আফ্রিকার সঙ্গে আমার কাব্যিক পরিচয়, আমার চেতনার ঊষাকালে। কোন কোন রোববার, রবি ঠাকুরের সঞ্চয়িতা খুলে আমার পিতৃদেব আমাদের কিছু কিছু কবিতা পাঠ করে শোনাতেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল “আফ্রিকা”। মা বলতেন, “ওইটুকু ছেলে এই কবিতার মর্ম কী বুঝবে?” বাবা বলতেন, “মর্ম এখন নাই বা বুঝল। এই অমোঘ শব্দ-চয়ন, অন্ত্যমিলহীন ছন্দের এমন ঝংকার, বিষয়ের ব্যাপ্তি, নিষ্ঠুর সভ্যতার মুখোমুখি দাঁড়িয়েও এমন মানবিক আবেগ। এগুলোই আপাততঃ ওর মনে বসত করুক না - মর্ম উদ্ধারের সময় তো পড়েই রইল আজীবন”। আমার প্রতি তাঁদের উভয়ের বিবেচনায় এতটুকু ফাঁকি ছিল না। আর বড়ো বিলম্ব হলেও, ওই কবিতার মর্মোদ্ধার হল, হীরেন সিংহরায় মহাশয়ের “আমার আফ্রিকা” গ্রন্থটি পড়ে।
আরবি বণিকদের একচেটিয়া বাণিজ্য প্রভাব এড়াতে, সাগর পথে ভারতবর্ষে আসার নতুন পথ খুঁজতে গিয়ে, পশ্চিমি সভ্যতার পরিচয় হচ্ছিল আফ্রিকা মহাদেশের সঙ্গে। চোদ্দ ও পনের শতাব্দীতে ডাচ ও পর্তুগীজ অভিযাত্রীদের নৌবহর আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল ধরে দক্ষিণদিকে এগিয়ে চলতে থাকে। কারণ ততদিনে পাশ্চাত্য বিজ্ঞান স্থির সিদ্ধান্ত করে ফেলেছে পৃথিবী গোল। অতএব কোন না কোন দিন আফ্রিকা মহাদেশ পার হলেই, মিলবে পূর্বদিকের অবাধ সমুদ্র। এবং সেই সমুদ্র পার হতে পারলেই মিলবে ভারতবর্ষ নামক দেশের সন্ধান। এবং এভাবেই ১৪৯৮ সালের ২০শে মে পর্তুগীজ অভিযাত্রী ভাস্কো - দা - গামা কালিকটে পৌঁছলেন। ভাস্কোর এই সাফল্য ফরাসী, ইংরেজ, জার্মান এবং আরো কিছু ইওরোপীয় জাতির সামনে খুলে দিল ভাগ্যান্বেষণের নতুন দিগন্ত।
অভিযানের সংখ্যা যত বাড়তে লাগল, আফ্রিকার উপকূলে উপনিবেশ গড়ে তোলা প্রয়োজনীয় হয়ে উঠল। কারণ সুদীর্ঘ এই সমুদ্র-যাত্রায় পানীয় জল, টাটকা সবজি, জাহাজের মেরামতির জন্যে দু-পাঁচটা স্থায়ী বন্দর-আবাস হলে সুবিধা হয় বৈকি। এমনকি জাহাজ থেকে নেমে কয়েক সপ্তাহ হাঁটাহাঁটি, ঘোরাঘুরি করলেও জাহাজি-যাত্রার একঘেয়েমি কাটে, শরীরের আড় ভাঙে। তবে আফ্রিকার তিনদিকে সুদীর্ঘ সমুদ্রতট থাকলেও, জাহাজ ভেড়ানোর মতো বন্দর বানানোর স্থান বড়ই অপ্রতুল। অতএব প্রথম বন্দর ও উপনিবেশ গড়ে তোলার উপযোগী জায়গা মিলল দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে।
এই উপনিবেশ গড়ে তোলার কাজে যে মানুষগুলি রয়ে গেল, তারা অচিরেই টের পেতে শুরু করল, তারা আশ্চর্য এক দেশে পৌঁছেছে – যেখানে অঢেল জঙ্গল, দিগন্ত জোড়া অনাবাদী উর্বর জমি। আর এই দেশের মানুষজন? মানুষ হিসেবে তারা ধর্তব্যই নয়। তাদের গায়ের রঙ কালো, তারা বর্বর, সভ্যতার চালিয়াতি না জানা, সরল, আন্তরিক এবং একরোখা। এই (তথাকথিত) অসভ্য জনজাতির গোষ্ঠীগুলি ছোট ছোট এলাকায় নিজেদের জীবন ধারণের জন্যে চাষবাস এবং শিকার করত। জমির অধিকার নিয়ে নিজেদের মধ্যে লড়াই যে করত না তা নয়, কিন্তু তাতেও তারা সুখেই ছিল, কারণ তারা স্বাধীন ছিল। কিন্তু অচিরেই ইওরোপের অতি সভ্য জনগোষ্ঠীদের সংস্পর্শে এসে তারা টের পেল, সভ্যতা কাকে বলে!
নতুন একটা দেশে উপনিবেশ গড়তে গেলে প্রচুর শ্রমিক প্রয়োজন – এমন শ্রমিক যাদের সামান্য খাবার দিয়ে, চাবুক মেরে কিংবা বেয়নেটের খোঁচা মেরে ইচ্ছেমতো খাটানো যায়। অর্থাৎ ক্রীতদাস। স্বল্পাহার আর কঠোর পরিশ্রমে ক্রীতদাস যদি মারাও যায় – কী যায় আসে? ততদিনে ইওরোপের সভ্য অভিবাসী সমাজ জেনে গেছে, সারা বিশ্বে ইওরোপ ছাড়া অসভ্য মানুষের অভাব নেই। সে ভারতের পূর্ব উপকূল হোক কিংবা নব্য আবিষ্কৃত আফ্রিকাই হোক। অতএব প্রথম দিকে দাস-ব্যবসাই হয়ে উঠল ডাচ ও পর্তুগীজ জাহাজিদের প্রধান ব্যবসা।
আমাদের আধুনিক বঙ্গে “হার্মাদ” শব্দটি রাজনৈতিক ভাবে বহুল পরিচিত – কিন্তু ষোড়শ-সপ্তদশ শতাব্দীতে অবিভক্ত বাংলার উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলির বাসিন্দারা পর্তুগীজ দাস-বণিকদের “হার্মাদ” বলতেন। হার্মাদরা গ্রাম কে গ্রাম লুঠপাট করে, ধ্বংস করে, অজস্র নর-নারীকে পশুর মতো বন্দী করে চালান করে দিত আফ্রিকার নানান উপকূলে। সে যুগের মানুষদের কাছে “হার্মাদ” শব্দের সঙ্গে যে বীভৎস সন্ত্রাসের অনুভব ছিল – আজকের “হার্মাদ” শব্দে সেই অনুভব নিঃসন্দেহে বহুলাংশে লঘু হয়ে গেছে।
১৬৫২ সালের ৬ই এপ্রিল ইয়ান ভান রিবেক আজকের কেপ টাউনে প্রথম ডাচ উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করলেন – তিনটি জাহাজে আশি জন পুরুষ ও ৮ জন মহিলা নিয়ে। ক্রমে ক্রমে উপনিবেশে জনসংখ্যা বাড়তে লাগল – শুধু ডাচ নয়, জুড়ে বসল ফরাসী ও জার্মান ভাগ্যান্বেষীরাও। কিন্তু তাতে মহিলাদের থেকে পুরুষের সংখ্যা অত্যন্ত বেশি। অতএব জৈবিক কারণেই কিছু কিছু ক্রীতদাসীর ভাগ্য ফিরে গেল। চার্চের নিয়ম মেনে তাঁদের বিয়ে করল শ্বেতচর্মধারী ইওরোপীয়রা। অর্থাৎ শুরুর থেকেই আধুনিক কেপটাউন বা দক্ষিণ আফ্রিকার পরবর্তী প্রজন্ম হয়ে উঠল মিশ্রজাতি। এই প্রসঙ্গে তিনজন বঙ্গ নারীর হদিস পাওয়া যায় – ক্যাথারিনা অফ বেঙ্গল, এঞ্জেলা অফ বেঙ্গল, মারিয়া অফ বেঙ্গল। স্পষ্টতঃ হার্মাদ বাহিনীর হাত দিয়ে চালান হয়ে যাওয়া বাঙালী এই ক্রীতদাসী কন্যাদের নাম যদি চম্পা, জবা কিংবা হামিদা হয়ে থাকে, সে নাম কেউ জানতে চায়নি। বিয়ের পর খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করে খ্রিস্টীয় নাম নিয়ে তাঁরা দাসিত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।
আশ্চর্য বিষয় হল পরবর্তী কালে দক্ষিণ আফ্রিকার এই মিশ্র জাতিই (প্রধানতঃ ডাচ) নিজেদের আফ্রিকানার (Afrikaner) বলেছেন এবং প্রবল বর্ণ বিদ্বেষী (apartheid) এক সমাজ গড়ে নিজেদের শ্বেতবর্ণের শুদ্ধতা রক্ষায় কালো মানুষদের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার চালিয়েছেন দীর্ঘদিন। এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী নেলসন ম্যাণ্ডেলাকে দীর্ঘ ২৬ বছর কারাবাস করতে হয় এবং ১৯৯০ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি তাঁর মুক্তির দিন থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার শাপমুক্তি ঘটতে থাকে।
দক্ষিণ আফ্রিকার উপনিবেশে ডাচ ও অন্যান্য সাদা চামড়ার লোকেরা ছিল সংখ্যালঘু, কিন্তু তারাই ছিল দেশের প্রায় সমস্ত জমিজমার মালিক। আর স্থানীয় এবং ক্রীতদাস-দাসী হয়ে আসা কালোমানুষরা ছিলেন সংখ্যাগুরু। তাঁরা পিঠে চাবুকের ক্ষত নিয়ে চাষ করতেন সাদা প্রভুদের জমি। সাদা চর্মাবৃত এই প্রভুদের বলা হত বুওর (Boer) বা চাষা।
এরকমই দারুণ সভ্য উপনিবেশ গড়ে তোলার শদেড়েক বছর পর সেখানে বাণিজ্য করার নামে উদয় হল আরেক সভ্য জাতির - ইংরেজ। সাদা ইংরেজদের মাতব্বরি সহ্য হল না বহু সাদা আফ্রিকানারদের। তাদের কিছু গোষ্টী উত্তর এবং পূর্বদিকে রওনা হল নতুন দেশ, নতুন জমিজমার সন্ধানে। ১৫ই ডিসেম্বর ১৮৩৮, অরেঞ্জ নদীর পারে, নারী-পুরুষ ও দাস-দাসী সহ ৯৪৬৪ জনের একটি আফ্রিকানার দল, স্থানীয় জুলু জাতির রাজা এবং তাঁর প্রায় ২০০০০ হাজার সৈন্যের মুখোমুখি হল। পরেরদিন ১৬ই ডিসেম্বর আফ্রিকা্নার সঙ্গে জুলুদের যুদ্ধ বাধল। জুলুরা অসভ্য জাতি, তাদের অস্ত্র “বর্বর, হিংস্র, উদ্ধত” তির-ধনুক আর বল্লম। অন্যদিকে শ্বেত জাতির অস্ত্র “সভ্য, ভদ্র, বিনয়ী” কামান ও বন্দুক। অতএব অচিরেই অসংখ্য জুলুকে হত্যা করে বুওররা বিজয়োৎসব পালন করল। অরেঞ্জ নদীর জল লাল হল জুলুদের রক্তে। আফ্রিকানারা প্রতিষ্ঠা করল নতুন দুটি রাজ্য অরেঞ্জ ফ্রি স্টেট এবং ট্রান্সভাল। ওই দিনটি আফ্রিকানারদের কাছে হয়ে রইল একটি চিরস্মরণীয় সাফল্যের দিন!
কিছুদিন বাদেই ফেরেরাস ক্যাম্পে (আজকের জোহানেসবুর্গ) মিলল সোনা এবং কিম্বারলিতে পাওয়া গেল হীরের সন্ধান। এবার ইংরেজরা এই সবকিছুর অধিকার হস্তগত করতে যুদ্ধে নামল বুওরদের সঙ্গে। প্রথম বুওর যুদ্ধ ১৮৮০-৮১তে ইংরেজদের হার হল। কিন্তু ১৮৮৯-১৯০২ সালের দ্বিতীয় বুওর যুদ্ধে ইংরেজরা জয়ী হল। তারা পরাজিত বুওরদের হত্যা করল এবং নারী ও শিশুদের আমৃত্যু খাঁচায় বন্দী করে রাখল। ইংরেজরা কেপ টাউন, অরেঞ্জ ফ্রি স্টেট, ট্রান্সভাল হাতিয়ে নিয়ে সে দেশের নাম রাখল দক্ষিণ আফ্রিকা। স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে সভ্য সাদা চামড়াদের দল, অন্য সাদা চামড়াদেরও রেয়াত করে না!
রুডিয়ার্ড কিপলিং ১৮৯৮ থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত (মাঝে ১৮৯৯ সালটা বাদ দিয়ে) প্রতি বছর শীতের অবসর কাটাতে দক্ষিণ আফ্রিকা যেতেন। Poet of the Empire হিসেবে বিখ্যাত কিপলিং সেখানে সিসিল রোডসের (যিনি আফ্রিকায় রোডেসিয়া নামক রাজের প্রতিষ্ঠাতা) অতিথিশালায় সম্মানীয় অতিথি হতেন। দ্বিতীয় বুওর যুদ্ধের জন্যে ইংল্যাণ্ডের জনগণের থেকে আর্থিক সহায়তা চেয়ে তিনি একটি গান রচনা করেছিলেন, - The Absent-Minded Beggar, সেটির প্রচারপত্রটি এরকম।
তাঁর এই উদ্যোগের অর্থ যে শিশু-নারী সহ বুওর যোদ্ধাদের নৃশংস নিধনে খরচ হবে সে কথা তিনি নিশ্চয়ই জানতেন। নাকি জানতেন না? তিনি কি জানতেন না, সিসিল রোডস রোডেসিয়া দেশটি হাসিল করছেন, অসংখ্য কালো মানুষকে হত্যা করে, তাদের উৎখাত করে, দাস বানিয়ে? ঠিক যেমন জানতেন না, দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ প্রধানমন্ত্রী ক্লার্ক। ১৯৯৪ সালের ১০ই মে নেলসন ম্যাণ্ডেলা যখন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হলেন, সে সময় বিদায়ী আফ্রিকানার প্রধানমন্ত্রী ক্লার্ক বলেছিলেন, তিনি জানতেন না যে সরকারি পুলিশ এত কালো মানুষদের মেরেছে। সে রকম?
আবার প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯১৪-১৯১৮), এই কিপলিং বেলজিয়ামে জার্মান সৈন্যদের অত্যাচার এবং জার্মান নৌসেনাদের আক্রমণে ব্রিটিশ জাহাজডুবির ঘটনায় ভয়ংকর মানবিক হয়ে ওঠেন এবং গর্জে উঠে বলেছিলেন, “There was no crime, no cruelty, no abomination that the mind of men can conceive of which the German has not perpetrated, is not perpetrating, and will not perpetrate if he is allowed to go on... Today, there are only two divisions in the world... human beings and Germans.” বুঝুন, জনৈক নোবেল লরিয়েট কিপলিং কতখানি মানবিক!! তাঁর কাছে ভারত ও আফ্রিকার কালো মানুষগুলো আর যাই হোক human beings নয়!
১১ই ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭ সালে লেখা রবিঠাকুরের “আফ্রিকা” কবিতাটি শুনে যে বালক সেদিন সম্যক মর্মোদ্ধার করতে পারেনি। আজ এই পরিণত বয়সে সে পারল, তার চোখের সামনে ভেসে উঠল – সভ্যতার মুখোশে ঢাকা ওই অমানবিক মুখগুলি।
“এলো ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে
নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে,
এলো মানুষ-ধরার দল
গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে।
সভ্যের বর্বর লোভ
নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা।
তোমার ভাষাহীন ক্রন্দনে বাষ্পাকুল অরণ্যপথে
পঙ্কিল হল ধূলি তোমার রক্তে অশ্রুতে মিশে;
দস্যু-পায়ের কাঁটা মারা জুতোর তলায়
বীভৎস কাদার পিণ্ড
চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে”।
* * * * *
বসেছিলাম “আমার আফ্রিকা” বইটি নিয়ে আলোচনা করব বলে। কিন্তু গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায় “দক্ষিণ আফ্রিকা” নিয়ে দু-চার কথা বলতে গিয়ে ডুব দিলাম ইতিহাসের পাঁকে! আর এখানেই হীরেন সিংহরায় মহাশয়ের অনন্য কৃতিত্ব। তিনি তেইশটি অধ্যায়ে, আফ্রিকার তেইশটি দেশ নিয়ে এই গ্রন্থ রচনা করেছেন – যার প্রত্যেকটি আপনাকে উস্কে দিতে পারে নানান বিষয়ের দিকে। তিনি পাঠকের মনে কৌতূহল জাগিয়ে তুলতে সিদ্ধ হস্ত। এই সব দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ, আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা, তাদের অর্থনীতি, বাণিজ্য নিয়ে যেমন সংক্ষিপ্ত কিন্তু গভীর আলোচনা করেছেন, পাশাপাশি সেই সব দেশগুলির ইতিহাসের ধরতাইগুলিও তুলে ধরেছেন নিপুণ দক্ষতায়।
হীরেনবাবুর রচনাশৈলীর সঙ্গে মুগ্ধ ও অন্তরঙ্গ পরিচিতি “গুরুচণ্ডা৯”-র সকল নীপা কিংবা সপার। তাঁর কিবোর্ড থেকে ঝরে পড়ে মরমী এবং সূক্ষ্ম রসবোধ সম্পন্ন এক মানবিক মন। সে নিয়ে গুরুচণ্ডা৯-তে বেশি কিছু বলা, অনেকটা “মায়ের কাছে মাসিমার গল্প” শোনানোর মত।
পরিশেষে একটা কথা বলি, আধুনিক বঙ্গের বিদ্বজ্জন-সমাজে ইংরিজিতে বই না লিখলে তেমন কল্কে মেলে না। যদিও আমি ইংরিজি সাহিত্যের দিকপাল নই – বরং জনৈক “হরিদাস পাল” পাঠক, তবুও বলব ব্যাপ্ত বিষয়ের ওপর এমন সাবলীল বই ইংরিজিতে কোনদিন পড়িনি। হয়তো এই বইয়ের ইংরিজি অনুবাদ হবে, অন্ততঃ হওয়া উচিৎ। তখন গর্ব করে বলার মতো বিষয় হবে হীরেনবাবুর “My Africa” গ্রন্থটির মূল বাংলা – সে বইটি আমি পড়েছি!