“সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” এখন পুরোদস্তুর দুনিয়া জোড়া যুদ্ধাভিযানের আকার নিয়েছে। যদিও আইসিসের মত খুনে জঙ্গি সংগঠনের উত্থান এবং প্রসারের প্রকৃত কারণগুলোকে সুবিধাজনকভাবে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। নভেম্বরের প্যারিস গণহত্যার পর ফ্রান্স, জার্মানির মত পাশ্চাত্যের বড়ো দেশগুলো ইসলামী মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। রাশিয়াও তড়িঘড়ি এই লড়াইতে যোগ দিয়েছে কারণ ইসলামী মৌলবাদ ছড়িয়ে পড়ার ভয় তার নিজেরও আছে। আসলে রাশিয়া “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকেই চালাচ্ছে। সৌদি আরব, কাতার এবং তুর্কীর মত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো যে আইসিসকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে – এই সত্যটা আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত পশ্চিমী দেশগুলো সুবিধাজনক ভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে। তুর্কী, রুশ যুদ্ধবিমান আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে এই অভিযোগে তাকে লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করায় এক মাত্র রাশিয়াই সাম্প্রতিককালে সরাসরি তুর্কীকে “জঙ্গিদের শাকরেদ” বলে অভিহিত করে (অথচ তুর্কী ফাইটার জেটপ্লেন বছরের পর বছর নিয়মিতভাবে গ্রীসের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে চলেছে, কেবলমাত্র ২০১৪ সালেই এই সংখ্যা প্রায় ২২৪৪ বার)।
“সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” এর কি আদৌ কোন অর্থ আছে? কতটা কার্যকরী এই পলিসি? এবং বর্তমান পর্যায়ের এই “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ”, রোনাল্ড রেগন এবং জর্জ ডাবলু বুশ এর আমলের বিগত দুটি যুদ্ধর থেকে কতটা আলাদা? তদুপরি এই “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ”তে প্রকৃত অর্থে লাভ কার? এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক-শিল্প আঁতাত (মিলিটারি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স) এবং যুদ্ধ-ব্যবসার সম্পর্কটাই বা কী? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ নীতির জগতবিখ্যাত বিশেষজ্ঞ নোয়াম চমস্কি “ট্রুথআউট” পত্রিকায় সি জে পলিক্রনিউ-এর কাছে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এই বিষয়গুলোর উপর আলোকপাত করেছেন।
সি জে পলিক্রনিউঃ নোয়াম, এই সাক্ষাতকারটি দেওয়ার জন্যে বিশেষ ধন্যবাদ। “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” যার সূত্রপাত রোনাল্ড রেগনের সময়, পরবর্তীকালে যাকে জর্জ ডাবলু বুশ ইসলাম-বিরোধী “ধর্মযুদ্ধ (ক্রুসেড)”-এ পরিণত করেন। এই যুদ্ধ অসংখ্য নিরীহ মানুষের প্রাণহানির কারণ হয় এবং আন্তর্জাতিক আইন এবং বিশ্ব-শান্তির উপর এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব রেখে যায়। প্রথমে আমি এই “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ”-র সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো সম্পর্কে আপনার অভিমত শুনতে চাইব। দেখে মনে হচ্ছে, “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” নতুন এবং সম্ভবত আরও ভয়াবহ এক পর্যায়ে প্রবেশ করতে চলেছে, কারণ আমেরিকা এবং তার কিছু মিত্র দেশ বাদ দিয়েও অন্য কিছু দেশ নিজস্ব কিছু এজেন্ডা ও স্বার্থ নিয়ে এতে যোগ দিয়েছে। প্রথমত, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ সম্পর্কিত উপরোক্ত মতামতের সঙ্গে আপনি কি সহমত, এবং সেক্ষেত্রে, এ রকম এক স্থায়ী সন্ত্রাসবিরোধী দুনিয়াজোড়া যুদ্ধ গোটা বিশ্বে বিশেষত পশ্চিম দুনিয়ায় উপর কি অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব ফেলবে বলে আপনার মনে হয়?
