গালিবের একমাত্র ফটোগ্রাফ। আনুমানিক ১৮৬০-৬৯-এর মধ্যে তোলা।
তিনি যখন জন্মাচ্ছেন, তখন পলাশীর যুদ্ধ হয়ে গেছে চার দশক হল। মানে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভোরবেলা। এদিকে মুঘল আমলের শান নিভে এলেও তার মেজাজমর্জি টের পাওয়া যায়। বাংলার গুপ্ত কবি তখনও কালের গর্ভে গুপ্ত আছেন, আরও বছর পনেরো পরে ভূমিষ্ঠ হবেন।
তিনি যখন চলে যাচ্ছেন, ১৮৬৯ সালে, তখন ব্রিটিশ সূর্য মধ্যগগনে, তাদের তাড়ানোর দীর্ঘ লড়াইয়ে যিনি পুরোভাগে থাকবেন, সেই ভাবী জাতির জনক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি, কী আশ্চর্য সেই বছরই জন্মাচ্ছেন, আর কবিতায় যিনি ভারতের নামকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেবেন, সেই শ্রীমান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন নেহাতই আট বছরের বালক।
যে-কোনো মানুষকে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতায় ত্রিমাত্রিক আঁকাই যথেষ্ট নয়, একজনকে বুঝতে তাঁকে আঁকতে হয় চতুর্থমাত্রিক ভাবে। আর সেই চতুর্থমাত্রা হল সময়। আর ১৭৯৭-১৮৬৯—এই বাহাত্তর বছরের সময়সীমায় যদি মির্জা গালিবকে আঁকা যায়, তবে তাঁর জীবনে একাধিক ট্রানজিশন কাল আমরা দেখি। প্রথম দিকে যদি মুঘল গরিমার শেষ, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শুরু হয়, তবে শেষের দিকে ব্রিটিশ শাসন সম্পর্কে মোহভঙ্গের শুরু।
সবাই জানি ব্রিটিশরা এদেশে ইংরেজি শিক্ষার প্রচলন করেছিল তাদের কাজের সুবিধের জন্য, অর্থাৎ ইংরেজি লিখতে, পড়তে, বলতে পারা অনুগত কেরানিকুল তৈরির জন্য। আর সেটাই তাদের জন্যে ব্যুমেরাং হয়েছিল। কারণ ইংরেজি শিক্ষা প্রকৃতপক্ষে পাশ্চাত্যের মুক্তচিন্তার ঢেউ নিয়ে এসেছিল, যা আছড়ে পড়েছিল উনিশ শতকের প্রারম্ভে, পরাধীন ভারতবাসীর মনের বদ্ধ জলাশয়ে। কিন্তু এই ঢেউ কিন্তু ইংরেজির নয়, মুখ্যত ফরাসি চিন্তার ঢেউ। বাংলার নবজাগরণের যে মুখগুলো আমরা দেখি, তাঁরা কিন্তু এই ফরাসি মুক্তচিন্তার ফসল, যার মূলে আছে ‘Reason’।
প্রমথনাথ বিশী লিখছেন ‘এদেশের প্রথম আমলের ইংরেজি শিক্ষার গুরুগণ—হেয়ার, ডিরোজিও, রিচার্ডসন, সকলেই Reason-পন্থী, তাঁহারা ফরাসি ফিলজফারদের মতো নাস্তিক অর্থাৎ রিজন-এর আস্তিক। ইঁহাদের কৃতী ছাত্রদের মধ্যে অনেকেই নিরীশ্বরবাদী। বাঙ্গালীর ইংরাজি শিক্ষার সেই সত্যযুগে ফরাসি নাস্তিক্যবাদের পরোক্ষ প্রভাব সম্বন্ধে আমরা সম্যক সচেতন নই, ফলে ঊনবিংশ শতকের বাঙ্গালীর মনের পূর্ণ চেহারাটা দেখিতে পাই না। একে উচ্চবর্ণের বাঙ্গালী স্বভাবত নৈয়ায়িক, তার উপরে লাগিল রিজনের ছোঁয়াচ, অর্থাৎ নবদ্বীপ ও প্যারিস দুয়ের স্পর্শে তৎকালীন শিক্ষিত বাঙ্গালী একান্ত লজিক্যাল হইয়া উঠিল।’
অর্থাৎ মির্জা গালিবের অস্তমিত হবার আগেই এই রিজনের কাল শুরু হয়ে গেছে। কালের রেখচিত্রের এইসব বিন্দুগুলি জুড়লে এক আশ্চর্য মানুষ তৈরি হন। যাঁকে আমরা আক্রমণ করতে পারি, তিনি কেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে কেন একটাও কবিতা লেখেননি, কেন মুঘল দরবার থেকে ব্রিটিশ সবার কাছে মাসোহারা চেয়ে চেয়ে বেড়িয়েছেন, ইত্যাদি প্রসঙ্গ তুলে, কিন্তু উপেক্ষা করতে পারি কই? তাঁর প্রভাব এড়াতে পারেননি ফয়েজ এবং মান্টো-র মতো যুগান্তকারী আধুনিক কবি-সাহিত্যিকেরাও।
অজস্র বই লেখা হয়েছে তাঁকে নিয়ে। তাই প্রশ্ন জাগে, আরও একটা কেন? অবশ্য সঞ্চারী সেনের নামটি দেখেই কৌতূহল গাঢ় হয়। তাঁর অসাধারণ অনুবাদে ইসমত চুঘতাইয়ের গল্প পড়েছি যে। গল্প শুরুর আগে তাঁর লেখা ভূমিকাটি আরও মনকাড়া, তাতে বোঝা যায় যে ইনি একজন ‘ট্রান্সলেটর উইথ আ মিশন’। সেই সঞ্চারী সেন লিখছেন মির্জা গালিব নিয়ে। কৌতূহল তো হবেই।
পড়তে পড়তে দেখি এ যে উর্দুর মহানতম কবি গালিব নন, একটা যুগই যাঁর নাম দিয়ে চেনা যায়—‘দা এজ অফ গালিব’। ইনি তো রক্তমাংসের গালিব, বইয়ের ভূমিকা লিখতে গিয়ে যাঁকে নীলাঞ্জন হাজরা বলেছেন—‘আমার মির্জা। দুদশকের পরিচয়েও যে কিছুতেই প্রণম্য করে সশ্রদ্ধ দূরত্বে তাঁকে রাখা যায় না। হৃদয়ের সে মহাসনে থাকুন রবীন্দ্রনাথ, থাকুন ফয়েজ। মির্জা, তুমি থাকো আমার মুখোমুখি। আঘাতে, ব্যর্থতায়, সাফল্যে, সন্দেহে, ঈর্ষায়, ভীরুতায়। রুখে দাঁড়ানোয়, পালিয়ে যাওয়াতে। মেজাজে। চরম কাপুরুষতায়। গর্বে, অপমানে। ভাদ্র মাসের গরমে ২৪০ নম্বর বাসে ঝুলতে ঝুলতে প্রতিনিয়ত। পৌষে মাতলার আদিগন্ত প্রসারতায় লঞ্চে দু-দণ্ড। আপিসে বসের রক্তচক্ষুর সামনে হাত কচলাতে কচলাতে। কফি হাউসে অনেক পুরনো বন্ধুদের গুলতানিতে। বাড়িতে সন্তানের চুমুতে।’
এই ‘আমার মির্জা’কেই এঁকেছেন সঞ্চারী। এঁকেছেন কবির সব দুর্বলতা, ব্যর্থতাকে অনাবৃত করে। তিনি প্রথম জীবনে লিখতেন ‘অসদ’ ছদ্মনামে। কিন্তু দেখা গেল ওই নামে ঝঝরের একজন কবি আছেন। তাই তখল্লুস পালটে তিনি করলেন গালিব। যার মানে বিজয়ী। অথচ ব্যক্তিগত জীবনে গালিব তো হেরে ভূত একজন মানুষ। ক্লান্ত বিধবস্ত পরাজিত। বাজারে প্রচুর দেনা। আধো অন্ধকার ঘরে তাঁকে কেবলই চিঠি লিখে যেতে হয়, যার বেশিরভাগই নবাবের দরবারে বা ব্রিটিশদের কাছে বিভিন্ন ভাতার জন্যে আবেদন। কারণ তাঁকে টেনে যেতে হয় স্ত্রী আর পালিত দুই পুত্রের পরিবার, অসুস্থ ভাইয়ের কথা ভেবে তিনি উদ্গ্রীব। বৃষ্টিতে বাড়ির সিঁড়ি ভেঙে পড়ার মুখেও তিনি সংশোধন করে যাচ্ছেন তুফতার কবিতা, সিপাহি বিদ্রোহের পরবর্তী নৈরাজ্যের সময়ে তিনি রচনা করে ফেললেন ‘কাতে-ই বুরহান’, এক অসাধারণ ফারসি অভিধান। অর্থাৎ গালিব একজন রাক্ষুসে প্রতিভার অধিকারী, যে প্রতিভা নানান বিপর্যয়ের মধ্যে নিজের কাজ চালিয়ে যেতে সক্ষম, তাঁর মেধা শত দুঃখেও ধার হারায় না, আর সবার উপরে তিনি একজন প্রকৃত আধুনিক মানুষ, যিনি লিখতে পারেন—
হাজারোঁ খ্বাহিশেঁঅ্যায়সি কে হর খ্বাহিশ পে দম নিকলে
বহোত নিকলে মেরে আরমান লেকিন ফির ভি কম নিকলে।।
(সহস্র আকাঙ্ক্ষা এমন, যে প্রতি বাসনায় কণ্ঠাগত পরান
প্রকাশ হলও বহু ইচ্ছে আমার, তবুও হল না বাসনার অবসান)
তরজমা: সঞ্চারী সেন
এই যে বহু বাসনা—এই হচ্ছে আধুনিক মানুষের লক্ষণ। রাবণের দশমুণ্ডে যে জগত গ্রাস করতে চায়। ‘ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর’। এ তো রবীন্দ্রনাথে পাব অনেক পরে ‘আমি বহুবাসনায় প্রাণপণে চাই’।
‘স্বাতন্ত্র্য হচ্ছে আধুনিকতার লক্ষণ আর জোটবদ্ধতা সাম্প্রদায়িকের ধর্ম’ (মণীন্দ্র গুপ্ত)। গালিব একেবারেই স্বতন্ত্র একজন মানুষ, কি তার পোশাকে, কি তার মেজাজ মর্জিতে। ‘দিল্লির অধিকাংশ মানুষ, মল্লা থেকে শুরু করে ধোপা, ভিস্তি, সরাই মালিক, দর্জি পর্যন্ত সবাই একরকম পোশাক পরে। সবারই বড় বড় চুল আর দাড়ি। গালিব এই গোষ্ঠীবদ্ধতার মানসিকতাকে ঘৃণা করেন। তাঁর কবিতার মতো তাঁর আচার আচরণ, জীবনযাপন ও পোশাক পরিচ্ছদেও স্বকীয়তা বজায় রাখতে তিনি বদ্ধপরিকর। মাথায় লম্বাটে কলাহ পপাখ টুপি, পরনে পাজামা ও মিহি নয়নসুখের কুর্তা, তাতে বুকের কাজে জামদানি কাজ করা, যেন একরাশ ফুল কেউ ছড়িয়ে দিয়েছে-এমনতর উজ্জ্বল পোশাকে গালিব যখন মুশায়রায় পালকি থেকে নামেন তখন উপস্থিত সকলে মুগ্ধ হয়ে যায়।’
দিল্লি আসার পর থেকেই গালিব সকলকে মুগ্ধ করে চলেছেন, তাঁর পোশাক, তাঁর বাগ্মিতা, তাঁর কবিতার চলন দিয়ে। তবে তাঁর কবিতার শত্রুও তৈরি হয়েছে। তাঁকে উপহাস করে তাঁর মুখের ওপর পড়া হয় সে কবিতা।
সে কাব্য অর্থহীন, যা বোঝেন শুধু কবি
আনন্দ তো তবেই, যদি অন্যে পায় সে ছবি
মীরকে বুঝি, মির্জাকেও, কিন্তু গালিব যা লেখেন
ঈশ্বর তাঁকে রক্ষা করুন, তিনিই জানেন কে বোঝেন।
কবিমহলে উপহসিত, ঠাঁই মেলেনি মুঘল দরবারে, নতুন প্রভু ইংরেজরাও কি গালিবের কবিতার কদর বোঝে? নিজের পেনশনের জন্য তাঁকে ছুটতে হয় কলকাতাও। যদিও যে জন্যে যাওয়া, তার সবই নিষ্ফল, তবু তিনি খেয়াল না করে পারেননি কলকাতার নিবিড় সবুজ শ্যামলিমা, নারীদের রূপ, তাদের কটাক্ষ, ইশারা, তাজা ফল আর মধুর মদিরার স্বাদ, দেখে মুগ্ধ হয়েছেন প্রথম ফারসি সংবাদপত্র ‘মিতার-উল-অখবার’। সম্পাদনায় রামমোহন রায়। দিল্লিতে তখনও সংবাদপত্রের জন্ম হয়নি। কলকাতায় গালিব স্বাদ পেয়ে গেলেন এক আধুনিক পৃথিবীর। রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ এবং বহির্বিশ্বের জানলা খুলে গেল তাঁর সামনে।
হয়তো কলকাতার এই প্রভাব রয়ে গেছিল তাঁর অবচেতনে। তাই সমকালীন কবিদের থেকে বিচিত্র কাজ করেছেন তিনি। যেমন কাতে এ বুরহান, যেমন দস্তম্বু। আর এইসব কাজ তিনি করে চলেছেন একের পর এক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে। চারদিকে পাওনাদার, ভাই ইউসুফের পাগল হয়ে যাওয়া, সাতটি সন্তানই জন্মের এক বছরের মধ্যেই মারা গেছে, শ্বশুর মরুফের ইন্তেকাল ঘটেছে।
আর এইসব সামলানোর জন্যে ঈশ্বরের পায়ে মাথা কোটার লোক তিনি নন। আধুনিক মানুষের সংশয় যে তাঁর মজ্জায়।
ইমান মুঝে রোকে হ্যাঁয় তো খিঁচে হ্যাঁয় মুঝে কুফর
কাবা মেরে পিছে হ্যাঁয় কলিসা মেরে আগে।।
(বিশ্বাস আমায় আটকায় তো অবিশ্বাস টানে
কাবা পিছনে আমার পূজাবেদী সামনে।।)
তরজমা: সঞ্চারী সেন
এ তো আধুনিক কবির কথা—
‘যতক্ষণই শ্বাস থাকে তো ততক্ষণই আশ
এই আসে তো এই চলে যায় ঈশ্বরে বিশ্বাস’
ইংরেজ তাঁর ধর্ম নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান—তিনি আধা মুসলমান, কারণ তিনি শূকরমাংস খান না, কিন্তু মদ খান।
তাঁর মধ্যে কোথাও যেন মুল্লা নাসিরুদ্দিনের ছায়া। সেই তির্যক মুক্তমনা অসাম্প্রদায়িক মেধাবী মানুষটি বসে আছে ভেতরে। যাঁরা ধর্মকে অস্বীকার করেননি, কিন্তু পাশ কাটিয়ে চলে গেছেন পাত্তা না দিয়ে। এই গালিবই তো লিখতে পারেন উপোষ ভাঙার জন্য খাদ্য যার আছে
সে যেন অবশ্যই রোজা রক্ষা করে
যার কাছে দিনশেষে খাদ্য কিছু নেই
রোজা না ভেঙে সে বেচারা কী করে?
প্রেমেও তো স্বতন্ত্র গালিব। স্ত্রী উমরাও জান চরিত্রগত ভাবে তাঁর বিপরীত মেরুর মহিলা, তাঁর সঙ্গে বিয়েটা যেন জোর করে চাপানো শৃংখল তাঁর। তাঁর তো রংদার জীবন তবায়েফ মহল্লায়, রূপের হাটে কত ইশারা। এর মধ্যে প্রকৃত প্রেমের অর্ঘ্যও এসেছিল। সে মেয়েটি কণ্ঠে তুলে নিয়েছিল তাঁরই গান। দুজনের ক্ষণিক মিলনে জন্ম নিয়েছিল অসাধারণ কিছু কবিতা।
জলা হ্যাঁয় জিস্ম যাহাঁ, দিল ভি জল গয়া হোগা
কুরেদতে হো যব রাখ জুস্তজু কেয়া হ্যাঁয়?
(শরীর জ্বলে গেছে যখন তখন হৃদয় তো পুড়ে গেছে
ছাই রয়ে গেছে শুধু, আর খোঁজো কী?)
তরজমা: সঞ্চারী সেন
ছাই ঘেঁটে যদি পাপ খোঁজে কেউ? গালিব ততটাই আধুনিক, যতটা আধুনিক হলে এইসব পাপটাপ তাঁর টুপির পালক হয়ে ওঠে।
তমাশা–এ গুলশন তমান্না এ চীদন
বহার আফ্রীনা, গুনহগার হ্যাঁয় হাম
(উদ্যানের রং আমায় পুষ্পচয়নে প্রলুব্ধ করে
বসন্ত অপরূপ, পাপ করেই ফেলি।)
তরজমা: সঞ্চারী সেন
তাঁর চারপাশে তৈরি হয়েছে এনিগমার কুহেলি। কারণ তিনি আধুনিক, তিনি যুগের থেকে এগিয়ে। তাঁর কবিতা রংদার মেহফিলে বাহ্ ভাই বাহ্ করাতেই আটকে থাকেনি, নির্জন গলি দিয়ে একা মানুষের বাড়ি ফেরার পথে হেঁটে হেঁটে এসেছে পেছন পেছন, মরুভূমির বালিঝড়ের মতো চোখে নাকে ঢুকে গেছে, কানের মধ্যে ঢুকে গেছে বহু বছর আগের সমুদ্রস্নানের স্মৃতি হয়ে, হোটেলের আয়নার সাঁটা টিপ হয়ে, যার মায়া আর বেদনা আমরা কোনদিন কাটিয়ে উঠতে পারিনি।
সঞ্চারী এই মায়ার গালিবকে ফুটিয়ে তুলেছেন। একে তথ্যভারে ক্লান্ত করেননি, তাঁর লেখা এগিয়েছে উপন্যাসের মতো আকর্ষক ঢঙে।
তবে আক্ষেপ দুটো। এত অসাধারণ একটি বই কেমন যেন স্কুলটেক্সট বইয়ের মতো করে ছাপা হল। দুই, সঞ্চারীর অনুবাদে গালিবের কবিতা ঠিক যেন কবিতা হয়ে ওঠেনি।
জব-কি তুঝ বিন নহি কোয়ি মওজুদ
ফির ইয়ে হাঙ্গামা অ্যায় খুদা কেয়া হ্যাঁয়
(যখন তুমিই আছো কেউ নেই পর
তখন এ লড়াই কেন হে ঈশ্বর?)
তরজমা: সঞ্চারী সেন
এই অনুবাদে একটু খটকা থেকে যায়। কবিতাগুলি একটু কবিতার মতো হলে বইটি আরও উচ্চতায় পৌঁছোত। কারণ বিষয় যে গালিব।
‘দুনিয়ায় আরও অনেক শক্তিশালী কবি আছেন
কিন্তু গালিবের কলমটাই অন্যরকম।’
তাই না?
ঐতিহাসিক সময়ের প্রেক্ষাপটে গালিবের সময়টুকুর উপস্থাপনা দরকারি ছিল। লেখাটি কবি সম্পর্কে কৌতুহল আরও উস্কে দিচ্ছে।
সত্যিই তার কলম অন্যরকম
http://www.columbia.edu/itc/mealac/pritchett/00ghalib/index.html
এই সাইটটায় গালিবের গজলের অনুবাদ আর টিকার একটা ভাল কালেকশন আছে।
গালিবের ওই শেরগুলো নিয়ে আমার অক্ষম দু'পয়সাঃ
১
হাজার বাসনা এমন আমার প্রাণ করে যায় যায়,
অনেক তো গেছে তবু কতশত বাকি রয়ে গেল হায়।
২
ধর্ম আমায় রেখেছে বাঁধিয়া অধর্ম টানে আগে,
পেছনে আমার কাবার পাথর, মোল্লা সমুখবাগে।
৩
শরীর যখন জ্বলে পুড়ে খাক, হৃদয় তো গেছে পুড়ে,
পড়ে থাকা ছাই হাতড়ে বেড়াও, কী পাবে তা’ খুঁড়ে খুঁড়ে?
৪
তুমি আছ খোদা, আর কেউ নেই—এই তো’ জেনেছি সার,
তবে কেন এত দ্বন্দ্ব-কলহ, এ কেমন অবিচার?
কিন্তু গালিব ই তাঁর ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি। এ ব্যাপারে ফয়েজ এর ও কোন সন্দেহ ছিল বলে মনে হয় না। এই কথায় কথায় অতি আহ্লাদী আমার রবীন্দ্রনাথ, আমার শংখ ঘোষ, আমার জয় গোস্বামী , আমার নেরুদা ইত্যাদি একেবারেই পোষায় না। কবিতা স্বভাবতই ব্যক্তিগত এবং অন্তরংগ, তাকে আলাদা করে উল্লেখের কি প্রয়োজন আমি আদৌ বুঝি না। এসব আহ্লাদীপনা সোশাল নেটওয়ার্কিং এর ঘোড়া রোগ। আসলে বুক রিভিউ জিনিসটা যে আলাদা একটা শিক্ষিত আর্ট, এবং আলোচ্য বিষয়ের সমকালীন প্রজ্ঞায় সংযোজন করার বা হস্তক্ষেপ করার একট পদ্ধতি , সেইটে অস্বীকার করা ছাড়া এই আহ্লাদীপনার আর কোন ভূমিকা নাই। কারণ এর বিকল্প হল, প্রেক্ষিতের আলোচনা।
তো এসব রোগ নতুন অ্যামেচার পাঠক পাঠিকা দের থাকে , আমরা দু চারটে করে ফেলি তাও একটা মানে হয়, নতুন পড়ার আহ্লাদ, সিরিয়াস বুক রিভিউয়ার দের এই লব্জ গ্রহন করার কি কারণ বুঝি না। মানে সিরিয়াসলি ই বুঝি না।
তো কথা হল, গালিবের আধুনিকতা, শুধু মাত্র কলকাতা যাত্রার ফল কিনা , মানে সেটাই এই প্রবন্ধে ইম্প্লাই করা হয়েছে কিনা বুঝতে পারছিনা। উর্দু সংস্কৃতিতে সেকুলার অর্থে আধুনিকতা একটা অতি আলোচিত বিষয়। মুশিরুল হাসানের অবধী পান্চ , ব্যংগচিত্র ইত্যাদি বিষয়ক প্রখ্যাত বইটি রয়েছে। এবং সেখানে আধুনিকতা টা একাধারে ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালি আধুনিকতার সমসাময়িক, অন্যদিকে প্রাক - কলোনী নাগরিক সংস্কৃতির এক ধরণের অমলিন ধারা, যেটা ইংরেজ এমনকি ইউরোপীয় ইতিহাসের পিরিয়ডিক স্ট্রাকচারে সাধারণত অনেকদিন অবদি অস্বীকার করা হয়েছে, একেবারে হালে একটু আধটু স্বীকার করা হয়েছে, বিশেষতঃ ভারতীয় বাজার অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে। আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয় , এই প্রসংগে ক্রিস বেইলির লেখা উল্লেখ করা যেতে পারে, কিন্তু আমি ইতিহাসে প্রশিক্ষিত নই বলে, উদাহরণ নির্বাচন টা আমার ভুল হতে পারে, তবে তাতে মোদ্দা টা ভুল হবার কথা না।
আর মহানতম শব্দটা ডেলিবারেট লাগছে, মহত্তম বা শ্রেষঠ শব্দট কেন ব্যবহার করা হয় নি, নিশচয়ী নির্দিষ্ঠ , চিন্তিত কারণ আছে, সেটা যদি বলা হত খুব ভালো হত। এমনিতে সুন্দর একটা আলোচনায়, ঐ অকারণে আমার বগলদাবা টা ছাড়া ভালো দরদী কাব্যপ্রেম যা প্রকাশিত হয়েছে সেটি লেগেছে। গালিব যে ভাবে তাঁর সময়ের প্রতিনিধি, সমস্ত নিরাপত্তাহীনতা সত্তএও, তার সংগে মান্তো এবং বোদলেয়ার তুলনীয়। সম্ভবত র্যাবো ও, কেনো সেটা মনে করি, এট নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। ফয়েজ এবং রবীন্দ্রনাথ এর সংগে গালিব এর একটা রাজকবি বনাম লোককবি (বিদ্যাপতি বনাম চন্ডীদাস ইত্যাদি) ডুয়ালিটি টা আদৌ দাঁড়ায় কিনা আমার একটু সন্দেহ আছে।
বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত
মুশিরুল হাসানের বইটা।
https://witheredpapyrus.blogspot.com/2014/06/avadh-punch-wit-and-humour.html
সংশয় এবং আত্মজিজ্ঞাসা না থাকলে বড় কবি হওয়া অসম্ভব, এবং শুধুমাত্র সেইটেই একটা দৌর্বল্যের বা পাঠকের সংগে মানসিক নৈকট্যের সম্ভাবনার লক্ষন কি করে হয়, আমি নিশ্চিত নই। এই সব বাইনারি বেশিদিন টেঁকা মুশকিল। একেকজন কবি হঠাৎ হঠাৎ নানা কারণে, তার মধ্যে বায়োগ্রাফিকাল কারণ থাকতেই পারে, রাজকবি হয়ে যান ঠিক ই, কিন্তু ফয়েজ যিনি স্বাধীন পাকিস্তানে জেলে যাচ্ছেন, রবীন্দ্রনাথ যিনি নিজেকে হাজার বার ভাঙছেন, পরাধীন দেশে জন্মে , পরাধীন দেশেই মারা যাচ্ছেন, এবং যাঁকে সারাজীবন, অতি ব্যক্তিগত অতি ভাবাবেগাচ্ছন্ন বলে গালাগাল খেতে হয়েছে, অতি - অরাজনৈতিক বলে সমালোচিত হতে হয়েছে, তাঁকে ঠিক ধরা ছোঁয়ার বাইরে মহান কবি বলা যায় কিনা সন্দেহ আছে, প্রাক-আধুনিক বলা যেতে পারে হয়তো, কারণ তার পরবর্তী তে তো জীবনানন্দ নামক মহাজাগতিক সৌভাগ্যটি আমাদের কপালে বর্তাচ্ছে।
একটা ভাষার , একটা আর্টের যে ঐতিহাসিক সঞ্চার , তাতে একেকজন একেকসময়ে প্রতিষ্ঠান, সেই দুশ্চিন্তা করার এমনিতেই মানে হয় না, তবে হ্যাঁ তাই বলে কে অক্টাভিও পাজ কে কেউ নিকানর পারার সমগোত্রীয় বলে মনে করবে না। কিন্তু আমার মনে হয় এইটা রেকগনাইজ করা দরকার, নইলে যুক্তিনিষ্ঠ আলোচনা অসম্ভব, যে , ভাষা যেহেতু জাতি সত্ত্বার , পরিচয়ের রাজনীতির মূল আধার তাই তার ইতিহাসে পক্ষ, প্রতিপক্ষ এসেই থাকে, কিন্তু এই আলোচনাটায় তার অবকাশ কোথায় বুঝতে পারছি না। তাও যদি পাকিস্তানের আভ্যন্তরীন রাজনীতির প্রেক্ষিতে আলোচনা হত বোঝা যেত, ফয়েজ কে কৃত্রিম রাজভাষা উর্দুর প্রতিনিধি বলে গাল দেব হত , তাও হত, কিন্তু ফয়েজ এর ঐতিহাসিক ভূমিকা টাই এমন, তাঁকে রাষ্ট্রীয় বা কবিতার আঙ্গিকের অর্থে প্রতিষ্ঠান বলা কঠিন, রাষ্ট্র বিপ্লবের কথা তাঁর কবিতায় আসা সত্ত্বেও।
উর্দু 'কৃত্রিম রাজভাষা' ?
এ নিয়ে দু'পয়সা দাও বোধি।
ইকি রে বাবা, রঞ্জন দা কি স্মৃতিভ্রষ্ট হচ্ছেন নাকি। এগুলো তো হিন্দী উর্দু ভাষার সংগে পরিচিত লোক হিসেবে আপনার আমাদের থেকে বেশি মনে থাকার কথা। স্বাধীন পাকিস্তানে ভাষা ন্যাশনালিস্ট দের একাংশ উর্দু কে কৃত্রিম রাজভাষা মনে করেন, আমাদের সরকারী হিন্দীর মত, যেটা আমির খস্রুর ভাষা , ভক্তি আন্দোলনের ভাষা, মায় কথ্য হিনুদ্স্থানীর থেকে , ঐতিহাসিক মৈথিলীর থেকে আলাদা।
তাঁদের কাছে, সরকারী উর্দু হল পুরোনো পশ্চিম উত্তর প্রদেশের একটা নিতান্তই বিংশ শতকীয় এলিট প্রোজেক্ট, যা কিনা (পশ্চিম) পাকিস্তানের প্রদেশ গুলির , অঞ্চলগুলির ভাষা ও সংস্কৃতির উপরে চাপানো হয়েছে।
কথাটা সম্পূর্ণ সত্যি না, তার কারণ আর কিছুই না, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে , আঞ্চলিক প্রাধান্য স্বাধীন পাকিস্তানে অব্যাহত। যেমন ধরেন, আর্মি তে পাঞ্জাবী প্রাধান্য। তাই কে কাকে অ্যাপ্রোপ্রিয়েট করেছে বলা মুশকিল। এবং এই দৃষ্টিভঙ্গী একই সঙ্গে লিখিত উর্দুর সাহিত্যিক ওওনবিংশ শতকীয় সাংস্কৃতিক, বিশেষত সেকুলার অর্থে প্রাক-উপনিবেশ আধুনিক নাগরিক ঐতিহ্য কে অস্বীকার করে। যে কোনো রাষ্ট্রীএয় ন্যাশনালিস্ট প্রোজেক্ট এ প্রচুর ভেগোলজি থাকে। পাকিস্তান রাষ্ট্রে আর তার সরকারী ভাষায় তার অভাব নেই। আবার এটাও মনে করার কারণ নেই, আধুনিক পাকিস্তান রাষ্ট্রে, সরকারি উর্দু-ব্যতীত প্রধান ভাষাগুলির নিজস্ব রাজনীতি যা আছে তা কেবলি নির্যাতিত মানুষের ছাই চাপা স্বর। অপ্রধান ভাষা ভাষী মানুষের অভিজ্ঞতা , ঠিক দক্ষিন এশিয়ার অন্য স্বাধীন রাষ্ট্রের অপ্রধান ভাষা গুলির ভাষা ভাষী মানুষের অভিজ্ঞতার মতই। এ মানে সমস্যা অন্তহীন।
@রঞ্জন,
এবার আপনিই লিখুন নিজের প্রশ্নের উত্তর। :-)
সম্প্রতি গজল নিয়ে একটা বড়ো লেখা তৈরি করতে গিয়ে রেখ্তা আর উর্দু নিয়ে কিছু পড়াশোনা করতে হলো। গালিবও ছিলেন তার মধ্যে। অন্য কাজে ব্যস্ত আছি, তাই আর নাক গলাচ্ছি না। তবে একটা সূত্র দিয়ে দিই, উর্দু, গঙ্গা-জমনি তহজিবের প্রধান সূত্র, যা দিল্লির জনতার মুখে তৈরি হলেও বহু আগে হায়দরাবাদে কুতুবশাহি জমানায় 'রাজভাষা' হয়েছিলো স্রেফ লোকভাষা হবার সুবাদে। তাকে দখনি উর্দুও বলা হতো। লিপি ছিলো ফারসি। শৌরসেনী অপভ্রংশ থেকে 'হিন্দভি' ( আমির খুসরো'র ভাষা), থেকে হিন্দুস্তানি-দেহলভি-লাহোরি-লশকরি, নানা নাম ছিলো তার। আঠেরো শতকের গোড়ার দিকে দিল্লির ইতরজনের মুখে বর্তমান উর্দু ভাষার গোড়াপত্তন হয়। 'উর্দু' নামটা এসেছিলো তুর্কি শব্দ 'ভর্দু' থেকে। যাকে ফার্সিতে 'ফওজ' বা সৈন্যদল বলা হয়। মুঘল সৈন্যরা আসতো সারা দেশের নানা প্রান্ত থেকে। সবার ভাষার কিছু লক্ষণ এই ভাষায় সমন্বিত হয়ে গিয়েছিলো। ফওজি লোকেদের মুখের ভাষা ছিলো বলে তাকে 'জবান-এ-ভর্দু' বা 'লশকরি জবান'ও বলা হতো। ভাষা হিসেবে 'উর্দু' শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন কবি গুলাম হমদানি মুশাফি (1780)। উর্দুর শরীরটা তৈরি হয়েছিলো গাঙ্গেয় উপত্যকার খড়িবোলির আধারে। লিপিটা ছিলো ইরানি নাশতালিক। মুঘল অশরাফরা উর্দুকে 'ছোটলোকে'র ভাষা মনে করতেন। তাঁদের ভাষা ছিলো ফারসি। গালিবের বহু লেখা শুদ্ধ ফারসিতে। উর্দুর মতো পূর্ণতঃ ইতর মানুষের ভাষা ভারতীয় উপমহাদেশে আর নেই। এতোটা সমন্বিত ভাষাও এদেশে পাওয়া যাবে না।
পাকিস্তান ও উর্দুর সমীকরণ ভাষাটিকে স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে 'অপ্রিয়' করে তোলে। উর্দু যদি দেবনাগরি অক্ষরে লেখা হতো, তবে ভাষাটি এদেশে টিকে যেতো। এমন কি হয়তো হিন্দিভাষার মহিমাও খর্ব করতে পারতো। কিন্তু ব্যাপারটা কেউ চায়নি। না হিন্দুস্তান, না পাকিস্তান। কারণটা রাজনৈতিক। পাকিস্তানে বহু লোক উর্দুর বিরোধিতা করে, কারণ এই ভাষাটির ভিত্তি আছে হিন্দি খড়িবোলিতে। পঞ্জাবি বা সিন্ধিতে নয়। তারা মনে করে ভাষাটি পাকিস্তানের রাজভাষা হলেও তা আসলে ভারতীয় ভাষা। হিন্দুস্তান-পাকিস্তানের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব উর্দুর পোড়া কপাল হবার কারণ। ব্যাপারটা সীমান্তের এপারে ওপারে অনেক কবিকে বিমর্ষ করেছিলো। পশ্য, কুরাতুলেন হায়দার।
"ব্যাপারটা কেউ চায়নি" টাই , ভারতের ক্ষেত্রে, সংক্ষেপে হিন্দী-উর্দু কনট্রোভার্সি। হিন্দী ও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের দিকপাল রা (অথচ এঁরা আধুনিকতা প্রশ্নে একই অবস্থানে এরকম আজগুবি কথা কেউ বলবেও না) , যাঁরা পরবর্তী তে স্বাধীন ভারতের সেকুলার রাজনীতির অনন্য নাম, এবং সত্যি ই প্রণম্য নাম, তাঁরাও সংস্কৃত -- মধ্যযুগীয় ভাষা গুলি --আধুনিক ভারতীয় ভাষা এই লিনিয়ারিটির থেকে বেরোতে পারেন নি, এবং দক্ষিনী বা অন্য প্রচলিত উর্দুর ভারতীয়ত্ত্ব কে (এবং একই সংগে , প্রাক কলোনী উর্দু নাগরিক আধুনিকতাকে ) স্বীকার করেন নি। ফারসী প্রভাবিত আশরফি সংস্কৃতিকেই ভিন্নতার চিহ্ন বলে ধরা হয়। নাম গুলি বলে স্বাধীন দেশের শান্তিকালে সেকুলার দের মন খারাপ কিংবা , "হগলেই সমান যাই বিজেপি কেই ভোট দেই গোছের" আরেকটি অজুহাতের জন্ম দিতে চাই না, তবে বিষয়টা সত্যি ই দুঃখের। এবং এ ব্যাপারে এত লিটেরেচার রয়েছে, আগ্রহ থাগলেই পড়া যাবে।
আমি কত জানি কত্ত জানিই। একধারসে অপমান করে আমার জ্ঞানের গু ছুড়ে না দিলে পেট ক্লিয়ার হয় না।
আমার মূল কনটেনশন টা তাইলে এই প্রবন্ধটির দুটি অন্যতম প্রিমাইস এবং লিখন শৈলীর একটি দিক নিয়ে। আলোচ্য বইটি নিয়ে নয়। কারণ সঞ্চারী সেন কাজের প্রতি এবং পুষ্পিত মুখোপাধ্যায় এর কাজের প্রতি প্রচুর শ্রদ্ধা আছে, এবং রিভিউয়ার তৃষ্ঞা বসাক এর প্রতি o শ্রদ্ধা আছে গুরুচন্ডালি তে নিয়মিত নানা বই নিয়ে প্রবন্ধ লেখার জন্য।
ক - গালিবের আধুনিকতা, কলকতার সংস্পর্শে এসে তৈরী হচ্ছে, এবং তার কোন কলোনী পূর্ব নিজস্ব ঐতিহ্য নাই। এটাকে কনটেস্ট করলাম। কারণ "তাজকিরা" এবং "শহর আসব" এই সাংস্কৃতিক ক্যাটিগোরির কথা এখানে অস্বীকার করা হচ্ছে।
খ - গালিবের আমলের কনটেম্পোরারি দের নিয়ে যদি রাজকবি বনাম মানুষের কবি ভাগ টা করা হত উল্লেখিত ভূমিকায় তাইলে হয়তো আপত্তির কিছু থাকতো না, কিন্তু সেটা ফয়েজ বা রবীন্দ্রনাথের সংগে করাটা আমার মতে সংগত না। কোন জাস্টিফিকেশন ই নেই।
লিখনশৈলীর যে দিকটায় তাইলে আপত্তি রইলো, সেটা হল, পাঠ অভিজ্ঞতা বনাম বুক রিভিউ ইত্যাদির পরিচিত প্রসংগটি। পাঠ অভিজ্ঞতা রচনা আমরা সোশাল নেটওয়ার্কিং আমলে প্রচুর পাচ্ছি, এতে করে যে কোনো বই সম্পর্কে যাঅ খুশি বলা যাছে, বিষয়ে পড়াশুনো না করে, বা করার আগ্রহ না থাকা সত্তএও। টেক্স্ট অ্যানালিসিস ভালো জিনিশ, কিন্তু শুধু টেক্স্ট অ্যানালিসিস করে একটা বিষয়ে ঢোকা যদি যেত, লোকে আর লেখা পড়ার কোন চর্চা করত না। সব ই লিফলেট পাঠ হয়ে যেত, বা লিফলেট লিখন।
ইন ফ্যাক্ট সত্যি কথা বলতে কি, বিবলিওফিলিয়ার ভর্তি উপন্যাস ও পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু তাতে যে গুলো উতরোচ্ছে না, সেগুলি মূলতঃ পাঠ অভিজঞতার সাবজেক্টিভিটি শুধু না, স্মৃতি চারণ এ ভরতি, সেখানে আলোচ্য বই বা সেই বই য়ের লেখক না, পাঠ অভিজ্ঞতার লেখক নিজেকেই বা নিজের একলেকটিক রুচিকেই সেলিব্রেট করছেন মাত্র, যেমন এলিফ বাটুমান এর উপন্যাস। একেবারেই কিস্যু হয় নি, শুধু কবে কোথায় কি পড়েছেন, পড়ে কতটা ঘনিষ্ঠ বোধ করেছেন তার তালিকা। অথচ প্রচুর দস্তয়েভস্কি র রেফারেন্স থাকা সত্তএও, আতিক রাহিমির উপন্যাস একদম ব্যাপক। সিনেমায় সফল কোটেশন এর মত।
বাকি যেটা, লেখায় প্রকাশিত গালিব প্রেম এবং কবিতা সম্পর্কে আকন্ঠ ভালোবাসা, সেটা অ্যাপ্রিসিয়েট না করার কিছু নেই, অনেক ধন্যবাদ।
আগ্রেসিভ নিননিছা র বিনয়ের উদাহরণটি খুব ই কৌতুককর :-))) এই দাবী তে পুস্তকালোচনা বন্ধ করতে হয়, কারণ যে কোনো পুস্তকালোচনাই, ঠিক যে কোন আর্ট আলোচনা- সমালোচনার মতই , আলোচকের পক্ষ থেকে 'আমি কত খবর রাখি' হিসেবে দেখা যেতে পারে। যাঁরা নির্দিষ্ট সময়ের নিয়ম করে ফোরাম পেলেই আর্টই স্টিক প্রোডাকশন ব বইপত্র সম্পর্কে ভাবনা মানুষের উপকারে লাগার অছিলায় জানিয়ে থাকেন, তাঁদের পক্ষ থেকে এই বিলাপ হাস্যকর।
গুরুচন্ডালি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করি, আপনাদের পাঠক দের মধ্যের প্রভাবশালী নিননিছা অংশের মধ্যে যেহেতু যেকোনো পুস্তকালোচনাকেই , একটা জ্ঞানের আস্ফালন হিসেবে দেখার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, আপনারা হয় পুস্তকালোচনা এবং আর্ট সমালোচনার সেকশন গুলি তুলে দেন, নইলে সেই আলোচনায় মতামত দেবার উপায় টি বন্ধ করুন। নইলে যে কোনো থ্রেড এর যে কোনো আলোচনাতেই আপদগণ নোংরা ছিটিয়ে শ্লাঘা অরজন করবেন। গোপনীয়তা রক্ষার আকুলি বিকুলিটাও হাস্যকর।
বোধি
বাউন্সারগুলো ডাক কর। কেউ যদি চিমটি না কাটে তোমার কন্টেন্ট রিচ কিন্ত কঠিন ভাষার বক্তব্যকে উপেক্ষা করত -- বেশি খুশি হতে?
শিবাংশুর বক্তব্যের ধ্রুবপদটি আমার মনের কথা। কিন্ত এ নিয়ে কোনও পড়াশোনা নেই , তাই লেখার ধক নেই।
তোমার সৌজন্যে মুশীরুল হাসানের বইয়ের রিভিউ পড়া হয়ে গেল। এটা প্রাপ্তি।
রঞ্জনদা, অসভ্যতামির কাছে বিনয়ের প্রশ্ন নেই, ভালো ব্যাবহারের ও প্রশ্ন নেই, পাটকেল দস্তুর। সেটাই চলবে। বই, বইয়ের লেখক, রিভিউয়ার, উল্লেখিত ভূমিকা লেখক কারোর প্রতি কোন অশ্রদ্ধা নেই, থাকার প্রশ্ন ই নেই। তাঁরা নিজগুণে সমাদৃত। এই রিভিউ প্ৰবন্ধে প্রকাশিত অবস্থান যেটা সেটার ঐতিহাসিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বুক রিভিউ এর লিখন শৈলী তে বিষয়ের সংগে অন্তরংগতার প্রকাশ কে অনাবশ্যক বলে বলা হয়েছে। দৃষ্টিভংগী টির ব্যাখ্যাও করা হয়েছে, বুক রিভিউ একটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট আর্ট, সেটা পৃথিবীর আধুনিক সাংস্কৃতিক ইতিহাসে, সাধারণত একটা বিষয়ে ইনটারভেন করতে বা সংযোজন করতে ব্যবহার করা হয়েছে। পাঠ অভিজ্ঞতার নব আবিষ্কৃত বিস্ময় ইত্যাদি বুক রিভিউ এর আর্টের কোন উপকার করছে না, সেটা বলা হয়েছে । বিতর্ক বিশেষ নেই, এই প্রসংগে। ব্যক্তিগত কোন বিষয় ই না।
আপনি তো আবদুল হালিম শরর পড়া লোক। "তজকিরা" (আরবান স্কেচ/নকশা) , "শহর আসব" (ল্যামেনটেশন আবাউট সিটি) ইত্যাদি সেকুলার গদ্য চর্চা ও কনভার্সেশান ইত্য়াদির স`মগে পরিচিত, হুতোম ও কলিকাতা কামালালায় দুটি মডেলের লেখা ই উর্দু সাহিত্যেবহুদিন ধরেআছে , এবা`ম গালিবের ল্যামেন্টেশান এর আর্ট এর সা`মগে কলকাতা যাত্রার সম্পর্ক বিশেষঃ নেঈ , আপনি টা এসব জানেন , খামোখা বিনয় করেছেন কেন? আপনাকে তো নিননিছায় ধরে নি। :-)))))
খানুবাবু মাছধরা জাল নিয়ে ছুঁচের পিছে ছ্যাঁদা খুঁজতেছেন
সেগুলি মূলতঃ পাঠ অভিজঞতার সাবজেক্টিভিটি শুধু না, স্মৃতি চারণ এ ভরতি, সেখানে আলোচ্য বই বা সেই বই য়ের লেখক না, পাঠ অভিজ্ঞতার লেখক নিজেকেই বা নিজের একলেকটিক রুচিকেই সেলিব্রেট করছেন মাত্র, যেমন এলিফ বাটুমান এর উপন্যাস। একেবারেই কিস্যু হয় নি, শুধু কবে কোথায় কি পড়েছেন, পড়ে কতটা ঘনিষ্ঠ বোধ করেছেন তার তালিকা।
এ কি মাইকেলীয় আত্মধিক্কার না বিশুদ্ধ স্বীকারোক্তি? বিদ্যা কি তবে বিনয় দান করিল? জ্ঞানসাগর ঘোলা করে তবে কি হানুবাবু নুড়িতে মন দেবেন? জানতে চোখ রাখুন গুরুর পাতায়।
লোকজনের প্যানর প্যানর এর অন্ত নাই, এদিকে বিষয়টিতে এক পয়সার খবর দেবার মুরোদ নাই :-)))) আশা করি গুরুচন্ডালির প্রাবন্ধিকেরা এই সব বিচিত্র নিননিছা গণের কমেন্ট কেই তাঁর কাজের সনির্বন্ধ , সযত্ন পাঠ হিসেবে ধরে নেবার ভুল করবেন না। বিষয়ে আগ্রহ এখনো প্রকাশিত না, অত্যন্ত গভীর গোপন বোধের ব্যাপার যা সুদু আত্মজীবনীতে বিজ্ঞাপন দেবা যায়:-))))
ভীষণ ভাল লাগল পড়ে । মন ভরে গেল।
কারণ সঞ্চারী সেন কাজের প্রতি এবং পুষ্পিত মুখোপাধ্যায় এর কাজের প্রতি প্রচুর শ্রদ্ধা আছে, এবং রিভিউয়ার তৃষ্ঞা বসাক এর প্রতি o শ্রদ্ধা আছে গুরুচন্ডালি তে নিয়মিত নানা বই নিয়ে প্রবন্ধ লেখার জন্য।
জিরো শ্রদ্ধা আছে!!! ঃ))