আগের যুবকটির মতই এ মেয়েটিও এত অবধি বলে গল্প শেষ করল। তারপর সামনে বসা শ্রোতার দিকে তাকালো প্রতিক্রিয়া বোঝার জন্য৷ এবার কিন্তু তিয়াসা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে বিন্দুমাত্র দেরি করলো না।সে জোরে হাততালি দিল। এতে টি-শপের শান্ত পরিবেশ খানিকটা নষ্ট হল।কিন্ত ভাল লাগাটুকু চেপে রাখতে পারলো না সে। শ্রোতার এমন উচ্ছ্বাসে আপ্লুত দুই যুবক-যুবতীর চোখে ঝিলিক খেলে গেল৷
পরের গল্পটি বেশ আকর্ষণীয় ছিল তিয়াসার কাছে ৷ বিশেষ করে মেয়েটির গল্প বলার ধরনটি ছিল খুব টানছিল তাকে। তার সঙ্গে জড়িয়ে ছিল রহস্যময়তা। তাছাড়া এরা যে মূর্খ নয়,তার পরিচয় পাওয়া গেল। হাইরোগ্লিফিক নিয়েও এদের যথেষ্ট পড়াশোনা। তিয়াসা ঠোঁট উল্টিয়ে প্রশংসাসুলভ আওয়াজ করল।
অবশ্য ছেলেটির গল্পের কারাগার পর্বটি তার খুব একটা পছন্দ হয়নি৷ গল্পে নারী চরিত্র নেই বলে সে বেশ আশাহত। তবে সে জানতো পুরুষদের জেলে মহিলাকে আনা কতো কঠিন। তাছাড়া ছেলেটি জেল থেকে কোথায় গেল বা কিভাবেই বা নিখোঁজ হল সে সম্পর্কে এদের গল্পে আর কিছু না বলাটাও তার ঠিক মনোমত হল না। অবশ্য গল্প তো এখনো শেষ হয়নি।
আর একটা বিষয় তাকে আকৃষ্ট করে রেখেছিল। গল্পগুলোর মধ্যে কোন সংযোগ না থাকলেও একই ভাবে সমান তালে পরিবেশিত হচ্ছে সেগুলি৷ প্রথমদিকে তাদেরকে ভুল ভেবে দোকানের খদ্দের মনে করেছিল সে৷ এখন সে বুঝতে পারছে, এরা প্রত্যেকেই অত্যন্ত পেশাদারি অভিনেতা- অভিনেত্রী৷ একমাত্র অভিনেতারাই পারে বিশ্বাসযোগ্যভাবে দক্ষতার সাথে এমনভাবে বলতে৷ যেভাবে একজন যেখানে ছেড়েছে অপরজন সেখান থেকেই শুরু করেছে৷ যেন দুজন অভিনেতা অভিনেত্রী একই সাথে পরপর মুখস্থ করা ডায়লগ নিখুঁতভাবে বলে যাচ্ছে। তাতে কোনো ফাঁক ধরার অবকাশ নেই।
এমনটা মনে হতেই মুগ্ধতায় আবার হাততালি দিয়ে উঠলো সে৷ এ যেন এক আশ্চর্য আনন্দ অনুভব করছে এখানে এসে। তাদেরকে সে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখল, যতক্ষণ না অন্য খদ্দের গল্পের চায়ের অর্ডার না দেয়৷
হঠাৎ করেই একটা চিন্তা তার ভাল লাগাটাকে ঢেকে দিল৷ অর্ডারের চায়ের দামের ব্যাপারে এতক্ষণ খেয়ালই ছিল না তার৷ প্রয়োজনই মনে করেনি৷ সাধারণ চায়ের দাম বেশি না। তবে এমন চায়ের দাম নিশ্চয়ই বেশি হবে৷ সে ভাবল, ওয়েটারের গল্প ফ্রি, তবে অভিনেতাদেরকে অবশ্যই কিছু দেওয়ার কথা৷ কে আর বিনা পারিশ্রমিকে এখানে সময় নষ্ট করে বসে থাকবে!
ধৈর্য্য না রাখতে পেরে মনমরা ও বিষণ্ণ মুখে মেনু চার্টটা আবার খুলে দেখলো।টেবিলে সে একলা ছিল না৷ তার মনে হচ্ছিল সামনের দু’জন তার দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসছে৷তবে তারা তো জানে না সে কী ভাবছে৷ নজর চলে গেল চতুর্থ পৃষ্ঠায়, দেখার পর হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো সে৷ সেখানে একমাত্র গল্প চায়ের দাম উল্লেখ করা নেই৷
খানিকটা নিশ্চিন্ত হয়ে মেনু কার্ডে রাখা হাত তুলে এক চুমুকে বাকি চা শেষ করে ফেলল৷ চায়ের রঙ আগে মনে হয় গাঢ় নীল বা সবুজ ছিল। এখন খানিকটা ফ্যাকাশে৷ তবে স্বাদ কমেনি এতটুকুও৷
সেদিকে তাকিয়ে হাসিমুখে নমস্কার জানিয়ে কথকরা জানালার পাশে তাদের পূর্বনির্ধারিত টেবিলে ফিরে গেল৷
হটাৎ করে কিরকম শেষ হয়ে গেলো ?
এই এপিসোড একটু ধোঁয়াশা
সত্যিই শেষ?
পর্ব শেষ নতুন পর্বের জন্য। উপন্যাস শেষ নয়
যাক বাবা!
মোলায়েম ভাবে গল্পের সাথে এগিয়ে যেতে যেতে, হঠাৎ থেমে যাওয়ার কারণে মনে খেদ পড়ল।
পরবর্তী সংখ্যা র অপেক্ষায় রইলাম।