নোয়াম চমস্কিঃ একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ দিক ছাড়া, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের দুই পর্যায় বেশ আলাদা। রেগনের যুদ্ধ খুব তাড়াতাড়িই জঙ্গি ঘাতক যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়, অনুমান করা যেতে পারে সেই কারণেই এটি দৃষ্টির অগোচরে চলে যায়। মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, মধ্য প্রাচ্যের উপর এই যুদ্ধ ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছিল। এই যুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল মধ্য আমেরিকা,যা এর প্রভাব এখনো পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেনি, চলে আসা দীর্ঘ উদ্বাস্তু সমস্যার এটা প্রাথমিক কারণও – যা খুব একটা আলোচিত হয় না। যখন দ্বিতীয়বার কুড়ি বছর পরে ২০০১ সালে জর্জ বুশ যুদ্ধ যুদ্ধ ঘোষণা করেন,সেক্ষেত্রেও এই একই কথা প্রযোজ্য। এই যুদ্ধাক্রমণ বিস্তীর্ণ এলাকা ধূলিসাৎ করেছে এবং সন্ত্রাস নতুন রূপ ধারণ করেছে, উল্লেখযোগ্যভাবে ওবামার দুনিয়া জুড়ে ড্রোণ আক্রমণ, যার ভয়াবহতা বিগত সমস্ত যুদ্ধাক্রমণের ঘটনাকে ছাপিয়ে গেছে এবং এই ধরনের ঘটনাই সম্ভবত সন্দেহভাজন সন্ত্রাসবাদীদের মেরে ফেলার থেকে অনেক দ্রুত কট্টর জঙ্গিদের জন্ম দেয়।
বুশের যুদ্ধের লক্ষ্য ছিল আলকায়দা। কিন্তু একটার পর একটা যুদ্ধাঘাত – আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া ছাড়িয়ে – জেহাদি সন্ত্রাসকে আফগানিস্তানের একটা ছোট গোষ্ঠী থেকে কার্যত গোটা দুনিয়া, পশ্চিম আফ্রিকা থেকে লেভান্ট হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, সফলভাবে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। ইতিহাসের এক মহান নীতিগত জয়ই বটে। ইতিমধ্যে, আলকায়দার জায়গা নিয়েছে আরও অনেক কুৎসিত এবং ধ্বংসাত্মক শক্তি। পৈশাচিক নিষ্ঠুরতায় আইসিস (আই এস আই এল, ইসলামিক স্টেট) এখন পয়লা নম্বরে যদিও ভয়াবহতায় অন্য দাবীদাররাও এ বিষয়ে খুব পিছনে নেই। সামারিক বিশেষজ্ঞ অ্যান্ড্রু ককবার্ন তাঁর “কিল চেইন” বইতে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন কি ভাবে যখন গোড়া থেকে সমাধান করতে না চেয়ে বা বিষয়ের মূল কারণ অনুসন্ধান না করে কেবলমাত্র সব থেকে দাপুটে সংগঠনকে খতম করে কাজ শেষ করতে চাওয়া হয় তখন আরও ভয়াবহ এবং শক্তিশালী সংগঠন তার জায়গা দখল করে।
এসব কীর্তিকলাপের ফল যা দাঁড়াচ্ছে, বেশ এক বড়ো মার্জিনে, দুনিয়ার বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বশান্তির সব থেকে বড়ো প্রতিবন্ধক। তার অনেকটা পরে, দ্বিতীয় স্থানে আছে পাকিস্তান, সম্ভবত, ভারতীয় ভোটের কারণে। এই ধরনের একাধিক কার্যকলাপ, ব্যাপক ব্যয়ভার ও আভ্যন্তরীণ দমনপীড়নে জর্জরিত এবং ক্রমেই মানবাধিকার, নাগরিক অধিকার খর্ব হতে থাকা পাশ্চাত্যের সমাজের সাথে, জ্বলতে থাকা মুসলিম দুনিয়ার বৃহত্তর যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারে,যা ওসামা বিন লাদেন বা আজকের আইসিসের স্বপ্ন আশাতীত ভাবে পূরণ করবে।
সি জে পলিক্রনিউঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” সংক্রান্ত আলোচনায় প্রকাশ্য আর গোপন বলে আলাদা করে আজ আর কিছু নেই। ইতিমধ্যে, সন্ত্রাসবাদী সংগঠন এবং তাদের মদত জুগিয়ে চলা কুচক্রী রাষ্ট্রগুলোকে প্রায় কোনরকম যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়াই চিহ্নিত করা হচ্ছে – শুধু তাই না, বরং বহু ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অংশ থেকে অভিযোগ আসছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কি বাস্তবিকই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, নাকি আসলে বিশ্বজোড়া আগ্রাসনকে ন্যায্যতা দেওয়ার ধাপ্পাবাজি? একদিকে এ কথা যেমন অনস্বীকার্য যে আল কায়দা এবং আইসিস সন্ত্রাসবাদী এবং বর্বর জঙ্গি সংগঠন, উল্টোদিকে সৌদি আরব এবং কাতারের মতন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ এবং তুর্কীর মত ন্যাটোর সদস্য দেশ যে প্রত্যক্ষভাবে আইসিস কে মদত জুগিয়েছে এই সত্যি কথাটা, মার্কিন নীতি নির্ধারণকারীরা বা মূলধারার সংবাদ মাধ্যম হয় অস্বীকার করে নাহলে সেটাকে অল্প ছুঁয়ে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়। এ বিষয়ে আপনি কি কিছু বলতে চান?
নোয়াম চমস্কিঃ একই কথা সত্যি রেগন এবং বুশের “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” সম্পর্কে। রেগনের কাছে এ ছিল মধ্য আমেরিকায় আগ্রাসন চালানোর এক অজুহাত, সালভাদোরিয়ান বিশপ রিভেরা ই দামাস, যিনি আর্চবিশপ অস্কার রোমেরোকে হত্যার পর তার জায়গায় আসেন, একে (এই যুদ্ধ কে) “নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে হত্যা এবং নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার যুদ্ধ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। গুয়াতেমালার ঘটনা আরও ভয়াবহ এবং জঘন্য ঘটনা ঘটে হন্ডুরাসেও। নিকারাগুয়া একমাত্র দেশ যাদের নিজস্ব একটা সশস্ত্রবাহিনী ছিল রেগনের সন্ত্রাসবাদীদের থেকে রক্ষার জন্যে। অন্য দেশগুলোতে নিরাপত্তাবাহিনীই ছিল সন্ত্রাসবাদী।
দক্ষিণ আফ্রিকায়, “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” নিজের দেশে এবং ওই অঞ্চলে দক্ষিণ আফ্রিকার অপরাধকে সমর্থনের পটভূমি তৈরি করেছে, যার জন্যে চড়া দাম চোকাতে হচ্ছে।আমাদের তো সভ্যতাকে নেলসন ম্যান্ডেলার আফ্রিকান জাতীয় কংগ্রেসের মত জগতের “অন্যতম কুখ্যাত এক জঙ্গি গোষ্ঠী”র থেকে বাঁচাতে হবে। ম্যান্ডেলা নিজেই ২০০৮ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জঙ্গি তালিকায় ছিলেন। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের” দোহাই দিয়ে লেবানন এর উপর ইসরায়েলের ভয়াবহ আক্রমণ এবং আরও নানা কিছুকে সমর্থন করা হয়। বুশের আমলে এই একই ছুতোয় ইরাক আক্রমণও করা হয়। এবং এ আজও অব্যাহত।
সিরিয়াতে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে চলেছে তা বর্ণনার অতীত। জমিতে দাঁড়িয়ে আইসিস-এর মুকাবিলা করছে যারা, তাদের মুল অংশ হল কুর্দরা, ইরাকেও তাই, অথচ তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জঙ্গি তালিকায় আছে। এই দুই দেশেই তারা আমাদের সহযোগী ন্যাটোসদস্য তুর্কীর আক্রমণের মূল লক্ষ্য,অন্যদিকে তুর্কী সিরিয়াতে আলকায়দার শাখা আল-নুসরাকে সমর্থন করে চলেছে। আইসিস-এর থেকে যারা বিশেষ আলাদা কিছু নয়, যদিও তারা জমিতে দাঁড়িয়ে লড়াই চালাচ্ছে। আল-নুসরার প্রতি তুর্কীর সমর্থন এতটাই তীব্র যে যখন পেন্টাগন কয়েক ডজন যোদ্ধাকে প্রশিক্ষিত করে পাঠায়, তখন সম্ভবত তুর্কীর কাছ থেকে সতর্কবার্তা পেয়ে, আল-নুসরা নিমেষে এদেরকে খতম করে।
মার্কিনমিত্র সৌদি আরব এবং কাতারও আল-নুসরা এবং তাদের দোসর আহরার আল-শাম-কে সহযোগিতা করছে এবং আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র তারা সম্ভবত পাচ্ছে সিআইএ-র কাছ থেকে। খবর পাওয়া গেছে, সিআইএ এর সরবরাহ করা টাউ অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক ব্যবহার করেই তারা আসাদ এর সেনাবাহিনী কে পরাস্ত করে, সম্ভবত ঠিক এই কারণেই রাশিয়া জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়। এমনকি এখনও তুর্কী নিজের দেশের সীমানা পার করে জিহাদিদের আইসিসে যোগ দিতে দিচ্ছে।
