এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  গপ্পো

  • ব্র্যান্ড ইমেজ

    শমীক মুখোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ১৬ মার্চ ২০১১ | ১০৩৭ বার পঠিত
  • দীপ্তেন ফিরেছে বহুদিন বাদে বিদেশ থেকে, সফটওয়্যারের জগতে সে একজন আঞ্চলিক গুরুবিশেষ, কোম্পানি তাকে তাই নিজের খরচায় সপরিবারে বেশ অনেক অনেকদিন করে আমেরিকায় ইউরোপে রেখে দেয়, আর দীপ্তেন নিজের জাভা-সুমাত্রা জ্ঞানের জ্যোতি বিকিরণ করে মাসের শেষে গুচ্ছ গুচ্ছ ডলার ইউরো কামায়। বাজারি সফোর বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করে তার চোখেও রিমলেস চশমা, পরণে নিভাঁজ কোম্পানির ব্র্যান্ডওলা টিশার্ট, পকেটে টিভির রিমোটের সাইজের লেটেস্ট মডেলের সেলফোন, যাতে এত বেশি ফীচার আছে, যে লোকে ফোন করার ফীচারটাই ভুলে যেতে বাধ্য, মানে চার-পাঁচ বছর আমেরিকায় থেকে আসা একজন সফোর পক্ষে যা-যা বাহ্যিক পরিবর্তন আসা সম্ভব, সবই আছে দীপ্তেনের মধ্যে।

    যারা যারা দীপ্তেনকে চেনেন না তাদের অবগতির জন্য এটাও জানিয়ে রাখি, বাইরে যেমনই হোক, ভেতরে ভেতরে দীপ্তেন আমাদের সেই কলেজ জীবনের আড্ডাবাজ দীপ্তেনই রয়ে গেছে, এখনও। এক ধরণের মানুষ হতেন না, আগেকার দিনে, সন্ধ্যের জমায়েতে, মুড়ি চানাচুর পেঁয়াজকুচোটা চেটেপুটে শেষ করে, চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বেশ জমিয়ে নিত্যিনতুন আসর জমানো গপ্পো ছাড়তেন, দীপ্তেন হচ্ছে এ-যুগের ঠিক সেই ধরণের পাবলিক। আসর জমানো গল্প ঠিকমতো রসিয়ে ছাড়তে দীপ্তেনের জুড়ি নেই।

    তো, সেই গভীর দশ, ওরফে Deep-Ten, দেড় বছরের সুদীর্ঘ ইউকে বাস শেষ করে আবার ভারতে ফেরত, এবং দোলপূর্ণিমার প্রাক্কালে, উইকএন্ডের বিকেলে আমার দিল্লির ফ্ল্যাটে। এত বছর বিলেতবাস করেও মুড়ি-চানাচুরের জন্য ওর কাঙালপনাটা এখনও সমানভাবে উপভোগ্য, তো সেই চানাচুর আর মুড়ি খেতে খেতেই আলাপচারিতা চলছিল। দেড় বছরের জমে থাকা নানান গাল এবং গল্প, সবই চলছিল আমার বউ মাধবীর কান বাঁচিয়ে। ধোবী, ইয়ানি কি মাধবী, ওকে আমি ধোবী বলেই ডাকি, আর নিজেকে ডাকি ধোবী-কা-গাধা বলে, ধোবী তখন আলমারি হাঁটকে পুরনো টিশার্ট খুঁজে বেড়াচ্ছে, হোলির দিন পরবে বলে। হোলির দিনও দীপ্তেন দিল্লিতেই থাকবে, অতএব আমাদের সাথেই আমাদের সোসাইটিতেই হোলি খেলবে, তাই ধোবীকে গলা বাড়িয়ে দীপ্তেনের জন্যও একটা পুরনো টি-শার্ট খুঁজে রাখতে বলে দিলাম।

    বিস্কুটে কামড় দিতে দিতে তীক্ষ Á চোখে ওঘরের আলমারির সামনে জমে ওঠা কাপড়ের স্তুপ দেখে যাচ্ছিল দীপ্তেন। একসময়ে জিজ্ঞেস করে ফেলল, পুরনো টি-শার্ট জামা-টামা জমে গেলে তোরা কী করিস? কাউকে দিয়ে দিস? হেসে ফেললাম, অ্যাজ সাচ তো কোনও প্ল্যান নেই, আর রোজ রোজ তো পুরনো জামাকাপড় জমেও না, তবে যখন যেমন সুযোগ পাওয়া যায়, বন্যাত্রাণ বা ভূমিকম্পের ভিক্টিম, কিংবা দু:স্থদের ক্যাম্প, ডাক দিলেই ঘরে যা থাকে ধরে দিয়ে দিই, কিছু বাঁচিয়ে রাখা থাকে বচ্ছরকার দিনের জন্য, হোলি খেলব বলে। হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?

