দিনপ্রতি চার গামছা মীরার হাতে তৈরি। বছরের এটাই ধরাবাঁধা হিসেব। চলছে নাগাড়ে ১৮ বছর। লকডাউনের আগে ঘরে মজুত ছিল ২৪ টা গামছা। অন্যসময়ে গামছা বিক্রী ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। লকডাউনের জন্য কম দামেই ছাড়তে হয়েছে।সেই ২০০২ সাল থেকে গামছা বোনা শুরু। শ্বশুরবাড়িতে পা দিয়েই মীরা বুঝতে পারে অভাবের সংসার। মাধ্যমিক পাশ মীরা দেরী না করে পয়সার সন্ধানে গ্রামে বেরিয়ে পড়ে। ঘরে বসে কি করা যায় খুঁজতে গিয়ে দেখে গামছাটাই সহজ। গোষ্ঠির টুকটাক কাজের বাইরে একটা নিজেস্ব কাজ না থাকলে সংসার চলবে না। এলাকা থেকে তেরো কিলোমিটার দূরে গ্রাম। ঘরের কাজ সেরে বাইরে গিয়ে কাজ করাও মুশকিল। তাই গ্রামেই গামছা বোনা দাঁড়িয়ে শিখতে থাকে মীরা। প্রায় তিনমাস দেখে দেখেই কাটে। সুতো ছিঁড়ে যাওয়ার ভয়ে কেউই হাত লাগাতে দিত না বুননে। মীরা মন ছোটো না করে অপেক্ষা করতে থাকে সময়ের। তারপর নিজেই বাড়িতে শুরু করে কাজ। দুই রকমের সুতো দিয়ে গামছা বুনে হাতেখড়ি হয় মীরার। তাপর চাররকমের সুতো দিয়ে বোনে চেক গামছা। লম্বায় চার হাত ও চওড়ায় দুই হাতের গামছা বোনে প্রথম। স্বামী বাইরে রাজমিস্ত্রী খাটে । তাই সংসারের খরচ মীরাকেই যোগাতে হয়। মেয়ের পড়াশুনার দায়িত্বও তার উপরেই। লকডাউনের জন্য ঘুম ছুটেছে মীরার। কন্যাশ্রীর টাকা ও নিজের লোনের টাকায় মেয়েকে আইন নিয়ে পড়তে পাঠায়। দ্বিতীয় সেমিষ্টারের ফি বারো হাজার সাতশো টাকা। এই সময় মোবাইলে ম্যাসেজ দেখেই আঁতকে ওঠে। ঘুম ছুটে যায় মীরার।
প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গামছা মহাজনের কাছে দিয়ে মিলত আগ্রিম একশো থেকে দুইশো টাকা। তা দিয়েই চলত দিনের খরচ। এখন সেটাও বন্ধ। এদিকে ঘরে চারটে মানুষ। লকডাউনের পর আবার মহাজন বাড়াতে পারে সুতোর দাম। তাতেও কমবে লাভের হিসেব। বেশী টাকা কেটে নেবে মহাজন। ঘরের কাজ সেরে এত পরিশ্রমের পর যদি উপযুক্ত পারিশ্রমিক না মেলে তাতে খারাপ লাগার কথা। আবার অভাবের ভয়েও মীরা বেজায় অস্থির । লোন ঝুলছে মাথায় ২৫ হাজার টাকার। প্রতি মাসে শোধ দিতে হয় হাজার খানেকের কাছাকাছি। তিনমাস না দিলেও কাজ বন্ধ থাকলে পয়সা পাবে কোথায়? মেয়ের পড়ার খরচ চালাবে কি করে? স্বামী লকডাউনের আগেই চলে এসেছে বাড়ী। কলকাতার কাজটা আছে কি নেই জানেনা। হাতেও টাকাপয়সা আনতে পারেনি। অন্য়সময় বছরে ছয় থেকে আট হাজার টাকা এনে দেয়। এবারে হাত খালি।
মীরা অপেক্ষায়। লকডাউন যদি ওঠে! কিন্তু পরিস্থতি আদৌ স্বাভাবিক হবে কি না ভেবে মুষড়ে পড়েছে একদম। মহাজনের কাছেই বিক্রী গামছা। খুচরো বিক্রেতা নেই। নেই সুতো হাতে। লকডাউন না উঠলে মহাজন আসবে না । বরাতও পাবে না। বন্ধ হয়ে যাবে হাঁড়ি। মীরার মত কারিগররা ধুঁকছে। লকডাউন দেশে নয়। ওদের কপালজুড়ে বসেছে যেন! প্রাণে বাঁচলেও পেটে মরতে হবে । তাও রাজি। কিন্তু মেয়ের পড়াশুনা কি আটকে থাকবে? পরীক্ষার ফি কি মুকুব হবে? মীরার জিজ্ঞাসার সঙ্গে সঙ্গে একরাশ অনিশ্চয়তা ঘিরে ধরছে গোটা পরিবারকে। মীরাদের দীর্ঘশ্বাস অপেক্ষার অন্ধকারকে আরও নিকশ কালো করছে। ভুলে যাওয়া গাঁয়ের দৈত্য ফের যেন ডেরা জাঁকিয়ে বসতে চলেছে। ঘরে ঘরে আতঙ্কের প্রদীপ জ্বলছেই ।
তখন ষষ্ঠ শ্রেণি। মাকে হারাল। সপ্তম শ্রেণিতেই বিয়ে দেওয়া হল আঞ্জিরার। ক্লাসের ফার্ষ্ট গার্ল চোখের জল মুছে গৃহিনী হয়ে গেল। স্বামী কৃষক। শ্বশুর বাড়িকে জীবনের ঠিকানা স্বীকার করে নিল আঞ্জিরা। কিছুদিন যেতেই সংসারে হাঁপিয়ে উঠল। ঘরের বাঁধন,সন্তানের মায়া কিছুই বাঁধতে পারল না আঞ্জিরাকে। শাশুমা বৌমার মন বুঝে গ্রামে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত করলেন। টেলারিং এর কাজ শিখে ও কাজ করতে শুরু করল আঞ্জিরা। কিন্তু কিছুতেই মন বসাতে পারল না। টানতে থাকল বিদ্যালয়ের চত্বর। ছেলের মা গ্রামের বিদ্যালয়ে কি করে পড়বে? লোকে কি বলবে! অবশেষে শাশুমাকে রাজি করে মুক্ত বিদ্যালয়ে শুরু করে দিল পড়াশুনা। নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে টিউশন নিল। নিজের পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চলতে থাকল ছেলের পড়াশুনা। মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনেই মারা গেল বাবা। শেষবারের মত চোখের দেখাটাও হল না। বিয়ের ১৭ বছর পর পাশ করল মাধ্যমিক আঞ্জিরা। তার ঠিক তিন বছর পর উচ্চমাধ্যমিক। সেই পরীক্ষা ছেলে পাশ করল মায়ের পাশের দুই বছর পর। টেলারিং এর কাজের পরিধি বাড়াতে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করল আঞ্জিরা। বিভিন্ন ট্রেনিং সেন্টারে দিনপিছু কাজ মিলতে থাকল। টাকাও আসতে থাকল। পেট চালাতে জ্যাম-জেলিও বিক্রী করতে থাকল অঞ্জিরা। শুরু করে দিল জরি-চুমকি কাঁথা ষ্টিচ ও এমব্রডারির কাজ শেখা। তারপর হাজার টাকায় ভাড়া নিল টেলারিং চালানোর জন্য একটি ঘর। ছেলে ইতিমধ্যে ভূগোলে অনার্স পড়ে এম এ পড়া শেষ করল। চাকরির পরীক্ষার জন্য কোচিং নিতে শুরু করল ছেলেও। এবারে বসল বিসিএস পরীক্ষায়। জীবন এগিয়ে যেতে থাকল ।
এবারে পথের কাঁটা হল লকডাউন। জীবন সংসার সব নিমেষে থমকে গেল। গ্রাম থেকে তিন কিমি দূরে দোকান। যাওয়ার উপায় নেই। অর্ডার সব পড়ে। টাকা নেই। রাতে ঘুম নেই। সম্বল বলতে ভিটে। সেটা মরগেজ দিয়ে টাকা সংগ্রহ কি করে হবে তা নিয়ে পরিবারের সকলের মাথায় হাত। এক বেসরকারি সংস্থা আয়োজিত টেলারিং এর পরীক্ষায় প্রথম হয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় টেলারিং সম্পর্কিত কাজে সুপারভাইজিং এর সুযোগ আসে আঞ্জিরার। সেটাও লকডাউনের জন্য আপাতত বন্ধ।
মুর্শিদাবাদে বাল্যবিবাহ এখনও বন্ধ করা যায়নি। বিয়ের পর মুখ বুজে সংসার ছিল একমাত্র রেওয়াজ। নিরুপায় হয়ে সেই দলিলে নাম লিখিয়েছিল ঠিকই কিন্তু ভাগ্য নিজের হাতেই লিখতে শুরু করেছিল আঞ্জিরা। কাজের সূত্রে গ্রামের বাইরে যাওয়ার কারণে প্রথমেই 'খারাপ মেয়ে' বলে দাগিয়ে থামানো যায়নি একসময়ের বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রীকে। সব অমর্য্যাদা উপেক্ষা করে নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয় আঞ্জিরা। ছেলেকে নিজের পরিবারের ঢাল হিসেবে তৈরি করে। কষ্টার্জিত এই সংগ্রামে এমন ঝোড়ো হাওয়ার মত লকডাউন নেমে আসবে কল্পনাতেও ভাবেনি আঞ্জিরা। ভেঙে পড়েছে মন। একের পর এক দিন বিভীষিকার মত কাটছে। প্রায় প্রতিদিনই শহর থেকে টেলারিং এর সরঞ্জাম আনতে হয়। নইলে কাজ অসম্পুর্ন থেকে যায়। নির্দিষ্ট দিনে ডেলিভারি দেওয়া যায় না। নতুন করে অর্ডার পাওয়ার সম্ভাবনাও কমছে । অন্যদিকে প্রশিক্ষণকেন্দ্রের অনিয়মিত উপার্জনটাও বন্ধ। নিজের ব্যবসাকে বহু কষ্টে সামলেছিল আঞ্জিরা। এখন রাতবিরেতে উঠে ভিটের জমির কাগজ খুঁজছে। সামান্য জমিটুকু চলে গেলে তো পথে বসতে হবে। চিন্তার ঘোর কাটতেই সকাল হয়ে যাচ্ছে। একটিই চিন্তা। এই লকডাউনের পর আবার কি লকডাউন চলবে? তাহলে কি হবে?
উনিশ বছর ধরে রেশম চাষ লয়লার। লকডাউন এখন হাতের রেখায় ঘর বেঁধেছে। উঠোনে বসে সারাদিন অনিশ্চয়তা আর বিরামহীন প্রহর গুনতি। লকডাউনের কানাঘুষো শুনতেই জলের দরে বিক্রী করতে হল রেশম গুটি। শোবার একটিই ঘর। তাই অগত্যা হার মানতে হল। সময় নিয়ে পরে শুকিয়ে বিক্রী করার বিকল্প কিছু হাতে থাকল না। অন্য সময় সাড়ে তিনশো চারশো টাকা কেজি দরে বিক্রী করে রেশম গুটি। এবার হাফ দামও পেল না। উত্তরবঙ্গ থেকে লোক আসার কথা ছিল। গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ। তাই স্থানীয় মহাজনদের কাছেই রেশমগুটি বিক্রী করতে বাধ্য হয়েছে লায়লা। শ্বশুরবাড়ি এসে পড়েই রেশমপোকা বা পলু নিয়ে কাজ শেখা শুরু। ফিরে তাকানো আর হয়নি। টানা চলছে কাজ।
অষ্টম শ্রেনিতেই বিয়ে লয়লার। স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ায় কাজ নেই। তবু মনোবল ঢের লায়লার। বেকার ও অসুস্থ স্বামী। দুই মেয়েকে কলেজ পড়ানোর দায়িত্ব মাথায় নিয়ে লড়াই। প্রতিদিন ভোরে উঠে পলু বা রেশম পোকার দেখভাল করা। একা সংসার সামলানো। মাঝে মাঝে কৃষিমেলায় যাওয়া। আবার সদর শহরে ছোটাছুটি করা।রেশমপোকা জাত রেশমগুটি বিক্রী করে যা হয় তা দিয়ে পরের চাষের প্রস্তুতি চলে। তিনশো গুটিপোকার ডিমের বরাত জোটে লায়লার। সংসারের টানে যদি কখনও রাশ টানতে হয় তবু ইচ্ছা অন্তত পঞ্চাশ গুটিপোকার ডিমের রেশমপোকার চাষ চালিয়ে যাবে। এই পঞ্চাশ দিয়েই শুরু করেছিল প্রথম রেশম পোকা পালনের দিনগুলো। তাই থেমে থাকার উপায় নেই। একটাই ঘরের জন্য বেশি ডিম নিয়ে কাজ চালানোর উপায় নেই। তাই তিনশো গুটিপোকার ডিমেই থামিয়ে রেখেছে নিজেকে।
ব্যবসায় টিকে থাকার জন্য ধরতে হয়েছে টেলারিং এর কাজ। কিছু টাকা হাতে এসে পড়লে চাষের কাজে লাগে। এভাবেই চলা। তবু তুঁতের জমিতে এবারও জল দিতে পারল না লয়লা। লকডাউনের জন্য রেশম গুটির উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় জমির জলটুকু দেওয়ার সামর্থ্য হল না।
বিরাট সংখ্যক মানুষের জীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে সিল্ক। এর এর উৎপাদনের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ে জড়িয়ে আছেন লায়লার মত অনেক মহিলা। ওরা হয়ত জানে না যে, তার দেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম রেশম উৎপাদনকারী দেশ। এও জানেনা মোট উৎপাদনের ৯৭ শতাংশ তুঁত সরবরাহকারী পাঁচটি রাজ্যের একটিতে তার নিজের বাস। শুধু জানে গুটিপোকার ডিমকে ভালো করে খাবার দেওয়া। রোগ থেকে বাঁচিয়ে লালন করা। উপযুক্ত দামে বিক্রী করে সারাবছরের হাড়ভাঙা খাটুনির পর একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা। তারপর গুটিপোকার ডিম ঘরে আনার আগে ঘর শোধন করে রাখা।
সাগরপাড়ায় ঘরে ঘরে মহিলারা রেশম চাষের সঙ্গে যুক্ত। তাদের জন্য আলাদা কি ব্যবস্থা হল লকডাউনে জানে না লায়লারা। পরবর্তী চাষ এপ্রিলের গরমের সময়। কি করে শুরু হবে তা কেউ নিশ্চিত নয়। এমনিতেই এইসময় বেশ কঠিন পলু পালনের জন্য। পলু খাওয়ানোর জন্য পাতা গরমে শুকিয়ে যায়। ভোর শেষ হতেই কাজ শেষ করার চাপ বাড়তে থাকে। এদিকে সংসার ও মেয়েদের কলেজের জন্য আত্মীয়দের কাছে হাত পাততে হচ্ছে। চারজনের প্রতিদিনের খাবার জোটানো বিরাট চ্যালেঞ্জ। আজকের বাতি নেভানো নিয়ে লয়লার আক্ষেপ, "আমাদের ঘরে আলো জ্বলে বটে কিন্তু আঁধার ঘোচে না। বড়লোকদের আলো নেভানো হয়ত মর্জি। আমাদের কারেন্টের বিলের ভয়ে বাতি নেভানো চলে বছরভর।"
মৌসুমির নিজের হাতের চাষের কলা যাচ্ছে গরুর পেটে। কৃষি বিশ্ব অর্থনীতির ষাট শতাংশ চাষির একজন এই মৌসুমি। লকডাউনে নষ্ট হচ্ছে বিক্রী না হওয়া কলা। ফলের দোকান খুললেও খোলেনি ফলের আড়ত। নষ্ট হচ্ছে পান। পয়সা নেই। পারছে না লেবার খাটাতে মাঠে। লোনের ছয় হাজার টাকা শোধের খাড়া ঝুলছে মাথায়। তবু প্রতিদিন কোদাল আর ঝুড়ি হাতে মাঠে যাওয়ার পুরানো অভ্যাস। মন মানে না। পাঁচ রকম শষ্যের চাষ বছরে। জৈব সারের ব্যবহারও নিজের হাতেই করছে। তাই এখন বীজ,সারের সমস্যা না থাকলেও হাতটান। লোন শোধ করলে পাবে নতুন লোন। মুশকিল এই যে, লোন শোধের ব্যাপারেও অন্ধকারে মৌসুমি। পরে সুযোগ পেলেও তো টাকা চাই হাতে। যা ফলছে তা যে বাজারজাত হচ্ছে না! তবে তো