ভারতবর্ষের খাদ্যবৈচিত্র্য আমাদের আলাদা সম্ভাবনা এনে দিয়েছে। কোথাও মাছ-ভাত, কোথাও রুটি-তড়কা, ইডলি-সম্বর, পরোটা-কাবাব, ঢোকলা-ফাফড়া ইত্যাদির স্বাদ যেমন আলাদা, পাদও আলাদা। আর এখানেই মাস্টারস্টোক।
ধরুন বাঙালীর গ্যাসজনিত সমস্যাটাকে যদি সিলিন্ডারে ভরে বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়া যায়। কিংবা ঘিয়ের পরোটা খেয়ে দুম করে বিস্ফোট করা পাঞ্জাবি ভদ্রলোকের বায়ুত্যাগকে রান্নার কাজে লাগানো যায়। আবার ধোসা খেয়ে ধসধসে দক্ষিণা গ্যাস আমাদের কাছে আর সমস্যা নয়, সম্পদ…!
এভাবে সারাদেশব্যাপী গ্যাসবৈচিত্রকে বিশ্ববাজারে তুলে আনা যাবে। জনসংখ্যাজনিত সমস্যাকে গ্যাসশক্তি বানিয়ে নিলেই মুশকিল আসান।
সরকারিভাবে এই হাস্যকর প্রোজেক্টকে প্রোমোট করা হবে না। কারন তাতে আম্বানী বা আদানীদের মুনাফায় টান পড়বে। তাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে অথবা সংগঠনের মাধ্যমে এই গ্যাসের আহরণ, সিলিন্ডারে জমা করে ব্যবহার করার চেষ্টা করতে হবে। সামান্য কিছু ঘরোয়া পদক্ষেপ নিলেই এল.পি.জির বিকল্প পাওয়া যাবে -
১) গ্যাস আহরনের জন্য বিশেষ ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে। বাড়িতে, অফিসে বা কাজের জায়গায়। যখনই দেখবেন পেট গুড়গুড় করছে বা অনুকূল পরিস্থিতি, এই ডিভাইসের আশেপাশে থাকুন। সামান্য মুখ বাঁকিয়ে সাবধানতার সাথে সেরে দিন। বাকি কাজ ডিভাইস করে দেবে।
২)বাথরুমে প্যান বা কোমোডের কাছাকাছি ডিভাইসটি রাখার চেষ্টা করুন। কারন সারাদিনে উৎপন্ন গ্যাসের একটা বড় পরিমান প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় বেরোয়। সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পরিমান গ্যাস এই সময়েই পাওয়া যায়।
৩)ডিভাইসের ডিজিট্যাল মিটারে ১০০% ভর্তি দেখালে সেটি খুলে এনে পাইপ সহযোগে যত্নের সাথে সিলিন্ডারে ভরুন। গ্যাস লিক করলে আগুন ধরার সুযোগ কম, কিন্তু বেশি পরিমান গ্যাস নাকে গেলে অজ্ঞান হতে পারেন। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। সে ব্যপারে সচেতন থাকতে হবে।
৪)বাড়িতে সদস্য সংখ্যা কম হলে, কিংবা পর্যাপ্ত গ্যাসের যোগান না থাকলে। পাড়ার পাদাড়ু ছেলেদের ডেকে বিরিয়ানি খাওয়ান, বিনিময়ে সারা সপ্তাহের সিলিন্ডার ভরিয়ে নিন। আগামীতে হয়তো বাড়িতে বাড়িতে প্রফেশনাল পাদাড়ুদের নিয়োগ সম্ভব। সেটা কর্মসংস্থানের একটা রাস্তা খুলে দেবে।
৫)মোটামুটিভাবে একজন পূর্ণবয়স্ক গ্যাসপীড়িত মানুষের সারাদিনের হাওয়াবাজিতে দুবেলার রান্না খুব সহজেই হওয়া সম্ভব। ডিভাইসের দামটিও নাগালের মধ্যে। মহিলাদের গ্যাসে তীব্রতা বেশি থাকাতে, সেটি অধিক কার্যকর।
৬)বাসের মালিকেরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাসেও গ্যাস আহরণকারী ডিভাইস লাগাতে পারেন। এতে মাসের শেষে অনেকখানি গ্যাস পাওয়া যাবে। অটো ড্রাইভাররা এই গ্যাসে অটোও চালাতে পারেন।
৭)সর্বোপরি এই গ্যাস পুনর্নবীকরণযোগ্য এবং অফুরান। কাজেই প্রচলিত প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার শেষ হয়ে গেলেও কোনও সমস্যা নেই।
৮)এই মানবগ্যাস সম্প্রীতি বর্ধনে সহায়ক হবে। বিফ খাওয়া গ্যাস মিশবে পর্ক খাওয়া গ্যাসের সাথে। এই গ্যাসসম্প্রীতি অন্যের পেটে দুমুঠো ভাত তুলে দেবে। এটাই বোধহয় সঠিক গ্যাসনিরপেক্ষতা।
৯)বিপুল জনসংখ্যার দেশে এই গ্যাসের ব্যবহার চালু হলে ভারত খুব তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসতে পারবে এবং সেনাদের জন্য বরাদ্দ আরো বাড়ানো সম্ভব। সেক্ষেত্রে কড়া বার্তা দেওয়ার কাজটি আরো গম্ভীর হবে। বাকি মুনাফা সুইস ব্যাঙ্কে চলে যাবে দেশের অগ্রগতি হিসেবে।
১০)প্রায় করমুক্ত এই প্রক্রিয়া। জিএসটির গল্প নেই।
১১)যদিও এটি কাঁদানে গ্যাসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনার মতো বিপদ ঘটে যেতে পারে। কাজেই ভিড়ের মধ্যে সিলিন্ডার সাবধানে রাখা দরকার।
আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে। দেশে এখনো পর্যাপ্ত পরিমানে প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে। তবুও সকাল সকাল এমন মানবগ্যাসের দুর্গন্ধময় আইডিয়া কেন ছড়িয়ে দিতে চাইছি। না পেটখারাপ হয়নি, আপনি হয়তো জেনে গেছেন গ্যাসে ভর্তুকির খবর। এই অবস্থায় গ্যাসে রান্নার অভ্যাস ছেড়ে মাটির উনুনে ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। বিদ্যুতের বিলের কথা মাথায় রেখে ইন্ডাকশন কুকার বা হিটার চালানোর আগেও আপনাকে ভাবতে হবে। সাধারণ পরিবারের এসব কিনে ওঠার সামর্থ্য নেই। সর্বোপরি আপনি যদি প্রকৃত দেশপ্রেমিক হন, দেশের ছাপান্ন ইঞ্চির ছাতিধারী প্রাণপ্রিয় প্রধানমন্ত্রীর মা-বোনেদের গ্যাসে রান্নার স্বপ্নকে সফল করতে এই মানবগ্যাসের সাহায্য নিতে হবে। কারন স্বাভাবিক এল.পি.জি কেনার মতো পরিস্থিতি হয়তো আগামীতে থাকবে না।
মানবগ্যাস ব্যবহারে উদ্যোগী হয়ে অচ্ছেদিনের এই ধারাকে এগোতে দিন। বেশি চিল্লাচিল্লি করলে পাকিস্তান টুরিজম আছে...। সরকার যখন ভর্তুকি দিতে অপারগ, তখন আমাদের আম্বানী বা আদানীদের মতো দেশপ্রেমীদের মুনাফার কথা চিন্তা করে চড়া দামে গ্যাস কিনতে হবে। নচেৎ চুপ থাকতে হবে, কারন সেনারা সীমান্তে লড়ছেন। কাজেই মধ্যপন্থা হিসেবে মানবগ্যাসের ব্যবহার অতি উত্তম উপায়।
গ্যাসের ভর্তুকি কমে যাওয়া, ও ভবিষ্যতে মূল্যবৃদ্ধির বিকল্প হিসেবে অনেকে গোবর গ্যাসের ব্যবহার করবেন ঠিক করেছেন তাঁদের জন্য দুঃসংবাদ। কারন দেশের কিছু বিজ্ঞানী গরু জৈবগ্যাসের পরিবর্তে অক্সিজেন দেয় প্রমান করে গো-বেল পেয়েছেন। তাছাড়াও গরুর গ্যাস দিয়ে রান্না করাটা ধর্মীয় অবমাননা বলে গৃহীত হতে পারে।
ভাবতে ভালোলাগে আগে যারা লজ্জায় পড়ে যেতেন, তাঁরা পেছোন ফুলিয়ে গ্যাসের বিকাশে অবদান রাখবেন। সন্তানদের উদ্বুদ্ধ করবেন।
সুতরাং আগামীতে মানবগ্যাস যে নতুন একটি দিক খুলে দিতে চলেছে তা বলাই বাহুল্য। না সত্যিই নাক চাপা দেওয়ার দিন শেষ..। গর্বের সাথে বলুন আমি পাদাড়ু। দেশ এগোবে!
গ্যাসের পর গ্যাস দিয়েই দেশ চলছে। এবার রান্নার ব্যাপারে আমাদের নেতাদের গ্যাসের ভরসায় না থেকে নিজেদের গ্যাসের ব্যবহার শিখতে হবে।
"হেঁসেলের প্রয়োজনে এসো এসো ত্বরা
গ্যাসের ঘট হয় নি যে ভরা
সবার পরশে জমা করা ধীরেধীরে —
আজি ভারতের মহাবেনিয়ার সাগরতীরে”
পুনশ্চঃ এল.পি.জি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে পেছোন জ্বললে আপনার মানবগ্যাসের ভাণ্ডারে বিস্ফোরণ হতে পারে। সেটি এড়াতে গণতান্ত্রিক নিয়মে চুপ থাকুন। দেশের স্বার্থে, সেনাবাহিনীর স্বার্থে।
#হককথা