রাস্টি, খুদে রাস্টি থাকে দেহরায়। অদ্ভুত সব পোষ্য, আশ্চর্য সব আত্মীয়-স্বজন ঘিরে থাকে তাকে। বহুদিন যাবৎ, রাস্টি এরকমই। রাস্টি অথবা রাস্কিন বন্ড।
১৯৩৪ সালে ভারতে জন্মগ্রহণ করা রাস্কিন বন্ডের ছেলেবেলাই রাস্টির মধ্যে ধরা রয়েছে, এ কথা রাস্কিন নিজেও অস্বীকার করেন না। দি অ্যাডভেঞ্চার্স অফ রাস্টির ভূমিকায় সে কথা লিখেওছেন তিনি। এই বইটির বাংলা তরজমা করেছেন ঈশানী রায়চৌধুরী, যিনি বাংলা অনুবাদে অভিজ্ঞ।
২২ টি রাস্টি আখ্যান নিয়ে ২৮৮ পাতার এই বইয়ের মুদ্রণে যত্নের ছাপ প্রথম দর্শনেই অনুভূত হয়। এই অ্যাডভেঞ্চারের সবকটিই অবশ্য কেবল খুদে রাস্টির নয়, তার কৈশোর-তারুণ্য-যৌবনের কথা, ভারত থেকে দূরে গিয়ে ভারতকে মনে পড়ার কথা, প্রথম যৌবনাবেগাকুল স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষার কথাও রয়েছে এখানে।
বর্তমানে মুসৌরি বাসরত অশীতিপর রাস্কিন বন্ড কাঁপা হাতের লেখায় বাংলা সংস্করণের জন্য যে কয়েক লাইনের শুভেচ্ছাবার্তা লিখেছেন, বইটিতে তার মুদ্রণ নিঃসন্দেহে নতুন মূল্য যোগ করবে।
উৎসর্গপত্র ও চতুর্থ প্রচ্ছদের পঙ্ক্তিগুলি মায়া রচনা করে, তবে খুদে পাঠকদের জন্য তা কিঞ্চিৎ ভারবাহী। তবে রাস্টি তো কেবল খুদেদেরই নয়, তার অভিভাবকদেরও।
ইংরেজি সংস্করণের সঙ্গে মানানসই প্রচ্ছদ রয়েছে বাংলা অনুবাদেও।
আকারে সংক্ষিপ্ত, ব্যক্তিগত গদ্য লেখা ও তার প্রচার ও প্রসার সামাজিক মাধ্যমসমূহের দৌলতে জনপ্রিয় হয়েছে। এ ধরনে, পাঠকও লেখক হয়ে উঠতে পারেন। আর লেখক, তুলনামূলক কম আয়াসে আরও বেশি রচনা সৃষ্টি করে চলতে পারেন।
আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়ের মঞ্চে ডেকে নিচ্ছি মূলত ক্ষুদ্রকায় গদ্যসমূহের এক কেতাব। ৮০ পৃষ্ঠার এই বই দুটি ভাগে বিন্যস্ত। উত্তর কলকাতার অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা সুতানুটি জংশন পর্বে রয়েছে মোট এক ডজন লেখার সমাহার। মফস্সলের দেখাদেখির অভিজ্ঞতা থেকে উঠে এসেছে অষ্টমী সেলুন পর্ব। এ অংশটিতে রয়েছে দু-ডজন গদ্য।
অতি তরুণ (জন্ম ১৯৯৪) আকাশ গঙ্গোপাধ্যায়ের এটি দ্বিতীয় গদ্যগ্রন্থ, এর মধ্যেই তিনি এই নিয়ে লিখে ফেলেছেন মোট হাফ ডজন বই। বিজ্ঞান শাখায় পড়াশোনা করে মাত্র ২৭ বছরে ৬টি বই লেখার জন্য বহুল পরিশ্রম প্রয়োজন, এ নিয়ে কোনো সংশয়ের অবকাশ থাকতেই পারে না। আজকাল পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত বইটির পাতা ও ছাপা দুইই উঁচু মানের। প্রচ্ছদ এঁকেছেন সেঁজুতি বন্দ্যোপাধ্যায়।
চার খুদে গল্পে গোয়েন্দাদের কাণ্ডকারখানা। বইটিও কলেবরে খুদে— পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩১। বইটিতে মোট চারটি গল্প। গল্পগুলির নাম যথাক্রমে খুদে গোয়েন্দার কাণ্ড কারখানা, স্বপ্নার ঘটনাটা, চুরি হয়েছে বেশ হয়েছে এবং মুরগির ডিম। এই কাহিনিগুলির গোয়েন্দা গ্ল্যামারাস নয়, নেহাৎ পাশের বাড়ির ছেলে, যার অবসর কাটে বন্ধুদের সঙ্গে ক্যারাম পিটিয়ে।
মুরগির ডিম গল্পে এক মুদির দোকানে ডিম চুরির মত তুচ্ছ ঘটনা দিয়ে রহস্যের শুরু। সে রহস্য, গল্পের মাপে ঘনীভূত হয়। পরে দেখা যায় ডিম চুরি, কোনও ছিঁচকের কাণ্ড নয়। তার সঙ্গে জড়িত বিশাল মাপের এক অপরাধচক্র। ডিমের মাধ্যমেই সে চক্র ছড়িয়ে রাখত তাদের অপরাধজাল। অপেশাদার হলেও নায়ক গোয়েন্দা তার স্বভাবজ ক্ষমতায় নিতান্ত কম আয়াসেই রহস্যের সমাধান করে, অপরাধীরা ধরা পড়ে।
বইয়ে কিছু মুদ্রণ প্রমাদ এড়ানো গেলে ভালো হত।
বইয়ের লেখক হাওড়ার দেবাশীষ মণ্ডল, খড়গপুরের আইআইটি থেকে পদার্থবিদ্যায় এমএসসি পাস করে ভুবনেশ্বরের ইনস্টিটিউট অফ ফিজিক্স থেকে পিএইচডি করছেন।