

পার্লামেন্ট কেবলমাত্র কাদামাখা শুয়োরের খোঁয়াড়, এইরকম মনে করা নকশালপন্থী এখন আর বেশি টিকে নেই। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সংসদীয় ব্যাবস্থা মেনে নেওয়াই ঠিক কাজ হবে, এইরকম ভাবনাই বেশি। ছুটকোছাটকা বিরোধী মত অবশ্যই আছে,তারা খুব একটা জোরালো নয়। ফলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ এখন গরিষ্ঠ বাম এবং অতিবামের কাছে জায়েজ।
সিপিএমের কাছে অবশ্য এই দ্বিধা কখনোই ছিল না। জন্মলগ্ন থেকেই এই দল মূল লক্ষ্য অর্জনের জন্য নির্বাচনকে রণকৌশলের বিষয় হিসেবে দেখেছে। যদিও আইনসভায় অংশ গ্রহণ না করেও যে রাজনীতি করা যায়, সিপিএমের নেতৃত্বে বামদলগুলির একটা জোট ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে। আবার কখনো সাংবিধানিক অধিকার অনুসরণ করে সরকার গঠন করেছে তিন রাজ্যে। সরকারে না থাকলে সেই সংসদীয় ধারাতেই আইনসভায় বিরোধীর ভূমিকা পালন করেছে।
এই যে কমিউনিস্ট ভাবধারার একটি দলের নির্বাচনকে রণকৌশল হিসেবে ব্যবহার করা, এর সঙ্গে তার নীতি বা আদর্শের কোনো বিরোধ নেই। রণকৌশলগত কোনো বিষয়ের সঙ্গে মতাদর্শকে আমরা সাধারণ মানুষেরা অহরহ গুলিয়ে ফেলি বটে, কিন্তু বাস্তবে তা একেবারেই অনুচিত। কমিউনিস্ট নৈতিকতার উৎস কমিউনিস্ট মতাদর্শ। খুব সংক্ষেপে বলতে গেলে তা হলো শ্রেণিহীন সাম্যবাদী অবস্থায় পৌঁছাতে পারা। এই পথে চলতে চলতে, সমাজবাদ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছবার আগে বার বারই সাম্যযোদ্ধাকে তার রণকৌশল বদলাতে হতে পারে। এই কারণে লেনিন ড্যুমায় যোগদানও করেছেন, আবার যোগদান করা থেকে বিরতও থেকেছেন। যদি সরকার গঠন করার সুযোগকে বাম রাজনীতির প্রসার বৃদ্ধিতে ব্যবহার করার কথা কোনো দল, তাহলে তা একেবারেই অমার্কসীয় হবে না, কারণ এই "শুচিতা" র কথা মার্ক্স কোথাওই বলেননি। ফলে সিপিএম কেন নির্বাচনের প্রাক্কালে হ্যানো করল, ত্যানো করল, তাতে তার ফোঁটা তিলক কাটা নৈতিকতার মান ক্ষুণ্ণ হল এইসব বলা বেকার। দেখতে হবে সংসদীয় ব্যবস্থার বিরোধী এমন কিছু দলটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আমদানি করল কিনা, যা সংবিধানেরও বিরোধী এবং দলটির ঘোষিত মূল মতাদর্শেরও বিরোধী ।
সবাই ভোটের বাজারে নেমে বিভিন্ন অস্ত্রে শান দিচ্ছে, খেলার নিয়মকানুন আউড়ে নিচ্ছে, সেখানে একটি দলকে নৈতিকতার দোহাই পেড়ে ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে থাকতে হবে, এটা চাপিয়ে দেওয়া খুব বড় চালাকি একটি। যেন ভোটের বাজারটিই নৈতিকতা প্রচারের সবচেয়ে বড় মান্ডি, যার ঠেকা নিতে বাধ্য করা হয়েছে একটি বিশেষ দলকে।
আসলে গেল গেল রব তোলাটা তাহলে খুব সহজ হয় যে!
নির্বাচনের আগে আমরা বড়জোর যা আশা করতে পারি তা হল কী ধরনের সরকার তারা আমাদের দেবেন, সে সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা। দলটির দ্বারা প্রকাশিত নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে সেটা পরিষ্কার ভাবে গুছিয়ে লেখা হয়েছে। কেরালা ফর্মুলায় বেশিরভাগ প্রার্থীই অল্পবয়সী এবং শিক্ষিত। এদের কোনো কলঙ্কিত অতীত নেই, আছে কেবল উজ্জ্বল ভবিষ্যত। ভারতীয় গণতন্ত্রের একিলিসের গোড়ালি, সাংসদ কেনাবেচার সর্বচারী প্রবণতা থেকে এরা মুক্ত বলেই মনে হয়। অন্তত বিকিয়ে যাবার সম্ভাবনা এদেরই সবচেয়ে কম। যে হারে একটি রাজনৈতিক দলের সদস্যদের বিরাট সংখ্যা বিজেপির প্রলোভনের কাছে আত্মসমর্পণ করছে তাতে এই কথাটাই সবচেয়ে আগে মনে হচ্ছে যে যাকে নির্বাচিত করলাম, সে কাল রঙ পালটে নেবে না তো? সে আশঙ্কা সবচেয়ে কম মনে হয় এই তরুণ তরুণীদের ক্ষেত্রে। এদের মধ্যে কয়েকজন বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে প্রাণ বিপন্ন করে তবে এই জায়গায় পৌঁছেছে। লেসার ইভিল পার্লামেন্টে ওয়াক ওভার দেয়, আর ঐশী ঘোষ মাথায় বাড়ির পর বাড়ি খেয়েও এতো কথার কী আছে, এই টিটকিরি শুনতে বাধ্য থাকে।
নির্বাচন যখন সরকার গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, তখন কেবল প্রধান শত্রু বিজেপিকে নো ভোট, এইটা বলাই সব হতে পারে না। কাকে ভোট দেব সেকথা যদি উহ্য থেকে যায় তাহলে এই লাইন দ্বারা অনুপ্রাণিত মানুষজনের মধ্যে সরকার গঠনের দিকে সদর্থক ভোটের বদলে ভোট না দিতে যাবার বা নোটায় ভোট দেবার প্রবণতা বাড়বে। ভোটারদের মধ্যে কনফিউশান বা ধন্দ বাড়বে। নির্বাচিত কয়েকটি আসনে আমি লড়ব, বাদ বাকীগুলিতে প্রধান শত্রু বিজেপি ছাড়া আর যে কাউকে দাওগে যাও - এই নিদান সরকার গঠনের বিষয়টিকেই অবান্তর করে তোলে। ত্রিশঙ্কু বিধানসভার দিকে ঠেলে দেয়। যে পরিস্থিতি ঘোড়া কেনাবেচার স্বর্গরাজ্য। যদি বামেদের মধ্যে অনৈক্যের কারণে বিজেপি আসে, তাহলে পুরো বাম আন্দোলনই মার খাবে। বিজেপির লেঠেলরা অতো মেপেজুকে মারে না, কে সিপিএম, কে এমএল, এইসব বিবেচনা তাদের থোড়ি আছে। কার আমলে কে ইউএপিএ খেয়েছে, তাই সে সকল প্রশ্নের অতীত হয়ে নির্বাণ প্রাপ্ত হয়েছে, তাকে আর ছোঁয়া যাবে না, তার অভিপ্রায় নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না, এইরকম চিন্তা বিজেপি করবে বলে মনে হয় না। তার কাছে সকল 'ব'-ই সমান প্রহারযোগ্য, সে বিশ্ববাংলাই হোক আর বামের নানা রকমফের।
যে বামশক্তিটি দীর্ঘকাল পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় ছিল, তাকে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছিল নানা বিচ্যুতির কারণে। নাহলে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, পুঁজির অবাধ খেলা, বিজেপির অত্যাগ্রহ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ, মিথ্যা প্রচার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনশন, কোনটাই এই হারে সফল হতো না বলে আমার ধারণা। কিন্তু তার পরেও তো কোন নতুন বাম শক্তির পুঞ্জীভূত হওয়া দেখতে পেল না এই দুর্ভাগা রাজ্য। এতো বাম দল, তাদের কমন পয়েন্ট তারা সরকারি বামের ওপর বেজায় খাপ্পা, তবুও সরকারি বামকে একেবারে অকেজো প্রমাণ করে নতুন বামশক্তি আত্মপ্রকাশ করল না কেন? আর কিছু না হোক, তারা তো ১৯৭২-৭৭ এর ধারায় আন্দোলন জারি রাখতে পারত। তাহলে হঠাৎ করে ভোটের আগে ভোটারদের মধ্যে তাহলে কাকে ভোট দেব এই ধন্ধ না বাড়িয়ে, দলে দলে নতুন বাম শক্তিকেই ভোট দেবার কথা বলা যেত। বিজেপির বিরুদ্ধে বাম, এর কোনো বিকল্প তো নেই। আর কেউই বিজেপি বিরোধিতায় ১০০ শতাংশ দেবে না। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তেতাল্লিশ রকম বাম ছড়ি ঘোরায়, কিন্তু নতুন বাম শক্তিকে সংহত করার বেলায় কেউ নেই, বংশের বাতি দিতে তাই হাতে থাকে ঐ সরকারি বামই। সে যাতে ভোট না পায়, তার জন্য ছলেবলে, ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে চেষ্টা করে যাবার মধ্যে নৈতিকতা তো নয়ই, এমনকি রণকৌশলগত সাধারণ জ্ঞানও চোখে পড়ে না।
ফলে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বা ত্বহা সিদ্দিকির 'ধর্মনিরপেক্ষতা' বা মণিরুল ইসলামের 'মানবতা'য় বেসরকারি বামেদের আপত্তি না থাকলেও আব্বাস সিদ্দিকিকে নিয়ে তারা বড়ই বিব্রত। লোকটা ধর্মগুরু, ফলে বাম জোটে ঢোকে কিভাবে, মেয়েদের সম্বন্ধে আজেবাজে কথা বলে, অন্য দলগুলি এতো চেষ্টা করেও তাকে নিতে পারল না, শেষ অব্দি বামে ভিড়লো? ছিছিক্কারে ভরে গেল দুনিয়া যেন বাম দলটির ধর্মনিরপেক্ষতার পরীক্ষা আর কোনোদিন কোনোভাবেই হয়নি, প্রমাণের জন্য বাকি ছিল আব্বাস সিদ্দিকিকে দলে নেওয়া না নেওয়ার অগ্নিপরীক্ষা। ৩৪ বছরের শাসনকালে দাঙ্গা হতে না দেওয়া ধর্তব্যের মধ্যেই নয় যেন। এই দাঙ্গা লাগলো বলে, আইএসআই, দায়ুদ ইব্রাহিমের চর ইত্যাদি সুললিত বচনামৃত যাদের মুখে শুনতে পাচ্ছি, তারা নিশ্চয়ই জানেন এ রাজ্যে দাঙ্গা হয়েই চলেছে। তেলেনিপাড়ায় বার বার আগুন লাগে, আসানসোলের ঘটনা আমরা সবাই জানি, ধুলাগড়, হাজিনগর, নৈহাটি, একের পর এক। এ-ই তেলেনিপাড়াতেই কিন্তু গোটা রাত থানায় জেগে বসে থেকে জ্যোতি বসু দাঙ্গা লাগতে দেননি। বিভেদকামী দাঙ্গাবাজ শক্তিকে প্রতিহত করবার মতো প্রশাসনিক সদিচ্ছা নেই এখন। থাকতেও পারে না। এক প্রবল বিভেদকামী ধর্মোন্মাদ শক্তিকে ধর্মকাঁটাতেই বিদ্ধ করে হঠাবার চেষ্টা বাতুলতা নয় কি? হনুমান চালিশার জবাব কি উল্টোডাঙার আকাশ ছোঁয়া হনুমান মূর্তি হতে পারে? বরং তাদের আশংকা সত্যি করে যদি আব্বাস সিদ্দিকির মধ্যে কোনো সাম্প্রদায়িকতা লুকিয়ে থাকে, তাকে সঙ্গে নিয়ে সেটা ঝেড়ে ফেলার কাজ বামশক্তি ছাড়া আর কে করবে! সংযুক্ত ফ্রন্টে যোগদানের পর তাকে কোনো আপত্তিকর কথা বলতে শোনা যায়নি। বরং শাসকের নাগপাশ থেকে স্বাধীনতা, সাংবিধানিক অধিকার, সম্প্রদায় নির্বিশেষে ঐক্য, এইসবই উঠে এসেছে তার ভাষণে। ওয়ায়েসির মিমকে সে প্রত্যাখ্যান করেছে, যদিও ফেসবুক পোস্টে ছয়লাপ যে মিম আর আইএসএফের নির্বাচনী সিম্বল নাকি এক। তা আবার হয় নাকি এই ভেবে হেসে নেবার আগে সুকৌশলে এইসব কথা ভাসিয়ে দেবার পেছনে যে চতুরতা হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটিতে তার লাগাতার ব্যবহার হয়েই চলেছে। যেহেতু মিমের সিম্বল ঘুড়ি, সেটা কমজনেরই জানা আছে, ঘুড়ির একটা আবছা ছবি দিয়ে বা না দিয়ে নেহাত সাদৃশ্যগত মিলকে কেমন কাজে লাগিয়ে দেওয়া হলো! কাজটা ডেসপারেশন বা মরিয়া ভাবকে কতদূর টেনে নিয়ে যাওয়া যায় তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ। ওয়ায়েসির মিমকে ঘরে পাঠিয়ে আব্বাস সিদ্দিকি অন্তত একটি কাজ এর মধ্যেই করে ফেলেছে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনকে আড়াআড়ি হিন্দু মুসলমানে ভাগ হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচিয়েছে। পীরজাদা ধর্মগুরু হিসেবে তার লক্ষণ রেখার ভেতরে আব্বাসের পদচারণা এখন খুব কম, সে রেখার বাইরে দাঁড়াবার আবেগই যেন বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। যে কারণে এ অব্দি আইএসএফের ঘোষিত প্রার্থী সংখ্যার বেশিরভাগই অমুসলমান।
তবু তার ওপর নজর রাখা ঠিক আছে, কিন্তু শুরুতেই এতো ছিছিক্কারে না ভরিয়ে দেওয়াই ভাল। সে ধিক্কার নাহয় মুলতুবি থাক সংযুক্ত মোর্চা ভুল প্রমাণিত হলে। তার আগেই সাব অল্টার্ন মুসলমানের বর্ণ হিন্দু অধ্যুষিত রাজনৈতিক দলের তাঁবেদারি না করে, নিজের দল গড়ে অধিকার ছিনিয়ে নেবার এই প্রচেষ্টা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের হাতে গুন্ডা সমাজবিরোধী হিসেবে ব্যবহৃত না হবার এই প্রথম প্রয়াসকে ডাস্টবিনে ফেলে দিলে আমাদের ছুপা সাম্প্রদায়িক এবং এলিটিস্ট মুখটাই সামনে আসে।
ধার্মিক লোক ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারে কিনা এটা এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। তবে সংবিধান বলে নিজের নিজের ধর্মাচরণের স্বাধীনতা সকলেরই আছে। যতোক্ষণ নিজের কারণে অন্যের ধর্মাচরণে তুমি বাধা না হচ্ছো, ততক্ষণ তুমি ধর্মনিরপেক্ষ। আব্বাস সিদ্দিকি এর উল্টো করেছে বলে জানা নেই। অবশ্য সংবিধান এবং গণতন্ত্রের রেফারেন্স দিলে এখন তথাকথিত বামমনস্করাও প্রশ্ন তোলে, ওগুলো আবার কী? ওসব খায় না মাথায় মাখে?
আমি তাদের উল্টো জিজ্ঞাসা করি তবে আমাদের লড়াই কিসের জন্য? শুধু বিজেপি হটানো? পরিষ্কার তো জানাই আছে তারা শত্রু নাম্বার ওয়ান। কিন্তু প্রতি পদে যারা গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে, ব্যবহারিক ক্ষেত্রে সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার কোনো চেষ্টাই করে না,আপাদমস্তক ডুবে থাকে দুর্নীতি আর মিথ্যায়, তাদের দু নম্বরের বিপদ বলে চিহ্নিত করা যাবে না? পাছে একের সুবিধে হয়ে যায়, তাই? এককে হটিয়ে এ রাজ্যের শাসনভার কাকে তুলে দেওয়া হবে? লেসার ইভিল দুইকে? তাতে আম এবং ছালা দুটোই যাবে কিনা ভেবে দেখেছি তো আমরা! কেন আমরা তৃতীয় শক্তির কথা ভাববো না? চে-র টাট্টু খোদাই একজন অসৎ মানুষ বিজেপিতে গেছে বলে এতো এতো খিল্লি ! তার মতোই আর কয়েকজনও বিজেপিতে গেছে। কিন্তু লেসার ইভিলে যে পাল্লা অনেক ভারি! পয়সা ছড়িয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিকে কিনে নিলে, ট্রেন্ড দেখে যার সম্ভাবনা খুবই বেশি বলে সবাই বলছে, তখন কী হবে? তখন আবার বামের ওপর উল্টো চাপ আসবে - সর্বশক্তি নিয়ে তৃণমূলের পক্ষে ঝাঁপাও, এ আমার, এ তোমার লড়াই।
উঠতে বসতে সিপিএমকে গালমন্দ ক'রে তারপর সেই দলের নেতা হান্নান মোল্লার উক্তি বিজেপি শ্রেষ্ঠ শত্রু এই বাক্যে নো ভোট টু বিজেপির জয় খোঁজার মতো হাস্যকর কাণ্ড আর কতো দেখব। কৃষক আন্দোলনের গোড়া থেকে আন্দোলনের নেতাদের নীতি তারা সমস্ত রকম রাজনৈতিক সংস্রব থেকে নিজেদের দূরে রাখবেন। কোনো ছুপা অ্যাজেন্ডা তাদের কখনই ছিল না, এখনও নেই। বিহারে তেজস্বী, উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ, কাউকে জেতানোর ভার তাদের ওপর নেই। সেইজন্যই পার্টি নেতা হয়েও হান্নান মোল্লা পার্টির ওপরে উঠতে পেরেছেন, কৃষক মঞ্চে দলীয় প্রচার পরিহার করেছেন। আবার পরদিনই দলীয় প্রার্থীদের পদযাত্রায় হেঁটেছেন। তিনি যাই-ই করুন, কৃষকদের সংগঠিত করার কাজে বিভিন্ন রাজ্যে সিপিএমের লাগাতার চেষ্টা ও সাফল্য তাতে অনর্থক হয়ে যায় না। এই যে কৃষকদের সংগঠিত করা তা কিন্তু দলীয় ব্যানারেই হয়েছে। কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্বে বিজেপি তো থাকবে না জানাই কথা, কিন্তু একজন তৃণমূলী নেতাও কী আছে ?
ফলে অকারণে আনন্দিত হয়ে লাভ নেই, সিপিএম ছাড়া এই সাংগঠনিক চর্চা এই ব্যাপকতা নিয়ে আর কোনো রাজনৈতিক দলের অন্দরে উপস্থিত আছে কিনা নিজেকেই প্রশ্ন করুন।
বিজেপির বাড়বাড়ন্তের জন্য দায়ী মূলত কুশাসন আর প্রতিশোধপরায়ণতা। ভোটার কারো কেনা নয়, কোনো পার্টি ভোটারের মা-বাপ নয়। তাহলে কংগ্রেসি জমানা এ রাজ্যে ফুরতো না। নেতারা বলবে তবে ফুলে ছাপ দেবে এতো বশংবদ ভোটার কোথাও দেখেছেন নাকি? তার জন্য পঞ্চায়েত ইলেকশনের তাণ্ডব, ঘর পোড়ানো, মানুষ কেটে টুকরো করা যথেষ্ট নয়? চলে যাওয়া যেতে পারে কেশিয়ারিতে বা দাঁতনে। ওখানে মিলেমিশে যৌথ পঞ্চায়েত চালাচ্ছে তৃণমূল আর বিজেপি। প্রধান এক দলের তো উপপ্রধান আরেক দলের। যৌথ উদ্যোগে ১৫ একর জমি দেওয়া হয়েছে আর এস এসের বেদরক্ষক আর্য গুরুকুল বিদ্যালয়কে। রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে গোমূত্র। ব্যবসাতে যুক্ত সব রঙের কর্মীরাই। এইটাই কিন্তু নীল নকশা। বিধান সভার ক্ষেত্রেও।
এইরকমই হয়। ক্ষমতার যে কতো রকম উপায় আছে মানুষ কিনে নেবার! তাই দেখবেন ভাঙা কুলোতে ছাই ফেলবার চেষ্টায় নিজের চেহারাই না ধূলি ধূসরিত হয়ে যায়! অতীতের ভুল শুধরে নতুন স্বপ্ন দেখা যদি এতোই কঠিন হয় তাহলে রাকেশ টিকায়েতের চোখের জলের কোনো মূল্য আছে কি নেই, এই প্রশ্ন রইল।
এলেবেলে | 202.142.***.*** | ২৫ মার্চ ২০২১ ২০:৫২104075পিটিস্যার, সিপিএম বর্তমানে বাম নয় এবং শক্তিশালীও নয়। কাজেই ও প্রসঙ্গটাই অবান্তর। বামেরা কীভাবে শক্তিশালী হবেন, তা তর্কযুদ্ধ করে ঠিক করুন। এই ফাঁকে সমালোচকদের দাগানোর 'অব্বেশ' অব্যাহত রাখুন। ফাঁকতালে ফাঁকা মাঠে বিজেপি গোল দিয়ে যাক।
ভুলে যাবেন না কং-এর সঙ্গে বামেদের গত লোকসভায় জোট হয়নি এবং আগামী লোকসভাতেও হবে না। এভাবে চালাকি দিয়ে মহৎ কর্ম কোনও রাজনৈতিক দল বারেবারে করতে চাইলে আমার তরফ থেকে চরম খিল্লি ছাড়া আর কিছুই জুটবে না।
PT | 203.***.*** | ২৫ মার্চ ২০২১ ২১:১১104076সিপিএম যে বাম "নয়" এটা বহু চর্চিত। নতুন কিছু বললেন না। শক্তিশালী অন্যন্য "বাম" দলের তুলনায়।
তবে পবতে কি কোন বাম দল আছে? নাকি কোন কালেই ছিল না?
অথবা অ-বাম সিপিএমকে বাদ দিয়ে কোন বাম গোষ্ঠি মাথা তুলছে না কেন?
কোন একটা চ্যানেলে বিতাড়িত প্রসেনজিৎ প্রত্যাশা মতই সিপিএমকে গাল দিচ্ছিল বিজেপির উত্থানের জন্য। তিনোপ্রেমীর মত শুনতে লাগল।
ধুর | 162.244.***.*** | ২৫ মার্চ ২০২১ ২২:৫৪104082এলেবেলে বাক্য পড়ে মানে বুঝতে শেখেননি। 'অফিশিয়াল' বামেদের 'অফিশিয়াল' অবস্থানকে ব্যাঙ্গ করে উনি সূর্যকান্ত মিশ্রের যে পোস্টটা দিয়েছেন, সেখানে বলা হয়েছে, "যে তিনোমুল নেতার হাত থেকে বাঁচতে আমরা বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলাম, সেই নেতাই এখন বিজেপিতে।" এখানে 'আমরা' অর্থ বামেরা নয়। সাধারন মানুষ। পোস্টেও বক্তব্যের পাশে সাধারন মানুষের ছবিই দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সাধারন মানুষ বিজেমুলের ষড়যন্ত্র চিনে ফেলেছে। সূর্যকান্তবাবু সেটাই বলতে চেয়েছেন।
এলেবেলে | 202.142.***.*** | ২৫ মার্চ ২০২১ ২৩:১০104083হ্যাঁ, সে তো বটেই। তিনোর হাত থেকে বাঁচতে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্যই যে সাত শতাংশ, সেটা মানে এলেবেলে বোঝেই না! বুঝদাররা অবশ্য ঠিক বুঝে ফেলেছেন!! স্বাভাবিক।
//তবে পবতে কি কোন বাম দল আছে? নাকি কোন কালেই ছিল না?
অথবা অ-বাম সিপিএমকে বাদ দিয়ে কোন বাম গোষ্ঠি মাথা তুলছে না কেন?//
PT | 203.***.*** | ২৫ মার্চ ২০২১ ২৩:৩৩104084"আর্থিক দিক দিয়ে স্বয়ম্ভর হওয়া এবং পরিবেশকে বিঘ্নিত না করে হওয়া"
এতো শুনছি বহুদিন ধরে। কাঁঠালের আমসত্বের খোঁজ চালু থাকুক।
এলেবেলে | 202.142.***.*** | ২৬ মার্চ ২০২১ ০০:১০104086আপনি কাঁঠালের আমসত্ত্ব বলতেই পারেন কারণ এই ন্যারেটিভটা আপনার পছন্দসই নয়। যদিও একবারের জন্যও জানতে চাননি যে কীভাবে এটা সম্ভবপর হতে পারে। যাক, বাদ্দিন।
PT | 203.***.*** | ২৬ মার্চ ২০২১ ১০:১২104100বাদ দেব কেন? বিশুদ্ধ মলয় বাতাসও বইবে আবার প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যভার করা যাবে, আদিবাসীদের জমি নেওয়া হবেনা অথচ ধাতুর নিষ্কাশন করাও যাবে এইরকম ইউটোপিয়ন অবস্থান কে না চায়। তবে কিনা ফাঁকা তাত্বিকতায় ক্লান্তি আসে। দু একটা উদা দিয়ে দেখান। যখন কর্পোরেটরা মোটামুটি দিল্লীর চুলের মুঠি ধরে রেখেছে (শুধু আজকে নয়) সেখানে শুধু পবতে এমত আর্থিক ব্যব্স্থা কি ভাবে চালু করা যাবে সেটা জানতে সত্যি মন্চায়।
এলেবেলে | 202.142.***.*** | ২৬ মার্চ ২০২১ ১৭:৪৯104113নতুন টই খুলুন, চুটিয়ে লিখি। দেখুন সেটা ফাঁকা তাত্ত্বিকতা কি না। এই টই অতটা গুরুত্ব ডিজার্ভ করে না, বিশেষত লেখকের গোঁসা হওয়ার পরে আরও না।
তথ্যবহুল বাস্তববাদী আলোচনা। সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতায় বামেদের বিরোধিতা আজও উজ্জ্বল। তবুও গত লোকসভায় তাঁদের ভোটের চালান হওয়া অবশ্যই এক বড় বিচ্যুতি। এই ভোটে সেই চালান কতোটা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম সেটিও খুব বড়ো প্রশ্ন। আরও একটা বিষয়ে কিছুটা আত্মমন্থন করা উচিত। দীর্ঘ সাড়ে তিন দশকের শাসনে প্রান্তিক ও বহুজন সমাজকে শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতা নয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক এবং বিশেষকরে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে কেন সেভাবে ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা হিসেবে একটা ভদ্রস্থ সংখ্যায় পৌঁছানোয় ব্যর্থ হল বামশাসন। আব্বাস সিদ্দিকি নিয়ে যে বিরোধিতা সেটি অবশ্যই দুর্ভাগ্যপুর্ন। এবং সেটিতে তাচ্ছিল্য প্রবল।
এক্রামুল হক শেখকে জানাই আমি সহমত। আরও অনেক কিছু করা যেত, আত্মমন্থনের জায়গাও প্রচুর। বামশক্তি না পারলে সে কাজ আর কে করবে ! সমগ্র দেশের জন্যই বামশক্তির আত্মমন্থন এবং উত্থান একান্ত জরুরি।
লিভার | 202.142.***.*** | ০৩ মে ২০২১ ১৩:১৭105397হেঁইয়ো