    দীপ্তেন চায়ে চুমুক দিল, আর কোম্পানির লোগোওলা টিশার্টগুলো? সেগুলোর কী করিস? ঐ একই গতি?

    আমি বললাম, হ্যাঁ, কোম্পানির টিশার্ট আবার আলাদা কীসে? পুরনো হলে বাতিল, তারপর বাকি জামাকাপড়ের যেমন গতি হয়, তাদেরও তেমনই গতি হয়। কোম্পনির টিশার্ট বলে কি, আলাদা খাতির নাকি?

    দীপ্তেন সশব্দে চুমুক দিল চায়ে, ঐ ত্তো, ঐখানেই কবি কেঁদেছেন। কোম্পানি তোমায় রুটি আর মাখন জোগায়, দানাপানি খাওয়ায়, আর কোম্পানির লোগো-ওলা টিশার্টের তুমি খয়রাতি করবে বন্যাদুর্গতদের মধ্যে? কোম্পানির ব্র্যান্ড ইমেজ মার খাবে না? কোম্পানির ইজ্জতে লাগবে না? কোম্পানির সদাবাহার ডিলাইটেড এমপ্লয়ি হিসেবে কোম্পানির ইজ্জত বাঁচানো তোমার সুমহান কর্তব্য কি না? কী বলে তোমার কর্পোরেটের সহজ পাঠ?

    দীপ্তেনের মতো, আমিও সফো। তবে বহুজাতিক কর্পোরেটের নয়, মাঝারি মাপের সেমি-কর্পোরেটের। সহজ পাঠের নীতিশিক্ষা আমিও শিখে চলেছি নয়-নয় করে পনেরো বছর। তাই বুঝতে কষ্ট হল না, দীপ্তেন কী বলতে চাইছে। অল্প হেসে বললাম, ঘটনা আছে নাকি, এর ওপর?

    চোখ বন্ধ করে তাকিয়ায় হেলান দিল দীপ্তেন, আছে মানে? একেবারে শ্রেণী-সংগ্রাম কেস।

    অত:পর একটি দীর্ঘ পজ্‌ এবং পজ্‌-অন্তে দীপ্তেনের চক্ষু-উন্মীলন। ইতিমধ্যেই আমি ধোবীকে ডেকে ফেলেছি, এবং কুড়কুড়ের আরেকটা প্যাকেট খুলে ফেলেছি। অনেকদিন বাদে, গপ্পোবাজ দীপ্তেন আবার গপ্পের মুডে, এবং মাশ্‌আল্লাহ্‌, আমরাও উদগ্রীব হয়ে শ্রোতার মুডে। এমন বিরল যুগলবন্দীতে অতএব বেজে উঠল অর্কেস্ট্রা।

    তখন আমি ভুবনেশ্বরে পোস্টেড, ... গুছিয়ে বসল দীপ্তেন, ... তুই তো জানিস, দুহাজার থেকে দুহাজার দুই পর্যন্ত আমি ওখানেই ছিলাম, টেকনোসিস কোম্পানিতে। ঘ্যামা কম্পানি, শহরের শেষপ্রান্তে, নন্দনকাননের দিকে তাদের অফিস-এলাকা, পুরো সেভেন স্টার রিসর্ট, প্রায়ই ওড়িয়া ছবির শুটিং টুটিং হয় অফিস চত্বরে।

    সেই সময়ে ভুবনেশ্বর ছিল আস্ত একটা শহুরে গ্রাম টাইপ, ছোদ রাজধানী শহর, ঐ টেকনোসিস ছাড়া আর কোনও সফটওয়্যারের কোম্পানি ছিল না তখন, হয় তো আজও নেই, কিম্বা আছে, জানি না, মোদ্দা কথা, তখন আমাদের কোম্পানিই একমাত্র। শহরের মধ্যে বড়লোক সম্প্রদায়। সফটওয়্যার ব্যাপারটা তখনও নতুন, প্রচুর পয়সা, লোকজন হুট বলতেই বিলেত আমেরিকা যাচ্ছে, ফিরে এসেই ফোর্ড আইকন আর মারুতি এস্টীম নামাচ্ছে, শহরের সমস্ত রেস্টুরেন্টে আমাদের তখন ভগবানের মত খাতির, গিয়ে আই কার্ড দেখালেই কুড়ি পার্সেন্ট ছুট, বড় হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েট হল্‌ টেকনোসিসের এমপ্লয়িদের জন্য ফ্রি বুকিং, ইত্যাদি ইত্যাদি। আর আমাদের মত কলেজ পাস করা সদ্য চাকরি পাওয়া ছেলেপুলের দল জীবনের শুরুতেই বেশ রাজকীয় ঠাটবাটে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে নিজেদের অজান্তেই।

    কেতার কোম্পানি, টাই পরে আপিস যেতে হত, কথায় কথায় চারতারা পাঁচতারা হোটেলে "সফ্‌ট স্কিল'-এর ক্লাস উইথ খানাপিনা, মাসে দুখানা করে পার্টি, ওমুক প্লাজা, তমুক লেগুন, প্রজেক্ট পার্টি, অ্যাকাউন্ট পার্টি, এর জন্মদিন, ওর অ্যানিভার্সারি, মানে সুখের সপ্তম স্বর্গে বাস করছি তখন আমরা। রিসেশন তখনও আসে নি।

    এই সব সফ্‌ট স্কিল বা টেকনিকাল টিম বিল্ডিং ইত্যাদি ঢপের ট্রেনিং নিতে আমাদের প্রায়ই এদিক ওদিক নিয়ে যেত, বেশির ভাগ সময়েই পুরীর দিকে কোনও বিচ্‌ রিসর্টে। সারাদিনের হুল্লোড়, খাওয়া দাওয়া, তার সাথে উপরি পাওনা একটা করে টি-শার্ট। বুকে বা পিঠে টেকনোসিস কোম্পানির লোগো, সাথে একটা করে লাগসই স্লোগান টাইপ্‌স কিছু। এই করে করে জাস্ট দুই বছরের ভুবনেশ্বরবাসে আমার যে আলটিমেটলি কতগুলো টি-শার্ট জমেছিল তার ইয়ত্তা নেই। টিশার্টগুলো সবগুলো যে খুব ভালো কোয়ালিটির ছিল, তা-ও নয়, বেশ কিছু এমনও জুটত, যেগুলো বার-পাঁচেক কাচার পরে আর পরার যুগ্যি অবস্থায় থাকত না, তখন সেগুলো খয়রাতি করা ছাড়া গতি থাকত না।

    তো, মনে কর আজ থেকে প্রায় বছর ছয়েক আগেকার কথা। সেদিন দুপুর থেকেই আপিসের ম্যানেজারমহলে একটা চাপা চাঞ্চল্য লক্ষ্য করা গেল। ডিসি হেড এবং প্র্যাকটিস হেডদের একটু বেশিমাত্রাতেই এই বিল্ডিং থেকে ঐ বিল্ডিং যাতায়াত করতে দেখা গেল এবং মুখে গাম্ভীর্যও বেশ দূরের ব্যালকনি থেকে লক্ষ্য করা গেল। আমি তখন সেমি ম্যানেজার র‌্যাঙ্কে ছিলাম বলে ঘটনার কার্যকারণ অনুসন্ধান করে বের করতে খুব বেশি বেগ পেতে হল না, কারণ কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের কাছেও মেল চলে এল।

    কারণ আর কিছুই নয়। কোনও এক শুভানুধ্যায়ী টেকনোসিয়ানের পোস্ট করা একটি মেল জেনারেল ফোল্ডারে আত্মপ্রকাশ করে, হিন্দিতে যাকে বলে, একেবারে হড়কম্প্‌ মাচিয়ে দিয়েছে।

    এইখানে আমি দীপ্তেনকে একটু থামালাম। জেনারেল ফোল্ডারটা কী জিনিস?

    দীপ্তেন সশব্দে একটা কুড়কুড়ের প্যাকেট খুলল, টেকনোসিসে একটা মজার জিনিস ছিল, বুলেটিন বোর্ড, বা জেনারেল ফোল্ডার। যে কোনও বিষয়, বাড়ি ভাড়া হোক কি ভালো রেস্টুরেন্টের খবর, কিংবা সিনেমার রিভিউ, অথবা ভুবনেশ্বরের লোডশেডিং, যে কোনও বিষয় নিয়ে সেখানে আলোচনা করা যেত ইমেলের মাধ্যমে। জেনারেল ফোল্ডারে পোস্ট করা মেল সবাই দেখতে পেত, যে-কেউ সেখানে উত্তর দিতে পারত। এমনি মেলের ক্লায়েন্টেই সেটা আলাদা একটা ফোল্ডার হিসেবে দেখা যেত, যেত মানে এখনও যায় হয় তো, অথবা যায় না, আমি জানি না, সেখানে মোটামুটি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উত্তাল ভাট বা খোরাকি হত, বেশ একটা টাইমপাস মত ব্যাপার ছিল সেই জেনারেল ফোল্ডার।

    তো, সেই জেনারেল ফোল্ডারে কেউ একজন এমপ্লয়ি পোস্ট করেছে, গত উইকএন্ডে পাটিয়া ছকের বাজারে একজন সব্জি বিক্রেতাকে বেগুন বেচতে দেখা গেছে; মানে সেটা তেমন উল্লেখযোগ্য ব্যাপার কিছু নয়, বেগুনওলা তো বেগুনই বেচবে, কিন্তু উল্লেখযোগ্য ব্যাপারটা হল, সেই বেগুনওলার পরণে ছিল টেকনোসিসের টি-শার্ট, যেটা টেকনোসিসের এমপ্লয়িদের জয়েনিংয়ের সময়ে ট্রেনিং ডিপার্টমেন্ট থেকে দেওয়া হয়। অবশ্যই টি-শার্টটা বেশ পুরনো, রং জ্বলে যাওয়া, কিন্তু সেই এমপ্লয়ি সাম্যবাদের ধার ধারে না, টেকনোসিয়ান আর বেগুনওলার মধ্যে যে এক সুগভীর স্টেটাস ডিফারেন্স আছে, পলিটিক্যালি সোশ্যালি ইকোনমিক্যালি কোনওভাবেই যে একজন বেগুনওলা একজন টেকনোসিস এমপ্লয়ির সমস্তরের সমগোত্রের হতে পারে না, ইন শর্ট কোনওভাবেই যে একজন বেগুনওলার পরনে টেকনোসিসের টিশার্ট শোভা পায় না, সেই কথা সে স্মার্টলি লিখে এইচআর এবং ডিসি হেড, মানে বড়কত্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। মানে গোদা বাংলায় রিকোয়েস্ট করেছে "টু টেক নেসেসারি অ্যাকশন।'

    তো দেখা গেল, সেই টেকনোসিয়ান একা নয়, টেকনোসিসের যাবতীয় তাবড় তাবড় ম্যানেজার এবং খোদ বড়কত্তাও এই পথেই ভাবেন। না হলে সাথে সাথে এই রকম মেল চলে আসত না সক্কলের কাছে। কোনও সন্দেহ নেই, এ ছেলে বড় হলে নির্ঘাৎ ম্যানেজার হবে। প্রথমে সুশোভিত কনফারেন্স রুমে সমস্ত বড় ম্যানেজারদের ডাকলেন বড়কত্তা। টু ডিফাইন হোয়াট নেসেসারি অ্যাকশন ক্যান বি টেক্‌ন। বাজারে গিয়ে তো আর লোকটার গা থেকে টি-শার্টটা টেনে খুলে ফেলা যায় না, প্রথম কথা সেটা টেকনোসিসের ম্যানেজারোচিত কাজ হবেও না, দ্বিতীয়ত লোকটা যদি নিষ্পাপ মনে এই প্রকার শাস্তির কারণসমূহ জানতে চায়, তাহলে তাকে আর্থসামাজিক পরিকাঠামোগত বৈষম্যগত কারণ বোঝাতে যাওয়াও খুব একটা যুক্তিসঙ্গত হবে না; একে তো সে বেগুনওলা নিরক্ষর, ওদিকে ম্যানেজাররাও পাওয়ারপয়েন্ট আর প্রজেক্টার ছাড়া আর কোনও মাধ্যমে বেগুনওলাকে কিছু বোঝানোর মত পরিস্থিতিতে নেই।

    তা হলে? কে হবে সেই ম্যানেজমেন্ট গুরু? কে সেই জোয়ান হবে আগুয়ান, বাঁধিবে ঘন্টা বেড়ালের গলায়?

    একজন মাঝারি ম্যানেজার আওয়াজ দিলেন, ব্যাপারটার রুট কজ অ্যানালিসিস করলে হয় না? মানে, ওটা তো পুরনো হয়ে যাওয়া সেকেন্ড হ্যান্ড টি-শার্ট, টেকনোসিসের ইন্টারনাল এমপ্লয়ি ছাড়া আর কারুর পাবার কথা নয়, নিশ্চয়ই কোনও টেকনোসিয়ানই দিয়েছে ওকে, পুরনো হয়ে গেছে বলে, সেই এমপ্লয়িটিকে ট্রেস করে তাকে গোপনে ডেকে একবার সমঝে দেওয়া যায় না?

    বড়কত্তা ব্যাঁকা হাসলেন, পাগল হয়েছো? এই ডিসি-র স্ট্রেংথ কত জানো? পাঁচহাজার। ভুবনেশ্বরের ওয়ান থার্ড সিটিজেন এই কোম্পানির এমপ্লয়ি। এর মধ্যে তুমি খুঁজবে কী করে কার টিশার্ট?

    তা ঠিক। ভ্যালিড কারণেই চুপ করে গেলেন সেজোকত্তা। লোককে তো ধরে ধরে জিজ্ঞেস করা যায় না তুমি তোমার ট্রেনিং পিরিয়ডের টিশার্ট বেগুনওলাকে দান করেছো কিনা, সেটা খুব একটা সুস্থতার লক্ষণ হবে না, আর এমপ্লয়িদের এ ধরণের প্রশ্ন করলে তারা আরওই ভয় খেয়ে যাবে, ভাববে বেগুনওলাকে টিশার্ট দিলে পরে নিশ্চয়ই চাগ্রি চলে যায়, কেউই স্বীকার করবে না এমন মহৎ দানের কথা। তবু ...

    অন্ততপক্ষে সহকর্মীর ইজ্জত বাঁচানোর তাগিদেই হাত তুললেন আরেক সেজোকত্তা, তবু, আর কখনও যাতে এ ধরণের ঘটনা না রিপিট করে, সেই ব্যাপারে এমপ্লয়িদের সতর্ক করে দেওয়াটাও তো উচিত। একটা মাস মেল করে দেওয়া যেতেই পারে চেতাবনি দিয়ে।

    গুড্‌, চশমার ফাঁক দিয়ে মুচকি হাসলেন বড়কত্তা, গুড সাজেশ্‌চন। তা সেজো, তোমাকেই আমি ভার দিলাম এই রকম একটা মাস মেলের ফর্ম্যাট তৈরি করার, কনটেন্টে কী লিখবে সেটা কমপ্লিটলি তোমার রেস্পনসিবিলিটি, শুধু দেখো ব্যাপারটা যেন যথেষ্ট অ্যাক্সেপ্টেব্‌ল হয়, সব রকমের এমপ্লয়িদের কাছেই, কেউ যেন ওর ওপর কোনও রকমের ক্রস করার মত পয়েন্ট তুলতে না-পারে।

    মুচকি হাসলেন সেজোকত্তাও, গোঁফের ফাঁক দিয়ে, অ্যাপ্রেইজালের এক্সেল শীটে লেখার মত একটা পয়েন্ট তো অন্তত জোগাড় হয়ে গেল তাঁর। মেলের কনটেন্ট লিখতে তাঁর বয়েই গেছে, সে তো তিনি ছোটকত্তাকে দিয়ে লেখাবেন, ছোটকত্তার অ্যাপ্রেইজালের রেটিং আবার তাঁরই হাতে কিনা! সে না-হয় ভবিষ্যতের সাম্যবাদের অশুভ সম্ভাবনা মাস মেল করে সমূলে বিনাশ করে দেবার প্ল্যান করে ফেলা গেল, কিন্তু বর্তমানে বেগুনওলার লোমশ গায়ে যে সাম্যবাদের টিশার্ট শোভা পাচ্ছে, যার জন্য হেলায় বিশ্ব তথা ন্যাসড্যাক জয় করে ফেলা টেকনোসিসের মান ইজ্জত আজ ধূলোয় লুটোতে বসেছে, তার কী হবে? ভুবনেশ্বর এমনিতে খুব ছোট শহর, বৃহৎ একটা গ্রামই বলা যায়, সেখানে টেকনোসিসের এমপ্লয়িদের বিশাল কদর, সমস্ত দোকানে হোটেলে রেস্টুরেন্টে টেকনোসিসের টিশার্ট পরে ঢুকলে যে-সম্মান পাওয়া যায়, আজ একটা সামান্য বাজারওলা সেই টেকনোসিসের টিশার্ট পরে খোলা বাজারে বেগুন বেচে বেড়ালে টেকনোসিসের বাজারদর পড়ে যাবে না? এর বিহিত হয় কীভাবে?

    প্রথম সেজোকত্তা, যাঁর প্রোপোজাল প্রথমেই খারিজ হয়ে গেছিল, তিনি এতক্ষণে নড়েচড়ে বসলেন। আইডিয়া! টেকনোসিসে জনে-জনে শুধোবার থেকে সোজা গিয়ে সেই বেগুনওলাকে একটু কায়দা করে শুধোলে হয় না? বেগুনওলা তো আর কে ম্যানেজার কে পাতি এমপ্লয়ি, চিনবে না, এমনি গিয়ে ক্যাজুয়ালি জিজ্ঞেস করলে পরে একটা তো ক্লু পাওয়া যাবে। তারপরে আদু কায়দা করে তার কাছ থেকে ঐ টিশার্টটা বাগিয়ে ফেলতে পারলেই তো হল! বাজারচলতি গোটা দুয়েক পাতি টিশার্ট ওকে কিনে দিলেই ও আরামসে ফেরত দিয়ে দেবে টেকনোসিসের টিশার্ট। কীভাবে ইমপ্লিমেন্ট করা যাবে এই এক্সচেঞ্জ পলিসি, সে নিয়ে বাকি কারুর মাথা না-ঘামালেও চলবে , সে সব প্ল্যান ছকে নিতে তিনি নিজে একলাই কাফি।

    বড়কত্তা কথা বিশেষ বলেন না, চশমার ফাঁক দিয়ে তাকিয়েই তিনি তাঁর কম্যুনিকেশন গ্যাপটা কমিয়ে আনেন। এবারেও তিনি আবার তাকালেন, ঐ একই লুক দিয়ে, চোখে কেবল প্রশ।À দেখুন, প্রথম সেজোকত্তা গুছিয়ে নিলেন প্রথমেই, আমাদের প্রথম কাজ হল ঐ বেগুনওলাকে আইডেন্টিফাই করা। পাটিয়া ছকে বসে খুব বেশি লোকে নিশ্চয়ই বেগুন বেচে না, মোটামুটি ন্যারো-ইন করে নেওয়াই যায় ঝুড়িতে বেগুন দেখে। এইবার যে কমপ্লেইনটা জেনারেল ফোল্ডারে পোস্ট করেছে, তাকে সাথে নিয়ে একদিন সন্ধ্যেবেলা বাজারে গেলেই আশা করি সে-ই চিনিয়ে দিতে পারবে। তারপরে বেগুনওলাকে বাকি টুপি পরানো তো আমার বাঁয়ে হাত-কা-খেল। ডিসি হেড, মানে বড়কত্তা খুব একটা খুশি হতে পারলেন না। একজন নিচুতলার এমপ্লয়িকে নিয়ে তোমার মত একজন ম্যানেজারের পক্ষে সন্ধ্যেবেলা সবজি-বাজারে গিয়ে বেগুনওলা আইডেন্টিফাই করা প্রফেশনালি মোটেই এথিক্যাল হবে না। আর সে এমপ্লয়িই বা রাজি হবে ভেবে নিচ্ছো কেন? আর রাজি হলেও সে সেই বেগুনওলাকে চিনে রেখেছে এমন গ্যারান্টিই বা কে দিয়েছে? নিজের পিঠ বাঁচাবার জন্য সে তো যে-কোনও সবজিওলাকেই দেখিয়ে দিতে পারে, সে ক্ষেত্রে খামোকা ঝাড় খাবে একজন নিরপরাধ মানুষ। না-না, এভাবে হবে না।

    অ্যাপ্রেইজালের হাই রেটিং তাঁর হাত থেকে প্রায় বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে মরিয়া হয়ে উঠলেন এবার এক্সেলারাই পাস্‌ ম্যানেজার সেজোকত্তা, হবে হবে। আমি বলছি দেখে নিন, কিভাবে ঠিক লোককে দিয়ে ঠিক কাজটি করিয়ে নিতে হয় আমি জানি। চোখ বন্ধ করে ভরসা রাখুন আমার ওপর। এক সপ্তাহের মধ্যে আমি আসল সব্জিওলাকে খুঁজে ফেলব, আর দেড় থেকে দু-সপ্তাহের মধ্যে বাগ এলিমিনেট হয়ে যাবে।

    এইখানে একটা বিড়ি ধরাবার জন্য কিছুক্ষণ থামল দীপ্তেন, সেই ফাঁকে আমি শুধিয়ে বসলাম, এই পাটিয়া ছক-টা কি কোনও বাজার এলাকা টেলাকা?

    একমুখ ধোঁয়া গাল ফুলিয়ে গিলে ফেলে জবাব দিল দীপ্তেন, হ্যাঁ, বলতে পারিস। আসলে ভুবনেশ্বরের কিছু টিপিকাল ব্যাপার আছে। একেকটা রাস্তার মোড়কে এরা "ছকো' বলে রেফার করে। মানে সাদা বাংলায় চক্‌। চক্‌-এর ওড়িয়া হল ছক। আর ওড়িয়ারা তো যে কোনও অ-কারান্ত শব্দের শেষেই একটা করে "অ' লাগায়, তাই ছকঅ। এমনি আছে মেফেয়ার ছকঅ, মানে মেফেয়ার হোটেলের সামনের মোড়, জয়দেব বিহারঅ ছকঅ, ওমফেড ছকঅ, পাটিয়া ছকঅ ইত্যাদি। পাটিয়া চকের মোড়ে সন্ধ্যেবেলায় বাজার বসে, ঐ এলাকার লোকজন সন্ধ্যেবেলায় ওখান থেকেই সব্জিবাজার টাজার করে আর কি।

    হ্যাঁ, যা বলছিলাম। এক্সেলারাই থেকে পাস সেই সেজোকত্তা, অতএব ফিল্ডে নেমে পড়লেন তাঁর ম্যানেজারিয়াল ক্যাপা দেখাতে। যেভাবেই হোক, নিজের চেষ্টাতেই হোক বা কাউকে ধরে, পাটিয়া ছকে সমস্ত বেগুনওলাকে তিনি চিনে ফেললেন গোপনে। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই কারুর পরনেই তিনি টেকনোসিসের টি-শার্ট দেখতে পেলেন না, সকলেই ঘামে ভেজা হলদেটে গেঞ্জি পরে বা আদুড় গায়ে বেগুন বেচছে। কেউ কেউ বেগুনের সাথে অন্যান্য সবজিও বেচছে। মোদ্দা কথা, তাঁর ইনফর্মার তাঁকে আসল কালপ্রিটকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে পারল না, ফলে ম্যানেজারের নিজের আঙুল চোষা ছাড়া বিশেষ কোনও রাস্তা খোলা থাকল না।

    কিন্তু তিনি এক্সেলারাই পাস ম্যানেজার। এত সহজে হাল তিনি ছাড়বেন কেন? প্রতি সন্ধ্যায় বাজারের মধ্যে ছদ্মবেশী গোয়েন্দার মত চক্কর কাটা তিনি ছাড়লেন না, ব্যাটা একদিন না একদিন তো আসবেই সেই টি-শার্ট পরে! ধরতেই হবে তাকে।

    এইরকম বাজারের মধ্যে সান্ধ্যভ্রমণে তাঁর প্রাথমিকভাবে কিছু লাভ হল না বটে, তবে ফল আংশিকভাবে হলেও, মিলল চতুর্থ সন্ধ্যেতে। দূর থেকে এক মাছওলার পরনে একটা টিশার্ট দেখে তাঁর মনে হল, এইটা সেই টিশার্ট হলেও হতে পারে। কিন্তু তিনি কিছুতেই নিশ্চিত হতে পারলেন না। এমনিতে তিনি নিরামিশাষী, মাছের গন্ধে তাঁর বমি আসে, কিন্তু অসীম সাহসে ভর করে মাছওলার কাছাকাছি তিনবার তিনি ঘুরে এলেন, এবং তারপরে এই সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছলেন যে মাছওলার পরনের টিশার্টের রংটা টেকনোসিসের সেই টিশার্টের মতই, কিন্তু বুকের কাছের লোগোটা এত ছোট, ঠিকঠাক পড়া যাচ্ছে না, তাই নিশ্চিত হয়ে বলাও যাচ্ছে না, এটাই টেকনোসিসের ট্রেনিং পিরিয়ডের দেওয়া টি-শার্ট কিনা। যদি তাইই হয়, তা হলে তো আরেক কেলো। ছিল এক বেগুনওলা, এখন তার সাথে জুড়ে বসল আরেক মাছওলা। ছ্যা ছ্যা, কোম্পানির ব্র্যান্ড ইমেজ কোথা থেকে কোথায় নেমে চলেছে! কারা যে এদের এই সব টিশার্ট দেয়! একবার ধরতে পারলে তিনি সেই সব এমপ্লয়িদের ঘাড় ধরে কোম্পানি থেকে বের করে দিতেন।

    ... কিংবা হতেও পারে এই মাছওলা ঐ বেগুনওলারই ভাই টাই, দুজনে মিলে ভাগ করে পরছে একই টিশার্ট। কিন্তু ধুত্তেরি ছাই, এটাই সেই টিশার্ট কিনা, কিছুতেই বোঝা যাচ্ছে না যে! নিজেও সেই টিশার্ট পেয়েছেন সেই ছ'বছর আগে, এতদিনে খেয়ালও নেই ঠিক কীরকম স্টাইলে লেখাটা ছিল। নাহ্‌, আজ বাড়ি গিয়ে নিজের পুরনো টিশার্টটা খুঁজে একবার ভালো করে দেখে রাখতে হবে।

    আরও বারতিনেক সেই মাছওলার কাছ দিয়ে তার নজর বাঁচিয়ে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে মাছওলার টিশার্ট লক্ষ্য করেও বিশেষ কিছু ধরতে না পেরে ক্ষুণ্ন মনে বাড়ির দিকে ফিরে চললেন ম্যানেজার সেজোকত্তা। আলমারি থেকে পুরনো টিশার্টটা একবার খুঁজে বের করে তার লোগোর কাছটা খেয়াল করে নিতে হবে। তা হলেই বোঝা যাবে এটাই সেই ব্যাটা কিনা।

    বাড়ি পৌঁছেই মেজাজ বিগড়ে গেল। বৌ বাড়ি নেই। নির্ঘাৎ কোথাও শপিং টপিং করতে বেরিয়েছে। ... যে-সময়ের কথা বলছি, তখন হাতে হাতে মোবাইল ফোনের চল ছিল না। তখন ইনকামিংয়েও চার্জ লাগত, ফলে পরিবারে একটাই মোবাইল রাখা থাকত। এক্ষেত্রে সেটা ছিল সেজোকত্তার পকেটে।

    যাই হোক, বউয়ের থেকেও তখন সেজোকত্তার টেনশন বেশি সেই টিশার্টের জন্য। অতএব, ঘরের কোনও কিছুরই খোঁজ কোনওকালেও না রাখা সত্ত্বেও সেজোকত্তা একা একাই বীরবিক্রমে খুলে ফেললেন আলমারি, হাঁটকে বের করে ফেললেন পুরনো নতুন যতরাজ্যের জামাকাপড়।

    কিন্তু না। প্রচুর খুঁজেও সেই জয়েনিং টাইমের নীল রঙের টিশার্টটি খুঁজে পাওয়া গেল না। পরের দিকের সাদা বাদামী দু তিনটে টিশার্ট আরামসেই বেরিয়ে এল সেই জামাকাপড়ের গাদা থেকে, কিন্তু আসল কালপ্রিটটির দেখা নেই। অগত্যা, কী আর করা, বউ ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। একমাত্র তিনিই জানেন কোন জামাকাপড় কোথায় গোছানো আছে। গোমড়া মুখে তাই গ্লাসে তরল ঢেলে তিনি আরামকেদারায় গিয়ে বসলেন, মন থেকে মাছের গন্ধ তাড়াবার আশায়, আর স্ত্রীর আগমনপ্রত্যাশায়।

    বউ এলেন রাত নটায়। একথা সেকথা সাংসারিক পালাপর্ব চুকলে পরে তিনি পেশ করলেন তাঁর দাবি। সেই নীল রংয়ের একটা টিশার্ট ছিল, যেটা আজ থেকে প্রায় ছসাত বছর আগে তিনি পেয়েছিলেন জয়েনিংয়ের সময়ে, সেইটা খুঁজে দিতে হবে।

    কোন টিশার্টের কথা বলা হচ্ছে, সেটা মনে করতে সেজোকত্তার বউএর এতটুকুও সময় লাগল না। ঘরের সমস্ত জিনিস গুছিয়ে রাখা যেমন তাঁর কাজ, ঘরের সমস্ত বাতিল আবর্জনা বিদেয় করাও তো তাঁরই কাজ। স্বামী তো কম্পানির জন্য বলিপ্রদত্ত। কপ্তপানির লাভের খোঁজে তিনি এত বেশি মাত্রায় ডেডিকেটেড যে ঘরে জলের গ্লাস কোথায় থাকে সে খবরও তিনি রাখার সময় পান না। স্বামীর এহেন দাবি শুনে তাই অবাক হলেও তিনি ভাবটা বিশেষ প্রকাশ করলেন না; কেবল মুখ বেঁকিয়ে বললেন, ও হরি! এতদিন বাদে সে টিশার্টের খেয়াল হবে, কে জানত! ও তো কদিন আগেই আমি পুরনো জামাকাপড়ের সঙ্গে ধরে দিয়ে দিয়েছি, তোমার পরার মত অবস্থায় ছিল না।

    সেজোকত্তা একই সঙ্গে হতাশ এবং উত্তেজিত, কাকে দিয়েছো? কাকে?

    নির্বিকার মুখে জবাব দিলেন সেজোগিন্নী, ঐ তো, এখানে বেলার দিকে ট্রলিতে করে সব্জি বেচতে আসে একটা লোক, আমি তো রোজ ওর কাছ থেকেই সব্জি কিনি, ও-ই কদিন ধরে বলছিল বাবুর কোনও পুরনো জামা টামা থাকলে দেবেন বউদি, তা সেদিন আলমারি গোছাতে গিয়ে তোমার কটা পুরনো জামাকাপড় পেলাম, তার মধ্যে ঐ পুরনো টিশার্টটাও ছিল, রং জ্বলে গেছিল একেবারে, লোকটাকে দিয়ে দিলাম, বদলে আমাকে হাফ কিলো মূলো আর হাফ কিলো বেগুন এমনি এমনি দিয়ে দিল লোকটা। তা এতদিন বাদে সেই টিশার্টের খোঁজ কেন?

    সেজোকত্তার আর তখন বউয়ের কথায় কান দেবার মত অবস্থায় নেই। তাঁর তখন মাথা ঘুরছে। সেটা হুইস্কির প্রভাবে, না বউয়ের দানশীলতার কথা শুনে, কে জানে! ... হাসি থামতে আমি জিজ্ঞেস করলাম, তা আলটিমেটলি সেজোকত্তার অ্যাপ্রেইজালের কী হল? তিনি কি বেগুনওলার থেকে সেই টিশার্ট ফেরৎ পেয়েছিলেন? দীপ্তেন কুড়কুড়ের খালি প্যাকেটটা চাটতে চাটতে বলল, অত ভেতরের খবর কি আমি জানি রে ভাই? তবে তার পরে আর ঐ এলাকায় কোনও মাছওলা বা সব্জিওলাকে টেকনোসিসের টিশার্ট পরতে দেখা যায় নি কখনও, সেজোকত্তাও পরের বছর প্রমোশন পেয়ে মেজোকত্তা হয়ে উঠেছিলেন। তবে সেজোগিন্নীর অন্দরমহলে তাঁর পারফরমেন্স ইভ্যালুয়েশন কেমন হয়েছিল, সে-ব্যাপারে বিশেষ কিছু জানা যায় নি। ... তাই বলি, কোম্পানির লোগো লাগানো টিশার্টকে অত অচ্ছেদ্দা কোরো না। হলেই-বা রং জ্বলে যাওয়া, উইয়ে খাওয়া, তবু খবদ্দার, অপাত্রে দান কোরো না কোম্পানির ব্র্যান্ড ইমেজ। আরেকট বিড়ি দে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • গপ্পো | ১৬ মার্চ ২০১১ | ১০৩৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন