প্রমদারঞ্জন রায়ের বনের খবর
প্রখ্যাত সাহিত্যিক লীলা মজুমদারের বাবা প্রমদারঞ্জন রায় ছিলেন একজন অসীম সাহসী সার্ভেয়ার। ১৮৯৯ থেকে ১৯২০ সাল অবধি সুবিশাল অখণ্ড ভারতবর্ষের নানা বনে জঙ্গলে পাহাড়ে সার্ভের কাজ করতে গিয়ে নানা পরিস্থিতি আর বুনোদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁকে। সেই সব কাহিনী নিয়েই বনের খবর বইটা। ডায়রির আকারে নয় আবার ছোট গল্পর মতও নয়। লেখাগুলো তার অভিজ্ঞতার অত্যন্ত সহজ সরল, কিশোর পাঠ্য বিবরণ।
রায় পরিবারের সদস্যদের একটা জন্মগত গুন হল অপূর্ব লেখার হাত। তাঁরা সহজ কথা তো বটেই অত্যন্ত জটিল ও সিরিয়াস বিষয়ও বড় সহজ করে লিখতে পারতেন। তাতে মাঝে মাঝে কমিক রিলিফ থাকত।
এই বইটাই যে সব অভিজ্ঞতার কথা আছে তা অনায়াসেই যেকোনো রোমহর্ষক শিকার কাহিনীকে ছাপিয়ে যেতে পারত। কিন্তু প্রতিটা ঘটনার বর্ণনাই লেখক দিয়েছেন অত্যন্ত মজার ছলে। পাঠকের মনে টেনশন তৈরি হয়নি। যদিও বন জঙ্গল ও শিকারের গল্পে এই কি হয় কি হয় ব্যাপারটাই সব থেকে বেশি উপভোগ্য। তবে এই লেখাও দারুণ উপভোগ করা যায় ভাষার সারল্য ও বলার মজার ধরনের জন্য।
যা খারাপ লাগে তা হল এই বইতে বিস্তর পশু হত্যার কথা বলা আছে। বন্য পরিস্থিতিতে বাঁচতে গেলে তার দরকারও ছিল। কিন্তু পড়তে পড়তে কখনো কখনো মনে হয় মনব সমাজ সর্বত্র অনধিকার প্রবেশ না করলেও পারত।
বইটা বর্তমানে প্রকাশ করে লালমাটি । মূল লেখাটি সহজ সাধু ভাষায় হলেও এই সংস্করণে তা চলিত ভাষায় পাল্টে দেওয়া হয়েছে । অনবদ্য প্রচ্ছদটি এঁকেছেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায়।
বইটা বেশ কিছুদিন আউট অব প্রিন্ট থাকার পরে জানুয়ারি মাসে আবার রিপ্রিন্ট হওয়ায় পুনরায় বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
বর্তমান সংস্করণের মুদ্রিত মূল্য ২৫০ টাকা ।
বইঃ বনের খবর
লেখকঃ প্রমদারঞ্জন রায়
প্রকাশকঃ লালমাটি প্রকাশন
মুদ্রিত মূল্যঃ ২৫০ টাকা
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্যের রীতি, নীতি ও দুর্নীতি
স্পার্ক নামে একটা নতুন প্রকাশনী একটি সিরিজে বেশ কয়েকটা বই প্রকাশ করেছে। মনোগ্রাফ সিরিজ। একক প্রসঙ্গ। তাদের কথা অনুযায়ী স্বল্প পরিসরে, অল্প কথায় বিদ্যা ও জ্ঞানের অসীম বিশ্বের সঙ্গে শিক্ষিত মনের যোগ সাধন - 'একক প্রসঙ্গ'।
এই সিরিজের একটা বই 'সাহিত্যের রীতি, নীতি ও দুর্নীতি'। লেখক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। চারটি প্রবন্ধ নিয়ে এই বই। যার প্রথম তিনটি লেখক বিভিন্ন সাহিত্য সভায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন।
এতে সাহিত্যে নৈতিকতার ধারণা নিয়ে আলোচনা করেছেন লেখক। পূর্বতন সাহিত্যিক ও তাদের লেখায় যে 'সামাজিক ন্যায়' কে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা ও তা করতে গিয়ে সাহিত্য কতটা শিল্প সম্মত থেকেছে তাই নিয়ে তার মতামত স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করেছেন। এই সামাজিক ন্যায় ও সাহিত্যের উপর নীতি পুলিশির কোপ তার লেখা উপন্যাসের উপরেও পড়েছিল। সেই নিয়ে লেখক সরব হয়েছেন।
চতুর্থ প্রবন্ধটি ১৩৩৪ বঙ্গাব্দের আশ্বিন সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। বিচিত্রা পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "সাহিত্য - ধর্ম" শীর্ষক প্রবন্ধের জবাব হিসাবে এই প্রবন্ধ লেখা। সাহিত্যে শ্লীলতা, নারী পুরুষের মিলন প্রভৃতি ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথ তত্কালীন বঙ্গ সাহিত্যকে অভিযুক্ত করেছিলেন। তখন কল্লোল যুগ। নবীন সাহিত্যিকদের রচনাকে প্রবীণেরা অশ্লীল বলে দেগে দিচ্ছেন। শরৎচন্দ্র এক্ষেত্রেও সাহিত্যের ধর্ম , রীতিনীতি নিয়ে প্রবীণদের উল্টো স্রোতে তরী ভাসিয়েছেন।
প্রবন্ধগুলিতে শরৎচন্দ্র আশা রেখেছিলেন যা আজ 'অনৈতিক' ভবিষ্যৎ তার যথাযথ মূল্য দেবে। অনুমানে তাঁর ভুল হয়নি।
সাহিত্যের উদ্দেশ্য, নীতিকথা মূলক সাহিত্য থেকে আধুনিকতার দিকে অগ্রসর হওয়া বাংলা সাহিত্যের সেই যুগ সম্পর্কে আগ্রহী পাঠকদের এই বইখানি পড়ে ভালোই লাগবে।
বইঃ সাহিত্যের রীতি, নীতি ও দুর্নীতি
লেখকঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
প্রকাশকঃ স্পার্ক
মুদ্রিত মূল্যঃ ১২৫ টাকা