এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ভ্রমণ

  • দক্ষিণাবর্ত

    রৌহিন ব্যানার্জি লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | ০৩ জানুয়ারি ২০২০ | ১৫২১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসটা ভারতের ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়, সে আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ইতিহাসে সেই সময়টায় আরো বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল। সেই বছরটা আমার গ্র্যাজুয়েশনের বছর। বাবরি ঘটার মাত্র মাস দেড়েক আগে আমি কুচবিহার থেকে পাকাপাকিভাবে কলকাতা চলে আসি “হায়ার স্টাডিজ”এর জন্য (সে স্টাডির বিবরণ চাহিয়া লজ্জা দিবেন না পিলিজ)। ছিলাম মাসির বাড়িতে, মন খারাপ, বন্ধুবান্ধব, আড্ডা, গানের আসর, কলেজ, পার্টি, নাটক সব ছেড়েছুড়ে এসেছি, পরিবারও সাথে নেই। মাসি মেসো এবং মাসির ছেলেমেয়েরা অবশ্য অনেক ছোট্টবেলা থেকেই আমার ভীষণ প্রিয়, তবুও একটা মনখারাপ তো থেকেই যায়। তো ইতিমধ্যে ৪ঠা ডিসেম্বর নাগাদ একটা সুখবর পাওয়া গেল মায়ের চিঠিতে – আমরা বেড়াতে যাচ্ছি। ডিসেম্বরের ২২শে রওনা, জানুয়ারীর ১০ এ ফেরা। গন্তব্য দক্ষিণ ভারত – মাদ্রাজ (তখনো চেন্নাই, কলকাতা এবং মুম্বাই হয় নি আমরা মাদ্রাজ, বোম্বেই বলতাম, ওরা ক্যালকাটা বলত) – মহাবলীপুরম – ত্রিবান্দ্রাম – কন্যাকুমারী – উটি – মহীশুর – গোয়া – বোম্বে। লম্বা ট্যুর। এরকম দীর্ঘ ভ্রমণ আমাদের হত প্রতি চার বছরে একবার – আমার কেসচা বাবার এল টি সি র সৌজন্যে। তখন এই এত আগে টিকিট কাটার ব্যবস্থা ছিল না, মাসখানেক আগে গেলে, এমন কি দিন কুড়ি আগে গেলে দিব্যি টিকিট পাওয়া যেত, তৎকাল ছিল কি না মনে নেই কারণ দরকারই হয় নি। 


    এর ঠিক দুদিন পরেই এসে পড়ল সেই অভিশপ্ত দিন, ৬ই ডিসেম্বর। তারপর সারা ভারত জুড়ে তাণ্ডব – এমন কি এই কলকাতা শহরেও আমার জীবনের সেই প্রথম কার্ফিউ দেখা। সুমনের বসে আঁকো তখনও বেরোয়নি – মগজে কারফিউ শব্দবন্ধ তখনো অচেনা, শহরে কারফিউ চিনে ফেললাম। কিন্তু দাঙ্গা হল না পশ্চিমবঙ্গে। রাজাবাজার, খিদিরপুর, পার্ক সার্কাস, কোথাও না। আস্তে আস্তে আবার স্বাভাবিক হয়ে এল শহর – কিন্তু মনের কালো ছায়াটা সরছিল না কিছুতেই। উত্তর ভারত জুড়ে চলমান অশান্তি – আদবানীর গ্রেপ্তারী, খবর আসছিল সবই, যদিও খবরের কাগজই ছিল আমাদের প্রধান ভরসা – আর ডিডি ওয়ান এর সংবাদ। আর এসবের মধ্যেই ১৯ তারীখে এসে পড়ল বাবা, মা, বোন – কুচবিহার থেকে। তিনদিন গজল্লা পাড়ার পরে ২১শে সন্ধেবেলা ট্যাক্সি ধরে সোজা হাওড়া - রাতে ম্যাড্রাস মেল সাড়ে দশটায়। স্লিপার থ্রি-টায়ার। থ্রি-এসি তখনো ভবিষ্যতের গর্ভে, এসি কামরা বিরাট বড়লোকেদের ব্যাপার। 


    ট্রেনে উঠেই প্রথম যেটা চোখে পড়ল সেটা হল ফুল। চটকানো, ছড়ানো এবং গোটা, মালায় গাঁথা সাদা, হলুদ আর লাল রঙের প্রচুর ফুল। তার অল্প কিছুদিন পরে তামিলনাডুতে পোঙ্গল উৎসব – তাতে অংশ নিতে “দেশে” ফিরছেন দশ বারোটি তামিল পরিবার – তাদেরই এই ফুলের আধিক্য। অবশ্য ব্যাপারটা শুধু ফুলেই শেষ হলে হত, কিন্তু রাতে ওদের টিফিনবাটি থেকে যখন দইভাত বেরোতে লাগল, তখন আমার দরজার ধারে গিয়ে দাঁড়ানো ছাড়া উপায় ছিল না – দই এর গন্ধে আমার ছোট থেকেই অ্যালার্জি – বমি টমি করে একসা করি। যাই হোক, পরে সেই তামিল দলের দুটি পরিবারের সাথে আলাপও হয়েছিল, মাদ্রাজে কী কী দেখা যেতে পারে তার কিছু টিপসও ওরা দিয়েছিলেন। বস্তুত এই ট্যুরটা আমার জীবনের অন্যতম একটা সেরা অভিজ্ঞতা মানুষের জন্য। এই ট্যুরে একাধিকবার অচেনা মানুষ অপ্রত্যাশিতভাবে যেরকম সাহায্য করেছিলেন আমাদের, তা কখনো ভুলব না, যার চূড়ান্ত দেখেছিলাম এই যাত্রার একেবারে শেষভাগে – কিন্তু সে কথা এখনই না। 


    ট্রেনে আমার বেশ ভোরবেলা ঘুম ভেঙে যায়। ছ’টা নাগাদ একটা স্টেশনে দাঁড়াল, মিডল বার্থের ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখলাম – “বিজয়নগরম”। অর্থাৎ অন্ধ্রপ্রদেশে ঢুকে পড়েছি। তারপর সারাদিন ট্রেনে – বিকাল নাগাদ ভাইজাগ – বিশাখাপত্তনম। তারপর সন্ধ্যের মুখে গোদাবরী পেরোনো – ফারাক্কার থেকেও লম্বা রেলব্রীজ হয় তাহলে! বিজয়্বারা পৌঁছাতে বোধ হয় আটটা বাজল সময়গুলো সব আন্দাজেই বলছি – এতদিন পরে স্মৃতি যেমন আসছে – অনেক সময়ে স্মৃতি মিঙ্গল আপও হয়ে যায়, সেই নিখুঁতত্ত্বে আর গেলাম না)। এখানেই প্রথম গুদাঙ্গারাম ব্র্যান্ডের সিগারেট দেখি – তখন স্টেশনে সিগারেট বিক্রী নিষিদ্ধ ছিল না। দু প্যাকেট কিনেও নিয়েছিলাম মনে আছে, আমার আর বাবার জন্য। পরদিন খুব ভোরে, বোধ হয় সাড়ে চারটে নাগাদ মাদ্রাজ পৌঁছেছিলাম এটা মনে আছে, কারণ সকালে প্রায় সাড়ে সাতটা অবধি আমরা মাদ্রাজ সেন্ট্রালের ওয়েটিং রুমেই ছিলাম। তারপর হোটেল। সারাদিন লোকাল ট্যুর। কিন্তু এই মাদ্রাজ পর্বটা অদ্ভুতভাবে আমার স্মৃতি থেকে কেমন আবছা হয়ে গেছে – রাস্তাঘাট খুব ভাল লেগেছিল, বিশেষ করে কলকাতার সঙ্গে তুলনা করে, এটুকু মনে আছে, আন্না সালাই রোড বলে একটা রাস্তা দিয়ে কোথাও গেছিলাম মনে আছে। আর মনে আছে, মেয়েদের মধ্যে অধিকাংশই হলুদ শাড়ি পরেছিলেন – হলুদের বিভিন্ন শেড। পোঙ্গল কাছাকাছি ছিল বলেই কি না জানিনা। মাথায় প্রায় সবাইকে গাজরা পরতে দেখে খুব ভাল লেগেছিল। আর খুব অবাক হয়েছিলাম সাদা ধুতিকে লুঙ্গির মত করে পরা লোকজনকে অফিস যেতে দেখে। কিন্তু মাদ্রাজে কোথায় ঘুরেছিলাম, কী কী দেখেছিলাম, কিছুই মনে নেই আর। 


    পরের দিন বাসে করে মহাবলীপুরম। গুহাশহর, ভাস্কর্যের শহর। দেখার অনেক কিছু আছে কিন্তু আমাদের তাড়া – সেদিনই মাদ্রাজ ফিরতে হবে, এখানে থাকার ব্যবস্থা করিনি। ট্রেনের সেই তামিল পরিবারের টিপস কাজে লাগিয়ে প্রথমেই গেলাম সী-শেল মিউজিয়াম দেখতে। এটার কথা তখন টুরিস্টদের মধ্যে কম লোকই জানত, ফলে বেশ ফাঁকাই পাওয়া গেছিল, ঝিনুক, শামুক, প্রবাল দেখে চোখ ধাঁধিয়ে গেছিল। তারপরে বোধ হয় ওখানকার হেরিটেজ মিউজিয়ামেও যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেই স্মৃতি আবছা। যদিও আমাদের মধ্যে একটা অলিখিত বোঝাপড়া ছিল যে আমরা মন্দির দেখতে যথাসম্ভব কম সময় নষ্ট করব, কিন্তু মহাবলীপুরমের সমুদ্র সৈকতে শোর টেম্পল দেখতে গিয়ে এই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটাতেই হয়েছিল মনে আছে। তারপর সী বীচে ঘোরা, মালাইওালা ডাব খাওয়া। বেশ কিছু বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়ে দেখলাম স্টাফ করা কাঠবিড়া৯ বিক্রী করছে – খুব সস্তায়। বেশ ফুরফুরে মেজাজে রাতে ফিরে এলাম মাদ্রাজ। পরের দিন দশটা নাগাদ আবার ট্রেন সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে – গন্তব্য ত্রিবান্দ্রম। এ যাত্রা আমরা এগমোর স্টেশন দেখিনি। মেরিনা বীচ তো নিশ্চই দেখেছিলাম কিন্তু আমার খুব একটা মনে নেই। 


    মাদ্রাজ সেন্ট্রাল থেকে সম্ভবত এর্ণাকুলাম হয়ে ত্রিবান্দ্রাম পৌঁছানোর যাত্রাপথটাও ততটা ডিটেলে আর স্মৃতিতে নেই। পোঁছাতে বিকাল হয়ে গেছিল মনে আছে। ত্রিবান্দ্রামে ওঠা হল বাবাদের ইন্সপেকশন বাংলোয়। তামিলনাড়ুর মতই কেরালার লোকও হিন্দী খুব একটা বলেন না – তবে এদের ইংরেজিটা তামিলদের তুলনায় সহজবোধ্য বলে মনে হল। আমরা বললে বুঝতেও পারছে মনে হল। যদিও এখানেই বাবা একটা কেলো করেছিল। পরের দিন সকালে কন্যাকুমারী যাব  অলে বাসে উঠেছি, বাবা হঠাৎ তার মালয়ালম অক্ষরজ্ঞান জাহির করতে বলে বসল “নাহাল টিকেট – কন্যাকুমারী”। অর্থাৎ কন্যাকুমারীর চারটে টিকিট চাই। এতে করে কণ্ডাকটরবাবুর ধারণা হল বাবা মালয়ালম জানেন, এবারে আর কিছুতেই তার মুখ দিয়ে ইংরেজি বেরোয় না। ভাগ্যিস কন্যাকুমারীই বাসের শেষ স্টপ ছিল – নইলে সম্ভবত আমরা সেদিন অন্য কোথাও চলেই যেতাম। বাবাকে বলা হয়েছিল বোম্বে পৌঁছানোর আগে আর একবারও যেন এসন নাহাল টাহাল উচ্চারণ না করে। 


    কন্যাকুমারীতে বিবেকানন্দ রক দেখেছি আর বাঙালি হোটেলে “মাছভাত” খেয়েছি (কেন যে লোকে বেড়াতে গিয়ে বাঙালি হোটেলে খাবার জন্য এই আদেখলামোটা করে আমার আজও মাথায় ঢোকে না) – এ বোধ হয় না বললেও চলে। আরেকটা বিবেকানন্দ আশ্রম না কি যেনও দেখেছিলাম। আমি কন্যাকুমারী খুব একটা উপভোগ করিনি, বিবেকানন্দ রক এর যাত্রাটুকু ছাড়া। কিন্তু তিনটে সমুদ্রের সঙ্গম দেখার অভিজ্ঞতাটা ভোলা অসম্ভব। শুধু ঐটুকুর জন্যই সারাদিনের যাওয়া আসা সার্থক হয়ে গেছিল। দুপুরে ত্রিবান্দ্রাম ফেরার সময়ে বোধ হয় ট্রেনে ফিরেছিলাম – আমার ঠিক মনে নেই – কিন্তু ফিরে একটা ব্যাপার হয়েছিল। ফিরতে ফিরতেই ঠিক হল তখনো তো কিছুক্ষণ দিনের আলো থাকবে – কোভালম বীচটা একবার ঘুরে আসা যাক। ফলে স্টেশন (বা বাসস্ট্যান্ড) এ নেমে আমরা আর বাংলোয় না ফিরে একটা অটো নিয়ে কোভালম চলে গেলাম। উপভোগ্য – কিন্তু কোভালম যে স্পেশাল কিছু, সেটা সেদিন আমাদের আদৌ মনে হয় নি। ফলে ফেরার পথে অটোতেই আরেকটা উঠল বাই মার্কা সিদ্ধান্ত হয়ে গেল – আরেকদিন ত্রিবান্দ্রামে না কাটিয়ে বরং আজ রাতের বাস ধরেই উটি চলে যাওয়া যাক – ওখানে এক দিন বাড়তি পাওয়া যাবে। 