আগামীতে বিপদ ঘনিয়ে আসছে! জেলার মহিলা চাষিদের জন্যও মৌসুমী চিন্তিত। ফসল ফলিয়ে নিজেই মাথায় করে বয়ে বাজারে নিয়ে যায় মৌসুমি। এতে কিছু খরচও বাঁচে। মৌসুমি বিশ্বাসের লকডাউন এমন উদ্বেগের মধ্যে দিয়ে কাটছে। গ্রাম সুনসান। কি যেন হয়ে গেছে দেশে। রোগ আসেনি। কিন্তু ঘরে চাল কমছে প্রতিদিন। ফুরিয়ে গেলে কি হবে কে জানে! বাজার না চালু হলে ঘরে নষ্ট ,আবার খুললে বাজারের পথে সংক্রমণের ভয়। জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ। ঘরে সার দেওয়া মেডেলের সামনে দাঁড়িয়ে অসহায় মৌসুমি । দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, "কৃষক রত্ন বলতে লজ্জা লাগে। প্রতিবছর কুড়ি হাজার টাকা লোন না নিলে পারিনা চাষ করতে। ঘরে গরু ,ছাগল,মুরগি আছে তাই বেঁচে আছি প্রাণে।" এ দেশে কৃষকদের জন্য খামারের বাইরে বিকল্প কর্মসংস্থানের চল নেই। মৌসুমি নিজেই টিউশনি শুরু করে দিয়েছে। যে পয়সা পায় তা চাষের কাজে লাগায়।
নেই মরোক্কো ও রুয়ান্ডার মত ব্যাপক ক্রপ ইন্টেন্সিফিকেশন প্রোগ্রাম। পিছিয়ে নেই মৌসুমি। নিজেই মাটি পরীক্ষা ও জৈব সারের তৈরি করে প্রয়োগ করেছে। নিজের পদ্ধতি লাগিয়ে চাষ করেছে পেয়াজ,রসুন,কালোজিরে,আদা,হলুদ।
এলাকায় বড্ড আদর মৌসুমির। শিক্ষিত চাষি মৌসুমির বাড়ি চিনতে কারও অসুবিধে হয় না। গ্রামের মাথায় এসে একবার নাম নিলেই সোজা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রেখে আসে গ্রামের লোক। সাধনার জীবন মৌসুমির। জীবনে সংসার পাতার সময় হয়নি। এম এ পড়তে পড়তেই বাবার মৃত্যুতে পড়া ছেড়ে হাল ধরে সংসারের। মাত্র দুকাঠা জমি নিয়ে লড়াই শুরু। নিজের হাতেই কোদাল তুলে নেয়। প্রথম দিন চোখের জলে মাটি ভিজে যায়। হাতের অসহ্য যন্ত্রণায় কাহিল হয়ে পড়ে। কিন্তু পরিবারের আর সহায় সম্বল কিছু না থাকায় এভাবেই শুরু মৌসুমির চাষের জীবন। নিজের লেখাপড়া কাজে লাগিয়ে চাষে উন্নতি নিয়ে আসে। আজও বাজারে মৌসুমির কলা সেরা কাঁদি প্রতি ২৫০-৩০০টি। মাছ চাষেও তাক লাগিয়ে দেয় সকলকে। এখন জেলার নানা প্রান্তে চাষের পরামর্শ দেয় মুর্শিদাবাদের মৌসুমি। মাঠে প্রাণ আছে বিশ্বাস মৌসুমির। মাঠের নিজেস্ব ভাষাও আছে মনে করে মৌসুমি। তাই সংসারের আর এক নাম মাঠ মৌসুমির কাছে। এখানে কাজ।এখানেই কান্না-হাসি। এখান থেকেই উৎসবের জামা। মাহামারি জয়ের মন্ত্র।
"পি এম তো বলেছেন আর ২ week" - ঠিক কিসের ভিত্তিতে বলেছেন? কবে কোথায় বলেছেন তা-ও জানিনা অবশ্য - ধরে নিলাম বলেছেন - কিন্তু কিসের ভিত্তিতে? কোন প্ল্যান আছে? এদের জন্য? কোটি কোটি দিন আনি দিন খাই মানুষের জন্য? বাকিদের জন্য? আর দু-সপ্তাহ পরে ঠিক কোন আলাদিনের চেরাগ পি এম পেয়ে যাবেন জানতে ইচ্ছে করে
অরুন্ধতী নিজেই তো নাস্তিক বুদ্ধিজীবী! ঃ-)))