এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • স্বাস্থ্য পরিচর্যার উন্নতিতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কর্মীদের ভূমিকা

    প্রতীচী প্রতিবেদন লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ০৮ মার্চ ২০১৯ | ১০০১ বার পঠিত

  • প্রতীচী বার্ষিক আলোচনা সভা - ২০১৯
    সহযোগিতায়: চিকিৎসকদের যুক্তমঞ্চ
    শান্তিনিকেতন বনিয়াদ,
    ১৪-১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

    পশ্চিমবাংলার নানা প্রান্ত থেকে আসা বিভিন্ন স্তরের স্বাস্থ্যকর্মী, যেমন, এ এন এম, আশা, চিকিৎসক, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, এবং সমাজের অন্যান্য কর্মস্তরের দেড় শত মানুষের দু দিন ব্যাপী “স্বাস্থ্য পরিচর্যার উন্নতিতে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কর্মীদের ভূমিকা” শীর্ষক সভায় যে সব প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমরা পেলাম তা নিয়ে আলোচনা করা দরকার।

    এক। এ রাজ্যে শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু রোধ, টিকাকরণ বৃদ্ধি, হাসপাতালে প্রসবের মাত্রা বৃদ্ধি, ইত্যাদি স্বাস্থ্যসূচকগুলিতে যে উন্নতি দেখা গেছে তার অনেকটা কৃতিত্বই প্রাপ্য স্বাস্থ্যকর্মীদের। এঁদের সঙ্গে সঙ্গে, বিশেষত স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিতে, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও একটা বড় ভূমিকা নিচ্ছেন। এই কাজকে আরো ফলপ্রসূ করে তুলতে এক দিকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কর্মীদের আন্তরিক সম্পর্ক এবং অন্যদিকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের ও স্তরের কর্মীদের মধ্যে সুসংহত যোগাযোগ গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া দরকার।

    দুই। সমাজের সেবায় কর্মীদের ভূমিকাটি অতি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্বেও, প্রায়শই তাঁদের কাজের ক্ষেত্রে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়। ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব, কর্মীদের ওপর কাজের বিপুল বোঝা, দুর্বল পরিকাঠামো, সামগ্রীর অভাব, কর্মীদের পারিশ্রমিকের ক্ষেত্রে বিরাট বঞ্চনার মতো বিভিন্ন সমস্যা একদিকে যেমন কর্মীদের জর্জরিত রাখে অন্যদিকে তেমনি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে উন্নতির সম্ভাবনাকেও রুদ্ধ করে দেয়।

    তিন। সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ওপর কাঙ্ক্ষিত গুরুত্ব না দেওয়ার ফলে মানুষকে বাধ্য হয়ে নানা ধরণের, প্রায়শই দুর্মূল্য, বেসরকারি ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। যেমন, বহু সময় প্রসবের জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রসূতি, তাঁদের পরিবার, ও সহযোগী আশা কর্মীদের বিভিন্ন অবহেলা সহ্য করতে হয়। পরিণতিতে তাঁরা সামর্থ্য থাকলে বে-সরকারি ব্যবস্থায় যান, যেখানে অহেতুক অস্ত্রোপচার করে প্রসবকে ব্যয়বহুল করে তোলা হয়; তা না হলে তাঁরা নানা ঝুঁকি সত্বেও বাড়িতেই প্রসব করাতে বাধ্য হন।

    চার। সরকারি নীতিতে ও কাজে প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্রমবর্ধমান অবহেলা মানুষকে এক ভয়ানক শোষণমূলক বে-সরকারি ব্যবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সাধারণ চিকিৎসা সুবিধা ছাড়াও যাতায়াতের সমস্যা, ভাষার দূরত্ব, সহানুভুতির অভাব, ইত্যাদি নানা কারণে মানুষ স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। জন-স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতা, রোগ প্রতিরোধ, সচেতনতা বৃদ্ধি, এবং বুনিয়াদে স্তরে সহজেই নিরাময়যোগ্য চিকিৎসার ব্যবস্থাটুকুও না থাকার ফলে সমাজে স্বাস্থ্যগত কারণে যে অসহায়তা গড়ে উঠছে তা ভয়ঙ্কর পরিণতির জন্ম দিয়ে চলেছে। রোগভোগ-অস্বাস্থ্য-দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রটি সক্রিয়তো বটেই সেই সঙ্গে মানুষের মধ্যেকার নিরুপায় অসন্তোষ বর্ষিত হচ্ছে হাতের নাগালে পাওয়া চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ওপর। এঁদের নিরাপত্তাহীনতা বাস্তবিক এক ভয়ানক উদবেগের কারণ, এবং অবিলম্বে এঁদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার।

