শাহজাদা থান্ডারের স্কুটি অপেক্ষা করছিলো সন্তোষপুর স্টেশনে। নামতেই শাহজাদাভাই সিগারেট বাড়িয়ে বললো - “তারপর খবর বলো সেলেবভাই, সব ঠিকঠাক?”। আমি পাল্টা বললাম গালাগালি দিচ্ছো কেন? শুধু ভাইটাই ঠিক আছে।
সোশাল মিডিয়ার সময়রেখা পেরিয়ে দ্বিতীয়বার দেখা। আজকের আড্ডার মজলিশ সেরে মেটিয়াবুরুজ ঘুরিয়ে দেখাবে বলেছে শাহজাদাভাই। শাহজাদা থান্ডার পড়াশোনা শেষ করে পৈতৃক ব্যবসা সামলাচ্ছে। শান্ত, ধীরস্বভাবের। ফটো তুলতে ভালোবাসে, জামাকাপড়ের ব্যবসাটাকে দারুণ জায়গায় নিয়ে যেতে চায়। ঠিকভাবে আলাপ হওয়ার আগে আমি বিশ্বাসই করতে পারতাম না মেটিয়াবুরুজে বসে শাহজাদা থান্ডার ফেসবুকে বেশ সুন্দর বাংলা লেখে। স্কুটিতে গল্প করতে করতে একসময় পুরকাইতদার বাড়ি পৌঁছেতেই স্থানীয় জনপ্রিয় লস্যির গ্লাস দিয়ে বরণ করে নেওয়া হলো। কিছু পরে জানতে পারা গেলো পুরকাইতদার ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় মাজার সংলগ্ন খারেজী মাদ্রাসার মাঠে বড় হাঁড়িতে(ডেগ) রান্নাবান্না হচ্ছে। দুপুরের জমিয়ে বিরিয়ানি-বোরহানি-বিফ চাঁপ-স্যালাড…।
সবাই প্রায় চলে এসেছেন দেখে পুরকাইতদার স্কুলের দোতালায় আড্ডা জমে উঠলো। দেশ, সমাজ, নোটবাতিল, গোরক্ষার পাশাপাশি ফেসবুকের বিভিন্ন মানুষ আলোচনায় উঠে আসতে লাগলেন। পুরকাইতদা শুধু ভোজনরসিক নন, কিংবা চরম অতিথিবৎসল বললেই তাঁর মূল্যায়ন সম্পূর্ণ হয় না। ক্রমশ ‘সামসুদ্দিন পুরকাইত’ সাহেবের কর্মকাণ্ডের আঁচ পাওয়া গেলো। বেশ কিছু বছর আগে বাচ্চাদের স্কুল গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন পুরকাইতদা। কিন্তু পর্যাপ্ত পয়সার অভাবে তা বাস্তবায়িত হতে পারছিলো না। এমন সময় দেবী লক্ষ্মীর মতো নিজের বিয়ের গহনা বন্ধক দিয়ে স্বামীর হাতে পয়সা তুলে দিয়েছিলেন পুরকাইতভাবী। সেই সুমহান সিদ্ধান্তের ফসল এই স্কুল। স্কুলঘরের দোতালায় বসে কথাগুলো বলতে বলতে পুরকাইতদার চোখে কিছু করতে পারার পরম তৃপ্তির জলকণা চিকচিক করে উঠছিলো। আচমকা ফ্যাকাসে হাসি সহযোগে বলে উঠলেন - “এই যে স্কুল, আপনাদের ভাবী ছাড়া সম্ভব হতো না। নিজের মুখে বলতে লজ্জা হয়। কিন্তু ও না থাকলে…”।
(ক্রমশ) |