অন্যদিকে, বিশেষ করে সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরেই উগ্র জিহাদি মতাদর্শের সক্রিয়ভাবে সমর্থন করছে, কেবলমাত্র অর্থসাহায্য করে নয় গোঁড়া ওয়াহাবি মতাদর্শকে মাদ্রাসা, মসজিদ এবং ইমামদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েও। প্যাট্রিক ককবার্ণ সুন্নি ইসলামের ওয়াহাবি মতাদর্শের প্রসারকে এই সময়ের এক ভয়ঙ্করতম ঘটনা বলে বর্ণনা করেছেন। সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিশাহীর কিন্তু এক বিশাল এবং আধুনিক সেনাবাহিনী আছে,তারা কিন্তু কোথাওই আইসিস-এর বিরুদ্ধে লড়ছে না। অন্যদিকে এরাই ইয়েমেনে সক্রিয়ভাবে এক অমানবিক বিশাল ধ্বংসকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে, যা হয়ত আমাদের “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ”-র আগামী কোন জঙ্গি প্রতিপক্ষের জন্ম দেবে। আপাতত এই এলাকা এবং জনজীবনকে ব্যপকভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে।
ওদিকে সিরিয়ার জন্যে ক্ষীণ আশার জায়গা হল, আইসিস বাদে অন্য অংশগুলোর নিজেদের মধ্যে সমঝোতায় আসা। এর মধ্যে কিছু ভয়ঙ্কর লোকজনও আছেন, যেমন সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি বাসার আল-আসাদ, যিনি স্বেচ্ছায় আত্মহননের পথ তো বেছে নেবেন না, অতএব সিরিয়া যেভাবে দ্রুত জাতীয় আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে চলেছে, তার থেকে বাঁচতেই অবশ্যই তাকে সমঝোতার রাস্তায় আনতে হবে। শেষ পর্যন্ত সেইরকমই কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে ভিয়েনাতে। আরও অনেক কিছুই করা সম্ভব, কিন্তু তার জন্যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন খুবই প্রয়োজন।
সি জে পলিক্রনিউঃ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তথাকথিত এই যে দুনিয়াজোড়া যুদ্ধ তাতে তুর্কীর ভুমিকা, নিঃসন্দেহে আধুনিক রাজনৈতিক ইতিহাসে খলরাজনীতির এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ এবং রুশ জেট বিমান ডুবে যাওয়ার পর তুর্কীকে “সন্ত্রাসবাদীদের শাকরেদ” তকমা দিয়ে ভ্লাদিমির পুতিন খুব ভুল কিছু বলেননি।
কিছু আরব উপসাগরীয় দেশ যে আইসিসের মত জঙ্গি সংগঠনগুলোকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করছে, এই ঘটনাকে দেখেও না দেখার ভান করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাশ্চাত্যের দেশগুলোর কাছে, কারণ জ্বালানী তেল – এ তো সহজেই বোধগম্য, কিন্তু তুর্কী যে মৌলবাদী ইসলামী সংগঠনগুলোকে সহযোগিতা করছে, সেই ঘটনায় তাদের চোখ বুজে থাকার কারণ কী?
নোয়াম চমস্কিঃ তুর্কী চিরকালই ন্যাটোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যার ভূকৌশলগত গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী। গোটা নব্বই এর দশক জুড়ে তুর্কী যখন তার কুর্দিশ জনগণের উপর ভয়ঙ্কর হামলা চালাতে থাকে, তখন থেকেই তুর্কী (ইসরায়েল এবং মিশর বাদ দিয়ে, এরা অন্য গোত্রভুক্ত) মার্কিন অস্ত্রের সব থেকে বড়ো ক্রেতা। এই সম্পর্ক কিছু কিছু সময়ে চাপের মুখে এসেছে, যেমন ২০০৩ সালে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমণ করে, তুরস্ক সরকার তাতে যোগ দিতে অসম্মত হয়, যাতে তুরস্কের ৯৫% মানুষের সমর্থনও ছিল। গণতন্ত্রের আসল অর্থটা কী সেটা বুঝতে না পারার জন্যে তুরস্ককে তীব্র তিরস্কৃত ধিক্কার জানানো হয়। তুরস্ক মিলিটারি তুরস্ক সরকারের এমন এক ঘৃণ্য অবস্থান মেনে নেওয়ার জন্য, পল অয়ালভিতস, যাকে কিনা সংবাদ মাধ্যম বুশ সরকারের “idealist in chief” বলে অভিহিত করেছিল, তিনি তীব্র ভর্ৎসনা করেন এবং এর জন্য তাদের ক্ষমাপ্রার্থী হওয়া উচিত, তাঁর এও দাবি ছিল। এইরকম গুটিকয়েক ঘটনা বাদ দিলে এই দুই দেশের সম্পর্ক থেকেছে বন্ধুত্বের। সম্প্রতি তুরস্ক এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকার আইসিসকে কিভাবে মোকাবিলা করা হবে সে ব্যাপারে এক চুক্তিতে পৌঁছয়ঃ (আইসিস কে আক্রমণের বিনিময়ে, মার্কিনীদের) তুর্কী সিরিয়ার কাছকাছি তার যুদ্ধঘাঁটিগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যবহারের করতে দেবে, প্রতিদানে যুক্তরাষ্ট্র সরকার আইসিসকে আক্রমণ করবে – যদিও তা না করে শেষত তারা কুর্দিশ শত্রুদের আক্রমণ করে।
সি জে পলিক্রনিউঃ বেশিরভাগ জনগণের ধারণা যদিও এর উল্টোটাই, তবুও আসলে একথা সত্যি যে রাশিয়া শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে অনেক সংযত। আপনি যদি সহমত পোষণ করেন তাহলে জানতে চাইব এটা কেন?
নোয়াম চমস্কিঃ কারণ তারা কম শক্তিশালী। গোটা বিশ্বজুড়ে তাদের ৮০০টা মিলিটারি বেস নেই,যেখান থেকে তারা সর্বত্র হামলা চালাতে পারবে, বছরের পর বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা করে এসেছে বা ওবামার বিশ্বজোড়া হত্যা অভিযানের মত কিছু একটা করা সম্ভব হবে। স্নায়ুযুদ্ধের গোটা সময়টার জন্যও একই কথা সত্যি। তারা সীমান্ত পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতে সামরিক শক্তির ব্যবহার করতেই তারা সক্ষম ছিল, কিন্তু ইন্দোচীন যুদ্ধের মত কিছু করে ওঠা তাদের পক্ষে কখনই সম্ভব ছিল না।
সি জে পলিক্রনিউঃ ফ্রান্স ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলোর সব থেকে বড়ো লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। এর কারণ কী?
নোয়াম চমস্কিঃ সত্যি বলতে কি,তার থেকেও অনেক বেশি আফ্রিকান ইসলামী জঙ্গি হামলার শিকার। যদি অত্যাচারের নিরিখে বিচার করতে হয় তাহলে বোকোহারাম আইসিস এর থেকেও অনেক ভয়ঙ্কর জঙ্গি সংগঠন। আর ইউরোপে ফ্রান্স জঙ্গিদের সব থেকে বড়ো লক্ষ্য দাঁড়িয়েছে, এর একটা বড়ো কারণ আলজেরিয়ার যুদ্ধ।
সি জে পলিক্রনিউঃ হামাস এবং হেজবুল্লার মত সংগঠনগুলো আবার আইসিস যে ধরনের ইসলামিক মৌলবাদী সন্ত্রাস চালাচ্ছে তার তীব্র সমালোচনা করেছে। অন্য তথাকথিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে আইসিস-এর ফারাকটা কোথায় এবং আইসিস-এর প্রকৃত লক্ষ্যই বা কি?
নোয়াম চমস্কিঃ যে কোন সংগঠনকে “সন্ত্রাসবাদী সংগঠন” এই তকমা দেওয়ার আগে আমাদের একটু সতর্ক হতে হবে। নাৎসি-বিরোধী দলগুলো সন্ত্রাসের পথ নিয়েছে। জর্জ ওয়াশিংটনের সেনাবাহিনিও একই কাজ করেছে, এবং তা এমনই ত্রাসসৃষ্টিকারী ছিল যে দলে দলে মানুষজন পালায় – আদিবাসীদের কথা বাদই দিলাম, তাদের কাছে তিনি (জর্জ ওয়াশিংটন) হলেন “শহর ধ্বংসকারী”। এরকম একখানা জাতীয় মুক্তি আন্দোলন খুঁজে বের করা শক্ত যাতে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ নেই। অন্যদিকে হেজবুল্লা এবং হামাস তৈরি হয়েছিল ইসরায়েলের সম্প্রসারণ এবং আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। কিন্তু আমরা যা দিয়েই বিচার করি, আইসিস তার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। একটা ভূখণ্ড জবরদখল করে ইসলামিক খালিফার প্রতিষ্ঠাই তাদের লক্ষ্য। যেটা সম্পুর্ণ আলাদা একটা ব্যাপার।
সি জে পলিক্রনিউঃ নভেম্বর ২০১৫ এর প্যারিস হত্যাকাণ্ডর পর, ওবামা ফরাসি রাষ্ট্রপতি হলান্ডের সঙ্গে এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “আইসিস কে ধ্বংস করতেই হবে”। আপনার কি মনে হয়, সেটা সম্ভব? সম্ভব হলে কিভাবে? আর না হলেই বা কেন নয়?
নোয়াম চমস্কিঃ আইসিস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রত্যেকটি প্রাণীকে হত্যা করার ক্ষমতা পশ্চিমী শক্তিগুলোর অবশ্যই আছে, কিন্তু তা করে আইসিস কে শেষ করা যাবে না – খুব সম্ভব তা আরও ভয়াবহ কোন জঙ্গি-আন্দোলনের জন্ম দেবে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে, যার উল্লেখ আমি আগেই করেছি। আইসিস এর একটা লক্ষ্য হচ্ছে সমস্ত ইসলাম ধর্মের মানুষকে “ক্রুসেডার”দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে টেনে আনা। একদিকে আমরা এই ভয়াবহ যুদ্ধের দিকে যেতে পারি অথবা সমস্যার গভীরে গিয়ে মুল কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে পারি এবং এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে পারি যাতে স্থানীয় কোন শক্তি দিয়ে আইসিসকে পরাস্ত করা সম্ভব হবে।
বৈদেশিক হস্তক্ষেপ একটা দীর্ঘদিনের অভিশাপ এবং আগামীতেও তা থেকে আলাদা কিছু পাওয়ার আশা কম। এই বিষয়ে কিভাবে এগোনো উচিত সেই নিয়ে কিছু সুচিন্তিত পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, যেমন, উইলিয়াম পলক, যিনি একজন মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ, শুধু তাই নয় মার্কিন সরকারের সর্বোচ্চ স্তরের নীতি-নির্ধারণ সম্পর্কেও তাঁর অভিজ্ঞতা দীর্ঘ, এ বিষয়ে কিছু প্রস্তাব আছে। আইসিস-এর জনপ্রিয়তার বিষয়ে যত্ন নিয়ে যেসব গবেষণা করা হয়েছে,বিশেষভাবে উল্লেখ্য স্কট অ্যাট্রান, সেগুলো মাথায় রেখেই এই পদক্ষেপের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। দুঃখের কথা, এইসব প্রস্তাবে বিশেষ কর্ণপাত করা হবে বলে মনে হয় না।
সি জে পলিক্রনিউঃ মার্কিন সমরনীতির পলিটিকাল ইকনমির কাঠামো এমনই যে মনে হয় তাতে যুদ্ধ প্রায় অবশ্যম্ভাবী, যার সম্পর্কে সম্ভবত ডুইয়াইট আইসেনহাওয়ার অবহিত ছিলেন, সেজন্যেই তিনি সামারিক-শিল্প আঁতাতের বিপজ্জনক প্রবণতা সম্পর্কে তার বিদায়ী ভাষণে সতর্ক করতে চেয়েছিলেন। আপনার মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এই মিলিটারি জিঙ্গোইয়িসম এর পথ থেকে সরে আসতে হলে কী করতে হবে?
নোয়াম চমস্কিঃ এটা সত্যি যে অর্থনীতির একটা অংশ এই মিলিটারি জিঙ্গোয়িসম (উগ্র দেশপ্রেম) থেকে উপকৃত হয়, কিন্তু আমার মনে হয় না সেটা মূল কারণ। ভু-কৌশলগত এবং অন্তরাষ্ট্রীয় অর্থনীতির কতকগুলো বিষয়ও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পরেই বাণিজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে আর্থিক সুবিধার বিষয়টি, যা আসলে একটি ছোট্ট অংশমাত্র, সেই নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। ব্যপক সরকারী ব্যয়বরাদ্দ যে দেশকে অর্থনৈতিক মন্দা থেকে উদ্ধার করেছিল এটা তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন এবং এর সঙ্গে আর এক গভীর দুশ্চিন্তার বিষয় ছিল যে সরকারী ব্যয়সঙ্কোচন দেশকে পুনরায় আর এক অর্থনৈতিক মন্দার দিকে ঠেলে দেবে।
বিজনেস উইকের (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯) এক বিশেষ নিবন্ধে আলোচনায় বলা হয় যে, সামাজিক খাতে এবং সামারিক খাতে ব্যয়বরাদ্দের অর্থনৈতিক অবস্থাকে মন্দার হাত থেকে বাঁচাতে (পাম্প-প্রাইমিং) ভুমিকা একই হলেও, পুঁজিপতিদের দিকে থেকে পরিষেবা খাতে বরাদ্দ এবং সামরিক খাতে বরাদ্দের যে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব তার তফাত বিস্তর। সামরিক খাতে ব্যয় অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর স্থায়িত্বের বিশেষ কিছু হেরফের ঘটায় না। পুঁজিপতিদের কাছে এটি আর একটা কাঠামো মাত্র। কিন্তু পরিষেবা এবং সামাজিক খাতে বরাদ্দ, অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যপক পরিবর্তন ঘটায়। নিজস্ব চ্যানেল তৈরি করে। নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করে। আয়ের পুনর্বন্টন হয়। এরকম আরও অনেক কিছু যোগ করা যেতে পারে। (রাষ্ট্র ব্যবস্থায়) জনগণের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সামরিক ব্যয়ের বিশেষ ভুমিকা নেই, কিন্তু সামাজিক ব্যয়ের আছে এবং গণতান্ত্রিকরণে তার ভুমিকা ব্যপক। এই সমস্ত কারণের জন্যে সামরিক ব্যয় অনেকবেশি গ্রহণযোগ্য।
সি জে পলিক্রনিউঃ মার্কিন রাজনীতি এবং সমরনীতির সম্পর্কের প্রশ্নটিকে আরও একটু এগিয়ে নিয়ে ভাবলে, বিশ্বরাজনীতিতে মার্কিনপ্রভুত্বের আপাত অবনমন কি আগামী মার্কিন রাষ্ট্রপতিদেরকে আরও যুদ্ধবাজ করে তুলবে?
নোয়াম চমস্কিঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ক্ষমতার শীর্ষে পৌছয় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অব্যবহিত পরেই, ক্ষমতার অবনমন খুব তাড়াতাড়ি ই শুরু হয়, প্রথমত “চীন হাতছাড়া হয়ে যাওয়া” এবং এরপর অন্য পুঁজিবাদী শক্তিগুলোর পুনরুত্থান এবং উপনিবেশবাদ-বিরোধিতার (ডিকলনাইশেসন) এর করুণ ইতিহাস এবং বিগত কয়েক বছরে ক্ষমতার অন্য একাধিক রূপে হাজির হওয়া। এর পাল্টা-প্রতিক্রিয়া নানা কিছুই হতে পারে। বুশের মত আস্ফালন এবং উগ্রতার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। আবার ওবামার মত সংযত হয়ে স্থানীয়শক্তির ব্যবহারও হতে পারে। আরও নানা সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু জনমতের গুরুত্ব কম নয় এবং আমরা প্রভাবিত করার আশা রাখতেই পারি।
সি জে পলিক্রনিউঃ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অংশ হিসেবে বার্নি স্যান্ডারসকে কি বামপন্থীদের সমর্থন করা উচিত?
নোয়াম চমস্কিঃ আমার তাই মনে হয়। ওনার রাজনৈতিক প্রচার এর বেশ কতকগুলো ভালো দিক আছে। এমন কতকগুলো বিষয় উঠে এসেছে যাকে সাধারণত উপেক্ষা করা হয় এবং যেটা ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে সামান্য প্রগতিশীল দিকে করে তুলেছে (জনমুখী করে তুলেছে)। আমাদের বিক্রি হয়ে যাওয়া নির্বাচনী ব্যবস্থায় এমনিতেও অন্যভাবে ওনার নির্বাচিত হবার সম্ভাবনা খুব কম, এবং যদি হতেনও গুরুত্বপূর্ণ কিছু নীতিগত পদক্ষেপ নেওয়া তাঁর জন্য খুব কঠিন ব্যাপার হত। কারণ, রিপাবলিকানরা হঠাৎ হাওয়া হয়ে যাবে না, এবং নির্বাচনী এলাকার পুনর্বিভাগ ও অন্যান্য কৌশলের জন্যে তারা হাউসকে আগামী দিনেই নিয়ন্ত্রণ করতে থাকবে, সামান্য কিছু ভোট নিয়েও বিগত কয়েক বছরে তারা এই কাজটা করে এসেছে এবং সম্ভবত সেনেটেও তাদের সরব উপস্থিতি থাকবে। যে কোন ছোট প্রগতিশীল(জনমুখী) – বা এমনকি যে কোন যুক্তিযুক্ত – পদক্ষেপকে তারা বাধা দেবে এটাই প্রত্যাশিত। এটা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে রিপাবলিকানরা আর কোন সাধারণ রাজনৈতিক দল নয়।
রক্ষণশীল আমেরিকান এন্টারপ্রাইস ইন্সিটিউট এর প্রখ্যাত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, আগের রিপাবলিকান পার্টি আদতে আজকে আসলে একটি “মৌলবাদী অভ্যুত্থান” যা সংসদীয় রাজনীতিকে প্রায় পরিত্যাগ করেছে,এখানে আমরা সেই আলোচনায় যাব না। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরাও দক্ষিণ দিকে সরেছে, তাদের মূল বক্তব্য আগের নরমপন্থী রিপাবলিকানদের থেকে আলাদা কিছু নয়। যদিও আইসেনহাওয়ারের কিছু পলিসি তাকে আজকের রাজনৈতিক স্পেকট্রামে স্যান্ডারস যে জায়গায় দাঁড়িয়ে সেই জায়গাতেই রাখবে। ফলত, স্যান্ডারস সম্ভবত কংগ্রেসের সমর্থন খুব একটা পাবে না এবং রাজ্যস্তরেও খুব সামান্য সমর্থনই জুটবে। তদ্বিরকারীর দল এবং ধনী পৃষ্ঠপোষকদের যে খুব একটা সঙ্গে পাওয়া যাবে না এ কথা বলাই বাহুল্য।
ওবামার কখনও সখনও নেওয়া প্রগতিশীল পদক্ষেপগুলোকেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যদিও সেখানে অন্যও কিছুও কারণ হতে পারে, যেমন বর্ণবিদ্বেষ। সুতরাং, সম্ভাবনা সীমিত হলেও, যদি স্যান্ডারস নির্বাচিত হন, তাহলেও তার হাত-পা বাঁধা – যদি না, যদি না, এবং যেটা আসলে বিষয় শেষত – যদি না স্বতস্ফুর্ত একটা গণআন্দোলন জন্ম নেয় এবং একমাত্র এরকম এক আন্দোলনের তরঙ্গাভিঘাতকে সম্বল করেই তার পক্ষে অনেক দূর যাওয়া সক্ষম (এবং যাওয়া উচিতও)অন্য কোনভাবে যা সম্ভব নয়।
আমার মনে হয়, এটাই স্যান্ডারসের প্রার্থী হওয়ার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক। অসংখ্য মানুষকে যা এক জায়গায় এনেছে। যদি এই চাপ আমরা নির্বাচনের পর পর্যন্ত ধরে রাখতে পারি, নির্বাচনী তামাশা শেষে যদি মিলিয়ে না যায়, তাহলে এটা একটা গণ আন্দোলনের আকার নিতে পারে, আগামীতে এই দেশ যে বিপুল চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে চলেছে তাকে গঠনমুলকভাবে মুকাবিলা করার জন্যে যা ব্যপকভাবে প্রয়োজন।
আগের কথাগুলো অবশ্য আভ্যন্তরীণ কর্মসূচীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, যে বিষয়গুলির উপর উনি জোর দিয়েছেন। বিদেশ নীতি এবং প্রস্তাবগুলো অবশ্য আমার গতানুগতিক লিবেরাল ডেমোক্র্যাটদের মতন ই মনে হয়েছে। অভিনব কোন পদক্ষেপ এখনো কিছু দেখতে পাইনি বরং কিছু চিন্তা ভাবনা (মতামত) কে সত্যিই প্রশ্ন করা দরকার।
সি জে পলিক্রনিউঃ শেষ প্রশ্ন। এ যে একটা ইতি টানাকে যারা নিতান্তই সরল এবং অবিবেচকের মত কাজ হবে বলে মনে করছেন তাদের উদ্দেশ্যে আপনি কী বলবেন?
নোয়াম চমস্কিঃ (এর উত্তর) সহজ। (জিজ্ঞেস করব) কেন? এবং তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নঃ কোন যুক্তিতে “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ”-র নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোটা দুনিয়াজুড়ে আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়া উচিত?
মূল সাক্ষাৎকারের লিঙ্কঃ http://www.trut