সন্মোহনের আদ্যপান্ত জেনে ভাল লাগলো। যদি ভুল করে না থাকি, ফ্রয়েডই কী প্রথম আধুনিক চিকিৎসায় সন্মোহনের সঠিক বৈজ্ঞানিক ব্যবহার করেছেন?
আশকরি, ভবিষ্যতে চিকিৎসায় এর নিরাপদ ব্যবহার আরো বাড়বে।
আরো লিখুন। আরো জানতে চাই।
#
এপারে সিলেটের এক স্কুল শিক্ষক ক্লাস শুরুর আগে ছাত্রছাত্রীদের দু-তিন মিনিটের জন্য চোখবুঁজে আত্মসন্মোহন চর্চা করান। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, মনছবিতে পাঠ নির্দেশিকা ধরা গেলে লেখাপড়া ভাল হয়, সবকিছু অনেক বেশী মনে থাকে।
এ নিয়ে খবরের কাগজে শীর্ষ সংবাদও হয়েছে।
নাহ, ফ্রয়েড আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি মোটের ওপর বিপরীত মেরুতেই থাকত।
হিপনোসিস নিয়ে বৈজ্ঞানিক ভাবে কাজ করার চেষ্টা হয়েছে পঞ্চাশের দশকের পর থেকে। শেষ অব্দি তেমন কিছু কনক্লুসিভ মেলে নি। আজকাল সাইকোথেরাপিতে বিশেষ ব্যবহার হয় না। পরীক্ষামূলক ভাবে আমরা দুয়েকবার করে দেখেছি, খুব আশা জাগানো কিছু নয়।
চোখ বুজে আত্মসম্মোহন যেটা লিখলেন, সেখানেও সম্মোহন স্রেফ কথার জাগলারি, আদতে ওই রিল্যাক্সেশন, মোটিভেশন, কনসেনট্রেশন - এগুলো কিছুটা কাজ করে। সম্মোহনের বাড়তি গুরুত্ব কম।
অনেক ধন্যবাদ ড: লায়েক।
এসব বিশ্বাস করতে মন চাইত না । বড় বড় ক্লেইম, কিন্তু ব্যখ্যাগুলো কখনও জুৎসই লাগেনি।
ভালো লেখা - এই নিয়ে ব্যক্তিগত ইন্টারেষ্ট আছে তাই আরো ভালো লাগলো।
এনেলপির ক্লাস করেছিলুম সে বহুকাল আগে, কল্কাতায়, যিনি ট্রেনার ছিলেন, প্রদীপ আগরওয়াল দেখি এখন হায়দরাবাদে ক্লাস নেন। ত সেই সময়েই সম্মহন, আত্মসম্মহন নিয়ে আগ্রহ। বাট, সিরিয়াস্লি, যতই চোখের সামনে দেখার অভিজ্ঞতা থাক, যদ্দিন না খুলির ওপর তার চিপকে, মেপে জুকে একটা হিসেব পাচ্ছি, ব্যাপারটা গ্রহনযোগ্য লাগে না।
হ্যাঁ, ওই " নিজেকে দেখা " ইত্যাদি নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা আচে, এখানে প্রসংগ করা উচিৎ কিনা জানি না, সবচে বড় কথা সে ফেজ গুলো মোটেই লোকে যেমন কল্পজগতের মত করে বন্ননা দেয়, তার ধারেকাছে না।
লেখাটার এপ্রচ খুব ভাল্লাগল। ব্যালান্সড।
কতকগুলো কথা মনে এলো লেখা ta পড়ে
১। ৮-১০% তো পলিটিক্যালি খুব বেশি মেতে যায় , হুজুগে নেচে যায়, কোর ফ্যাসিস্ট অনুপাতও ওদের ভয়ংকর সুদিনে ওই রকম সংখ্যাই তো মনে হয় বলে আজকাল ইতিহাস নিয়ে podcast এ।
২। ৮৪% er জন্য কি এটা প্লাসিবো effect er মত কাজ করছে না?
৩। (সুস্থ মানুষদের জন্য) আজকাল যেটা শিল্পসাহিত্যলিরিক লেখায় flow ফ্লোস্টেট বলে - শেষের দিকটা পড়ে সেই কথা মনে এলো।
ফ্লো স্টেট নিয়ে আজকাল মোটিভেশনাল বই পত্র ভিডিও হয় , সেখানে ঐ অটো সাজেশানকে আরো লজিক্যালি ভাঙ্গা হয় - CBT , DBT র কথা ভাবছিলাম আরকি।
আমার মতে শেষের অনুচ্ছেদটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, অথচ গোটা লেখায় তার ছাপ সেভাবে পেলাম না, ফলে এই অনুচ্ছেদটি অনেকটা বিচ্ছিন্ন এবং বিস্ময়কর হয়ে রইল । ওখানে এই যে বললেন --- 'তথাকথিত হিপনোসিস করে যা কিছু করা যায় বলে দেখা গেছে, তাদের জন্য যে হিপনোসিস আবশ্যিক এমন কোনো কথা নেই।বস্তুত ওই যে বলা হল, অ্যাটেনশন আর মোটিভেশন - এরাই হলো আদত চালিকাশক্তি।' --- এর বাস্তব অর্থ খুবই গভীর । সম্মোহন করে যা যা করা যায় সেটাই তো তার অস্তিত্বের প্রমাণ । কাজেই, সে সব করে দেখানোর জন্যে সম্মোহন জিনিসটাই যদি আদৌ না-ই লাগে, তাহলে তো সম্মোহন আদৌ 'কিছু একটা বটে' কিনা সে নিয়েই প্রশ্ন উঠবে । বস্তুত, গত প্রায় ষাট-সত্তর বছর ধরে সেই প্রশ্নই তুলে আসছেন থিওডোর সার্বিন, থিওডোর বার্বার, নিকোলাস স্প্যানোস প্রমুখ সম্মোহন তাত্ত্বিকরা । এখানে আপনি যাঁদের নাম করেছেন সেই শার্কো-ভাইটজেনহফার-হিলগার্ড প্রমুখ সম্মোহন-বিশারদদের ঘরানাকে বলা হয় 'স্টেটিস্ট স্কুল' বা দশাবাদী ঘরানা, আর আমি যাঁদের নাম করলাম তাঁদের ঘরানাকে বলা হয় 'সোশিও কগনিটিভ স্কুল' বা সমাজ-অনুজ্ঞাবাদী ঘরানা । এই দ্বিতীয়োক্তদের বক্তব্য হচ্ছে, 'সম্মোহন' জিনিসটা হচ্ছে আসলে এক ধরনের সামাজিক ভূমিকা পালন মাত্র --- যেখানে ল্যাবরেটরি সেটিং-এ সম্মোহক ও সম্মোহিত উভয়েই ঠিক সেই আচরণই করেন যা তাঁদের কাছে প্রত্যাশিত --- সম্মোহন করতে ও সম্মোহিত হতে হলে কী কী আচরণ করতে হয় তাঁরা সেটা আগে থেকে জানেন এবং ঠিক সেটাই করে থাকেন, এবং সেটাই আবার সম্মোহন-পরীক্ষার আশ্চর্য ফলাফল হিসেবে গুরুগম্ভীর গবেষণাপত্রে লিপিবদ্ধ হয় । এই অসাধারণ বিতর্কটি বিজ্ঞান-ইতিহাসের অন্যতম সবচেয়ে চমকপ্রদ বিতর্ক, অথচ শেষ প্যারাগ্রাফের ইঙ্গিতটুকু ছাড়া এ লেখায় সে কথা এল না । এলে পাঠকেরা চমৎকৃত ও সমৃদ্ধ হতেন বলেই আমার ধারণা ।
সম্মোহনের ইতিহাসেও কিঞ্চিৎ সমস্যা আছে বলে মনে হল । লেখাটি থেকে মনে হচ্ছে বুঝি 'হিপনোসিস' শব্দটি মেসমারের আমদানি, কিন্তু তা নয় --- শব্দটি আবিষ্কার করেছিলেন জেম্স্ ব্রেইড । পরে তিনি বুঝেছিলেন শব্দটি আদৌ সুপ্রযোজ্য হয়নি, এবং তখন তিনি পাল্টে এর নাম দিয়েছিলেন 'মোনোয়াইডিজ্ম্', কিন্তু ততদিনে আগের নামটি সংশ্লিষ্ট চর্চার পরিসরে শক্ত হয়ে এঁটে বসে গেছে, তাকে আর কোনওদিনই নড়ানো যায়নি ।
ফ্রয়েড মাত্র একটি নয়, সারা জীবনে বহু রোগীই দেখেছিলেন, যদিও গবেষণার আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে তাঁর কোনও ধারণা ছিল না, ফলে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো সবই ছিল কাল্পনিক । জোসেফ ব্রয়ার তাঁর রুগি ছিলেন না, তিনি ছিলেন ফ্রয়েডের সহ-গবেষক, বস্তুত শিক্ষক ও গুরু । তাঁরা দুজনে মিলে এক রোগিনীকে নিয়ে এক বিখ্যাত ও সুদীর্ঘ কেস স্টাডি করেন, নাম গোপন রাখার জন্য তখন সেই রোগিনীর নাম দেওয়া হয়েছিল 'অ্যানা ও', আসল নাম ছিল 'বার্থা প্যাপেনহাইম' । এই কেস স্টাডির ওপর ভর করে তাঁরা যৌথভাবে লিখেছিলেন 'স্টাডিজ্ ইন হিস্টেরিয়া' ।
যখন লিখছেন, সম্মোহন দিয়ে ব্যথা উপশমের ব্যাখ্যা দেবার জন্য 'মেডিক্যাল মডেল' আছে, তখন নিশ্চয়ই 'মেলজ্যাক-ওয়াল' মডেলের কথা বলছেন । কিন্তু সে মডেলের ব্যাখ্যা কার্যকরী হতে গেলে তো ব্যথার অনুভুতিটাকে সুষুম্নাকাণ্ডের ভেতরকার 'সাব্স্ট্যানশিয়া জেলাটিনোসা' নামক 'দরজা'-র মধ্যে দিয়ে যেতে হবে । তাহলে, যে সমস্ত ব্যথা-অনুভুতি ক্রেনিয়াল স্নায়ুর মধ্যে দিয়ে বাহিত হয়, সম্মোহনবিদেরা সে সব ব্যথাকেও উপশম করার দাবি করেন কীভাবে বলুন তো ? সেগুলো তো আর সুষুম্নাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে যায় না, ব্যথার উৎপত্তিস্থল থেকে সোজা মস্তিষ্কে গিয়ে হাজির হয় !
