লুডভিগ এডেলস্টাইন ইউরোপের প্রাচীন মেডিসিনের মান্য গবেষক। তাঁর বহুল পঠিত গ্রন্থ Ancient Medicine (ed. Owsei Temkin and C. Lilian Temkin, 1987) হিপোক্রেটিয় “ওথ”-এর ক্ষেত্রে রেফারেন্স হিসেবে কাজ করে। এডেলস্টাইন তাঁর গ্রন্থের শুরুতেই জানাচ্ছেন – “The Hipocratic Oath clearly falls into two parts.” (পৃঃ ৭) এই দুটি অংশ কি কি? তিনি বলছেন – প্রথম অংশ হচ্ছে যেখানে ছাত্রদের শিক্ষকের ও তাঁদের পরিবারের প্রতি কর্তব্য এবং চিকিৎসার জ্ঞান ছড়িয়ে দেবার ক্ষেত্রে ছাত্রদের বাধ্যবাধকতার প্রশ্ন। দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবশ্যপালনীয় কিছু নিয়মকানুনের কথা।
এই ওথ-এর এক জায়গায় রয়েছে – “Nor shall any man's entreaty prevail upon me to administer poison to anyone; neither will I counsel any man to do so. Moreover, I will give no sort of medicine to any pregnant woman, with a view to destroy the child.
Further, I will comport myself and use my knowledge in a godly manner.”
Poison বা বিষ দেবার অংশটি নিয়ে বিভিন্ন শতাব্দীতে, বিশেষত আধুনিক সময়ে, গবেষকদের মধ্যে বিতর্ক হয়েছে – সে সময়কালের গ্রীসে কি আত্মহত্যা করা বিষ প্রয়োগে মেরে ফেলা একটি সাধারণ প্রাকটিস ছিল, নাহলে এ প্রসঙ্গ আসবে কেন? অ্যারিস্টোটল, প্লিনি, ট্যাসিটাস, অ্যাপুলিয়াস (Apuleius) এবং থিওফ্র্যাসটাসের মত দার্শনিকদের রচনা উদ্ধৃত করে এডেলস্টাইন দেখিয়েছেন – “If the sick felt that their pains had become intolerable, if no help could be expected, they often put an end to their own lives.” আমাদের এক্ষেত্রে মনে আসবে নিশ্চয়ই ইউথ্যানাশিয়া নিয়ে তুমুল বিতর্কের কথা।
পরবর্তী প্রশ্ন আসবে এই ওথের ভিত্তিভূমি হিসেবে কোন দার্শনিক অবস্থান কাজ করেছিল। এডেলস্টাইনের সম্ভাব্য ব্যাখ্যা – “Pythagoreanism, then, remains the only philosophical dogma that can possibly account for the attitude advocated in the Hippocratic Oath.” (পৃঃ ১৭) এ প্রতিপাদ্য বর্তমান গবেষকেরা অনেকেই গ্রহণ করছেন না। এ নিয়ে পরে আলোচনা করেছি।
যা হোক, আমরা বর্তমানের ভারতবর্ষে ফিরি। ১৮৭ বছরের প্রাচীন ভারতের তথা এশিয়ার প্রথম মেডিক্যাল কলেজের – ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজ – প্রথম বর্ষের ছাত্রদের ২৩.০২.২২ তারিখে প্রথম ক্লাসের আগে “চরক শপথ” পাঠ করানো হয়েছে। হিন্দুস্থান টাইমস পত্রিকার খবর হয়েছে – “Calcutta Medical College students read out ‘Charak Shapath’ during induction (২৩.০২.২২)”। চিকিৎসক মহলের প্রায় সর্বস্তর থেকে এ বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানানোর ফলশ্রুতিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাণ্ডবিয়া আইএমএ-র প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছেন – “Charak Shapath (Oath of Charak) will not be forced on medical students and will be optional, Union Health Minister Dr Mansukh Mandaviya assured an IMA delegation on Monday.” (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, “Charak Shapath optional, will not be forced: Mandaviya assures IMA”, ২২.০২.২২)
এতসবের কারণ কী? কয়েকদিন আগে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন থেকে আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত “হিপোক্রেটিক ওথ” আর নয়। একে প্রতিস্থাপিত করা হবে একেবারে নির্ভেজাল ভারতীয় “চরক শপথ” দিয়ে। এতে একদিকে হয়তো আমাদের নিজস্বতার এক দৃঢ় বিজ্ঞাপন হবে, অন্যদিকে একটি জাতীয়তাবাদী মানসিকতার নবজাগরণ ঘটবে। কিন্তু মুশকিল হল “চরক শপথ” বলে যা বলা হচ্ছে সেটি কর্তিত এবং নবনির্মিত। তাহলে চরক শপথ কী? এ নিয়ে আলোচনায় প্রবৃত্ত হব।
আজ ক্যালকাটা মেডিক্যাল কলেজে যে শপথ নেওয়ানো হয়েছে সে শপথটি এবং এর শেষ বাক্যটি নীচে দিলাম। দেখা যাবে দ্বিজত্বের ধারণাকে প্রসারিত করা হয়েছে। রাষ্ট্র নিজের ক্ষমতাবলে নতুন শব্দার্থ নির্মাণ করে। রাষ্ট্র সবাইকে তার কাঠামোর মধ্যে আত্তীকৃত করতে চায়।