পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী আমাদের ঠিক যেন শান্ত থাকতে দিচ্ছে না। বড় বেশি অশান্ত লাগছে। আমরা অনেকেই পশ্চিমবঙ্গে থাকি, কলকাতায় বা তার আশেপাশে, অনেকেই থাকি বাংলার বাইরে, ভারতের অন্য প্রদেশে, কিংবা বিদেশে। কিন্তু বাংলা ভাষার সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গের সাথে আমাদের নাড়ির টান। আমরা তাই ঘটনাগুলো ভুলে যেতে পারছি না। পরের পর ঘটনাক্রম আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে কতটা অসহায়, নিরাপত্তাবিহীন আমরা, আমাদের ঘরের মেয়েরা। গেদে, বারাসাত, গাইঘাটা, কাটোয়া, এমনকি খোদ কলকাতার বুকেও মহিলাদের যখন তখন ঘটে যেতে পারছে সম্ভ্রমহানি, বিপন্ন হচ্ছে জীবন, ছ বছরের শিশু থেকে আশি বছরের বৃদ্ধা, কেউ যেন আর নিরাপদ থাকতে পারছে না এ রাজ্যে, যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং একজন মহিলা। জনতার অকুণ্ঠ সমর্থনের জোয়ারে ভেসে যিনি ক্ষমতার শীর্ষে বসেছেন, তিনি অবলীলায় গণধর্ষণের ঘটনাকে আখ্যা দেন “সাজানো ঘটনা” বলে, অসহায় নির্যাতিত বিধবার ওপর বর্বর অত্যাচারের ঘটনায় তিনি সম্মতির সিলমোহর লাগান “ওর স্বামী তো অন্য দলের সাপোর্টার” বলে।
রাজা যত বলে, পারিষদদলে বলে তার শতগুণ। ঘটনার মধ্যে কেউ ব্যস্ত হয়ে পড়েন রাজনীতির রং খুঁজতে, কেউ অস্বীকার করেন এফআইআর নিতে, কেউ আসেন টাকার থলি আর চাকরির প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রতিবাদের মুখ বন্ধ করতে।
এর মধ্যেই নারী নির্যাতনের ঘটনায়, পশ্চিমবঙ্গ দখল করে দেশের মধ্যে প্রথম স্থান। এবং তার পরেও, শুধুমাত্র দীর্ঘমেয়াদী প্রশাসনিক উদাসীনতা আর গাফিলতির জেরে নৃশংসভাবে ধর্ষণের পরে খুন হয়ে যান বারাসাতের কামদুনি গ্রামের এক স্কুলছাত্রী। অবর্ণনীয় শোকের মধ্যেও মৃতার পরিবার অস্বীকার করে কোনওরকমের সরকারি সাহায্য নিতে, ফিরিয়ে দেয় টাকা পয়সার প্রতিশ্রুতি, সারা গ্রাম একজোট হয়ে অপরাধীর শাস্তির দাবি জানায়, এবং ঘটনার দশদিনের মাথায় দর্শন দিতে এসে গ্রামবাসীদের সামান্য প্রশ্নের মুখে মেজাজ হারান মুখ্যমন্ত্রী।
অসহনীয় একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছি আমরা। এই সময়ে, শুধুমাত্র নিয়ম করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস মেসেজ আপডেট দিয়ে নিজের দৈনিক অবস্থানটুকু স্পষ্ট করে দেবার বাইরে গিয়ে তাই, বড় করে, দীর্ঘমেয়াদী একটা কিছু করবার কথা ভাবছি আমরা, পশ্চিমবঙ্গের জন্য, বাংলার মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য। “আমরা” মানে ঠিক শুধুই গুরুচন্ডালিতে ভাবের আদানপ্রদান করা গুটিকয় ব্যক্তি নয়, আমরা তো ছড়িয়ে আছি সারা পৃথিবীতে, শহর কলকাতায় আমাদের সেই অর্থে লোকবল খুব নেই, বা, থাকলেও সীমিত।
এই চিন্তাটুকু থেকে আমরা তৈরি করে ফেললাম একটি মত আদানপ্রদানের জন্য কমন প্ল্যাটফর্ম। গুগলগ্রুপে ConfrontViolence নামে একটা গ্রুপ তৈরি করেছি আমরা। ঠিক কী করা সম্ভব, কী করতে পারি, তাই নিয়ে ব্রেনস্টর্মিং চলছে এখনও। আমরা চাইছি আরও বেশি বেশি করে লোক আসুন আমাদের এই প্ল্যাটফর্মে, জানান তাঁদের মতামত, ছড়িয়ে পড়ুক আমাদের এই প্রচেষ্টা।
ছোট করে এইখানে জানিয়ে দিই, এই গ্রুপে জয়েন করতে গেলে শুধুমাত্র একটা মেল করতে হয় confrontviolence+subscribe@googlegroups.com-এ। এর পর সরাসরি এই গ্রুপে চলা আলোচনায় যোগ দিতে পারেন আপনারা, ইমেলের মাধ্যমে। এই গ্রুপে জয়েন করার জন্য ফেসবুক বা জিমেল আইডি থাকার কোনও দরকার নেই। যে কোনও একটা ইমেল আইডি থেকেই এই গ্রুপে যোগদান করা যায়।
ইতিমধ্যেই যে সংখ্যক লোকজন এই গ্রুপে যুক্ত হয়েছেন, মতের আদানপ্রদান ঘটিয়েছেন, তাতে প্রাথমিকভাবে এটুকু স্থির করা হয়েছে, আমাদের, সাধারণ মানুষদের তরফ থেকে কয়েকগুচ্ছ দাবি সম্বলিত একটি পিটিশন তুলে দেওয়া হবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। এবং নিয়মিত বেসিসে খোঁজখবর নিয়ে যাওয়া হবে বাংলার বুকে ঘটে যাওয়া সমস্ত ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় ঠিক কী কী পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে এবং হচ্ছে প্রশাসনের তরফ থেকে, অপরাধীদের শাস্তির ব্যাপারে কতটা কী প্রগ্রেস হয়েছে বিচারপ্রক্রিয়ায়, এবং এই সব ঘটনা কমিয়ে আনার ব্যাপারে সরকার এবং প্রশাসন কী কী সদর্থক ভূমিকা নিচ্ছে সামগ্রিকভাবে। দরকার হলে আরটিআই বা পিআইএল ফাইল করে কেসগুলির নিয়মিত ফলোআপ করে যাওয়া হবে।
আমাদের পিটিশনটি প্রাথমিকভাবে তৈরি হয়ে আছে এই দুটি জায়গায়।
http://www.change.org/petitions/chief-minister-west-bengal-confront-violence-against-women-2
http://www.causes.com/causes/1011344-confront-violence-against-women
যে কোনও একটি লিঙ্কে ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন। যদি সহমত হন পিটিশনের দাবির সঙ্গে, তা হলে আপনার কাছে আমাদের থাকবে দুটি অনুরোধ।
প্রথম অনুরোধ, আপনার একটি সই। পিটিশনেই সই করার ব্যবস্থা আছে দুটি সাইটেই।
দ্বিতীয় অনুরোধ, এই পিটিশনটিকে আপনার আরও পরিচিতজনেদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া, যাতে পিটিশনটি আরও বেশি সই সংগ্রহ করতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর আগে আমরা যত বেশি সংখ্যক সই সংগ্রহ করতে চাই। আর সেটা করতে চাই খুব তাড়াতাড়ি।
ইতিমধ্যেই আমরা ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছি এই পিটিশনের লিঙ্ক। অনেকেই সই করেছেন। কেউ কেউ এখনও হয় তো করে ওঠেন নি, তাঁদের প্রতি আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ, যদি আপনার কোনও প্রিয়জন পশ্চিমবঙ্গে বাস করে থাকেন, যদি তাঁদের জন্য আপনার মনে এতটুকুও ভালোবাসা, উদ্বেগবোধ থাকে, শুধু তাঁদের মুখটি মনে করে তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার স্বার্থে এই পিটিশনে একটা সই করুন, আরও দশজনকে সই করতে উৎসাহিত করুন।
আমরা সবাই মিলে একসাথে প্রতিবাদ না জানালে, এ অন্ধকার কাটবে কী করে?