাখানা খোলেন। প্রথমদিকে কিছু ধর্মীয় ইস্তাহার ছাপলেও ১৪৫৫ সালে তাঁর হাত দিয়েই প্রথম বই মুদ্রিত হয়। বইটি ছিল বাইবেল। আজ আমরা যাকে চিনি ‘গুটেনবার্গের বাইবেল’ নামে।যদিও মুদ্রণের গৌরব অনেক আগেই দাবি করতে পারেন চীনারা। কিন্তু চীনে ব্যবহৃত হত কাঠখোদাইয়ের দলক প্রিন্টিং। গুটেনবার্গই প্রথম Movable Type ব্যবস্থার প্রচলন করে আধুনিক মুদ্রণযন্ত্রের যুগের সূচনা করেন।
আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গেই মানবসভ্যতা এই যন্ত্রটিকে চিনে নিতে দেরী করেনি। দেশ থেকে দেশান্তরে, সাম্রাজ্য থেকে উপনিবেশে, শিক্ষা বিস্তারে, ধর্মপ্রচারে এবং শাসনকার্যের সুবিধার জন্য কয়েকশো বছরের মধ্যেই সারা পৃথিবীতে মুদ্রণযন্ত্র ছড়িয়ে পড়ে।
এখন দেখতে হবে কয়েকটি ভাষা-অঞ্চলে মুদ্রণযন্ত্রের প্রসার কীভাবে ঘটেছে, তার ইতিহাস। আমাদের নমুনা ভাষা-অঞ্চলগুলি হল – ইংরেজি, হিস্প্যানিক, বাংলা, অহমিয়া, ওড়িয়া, হিন্দি, কন্নড়, তামিল।
ইংরেজি ভাষা-অঞ্চল, ইংল্যান্ড
১৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে ওয়েস্টমিনস্টারে উইলিয়াম ক্যাক্সটন আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র স্থাপন করেন। প্রথম মুদ্রিত বই হল চসারের ‘দ্য ক্যান্টারবেরি টেলস’। ব্যক্তিগতভাবে ক্যাক্সটন অনুবাদকের কাজ করতেন। তাঁর ছাপাখানার মুদ্রিত বইয়ের চার পঞ্চমাংশই ছিল ইংরেজি ভাষায় লেখা।
হিস্প্যানিক ভাষা-অঞ্চল, স্পেন
১৪৯০ খ্রিস্টাব্দে Arnao Guillien de Brocar ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা করেন Pamplona শহরে। কার্ডিনাল সিসনেরোর উদ্যোগে প্রথম বাইবেল ছাপা হয় ১৫১৪-১৫১৭ সালে, তাঁরই ছাপাখানায়। যদিও ছয়খণ্ডের এই বাইবেল প্রকাশিত হয় বেশ কয়েক বছর পরে, ১৫২১-১৫২২ সালে। এই বাইবেল ‘Complutense Polyglot Bible’ নামেই পরিচিত।
বাংলা ভাষা-অঞ্চল, শ্রীরামপুর
উইলিয়াম কেরী, ১৭৯৩ সালে এই মিশনারি ভারতবর্ষে পদার্পণ করেন। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে তিনি শ্রীরামপুর মিশন প্রেস স্থাপন করেন। বাংলা মুদ্রণের সূচনা ঘটে এই ছাপাখানা থেকে। শ্রীরামপুর মিশন প্রেসের আগে ইংরেজিতে লেখা বই ‘এ গ্রামার অফ দি বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’-এ বাংলা বর্ণমালার মুদ্রিত রূপ দেখা যায়। ১৭৭৮ সালে হুগলিতে সংস্কৃতজ্ঞ রাজকর্মচারী চার্লস উইলকিনস ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড এই বইটি লেখেন। বাংলা ভাষার উদাহরণের অংশগুলি হাতে এঁকে, পাঞ্চ কেটে, হরফ তৈরি করে ছাপা হয়। এই হরফের ভিত্তিতেই পঞ্চানন কর্মকার কেরীর প্রেসের জন্য ধাতব বাংলা হরফের সৃষ্টি করেন।
অসমিয়া ভাষা-অঞ্চল, সাদিয়া
১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অসমে কোনো ছাপাখানা ছিল না। আমেরিকান ফ্রি ব্যাপটিস্ট মিশনারি সোসাইটির নাথান ব্রাউন এবং অলিভার কাটার দুটি মুদ্রণযন্ত্র নিয়ে অসমের সাদিয়ায় প্রেস স্থাপন করেন। পরের বছর ব্রনসন ও টমাস নামের আরও দু’জন এসে তাঁদের সিঙ্গে যোগ দেন। এরপরে ১৮৪০ সালে জয়পুরে এবং ১৮৪৩ সালে শিবসাগরে প্রেসটি স্থানান্তরিত হয়। অসমিয়া ভাষার প্রথম সংবাদপত্র ‘অরুণোদই’ এই প্রেস থেকেই প্রকাশিত হয়।
ওড়িয়া ভাষা-অঞ্চল, বালেশ্বর
১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টান মিশনারিরা প্রথম ওড়িয়া ভাষায় বই প্রকাশ করেন। প্রথম সাময়িকপত্র ‘বোধদায়িনী’ বালেশ্বর থেকেই প্রকাশিত হয় ১৮৬১ সালে। প্রথম ওড়িয়া সংবাদপত্র ‘উৎকল দীপিকা’ ১৮৬৬ সালে প্রকাশিত হয়।
হিন্দি ভাষা-অঞ্চল
প্রথম মুদ্রিত দেবনাগরী লিপির ব্যবহার দেখা যায় Calcutta Gazette এ ১৭৯৬ সালের জুন মাসে। প্রথম হিন্দি সংবাদপত্র কলকাতা থেকে প্রকাশিত ১৮২৬ সালের ৩০শে মে, নাম ‘Udant Martand (The Rising Sun)’। প্রথম হিন্দি দৈনিক সংবাদপত্রও কলকাতা থেকে প্রকাশিত ১৮৫৪ সালে, নাম- ‘সমাচার সুধা বর্ষণ’।
কন্নড় ভাষা-অঞ্চল, বেঙ্গালুরু
Reverend Ellja Hoole ১৮২১-১৮২৮ এই কালপর্বে বেঙ্গালুরু শহরে Wesleyan Mission Press গড়ে তুলেছিলেন। কন্নড় মিশনারির কাজে বহাল হলেন আরো দুই মিশনারি Jenkins এবং Garrett। এখানে প্রথমে ব্যাকরণ এবং অভিধানই ছাপা হত। কন্নড়-ইংরেজি অভিধান প্রকাশিত হয় ১৮৪৪ সালে এবং ওয়ারেন হেস্টিংসের ভূমিকাসহ গীতা ছাপা হয় ১৮৪৬-১৮৪৮ কালপর্বে।
তামিল ভাষা-অঞ্চল, চেন্নাই-ভেপেরি
১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজরা পুদুচ্চেরি দখল করলে জার্মান মিশনারি Johann Philipp Fabricius একটি মুদ্রণযন্ত্র হাতে পান। সেই যন্ত্রেই ১৭৭৯ সালে নিজের লেখা তামিল-ইংরেজি অভিধান ছাপেন তিনি। ভেপেরিতে স্থাপিত এই ছাপাখানার নাম- Vepery Press। ১৭৮৮ সালে Fabricius ইস্তফা দেওয়ার পর John Bunyan-এর লেখা Pilgrim’s Progress-এর তামিল অনুবাদও এখানেই ছাপা হয়েছিল ১৭৯৩ সালে।
পৃথিবী ও ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে এভাবেই মুদ্রণযন্ত্রের প্রসার ঘটতে থাকে। মুদ্রণযন্ত্রকে আশ্রয় করে আধুনিকতার প্রসারও ঘটতে থাকে বিশ্বে ও ভারতীয় উপমহাদেশে।
৪.
১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজি ভাষায় ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের আবির্ভাব হওয়ার পর বিভিন্ন ভাষায় তার বিস্তার ঘটতে থাকে। বিভিন্ন ভাষায় এই সংরূপটির চলার ধরণ কেমন থেকেছে, কেমনভাবেই বা তা বদলে গেছে ভাষা থেকে ভাষান্তরে, কোন কোন পরিস্থিতিতেই বা তার আবির্ভাব – এ সমস্তই এখন আলোচ্য বিষয়। ইংরেজি ও হিস্প্যানিক ভাষাকে বেছে নিয়েছি কারণ, ষোড়শ শতক ও রেনেসাঁর সময় থেকেই এই দুই ভাষার প্রভাব ছিল বিশ্বব্যাপী। এই দুটি ভাষা ছাড়া ছয়টি ভারতীয় ভাষাকেও অন্তর্ভুক্ত করেছি গবেষণার, কারণ, সরাসরি রেনেসাঁর প্রভাবের চেয়েও ঔপনিবেশিক শক্তির প্রভাবই এদের ওপর পড়েছে বেশি।
ইংরেজি (English)
ইংরেজি ভাষায় ব্ল্যাঙ্ক ভার্স প্রথম ব্যবহার (ব্যবহার- বলাই যুক্তিসঙ্গত, কারণ, অনুবাদের স্বকীয়তা না মূল রচনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের জন্ম, সেই ধোঁয়াশা কাটেনি) করেন হেনরি হাওয়ার্ড, সাহিত্যজগতে যিনি Earl of Surrey নামেই খ্যাত। ভার্জিলের লেখা ইনিডের অনুবাদে দ্বিতীয় ও চতুর্থ খণ্ডটিতে প্রথম ব্ল্যাঙ্ক ভার্স সংরূপটি দেখা যায়।
এরপর ১৫৬১ সালের একটি নাটক Gorboduc-এ ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের প্রয়োগ দেখতে পাই Thomas Norton এবং Thomas Seckville এর রচনায়। অনেক সমালোচক Gorboduc-কেই ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের প্রথম নিদর্শন বলে মনে করেন।
John Milton, ১৫৫৮-১৫৬৪ এই কয়েকবছর ধরে Paradise Lost রচনা করেন। ১৬৭৪ সালে Paradise Lost-এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। মিল্টনই ব্ল্যাঙ্ক ভার্সকে শ্রেষ্ঠত্বের চূড়ায় নিয়ে যান। মিল্টন ছাড়াও, Christopher Marlowe এবং William Shakespeare তাঁদের নাটক ও কবিতায় ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের সার্থক ব্যবহার করেন। অচিরেই ইংরেজি সাহিত্যে ব্ল্যাঙ্ক ভার্স অন্যতম আধুনিক, ভাবগম্ভীর এবং ওজস্বী একটি জঁর (Genre) হয়ে ওঠে।
কয়েকটি উদাহরণ-
Of man’s first disobedience, and the fruit
Of that forbidden tree whose mortal taste
Brought death into the World, and all our woe,
With loss of Eden, till one greater Man
Restore us, and regain the blissful Seat,
(Book -1, Paradise Lost, John Milton)
But, woe is me, you are so sick of late,
So far from cheer and from your former state,
That I distrust you. Yet, though I distrust,
Discomfort you, my lord, it nothing must,
For women's fear and love holds quantity;
In neither aught, or in extremity.
(Scene 2, Act 3, Hamlet, William Shakespeare)
হিস্প্যানিক (Español, Castellano)
হিস্প্যানিক সাহিত্যে ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের উদাহরণ আমাদের সামনে আসে ইংরেজি ভাষার বেশ কিছু সময় পরে। সেখানেও ক্রমাগত স্বকীয়তার অনুসন্ধান, প্রয়োগ, এবং পারিপার্শ্বিকের প্রভাবে ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের জন্ম হয়। হিস্প্যানিকে এর নাম Verso Blanco।
নাটককার Lope de Vega (১৫৬২-১৬৩৫) ছিলেন তৎকালীন স্পেনের এক বিস্ময়কর বহুমুখী প্রতিভা। কবিতা-নাটক-প্রবন্ধে তাঁর অনায়াস দক্ষতা ছিল। ১৬০৯ খ্রিস্টাব্দে Academia de Madrid-এ তিনি একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন, যার নাম ‘Arte Nuevo de hacer comedias en este tiempo’ (ইংরেজিতে- New art of doing comedies at this time; বাংলায়- এই সময়ে কমেডি সৃষ্টির নতুন শিল্পরীতি)। এই প্রবন্ধেই তিনি ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের সফল প্রয়োগ ঘটান, যা হয়ে ওঠে হিস্প্যানিক সাহিত্যের প্রথম ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের নিদর্শন। সর্বমোট ৩৮৯টি স্তবক আছে প্রবন্ধটিতে। নাটককার লোপে দে ভেগার ব্যর্থতা ও সেই ব্যর্থতাকে নাটককার কীভাবে সামাল দিয়েছেন, মজার ছলে সেই যুক্তিগুলি এখানে আলোচিত হয়েছে।
উদাহরণ -
Porque, como las paga el vulgo, es justo
Hablarle en necio para darle gusto.
(Arte Nuevo de hacer comedias en este tiempo, Lope de Vega)
[বাংলাঃ যেহেতু সে মানুষের সঙ্গে এরকম ব্যবহার করেছে, তাই ওর সঙ্গে বোকার মত কথা বলেই ওকে মজা দেখানো যাবে।]
অনুবাদঃ জয়া চৌধুরী
বাংলা (Bengali)
যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর শর্মিষ্ঠা নাটকের মহড়া চলাকালীন মধুসূদনকে বলেছিলেন, বাংলা ভাষায় ব্ল্যাঙ্ক ভার্স রচনা করা অসম্ভব। ঈশ্বর গুপ্তের প্যারডি উল্লেখ করে মধুসূদনকে ঠাট্টাও করেছিলেন। মধুসূদন এই ঠাট্টাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই তিন-চারদিনের মধ্যে ‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’এর প্রথম সর্গ ব্ল্যাঙ্ক ভার্সে রচনা করে যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরকে পাঠিয়ে দিলেন। বাংলা ভাষায় ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের জন্ম এভাবেই। বাংলায় এই ছন্দের নাম ‘অমিত্রাক্ষর ছন্দ’। ‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’তে যার আবির্ভাব, যার বিকাশ ‘মেঘনাদবধ কাব্য’তে, সেই অমিত্রাক্ষর ছন্দ তার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছয় মধুসূদনেরই ‘বীরাঙ্গনা’ পত্রকাব্যতে (১৮৬২)।
প্রবোধচন্দ্র সেনের মতে, মধুসূদন যা রচনা করেছিলেন তা হল ‘অমিল প্রবহমান পয়ার’। তাঁর মতে, ব্ল্যাঙ্ক ভার্স বা অমিত্রাক্ষর ছন্দের মূল লক্ষণ মিলহীনতা নয়, তার প্রধান লক্ষণ হল ভাবের প্রবহমানতা। ভাবের প্রবহমানতা আছে এমন পয়ার সমিল হলেও সফল ব্ল্যাঙ্ক ভার্স হয়ে উঠতে পারে। উদাহরণস্বরূপ তিনি উল্লেখ করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মানসী’ কাব্যের ‘মেঘদূত’ থেকে –
কবিবর, কবে কোন্ বিস্মৃত বরষে
কোন্ পূণ্য আষাঢ়ের প্রথম দিবসে
লিখেছিলে মেঘদূত। মেঘমন্দ্র শ্লোক
বিশ্বের বিরহী যত সকলের শোক
রাখিয়াছে আপন আঁধার স্তরে স্তরে
সঘন সংগীত মাঝে পূঞ্জীভূত করে।
(মেঘদূত, মানসী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
মধুসূদন-পরবর্তীকালে বহু কবি এই অমিত্রাক্ষর ছন্দ নিজেদের সৃষ্টিতে প্রয়োগ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘চিত্রাঙ্গদা’ ও ‘বিসর্জন’-এ তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ রেখে গেছেন। নাটককার গিরিশ ঘোষ এই ছন্দকেই সামান্য বদলে সৃষ্টি করলেন ‘গৈরিশ ছন্দ’। বাংলা ভাষায় আধুনিক কবিতার জন্ম হয় এই অমিত্রাক্ষর ছন্দকে আশ্রয় করে।
উদাহরণ-
ধবল নামেতে গিরি হিমাদ্রির শিরে-
অভ্রভেদী, দেব-আত্মা, ভীষণদর্শন;
সতত ধবলাকৃতি, অচল, অটল;
যেন ঊর্ধ্ববাহু সদা, শুভ্রবেশধারী,
নিমগ্ন তপঃসাগরে ব্যোমকেশ শূলী-
যোগীকূলধ্যেয় যোগী!
(তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, মাইকেল মধুসূদন দত্ত)
অসমিয়া (Assamese)
অসমিয়া ভাষাতেও ব্ল্যাঙ্ক ভার্স ‘অমিত্রাক্ষর ছন্দ’ নামেই পরিচিত। পয়ারের কাঠামোর উপর নির্ভর করেই এর জন্ম। ভাবের প্রবহমানতা ও মুক্তগতি বজায় রেখে, ইংরেজি সাহিত্যের ব্ল্যাঙ্ক ভার্সকে আদর্শ করে অসমিয়া ভাষাতে ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের সৃষ্টি।
প্রথম ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের নিদর্শন দেখতে পাই ভোলানাথ দাসের (১৮৫৮-১৯২৯) লেখা ‘সীতাহরণ কাব্য’তে। পরবর্তীকালের আরও বহু কবি এই জঁরের প্রয়োগ ঘটান এবং এই ভাষায় ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের উৎকর্ষসাধন করেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- পদ্মানাথ গোহাঁইবড়ুয়া, হিতেশ্বর বরবড়ুয়া, দণ্ডীনাথ কলিতা প্রমুখ। ‘সীতাহরণ কাব্য’ ১৮৮৮তে প্রকাশিত হলেও বিশ শতকের প্রথমার্ধে অন্যান্য কবিদের পূর্ণাঙ্গ কাব্যগুলি প্রকাশিত হয়।
হিতেশ্বর বরবড়ুয়ার ‘যুদ্ধক্ষেত্রৎ আহম রমণী’ বা ‘মুলা গাভরু’ এমনই এক দীর্ঘ কবিতা যেখানে ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের সফল প্রয়োগ দেখা যায়-
Whoever lays down his life on the battlefield
Fighting for the freedom of his father-land,
Gets immortal bliss after death.
Death is, in his case, eternal rest
Full of happiness, on the lap of the Mother Universal.
(Mula Gabharu, Hiteswar Barbarua)
ওড়িয়া (Oriya)
ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ওড়িয়া সাহিত্যে ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের উদ্ভব ঘটে। মধুসূদন রাও প্রথম তাঁর কবিতা ‘চন্দ্র ও তারা’তে ব্যবহার করেন ব্ল্যাঙ্ক ভার্স। এই পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর সমসাময়িক নাটককার রামশঙ্কর রায় তাঁর বিখ্যাত নাটক ‘কাঞ্চী কাবেরী’তে প্রয়োগ করেন এটি। এরপর, আধুনিক ওড়িয়া সাহিত্যের পথিকৃৎ রাধানাথ রায় তাঁর ‘মহাযাত্রা’ কবিতায় সফলভাবে ব্ল্যাঙ্ক ভার্স প্রয়োগ করেন।
ওড়িয়াতে ব্ল্যাঙ্ক ভার্স ‘অমিত্র ছন্দ’ নামে পরিচিত। রাধানাথ রায় তাঁর বিভিন্ন কবিতায় ‘অমিত্র ছন্দ’ প্রয়োগ করেন ‘মহাযাত্রা’ ছাড়াও ‘শ্মশান দৃশ্য’, ‘দূর্যোধনর রক্তনদী সন্তরণ’, ‘সতিপ্রতী সতিদ্রোহী পতির উক্তি’ ইত্যাদি কবিতায়। রাধানাথ রায় ছাড়াও চিন্তামণি মোহান্তি, নারায়ণ মোহন দে, ব্রজমোহন পাণ্ডা, কালিন্দীচরণ পাণিগ্রাহী, মায়াধর মানসিংহ প্রমুখ কবি এই সংরূপ ব্যবহার করেছেন তাঁদের সৃষ্টিতে।
হিন্দি (Hindi)
পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ভাষাগোষ্ঠী হিন্দি ভাষায় আশ্চর্যজনকভাবে যথার্থ ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের উদাহরণ বিরল। বরং, ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের উত্তরসূরী মুক্ত ছন্দ বা Free Verse-এর উদাহরণ যথেষ্ট পাওয়া যায়। হয়তো এর পিছনে হিন্দি ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ইতিহাস দায়ী, কিন্তু আমাদের গবেষণায় আরেকটি কারণ উঠে এসেছে, তা হল – রবীন্দ্রনাথের প্রভাব। হিন্দি ভাষায় যদিও ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের কাছাকাছি দুটি প্রতিশব্দ পাওয়া যায়, ‘অতুকান্ত কাব্য’ ও ‘রিক্ত পদ্য’। ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের হিন্দি প্রতিশব্দ অতুকান্ত কাব্য বলা হলেও অতুকান্ত কাব্যের সঙ্গে মুক্ত ছন্দেরই মিল বেশি। হিন্দি সাহিত্যের সমালোচকরাও খুব স্পষ্টভাবে অতিকান্ত কাব্য ও মুক্ত ছন্দের পার্থক্য নির্দেশ করতে পারেননি। আমরা তাই ‘অতুকান্ত কাব্য’কে মুক্ত ছন্দই ধরে নেব।
সূর্যকান্ত ত্রিপাঠী ‘নিরালা’ (১৮৯৯-১৯৬১) এই অতুকান্ত কাব্য বা মুক্ত ছন্দের প্রধানতম কবি। তাঁর কাব্যচেতনায় রবীন্দ্রনাথের প্রচণ্ড প্রভাব ছিল। ‘নিরালা’র জন্ম ও বেড়ে ওঠা, সবই হয় অবিভক্ত বাংলার মেদিনীপুরে। বাংলা ভাষাতেই তিনি পঠন-পাঠন সম্পন্ন করেছেন। তাঁর বেড়ে ওঠার সময়ে বাংলা সাহিত্য ‘অমিত্রাক্ষর ছন্দ’ বা ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের যুগ পেরিয়ে চলে এসেছে। সেই সময়ে বাংলা সাহিত্যের মধ্যগগনে বিরাজ করছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, এবং তাঁর কবিতায় তখন মুক্ত ছন্দের জয়-জয়কার। তাই, ‘নিরালা’ যখন রবীন্দ্রনাথের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে কাব্যরচনা করছেন, তাঁর লেখাতেও মুক্ত ছন্দই স্থান পেয়েছে। কালে তিনি হিন্দি সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবিরূপে প্রতিভাত হয়েছেন, এবং তাঁর প্রভাবে অন্যান্য তরুণ কবিরাও মুক্ত ছন্দেই আধুনিক হিন্দি কবিতা রচনা করেছেন। তাই হিন্দি সাহিত্যে ব্ল্যাঙ্ক ভার্স না পেয়ে তার পরবর্তী স্তর মুক্ত ছন্দ বা ‘অতুকান্ত কাব্য’কে পেয়েছি আমরা। এই ভাষায় তাকেই আমরা আধুনিকতার সোপান হিসেবে ধরে নিচ্ছি, কারণ এখানে ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের চিহ্নগুলি খুবই অস্পষ্ট।
‘নিরালা’র লেখা ‘পরিমল’ (১৯২৯) কাব্যগ্রন্থটি হিন্দি ভাষায় প্রথম Free Verse বা মুক্ত ছন্দের দৃষ্টান্ত বহন করে। ‘ছায়াবাদী’ কবিদের মধ্যে তিনিই শ্রেষ্ঠ, এছাড়াও সুমিত্রানন্দন পন্থ উল্লেখযোগ্য।
কন্নড় (Kannada)
কন্নড় ভাষায় ব্ল্যাঙ্ক ভার্স ‘সরল রাগালে’ (Sarala Ragale) নামে পরিচিত। কন্নড় ভাষায় যদিও ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের প্রচলনের পিছনে কেবল পাশ্চাত্য-প্রভাবই দায়ী নয়, প্রাচীন কাল থেকেই কন্নড় সাহিত্যে ‘ললিত রাগালে’ নামক একটি শিথিল কাব্যরীতি প্রচলিত ছিল। পাশ্চাত্য সাহিত্যরীতির সঙ্গে কন্নড় সংস্কৃতির পরিচয় ঘটার ‘ললিত রাগালে’ আরো সংবদ্ধ, সুসংহত হয়ে ‘সরল রাগালে’ রূপে আত্মপ্রকাশ করে। ‘সরল রাগালে’ নামকরণ করেন T. S. Venkanniah।
কবি কুভেম্পু ‘সরল রাগালে’র শ্রেষ্ঠ কবি। বিখ্যাত কবিতা ‘চিত্রাঙ্গদা’ এবং ‘শ্রী রামায়ণদর্শনম’ মহাকাব্যটিই তার প্রমাণ। মস্তি ভেঙ্কটেশ আয়েঙ্গারের লেখা ‘অরুণা’ (১৯২৪) কাব্যগ্রন্থের ‘Sthalagala Hesaru’ কবিতাটি ‘সরল রাগালে’র প্রাথমিক নিদর্শন। ‘মস্তি, কুভেম্পু ছাড়াও গোবিন্দ পাই, কৃষ্ণমূর্তি পুরাণিক, ভি. এম. শ্রীকান্থাইয়া, এল. গুন্ডাপ্পা প্রমুখ কবি এই ধারাটিকে সমৃদ্ধ করেছেন।
উদাহরণ -
The Road from Chicknayakanahalli
To Tumkur lies in a valley known
As Madalinga’s Valley. Thereby hangs
A Tale which touches the heart. Years ago
In a village hereabouts there lived two sisters
Both fair, their motheir’s nephew, Madalinga -
I do not know if that was his actual name
Or whether it was a corruption of a word
Meaning a bridegroom, ‘Madalinga’ –
Married the elder one. After a while
He went to the village to take his bride home.
(Madalinga’s Valley, Sthalagala Hesary, M. V. Iyenger)
অনুবাদঃ K. Narasimha Murthy
তামিল (Tamil)
তামিল সাহিত্যে ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের ‘আহবল’ বা ‘আখবল’ (Ahaval) নামে পরিচিত। এই শব্দের অর্থ হল মানুষের কণ্ঠস্বর বা স্বগতোক্তি। খ্রিস্টিয় দ্বিতীয় শতকে চের রাজবংশের রাজপুত্র ইলঙ্গ আদিগল রচনা করেন ‘সিলপ্পতিকারম’ (Silappatikaram/Silappadikaram)। তামিল ভাষায় রচিত পাঁচটি মহাকাব্যের অন্যতম এটি। ল্যাটিন ভাষায় লেখা ভার্জিলের মহাকাব্যে যেমন ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের কিছু লক্ষণ পাওয়া যায়, তেমনই তামিল ভাষার এই প্রাচীন মহাকাব্য সিলপ্পতিকারমেও এর কিছু স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এরপর সঙ্গম ধারা ও ভক্তি ধারার কবিদের মধ্যেও ‘আহবল’ প্রয়োগের প্রবণতা দেখা যায়। আধুনিকতার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বহু কবি পাশ্চাত্য ধারায় ব্ল্যাঙ্ক ভার্স লিখতে চেষ্টা করলেও সুন্দরম পিল্লাইয়ের আগে আর কেউই সফল হননি। সুন্দরম পিল্লাইয়ের ‘মনোন্মনিয়ম’ (১৮৯১) সেই সাক্ষ্য বহন করছে। বিংশ শতকে সুভ্রমনিয়া ভারতী (১৮৮২-১৯২১) তাঁর ‘কুয়িলপত্তু’ এবং ‘পাঞ্চালী সবথম’-এ ব্ল্যাঙ্ক ভার্স প্রয়োগ করেন। অন্যান্য কবিদের মধ্যে না পিচামুর্থি, নকুলন, সুন্দরা রামস্বামী, কা. না. সুভ্রমনিয়ম প্রমুখ ‘আহবল’-এ কবিতা রচনা করেন।
বর্তমান তামিল সাহিত্য সমালোচকদের অধিকাংশই মনে করেন সিলপ্পতিকারমের শ্রেষ্ঠত্বকে পরবর্তীকালের কোনো কবিই অতিক্রম করতে পারেননি। ‘আহবল’-এ ইলঙ্গ আদিগল তাই এক দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীর হয়েই দাঁড়িয়ে আছেন।
উদাহরণ –
We shall compose a poem, with songs,
To explain these truths: even Kings, if they break
The law, have their necks wrung by dharma;
Great men everywhere commend
Pattini of renowned fame; and Karma ever
Manifests itself, and is fulfilled. We shall call the poem
The Cilappatikaram, the epic of the anklet,
Since the anklet brings these truths to light.
(Prologue, Silappatikaram, Ilango Adigal)
অনুবাদঃ Parthasarathy
৫.
আমাদের নমুনা ভাষা-অঞ্চলগুলিতে প্রথম আধুনিক মুদ্রণযন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ও সেই ভাষায় প্রথম আধুনিক কবিতা ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের সৃষ্টির তালিকাকে যদি কালানুক্রমিক ভাবে সাজানো যায়, তাহলে অনেককিছু পরিষ্কার হবে।
ভাষা-অঞ্চল ও ভাষা-গোষ্ঠী | মুদ্রণযন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম মুদ্রণের নাম | মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠা বা প্রথম মুদ্রণ | ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের সৃষ্টি | ছন্দ বা সংরূপের নাম | প্রথম রচিত ব্ল্যাঙ্ক ভার্স | সময়ের পার্থক্য |
ইংরেজি | উইলিয়াম ক্যাক্সটন - চসারের ক্যান্টারবেরি টেলস | ১৪৭৬ | ১৫৪০ | Blank Verse | ভার্জিলের ইনিডের অনুবাদ – Earl of Surrey | ৬৪ বছর পরে |
হিস্প্যানিক | Arnao Guillien de Brocar - Complutense Polyglot Bible | ১৪৯০ (প্রথম প্রতিষ্ঠা) ১৫২১ (প্রথম মুদ্রণ) |
১৬০৯ | Verso Blanco | Arte Nuevo de hacer comedias en este tiempo - Lope de Vega | ১১৯ বছর পরে |
বাংলা | উইলিয়াম কেরী - শ্রীরামপুর মিশন প্রেস | ১৮০০ | ১৮৬০ | অমিত্রাক্ষর ছন্দ | তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য – মাইকেল মধুসূদন দত্ত | ৬০ বছর পরে |
অসমিয়া | নাথান ব্রাউন ও অলিভার কাটার (খ্রিস্টান মিশনারি) | ১৮৩৬ | ১৮৮৮ | অমিত্রাক্ষর ছন্দ | সীতাহরণ কাব্য – ভোলানাথ দাস | ৫২ বছর পরে |
ওড়িয়া | খ্রিস্টান মিশনারিরা | ১৮৩৬ | উনিশ শতকের শেষে | অমিত্র ছন্দ | চন্দ্র ও তারা –মধুসূদন রাও | ৬০-৭০ বছর পরে |
হিন্দি | Calcutta Gazette
(প্রথম মুদ্রিত দেবনাগরী লিপি) |
১৭৯৬ | ১৯২৯ (মুক্ত ছন্দ বা Free Verse) | অতুকান্ত কাব্য | পরিমল – সূর্যকান্ত ত্রিপাঠী ‘নিরালা’ | ১৩৩ বছর পরে |
কন্নড় | Reverend Ellja Hoole - Wesleyan Mission Press | ১৮২১ | ১৯২৪ | ললিত রাগালে | অরুণা – মস্তি ভেঙ্কটেশ আয়েঙ্গার | ১০৩ বছর পরে |
তামিল | Johann Philipp Fabricius – Vepery Press | ১৭৭৯ | ১৮৯১ (আধুনিক আহবল) | আহবল | মনোন্মনিয়ম - সুন্দরম পিল্লাই | ১১২ বছর পরে |
উপরের ছকটি মিলিয়ে দেখলে একটি প্রবণতা স্পষ্ট হয়। প্রতিটি ভাষা অঞ্চলে মুদ্রণযন্ত্র স্থাপনের পর, বা, বলা ভালো, প্রতিটি ভাষা আধুনিক মুদ্রণযন্ত্রে মুদ্রিত হওয়ার পর ৫০-১৩০ বছরের মধ্যে সেই ভাষায় ব্ল্যাঙ্ক ভার্স সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের সঙ্গে সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই মুদ্রণযন্ত্রের। কবিরা মুদ্রণযন্ত্রের কথা মাথায় রেখে ব্ল্যাঙ্ক ভার্স সৃষ্টিও করেননি। তাহলে মুদ্রণযন্ত্র ও ব্ল্যাঙ্ক ভার্সের সঙ্গে সম্পর্ক কোথায়?
উপরের ছকটি থেকে আমরা আরেকটি গভীর সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি। কোনো ভাষা অঞ্চলে মুদ্রণযন্ত্র স্থাপিত হওয়ার পর তার বহুল প্রচলনে সেই ভাষা-গোষ্ঠীর মানসে গদ্যভাষা সম্পর্কে, তার স্থায়িত্ব ও ভাবপ্রকাশে তার গুরুত্ব সম্পর্কে একটি স্পষ্ট বোধ গড়ে উঠেছিল। সেই বোধ গড়ে উঠতে সময় লেগেছে অর্ধ শতকেরও বেশি, কিছু ভাষার ক্ষেত্রে তা এক শতকেরও বেশি। ততদিনে সেই ভাষা-গোষ্ঠীর মানুষের বোধের মধ্যে প্রবিষ্ট হয়ে গেছে – ‘মনের প্রকাশিত ভাব কোনো কাঠামো (ছন্দ-অন্ত্যমিল-পর্ব) আশ্রয় না করেই তার স্বাভাবিক ও কথ্যরূপে সংরক্ষিত হতে পারে মুদ্রণযন্ত্রের মাধ্যমে। ঘুচে যেতে পারে লেখক ও পাঠকের সেই সুবিশাল দূরত্ব – মুদ্রণযন্ত্র আসার আগে যা ছিল লিপিকার-কথক-শ্রোতার মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের করায়ত্ত। এই গুরুত্ব হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে পদ্যের কাঠামোর গুরুত্ব হ্রাস পেয়েছে। সৃজনশীল মানুষের মনে হয়েছে, এই পূর্বনির্ধারিত কাঠামো ভাবপ্রকাশের অন্তরায় হয়ে উঠছে, তাই একে ভাঙা দরকার।
ইংরেজি ও হিস্প্যানিক ভাষা-গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্তটি সঠিক বলেই মনে হয়। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও দার্শনিকতার আধুনিক চর্চার জন্ম হয় ইওরোপে, যাকে আজ আমরা চিহ্নিত করি রেনেসাঁ নামে। মুদ্রণযন্ত্রই রেনেসাঁর অন্যতম প্রধান উপাদান।
ভারতীয় সমস্ত ভাষা-গোষ্ঠীই ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল। এই ভাষাগুলি শাসকের সংস্কৃতির চাপ অনুভব করেছে পরাধীন হওয়ার পর থেকেই, সে পঠন-পাঠন বা ধর্মবিস্তার যেভাবেই হোক না কেন। তাই বাংলা ভাষার যুক্তিগুলো অন্য ভাষার ক্ষেত্রেও খাটে। একটু আলাদা হয়ে যায় হিন্দি ভাষার বিষয়টি। সূর্যকান্ত ত্রিপাঠী ‘নিরালা’ হিন্দি সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। তাঁর শৈশব ও কৈশোর বাংলায় কেটেছে – একথা আমরা আগেই উল্লেখ করেছি। ‘নিরালা’ যখন বেড়ে উঠছেন, সেই বিশ শতকের প্রথমার্ধে রবীন্দ্রনাথ মুক্ত ছন্দে (মতান্তরে মুক্তক ছন্দ) কবিতা লিখছেন। ‘নিরালা’র কবিতাতেও রবীন্দ্রনাথের তীব্র প্রভাবে ব্ল্যাঙ্ক ভার্স না এসে সরাসরি মুক্ত ছন্দের প্রভাব এসে পড়েছে। রবীন্দ্রনাথের প্রভাবে একটি ভাষার একটি উল্লেখযোগ্য পর্যায় কীভাবে হারিয়ে গেল – তা ভাবলে বোঝা যায়, তাঁর সুদূরপ্রসারী প্রভাব সম্পর্কে আমরা আজও সচেতন নই।
বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে চিত্রটি একটু আলাদা। মিল্টনের মতো কাব্য রচনা করবেন – এই চ্যালেঞ্জ নিয়েই মধুসূদন বাংলায় ব্ল্যাঙ্ক ভার্স রচনা করেছিলেন। অর্থাৎ আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, বাংলা ভাষায় ব্ল্যাঙ্ক ভার্স সৃষ্টির সঙ্গে ছাপাখানার কোনো সম্পর্ক নেই, ছাপাখানা কেবল মিল্টনের সৃষ্টির সঙ্গে মধুসূদনদের পরিচিত করে দিয়েছিল, এই মাত্র। কিন্তু, বাংলা ভাষাতেও মুদ্রণযন্ত্রের বিস্তারের ফলে পদ্যের কাঠামো ভেঙে গিয়েছিল বলেই মধুসূদন ও তাঁর বন্ধুদের আলোচনায় মিল্টনের মত লেখার চেষ্টার কথা উঠে এসেছিল – এ কথা আমাদের ভুললে চলবে না।
কন্নড়-ওড়িয়া-অসমিয়া ভাষার ছবিটা বাংলার মতই কিছুটা। কেবল তামিল ভাষায় আধুনিক আহবল কবিতাগুলি ধারে ও ভারে খ্রিস্টিয় দ্বিতীয় শতকের কবি ইলঙ্গ আদিগলকে কোনোভাবেই অতিক্রম করতে পারেনি, বা নূতন দিশা দেখাতে পারেনি। কিন্তু তা যে আধুনিক তামিল কবিতার জন্ম দিয়েছে এ কথা অস্বীকার করা যায় না।
আধুনিক ‘কবিতা’র সৃষ্টিও মুদ্রণযন্ত্রের হাত ধরেই। ‘কবিতা’ শব্দটি এখন আমরা জঁর হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি ‘বোধ’ বা ‘ভাবপ্রকাশের একটি বিশেষ ধরণ’ এই অর্থেই ব্যবহার করে থাকি। ভালো উপন্যাস, ব্যক্তিগত গদ্য, গান, চলচ্চিত্র, ফটোগ্রাফি এমনকি চিত্রকলাকেও আমরা কবিতা বলতে দ্বিধা করি না। কবিতাকে তার শরীর থেকেও মুক্তি দিয়েছে মুদ্রণযন্ত্রই। কবিতা যে একটি কাঠামো নয়, একটি বোধ – এই উপলব্ধিও ব্ল্যাঙ্ক ভার্স সৃষ্টি না হলে জন্ম নিত না।
৬.
মানবসভ্যতায় আধুনিকতার সূচনা করেছে মুদ্রণযন্ত্রই। সমগ্র বিশ্বের সাহিত্য-সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণও করেছে এটি। পাশাপাশি কবিতার আধুনিক সংরূপ ব্ল্যাঙ্ক ভার্সকেও সৃষ্টি করেছে ছাপাখানাই। হয়তো অন্যান্য আরো কিছু উপাদান এজন্য দায়ী। কিন্তু আপাত দূর মনে হলেও ব্ল্যাঙ্ক ভার্স সৃষ্টির প্রেক্ষাপটের প্রধান ও প্রত্যক্ষ উপাদান মুদ্রণযন্ত্রই।
এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে। বিতর্ক স্বাগতও। কারণ যথাযথ আলোচনা না হলে আলোকপাত হয় না। আর তা না হলে সত্য উদ্ঘাটিতও হয় না। এই লেখা সেই আলোচনায় ইন্ধন জোগালেই সার্থক হবে।
[এই বিষয়ে এখনো গবেষণা চলছে, শেষ হয়নি। তাই তথ্যসূত্র ও গ্রন্থপঞ্জি দেওয়া গেল না। তবে আগ্রহীরা ইমেল করতেই পারেন।]
Thoughtfu, pretty thoughtful!