    এই হুটহাট সিদ্ধান্ত আসলে আমাদের ফ্যামিলি ট্যুরের একটা বিশেষত্ব ছিল। আমরা যেহেতু কোন ট্যুর পার্টির সাথে যেতাম না, এমন কি অন্য কোন পরিবারের সাথেও না, ফলে আগে থেকে ঠিক করা প্ল্যান যখন তখন ঘেঁটে ফেলা যেত – আর এ ব্যাপারে আমাদের চারজনেরই খুব উৎসাহ ছিল। এ জন্য ল্যাজে গোবরে হয়েছি বহুবার – কিন্তু আমরা শোধরাইনি। তো যেমন কথা তেমন কাজ। আমি আর মা নেমে পড়লাম বাস স্ট্যান্ডে, বাবা আর বোন চলে গেল গেস্ট হাউস থেকে মালপত্র গুছিয়ে চেক আউট করে আসতে। আমার দায়িত্ব টিকিট কাটা। তা দেখা গেল সরাসরি উটির বাস আর একটা মাত্র বাকি, তাতে টিকিট নেই। অগত্যা জনগণের পরামর্শে পালঘাট অবধি টিকিট কাটা হল – ওখান থেকে আবার বাস বদল হবে। এদিকে সেই বাসের ছাড়ার সময় হয়ে গেছে – বাবা আর বোনের পাত্তা নেই। আমার মা হলেন টেনশন সাম্রাজ্ঞী – বাবাকে হাতের কাছে না পাওয়ায় পুরো ঝাপটটা আমার ওপর দিয়েই যাচ্ছে। তখন তো আমরা মোবাইল ফোনের নামও শুনিনি। আবার তড়িঘড়ি একটা সিদ্ধান্ত নিতে হল – পালঘাটের টিকিট ক্যান্সেল করে সেই উটির বাসেই টিকিট নিলাম – কোনমতে একটা বসার জায়গা পেলে মা কে বসিয়ে দেব – আমরা দাঁড়িয়েই চলে যাব, এই হল প্ল্যান। কিন্তু যেতেই হবে। 


    ঠিক যখন পালঘাটের বাসটা ছাড়ছে, বাবারা এসে পৌঁছাল। কিন্তু তখন তো যা হবার হয়ে গেছে – আমাদের ক্যান্সেল করা সীটে অন্য লোক বসিয়ে দিব্যি চলে গেল বাস। আমরা দাঁড়িয়ে  - আমাদের বাসের তখনো চল্লিশ মিনিট দেরী। বাবাকে পেয়ে গিয়ে মায়ের রেকারিং ডেসিমেল চলছে তো চলছেই। আমি আর বোন সাইডে দাঁড়িয়ে চিপস খাচ্ছি – লে’জ না, প্লাস্টিকের কাগজে হাতে ভাজা চিপস। লে’জও তখন অদেখা অজানা বিষ্ময়বস্তু। লে’জ, কোকাকোলা,পেপসি, মিনারেল ওয়াটার – এরা তখনো শুধু মনমোহন সিং এর নোটসে বেড়ে উঠছে। ভারতের বাজার আরো বছর দেড়েক পরে এদের দেখবে। তা সেই চিপ্স খাওয়া শেষ করে আমরা খোঁজ খবর নিয়ে গাড়ির নম্বর জোগাড় করলাম। মালপত্র তুলে দেওয়া গেল – কিন্তু রিজার্ভ প্যাসেঞ্জার না উঠলে আমরা উঠতে পারব না, অগত্যা দাঁড়িয়ে থাকা। যখন উঠলাম, সীট তো দূরস্থান, বাসের মেঝেতেও জায়গা নেই। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই শুরু হল যাত্রা। কিন্তু মাঝপথে, কোন স্টপেজ মনে পড়ছে না, কিছু লোক নামল – মা, বাবা, বোন একে একে বসতে পেল – আমার টার্ণ আসতে আসতে রাত প্রায় তিনটে। কিন্তু পালঘাটে পোঁছে বাস অনেকটাই খালি হয়ে গেল, উটির পাহাড়ি রাস্তায় আর দাঁড়িয়ে যেতে হয় নি। 


