এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • লা জবাব দিল্লি - এক্সট্রা কোচ ৫ঃ ই-গভর্নেন্স কারে কয়?

    শমীক মুখোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৫ জুন ২০১১ | ১২১৭ বার পঠিত
  • ই-গভর্নেন্স কারে কয়? দু-লাইন লেখার আগে গ্যঁ¡ড়া ভাবলো একটু পড়াশোনা করে নেওয়া যাক। না পড়ে ফান্ডা ফলানো একেবারে উচিত নয়। তো, কাকুকে জিজ্ঞেস করলে কাকু দিল পিসির রেফারেন্স। পিসি জানালো, Several dimension and related factors influence the definition of eGovernance. The word “electronic” in the term e-Governance implies technology driven governance. E-Governance is the application of Information and communication Technology (ICT) for delivering government Services, exchange of information communication transactions, integration various stand-one systems and services between Government-to-citizens (G2C), Government-to-Business(G2B),Government-to-Government( G2G) as well as back office processes and interactions within the entire government frame work. Through the e-Governance, the government services will be made available to the citizens in a convenient, efficient and transparent manner. The three main target groups that can be distinguished in governance concepts are Government, citizens and businesses/interest groups. In e-Governance there are no distinct boundaries.

    আচ্ছা, এই ব্যাপার? তা, বঙ্গে এখন লেগেছে পরিবর্তনের ঝড়, অনেকেই ই-গভর্নেন্স টভর্নেন্স বলে চেঁচাচ্ছেন। আট বছরের দিল্লিবাসে এই ই-গভর্নেন্সের হালচাল ঠিক কেমন? গ্যঁ¡ড়া নিজে তো সরকারে নেই, সে আছে গেঁড়ি। তাই যা শোনা, সমস্তই পরস্মৈপদী। শোনা যাক!

    গেঁড়িও একজন ক্যাডার। ক্যাডার শুনলেই বাঙালির অভ্যস্ত কানে সিপিয়েমের রেফারেন্স চলে আসে। না, সিপিএম টেম নয়, এই কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরির বিভিন্ন ক্যাডার হয়। অল ইন্ডিয়া সার্ভিসের যেমন ক্যাডার হয়, আইএএস, আইপিএস, আইএফএস ইত্যাদি, ঠিক তেমনি, ভারত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকে যারা চাকরি করে, তাদের ক্যাডার হয়। রেলওয়ে মিনিস্ট্রি একটা আলাদা ক্যাডার, অন্য মিনিস্ট্রি থেকে রেল মিনিস্ট্রিতে ট্রান্সফার হওয়া যায় না। প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারিয়েট একটা আলাদা ক্যাডার, এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স আলাদা ক্যাডার, লোকসভা সেক্রেটারিয়েট আলাদা ক্যাডার, রাজ্যসভার সেক্রেটারিয়েট আলাদা ক্যাডার। আর এ সমস্ত বাদ দিয়ে, কেন্দ্রের বাকি যে সমস্ত মন্ত্রালয় আছে, সেগুলো একত্রে একটা ক্যাডার, তার নাম সেন?ট্রাল সেক্রেটারিয়েট সার্ভিস। বাংলায় বলে সিএসএস। গেঁড়ি এই সিএসএস ক্যাডারের লোক। তো, আজি হতে অষ্টবর্ষ পূর্বে পশ্চিমবঙ্গ সিবিল সার্ভিসের অধীনস্থ ল্যান্ড রেভিনিউ অফিসারের চাগ্রিটি ছেড়ে গেঁড়ি যখন সেন?ট্রাল সেক্রেটারিয়েট জয়েন করল, সেই থেকেই গ্যঁ¡ড়া গেঁড়ির দিল্লিবাসের সূচনা, সে গল্প তো আপনারা আগেই পড়েছেন। গেঁড়ি দুবলা পাতলা ফিনফিনে পেটরোগা হলে কী হবে, শুরু থেকেই পোস্টিংগুলো পেয়েছে জাঁদরেল জাঁদরেল জায়গায়। প্রথমেই, মিনিস্ট্রি অফ পাওয়ার। উর্জামন্ত্রক। সালটা ২০০৩।

