মমতার পথে পৌঁছতে হলে, সে পথে মমতা জড়ানো থাকতেই হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। শেষ পর্যন্ত সেখানে পৌঁছতে গেলে অধিকাংশ সময়েই পায়ে কাঁটা ফোটে, রক্ত ঝরে। বাস্তব আমাদের তা-ই জানায়, তেমনটাই শেখায়। মায়া-মমতা আবিশ্ব একই রকম, তার প্রকাশভঙ্গিমা বা ভাষা কেবল ভিন্ন। ইন্দ্রনীল বক্সীর ‘রাক্ষস’ নামের গল্পগ্রন্থের গল্পগুলি সম্পর্কে পরিচয় দিতে গিয়ে এমনটাই বলা রয়েছে বইয়ে। রাক্ষসে মোট ১৪টি গল্প। যন্ত্রণা সর্বগ্রাসী। পৃষ্ঠপ্রচ্ছদে লেখা একটি পঙ্ক্তি। একটা সম্পূর্ণ লেখার মধ্যে এ পঙ্ক্তি, যা বহুল উচ্চারিত, পঠিত ও জ্ঞাত, তা এক মুহূর্তের জন্য হলেও থমকে দাঁড় করাবেই। অথবা, ওইখানেই উল্লিখিত, এক সংলাপ, যেন রাক্ষস একটা... আমাদের সকলের জানা, আমরা জানি, কোন্ প্রেক্ষিত ও পরিস্থিতিতে এমন কথা নির্গত হয়ে আসে। তারপরেও আমাদের আগ্রহ থেমে থাকে না। প্রতিশ্রুতির পাখা মেলে দিচ্ছে এ বই, একটু উলটেপালটে দেখলেই। রোহণ কুদ্দুসের প্রচ্ছদটির দিকেও অতিরিক্ত এক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকতে হবে বইকি।
মধ্য বিশের অভিজিৎ কুমার ইতিমধ্যেই বিষের স্বাদ পেয়ে গিয়েছেন। তাঁর নাম লেখালিখি, আরও নির্দিষ্ট করে বললে কবিতা। কবিতা আগেও লিখেছেন তিনি, লিখেছেন গল্পও। সে সব ইতিমধ্যে প্রকাশিতও হয়েছে। এই প্রথম কবিতার বইয়ের আঙিনাতেও পা রাখলেন বিজনেস ম্যানেজমেন্টের এই ছাত্র। নাম তার—মহাকালের চিড়িয়াখানা। বইটির শেষের আগের কবিতাটি সম্পূর্ণ গদ্যের আকারে লেখা, ছাঁদ শুধু নয়, বিন্যাসেও তেমনই। হঠাৎ দেখলে একটু চমকেই উঠতে হয়। চমক জাগানোর আরও প্রতিশ্রুতি ছড়িয়ে রয়েছে কবির অনেক পঙ্ক্তি জুড়েও। মোট ৪০ টি পৃষ্ঠায় কবিতাগুলি সংকলিত, কবিতার সংখ্যাও, ঠিক চল্লিশ। অভিজিৎ বলেছেন, তিনি বানাচ্ছেন শব্দের কুটির। বলতে চেয়েছেন, বিলাসবহুলতা নয়, মৃত্তিকার স্নিগ্ধতাই তাঁর প্রিয় ।
বেজোড় সংখ্যার গল্প নিয়ে সংকলন প্রকাশ এখন বেশ জনপ্রিয় হয়েছে লেখকদের মাঝে। ‘সোনালি খড়ের বোঝা’ সংকলনটিতেও তেমনই দেখা গেল। মোট ৯টি গল্প রয়েছে মৌসুমী ঘোষের এই সংকলনটিতে। অর্থনীতির ছাত্রী মৌসুমী সম্পাদকও বটে, সাহিত্য পত্রিকার। এর আগে তাঁর একটি অণু গল্পের সংকলনও প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় তিন দশকের লেখালিখির জীবনে পুরস্কারের সম্মান থেকেও তিনি বঞ্চিত হননি। ঘটনার ঘনঘটা যে তাঁর অভীপ্সা নয়, সে কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন লেখক। পাঠককে জীবনের গভীরে নিয়ে গিয়ে মুক্তি সন্দর্শন করানোই তাঁর অভিপ্রায়, অন্তত এই গ্রন্থে। পৃষ্ঠপ্রচ্ছদের লিপিতে ৯ টি গল্পের প্রতিটি সম্পর্কে সামান্য একটি-দুটি বা তিনটি বাক্যের বিন্যাসে একটা পরিচয় দেবার চেষ্টা করা হয়েছে, যার সব ক-টিরই শেষ প্রশ্নবোধক চিহ্নে। সে সব প্রশ্নের উত্তর যে গল্পগুলির মধ্যেই নিহিত রয়েছে, তেমন আত্মবিশ্বাস না থাকলে কি এমন করে পরিচয় করানো যেত? ঝকঝকে ছাপা এ বইয়ের প্রচ্ছদ তৌসিফ হকের করা, যা বইটিতে অন্য মাত্রা এনে দেবেই।