অনুভুতিটাকে --- অনুভূতিটাকে । অক্ষর-গ্রন্থনপ্রমাদের জন্য দুঃখিত ।
এমন বিস্তারিত ভাবে বিষয়টির উপস্থাপনার জন্য ধন্যবাদ।
দেবাশিস ভট্টাচার্য,একদম ঠিক। শেষটায় আমারও তাই মনে হয়েছিল, ওটা আলসেমি দোষে দুষ্ট। শেষ অনুচ্ছেদ বিস্তারিত করা উচিত ছিল।
হ্যাঁ, মেসমার নিজে হিপনোসিস শব্দটি ব্যবহার করেন নি। শব্দটা পরের। এবং ব্রেইডের মোনোয়েডিজম টার্মটি মূল লেখায় রয়েছে। আসলে এই ইতিহাস একটু সংক্ষেপিত হয়েছে। যেমন থিওডোর বার্বারের স্কেলের কথা আছে, কিন্তু ওঁর বিষয়ে বাকি বিষয়ের অনুল্লেখ আছে। আমি চাইছিলাম সম্মোহনের যেসব ঘটনার দাবি রাখা হয়, তাদের স্বপক্ষে কী রকম নিউরোবায়োলজিক্যাল মডেল আনা হয়েছে, তাদের তালিকা করতে। ঐতিহাসিক অংশটা অবশ্যই অনেক বিস্তারিত।
সোশিও কগনিটিভ স্কুলের ধারণাগুলো সংক্রান্ত নিউরোবায়োলজি নিয়ে পৃথক লেখা প্রয়োজন। বস্তুত থার্ড ওয়েভ সাইকোথেরাপিতে এই মডেলগুলোই রিফাইন্ড ভাবে ব্যবহার হয়ে চলেছে। এবং আমাদের লিম্বিক সিস্টেমের বিভিন্ন জায়গায় সুন্দর সেগুলো আরোপ করা যাচ্ছে।
ফ্রয়েড রোগী তো প্রচুর দেখেছেন। মুশকিল হলো, গুচ্ছ থিওরি তিনি একটি মাত্র রোগী দেখেই লিখতে বসে যেতেন। এভিডেন্স বেসড মেডিসিনের যুগে ওঁকে সিরিয়াসলি নেওয়া খুব কষ্টের। আর এই রোগী, শিক্ষক, কলিগ পরিচয়গুলো অনেক সময়েই একাকার হয়ে যেত, যেহেতু তাঁরা একে অপরের ওপর পরীক্ষাগুলো করতেন অনেক সময়। ফলে বিভিন্ন রেফারেন্সে এঁদের ভিন্ন পরিচয়ে উল্লেখ মেলে।
মেলজাক মডেলের কথা লিখছিলাম। ওটা প্রাথমিক ধারণা। সেই সময় যে কারণে স্পাইনাল কর্ড এসজিআর লেভেলে সাবস্ট্যান্স পি নামের কেমিক্যালের কথা ভাবা হয়েছিল। পরে দেখা যাচ্ছে, পুরো পেন পাথওয়ের বিভিন্ন স্থানেই এরকম ইন্টারাপ্ট করা সম্ভব, অস্যার্থ থ্যালামাস বা কর্টিক্যাল স্তরেও।
অনেক ধন্যবাদ, আবার। আলোচনা হোক।
SK, একদম। পুরো সমুদ্র মন্থনের পর শেষ দুই ওয়েভে এই CBT, DBT, MET এরকম কিছুই আমাদের প্রাপ্তি।
আর প্লাসেবো এফেক্ট কী ভাবে হয়, সে মূল খুঁজতে গেলেও কিন্তু আমরা এই জায়গাতেই পৌঁছাই। :)