    উর্জামন্ত্রকে তখনও পর্যন্ত ওই কী বলে, ই-গভর্নেন্সের ফান্ডা সেভাবে শুরু হয় নি, হবো হবো করছে। সেকশনে সেকশনে কম্পিউটার লেগে গেছে, যাঁরা অলরেডি অল্পবিস্তর কম্পিউটার জানেন, তাঁরা আপিসের কাজ যতটা সম্ভব পাস দিয়ে, মন দিয়ে সলিটেয়ার খেলে যাচ্ছেন।

    সরকারি আপিস, ফাইল তৈরি হয়, মানে হার্ড কপি নিয়ে কাজ। নিচু লেভেলের অ্যাসিস্ট্যান্ট একটা নোটশীট বানায়, সেকশন অফিসার তাতে দরকার মতো এডিট করেন, বা ঠিকঠাক থাকলে সেটাই অ্যাপ্রুভ করে পাঠিয়ে দেন আণ্ডার সেক্রেটারির টেবিলে, সেখান থেকে জয়েন্ট সেক্রেটারি হয়ে যেখানে যাবার সেখানে যায়। প্রতিটা লেভেলে ভারপ্রাপ্ত অফিসার সেই নোটশীটে নিজের রিমার্ক লিখে দেন দরকারমতো, বা তথ্যে ভুল থাকলে আবার নিচের লেভেলে পাঠিয়ে দেন নোট লিখে, কারেকশনের জন্য।

    তো, বোঝাই যাচ্ছে, এই পুরো প্রসেসটাতে ডকুমেন্ট নিয়ে কাজ, আর সেই ডকুমেন্ট এডিট, অ্যাড ইত্যাদি করতে হয় শেষ ধাপ পর্যন্ত। কম্পিউটার ব্যবহার করে এই কাজটা করা অত্যন্ত সোজা, কিন্তু সোজা জিনিসকে সোজাভাবে ব্যবহার করার জন্য তো সরকার নয়। মানে, সরকারের তরফে সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই, কিন্তু যাঁদের নিয়ে কাজ, তাঁরা কম্পিউটারকে ব্যবহার করেন মূলত সলিটেয়ার খেলার জন্য, তাঁদের অধিকাংশেরই এত বয়েস হয়ে গেছে যে এই বয়েসে এসে নতুন করে কম্পিউটারে ডকুমেন্ট এডিট করার ব্যাপারটা বোঝা রীতিমতো দুরূহ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সরকার সময়ে সময়ে এম এস ওয়ার্ড, এক্সেল ইত্যাদির ওপরে ওয়ার্কশপ অ্যারেঞ্জ করে, ভালো খানাপিনার ব্যবস্থা থাকে, বয়স্ক লোকজনেরা বাধ্য হয়ে সেই সব ওয়ার্কশপে যান, খাওয়াটা পেট ভরে খান, তারপরে ক্লাস চলাকালীন ঘুমিয়ে নেন। ফলে, ই-গভর্নেন্স পড়ে থাকে যে তিমিরকার, সেই তিমিরেই।

    মন্ত্রকের সমস্ত কম্পিউটার ল্যানে কানেক্টেড হল, যাতে ফাইল চালাচালির অহেতুক খরচা ও সময় বাঁচে। কিন্তু কাজের কাজ কী হল? একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট (নর্মালি এঁরাই সবচেয়ে তাড়াতাড়ি কম্পিউটার শেখেন, বয়েস কম) খেটেখুটে একটা ডকুমেন্ট বানালেন, সেকশন অফিসার, যিনি কিনা এই ডকুমেন্টটা রিভিউ করবেন, তিনি কম্পিউটার দেখলেই ভয় খান। তাঁর জন্য তাই সেই ডকুমেন্টের প্রিন্ট আউট বেরলো। তিনি পেন খুলে সেই প্রিন্ট আউটে কাটাকুটি রিমার্ক ইত্যাদি লিখে ফেরত পাঠালেন অ্যাসিস্ট্যান্টের কাছে। অ্যাসিস্ট্যান্ট হয় তো পাশের টেবিলেই বসে আছেন। অ্যাসিস্ট্যান্টকে সেই হাতে লেখা রিমার্ক ইত্যাদি উদ্ধার করে আবার ডকুমেন্টের সফট কপিটাকে এডিট করতে হয়, তারপরে আবার প্রিন্ট আউট, আবার সেকশন অফিসারের পেনের নিচে। এইভাবে শুদ্ধিকরণের শেষে ডকুটি যখন ফাইনাল হল, তখন সেটা পাঠাতে হবে আন্ডার সেক্রেটারির কাছে। তিনি এইসব ছোটোখাটো অফিসারদের পাশে বসেন না, তাঁর জন্য আলাদা কেবিন। মূলত এই র্যাডঙ্ক থেকে আইএএস আইইএস অফিসাররা অ্যাপয়েন্টেড হন, অথবা নন আইএএস লোকজন সেকশন অফিসার পদ থেকে প্রোমোটেড হয়ে আসেন। তো যাই হোক, এঁদের কাছে ফাইলের হার্ড কপি নিয়ে যাবার জন্য পিওন থাকে, মানে, আইডিয়ালি থাকে, কিন্তু সময়ে তাদের দেখা পাওয়া যায় না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ফাইল চালাচালিতে সময় লাগে। এই সমস্যার সমাধানের জন্যই আনা হল কম্পিউটার। তো তাতে ফল কী হল?

    সেকশন অফিসারের কাছে যখন ডকুমেন্টটা ফাইনাল হয়, খবর যায় আন্ডার সেক্রেটারির ঘরে। তাঁর পিওন চলে আসে হাতে একটা ফ্লপি বা পেন ড্রাইভ নিয়ে। তাতে ডকুমেন্টটা ভরে নিয়ে সে চলে যায়। ফলে যা হয়, অনতিবিলম্বেই কম্পিউটারগুলো ভাইরাসে ভরে যায়।

    ল্যান বা শেয়ার্ড ফোল্ডার যে ব্যবহার করা যেতে পারে, সে ব্যাপারে উদ্যোগ সরকার বা সরকারি কর্মচারী, দু তরফের কেউই নেয় নি দীর্ঘদিন। সরকারী মিনিস্ট্রির অফিসসমূহ মূলত বয়স্ক মানুষদের আখড়া, যাঁদের নতুন জিনিস শেখার ব্যাপারে অনীহাটা অত্যন্ত বেশি। সারাজীবন তাড়া তাড়া ফাইল নিজের টেবিলের ওপর সাজিয়ে, মাসের পর মাস তাতে ধূলো জমিয়ে যাঁরা কাটিয়ে গেলেন টোটাল সার্ভিস লাইফ, হঠাৎ করে তাঁদের ল্যান ইত্যাদির ফান্ডা শেখাতে গেলে ব্যাপারটা বদহজম হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক! গ্যঁ¡ড়ার বাবা লগারিদমের টেবিলে আজও স্বচ্ছন্দ, কিন্তু স্কাইপ বা টিমভিউয়ার চালাতে বললে আজও পারেন না টুলবারের মধ্যে প্রয়োজনীয় জিনিসটি খুঁজে বের করতে। টাস্কবার আর স্টেটাসবারের মধ্যে আজও গুলিয়ে ফেলেন। জেনারেশন গ্যাপটা খুব প্রকটভাবে সামনে এনে ফেলেছে এই কম্পিউটার, মোবাইল ফোন ব্যাপারগুলো।

    গ্যাপটা এইভাবে বোঝা যায় সরকারি অফিসে। বয়স্ক লোকেদের পাশাপাশি গেঁড়িদের মত নতুন ছেলেমেয়েরা প্রতি বছর ঢুকছে সেন?ট্রাল সেক্রেটারিয়েট ক্যাডারে, যাদের কারুর হয় তো অলরেডি কোনো ছোটোখাটো কম্পিউটার কোর্স করে আসার অলরেডি অভিজ্ঞতা আছে, অথবা নতুন জিনিস শিখতে খুব বেশি সময় নেয় না। গেঁড়ি যখন উর্জামন্ত্রকের নির্দিষ্ট সেকশনের দায়িত্বে বসেছিল, তখন তার টেবিলে ছিল ফাইলের পাহাড় আর ধূলোর আস্তরণ। তাদের সেকশনের কাজটাই ছিল কেবল পাওয়ার জেনারেশন আর ডিস্ট্রিবিউশনের ডেটা নিয়ে। সারা ভারতের। তার ওপরে পার্লামেন্টের কোশ্চেন আসত, সেই সব প্রশ্নের উত্তর বানাতে হত তাদের বসে বসে। আগে রীতিমতো ফাইলের পর ফাইল ঘেঁটে, nic-র (ন্যাশনাল ইনফরমেটিক্স কাউন্সিল) কাছে তদবির করে ডেটা এনে বানাতে হত, ২০০২ সালে পঞ্জাবকে ন্যাশনাল গ্রিড থেকে কত মেগাওয়াট পাওয়ার দেওয়া হয়েছে, সেই বছর আর তার আগের দু বছর হরিয়ানাকে কত দেওয়া হয়েছে, দুটোর তুলনা করে বুঝিয়ে চিঠি বানানো যে কেন পঞ্জাবকে দেওয়া পাওয়ার হরিয়ানার থেকে কম, আর কেন পঞ্জাবকে এর বেশি পাওয়ার দেওয়া যাবে না, বা দিলেও ৭০০ মেগাওয়াটের বেশি কেন নর্দার্ন গ্রিড থেকে টানতে পারবে না পঞ্জাব, কিন্তু হরিয়ানা ১২০০ মেগাওয়াটের বরাত পাবে এ বছরেও, মানে পুরো স্ট্যাটিস্টিক্যাল অ্যানালিসিস করে রিপোর্ট তৈরি করা। হয় তো প্রশ্ন করেছেন পঞ্জাবের উর্জামন্ত্রী আগের দিন পার্লামেন্টের জিরো আওয়ারে, তার উত্তর তৈরি করতে রীতিমতো যুদ্ধ, লেট সিটিং, নাইট আউট সমস্ত কিছু চলে এইসব মিনিস্ট্রিতে। যাঁরা মনে করেন সরকারি অফিস মানেই বেলা এগারোটায় আসা আর চারটেয় কেটে পড়া, তাঁরা একদুবার এইসব মিনিস্ট্রির অফিসে এসে দেখে যেতে পারেন, বাঁশ কাকে বলে।

    গেঁড়ির মত আরো কিছু উৎসাহী নতুন জয়েন করা অ্যাসিস্টেন্টের দল শুরু করল দিনবদলের কাজ। পার্লামেন্ট চলে বছরের কদিন মাত্র। বাকি সময় তো এই সব কোশ্চেন অ্যানসারের চাপ থাকে না সেকশনে। সেই সময়গুলোতে তারা সমস্ত ফাইলের ডেটা ভরতে শুরু করল ওয়ার্ডে, এক্সেলে। রাখতে শুরু করল ল্যানে। শেয়ার্ড ফোল্ডারে। টেবিলের ওপরে অবশেষে চায়ের কাপ রাখার জায়গা হল।

    বিপর্যয় কি হয় নি? অনেক হয়েছে, অনেকবার হয়েছে ফাইল, ফোল্ডারে রিড ওনলি অ্যাক্সেস না-দেওয়ার ফলে অন্য কারুর অসাবধানতায় গোটা গোটা ফাইল ডিলিট হয়ে যাওয়া, ট্র্যাক চেঞ্জ মোডে ফাইল কারেকশন সম্বন্ধে অবহিত না-হওয়ার জন্য আগের ডেটা সম্পূর্ণ ইরেজ হয়ে যাওয়া ... অনেক রকমের অসুবিধা হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে ডেটা এনট্রি, আবার এনট্রি, আবার, অ্যাক্সেস পার্মিশন বুঝতে শেখা ইত্যাদি করে করে আজ পাওয়ার মিনিস্ট্রির বেশির ভাগ সেকশনই অনেক বেশি সিস্টেমেটিক। কোনো মিনিস্টার পার্লামেন্টে কোনো স্পেসিফিক ডেটা চাইলে খোঁজবার জন্য আর ফাইল ঘাঁটতে হয় না বিশেষ, অনলাইনে সমস্ত ডেটা সহজেই সার্চ করে বের করে ফেলা যেতে লাগল।

    কমতে লাগল লেট সিটিং, আগে যেখানে রাত আটটা নটা অবধি থেকে কাজ নামাতে হত, এখন সেটা সন্ধ্যে সাতটাতে শেষ হয়ে যায়। ... মিনিস্ট্রির যে সব সেকশনকে পার্লামেন্টারি কোশ্চেনস হ্যান্ডল করতে হয়, সেখানে লেট সিটিং একেবারে নির্মূল হয় না, কারণ পার্লামেন্ট থেকে প্রশ্ন আসে বিকেল পাঁচটার পরে, যখন অধিবেশন শেষ হয়, আর উত্তর জমা দিতে হয় পরদিন অধিবেশন শুরু হবার আগে, বেলা এগারোটার মধ্যে। ফলে পাঁচটার পরে কনসার্নড লোকজনকে থাকতেই হয় কিছুক্ষণের জন্য। ... সে যাই হোক, এই যে কম্পিউটারে সমস্ত ফাইল মেন্টেন করায় অন্যান্য সেকশনের ওপর নির্ভরশীলতা কমে গেল, নিজেদের দরকারি সমস্ত ডেটা নিজেদের কাছেই রেখে দেওয়া গেল, ডেস্ক ও আলমারি বোঝাই হল না, সাবঅর্ডিনেটদের অখুশি হতে হল না নিত্যকার লেট সিটিং নিয়ে, এই ব্যাপারটা আস্তে আস্তে ঢুকতে শুরু করল সিনিয়র বুড়ো বুড়ো লোকজনের মাথায়। যে, কম্পিউটার ব্যাপারটা একটু আয়ত্ত করে ফেললে আখেরে লাভ আছে অনেক। সলিটেয়ার খেলা আর টাইপরাইটার হিসেবে ব্যবহার করার পাশাপাশিও কম্পিউটারের অনেক অনেক ইউটিলিটি আছে। অফিসের কাজ অনেক সুষ্ঠুভাবে নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করা যায়, অ্যানালিসিস করা যায়, বার চার্ট পাই চার্ট বানানো যায়, দশ পাতার টেকনিকাল ডিটেলস লেখার বদলে এক পাতার ডায়াগ্রামে অনেক বেশি জিনিস অনেক ভালোভাবে বোঝানো যায়।

    আজ, ২০১১ সালে এই ব্যাপারগুলো অনেক বেশিমাত্রায় অ্যাডপ্ট করে নিয়েছে মিনিস্ট্রির এমপ্লয়ীরা। অন্য সব মিনিস্ট্রির কথা জানে না গ্যঁ¡ড়া, তবে পাওয়ার মিনিস্ট্রির নিজস্ব ইনট্রানেট আছে, নিজস্ব ইমেল সিস্টেম আছে, এমনকি আর ক্যাশ সেকশন থেকে আগেকার মত স্যালারি স্লিপও নিতে হয় না, ইন?ট্রানেটে লগিন করলে সেখানেই ই-পেস্লিপ দেখতে পাওয়া যায়, দরকারমতো ডাউনলোডিয়ে নিলেই হল। ইন?ট্রানেটে সরাসরি চলে আসে এনআইসি-র ডেটা, নর্দার্ন গ্রিড ইস্টার্ন গ্রিড সাদার্ন গ্রিড ইত্যাদির ডেটা, সরাসরি সেখান থেকে কপি করে তুলে নেওয়া যায় প্রয়োজনীয় তথ্য।

    তবে কিনা, পাওয়ার মিনিস্ট্রি হল কমার্শিয়াল মিনিস্ট্রি। সেন?ট্রাল সেক্রেটারিয়েটের আন্ডারে দুরকমের মিনিস্ট্রি হয়, কমার্শিয়াল আর নন কমার্শিয়াল। পাওয়ার, টেলিকম, ইন্ডাস্ট্রি ইত্যাদি মিনিস্ট্রি দেশের ইনফ্রাস্ট্রাকচারের সঙ্গে যুক্ত, বিভিন্ন সরকারী এবং সরকারী নিয়ন্ত্রণাধীন কর্পোরেশনকে পরিচালনা করে এরা, যেমন পাওয়ার মিনিস্ট্রির কাছে টিকি বাঁধা থাকে এনটিপিসি, এনএইচপিসি, পাওয়ারগ্রিড ইত্যাদি কর্পোরেশনের, ফলে কর্পোরেট কালচারের অনেকখানিই ঢুকে পড়ে এইসব মিনিস্ট্রির মধ্যে। কম্পিউটারের ব্যবহার, ব্যাপক হারে ই-গভর্নেন্সের প্রচলন এসবের জন্য কখনো বাজেটের অভাব হয় না এইসব মিনিস্ট্রিতে।

    ২০০৯ নাগাদ প্রমোশন হয়ে গেঁড়ির মিনিস্ট্রি বদলে গেল। এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরুতে। বাজেটের অভাব এখানেও নেই, বরং দেশের বাৎসরিক বাজেটের একটা বড় অংশ এখানে ঢালা হয়, কোনো কমার্শিয়াল সেক্টরের কৃপাদৃষ্টি অবশ্য এখানে পড়ে না। কিন্তু সেই বাজেটের একটা টাকাও এইসব কাজে ব্যয় করা যাবে না। কম্পিউটার, আজ ২০১১ সালে আছে প্রায় সমস্ত জায়গাতেই, তবে ইন্টারনেট নেই, ল্যান নেই, ইন?ট্রানেট তো পরের কথা। সমস্ত কাজ হবে কেবলমাত্র কাগজে, আর কেবল মাত্রই কাগজে। ডকুমেন্ট সমস্তই সেন্সিটিভ, টেবিলের ওপরে কিছুটি ফেলে রাখা চলবে না, সমস্ত আলমারি বন্ধ করে রাখতে হবে। কাজে না লাগলে শ্রেডারে ফেলে কুচিকুচি করে নষ্ট করে ফেলতে হবে কাগজের প্রতিটা টুকরো। ইউএসবি নিষিদ্ধ, সিডি নিষিদ্ধ, ফ্লপি নিষিদ্ধ, ল্যান নিষিদ্ধ, এমনকি মোবাইলও নিষিদ্ধ, মানে মোবাইল নিতে গেলে স্পেশাল পারমিশন লাগে, সে এমন মোবাইল হতে হবে যাতে ক্যামেরা নেই, ব্লুটুথ নেই, ইউএসবি পোর্ট নেই, স্টোরেজ ফেসিলিটি নেই, মানে জাস্ট কল করা যাবে আর এসেমেস করা যাবে, এমন মোবাইল অ্যালাউ করা হয় জয়েন্ট সেক্রেটারির স্পেশাল পারমিশনের দ্বারা। সাড়ে পাঁচটার মধ্যে নিজের সেকশন বন্ধ করে চাবি জমা করে আসতে হয়। সাড়ে পাঁচটার পরে যদি কোনো সেকশনের দরজা খোলা দেখা যায় তো পরদিন সেই সেকশন অফিসারের নামে শো-কজ নোটিস জারি হয়, সন্তোষজনক উত্তর না দিতে পারলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নেওয়া হয়, সিপিএম পলিটব্যুরোর স্টাইলে অফিসারকে ডেকে ভর?ৎসনা করা হয়।

    ওয়েলকাম টু মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। সিকিওরিটির কারণে এখানে ই-গভর্নেন্স অচল। কম্পিউটার আছে, কিন্তু তা কেবলমাত্র টাইপরাইটার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। প্রিন্ট আউট নেওয়া যায়, সেই কাগজ নোটশীট দরকারমতো এখানে ওখানে পাঠানো যায়, দরকারমতো পরে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজনীয় ট্যাগ লাগিয়ে লকারে রেখে দেওয়া যায়, কিংবা দরকার না থাকলে ছিঁড়ে কুচিয়ে ফেলে দেওয়া যায়। কিন্তু অনলাইনে একটি কাজও হয় না এখানে। ডিফেন্স একটি বিশাল বড় মিনিস্ট্রি। সারা দিল্লি জুড়ে এদের অফিস, এবং লাগোয়া বিভিন্ন রকমের কম্যান্ড ও কম্পানি মিলিয়ে সাইজটা আরো আরো বড়। লাগোয়া কম্যান্ডে হয় তো নিজেদের মতো করে ই-গভর্নেন্স চলে, যেমন ডিআরডিও বা ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড, কিন্তু কোর ডিফেন্সে, যেখানে গা ঘষাঘষি করে কাজ করতে হয় আর্মি পার্সোনেল এবং সিভিল অফিসারদের, গেঁড়ি যাদের মধ্যে একজন, সেখানে ইলেকট্রনিক কোনো রকম পদ্ধতির প্রবেশ একেবারে বন্ধ।

    তবে ডিফেন্স, এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স, এবং বছরের কিছু সময়ের জন্য ফিনান্স, এই হাই প্রোফাইল কিছু মিনিস্ট্রি ছাড়া আর কোথাওই এই রকমের কড়াকড়ি নেই। অন্য যে কোনো সাধারণ মিনিস্ট্রি অফিসে গেলে আজকের দিনে দেখা যাবে বেশির ভাগ কাজই হচ্ছে অনলাইন। মিনিস্ট্রির বাইরের দিল্লির সরকারি জগৎ সম্বন্ধে গ্যঁ¡ড়া গেঁড়ির বিশেষ কোনো আইডিয়া নেই, কারণ ভৌগোলিক বিচারে তারা থাকে উত্তরপ্রদেশে। সেখানে অনেক কিছুই এখনো প্রিমিটিভ। কিন্তু দিল্লি নামক আধা-রাজ্যটিতে সরকারের সঙ্গে আমজনতার ইন্টার্যারকশনের কিছু নমুনা, ইন্টারনেটের সাইট ঘাঁটলেই দেখা যেতে পারে।

    দিল্লিতে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করা যেতে পারে অনলাইন। টেস্টের জন্য কল বা এসেমেস আসবে, সেই সময়ে গিয়ে টেস্ট দিয়ে এলেই হল।

    লাইসেন্স, বা রেশন কার্ড, বা ভোটার কার্ডের জন্য অ্যাপ্লিকেশন, এবং অ্যাপ্লাই করার পরে স্টেটাস চেক, সমস্ত কিছু অনলাইন করা যায়।

    আপনার গাড়ির কখনো কোথাও চালান কাটা গেছে কিনা, বা চালানের ডিউ ডেট কবে, বা চালানের অর্থ জমা করা, সমস্ত কিছু ট্র্যান্সপোর্ট ডিপার্টমেন্টের অনলাইন সাইটের মাধ্যমে দেখা যায় বা পেমেন্ট করা যায়।

    এলাকায় পাড়ায় কোনো অসুবিধা, কোনো বিশেষ ফেসিলিটির অনুরোধ, অনলাইন করা যায় দিল্লি গভর্নমেন্টকে। সেই সব অনুরোধ অভিযোগ রীতিমতো পড়া হয় এবং রিপ্লাইও দেওয়া হয়। গ্যঁ¡ড়া একবার একটা বিষয়ে মেল করেছিল, তার উত্তর এসেছিল সাত দিনের মধ্যে।

    দিল্লির বাস নম্বর, বাস রুট জানা, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাবার জন্য বাসের নম্বর জানা ইত্যাদি সমস্ত কাজই অনলাইন করা যায়। এমনকি কোনো প্রয়োজনে ডিটিসির বাস বুকিংএর আবেদনও অনলাইন করা যায়।

    কেন্দ্রীয় লেভেলে এখন ইনকাম ট্যাক্স জমা দেওয়া, পাসপোর্টের অ্যাপ্লিকেশন জমা করা, বা সে-সবের স্ট্যাটাস চেক করা, সারা ভারতেই সম্ভব। এনআইসি-র সহায়তায় সারা ভারতে অনেক কিছুই বাঁধা পড়ছে ই-গভর্নেন্সের আওতায়।

    এইভাবেই, একটু একটু করে পাল্টাচ্ছে দেশ, পাল্টাচ্ছে দিল্লি বা তার আশেপাশের এলাকার ছবি। কয়েক বছর আগেও যা ভাবাও যেত না, এখন সে-সব ভাবা যাচ্ছে, করাও যাচ্ছে। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে দেশের সমস্ত রাজ্য নিজেদের আওতায় থাকা সমস্ত বিভাগগুলোকে ই-গভর্নেন্সের অধিকারে নিয়ে আসতে পারবে, তথ্যের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হবে দেশের প্রতিটি কোণায়, তা মেনটেন করা সহজ হবে, আমজনতার আরো কাছে পৌঁছতে পারবে সরকারের সুযোগ-সুবিধা।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৫ জুন ২০১১ | ১২১৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন