এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • জামাত-উলেমায়ে হিন্দ

    বৈজয়ন্ত চক্রবর্তী
    আলোচনা | বিবিধ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ | ১০৩৩ বার পঠিত
  • (এই লেখার সিংহভাগ তথ্যসূত্র ইন্টারনেট ঘেঁটেঘুঁটে যোগাড় করা। আমার ব্যক্তিগত মত হল কেবল ইন্টারনেটের মালমশলা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধ লেখা অসম্ভব। কাজেই এই লেখাটিকেই পাঠক/ পাঠিকা যেন খসড়া লেখা হিসেবেই গ্রহণ করেন।)

    ইদানীং এই সংগঠনটির নাম এবং তাদের বঙ্গীয় নেতা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর নাম পশ্চিমবঙ্গের যাবতীয় সংবাদপত্রে দেখা যাচ্ছে। নন্দীগ্রামে গন্ডগোল শুরু হওয়ার আগে এই সংগঠনটির নাম মুসলিম রাজনীতিতে বিশেষ ওয়াকিবহাল ব্যক্তি ছাড়া কেউ জানতেন বলে মনে হয় না। টি ভিতে দেখছিলাম সিঙ্গুরের কাছে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর রাজনৈতিক সভামঞ্চের পিছনে জ্বল্‌জ্বল্‌ করছিল সাম্রাজ্যবাদবিরোধী স্লোগান। প্রাক্তন বামপন্থীদের আধা ফেলে আসা এবং আধা ধরে থাকা রাজনৈতিক ভাষা ও প্রকরণ নিয়ে অবামপন্থীদের জমিদখলের এই লড়াই ভারতে বামপন্থী আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে যারা মোটামুটি চর্চা করেছেন, তাদের কাছে কৌতুহলপ্রদ লাগবে। রাজনৈতিক আঙ্গিকের হাতবদল নিয়ে উৎসাহীরা সিরিয়াস গবেষণার কথাও ভেবে দেখতে পারেন। কিন্তু জামাত-উলেমায়ে হিন্দের উত্থান শুধুমাত্র অ্যাকাডেমিক গবেষণার বিষয় নয়। এই আকস্মিক উত্থান পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘস্থায়ী উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই যখন এই সংস্থাটির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে জল ঘোলা করার চেষ্টা চলছে, তখন কোনো দ্বর্থ্যবোধ ছাড়া দু একটি কথা পরিষ্কারভাবে বলা দরকার। বিধিসম্মত সতর্কীকরণ হিসাবে বলে নেওয়া দরকার যে কৃষিজমি অধিগ্রহণ বিরোধিতায় জামাতের ভূমিকা এই লেখার বিষয়বস্তু নয়। তার কারণ একটাই। অর্থনৈতিক দাবীদাওয়ার আন্দোলনে কোনো ধর্মীয় সংগঠনের অত্যুৎসাহী ভূমিকা আরও একটু বৃহত্তর প্রেক্ষাপট থেকে দেখা দরকার। ঠিক যেভাবে আর এস এসের বিদেশী পুঁজির বিরুদ্ধতা আর এসে এসের সামগ্রিক ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা প্রয়োজন।

    অতীত
    ---------
    জামাতের সাথে কংগ্রেসের গাঁটছড়া বাঁধা হয় খিলাফৎ আন্দোলনের সময়। গান্ধীজি খিলাফৎ আন্দোলনের সূত্র ধরে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যপ্রতিষ্ঠার কথা ভেবেছিলেন। যদিও খিলাফৎ আন্দোলন নিয়ে আমাদের শিশুপাঠ্য ইতিহাস বইতে অনেক ভালো ভালো কথা লেখা হয়ে থাকে, খিলাফৎ আন্দোলনের অন্ধকার দিক নিয়ে বেশি কথা বলা হয় না। গত শতাব্দীর প্রথম দুই দশকে পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদীদের বাড়বৃদ্ধি ঘটছে এবং পুরোনো অটোমান সাম্রাজ্যের ধীরে ধীরে পতন হচ্ছে। এই অটোমান সম্রাটেরা ছিলেন মুসলিম জগতের খলিফা অর্থাৎ ইসলামীয় জগতের একমেবাদ্বিতীয়ম অধিপতি। তবে আঞ্চলিকভাবে রাজনৈতিক শক্তি ছিল সুলতানদের হাতে এবং ধর্মীয় শক্তি উলেমাদের হাতে। একদিকে যখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যাবাদের প্রতাপে অটোমান সাম্রাজ্যের যাই যাই অবস্থা, অন্যদিকে অটোমান সম্রাটদের অন্দরমহল তুর্কীতে গড়ে উঠেছে কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে ধর্মনিরপেক্ষ তুর্কী জাতীয়তাবাদ। অটোমান সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় আধিপত্য, অর্থাৎ খিলাফৎ রক্ষার উদ্দেশ্যে গড়ে উঠেছিল খিলাফৎ আন্দোলন। যার চরিত্র সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী নয়, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী, এবং তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের স্থিতাবস্থা রক্ষার স্বার্থে। ১৯১৯ সালে ভারতীয় উলেমারা, যাদের মধ্যে দেওবন্দী উলেমারা ছিলেন প্রধান, যখন জামাত প্রতিষ্ঠা করেন তাদের লক্ষ্য ছিল:

    " To guide the followers of Islam in political and non-political with the following objectives:
    -To guide the followers of Islam in political and non-political matters from religious point ofview.
    -To defend on Shariat grounds, Islam, centres of Islam (Holy places of Islam and the seat of Khilafat, Islamic rituals and customs, and Islamic nationalism against all odds injurious to them.
    -To establish and protect the general religious and national rights of the Muslims.
    -To organize the Ulema on a common platform.
    -To organize the Muslim community and to launch a program for its moral and social reform. '

    এই তথ্যটি পাচ্ছি পাকিস্তানের দুই অধ্যাপক কে এন চৌধুরি এবং এন ইরশাদ রচিত The Role of Ulema and Mashaikh in the Pakistan Movement প্রবন্ধ থেকে। জামাত পরবর্তীকালে অসহযোগ আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যোগদান করে। কিন্তু গোঁড়া উলেমাদের দ্বারা পরিচালিত এই মুসলিম সংগঠনের সমান্তরালে গড়ে উঠছিল ইংরাজি-শিক্ষিত, ধর্মনিরপেক্ষ মুসলিমদের রাজনৈতিক সংগঠন যা পরবর্তীকালে মুসলিম লিগ বলে পরিচিত হবে। আয়েষা জালাল রচিত মহম্মদ আলি জিন্নার প্রামাণ্য জীবনী The Sole Spokesman থেকে জানতে পারি যে গান্ধীর সাথে জিন্নার সংঘর্ষ শুরু হয় খিলাফৎ আন্দোলনের প্রতি কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে। জিন্নার মতে খিলাফৎ আন্দোলন স্রেফ ধর্মীয় জিগিরকে উস্কানি দেওয়া, যা কংগ্রেসের মত ধর্মনিরপেক্ষ সংগঠনের পক্ষে অনুচিত। এর পরে জামাত ভারতপন্থী জামাত-উলেমায়ে হিন্দ এবং জামাত-উলেমায়ে ইসলামে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাবে। জিন্না নীতিগতভাবে ধর্মনিরপেক্ষ হলেও জঘন্য সিনিকতার সাথে মুসলিম ধর্মানুভূতি ব্যবহার করবেন যে কোনো কৌশলে পাকিস্তান হাসিলের প্রয়াসে এবং তার যথাযোগ্য বাহন হবে জামাত-উলেমায়ে ইসলাম। যদিও পাকিস্তান সৃষ্টির উষালগ্নেও মুসলিম লিগের রাজনৈতিক ভরকেন্দ্রে থাকবেন ইংরাজি-শিক্ষিত মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত মুসলিম নেতৃবৃন্দ। কংগ্রেস মুসলিম লিগের এই প্রবল জনসমর্থনের মোকাবিলা করার চেষ্টা করে "জাতীয়তাবাদী মুসলিম' মৌলানা আবুল কালাম আজাদ এবং তাঁর আশীর্বাদধন্য জামাত-উলেমায়ে হিন্দকে লড়িয়ে দিয়ে। উলেমাদের পক্ষেও কংগ্রেসের নেতৃত্ব, প্রধানত: গান্ধীজি নিরাপদ ছিলেন কারণ তাঁরা কোনোদিনই মুসলিম সমাজের স্থিতাবস্থায় আঘাত করার চেষ্টা করতেন না। অন্যদিকে জিন্নার পশ্চিমী হাবভাব উলেমাদের একাংশের নাপসন্দ হওয়ারই কথা। কংগ্রেস নির্বাচনে জামাতকে ব্যবহার করে এই কথা প্রচার করার জন্য যে জিন্নাসাহেব কতটা অ-মুসলিম।

    কাজেই জামাত-উলেমায়ে হিন্দ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অংশগ্রহন করেছিল এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে ছিল বলে সাতখুন মাফ হয়ে যায় না। জন্মলগ্ন থেকেই জামাত একটি গোঁড়া ধর্মীয় সংগঠন যাঁরা ধর্মীয় স্থিবস্থার পক্ষে। জাতীয়তাবাদ এবং গোঁড়া মৌলবাদের সহাবস্থান আয়াতোল্লা খোমেইনি থেকে বীর সাভারকর পর্যন্ত সর্বত্র। কাজেই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে জামাতের ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে কি প্রমাণিত হচ্ছে খুব একটা বোধগম্য নয়।

    বর্তমান
    ---------
    ইদানীংকালের টুকরো কিছু খবর জুড়ে জামাতের সাম্প্রতিক প্রোফাইল তৈরি করা যাক। গত দুই তিন বছর ধরে জামাত উলেমায়ে হিন্দ সংবাদপত্রের শিরোনামে। তার আগে জামাত মানে ছিল জামাত উলেমায়ে ইসলাম। জামাত উলেমায়ে হিন্দ সংবাদপত্রের শিরোনামে উঠে এসেছিল গত অসম নির্বাচনের সময়। তরুণ গগৈ সরকারের সাথে সমঝোতা ভেস্তে যাবার পরে কুড়িটি সংখ্যালঘু সংগঠন অসম ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট গঠন করে যার সভাপতি হন অসম জামাত উলেমায়ে হিন্দের মৌলানা বদরুদ্দিন আজমল। বদরুদ্দিন আজমলের খ্যাতি বিরাট ধনী ব্যবসায়ী হিসেবে যার সুগন্ধির ব্যবসা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। দিল্লির জামা মসজিদের সৈয়দ মৌলানা শাহি ইমাম বুখারি এ ইউ ডি এফ প্রার্থীদের হয়ে অসমের গ্রামেগঞ্জে প্রচার করেন। মূল বক্তব্য ছিল যে মুসলিমদের জন্য বি জে পির থেকে কংগ্রেস বেশি বিপজ্জনক। জামাতের সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক মৌলানা মামুদ মাদানি সমাজবাদী পার্টির সমর্থনে রাষ্ট্রীয় লোকদলের প্রার্থী হয়ে রাজ্যসভার সদস্য হয়েছেন। বারাণসীতে বিস্ফোরণের পরে জামাত সেই বিস্ফোরনের নিন্দা করে। এ ছাড়াও দেখছি জামাতের নেতৃস্থানীয় উলেমা মুফতি হবিবুর রহমান মুসলমদের কাছে আবেদন করছেন ইদের সময় গোহত্যা না করতে কারণ তাতে হিন্দু সেন্টিমেন্টে আঘাত পড়বে। তার জবাবে আর এস এসের মুখপাত্র রাম মাধব বলছেন- " It was long overdue, with this, one of the major issues of contention has disappeared. ' বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রবীণ টোগাড়িয়ার মতে বলেছেন এই মূহুর্ত ভারতের গত হাজার বছরের ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য " historic milestone' । উল্লেখযোগ্য খবর হল ২০০৪ সালে আর এস এস এবং জামাত উলেমায়ে হিন্দ হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের জন্য বৈঠকে বসছে। জামাতের পক্ষ থেকে সেই বৈঠকে অংশ নেন মৌলানা নিয়াজ ফারুকি এবং আব্দুল হামিদ নোমানি। আর এসে এসের পক্ষ থেকে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন ইন্দ্রসেন কুমার। বৈঠকের পরে যুগ্ম বিবৃতি দেওয়া হয়- " In our discussion, we found that our country, ancestors and culture are common. The basis of patriotism or nationalism is the place of birth, not religion. ' আরও জানতে পারছি যে জামাত এবং আর এস এসের পারস্পরিক সৌহার্দ্য বেশ দীর্ঘকাল ধরে চলেছে। মিলি গেজেটে শামসুল ইসলামের প্রবন্ধ থেকে এই সৌহার্দ্যমূলক আঁতাতের বিবরণ পাচ্ছি। কৌতুহলীরা দেখতে পারেন । এই সব ডামাডোলে সিদ্দিকুল্লা সাহেবের নাম খুব একটা পাচ্ছি না। শুধু সানিয়া মির্জা যখন কলকাতায় টুর্নামেন্ট খেলতে আসেন, সিদ্দিকুল্লা সাহেবকে জিজ্ঞাসা করা হয় জামাত সানিয়াকে কোনো হুমকি দিয়েছে কি না। সিদ্দিকুল্লা সাহেবের কথায়: " These are rumours, we have not threatened to stop Sania or anybody else from playing. Though it is true that the kind of dress Sania wears offends us - we don't expect a Muslim girl to wear such skimpy clothes in public. '

    নন্দীগ্রামের পরে সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী প্রতিদিন সংবাদশীর্ষে। প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যখন সিঙ্গুরে প্রাথমিক জমি অধিগ্রহণবিরোধী আন্দোলন হচ্ছে, তখনও জামাত এই আন্দোলনে কোনো সক্রিয় অংশীদার নয়। এই ডামাডোলের বাজারে আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর সহসা বোধোদয় হল যে জামাত একটি সাম্প্রদায়িক সংগঠন। নন্দীগ্রামপর্বের আগে জামাতকে দরাজ সার্টিফিকেট বিলি করা সময় এই বোধোদয় হয় নি কেন কে জানে? নাকি সেটাও ছিল "ঐতিহাসিক ভুল'? তবে এখনও সি পি এমের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা সাহেবদের তোল্লাই দিয়ে যাচ্ছেন। আপাতত: সি পি এমের অন্ধের যষ্ঠি হয়েছে আর একটি ভুঁইফোড় সংগঠন জামাত উলেমায়ে বাংলা। বিপদে বুদ্ধিভ্রংশের এর থেকে ভালো উদাহরন হয় না। সি পি এমেরই কিছু মুসলিম নেতা যদিও এই বিপজ্জনক গুটি চালাচালি থেকে নেতৃত্বকে বিরত করার চেষ্টা করেছিলেন। ধর্মীয় সত্তার মুখোমুখি এলেই ভারতীয় বামপন্থীদের দোলাচলতা ইতিহাস প্রসিদ্ধ। ১৯৪৬ সালে রজনীপাম দত্তের জোরালো চেতাবনি না এলে কমিউনিস্ট নেতৃত্ব বুঝতেই পারতেন না যে মুসলিম লিগের নেতৃত্ব ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের তাঁবে বেড়ে ওঠা ধনীয় বুর্জোয়া শ্রেণী যারা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে সাম্প্রদায়িক হানাহানি ব্যবহার করতে বিন্দুমাত্র কুন্ঠিত নয়। উলটোদিকে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী নেত্রী এখনও বি জে পির হাত ধরে। তাই হয় তো জামাতের হাতে সরাসরি হাত রাখতে একটু কুন্ঠা আছে। ওনাকে জামাত-আর এস এস বৈঠকের কথা জানিয়ে দিলেই হয়। যদিও ভূমি উচ্ছেদ আন্দোলনে মমতা এবং নকশালপন্থীরা একসাথে আছেন, আবার মমতা এবং বি জে পিও একসাথে আছেন। অন্যদিকে আছেন জামাত এবং নকশালপন্থীরা। আরও কোথায় কে যে কোন খেলা খেলছেন ভাবি বসে সেই কথাটাই। বিষে বিষে বিষক্ষয়ের এই ওয়ান আপম্যানশিপে শিল্পায়ন হোক বা না হোক, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক আত্মহত্যার পথ ক্রমশ: প্রশস্ততর হচ্ছে।

    ভবিষ্যৎ
    ------------
    তেভাগা থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গে কৃষকের অধিকাররক্ষার যাবতীয় আন্দোলনে কখনও জামাত উলেমায়ে হিন্দের নাম উঠে আসে নি। জাতীয়তাবাদের তকমা থাকা সত্ত্বেও অতীত ও বর্তমান দেখে বোঝা যায় জামাত একটি গোঁড়া ধর্মীয় সংগঠন, যার নেতৃত্বে রয়েছেন প্রভাবশালী ধনী মুসলিম নেতৃত্ব। একসময় জামাত ছিল রাজনৈতিক সংগঠন। পরবর্তীকালে এই সংগঠন মূলত: ধর্মীয় এবং সামাজিক কাজে নিজেদের নিয়োজিত করে। কিন্তু সম্প্রতি আঁতাতের রাজনীতির ঘোলাজলে মাছ ধরতে জামাতের নেতৃবৃন্দের সাগ্রহ যোগদান চোখে পড়ার মত। হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি রক্ষার জন্য জামাত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলার পরিবর্তে আর এস এসের সাথে পারস্পরিক দেওয়া নেওয়াতেই বেশি বিশ্বাসী। এহেন একটি সুবিধাবাদী রক্ষণশীল সংগঠনকে কৃষকের স্বার্থরক্ষার আন্দোলনের পুরোভাগে দেখে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। কিন্তু তার সাথে সাথে ভয়ও হয়। ধর্মীয় অস্তিত্ব এবং ধর্মীয় পরিচয় বাঙালী সমাজের শিকড়ে গেড়ে আছে। আমাদের রাজ্যে দাঙ্গা হয় না বলে আত্মপ্রসাদ বোধের কোনো সুযোগ নেই। বোতলের ভূত বেরোতে বেশি সময় লাগবে না। ১৯৪৬ সালের ২৯শে জুলাই অভাবনীয় ডাক তার ধর্মঘটে হিন্দু-মুসলিম সম্মিলিতভাবে রাস্তায় নামে। রাস্তায় রাস্তায় একসাথে উড়েছিল কংগ্রেস-মুসলিম লিগ-কমিউনিস্ট পার্টির পতাকা। তার কয়েক সপ্তাহ বাদেই ১৬ই অগাস্ট। যাবতীয় ঐক্যবোধ ভুলে হিন্দু এবং মুসলিম একে অন্যের দক্ষ ঘাতক। এই বোতল থেকে জিন বেরিয়ে পড়ার আশঙ্কা বুকে নিয়ে যে এখনও বেঁচে থাকতে হয়, তা বামপন্থী আন্দোলনের চরম ব্যর্থতা। কিন্তু এখনকার ফ্যাশন অনুসারে ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেও ভয় পায় না। অতএব আমাদের সাম্মানিক বুদ্ধিজীবী এবং শখের বিপ্লবীরা প্রমাণ করেই ছাড়বেন জামাত উলেমায়ে হিন্দ কৃষকের স্বার্থরক্ষায় কত নিবেদিতপ্রাণ। সমস্যা হল পশ্চিমবঙ্গে দুই ধরনের বুদ্ধিজীবী আছেন। একদল, মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটেন, কারণ রাজার সামনে চোখ তোলা পাপ। আর একদল, আকাশের দিকে তাকিয়ে হাঁটেন, কারণ আকাশে বিপ্লবের আকাশকুসুম স্পষ্ট দেখা যায়। রাস্তার দিকে চোখ মেলে চলা রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবীদের বড়ই আকাল। কাজেই শৌখিন বিপ্লবী, স্বঘোষিত বিদ্রোহী এবং বিভিন্নজাতের কংগ্রেসি সংগঠনের দাক্ষিণ্যে ও ছত্রছায়ায় জামাতের মত সংগঠনের বাড়বৃদ্ধি অনিবার্য। অপ্রত্যক্ষভাবে তাতে উসকানি যোগায় সরকারী বামপন্থীদের যাবতীয় প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক ব্যর্থতা। শুধু এঁরা সবাই যেন মনে রাখেন জামাত উলেমায়ে হিন্দ, জামাত উলেমায়ে বাংলা, জামাত উলেমায়ে ইসলাম এবং আর এস এস, বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ একই পয়সার এপিঠ ওপিঠ। এক কান টানলে অন্য কান স্বাভাবিকভাবেই আসে। দরিদ্র কৃষকদের কথা ভেবেই যেন এই কথাটি তাঁরা মনে রাখেন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ | ১০৩৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন