ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলেছিল তার নিজস্ব গতিতে। তিয়াসা উদগ্রীব হয়ে শুনতে চায় পরের অংশ। সেই মুহূর্তে তার মনে হয় এই কাহিনি শেষ হবার জন্য শুরু হয়নি। সে যেন একটা লম্বা ট্রেনের সওয়ারি। সেই ট্রেনের কামরা ভর্তি না-বলা কথারা কিংবা লুকিয়ে রাখা নানান চরিত্রগুলো তাদের সুখ দুঃখের ভাণ্ডার নিয়ে আজ হঠাৎ করে তাকে সামনে দেখতে পেয়ে উন্মুক্ত করে দিচ্ছে নিজেদের। এই ট্রেনের যাত্রাপথ ছুঁয়ে যাচ্ছে একের পর এক স্টেশন। প্রতিটি স্টেশনেই তৈরি হচ্ছে নতুন কাহিনি। সে খালি এখন শ্রোতা যার গন্তব্য পৃথিবীর শেষ স্টেশন। নীরব সেই যাত্রার ঘোর ভাঙিয়ে আবার শুরু হল গল্প।
এই পর্যায়ে যুবকটির সঙ্গিনী বক্তা।
সার্কাস ছেড়ে যাবার পর সেই মেয়ে জাদুকরী মিস কামনা কাজ পায় এক নামকরা ব্যক্তির অফিসে সেক্রেটারি হিসেবে। শীঘ্রই নজরে পড়ে যায় এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার। তার আবার রমণী মোহের কুখ্যাতি আছে। ইতিপূর্বে তার চারটে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছিল ও পাঁচটি কন্যাসন্তান ছিল। এছাড়াও ছিল অগণিত নারীসঙ্গ৷ সে এবার তার কামনা চরিতার্থ করার জন্য এই নতুন সেক্রেটারিকে নিশানা করল।
সেক্রেটারি বেশ বুদ্ধি দিয়ে বারবার তার এই আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিহত করছিল৷ এতে লোকটির আকাঙ্ক্ষা আরো বেড়ে গেল৷ নানা প্রলোভন, উপহারসহ সব চেষ্টা বৃথা যাওয়ার পর শেষ অস্ত্রের সাহায্য নেয় সে৷ এবার প্রকাশ্যেই নিজের মনোবাসনা পূরণ করার ইঙ্গিত দিয়ে বলে যদি তার কামনা পূরণ না হয় তবে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হবে তাকে৷
মেয়েদের কোথাও শান্তি নেই। পুরুষ যেভাবেই হোক তাকে ভোগ করতে চাইবেই। আর না হলে…, তিয়াসার গলার স্বরে আক্ষেপ।
সেই..., গল্পকার বলে চলল, এই সেক্রেটারি মানে মিস কামনা আবার ছবি আঁকত। এ বিষয়ে বেশ হাত ছিল তার। সে একদিন সেই কর্মকর্তাকে জানালো যে, স্যার আমি আমার আঁকা ছবির একটা প্রদর্শনী করতে চাই৷ আপনি পাশে থাকলে ধন্য হব। আপনার তো অনেক যোগাযোগ... অবশ্য তার আগে একদিন যদি আমার স্টুডিওতে আসেন...
তার আমন্ত্রণ গ্রহণ করে সেই কর্মকর্তা একদিন তার স্টুডিওয় এল। সব ছবি দেখার পর সে একটি ছবি খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলো৷ ছবিটার গভীরতা দেখে যেন পাথর হয়ে গেল কিছুক্ষণের জন্য৷ নরকের দৃশ্যায়নের ছবি৷ কুৎসিত মুখশ্রীর শয়তান উপভোগ করছে কোন এক পাপীর উপর অত্যাচারের ভয়ঙ্কর দৃশ্য, যে নিজে তার জীবনকালে নানা পাপে নিমজ্জিত ছিল৷ যখন সে পাপীর মুখ দেখতে উবু হয়ে ঝুঁকলো মনে হলো যেন নিজেকে আয়নায় দেখছে৷ আশ্চর্যজনক ভাবে সে আবিষ্কার করল মূল শিল্পী তার মুখের অবয়বই সেখানে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছে৷
আসলে শিল্পীর অবচেতন মনে লোকটার স্থান ছিল শয়তানের সমগোত্র। তাই ছবি আঁকার সময় পাপীর মুখ এঁকেছে। তিয়াসা নিজের মনেই ঠোঁট নাড়ল।
তার ঠোঁট নাড়া লক্ষ্য করে গল্পকার স্মিত হাসল। সেই মুহূর্তে সেই ব্যক্তির নিজের ভিতর কী যেন ভেঙেচুরে গেল৷ সেক্রেটারিকে বহিষ্কারের পরিবর্তে সে নিজেই সেখান থেকে চলে গেল৷ তারপর প্রত্যন্ত এক গ্রামে এক আশ্রমে বসবাস শুরু করলো৷ সেখানে ছিল শারীরিক চাহিদার ঊর্ধ্বে নিষ্কাম সরল জীবনযাপন৷ তার মনের রূপান্তর ঘটে গেল। সে নিজেকে নিয়োজিত করল অসহায় মানুষের সেবায়।
এত অবধি বলে গল্পকার দুজন একে অপরের দিকে চেয়ে রইলো। মনে হল তারা একসঙ্গে নতুন কোনো গল্প বানাচ্ছে আর সেই গল্প তাদের চোখের ভিতরে লেখা হচ্ছে বিনা কলমে, বিনা খাতায়।
মানুষের মন কীভাবে বদলে যায় তাই না? শুধু নির্দিষ্ট ঘটনাটা ঘটার অপেক্ষা।
ও পাশ থেকে কোনো উত্তর এল না। তারা নিজেদের মধ্যে মগ্ন।
সূন্দর
এই পর্ব থেকেই পাঠ শুরু। লেখার সাবলীল ধরণটি দারুণ! তারপর?
আসল শুরু এখান থেকে।