    পাঁচ। এই সুরক্ষার একটি অত্যন্ত জরুরি উপাদান হচ্ছে বুনিয়াদি স্তরে পরিকাঠামো ও সামগ্রীর যুক্তিপূর্ণ আয়োজন। উদাহরণ হিসেবে, স্কুলে মিড-ডে মিল বা অঙ্গনওয়াড়িতে খাবার দেওয়ার দিকটি – উভয় ক্ষেত্রেই প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ অপ্রতুল। অথচ, অভাবের কারণে কর্মীদের নানা রকম ক্ষোভ সহ্য করতে হচ্ছে। তেমনি প্রাথমিক স্তরে সামাজিক কর্মসূচিগুলির প্রসার না করে সামাজিক অসন্তোষ দূর করা অসম্ভব।

    ছয়। নানা সামাজিক-রাজনৈতিক-আর্থনীতিক কারণে, জনসাধারণের মধ্যে অনেক নতুন নতুন রোগের উপসর্গ বেড়ে চলেছে। এগুলোর মধ্যে যেমন আছে বিভিন্ন অসংক্রামক ব্যাধি, তেমনি আছে মানসিক স্বাস্থ্য-হানির মতো বিষয়গুলি। এর সঙ্গে সমাজে বিপজ্জনকভাবে ক্রমবর্ধমান মাদকদ্রব্যের অপ-ব্যবহার। অথচ কোনো স্তরেই সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এই ভয়াবহতাকে মোকাবিলা করার কোনো ব্যবস্থা নেই।

    সাত। এই অব্যবস্থার পাশাপাশি সমস্যাগুলোকে আরো জটিল করে তোলে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ ও সেগুলিকে জনসাধারণের কাছে তুলে ধরার ক্ষেত্রে নানা অসঙ্গতি। এমনকি কোথাও কোথাও শিশু পুষ্টি বা প্রসূতিদের দেওয়া পরিষেবা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহকারী স্বাস্থ্যকর্মীকে এমন চাপ দেওয়া হচ্ছে যা তথ্য গোপন বা তথ্য বিকৃতির পর্যায়ে পড়তে পারে। সীমিত হলেও, তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস বাস্তব চিত্রটি তুলে ধরছে। যেহেতু সমস্যাগুলোকে জানাটাই সমাধানের প্রথম সোপান, এই উদ্যোগগুলিকে সরকারি ও সামাজিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার যাতে করে জনসাধারণের কাছে এবং নীতিনির্মাতাদের সামনে স্বাস্থ্যের প্রকৃত অবস্থাটি ফুটে ওঠে।

    আট। আশার কথা, রাজ্যের বেশ কিছু প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকা বিদ্যালয়ের কাজকর্মের আওতায় শিশু ও স্থানীয় জনসাধারণের স্বাস্থ্যের দিকটিকে অন্তর্ভুক্ত করে চলেছেন। এ এন এম- আশা- অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী প্রমুখদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের সাহায্যে তাঁরা স্থানীয় স্তরে স্বাস্থ্য উদ্যোগ গড়ে তোলার যে প্রচেষ্টা করে চলেছেন সেগুলিকে প্রসারিত করা দরকার। এই সিদ্ধান্তগুলির সঙ্গে সঙ্গে এই সভা বিষয়গুলি নিয়ে ব্যাপকতর প্রকাশ্য আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানাচ্ছে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৮ মার্চ ২০১৯ | ১০০১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন