ভারতের ছ-টি আস্তিক দর্শনের মধ্যে প্রাচীনতম হল সাংখ্য দর্শন। ‘সমগ্র সাংখ্যসমীক্ষা’ লেখক শম্ভুনাথ চক্রবর্তীর গবেষণাধর্মী একটি প্রবন্ধ সংকলন। তিনি ছ-টি অধ্যায়ে এই সাংখ্য দর্শন সম্বন্ধে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। সাংখ্যতত্ত্বের বৈশিষ্ট্য এবং প্রাচীনতার দিক নির্দেশ করে শুরু হয়েছে এই বই। আচার্য ঈশ্বরকৃষ্ণের রচিত সাংখ্যকারিকা গ্রন্থ এবং তার সাংখ্যচিন্তার কথা উঠে এসেছে দ্বিতীয় অধ্যায়ে। সাংখ্যকারিকার বিস্তারিত আলোচনার শেষে ঈশ্বরকৃষ্ণের পূর্বকালীন সাতাশজন সাংখ্যাচার্যের পরিচয় ও তাঁদের সাংখ্যমত সমীক্ষা তুলে ধরা হয়েছে তৃতীয় অধ্যায়ে। মহাভারতের সাংখ্যের বিষয়বস্তু কোন্ ধারায় প্রবাহিত হয়েছে তার উল্লেখ আছে চতুর্থ অধ্যায়ে। বিশিষ্ট সাংখ্যসূত্র ভাষ্যকার বিজ্ঞানভিক্ষুর সাংখ্য বিষয়ের মতামত আলোচিত হয়েছে পঞ্চম অধ্যায়ে। শেষ অধ্যায়ে আধুনিক যুগ-জীবনে সাংখ্য শাস্ত্রের উপযোগিতা ও প্রাসঙ্গিকতার কথা আলোচনা করেছেন লেখক। সব মিলিয়ে বইটি সাংখ্যদর্শন চর্চায় এক জরুরি সংযোজন।
তরুণ কবি তন্ময় ভট্টাচার্যের সাম্প্রতিকতম গদ্য সংকলন ‘পাঁচ দুপুরের নির্জনতা’। বিভিন্ন উপলব্ধির কথা তুলে ধরেছেন লেখক। বাড়ি, মানুষ, বদলে যাওয়া সম্পর্ক, জীবন একে একে এসেছে, সব কিছুই। রাগ, বিরক্তি, অভিমান অতিক্রম করে ধরা পড়ে অসহায়তার অনিবার্য উপস্থিতি। বইয়ের প্রত্যেক পাতায় এক আশ্চর্য মায়াজাল তুলে এনেছেন তন্ময়। ‘পাঁচ দুপুরের নির্জনতা’ আসলে এক জার্নির রুটম্যাপ। যার পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা অনুভূতির সাথে একাত্মতা বোধ করা যায় সহজেই। হাজার অনটনের পরেও বলে ওঠা ‘গদ্যের কান্না তুমি দেখোনি’। কী সেই কান্না? প্রত্যেক পাতায় লুকিয়ে থাকা আর্দ্রতা পাঠককে বাধ্য করবে বার বার ফিরে আসতে।
অগাস্ট মাসেই প্রকাশিত হয়েছে ভ্রমণভিত্তিক সংকলন পরিযায়ী। পশ্চিম বর্ধমান থেকে প্রকাশিত এই সংকলনে বিভিন্ন ভ্রমণকারীর বয়ান রয়েছে, যা চিত্তাকর্ষক। এতে ভাইজ্যাগ থেকে গড়পঞ্চকোট, লাহুল থেকে হামটা, এরকম নানা জায়গার মোট সাতটি ভ্রমণ অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ হয়েছে। সাদা-কালো বেশ কয়েকটি ছবিও ছাপা হয়েছে এই সংকলনে। রানিবাঁধের আদিবাসী গ্রামের ভ্রমণ অভিজ্ঞতাটি ভারী চমৎকার। এই সংকলনে অভিজ্ঞ ভ্রমণকারীদের অধিকাংশ রচনাই সুলিখিত, তবে কলকাতার ভ্রমণ নিঃসন্দেহে এখানে যা দেওয়া হয়েছে তার থেকে অনেক বেশি জায়গা দাবি করে। বইটিতে সম্পাদনার কিছু ত্রুটি চোখে পড়ে। কোভিডকালে যখন অধিকাংশ মানুষই সফরে যেতে ভয় পাচ্ছেন এ বই তাঁদের দেবে মানসভ্রমণের আনন্দ।