    উটি হল ডাকনাম – ইশকুলের নাম উধাগমণ্ডলম। আরেকটা নাম আছে – উটকামণ্ড। এক জায়গার এতরকম নাম দিয়ে কী মোক্ষ প্রাপ্তি হয় উটিয়ানরাই জানেন তবে ভাগ্যিস ডাকনামটা ছিল, নইলে এই নাম শুনেই হয়তো কত লোকে ভয়ে আর যেতই না এই মিষ্টি মেয়েটার কাছে। দক্ষিণের হিল স্টেশন হিসাবে উটির নামডাক এমনি নয়। তবে সে সব ডিটেইলিং এ এখন আর যাব না – আপনারা অনেকেই দেখেছেন, যারা যাননি, সুযোগ পেলে ঘুরে আসুন, পয়সা উশুল। আমি বরং অন্য একটি কথা বলি – উটিতে আমার সবচেয়ে স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। নতুন ব্র্যান্ডের সিগারেটের প্রতি আমার একটা আকর্ষণ সেই ছোট থেকে – মানে যখন সিগারেট খাওয়া ধরিনি তখনও প্যাকেট জমাতাম। চারমিনার, লাল রিজেন্ট, কিছুদিন পরে আসা কালো রিজেন্ট, নাম্বার টেন, ক্যাপস্টান, গোল্ড ফ্লেক, উইলস ফিল্টার – আরো কিছু পরে চার্মস, চারমিনার স্পেশাল। এই শেষেরটি যখন বাজারে এল ততদিনে আমি নিজেও সিগারেট খাওয়া ধরে ফেলেছি। পানামা বলে একটা বিনা ফিল্টারের সিগারেট ছিল, কুড়িটার প্যাকেট আড়াই টাকা। আর ফোর স্কোয়ার, রেড অ্যান্ড হোয়াইট। এই রেড অ্যান্ড হোয়াইটও সাউথেই প্রথম পেয়েছিলাম। এসব এত সবিস্তারে বলছি কারণ এসব প্যাকেট আমি জমাতাম। এক্সচেঞ্জও হত। নিজে খাওয়া শুরু করার পরেও নতুন ব্র্যান্ডের প্রতি এই আকর্ষণটা যায়নি। তো উটিতে নেমেই বাস স্ট্যান্ডে একটা নতুন ব্র্যান্ডের খোঁজ মিলল – নর্থ পোল। নামটা দেখেই তো আকর্ষণ তুঙ্গে – কিনে ফেলা গেল পরীক্ষামূলক প্যাকেট। পরে যখন হোটেলে ফ্রেশ ট্রেশ হয়ে একা একা বেরিয়েছি চারদিকটা দেখব বলে, ধরানো গেল একটা। এদিকে আমি তো মফো – মিন্ট দেওয়া সিগারেট আগে কখনো খাইনি। খেয়ে একটু পরে মনে হল মাথাটা কেমন ঝিম লাগছে নাকি? এ কী রে ভাই! সিগারেট খেয়েও মাথায় ঝিম? হেব্বি ইমপ্রেসড হয়ে গিয়ে গোটা পাঁচেক প্যাকেট কিনে ফেললাম, ফিরে গিয়ে বন্ধুদের উপহার দেব বলে। ফিরে এসে আওয়াজ খেয়েছিলাম সেকথাটা আর না-ই বা বললাম (এই যা – বলেই ফেললাম নাকি)? 


    উটি শৈলশহর – তবে তার অধিকাংশ ট্যুরিস্ট স্পট তার যমজ শহর কুন্নুরে। একটা কন্ডাক্টেড ট্যুরে উটি – কুন্নুরের সব দর্শনীয় স্থান দেখা হল। এই কন্ডাক্টেড ট্যুরটায় দুটো দারুণ ব্যপার হয়েছিল। এক, আমার করা একমাত্র কন্ডাক্টেড ট্যুর যেখানে কোন মন্দির প্যাকেজে ছিল না। আর দুই, আমাদের গাইড। ভদ্রলোকের নাম এখনো মনে আছে – টি রাজেন্দ্রন, ট্যুরিজম এ গোল্ড মেডালিস্ট। একজন ভাল গাইড একটা ট্যুরের অপেক্ষাকৃত কম আকর্ষণীয় অংশগুলিকেও কেমন উপভোগ্য করে তুলতে পারেন সেদিন দেখেছিলাম। মনে আছে কুন্নুরে ঢোকার আগে রাস্তার একটা অংশ খুবই ভাঙাচোরা ছিল – সম্ভবত সারাইএর কাজ চলছিল। উনি সেখানে ঢোকার আগে (অর্থাৎ ওনার হোমওয়ার্ক করাই ছিল) সবাইকে বললেন, এবার আমরা এমন একটা রাস্তা দিয়ে যাব, যেটার নাম লাভার্স রোড, অ্যান্ড ইট ইজ ডেডিকেটেড টু হানিমুন কাপলস। তারপরেই শুরু হল ঝাঁকুনি – সবাই এ ওর কোলে ঢলে পড়ছে আর হানিমুন কাপল ভেবে হাসছে। রাস্তাটুকু পেরিয়ে গাড়ি আবার স্বাভাবিক চলা শুরু করলে উনি যেন নীরবতা পালন শেষ হল, ঘড়ি দেখে বললেন – আপ নাও। মজা লেগেছিল। পরে অবশ্য ওনাকে বলেছিলাম যে এই হিসাবে আমাদের কলকাতার সব রাস্তাই মোটামুটি লাভার্স রোড। তাতে উনি খুব হেসেছিলেন। 


    উটির হোটেলে ১৯৯২ গিয়ে পড়ল ১৯৯৩ তে। পয়লা জানুয়ারী আমার বোনের জন্মদিন, হোটেলেই কেক কাটা হল। হোটেল বয় কলাই (এর নামটাও মনে আছে) কোথা থেকে মোমবাতিও জোগাড় করে এনেছিল, গুনে গুনে ষোলটা। হোটেল মালিক (নাম মনে নেই) এসেছিলেন কেক খেতে। পরদিন সকালে চেক আউট – আবার বাস। এবার গন্তব্য মহীশুর। এই রাস্তাটাও অসম্ভব সুন্দর ছিল। কফির বাগান দেখেছিলাম পথে। সারাটা দিন বাস জার্নি করেও বেশ ফুরফুরে মনেই মহীশুর পৌঁছালাম। বাসস্ট্যান্ডেই আমাদের পাকড়াও করলেন শ্রী নাগরাজ – স্থানীয় গাইড। আমাদের হোটেল ঠিক করে দেওয়া, মহীশুর ঘুরিয়ে দেখানো, দুপুরে খাওয়ার ব্যবস্থা করা এবং ফেরার সময়ে গাড়ি অবধি তুলে দেওয়া। এর আগে যত জায়গায় ঘুরেছি, গাইডের সাহায্য প্রয়োজন হয়নি – কিন্তু কিছুটা ম্যাড্রাস - ত্রিবান্দ্রামের ভাষা সমস্যার স্মৃতি আর কিছুটা ভদ্রলোকের সেলফ মার্কেটিং দক্ষতা – এই দুইএর ফাঁদে ইনি বহাল হয়ে গেলেন। চার্জ কত নিয়েছিলেন মনে নেই, কিন্তু যথেষ্টই কম নিয়েছিলেন এটুকু মনে আছে। তঁরই ঠিক করে দেওয়া হটেলে ওঠা গেল। গাইডবাবুর প্রসঙ্গে আরেকটা কথা বলে এই প্রসঙ্গ শেষ করব – এনার এই নামটা, নাগরাজ, কতটা কমন আমি জানিনা, কিন্তু আমাদের মহীশুরের হোটেলের ম্যানেজার, ব্যাঙ্গালোরের (থাকিনি – গোয়া যাবার পথে সংক্ষিপ্ত হল্ট) ট্যাক্সি ড্রাইভার এবং গোয়া যাবার বাসের কন্ডাক্টর – সকলের নামই নাগরাজ। এর পরের প্রায় চার পাঁচ বছর আমরা কর্ণাটকের লোক শুনলেই বলতাম তাহলে এর নাম শিওর নাগরাজ। এটা একটা পারিবারিক ঠাট্টা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। 


    মহীশুর রাজবাড়ি, চিরিয়াখানা, বৃন্দাবন গার্ডেন – এসবও উটির মতই ভ্রমণপিপাসুদের অতি পরিচিত – বর্ণনা দেবার মানে হয় না। বৃন্দাবন গার্ডেন দেখে সে যুগে অবশ্য চোখ টেরিয়ে গেছিল আমাদের, এ কথা অনস্বীকার্য। আর চিড়িয়াখানায় একটা অসম্ভব কুঁড়ে শিম্পাঞ্জি আমাকে চড় দেখিয়েছিল, এটাও অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। আর আমার বোন একটা একশো টাকার নোট আর একটা স্কার্ফ মহীশুর রাজবাড়িতে হারিয়েছিল, এটাও ছোটখাটো ঘটনা হিসাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। আর বলছিই যখন, রাজবাড়ির কাছাকাছি (চিড়িয়াখানার কাছেও হতে পারে – অত পলিটিকালি কারেক্ট ভৌগোলিক অবস্থান জেনেই বা কী করবেন?) কোন একটা রেস্টুরেন্টে দারুণ ভাল গালোটি কাবাব খেয়েছিলাম, এটাও বলেই দিই আর কি। নাগরাজবাবু না থাকলে সেই রেস্টুরেন্ট হয়তো খুঁজেই পেতাম না। ওহহ আরেকটা গটনা উল্লেখ না করলেই নয় – সেটা ফেরার দিন। সকালে চামুণ্ডা মন্দির দেখে (নাগরাজবাবুকে বলেছিলাম যাব না, কিন্তু উনি বললেন, বাইরে থেকে তো দেখুন অন্তত – মুসলমান ট্যুরিস্টরাও দেখে) বাস স্ট্যান্ডে এসে দা৬ড়িয়ে আছি বাস ছাড়বে বলে, দু-তিনটে ছেলেমেয়ে চিরুনি বিক্রী করছে। তাদের দাবী ওগুলো “আইভরি” – যদিও দেখে বোঝাই যাচ্ছে প্লাস্টিক। চিরুনি না – চিরুনির সেট। মানে ওই ট্রেনে যেমন দেয় – দশ টাকা দিয়ে এই তিনটি চিরুনি সংগ্রহ করলে কোম্পানি আপনাকে বিনামূল্যে দিচ্ছে আরো একটি – ইত্যাদি, সেই বস্তু। দাম বলল একশো টাকা ফুল সেট। আমি বললাম দশ টাকা। শেষে পনেরো টাকায় রফা হল। কিনে এনে দেখি সেই একই সেট মা কিনেছে বারো টাকায় আর বাবা পঁচিশ। বোন মন দিয়ে গোল্ড স্পট খাচ্ছিল – আমার প্যাকেটটা নিয়ে বলল এটা আমি নিলাম। 


    মহীশুর থেকে গোয়া যাবার পথে ব্যাঙ্গালোর শহরে ঘন্টা ছয়েকের হল্ট কারণ গোয়ার বাসটা ব্যাঙালোর থেকে – নাইট সুপার ভিডিও কোচ। এখানকার নাগরাজদের কথা তো আগেই বলেছি। আরেকটা ব্যপার হল – এখানেও যথারীতি একা একা বেরিয়েছিলাম ঘুরে দেখব বলে। কাছাকাছি একটা সিনেমা অল দেখলাম – কোন কন্নড় ছবি চলছিল। কী মনে হল, টিকিট কেটে ঢুকে দেখে ফেললাম। ভাষা একবর্ণ না বুঝলেও গল্পটা মোটের ওপর বুঝতে খুব অসুবিধা হল না। খাজুরাহো দেখতে আসা কিছু ট্যুরিস্ট, তাদের একজনের সাথে গাইডের প্রেম, তারা পূর্বজন্মে এই খাজুরাহোরই কোন চরিত্র ছিল – এই সব নিয়ে দিব্যি গপ্প। আসল খাজুরাহো তো এ যাত্রা দেখা হল না – তবু ফিল্মেই কিছুটা দুধের স্বাদ ঘোলে মিটল আর কি। তারপর বাস, সারারাত। দুটো সিনেমা দেখাল – একটা কন্নড়, আরেকটা কোঙ্কণী। একদিনে দুটো কন্নড় সিনেমা দেখার মত ধক তখনো ছিল না – অগত্যা ঘুমিয়েই কাটল রাতটা। শুধু হুবলী বলে একটা জায়গায় কফি টফি খেতে নেমেছিলাম মাঝরাতে, মনে আছে। গোয়া পৌঁছালাম ভোরবেলা – পাঞ্জিম। হোটেলটা কেমন ছিল সেটা এখন আর মনে পড়ছে না – তবে হোটেল বয়ের নাম ছিল অ্যান্ড্রু – এটা মনে আছে। সে আমাদের খুব ভাল কাজু খাইয়েছিল, ফেনি জোগাড় করে দিয়েছিল, সমুদ্রের ছোট মাছ ভেজে খাইয়েছিল। আর ট্যাক্সি ড্রাইভার সপ্রু ডোনা পাওলা যাবার পথে একটা একদম অচেনা বীচে নিয়ে গেছিল, সেখানে ট্যুরিস্ট নেই বললেই চলে। ক্যালাঙ্গুটে বীচে সূর্যাস্তের ছবি তুলতে তুলতে কখন আমার গোড়ালি থেকে কোমর জল হয়ে গেছে খেয়ালই করিনি – খুব বকা খেয়েছিলাম। তবে সমুদ্দুর বকে নি – কুল গাই একদম। মিটি মিটি হাসছিল। ক্যালাঙ্গুটে আমার দেখা গোয়ার সেরা বীচ। 


    গোয়া পর্ব মেটার পর শেষ গন্তব্য বোম্বে। তুমচি মুম্বাই। এবারেও ওভারনাইট জার্নি। খুব ভোরে, তখনো আলো ফটেনি, বোধ হয় সাড়ে তিনটে পৌনে চারটে হবে, সায়নে (সিয়ন?) গোয়া বাস স্ট্যান্ডে এসে নামলাম আমরা চারজন। তারীখটা সম্ভবত ৭ই জানুয়ারী, ১৯৯৩।  বোম্বেতে আমাদের হোটেল বুক করা ছিল না – পরিকল্পনা ছিল নেপিয়ারে বাবাদের গেস্ট হাউসে (পোস্ট অ্যান্ড টেলিগ্রাফ ডিপার্টমেন্ট) উঠব। কিন্তু মা প্রস্তাব দিল একবার খার এর রামকৃষ্ণ মিশনে যাবার – মায়ের ছোটকাকা রাকৃমি র সদস্য – ওখানে নাকি ওনার পরিচিত কেউ আছেন। মা জানাল, ওদের ছোটবেলায় মামাবাড়িতে সেই ভদ্রলোক আসতেন – মহারাজ, কিন্তু খুব ডিম খেতে ভালবাসতেন – তাই মায়েরা ভাইবোনেরা ওকে ডিম্ব মহারাজ বলে ডাকত। তো একটু আলো ফুটলে একটা ট্যাক্সি নিয়ে খারে যাওয়া হল – পথে ড্রাইভার সাহেব জানালেন আগের দিন ডোংরি, চিঞ্চকুলা অঞ্চলে মারামারি হয়েছে। কিন্তু সে তো অনেক দূর – আমরা বিশেষ পাত্তা দিলাম না। কিন্তু রাকৃমি তে গিয়ে অন্য সমস্যা দেখা দিল – সেই মহারাজের নাম আর কিছুতেই মনে করতে পারল না মা – শুধু ডিম্ব মহারাজই মনে আছে। এখন সে নাম বলে তো আর খোঁজ করা যায় না। কাজেই সাধারণ ট্যুরিস্ট হিসাবেই খোঁজ করে জানা গেল সেখানে সব ঘরই অকুপায়েড, থাকার উপায় নেই। এসব করতে করতে বেলা প্রায় আটটা সাড়ে আটটা হয়ে গেছে। আমরা আলোচনা করছি কী করা যায় – নেপিয়ারের দিকেই যাব মোটামুটি স্থির, এমন সময়ে এক প্রৌঢ় ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন। বললেন কিছু মনে না করতে কারণ উনি আমাদের আলোচনা কিছুটা ওভার হিয়ার করেছেন, উনি আর ওনার স্ত্রী এসেছিলেন সকালে প্রার্থনা করতে। ভদ্রলোকের নাম মিস্টার যোশী। এই মিস্টার অ্যান্ড মিসেস যোশীকে আমাদের পারিবারিক আলোচনায় এখনো আমরা “ফরিশতে” বলে ডাকি। 


    যোশীবাবু বললেন, আমাদের এক্ষুণি সপরিবারে নেপিয়ারের দিকে যাওয়াটা উচিৎ হবে না – বোম্বের বিভিন্ন দিক থেকে অশান্তির খবরাখবর আসছে। উনি বললেন, তোমরা যদি কিছু মনে না করো তাহলে একটা প্রস্তাব দিই – তোমরা একটা ট্যাক্সি নিয়ে আমাদের স্কুটারের পিছনে এসো – আমার বাড়ি সান্তা ক্রুজে, ওখানে গোলমাল নেই – বেশী দূরও নয়। এত দূর থেকে আসছ, একটু ফ্রেশ হয়ে নাও, তারপর ছেলেরা বেরিয়ে থাকার জায়গা ঠিক করে এসো। তারপর গিয়ে উঠো সেখানে। এরকম হারা উদ্দেশে বেরোনোটা আজ ভাল হবে না। কী মনে হল, আমরা ভদ্রলোকের কথা মেনে নিলাম – যদিও সেটা খুব আনলাইকলি ছিল। সান্তা ক্রুজের ফ্ল্যাটে ওরা দুজন এবং ওদের পুত্র, সে আমার থেকে বছর ছয়েকের বড়, থাকে। মেয়ে থাকে সুরাটে, শ্বশুরবাড়িতে। সেখানে চা খেয়ে আমি আর বাবা বেরিয়ে পড়লাম থাকার জায়গা ঠিক করতে। তখনও পুরো বিষয়টার গুরুত্ব আমরা কিছুই বুঝিনি। 


    সান্তা ক্রুজ থেকে লোকাল ট্রেনে চার্চগেট, সেখান থেকে নেপিয়ার বাসে। কিন্তু হা-হতোস্মি – গেস্ট হাউসেও জায়গা নেই। অগত্যা সেখান থেকে বেরিয়ে তাদেরই পরামর্শ অনুযায়ী গেলাম ভিটি (এখন ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস – সি এস টি) স্টেশনের বাইরে – বাঙালি হোটেল শান্তিনিকেতন। সেখানেও হাউসফুল। অগত্যা কী করা যায় ভাবতে ভাবতে বাপ বেটা ভিটি স্টেশনের দিকে হাঁটছি, খেয়ালই করিনি যে রাস্তায় আর একটাও মানুষ নেই। হঠাৎই পাশে এসে থামল একটা পুলিশের গাড়ি। একজন অফিসার জানতে চাইলেন কোথায় যাচ্ছি। বললাম হটেল খুঁজছি থাকব বলে। উনি বললেন “ফির আপকো কৌন ঢুণ্ডেগা বাবু?” আমরা তখনো বিষয়টা ঠিক অনুধাবন করতে পারিনি – একটু অবাক হয়েই জানতে চাইলাম ওনার কথার মানে কি? উনি কথা না বাড়িয়ে বললেন, ভিটি যাবে? গাড়িতে বসো। আমাদের গাড়িতে করে ভিটি স্টেশনের মুখে নামিয়ে দিয়ে বললেন অন্দর চলে যাইয়ে, বাহার ফাসাদ হ্যায়। বলতে বলতেই অদূরে দু-তিনটে বোমার আওয়াজ, সামান্য লোকজন যারা ছিল, হুড়মুড়িয়ে স্টেশনের ভিতর ঢুকতে লাগল। পুলিশের গাড়িটি আর কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে গেল সাঁ করে। আমরাও তড়িঘড়ি স্টেশনে এসে ঢুকলাম। ঘষণা শোনা গেল মাহিমের দিকে যাবার একটি গাড়ি পাঁচ মিনিটের মধ্যে ছাড়বে। আমরা তড়িঘড়ি তাতেই উঠে পড়লাম, মাহিম থেকে ওয়েস্ট লাইন ধরে সান্তাক্রুজ যাব বলে। 


