গত বছর আমার ছেলে মারা যাবার পর আমি ফেসবুক থেকে বেরিয়ে যাই। তখন অনেকেই জানতে পারেন নি আমার ছেলের সঙ্গে ঠিক কী হয়েছিলো। এখন কিছু রিপোর্ট হাতে আসার পর আমি ডকুমেন্ট করে রাখছি ঠিক কী ঘটেছিলো যার ফলে একটা ১২ বছরের ছেলের জীবন হঠাৎ করে শেষ হয়ে যায়।
২০১৮ সালের মে মাস থেকে আমরা টরোন্টোর Yonge আর Davisville অ্যাভেনিউর ক্রসিং এ থাকতে শুরু করি। আমার ছেলে, অর্ক চক্রবর্তী, স্থানীয় জুনিয়র পাবলিক স্কুলের গ্রেড ফাইভের ক্লাসে যেতে শুরু করে। সেখানে তার সঙ্গে প্রথমেই আলাপ হয় সেইসব ছেলেদের সঙ্গে যারা তাকে পরবর্তীকালে bully করবে। তারা অর্ককে আশ্বাস দিয়েছিলো যে সে যদি তাদের কথা শুনে চলে তাহলে নতুন স্কুলে তারা অর্ককে র্যাগিং বা bully র থেকে বাঁচাবে। অর্ক সেটা বিশ্বাস করে। সেই ছেলেরা এও বলে যে যদি অর্ক ওদের প্রস্তাব না মানে, তাহলে তার ফল ভালো হবেনা। তারপর থেকে অর্ক সেই ছেলেদের স্কুলের এবং Kumon অ্যাসাইনমেন্ট করে দিতে এবং তাদের বাড়িতে এনে অভিভাবকদের অনুপস্থিতিতে ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে দিতে শুরু করে।
গ্রেড সিক্সে আমার ছেলেকে স্থানীয় মিডল স্কুলে যেতে হয়। অর্ক তার বাবার সঙ্গে প্রত্যেক উইকেন্ডে স্কাইপে কথা বলত। আমরা দুজনেই লক্ষ্য করি যে ঐ ছেলেরা অর্ককে বাড়িতে মিথ্যা কথা বলতে শেখাচ্ছে। ব্যাপরটার মধ্যে বিপদ আঁচ করে আমি স্কুলকে চিঠি লিখি। একইসঙ্গে আমি, ঐ দলটির সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করার জন্য আমি অর্ককে স্কুলের পরের অন্যান্য কিছু অ্যাক্টিভিটিতে ব্যস্ত করে দিই।
২০১৮ সালের ২৪শে অক্টোবর আমি শুনতে পাই যে ছেলের বন্ধুরা সমস্ত পিংপং বল হারিয়ে ফেলায় খেলতে যেতে পারছেনা। আমি আমার ছেলেকে তার বাঙালি বন্ধুর কাছ থেকে পিংপং বল নিয়ে আসতে বলি। অর্ক তার বন্ধুকে ফোন করে এবং বলটি ফিরিয়ে দিতে বলার পরেই বন্ধুর মা ফোন কেড়ে নিয়ে আমার ওপর চিৎকার করেন। এরপর আমার অনুপস্থিতিতে তিনি আমার ছেলের নিজস্ব ফোনে ফোন করে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেন। পরেরদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে (২৫শে অক্টোবর, ২০১৮) সেই বাঙালি ছেলেটি "I'll smash your face" বলে আমার ছেলেকে শাসায়। এরপর স্কুলেও বাঙালি আর ইরানিয়ান ছেলে দুটি সুপারভাইজড লাঞ্চের সময় অর্ককে শাসায়। আমার ছেলে খুব ভয় পেয়ে গিয়ে স্কুলের ভিপিকে ব্যাপারটা জানায়। ভিপি আমাকে ফোন করার প্রয়োজন বোধ করেন নি। সেদিনই বাড়ি ফেরার পথে আমার ছেলেকে নির্মমভাবে পেটানো হয়। তাকে ইরানিয়ান ছেলেটি, যে কিনা শরীরে অর্কর তিনগুণ বড়ো, লাথি মারে। আমি ছেলেকে আমার বাড়ির সামনে পড়ে থাকা অবস্থায় পাই। আমি 911 কল করি, এবং সানিব্রুক (Sunnybrook) হাসপাতালে নিয়ে যাই ও স্কুলকে লিখে জানাই। স্কুলের প্রিন্সিপাল হাসপাতালেই আমাদের দু’জনকেই ফোন করেন এবং আমাদের দু’জনকেই ঐ দুটি ছেলের পরিবারের সঙ্গে কোনরকম যোগাযোগ না রাখতে পরামর্শ দেন। তিনি স্কুলের মধ্যে আমার ছেলেকে নিরাপদ রাখবেন বলে আশ্বাস দেন। আমাদের TDSB সমাজকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগও করিয়ে দেন কাউন্সেলিং এর জন্যে। আমি জানিনা ঐদু’টি ছেলে স্কুল কোন শাস্তি বা কাউন্সেলিং এর পরামর্শ পেয়েছিলো কিনা। আমি স্বীকারোক্তি থেকে জেনেছি যে সে অর্কর তলপেটে লাথি মারে।
বুলিইং এর ফলে হাসপাতালে যাওয়ার পর থেকেই ঐ ভদ্রমহিলা আমার ছেলের কাউন্সেলিং করছিলেন। উনি আমার পুচাইকে ভালোবাসতেন। কিন্তু ২০১৯ সালের ২০শে জুন আমি তাঁর কাছ থেকে জানতে পারি যে, যে ঘটনার জন্য আমি পুলিশে খবর দিই এবং হাসপাতালে যাই সেই ঘটনা তাঁকে জানানো হয়নি। স্কুলের রিভিউ বোর্ডে আমাকে জানানো হয় যে আমার ছেলেকে কাউন্সেলিং এ পাঠানো হয়েছিলো কারণ সে তার আবেগ বশে রাখতে পারতো না। কিন্তু, যতক্ষণ না আমি নিজে অভিযোগ করেছি, কখনই স্কুল বা অন্যান্যদের থেকে কোন অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। সে কখনও কারোর ক্ষতি করেনি। তবুও, স্কুলের মতে কাউন্সেলিং তারই দরকার ছিলো, তাকে যারা bully করেছিলো তাদের নয়। তাদের কখনও আবেগ বশে রাখতে সমস্যা হয়নি। তাদের কোন কাউন্সেলিং দরকার হয়নি।
এরপর এই ছেলেরা অর্ককে মৌখিকভাবে উস্কাতে থাকে, এলাকায় আমার সম্পর্কে গুজব ছড়াতে থাকে, সামান্য পিংপং বলের জন্য অর্কর মা স্কুলে রিপোর্ট করেছে এইসব বলতে থাকে -- ফলে ছেলে কয়েকটি বন্ধু হারায়। আমি সিঙ্গল মাদার বলে আমার সম্পর্কে ঐ ছেলেরা খারাপ কথা বলে। আমার ছেলে সেনসিটিভ, এবং সে এই বিষয় নিয়ে জলঘোলা চায়নি। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পরে সে তার বন্ধুবৃত্ত পাল্টে ফেলে। সে আমাকে বলে যে তার নতুন বন্ধুদের বাবা নেই। আমি শুনে শকড হই, কারণ আমার ছেলে তার বাবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো। কিন্তু অন্যরা তার বাবা-মা'র বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা করবে এটা সে চায়নি। সে আমাকে বলে আমি যেন কোনকিছু নিয়েই স্কুল বা অন্য অভিভাবকদের কাছে নালিশ না করি কারণ তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে।
২০১৯ সালের ১৮ই জুন স্কুলে লাঞ্চের সময় ইরানিয়ান ছেলেটি অর্ককে তার বন্ধুদের সঙ্গে বসতে দেয়না। সে অর্কর জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলে দেয় এবং তার সিটটা নিয়ে নেয়। অর্ক অন্যদিকে সরে গিয়ে বসে, বসার সময় ইরানিয়ান ছেলেটির ব্যাগ সামান্য নড়ে গিয়ে কিছু পয়সা মাটিতে পড়ে যায়। আমার ছেলে সেগুলো কুড়িয়ে নিতে থাকে ফেরত দেওয়ার জন্য। কিন্তু ইর্যানিয়ান ছেলেটি ভাবে যে অর্ক পয়সাগুলো নিয়ে নেবে। তাই সে অর্কর মুখে ঘুঁষি মারে। আমার ছেলে তাকে আটকানোর চেষ্টা করেও পারেনি এবং তার ঠোঁট ফুলে যায়। ভিপি আমাকে অফিসে ফোন করে ঘটনাটির বিবরণ দেন এবং বিষয়টি "ছেলেদের মারামারি" বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি আমার ছেলেকে যথাসম্ভব দোষী সাব্যস্ত করেন। আমি স্কুলে আবার লিখিতভাবে জানাই, এবার আমি বলি যে ঐ ছেলেরা আমার ছেলের সঙ্গে কী করে চলেছে।
২০১৯ সালের ২১শে জুন দুপুর ২-৪০ নাগাদ ভিপি আমায় ফোন করে বলেন যে আরেকটি ব্যাপার ঘটেছে। আমার ছেলে আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়, কিন্তু তাকে থামিয়ে দিয়ে ভিপি বলেন যে ১৯শে জুন একটি ক্যানাডিয়ান ছেলে স্কুলে Nintendo switch নিয়ে এসেছিলো। সেটা আমার ছেলে বাড়ি নিয়ে গেছে। যেদিনের কথা হচ্ছে, তার পরের দিন (অর্থাৎ ২০শে জুন, ২০১৯) আমার ছেলে কানাডিয়ান ছেলেটিকে স্কুলের পরে আমার বাড়িতে ডেকে তাকে তার জিনিস ফেরত দিয়েছিলো। সেদিন (অর্থাৎ ২১শে জুন, ২০১৯) ভিপি বলেন যে তিনি দীর্ঘক্ষণ জেরা করেও আমার ছেলের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করতে পারেন নি।
আমার ছেলে তাঁকে বলে যে কনসোলটি ১৯শে জুন ইরানিয়ান ছেলেটি তাকে দিয়েছিলো লাঞ্চের মারামারির মিটমাটের সময়। ইরানিয়ান ছেলেটি দাবি করে যে সে জিনিসটি তাদের ব্যাকইয়ার্ডে পায়, অন্য একটি পরিবার ঐ বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার পর। আমার ছেলে স্বীকার করে যে সে স্কুলের ইমেইল আইডি ব্যবহার করে (ঐ কনসোলে) একটি নতুন অ্যাকাউন্ট বানিয়েছিলো এবং সে সেখানে fortnite বলে একটি ফ্রি গেম খেলেছে। পরেরদিন যখন সে জানতে পারে যে কানাডিয়ান ছেলেটির কনসোল হারিয়ে গেছে, সে ছেলেটিকে বলে জিনিসটার বিবরণ দিতে এবং তার কাছের কনসোলটির সঙ্গে বিবরণ মিলে যাওয়ার পর সে ছেলেটিকে বাড়িতে ডেকে এনে জিনিসটি ফেরত দেয়।
ভিপির কাছে এমন কোন প্রমাণ ছিলোনা যাতে বলা যায় আমার ছেলে মিথ্যা বলছে।কিন্তু তিনি অর্কর কথা বিশ্বাস না করে তাকে দীর্ঘক্ষণ জেরা করে ব্যর্থ হন এবং চুরি করার স্বীকারোক্তি আদায় না করতে পেরে পুলিশ কেসের ভয় দেখান। তিনি আমায় বলেন ক্যানাডিয়ান ছেলেটির অভিভাবক পুলিশে খবর দেবে কারণ কনসোলে আমার ছেলের ইমেইল আইডি পাওয়া গেছে। তাই আমি যেন ছেলের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করে স্কুলকে দিই। আমি ভয় পেয়ে যাই। অল্প সময়ের জন্য আমার আত্মবিশ্বাস টলে যায়, এর জন্য আমি নিজেকে ক্ষমা করিনি। এরপর আমি বাড়ি ফিরি। অর্ক গল্পের বই পড়ছিলো। সে আমাদের দুজনের জন্য স্যুপ বানিয়ে দেয়। আমি ওকে ঠিক কী ঘটেছে জিগ্যেস করি। সে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে "মা, আমি ওটা নিই নি"। সে আমাকে সেটাই বলে যা সে স্কুলে বলেছিলো। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারি যে অর্ককে ফাঁসানো হয়েছে। আমার ছেলে অজান্তে ঐ কনসোলটি নিয়ে খেলেছে বলে আমি ক্যানাডিয়ান ছেলেটিকে ফোন করি ক্ষমা চাওয়ার জন্য। ছেলেটির বাবা ফোন ধরেন। তিনি আমার ছেলের বিরুদ্ধে চুরি, হ্যাকিং, কনসোলে যে টাকা লোড করা ছিলো সেগুলো ডিলিট করা, কনসোলে ডাউনলোড করা গেম ডিলিট করা ও আরো নানান অভিযোগ করেন। তিনি আমাকে পুলিশ কেসের ভয় দেখাতে থাকেন। তিনি বলেন যে স্কুল দীর্ঘক্ষণ (long hours) ধরে চেষ্টা করেও অর্কর থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করতে পারেনি। অজান্তে তাঁর ছেলের জিনিস নিয়ে খেলার জন্য আমি তাঁর কাছে ক্ষমা চাই, ডিলিট করে দেওয়া টাকা ও গেম ডাউনলোডের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিই। ক্রেডিট কার্ড স্টেটমেন্টে যদি তিনি কোন misuse পান তাহলে সেই টাকাও আমি দিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিই। তিনি তবুও আমায় পুলিশের ভয় দেখাতে থাকেন। এই ফোনকলের পরে আমি আমার ছেলের বেস্ট ফ্রেন্ডের মাকে ফোন করে জিগ্যেস করি, অর্ক স্কুলে যা বিবরণ দিয়েছে তার সমর্থনে আমি তাঁর ছেলের নাম নিতে পারি কিনা। তিনি আমায় সাহায্য করতে রাজি ছিলেন। এই ফোনকলটির পরেই, আন্দাজ সন্ধ্যে ৭টার সময়, আমার ছেলে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে যায়। সে আরেকটি বন্ধু ডেকে আনতে যায় যে এই বিষয়ে সাহায্য করতে পারতে পারে। সে আমাকে বলে, " মা, আমি ৫ মিনিটে ফিরে আসবো"। তাই আমি দরজা লক করি নি। আমি শোবার ঘরে গিয়ে সম্ভবত স্ট্রেসের জন্য ঘুমিয়ে পড়ি। রাত ৮ টা ৫৫ মিনিটে আমি উঠি। আমার ছেলে তখনো ফেরেনি। বসার ঘরে গিয়ে আমি তার নোটবইতে একটা নোট পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে 911 এ ফোন করি। তারা আসার দুঘন্টা পরে পুলিশ আমাকে জানায় আমার ছেলে পাশের বাড়ি থেকে পড়ে মারা গেছে। সেই বাড়িতে আমার ছেলে মাত্র একটি পরিবারকেই চিনতো, সেই ইরানিয়ান ছেলেটির পরিবার।
স্কুল রেকর্ড থেকে আমি ক্যানাডিয়ান অভিভাবকের ইমেইল পাই যেখানে তিনি (ছেলেটির বাবা) আমার ছেলের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ আনছেন। তাঁর ছেলে তাঁকে কনসোলটি ফেরত পাওয়ার পরেই ব্যাপারটা জানিয়েছিলো। তিনি আমার ছেলেকে অভিযুক্ত করেন জিনিসটা আমার ছেলে নিজে থেকে ফেরত দেওয়ার পরেই।
আমি একজন প্রযুক্তিবিদ। আমি জানি যে "সুইচ" কনসোলে কোন ট্র্যাকিং ডিভাইস লাগানো থাকেনা, এটা তাদের ওয়েবসাইটে পরিষ্কার করে লেখাই আছে। আমার ছেলে যদি কাউকে কিছু না বলে chute room এ জিনিসটা ফেলে আসতো, কেউ সেটা ট্রেস করে তার কাছে পৌঁছতে পারতোনা। ডিভাইস লগে ইমেইল আইডি অ্যাকাউন্ট খোলা প্রমাণ করে কিন্তু চুরি প্রমাণ করেনা। কেউ যদি অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতেই পারে তাহলে তার নিজের নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার কী দরকার? অপরাধী কেন তার নিজের ইমেইল আইডি, যা থেকে তাকে সহজেই ও নিঃসন্দেহে শনাক্ত করা যায়, ব্যবহার করে চুরি করা ডিভাইসে অ্যাকাউন্ট খুলবে? অ্যাকাউন্টে লোড করা টাকা ডিলিট করে দিয়ে চোরের কী লাভ? ডিভাইসে একটা ইনিশিয়ালাইজ বোতাম আছে, যা টিপলে অ্যাকাউন্ট রিসেট হয়। আমার ছেলে ভেবেছিলো সেটা মেশিনটা বুট করার বোতাম, ফলে সে ভুলবশতঃ কিছু ইনফরমেশন ডিলিট করে ফেলে থাকবে। যদি আমার ছেলে এমন সব গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হয়, তাহলে স্কুলে সেটা আমায় লিখিতভাবে জানায়নি কেন? স্কুল আমাকে সেখানে দেকে পাঠায়নি কেন? হাতেনাতে ধরা পড়া অপরাধীও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পায়। কিন্তু আমার ছেলেকে জেরা করা হলো, অপদস্থ করা হলো, শাসানো হলো - আমার অনুপস্থিতিতে।
একটা কনসোল যা কিনা মালিকের কাছেই আছে তার জন্য দুজন শ্বেতাঙ্গ, একজন অভিভাবক ও একজন ভাইস প্রিন্সিপ্যাল, আমার ছেলেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিলেন।
২০১৯ সালের ২১শে জুন, আমার ছেলের মৃত্যুর দু-ঘন্টার মধ্যেই পুলিশ মিডিয়াকে জানায় যে তারা এই মৃত্যুতে মধ্যে সন্দেহজনক কিছু দেখছেনা। আমার ছেলে পাশের বাড়ির ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েছে এরকম কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ঐ বাড়ির অ্যাকসেস আমার ছেলের ছিলোনা। ছাদে যেতে গেলে আলাদা অ্যাকসেস লাগে। আজ অবধি পুলিশ আমাকে জানায়নি কে আমার ছেলেকে ছাদের দরজা খুলে দিয়েছিলো। ছাদে একটা সুইমিং পুল আর জিম আছে, দুটোই বড়োদের জন্য। সেই দিনটা শুক্রবার ছিলো, সময়টা গ্রীষ্ম। একটা গোটা বছর ধরে পুলিশকে চাপ দিয়ে যাওয়ার পর জানা যায় ছাদে একটি পরিবার ছিলো, যাঁরা পুলিশের কাছে স্টেটমেন্ট দিয়েছিলো। কিন্তু পুলিশ আমাকে তাদের সঙ্গে কথা বলতে দিচ্ছে না। ঐ বাড়িতে বা আসেপাশে বাড়িতে থাকা বেশ কিছু লোক আমার ছেলের মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন। পুলিশ তাঁদের কারোর স্টেটমেন্ট নেয়নি।
সুতরাং পুলিশের সাক্ষ্য অনুযায়ী আমার ছেলে তার অ্যাকসেস নেই এমন একটা বাড়ির ছাদে উঠে , সেখানে আরেকটি পরিবারের উপস্থিতিতেই ছাদের পাঁচিলে উঠে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সে সরলরেখায় পড়লো, অধিবৃত্তাকারে নয়। সে চিৎ হয়ে পড়লো কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সের রিপোর্ট অনুযায়ী তার সামনের দাঁত ছিলোনা। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে দাঁতের উল্লেখ নেই। মৃত্যুর সময়ের উল্লেখ নেই। কিন্তু সেখানে পুলিশের পাওয়া সুইসাইড নোটের উল্লেখ আছে। করোনারের রিপোর্টে আমি দেখতে পাই আমার মুখে কিছু কথা বসানো হয়েছে। ২০১৯ সালের ১৯শে আগস্ট আমি করোনারের রিপোর্ট পাই। অবিলম্বে আমি সাক্ষ্যপ্রমাণসহ সেই রিপোর্ট চ্যালেঞ্জ করি। তারপর থেকে বহুবার চেষ্টা করেও আমি সংশোধিত রিপোর্ট পাইনি।
আমি পুলিশকে সুইসাইড নোটের ফরেনসিক তদন্ত করাতে অনুরোধ করি। এটা কোন "ক্রিমিনাল কেস নয়" এই বলে তারা সেই অনুরোধ অস্বীকার করে। তদন্তকারী অফিসার হাতের লেখার বিশেষজ্ঞ না হয়েও দাবি করেন যে সুইসাইড নোটের হাতের লেখা নোটবইয়ের বাকি লেখার স্যাম্পলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ২০১৯ সালের ২৫শে জুলাই তিনি কেসের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে ঘোষণা করার পরে আমি ওঁর কাছে নোটবইটি চাই। তদন্তকারী অফিসারের ইমেইল পেয়ে এরপর আমি নোটবইটি পুলিশের থেকে সংগ্রহ করি। আমি দেখি যে নোটবই থেকে আসল নোটটা উধাও হয়েছে। একটা নতুন পাতায় সেখানে একটা নতুন নোট যুক্ত হয়েছে। সেই নোটে আমার ছেলে আমাকে Mom বলে ডেকেছে, এবং সেখানে সেইসব লাইন লেখা আছে যা তাকে স্বীকার করানোর জন্য চেষ্টা করা হয়েছিলো, যা সে তখন স্বীকার করেনি। সেখানে " I hereby confess of stealing" এই স্টেটমেন্ট আছে । পুলিশ এই নোটটি টরন্টো স্টারে ব্যাপকভাবে প্রচার করে আমার মৃত ছেলের নামে অপবাদ দেয়। কিন্তু পুলিশ এই পুরো সময়টা ধরেই দাবি করছিলো যে তারা চুরির তদন্ত করছেনা, তারা আমার ছেলের মৃত্যুর তদন্ত করছে। তাহলে তারা মিডিয়ায় এই নোটটির এমন বহুলপ্রচার করলো কেন? ঐ বাক্যটিতে বলা নেই যে সে আত্মহত্যা করেছে। ওতে খালি বলা আছে সে চোর ছিলো। দেশের আইন অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২১শে জুলাই আমার ছেলেকে কোন অপরাধে অপরাধী বলা যায়না।
সুতরাং, একজন শ্বেতাঙ্গ তদন্তকারী অফিসার একজন শ্বেতাঙ্গ অভিভাবকের ও একজন শ্বেতাঙ্গ ভাইস প্রিন্সিপ্যালের সমস্ত দাবির সমর্থনে সুইসাইড নোট নথিভুক্ত ও প্রচার করলেন।
আমার আইনজীবী পাব্লিক এনকোয়ারির দাবি তুলে চিঠি দিয়েছিলেন, এই রিপোর্টে সেই নিয়ে বিস্তারিত রয়েছে। কিন্তু কানাডার প্রিমিয়ারের অফিস সেই চিঠিটার প্রাপ্তিস্বীকার অব্দি করেনি।
একাধিক চেষ্টার পরেও, আজ পর্যন্ত আমি পুলিশি তদন্তের রিপোর্ট পাইনি। আমি Office of the Independent Police Review Director, (OIPRD) এর কাছে অভিযোগ জনিয়েছি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি সেই অভিযোগের উত্তরে তদন্ত শুরু হয়। ২০২০ সালের মে মাসে পুলিশ দাবি করে তারা OIPRD তদন্ত শুরু হওয়ার পরে সুইসাইড নোটের হাতের লেখা বিশ্লেষণ করেছে, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার আগেই। তার মানে তারা কি অনুমান করতে পেরেছিলো যে আমি সুইসইড নোট নিয়ে প্রশ্ন তুলবো? আজ পর্যন্ত তাঁরা আমার স্টেটমেন্ট নেন নি। তাঁরা আমার সাক্ষাৎকার নেন নি কারণ আমি পুলিশের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে প্রাক্তন Child and Youth Advocate এবং Child Aid Societyর ডিরেক্টরের উপস্থিতি চেয়েছিলাম। আমি পুলিশকৃত হাতের লেখা বিশ্লেষণের রিপোর্টও পাইনি।
২০২০ সালের জানুয়ারি এবং মার্চ মাসে স্কুল বোর্ড, অবশেষে, একটি রিভিউ করে। আমার কমিউনিটির সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। আমাদের বলা হয় যে সংশ্লিষ্ট ঘটনায় কয়েকজনের শাস্তি হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনও পর্যন্ত লিখিতভাবে কিছুই পাইনি।
এই হলো বাদামি চামড়ার ইমিগ্রান্টদের জন্য ক্যানাডার রূপ। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকেও খারাপ আছি। কারণ সেখানে অন্তত মিডিয়া বাদামি চামড়ার ওপর হওয়া বর্ণবিদ্বেষের কথা বলে। আপনাদের আমার কথার বিশ্বাস করার দরকার নেই। শুধু Child fell from balcony in Davisville লিখে গুগলে সার্চ করুন এবং দেখুন কতগুলো রেজাল্ট পান। আপনি দেখবেন প্রায় সবকটা সংবাদপত্রের প্রতিবেদনেই খবরটা প্রকাশিত ২০১৯ সালের জুন ২১ বা ২২ তারিখ। কিন্তু তাদের কেউ একবারও মৃতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেনি, যারা কাছেই থাকে। এখানে মিডিয়া সেটাই লেখে যা তাদের পুলিশ লিখতে বলেছে।
খুবই দুঃখের সঙ্গে লিখছি যে আমরা এখানে সবথেকে খারাপ বর্ণবিদ্বেষের শিকার। আমি যদি কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারের হতাম, অন্তত আমার কমিউনিটি রাস্তায় নামতো এবং একটা বারো বছরের নিষ্পাপ শিশুর জন্য গলা ফাটাত, যাকে এতকিছু সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু আমার কমিউনিটি একজন একা থাকা মা'কে নিয়ে গসিপ করতে বেশি ভালোবাসে। আমার কমিউনিটির নীরবতা মোটের ওপর সিস্টেমকে এই অন্যায়গুলো করতে সাহায্যই করেছে।
ক্যানাডার প্রগতিশীল, ইনক্লুসিভ, লিবেরাল ইমেজে বোকা বনে, এখানে আমার ছেলেকে নিয়ে আসার জন্য আমি প্রতিটা দিন আফশোস করি। আপনারা পারলে এই লেখা যত পারেন শেয়ার করুন। আমি এখানে যা লিখলাম তার সমস্ত প্রমাণ আমার কাছে আছে। আমার বেশ কিছু বন্ধু ইতিমধ্যেই সেইসব প্রমাণগুলো দেখেছেন। আমি হয়ত বেশিদিন বাঁচবোনা কিন্তু যদি মানুষ জানতে পারেন ওরা আমার ছেলের সঙ্গে কী করেছে তাহলে কিছুটা শান্তি পাবো।
রইল ওর ক্লাসের শিক্ষিকার নোটটিও। | |
আর রইল, পুচাইকে যখন কানাডায় নিয়ে আসি, তখন ওর এই ছোট চিঠিটা। |
বাঁচতে হবেই, দূর্বাদি। এটা নিয়ে, এবং এটা সমাধান করে বাঁচতে হবে। ভেঙে পড়বেনা প্লিজ।
আপনি কী আপনার এলাকার Discrimination lawyer দের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন? Canadian Human Rights বা anti- bullying group দের contact করুন please. জানিনা Bengali Association রা কিছু করবে কিনা, কিন্তু Indian Association রা অন্ততঃ USA তে এমন ঘটনা নিয়ে move করে।
Local Congress person, state office এরা কি কিছুই করল না? দেখব যদি কোন Canadian human rights group এর contact পাই।
বাকরুদ্ধ!
আমি জানি না, কি বলে আপনাকে সমবেদনা জানাব।যা হারিয়ে গেল, যার হারিয়ে গেল, দু ক্ষেত্রেই অপূরণীয়
অর্ককে ফিরিয়ে আনা যাবে না। কিন্তু, আপনার এ লড়াই হয়ত আরো অর্ককে হারিয়ে যাওয়ার থেকে রক্ষা করবেে।
Durba..... Chini na tomae, kintu tumi aar aami je ek.... Aami 18 bochorer cheleke hariechi ek car accident e, jor kore or ek bondhu nie jae and high speed e car chalae.... Aaj tin bochor hoe gelo....
Ektai kotha bolbo, tumi likhecho tumi beshidin banchbe na.... keno, tomar puchai er moto cheleder jonno bancho, jara proti din ei dhoroner problem face korche.... tader jonno rukhe danrao.... Proti ti bacchar moddhe puchai ke khunje pabe, kono Maa tomar aamar moto santan hara hobe na. Bhalo theko....
Shocking! I feel like crying. Will definitely share in social media..
কাকতাড়ুয়ার বক্তব্য বুঝতে পারলাম। কিন্তু এখন কীভাবে দূর্বা র পাশে দাঁড়িয়ে সুবিচার পাওয়া যায়, সে নিয়ে কি কিছু করা সম্ভব? দরকার হলে নতুন করে কমিউনিটি তৈরি করে?
তার যা হারিয়েছে তা আর ফেরৎ পাওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু পড়ে পড়ে মার খাবারও তো একটা সীমা আছে, তাই না?
হ্যাঁ, রেসিজম বলতে শুধু কালোরাই এর শিকার তা তো নয়, বাদামী বা অন্য বর্ণের মানুষরাও তো রেসিজমের শিকার, কিন্তু তারা সরাসরি স্বীকার করতে চায় না, তাদের অবস্থানটা নড়বড়ে। তাদের মধ্যে অনেকেই রেসিজমের শিকার হওয়া সত্ত্বেও সেটা অ্যাকনলেজ করতে চায় না, লজ্জা পায়। যতক্ষণ না এক্সট্রিম কিছু ঘটে যায় ব্যাপারগুলো ধামাচাপা থাকে।
এর সঙ্গে ফ্রি এডুকেশন বা হেলথকেয়ারকে গুলিয়ে ফেললে চলবে না, বা সহজে নাগরিকত্ব পাওয়াকে। কোনও মূল্যের বিনিময়েই এই বর্ণবিদ্বেষ বা একটি শিশুর মৃত্যুও জাস্টিফায়েড হয় না।
যদিও রেসিজম এবং বুলিইং দুটো আলাদা ব্যাপার, কখনও কখনও ওভারল্যাপিং ও হয়। আজ কোনও সাদা শিশুর ওপর এরকম বুলিইং হলে সরকার কি চুপ করে থাকত বা ব্যাপারটা ধামাচাপা দিতে পারত? জানি না।
একজন সিংগল মাদার একা কী করে লড়বেন এই অসম লড়াই? উকিল নেওয়া যায় না? দেশের আইন কী বলছে? আক্রান্তকে দিনের পর দিন কাউন্সেলিং করানো হয়েছে, অথচ আক্রমনকারীদের কাউন্সেলিং করানো হয় নি।
সিংগল মায়ের সন্তান বলে তাকে বুলি করা হয়েছে, এ কেমন শিক্ষা ঐ দেশের, সমাজের? এরা নাকি সভ্য ভদ্র দেশ!
এই সময়ে দূর্বার পাশে দাঁড়ানোর জন্য তার নিজের দেশের কেউ নেই? এত স্বার্থপর মানুষ হতে পারে কী করে?
শিউরে উঠলাম। এই ভাবে একটা বাচ্চা চলে গেল? দূর্বা, সুবিচার আপনাকে পেতেই হবে
আমি একজন টরেন্টোনিবাসীকে জানিয়েছিলাম। তিনি বললেন— নিজের দেশে কি রেসিজম নেই?
এরপর তাঁর কাছ থেকে আর কোনও সাহায্য পাওয়া যাবে বলে মনে হলো না।
অভাবনীয় এবং মর্মান্তিক ঘটনা।
যিনি বলেছেন, মিলিয়ন ডলারের কেস ঠুকতে তিনি সম্ভবত ভাল করে জেনেই বলেছেন যে কোন সাধারণ চাকুরিজীবী মধ্যবিত্ত এই দেশে সিভিল স্যুট লড়তে পারে না। এই সব উপদেশ দেবার থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার পোস্টটা শেয়ার করলেও আমি হয়ত কিছু উপকারী এবং ক্ষমতাশালী মানুষের নজরে আসতে পারতাম। নেতা, মন্ত্রী ও মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে কথা তো চলছে। আর প্রাইভেসি ল নিয়ে কী একটা বললেন, একটু জেনে বললে ভাল হয়। আমি আইনের ফাঁকের জন্য বিচার পাচ্ছি না এমনটা আদৌ নয়।
অর্কর মৃত্যু পরিস্কার হত্যাকাণ্ড বলেই মনে হচ্ছে। আর পুলিশের যোগসাজশও স্পষ্ট। মিডিয়া কিছু করছে না? মানবাধিকার সংস্থাসহ সংবাদ সম্মেলনে পুরো বিষয় তুলে ধরা যায় না?
প্রয়োজনে টরেন্টোর সাংবাদিক বন্ধু শওগত আলী সাগরের সাথে পরামর্শ করে দেখতে পারেন। আমিও সাগর ভাইকে জানাচ্ছি।