উর্দু শব্দের অর্থ সেনানিবেশ বা তার লাগোয়া বাজার। ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-মধ্যাঞ্চলে মুসলমান শাসকদের আধিপত্য কায়েম হওয়ার কিছু পর থেকেই, অর্থাৎ একাদশ শতকের শেষাংশ থেকে, রাজদরবারের আভিজাত্যকে পাশ কাটিয়ে সেনানিবেশের বাজারে একসময় নতুন এক বুলি হিন্দু-মুসলমান নির্বাশেষে জনসাধারণের মধ্যে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। সেই বুলিতে যেমন রয়েছে সংস্কৃতজ প্রাকৃত, তুর্কি, ইওরোপীয় নানা ভাষা তেমন আরবি-ফারসির প্রাচুর্য। সেই ভাষাই উর্দু। ক্রমে উর্দু ভাষায় জন্ম নেয় বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সাহিত্য।
শব্দের মূলে সেনাছাউনি থাকলেও, কৌতুকের কথা, উর্দু সাহিত্য কিন্তু সৈনিকের জীবনের শৃঙ্খলার বিপ্রতীপে নাজুক শায়েরি ও নজমের নেশা ধরানো এক রঙিন দুনিয়া তৈরি করে নিয়েছে প্রথম থেকেই। আমির খুসরো থেকে ওয়ালি দক্কনি, মির তকি মির, মির্জা গালিব—উর্দু কবিতার আকাশে আরও কত নক্ষত্রের সমাবেশ। যদিও কবি হিসেবেই গালিব বেশি পরিচিত, তবু তাঁর দিনলিপি বা দস্তম্বুর টানটান গদ্য যাঁরা পড়েছেন, তাঁরা জানেন এর স্বাদ।
উর্দু গল্পের দৌড় শুরু হয়েছে কিছু দেরিতে, যার নাম অফসানা। গোড়ার দিকে ছিল রূপকথা আর অদ্ভুতরসের কিস্সা-কাহানি। ক্রমে বলিষ্ঠ গল্পকারেরা এসে এর চেহারাই বদলে দিলেন। কবিতার পাশাপাশি গল্প-উপন্যাসও শামিল হল উর্দুসাহিত্যের মূলস্রোতে, ঠাঁই করে নিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। উর্দুতে ছোটোগল্পের ঘরানার পথিকৃৎ মুন্সি প্রেমচন্দ। সদত হসন মন্টো, ইসমত চুগতাই, কুরতলন হায়দার, রাজিন্দর সিং বেদি, কিষণ চন্দর—উর্দু গল্প এই রথী-মহারথীদের হাতে অর্জন করেছে হীরকদ্যুতি।
ভাইবোনদের মধ্যে দশম ছিলেন ইসমত চুগতাই (১৯১৫–১৯৯১)। ‘আমি যখন জন্মাই তদ্দিনে মার বাচ্চার শখ মিটে গিয়েছিল, তাই আমি বেশির ভাগই আয়া অথবা দিদির কোলে কোলে থাকতাম। মা বোধহয় আমায় ঘেন্নাই করতেন, প্রতি দু-বছরে একটা করে বাচ্চা।’ মার আদর মনোযোগ না পেয়ে ইসমত একা একা বড়ো হয়ে উঠছিলেন। একদিকে ছিল বোনেরা, যারা কেবল নিজেদের ভাবী বর নিয়ে জল্পনা-কল্পনা করত। ইসমতকে দেখলেই তারা তাড়িয়ে দিত। ভাইরা নিজেদের মধ্যে খেলাধুলা করত।
ইসমত লিখছেন ‘‘আমি ছিলাম দলছুট। অর্থাৎ স্বাধীন... আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম বোনেদের মতো মাথা জড়ো করে বাজে গল্প করার চেয়ে পেয়ারাগাছে চড়া অনেক আনন্দের। রান্নাঘরে কাজের লোকের পেছনে লেগে থাকার চেয়ে বাঁদরদের তামাসা দেখা অনেক ভালো আর বিয়ের কৌতুক নিয়ে মাথা ঘামানোর চেয়ে মুরগির পেছনে দৌড়নো অনেক মজার। আমি দ্বিতীয় রাস্তাটাই বেছে নিয়েছিলাম।’’
এই ইসমত কান্নাকাটি জেদ করে ভাইদের মতো স্কুলে ভরতি হলেন। ঘোড়ায় চড়া, বন্দুক চালানো শিখলেন। অন্য বোনেরা বাড়িতে সামান্য পড়াশোনা করেই সন্তুষ্ট ছিল, কিন্তু ইসমত দ্বিতীয় রাস্তাটা বেছেছিলেন। পর্দা মানতেন না, ছেলেদের সঙ্গে স্বাভাবিক স্বচ্ছন্দ ব্যবহারের পক্ষপাতী ছিলেন, প্রশ্নহীন আনুগত্য তাঁর স্বভাবে ছিল না। মা তাঁর এই সৃষ্টিছাড়া আচরণ স্বাভাবিক ভাবেই পছন্দ করতেন না, বাবার সম্ভবত সামান্য সস্নেহ প্রশ্রয় ছিল। ইসমতকে সেলাই-ফোঁড়াই, রান্নাবান্না শেখানোর চেষ্টা শুরু হল। বারো বছরের ইসমত বললেন ‘শেহনাজভাই শিখছে না, আমি শিখব কেন?’ মা বললেন—ওর বউ ওকে করে দেবে। ইসমত বললেন—‘ওর বউ যদি পালিয়ে যায় তাহলে কী হবে?’
ইসমতের এই অদমনীয় স্পিরিট তাঁর গল্পে দুরন্ত ভাবে এসেছে। তাঁর বহু বিতর্কিত গল্প ‘লিহাফ’ (লেপ) নিয়ে অনেক আলোচনা হয়, কিন্তু সে তুলনায় অনেক কম আলোচিত ‘একজন স্বামীর জন্যে’। মজার মোড়কে ভারতীয় মহিলার জীবনের একটি চিরকালীন সত্যকে তুলে ধরা হয়েছে। গোরুর রচনা যেমন শ্মশানে যায় অবধারিত ভাবে, তেমনি এক একাকী ভ্রমণকারী মহিলার দিকে কেবলই ছুটে আসে তার স্বামীর প্রসঙ্গ। আর মজার কথা, সেসব প্রশ্ন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মহিলারাই করেন।
যোধপুর থেকে বোম্বাই ট্রেনে আসার সময় এ গল্পের কথক সম্মুখীন হলেন এমনই অভিজ্ঞতার।
কথোপকথন ১
কোথা থেকে আসছ?
-
বাপের বাড়ি যাচ্ছ?
-
স্বামীর কাছে যাচ্ছ?
-
তাহলে নিশ্চয় শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছ?
কথোপকথন ২
কোথায় যাচ্ছ তুমি?
-
কোথা থেকে আসছ?
-
বাপের বাড়ি যাচ্ছ না শ্বশুরবাড়ি?
কথোপকথন ৩
ওখানে আপনার বাবা-মা থাকেন?
-
আচ্ছা, আপনার স্বামী থাকেন?
এমনকি ট্রেন থেকে নেমে মালের ওজন করানোর সময়ও ক্লার্ক জিগ্যেস করে—স্বামীর নাম কী?
এইসময় এই গল্পটি যেন একেবারে সাম্প্রতিক সময়ে এসে দাঁড়ায়। মনে পড়ে যায় এই আলোচকের অভিজ্ঞতার কথা। মোবাইল ফোন হারিয়েছে, এই মর্মে যাদবপুর রেলপুলিশের কাছে আবেদন করতে গেলে, যখন স্বামীর নাম জিগ্যেস করা হয়েছিল।
ট্রেনে বিভিন্ন প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে কথককে স্বামী বানাতে হয়, বাচ্চা বানাতে হয় আর সেই মিথ্যে এক একজনের কাছে এক একরকম। কুলির সঙ্গে বিয়ে, চারবছরে আটটা বাচ্চা, দুটো তিনটে করে বাচ্চা একসঙ্গে, এমনকি টিকিটচেকারের সঙ্গে ননদাই সম্পর্ক পাতানো। আর এই সমস্তই ঘটে একজন স্বামীর জন্যে। গল্পটি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দ্যায় স্বামী ছাড়া, বিবাহ ছাড়া, সন্তান ছাড়া একজন নারীর স্বতন্ত্র কোনো অস্তিত্ব থাকতেই পারে না।
‘স্বামী। ভারতবর্ষের স্বামী!—কত কষ্ট করে তাদের খুঁজে বার করতে হয়। তারপর দেখা যায় তারা নিষ্কর্মা নাহলে এত করিতকর্মা যে জুয়া, মদ এবং পরনারীতে তাদের অদ্ভুত আসক্তি। অথচ তাদের স্ত্রীদের কী অসাধারণ আনুগত্য! এত অবহেলা সত্ত্বেও এই, একটু আদরযত্ন পেলে এরা না জানি কী করত! আমি ভাবলাম স্বামীদের অত্যাচারের বোধহয় কোনো মাহাত্ম্য আছে।’
এই গল্পেরই আর-একপিঠ ‘বউদি’ গল্পটি। পনেরো বছরের একটি মেয়ে দাদার বউ হয়ে আসে। কনভেন্টে পড়া স্বাধীনতাপ্রিয় একটি কিশোরী, হরিণের মতো দৌড়ে বেড়ানো, লাফানো, ঝাঁপানো এসব ওর খুব প্রিয় ছিল। বিয়ের পর সব বন্ধ করে দেওয়া হল। বাপের বাড়ি এবং শ্বশুরবাড়ি দু-তরফের খবরদারিতে। তার দিদি খ্রিস্টান ছোকরার সঙ্গে পালিয়ে গেছিল, এই মেয়েটি যেন সেরকম কুদৃষ্টান্ত অনুসরণ না করে। সকলে মিলে ওকে ঘরোয়া বানাতে উঠে পড়ে লাগল। অর্থাৎ বউ বানানোর শোধনযন্ত্রে তার ইচ্ছে-অনিচ্ছে সব পাতিত হয়ে ধুয়ে গেল। সে হয়ে উঠল সুখী, ভোঁতা আর মোটা। ওর বাচ্চা হয়েই চলল, সাজগোজ করা ছেড়ে দিল। তখন এই মাংসের তাল আর পছন্দ হল না দাদার। সে শবনম নামের রোগাপাতলা, ড্রেনপাইপ প্যান্ট আর লেবুরঙ্গা টপ পরা মেয়ের প্রেমে পড়ে গেল যে ওর মেরেলিন মনরোর স্টাইলে কাটা চুলে সরু সরু আঙুল বুলিয়ে হাসছিল। এই শবনমের জন্যে বউদিকে তালাক দিল ভাইয়া। বিয়ের সাত-আট বছর পরে সেই শবনমকে দেখে চমকে ওঠে ননদ। মাংসের পাহাড়ের মতো চেহারা হয়েছে তার। উলটোদিকে ভাইয়া একইরকম রয়ে গেছে আর তার বুভুক্ষু দৃষ্টি বিছের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে মিশরি নর্তকীর শরীরের ওপর। সেই নর্তকী ভাইয়ার পাশে মাংসের দলা শবনমকে দেখে করুণায় আর্দ্র হয়ে ওঠে, যেমন বহু বছর আগে ভাইয়ার পাশে বউদিকে দেখে শবনম হয়েছিল ‘উফ এই হচ্ছে ভারতবর্ষ। অশিক্ষা আর কুসংস্কারের দেশ। রীতি-রেওয়াজের নামে এখানে যে কত মানুষকে বলি দেওয়া হয় তার সীমা নেই। অথচ এই যে আমার পাশে দাঁড়িয়ে যে পুরুষটি, সে কত আকর্ষণীয়। আমার ওর জন্যে কষ্ট হয়...’
আবার যে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে, তা বুঝে যায় পাঠক।
দেশভাগ নিয়ে ইসমত চুগতাইয়ের একটি অসাধারণ গল্প ‘শিকড়’, যেখানে একটি মুসলমান বাড়ির সবাই পাকিস্তানে চলে যেতে চাইলেও আম্মি মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকে। মনে পড়ে যায় ‘ছিন্নমূল’ চলচ্চিত্রের সেই মর্মন্তুদ দৃশ্য যেখানে এক বৃদ্ধা ভিটের খুঁটি আঁকড়ে বলছেন ‘যামু না, যামু না যামু না’।
‘শেষপর্যন্ত কাফেরদের সঙ্গে থাকবি?’—স্বজনদের এমন ভর্ৎসনাতেও সে নিজের সংকল্প থেকে সরে আসে না। ‘উনি উত্তর দেন না, যদি তেজি স্বভাবের হতেন তাহলে হয়তো বলতেন ‘নিজের দেশ? সেটা কী বস্তু? কোথায় আছে নিজের দেশ? যে মাটিতে জন্মেছি, যেখানে লুটোপুটি খেয়ে বড়ো হয়েছি, সেটা নিজের দেশ নয় আর চারদিন আগে যেখানে বসত করলাম সেটা নিজের দেশ? আর সেদেশ থেকেও যে কেউ তাড়িয়ে দেবে না তাই বা কে বলতে পারে? যাও তোমরা নতুন দেশ গড়ো, আমি এখানে রইলাম ভোরবেলার বাতি হয়ে, একটা ছোট্ট হাওয়ার ঝাপটায় নিভে যাব। দেশ নিয়ে মারামারির শেষ হবে। দেশ ভাঙ্গাগড়ার খেলা কি অত সোজা? একসময় মোগলরা এসেছিল এখানে নতুন দেশে বাস করবে বলে। তারপর কতযুগ কেটে গেছে। এখন আবার যেতে হবে? নতুন দেশের খোঁজে? দেশ কি পায়ের জুতো যে পায়ে একটু ব্যথা লাগলেই ফেলে দিয়ে জুতো পরবে...’
বুঝতে অসুবিধে হয় না, আম্মির এই না বলা কথাগুলো আসলে লেখকের নিজের। গল্পের শুরুতে স্বাধীনতার আনন্দ কেমন ভাবে ঢেকে দিয়েছিল দেশভাগ, তার নিখুঁত বর্ণনা। এসব ঘটেছিল এমনকি সেসব মহল্লায় যেখানে ‘হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে মিলমিশ এত বেশি ছিল যে শুধু নাম, চেহারা, আর পোশাক আশাক থেকে তাদের আলাদা করা মুশকিল ছিল।’
সেই শহরেই সবার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল। উনুনে রান্না চড়েনি ছ-দিন। বাচ্চারা ইস্কুলে যেতে না পেরে বড়োদের জীবন ওষ্ঠাগত করে তুলেছিল। শহরে মারদাঙ্গা খুনোখুনি শুরু হয়েছিল। চলছিল গোলমাল আর পেশিপ্রদর্শন। সকলের এমন ভাব যেন ১৫ অগস্ট আসেইনি। হারামজাদাদের এটুকুও খেয়াল ছিল না যে ইংরেজ চলে গেছে, যেতে যেতে গভীর এক ক্ষত করে দিয়ে গেছে। যা থেকে বহু বছর ধরে রক্তক্ষরণ ঘটবে। ভারতবর্ষের অস্ত্রোপচার এত অপটু হাতে, এমন ভোঁতা ছুরিতে হয়েছে যে অনেক শিরাউপশিরা ছিঁড়ে গেছে। রক্তের নদী বয়ে চলেছে। কারও ক্ষমতা নেই এই ক্ষত সেলাই করে।
অন্য কোনো সময় হলে এই হামলাবাজদের অগ্রাহ্য করা যেত, কিন্তু কিছুদিন হল শহরের পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল। অনেক বাড়ির দরজা তালাবন্ধ ছিল, মুসলমানেরা বাড়িতে একরকম নজরবন্দি হয়েছিল, বাইরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। এমনিতে সিভিল লাইনে শান্তি বজায় ছিল, কিন্তু দারিদ্র্য আর অশিক্ষায় মলিন অঞ্চলগুলোয় হিংসা ক্রমশ তার সাম্রাজ্য বিস্তার করছিল। তার ওপর পাঞ্জাব থেকে আসা শরণার্থীদের ঢল বাড়তে থাকায় অনেকের মনে আতঙ্ক ক্রমশ বাড়ছিল। শরণার্থীরা যে বিষ বুকে নিয়ে এসেছিল, তা ক্রমশ সারাদেহে ছড়িয়ে পড়ছিল। বিষ খুব দ্রুত সংক্রমিত হচ্ছিল।
শুধু নারীর অবস্থান নয়, শুধু দেশভাগ নয়, ইসমতের সংবেদী দৃষ্টি ছুঁয়ে গেছে সমাজের যত প্রান্তিক মানুষকে। ‘কালুর মা’ গল্পের কালিমুদ্দিন আর তার মা আয়েষা, ‘হাত’ গল্পের বুড়ি মেথরানি কিংবা ‘নানহির নানি’র নানহি আর নানি- সমাজের ঝেঁটিয়ে বার করা এসব তুচ্ছ জীবন গভীর মমতায় এঁকেছেন ইসমত। আর বড়ো ভালোবেসে তা অনুবাদ করেছেন সঞ্চারী সেন। তাঁর অনুবাদ একটি স্বপ্ন থেকে করা। চুগতাই স্বপ্ন দেখেছিলেন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মেয়েদের মুক্তির। সঞ্চারীর মধ্যে সঞ্চারিত সেই স্বপ্ন। তাই তাঁর অনুবাদ আদৌ অনুবাদ বলে মনে হয় না। আর অবশ্যপাঠ্য তাঁর লেখা দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকাটি। ফতেপুর সিক্রিতে সেলিমচিশতির মাজারের পেছনদিকে একটি উর্দু কেতাবে হাত দিয়ে যে ধর্মীয় মৌলবাদ প্রত্যক্ষ করছিলেন অনুবাদক, তা আজকের এই মেরুকরণের ভারতে লিপিবদ্ধ করতে একটা শক্ত মেরুদণ্ড লাগে।
‘একজন স্বামীর জন্যে’ গল্পে কথক ভয় পাচ্ছিলেন বাংকের ওপরের একটা গাঁটরি যদি এসে তাঁর ঘাড়ে পড়ে। ‘মনে মনে ভাবছিলাম যে ওর একটা আমার ওপর এসে পড়লেও শিরদাঁড়াটা যেন রেহাই পায়, শরীরের ওই অংশটা আমার বড় প্রিয়। শিরদাঁড়া ভেঙে গেলে মানুষ আর একদলা মাংসের মধ্যে তফাত কী থাকে?’
কতিপয় ভারতীয় লেখক এই শিরদাঁড়ার অধিকারী। ইসমত তাঁদের একজন। তিনি মুক্তচিন্তা আর মানবকল্যাণের চেতনার এক অক্লান্ত যোদ্ধা। তাই চিরকালীন ভারতীয় সাহিত্য বলে যদি কিছু হয়, তার হল অব ফেমে তাঁর স্থায়ী জায়গা। তাঁর অনুবাদক সঞ্চারী সেন ইসমতের ওয়েভলেন্থটাকে ধরতে পেরেছেন। তাই বাজারে ইসমতের অনেক অনুবাদ ঘুরলেও, এই অনুবাদগ্রন্থ স্বতন্ত্র মর্যাদা দাবি করে।
কত সালের বই, কত পাতার বই জানা যায়? দেখে তো পেপারব্যাকই মনে হচ্ছে। প্রচ্ছদের ছবি যেমন দিচ্ছেন, ফোন এ তোলা, তেমনই সূচীপত্রের ছবিটিও দিয়ে দেওয়া যায় না, যে সমস্ত বইতে একটা সূচীপত্র আছে?