    বোম্বে যারা গেছেন তারা আশা করি জানেন যে ভিটি থেকে মাহিম মোটামুটি আধ ঘন্টা পঁইত্রিশ মিনিটের ট্রেনপথ। এই পথটা পার হতে সেদিন আমাদের প্রায় দেড় ঘন্টা লেগেছিল। ভিটি ছাড়লেই পরপর স্টেশনগুলি – মসজিদ, চিঞ্চকুলা, ডোংরি, স্যান্ডহার্স্ট রোড – প্রায় প্রতিটি জায়গায় আগুন জ্বলছিল, আক্ষরিক অর্থেই। ট্রেনের দরজা জানলা বন্ধ – ফাঁক দিয়ে দেখলাম নীচে জ্বলন্ত বস্তির ওপর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে আমাদের ট্রেন, তরোয়াল, সড়কি হাতে লোকজন দৌড়াচ্ছে। আতঙ্ক কাকে বলে টের পেয়েছিলাম সেদিন – নিজের ভিতরে, ট্রেনের সহযাত্রীদের মুখচোখে। সত্যি বলতে কি এদের মধ্যে একমাত্র একটু কম আতঙ্কিত দেখেছিলাম আমার বাবাকেই – লোকজনকে ঠান্ডা হতে বলছিলেন। দাদার পেরোনোর পর বাইরে গণ্ডগোলের আঁচ একটু কম মনে হল – যদিও বাকি রাস্তা আর কেউ জানলা খুলতে সাহস করেনি। যাদের যেখানে নামার দরজাটা একটু ফাঁক করে ভয়ে ভয়ে নেমে যাচ্ছিলেন। ট্রেন দা৬ড়িয়ে থাকছিল বহুক্ষণ – প্রায় প্রত্যেক স্টেশনে। শেষ অবধি যখন মাহিমে নামলাম, শুনতে পেলাম মাইকে ঘোষণা হচ্ছে ভিটি / চার্চগেট থেকে পরবর্তী ট্রেন কখন আসবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। 


    সান্তা ক্রুজের দিকে তখনো সবই শান্ত সবই ভাল। আমরা দুজন যখন যোশীজীর ফ্ল্যাটে পৌঁছালাম, সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচল, কারণ ওনার বাড়ির রঙীন টিভিটায় তখন সেই দৃশ্যটাই দেখাচ্ছে যেটা আমরা কিছুক্ষণ আগেই দেখেছি ট্রেন থেকে। জ্বলন্ত বস্তি। দাউদ ইব্রাহিমের ডোংরি জ্বলছে। জ্বলছে চিঞ্চকুলা, যোগেশ্বরী। দাদার, ওরলি তে অশান্তি, মিলিটারী নেমেছে। ধারাভি বস্তিতেও আগুন। শহরে কারফিউ। 


    তিনদিন ছিলাম যোশীজীর বাড়ি। নিজের আত্মীয়ের মতই আশ্রয় দিয়েছিলেন সেই প্রায় অপরিচিত মানুষগুলি। অথচ কী আশ্চর্য, গত প্রায় পনেরো বছর হল ওরা কেমন আছেন আর খবরাখবর পাইনি। ২০০৪ অবধি চিঠিতে যোগাযোগ ছিল, ফোনেও। ২০০৯ এ একবার গেছিলাম আমি একা, সান্তাক্রুজে – সেই ফ্ল্যাটে ওনারা আর থাকেন না। বর্তমান মালিক জানালেন ওরা ২০০৬ এ ফ্ল্যাট বিক্রি করে সবাই সুরাটে চলে গেছেন। মোবাইল তো সে যুগে ছিল না, টেলিফোন নম্বর দিতে পারেননি সেই ভদ্রলোক। আমাদের ফরিশতেরা আমাদের পরিবার থেকে তাই বিচ্ছিন্ন হয়েই গেছেন। হয়তো ভালই হয়েছে – আজ সাতাশ বছর পরেও ওনারা দিব্যি সেরকমই বেঁচে বর্তে আছেন অন্তত আমাদের মনে, কৃতজ্ঞতায়। ভাল থাকুন শ্রী ও শ্রীমতি যোশী। 


    ১০ই জানুয়ারী আমাদের ফেরার টিকিট ছিল গীতাঞ্জলীতে। সেদিন গণ্ডগোলের খবর তেমন ছিল না। আমরা একটু ঝুঁকি নিয়েই বেরিয়ে পড়লাম সপরিবারে। স্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন ওঁরা। আমরা আবার সেই ভিটি (সি এস টি)। সেখানে গিয়ে প্রথমেই জানা গেল গীতাঞ্জলী বাতিল। আমরা তখন ফিরতে পারলে বাঁচি – খুঁজে পেতে জানা গেল একমাত্র ট্রেন রাতের বেলা কুরলা-হাওড়া এক্সপ্রেস, কুরলা থেকে। তাতে ওয়েটিং লিস্ট ২১-২২-২৩-২৪। যা থাকে কপালে বলে কেটে নেওয়া গেল। কিন্তু সে তো রাত এগারটায় – তখন সবে সকাল সাড়ে নটা। সারাদিন তাহলে কী করা? বাইরে উঁকিঝুঁকি মেরে দেখা গেল বেশ লোকজন আছে – গণ্ডগোলের তেমন কোন লক্ষণ নেই। অতঃপর স্টেশনের ক্লোকরুমে মালপত্তর জমা রেখে বেরিয়ে পড়া গেল। কোথায় যাওয়া যায় ভাবতে ভাবতে ইন্ডিয়া গেটের সামনে, তারপর সেখান থেকে একটা লঞ্চ ধরে এলিফ্যান্টা কেভস। সহযাত্রী শুধু দুই জোড়া বেলজিয়ান দম্পতি। 


    ফিরতে ফিরতে প্রায় তিনটে। লঞ্চ থেকেই দেখতে পাচ্ছি দূরে, সম্ভবত আবার ডোংরির দিকেই আগুন জ্বলছে, যদিও ইন্ডিয়া গেটের সামনে তখনো তেমন কিছু বোঝা যাচ্ছে না। মা স্টেশনে ফেরার পক্ষপাতী হলেও বাবার বক্তব্য কোলাবা মার্কেটে বিরিয়ানিটা না চেখে যাবার কোন মানেই হয় না। আমরাও সেই দিকে – স্টেশন তিন এক ভোটে পরাজিত। কিন্তু বিরিয়ানি খেতে খেতেই দেখি রাস্তাঘাট আবার শুনশান হয়ে যাচ্ছে দ্রুত, সারি সারি মিলিটারী গাড়ি। অগত্যা তড়িঘড়ি খাওয়া সেরে আবার সেই ভিটি স্টেশনে। এবং ঢুকতে ঢুকতেই বাবা বলল সেই যদি স্টেশনেই বসে থাকতে হয় তবে ভিটিতে কেন, কুরলা গিয়েই বসা যাক। এই প্রস্তাব সর্বসম্মত পাশ হল – যদিও আমরা তখনো জানিনা যে এটাই বাবার গোটা বোম্বে এপিসোডে সবচেয়ে ওয়াইজ সিদ্ধান্ত। ক্লোকরুম থেকে মাল বের করে একজন কুলি ঠিক করে আমরা কুরলা স্টেশনে যাব বলে এগোচ্ছি। কুলিটিই আমাদের বলল – করছেন কি? কুরলা স্টেশন আর কুরলা টার্মিনাস এক নয় মোটেই। আপনাদের অন্য ট্রেনে তুলে দিচ্ছি – আপনারা তিলকনগর যান। ওখানে প্ল্যাটফর্ম থেকে বেরোলেই দেখবেন কুরলা টার্মিনাস। কুরলা স্টেশন থেকে আবার আপনাদের রিক্সা (মানে আমরা যাকে অটো বলি) করতে হএব টার্মিনাস যেতে। 


    ততদিনে অচেনা লোকের অযাচিত পরামর্শ আমাদের কাছে পুরোপুরি অ্যাক্সেপ্টেবল হয়ে গেছে। আমরা অতএব বিনা বাক্যব্যয়ে সেই কুলিবাবুর দেখানো ট্রেনে চড়ে বসলাম – এবং সত্যিই তিলকনগর স্টেশনের ঠিক লাগোয়া কুরলা টার্মিনাসে ঢুকে পড়লাম। ফার্স্ট ক্লাস ওয়েটিং রুম ফাঁকাই ছিল, শুধু একটি দক্ষিণ আফ্রিকান পরিবার ছাড়া আর কেউ নেই, আমাদের ওখানেই ঢুকে পড়তে দিল, যদিও আমাদের টিকিট যথারীতি স্লিপার থ্রীটায়ার – তাও ওয়েটিং লিস্ট। রহস্যটা বোঝা গেল আরেকটু পরে – গণ্ডগোল আবার শুরু হয়েছে শহর জুড়ে – লোকজন আসতেই পারছে না। আধ ঘন্টার মধ্যেই জানা গেল আবার কারফিউ জারি হয়েছে – অর্থাৎ আমরা যদি তখনই চলে না আসতাম, আমরাও আর এসে পৌঁছাতে পারতাম না। কিছুক্ষণের মধ্যে জানা গেল আমাদের টিকিটও কনফার্ম হয়ে গেছে কারণ প্রচুর টিকিট ক্যানসেল হয়েছে। এমতাবস্থায় তিনটে দুশ্চিন্তা আমাদের পেয়ে বসল – একটি মাইনর, দুটি মেজর। মাইনর সমস্যা – রাতে কী খাব। এটা মাইনর কারণ অল্টারনেটিভ ব্যবস্থা ছিল – একটা খাবারের ব্যাগ। তাতে চিনি, চা পাতা, গুঁড়োদুধ, চিঁড়ে, বিস্কুট, মুড়ি ইত্যাদি – শেষ অবধি তাই খেতে হয়েছিল সেদিন। মেজর সমস্যা এক – আমাদের ট্রেনটা ছাড়বে তো নাকি বাতিল হবে? দুই – সাউথ আফ্রিকান পরিবারটি ন’টায় চলে যাবে ট্রেন ধরে – তারপর প্রায় দু ঘন্টা এই ওয়েটিং রুমে আমরা একা। কেয়ারটেকারও আসেন নি – আসতে পারেন নি সম্ভবত। 


    কিন্তু শেষ অবধি গাড়ি ছাড়ল। এবং সেই কামরাটিতেও আমরা একমাত্র যাত্রী। সেও আরেক আতঙ্ক। অবশেষে, কল্যাণ থেকে উঠলেন কিছু আনরিজার্ভড যাত্রী – কিন্তু তাদের আমরা পারলে ডেকে এনে বসাই তখন। কুরলা হাওড়া এক্সপ্রেস বোম্বের সীমানা ছাড়িয়ে চলল – চলল তো চললই – কেবলই চলছে, আরোই চলছে, শুধুই চলছে। বারোই দুপুরের দিকে যখন খড়গপুর ঢুকল, কেমন মনে হচ্ছিল বাড়ি এসে গেছি। প্রতিবার বেরিয়ে ফেরার সময়ে মনখারাপ হয়, এবারেরটা ছাড়া। বাপ রে বাপ!


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ভ্রমণ | ০৩ জানুয়ারি ২০২০ | ১৫২১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ***:*** | ০৪ জানুয়ারি ২০২০ ০২:২৫80078
  • এই বোম্বে ভিটি কুরলা অংশটা আগেও পড়েছি না?
    দারুণ একটা অভিজ্ঞতা কিন্তু।

    আর বিচ হল গিয়ে শ্রীবর্ধন, দিভে-আগর বা তারকরলি। কোথায় লাগে কালাঙ্গুটে!
  • বিপ্লব রহমান | ***:*** | ০৪ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:২৮80075
  • কি সাংঘাতিক ভ্রমণ! প্রতি পদে পদে রোমাঞ্চ!

    তবে বুড়ি ছোঁয়া করে না লিখে আরেকটু ডিটেইলস লিখলে পড়তে আরও ভাল লাগতো, কেমন যেন খুব আঁটোসাটো লাগলো। উড়ুক
  • রৌহিন | ***:*** | ০৪ জানুয়ারি ২০২০ ০৬:৪৮80079
  • দ-দি, হ্যাঁ ওই কুরলা ভিটি অংশটা আগে কোথাও লিখেছিলাম।

    আর সপ্রুভাই আমাদের যে "অচেনা" বীচটিতে নিয়ে গেছিলেন সেটা সম্ভবত তারকরলি - যদিও নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন
  • Rouhin Banerjee | ***:*** | ০৪ জানুয়ারি ২০২০ ০৯:৩৯80076
  • এইতেই যা সাইজ দাঁড়াল, ঢিলেঢালা করে লিখলে ভ্রমণোপন্যাস হয়ে যেত শঙ্কু মহারাজের মতন
  • শক্তি | ***:*** | ০৪ জানুয়ারি ২০২০ ১২:৩৫80077
  • তোমরা আতঙ্ক নিয়ে ও ভালোই ঘুরেছো ।মানুষের সহযোগিতা পেয়েছো ।আমরা যারা পড়লাম ওই আশ্বাসটা আমাদের ও খুশি করে দিল ।কেউ না কেউ পাশে দাঁড়াবে
  • সুকি | ***:*** | ০৫ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৫৯80080
  • বাহ, বিস্তারে লিখলে বই তো হবার সম্ভাবনা রইলই
  • স্বাতী রায় | ***:*** | ০৮ জানুয়ারি ২০২০ ০৮:৩৯80081
  • লং লিভ শ্রীমতি ও শ্রী জোশী। এঁদের জন্যই পথঘাটে আজও নিরাপত্তা মেলে। কিন্তু সিরিয়াসলি দক্ষিণাত্যে কোন ট্রিপ আছে যাতে মন্দির না দেখে ঘোরা যায়। আমার উটি ঘোরা নেই, এবার তো তাহলে যেতেই হয় !

    লেখাটা খুব ঝকঝকে!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন