পুরুলিয়াতে বেরো পাহাড় ধ্বংসের ছবি অন্তর্জালে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দিব্যি একটা বিরাট পাহাড় দাঁড়িয়েছিল, জীবজন্তু গাছপালা, টেরাকোটার মন্দির সব নিয়ে। পাহাড়ের ছায়ায় মেলা বসতো, পাহাড়ের গায়ে পর্বতারোহণ শেখানো হতো। হঠাৎ বহুমূল্য গ্রানাইট পাথর এবং অন্যান্য খনিজের লোভে গোটা পাহাড়টাকেই কে বা কারা উড়িয়ে দিল। রীতিমত ক্যাম্প করে ভাঙাভাঙির পর এখন পড়ে আছে খানকতক বড় পাথর।
বীরাঙ্গনা মেরি কমের প্রতিবেশী রাজ্য মেঘালয়েও এই ব্যাপারটা ঘটছে অনেক বড় পরিসরে। সেখানেও লড়ছেন কিছু বীরাঙ্গনা, প্রতিপক্ষের বেদম মার খাচ্ছেন, তবুও রিঙ ছাড়ছেন না। যেমন অ্যাগনেস খারশিং এবং তার সঙ্গিনী অমিতা সাংমা। এরা দু’জন উত্তরপূর্ব ভারতের সেই ১৮জন রাইট টু ইনফরমেশন অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে অন্যতম, যারা পাহাড়-মাফিয়াদের হাতে খুন হয়েছেন অথবা আক্রান্ত হয়েছেন। এইখানে বলা যায় বিজেপিরাজ শুরু হবার পরই সবচেয়ে কম সময়ে সবচেয়ে বেশি হুইসল ব্লোয়ারদের ওপর আক্রমণ নেমে এসেছে।
গত ৮ই নভেম্বর কয়লা এবং চুনাপাথরের ঐশ্বর্য্যে বোঝাই জয়ন্তিয়া পাহাড়ের কাছে এই দু’জন ভয়াবহ শারীরিক নিপীড়নের শিকার হন। এই একই জায়গায় গত মার্চ মাসে খুনীরা ওৎ পেতে বসেছিল আরেকজন আরটিআই অ্যাকটিভিস্ট পইপিনেহান মাজাওয়ের (Poipynehun Majaw)জন্য। খুন হয়ে যাওয়া মাজাউয়ের বয়েস হয়েছিল মাত্র আটত্রিশ, এবং তার অপরাধ ছিল সিমেন্ট কোম্পানীর সঙ্গে লোক্যাল ট্রাইবাল কাউন্সিলের ম্যাজিক-আঁতাতে কী করে বিরাট বিরাট পাহাড় ডানা মেলে উড়ে যায় সেই ব্লুপ্রিন্ট ফাঁস করে দেওয়া।
আসুন, অ্যাগনেসকে জানি
অ্যাগনেস খারশিংএর বয়স আটান্ন বছর এবং তিনি মেঘালয়ের আরটিআই অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে অগ্রগণ্যা। খ্যাতনামা পরিবারের শিক্ষিত মেয়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষিত তাকে ভয়াবহ শারীরিক আক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি। অথবা এই অসময়ে কংগ্রেসী নেতা হিসেবে তার ভাইদের পরিচিতি তার আরও ক্ষতিই করেছে। না হলে কীভাবে দীর্ঘদিন যাবত নিজের অরাজনৈতিক পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম এই সমাজসেবী, যিনি প্রান্তিক গ্রামে গার্হস্থ্য হিংসা, শিশুর অধিকার , যৌন নিপীড়ন এবং সব ধরণের বঞ্চনা নিয়ে কাজ করে এসেছেন, তার জন্য পাহাড়ের ছায়ায় লাঠিসোটা এবং মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে লুকিয়ে থাকতে পারে পরিবেশ-রাক্ষসেরা !
অ্যাগনেসের লড়াই সেখানে শেষ হয়নি। তিনি সিভিল সোসাইটি উইমেনস অর্গানাইজেশন নামে সংস্থা গড়ে সার্বিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন এবং রাইট টু ইনফরমেশন অ্যাক্টগুলি সম্বন্ধে গ্রামীণ মহিলাদের শিক্ষিত করে তুলতে থাকেন। মেঘালয়ের গ্রামগুলির অনেকক’টিতে আরটিআই অ্যাক্টিভিস্টদের অবাঞ্ছিত বলে মনে করা হয়। এই লোকগুলি ঝামেলা পাকায়, তথাকথিত উন্নয়ন বন্ধ করে দেয়। তাদের উপস্থিতিতে পাহাড়ের পর পাহাড় ভ্যানিশ হওয়া বন্ধ হয়ে যায়, যদিও চুনাপাথরের লোভে সিমেন্ট কোম্পানীর সঙ্গে লেনদেন হয়ত ততদিন সম্পূর্ণ। কিন্তু অ্যাগনেসের সাহস এবং স্বকীয়তা কাউকে ছেড়ে কথা বলছিল না। দুহাজার চৌদ্দ সালে ন্যাশন্যাল গ্রিন ট্রাইবুন্যাল আদেশ জারি করে যে অবৈজ্ঞানিক র্যাট-হোল পদ্ধতিতে খনিজ উত্তোলন এবং সেইভাবে কয়লা তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অ্যাগনেস এই অবৈধ কয়লা উত্তোলনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান, যদিও তার অস্ত্র বলতে ছিল শুধু একটি ক্যামেরা। ওটা দিয়েই তিনি প্রমাণ রাখতে শুরু করেন অবৈধ খনির মধ্যে চলা কার্যকলাপের। দেখিয়ে দেন কীভাবে ট্রাকের পর ট্রাক কয়লা বেআইনিভাবে পাচার হয়ে যাচ্ছে সারা রাজ্য জুড়ে।
র্যাট-হোল মাইনিং এবং কোল বেল্ট কি?