‘আকাশবাণী কলকাতা, স্থানীয় সংবাদ পড়ছি...’
মাঝবয়সি ভদ্রলোক, একেবারে চেনা দুঃখ, চেনা সুখ মার্কা দোহারা চেহারা। পায়ে পলিথিনের চটি। গালে না কাটা হালকা দাড়ি। অপুষ্টির চাদরে ঢাকা পড়ে আসল বয়স। রং চটা প্যান্ট-শার্ট। কাঁধে বাক্স আকারের একটা রেক্সিনের বিবর্ণ ব্যাগ। কামরার এক প্রান্তের দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে তিনি৷ মুখে স্মিত হাসি। তিনিই শোনাবেন তাজা এবং বিশেষ বিশেষ খবর। এখনকার ভাষায় ব্রেকিং এবং এক্সক্লুসিভস।
সমবয়সিএকজন ভদ্রলোককে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘দাঁড়ান, দাঁড়ান, একটু সেট হয়ে নি৷’ আর একজন বললেন, ‘সুনীলদাকে তো দেখছি না। সকালে যে বললেন, সাতটা কুড়িতে ফিরবেন!’ খবরপাঠক খানিক বিরক্তি জড়িয়ে বললেন, ‘দিলেন তো মুডটা অফ করে।’ অপর প্রান্ত থেকে প্রশ্ন ধেয়ে এল, ‘আজ কে পড়বেন, দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, নাকি তরুণ চক্রবর্তী?
মাইকে ঘোষণা হল, ‘অনিবার্য কারণবশত, এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের কৃষ্ণনগর লোকাল ছাড়তে দেরি হবে৷ চারের-এ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে আপ রানাঘাট লোকাল কৃষ্ণনগর লোকালের আগে ছেড়ে যাবে৷’ অনিবার্য কারণে কী না হতে পারে, অনেক কিছুই হতে পারে। কিন্তু, দায়িত্ব নিয়ে বলছি, ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর আগে আর কোনও কিছুই হাওড়া-শিয়ালদা সেকশনে ট্রেনের সময় বদলের থেকে বেশি হত না। শব্দ দু’টির সৃষ্টি যেন পূর্ব রেলের ব্যবহারের জন্য পূর্ব-নির্ধারিত ছিল।
কৃষ্ণনগর লোকালের অবস্থা তখনই মুড়ির টিনের মতো৷ শিয়ালদা থেকে ছাড়ার আগেই দরজার বাইরে বাদুড় ঝোলা ভিড়৷ একেবারে চেনা দৃশ্য, চেনা পরিবেশ। কামরার বেশির ভাগ বাতি উধাও। অবশিষ্টগুলির গায়ে ধুলোর প্রলেপ পড়ে পড়ে আলো টিম টিম। পাখার হালও তাই। কোনটা চলছে, কোনটা বন্ধ, বোঝার উপায় নেই। হাওয়া উধাও। মোটরের বিদঘুটে আওয়াজ পাখার সচল উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। কিন্তু কী আর করা। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, এই ট্রেনই ভরসা।
তার মধ্যে দেরিতে ছাড়ার ঘোষণায় যেন আগুনে ঘি পড়ল৷ রেলমন্ত্রীর বাপ-মা তুলে তেড়ে খিস্তি৷ মনে হল যেন দিল্লি থেকে তিনিই ফতোয়া জারি করেছেন, কোন ট্রেন আগে, কোনটা পরে ছাড়বে। ক’দিন আগেই বহুল প্রচারিত বাংলা দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়েছে, লোকসানের বোঝা কমাতে ছুটির দিন লোকাল ট্রেন বন্ধ রাখার ভাবনাচিন্তা করছে রেল বোর্ড৷ সেই খবরে তেতে আছে নিত্যযাত্রীরা। স্টেশনে, স্টেশনে নিত্যযাত্রী সমিতির নোটিস বোর্ডে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে, ডিআরএম-এর কাছে অবিলম্বে প্রতিবাদপত্র জমা করা হবে৷ সঙ্গে স্মারকলিপিতে মুক্তহস্তে স্বাক্ষর দানের আর্জি৷ বেলঘরিয়ার প্রবীণ বিনয় চক্রবর্তী রেলযাত্রী সমিতির কর্তা। বিচিত্র মানুষ। যাত্রী স্বার্থের পাশাপাশি রেল হকারদের দাবিদাওয়া নিয়েও গলা চড়াতেন সমানতালে। এক-দু’বার গিয়েছি তাঁর বাড়ি। একদিন কথায় কথায় বললেন, ‘বুঝলেন, যাত্রীই বলেন, আর হকারই বলেন, আসলে ৬৪টি চাকার উপর বাঁচার লড়াই।’ কথাটার মধ্যে কেমন একটা শিরোনাম, শিরোনাম গন্ধ। শিরোনামের কি গন্ধ থাকে? থাকে বৈকি। ওই যে ছন্দ, সেটাও তো এক প্রকার গন্ধ। শুনে বেশ লাগল, কী দারুণ, ‘৬৪ চাকার উপর বাঁচার লড়াই।’ কথাটা আমাকে যেন তাড়িয়ে বেড়াতে লাগল। লোকাল তখন আট কামরার। প্রতিটিতে আটটি করে চাকা।
লোকাল ট্রেনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক, বলা চলে বন্ধুত্ব, আটের দশকের গোড়ায়। এগারো-বারো ক্লাসের স্কুলে পড়তে ট্রেনে যেতাম দমদম। রহড়ার কলেজে পৌঁছতে ট্রেনেই যেতাম খড়দা। সংক্ষিপ্ত ট্রেনযাত্রা খানিক দীর্ঘায়িত হল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়। শিয়ালদা পর্যন্ত ডেলি প্যাসেঞ্জারি। অনেক পরে, সাংবাদিকতায় এসে বিনয়বাবুর মুখে ওই কথাটি শুনে উপলব্ধি করেছিলাম, এই লড়াইয়ে আমিও আছি অনেক কাল। ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’ স্লোগানটা তখনও বেশ জ্যান্ত।
বিনয়বাবু, তাঁর সহযোগী অপরেশ ভট্টাচার্য প্রায়ই ফোন করতেন এটা সেটা অভিযোগ নিয়ে। মুশকিল হল, সময় মেনে ট্রেন চালানো, আরও ট্রেনের দাবি, ভাড়াবৃদ্ধির প্রতিবাদ, সব কিছুতেই আন্দোলন মানে রেল-অবরোধ। একে ট্রেন কম, যে ক’টা চলে সেগুলির আবার টাইমের কোনও ঠিক-ঠিকানা নেই, তার উপর লোডশেডিং কিংবা যান্ত্রিক গোলযোগে ট্রেন দাঁড়িয়ে যাওয়া নিত্যদিনের ঘটনা, তবু প্রতিবাদের একটাই অস্ত্র, অবরোধ। শুধু কী তাই, পাড়ায় সমাজবিরোধী হামলা, রাজনৈতিক মারদাঙ্গা, লোডশেডিং, পুরসভার কলে জল না আসা, ভাঙা রাস্তার সমস্যা, ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু, এলাকায় চাঁদার জুলুম, প্রতিবাদ মানে ট্রেন আটকে দাও। ওভারহেড তারে কলাপাতা ছুড়ে দিলেই হল। বন্ধ, ধর্মঘটেও যত বাহাদুরি রেল আটকানোয়।
যে কথা বলছিলাম, কৃষ্ণনগর লোকাল দেরিতে ছাড়ার ঘোষণায় চর্চায় চলে এল সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিকে ছাপা ছুটির দিনে লোকাল ট্রেন না চালানোর ভাবনা বিষয়ক বাসি নিউজটি। একজন বেখেয়ালে কাব্য করার ঢংয়ে বলে বসলেন, ‘রবিবার ট্রেন বন্ধ থাকলে মন্দ হয় না কিন্তু। যন্ত্রপাতিগুলোরও তো বিশ্রাম দরকার।’ সে কথায় কামরায় যেন অগ্নুৎপাত শুরু হল। ট্রেন ছাড়ার বালাই নেই, প্যাচপ্যাচে গরম, ক্লান্তিতে অনেকেরই চোখ লেগে এসেছিল। মাঝরাতে গভীর ঘুম থেকে অকারণে টেনে তুললে যেমন মেজাজ চড়ে, কামরার বেশির ভাগ যাত্রীর প্রতিক্রিয়া কম-বেশি তাই। এই মারি কি সেই মারি পরিস্থিতি। কামরার নানা প্রান্ত থেকে মন্তব্য ধেয়ে আসছে, ‘গণধোলাই বোঝেন, গণধোলাই। আবার কোনও দিন যদি এ রকম শুনি, ট্রেনের সঙ্গে বেঁধে ক্যালাব।’ এক জন গলা চড়িয়ে শোনালেন, ‘মালটাকে এক দিন দমদমে নামিয়ে দমদম দাওয়াইয়ের ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।’ পরিস্থিতি শান্ত হলে মারমুখী এক যাত্রীর কথায় কামরার মারমুখী প্রতিক্রিয়ার ব্যাখ্যা মেলে। বললেন, ‘রোববার না বেরোলে সোমবার খাব কী? ট্রেন না চললে কাজে যাব কী ভাবে?’ আরও বললেন, ‘এরা সরকারি কর্মচারী। ডেলি প্যাসেঞ্জার বলতে বোঝে দশটা-পাঁচটার চাকরিজীবী। এরা বোঝে না, ডেলি প্যাসেঞ্জারি মানে দিন আনি দিন খাই।’ মাথায় ধরা দিল নতুন বোধ, সংসারের অর্থনীতি। খানিকটা রাজ্যের অর্থনীতিও। অনেক পরে, সাংবাদিকতায় বেশ কয়েক বছর কাটিয়ে ফেলার পর সেই সহযাত্রীদের সংজ্ঞায়িত করতে পেরেছিলাম—অসংগঠিত শ্রমিক-কর্মচারী। সংখ্যাটা কত? কেউ জানে না। সবই অনুমান।
এরই মধ্যে কামরায় আলো-পাখা উধাও৷ একজন বললেন, ‘বুঝলেন, লোকসান কমানোর দাওয়াই শুরু হয়ে গেল৷’ লোডশেডিং তখন যদিও পাহাড়ের আবহাওয়ার মতো, এই রোদ ঝলমল, তো এই আকাশের মুখ ভার৷ দেওয়ালে বিরোধীরা লিখছে, ‘অন্ধকার থেকে আলো দেখালেন প্রভু যিশু, আলো থেকে অন্ধকারে ফেরালেন জ্যোতি বসু৷’
কাগজে মজার একটা চিঠি ছাপা হল, বয়ান খানিকটা এইরকম, ভাই বিদ্যুৎ বহু দিন তুমি বাড়িছাড়া। তোমাকে ছাড়া আমরা অসহায়। বাবা-মা, দু’জনেই গুরুতর অসুস্থ। তুমি ক্ষণিকের জন্য দেখা দিলেও চলবে। দু’টি প্রাণ রক্ষা পায়। আমরাও স্বস্তি পাই। আপিলা-চাপিলা তে অশোক মিত্রর বর্ণনা, ‘বছরের পর বছর, দিনের পর দিন, রাতের পর রাত কলকাতায়, মফসসলে নিকষ অন্ধকারের রাজত্ব। সাতাত্তর সালে সরকারে প্রবেশের পর প্রথম কয়েক মাস, জ্যোতিবাবু হয়তো কোনও সভা করতে হুগলী বা হাওড়া বা দক্ষিণ ২৪ পরগনায় গিয়েছিলেন, সন্ধ্যা একটু গাঢ় হলে ফেরার পথে মাঝে মাঝে আমাদের ফ্ল্যাটে বসে যেতেন, সখেদে, চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে বলতেন, কুড়ি-পঁচিশ মাইল এলাম। পুরোটা অন্ধকার।’ নয়ের দশকের মধ্যভাগ পর্যন্ত অবস্থার খুব একটা হেরফের হয়নি। লোডশেডিং ছিল রাজনীতির জবরদস্ত ইস্যু। কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধেও ঘুরে ফিরে আসত অন্ধকার বাংলার প্রসঙ্গ।
বামফ্রন্ট সরকারের প্রথম পনেরো-কুড়ি বছরের সঙ্গে বেশ মিল আছে আজকের তৃণমূল সরকারের৷ বছর কয়েক আগের এক ২১ জুলাই ধর্মতলায় তাঁর দলের শহিদ দিবসের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা টাকা ছাপাই না, কেন্দ্র টাকা ছাপায়৷’ ব্রিগেডে, শহিদ মিনারে, সিধো-কানহু-ডহরের সভায় জ্যোতি বসু বলতেন, ‘দিল্লির হাতে টাকা ছাপানোর মেশিন আছে৷ ওরা ইচ্ছে মতো টাকা ছাপিয়ে নেয়, আমাদের দেয় না৷’
আটের দশকটা দিল্লি-বিরোধী রাজনীতিতেই মজে ছিল বাংলা। রাজ্যের অর্ধেক জনতা তখন নিরক্ষর৷ রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে তারাই আবার নব্বই ভাগ৷ কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক, রাজস্বের ভাগ বাটোয়ারার রাজনীতি তাদের মগজস্থ করাতে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল ‘বাসু টনিক’।
দিল্লিকে তাক করে বামেদের ইটের মোকাবিলায় কংগ্রেস পাটকেলও ছিল জবরদস্ত। রাজ্যের হাতে অধিক ক্ষমতা চেয়ে বাম দাবিকে কটাক্ষ করে দেওয়ালে তারা লিখত, ‘রাজ্যের হাতে অধিক মোমবাতি ও কেরোসিন চাই৷’ তখনও ইনভার্টারের তেমন চল হয়নি৷ অনেক পরের দিকে পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপনে লেখা হতে লাগল, ‘বাড়িতে ইনভার্টার আছে৷’
একে ট্রেন ছাড়ার বালাই নেই৷ তার উপর গরমে দমবন্ধ অবস্থা৷ ঘণ্টার পর ঘণ্টা কামরায় আটকে। তার মধ্যে কয়েক জন অসুরের শক্তি নিয়ে ভিড় ঠেলে বেরোতে চাইলেন৷ এই ভিড়ে এমনিতেই পকেট সামলানো দায়, তার উপর প্যাচপ্যাচে গরমে ‘ডিম সিদ্ধ’ পরিস্থিতি৷ ঠেলাঠেলিতে হাতাহাতি হওয়ার জোগাড়৷ কামরার ভিতর থেকে ফের গলা চড়ল, ‘আকাশবাণী কলকাতা৷ স্টুডিও-র ঘড়িতে সময় এখন সাতটা বেজে ৪৯ মিনিট…।
আবারও একজন থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘থামুন, থামুন, রেডিও হল সময় প্রহরী৷ এখনও কয়েক সেকেন্ড বাকি৷’ সংবাদ পাঠক খানিক থেমে কয়েক সেকেন্ড বাদে শুরু করলেন সাতটা পঞ্চাশের স্থানীয় সংবাদ৷ পড়তে লাগলেন, ‘এখনকার বিশেষ বিশেষ খবর হল, মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গকে ভাতে মারতে চাইছে৷ বিশেষ করে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের প্রতি কেন্দ্রের মনোভাব বিমাতৃসুলভ৷ কেন্দ্রের অসহযোগিতার ফলে রাজ্য সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, পঞ্চায়েত, পুরসভার কর্মীদের বকেয়া ডিএ মেটানো যাচ্ছে না৷ দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কলকাতায় ফিরে মুখ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন৷ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এর প্রতিবাদে বামফ্রন্ট গণআন্দোলন গড়ে তুলবে৷ প্রয়োজনে বাংলা বন্ধ ডেকে রাজ্যকে অচল করে দেওয়া হবে৷’ কামরায় হাসির রোল উঠল। তবে কয়েকটি মুখ বেশ গম্ভীর। জ্যোতি বসুকে নিয়ে মজামস্করা নাপসন্দ তাদের।
সংবাদপাঠক শোনাতে লাগলেন দিল্লি থেকে ফিরে কলকাতা বিমানবন্দরে জ্যোতিবাবু সাংবাদিকদের আরও কী কী বলেছেন৷ জ্যোতিবাবু বলেছেন, ‘ওঁকে বললাম, ফিরে গিয়ে রাজ্যবাসীকে আমি কী বলব! উনি শুনলেন, মাথা নাড়লেন৷ কোনও কথা বললেন না৷ এই তো আমাদের প্রধানমন্ত্রী৷’ জ্যোতিবাবু আরও বলেছেন, ‘ওঁকে আমি বললাম, আপনারা নিজেদের কর্মচারীকে বছরে দু’বার ডিএ দিচ্ছেন৷ আমাদের কর্মচারীরা কি সত্ মায়ের সন্তান৷ তারা কী দোষ করল! উনি শুনলেন৷ কিছু বললেন না৷ এই তো আমাদের প্রধানমন্ত্রী৷’ প্রধানমন্ত্রী তখন রাজীব গান্ধী৷ জ্যোতিবাবু পারতপক্ষে বিরোধী নেতা-নেত্রীর নাম মুখে নিতেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ এলে বলতেন, ‘ওই মহিলা’।
ট্রেনের কামরা তখনও অন্ধকার৷ দর দর করে ঘামছেন কয়েকশো মানুষ৷ কিন্তু পিন ড্রপ সায়লেন্স৷ খিস্তি-খেউড়, ঠেলাঠেলি সব থেমে গিয়েছে৷ কামরা ভর্তি জনতা মন দিয়ে রেডিও-র স্থানীয় সংবাদ শুনছেন৷ সংবাদ পাঠক এ বার খবর পড়া থামিয়ে বলছেন, ‘এই কমপার্টমেন্টে, আপনাদের মধ্যে সরকারি কর্মচারী ক’জন? বড়জোর পাঁচ-দশ জন৷ বাকিরা! বাকিদের কী হবে? তাদের কী দোষ? তারাও কি সব সত্ মায়ের সন্তান?’ আরও বললেন, ‘তবে খেয়াল রাখবেন, সরকারি কর্মচারীর মাইনে বাড়লে দু’পয়সা আপনার পকেটেও আসবে৷ ওরা কিনলে তবে তো আপনি বেচবেন? এখন তো এ-কূল ও-কূল দু’কূল যাওয়ার জোগাড়৷ উনি (জ্যোতি বসু) বলে দিয়েছেন, দিতে পারব না৷ কেন্দ্র না দিলে দিতে পারব না৷ এই তো পরেশবাবু, সরকারি কর্মচারী৷ মাথার চুল দেখে বোঝার উপায় আছে? ছেলেটা এ বার মাধ্যমিক দেবে৷ অঙ্কে, ইংরেজিতে কাঁচা৷ মাস তিনেকের জন্য বাড়িতে একটা মাস্টার না রাখলেই নয়৷ সতীশবাবুর অবস্থা দেখুন৷ নিজে সুগারের রোগী৷ স্ত্রীর হার্টের ব্যামো৷ বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা৷ মাস গেলে ওষুধেই কয়েকশো টাকার ধাক্কা৷ কাশীবাবু দোকানের সামান্য কর্মচারী৷ মাস গেলে ক’টা মাত্র টাকা৷ তাও সময়ে মেলে না৷ মালিক বলে আজ দেব, কাল দেব৷ কথায় কথায় বসিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি৷ ওঁর মেয়েটা বিএ ফাইনাল দিয়ে বসে আছে৷ দুগ্গা দুগ্গা করে বিয়েটা হয়ে গেলে বাঁচা যায়৷ কিন্তু অমন রোগা প্যাংলা মেয়ে কে নেবে৷ একটু দুধ-ঘি না খাওয়ালে কি চেহারা ফেরে?’
কেউ একজন তাল কেটে দিয়ে বললেন, ‘বঙ্গেশ্বর আর কী কী বলেছেন শোনান৷ বলেননি, কেন্দ্রের চক্রান্তে ওনার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েছে৷ বলেননি, কেন্দ্রের চক্রান্তেই কমিউনিস্ট বাবার পুত্র (চন্দন বসু) ক্যাপিটালিস্ট হয়েছেন৷’
এক সহযাত্রী পাল্টা দিলেন, ‘কী বলতে চান আপনি? রাজ্য সরকারের কর্মচারীদের জন্য কি আলাদা বাজার আছে? কেন্দ্রের কর্মচারীদের বছর বছর মাইনে বাড়বে৷ আর সে কথা বললেই দোষ? রাজ্য সরকারের কর্মচারীরা কি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী? এর নাম যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা? যত সব দালাল এসে জুটেছে৷’ আলোচনা কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের দিকে গড়াতেই আর এক সহযাত্রীর সংযোজন, ‘জ্যোতিবাবু তো ঠিকই বলেছেন, কেন্দ্রের টাকা ছাপানোর মেশিন আছে৷ যত ইচ্ছে টাকা ছাপিয়ে নেয়, রাজ্যগুলি চাইলেই শুধু নেই-নেই করে৷ রাজ্য সরকারগুলি কি ভিখিরি৷’ এ বার জবাব এল, ‘ওই যে কী সব বনসৃজন-টিজন (বামফ্রন্ট সরকারের গাছ বাড়ানোর সামাজিক বনসৃজন প্রকল্প) না কী সব করছেন বলেন আপনারা৷ তা দু-চারটে টাকার গাছ পুঁতলেই তো পারেন৷’
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জ্যোতিবাবুর প্রথম জেনারেল অশোক মিত্র তত দিনে বিদ্রোহ করে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে শিক্ষকতায় ফিরে গিয়েছেন৷ বসুর নতুন জেনারেল অসীম দাশগুপ্তর বিধানসভা কেন্দ্র খড়দহে বিবেকানন্দ শতবার্ষিকী কলেজের দেওয়ালে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তাজা রিপোর্ট উদ্ধৃত করে সিপিএম লিখছে, মাস শেষে পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজস্ব বাবদ কেন্দ্র কত টাকা আদায় করেছে, বিনিময়ে রাজ্যকে দিয়েছে কী সামান্য অংশ৷ রাইটার্স বিল্ডিংসে প্রায়ই তিনি সাংবাদিকদের ডেকে বলছেন, ‘মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে বলছি, কেন্দ্রের সীমাহীন বঞ্চনা সত্ত্বেও আমরা সাধারণ মানুষের উপর আর্থিক বোঝা চাপাতে চাই না৷’ জনতার মুখে মুখে ঘুরছে তাঁর ঘাটতি-শূন্য বাজেটের কথা৷ তা অনেকটা স্যুভেনিরে ছাপা পুজো কমিটির ‘যত্র আয়, তত্র ব্যয়’-এর খতিয়ান৷ তার পরও কী করে যে রাজ্যের ঘাড়ে লক্ষ কোটি টাকার ঋণের বোঝা চাপল কে জানে৷
কান টানলে মাথা আসার মতো জ্যোতি বসুর প্রসঙ্গ উঠলেই চর্চা গড়াত অসীম দাশগুপ্তকে নিয়ে৷ ট্রেনের কামরার দেওয়ালেই এক দিন হাতে লেখা স্লোগানে চোখ আটকে গেল, ‘জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে, বামফ্রন্ট সরকারের ডিএ, সবই অনিশ্চিত৷’ রেশন দোকানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে চাল-গম-চিনির বিনিময়ে মিলছে ‘ডিউ স্লিপ৷’ খাদ্যমন্ত্রী নির্মল বসু নিত্য সাংবাদিকদের হাতে প্রেস বিজ্ঞপ্তি ধরিয়ে দিয়ে অনুযোগ করছেন, ‘কেন্দ্র চাল-গমের বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে৷ কিন্তু আমরা জনগণের ভাত মারতে চাই না, তাই ডিউ স্লিপ দিচ্ছি৷’ নিত্য এক কথা শুনে শুনে এক সাংবাদিক তাঁকে এক দিন বলেই ফেললেন, ‘রোজ রোজ আমাদের না ডেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তিগুলিই তো রেশন দোকানে টাঙিয়ে দিলে পারেন৷’
শুধু রেশনের চাল-গম কেন, রাতভোরে উঠে কেরোসিনের দোকানের সামনে ইট পেতে লাইন রক্ষায় মারামারি-হাতাহাতি চোখ-কান সয়ে গিয়েছিল৷ বালতি-হাঁড়ি-ঘটি-বাটি হাতে রাস্তার কলের সামনে লম্বা লাইন দেখতে বেশ লাগত৷ শুধু সেই লাইনে দাঁড়ানোর কথা উঠলেই যেন জ্বর আসত গায়ে৷ তখন জীবন আটকে লাইনে৷ সিনেমা হলে ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান-মহামেডান মাঠে বড় ম্যাচ, হাসপাতালের আউটডোর, এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ, রেল স্টেশন, দূরপাল্লার বাসের টিকিট কাউন্টার, শৌচাগার, সর্বত্র লাইন রক্ষার লড়াই৷
সিপিএমের আবার তখনই ভরা মরশুম৷ গ্রামে-গঞ্জে কানে কানে চাউর হয়ে গিয়েছে— ‘উপরে ভগবান, নিচে সিপিএমের পঞ্চায়েত প্রধান৷’ পথেঘাটে সমব্যথীর কাছে ক্ষোভের কথা গলা নামিয়ে বলার আগে মানুষ মুখ ঘুরিয়ে দেখে নেয়, তৃতীয় কেউ শুনছে না তো, কোনও কমরেড!’ ভাড়া বাড়িতে এসে ভাড়াটে তাল খোঁজেন কবে, কী ভাবে কমরেড দাদার সঙ্গে আলাপ করা যায়৷ চায়ের দোকান, পাড়ার আড্ডা, অনুষ্ঠান বাড়ি, পুজো মণ্ডপ, প্রথম সুযোগেই ভাড়াটে ভদ্রলোক কমরেড দাদার কাছে নিজের পরিচিতি পেশ করে জানিয়ে রাখেন, অফিসে তিনি সম-রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, মানে কো-অর্ডিনেশন কমিটির সমর্থক৷ কমরেড দাদা, গলাভারি করে অভয় দেন, ‘সমস্যা হলে আসবেন৷ মানুষকে নিয়েই তো আমাদের রাজনীতি৷’ বাড়িওয়ালাকে চাপে রাখতে ভাড়াটিয়া তাঁকে শুনিয়ে শুনিয়ে জানান দেন, এলসিএম, এলসিএস-দের (যথাক্রমে সিপিএমের লোকাল কমিটির মেম্বার ও সেক্রেটারি) সঙ্গে তাঁর সদ্ভাবের কথা৷ ভাড়াটের কৌশল আঁচ করে বাড়িওয়ালাও তাল খোঁজেন৷ ছুটির দিনে কমরেডরা লাল শালু হাতে ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদীর সংগ্রামী তহবিলে মুক্ত হস্তে দান’-এর আর্জি নিয়ে হাজির হলে বাড়িওয়ালা সেই সুযোগে কমরেডদের ঘরে ডেকে খাতির করে চা খাওয়ান৷ ভাড়াটেকে যেন জবাব দেন, ‘কেমন দিলাম৷’ এলসিএম, এলসিএস দাদারা শুনে খুশি হন৷ বাড়িওয়ালাকেও অভয় দেন, ‘সমস্যা হলে আসবেন, আপনাদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই আমাদের রাজনীতি৷’
এ ভাবেই পার্টির প্রভাব এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছে যায়৷ এমন দিনে অমন সাহসী কে, বকেয়া ডিএ নিয়ে ট্রেনের কামরায় ও-কথা লেখার সাহস ধরেছিলেন, জানা হয়নি৷ অবশ্য ভিড়ে ঠাসা অন্ধকার ট্রেনের কামরায় বীরবিক্রমে সরকারের মুন্ডুপাত করার সুযোগ নিতেন কেউ কেউ৷ সে দিন কৃষ্ণনগর লোকালে যেমন হচ্ছিল৷
সংবাদপাঠক ফের মুখ খুললেন, ‘কেন্দ্র-রাজ্যের অর্থনীতির চর্চা এ বার বন্ধ থাক, একটু সংসারের অর্থনীতি নিয়ে ভাবুন৷ বলি, এই তো অবস্থা৷ এক বার ভেবেছেন, সংসারটা কী করে চলবে? ধার? খবরদার৷ কত ধার করবেন? ও পথে এগিয়েছেন কী মরেছেন৷ শেষ কালে পাওনাদারের গঞ্জনা শুনে সপরিবারে আত্মহত্যা করবেন? আমি বলি কী, বেশি না, মাসে একটা সিগারেট কম খান৷ মাত্র দু’টাকা৷ আমার এই আম-মশলা, মাত্র দু’টাকা৷ ডাল-আলুসেদ্ধ-ভাত, সঙ্গে এক চিমটি মশলা৷ দেখবেন মাছ-মাংসের বায়না ছেলে ছেলেমেয়েরাও চেটেপুটে খাচ্ছে৷ মাস শেষের দিনগুলি দিব্যি চলে যাবে৷ অভাব থাকবে, অশান্তি থাকবে না৷’
ভিড়ে ঠাসা, দমবন্ধকর কামরায় ওই কথাগুলি ছিল নির্মল বাতাসের মতো। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতেন সকলে। নিজের স্টেশনে নামার আগে কত দিন, কত জনকে ভদ্রলোকের উদ্দেশে বলতে শুনেছি, ‘কাল আসছেন তো?’ কেউ বলেছেন, ‘নেক্সট যে দিন আসবেন, আমার জন্য চার-পাঁচ প্যাকেট আনবেন। অনেককে দিতে হবে।’
কেউ তাঁকে ডাকতেন দেবদুলালদা, কেউ তরুণদা৷ আকাশবাণীর সংবাদপাঠক দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, তরুণ চক্রবর্তীর নাম তখন মুখে মুখে৷ যাত্রীদের দু’এক জনের কাছে পকেট রেডিও থাকত৷ অনেকটা এখনকার মোবাইলের মতো। খবর, সংবাদ সমীক্ষা, অনুরোধের আসর, ক্রিকেট-ফুটবলের বড় ম্যাচের ধারাভাষ্য, বাড়ির বাইরে দিব্যি শোনা যেত। ভবেশ দাশ, নির্মল সেনগুপ্তর সমীক্ষা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতেন মানুষ৷ লিখতেন, নিজেরাই পড়তেন৷ বিষয়নির্বাচন, লেখনী, পাঠ, সবই ছুঁয়ে যেন লাখ লাখ শ্রোতার মন। নির্মলবাবু বলতেন মূলত রাজনীতি, কূটনীতি, রাষ্ট্র, সংবিধান ইত্যাদি নিয়ে৷ ভবেশ দাশের ক্ষেত্র ছিল দৈনন্দিন জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের সরল বিবরণ আর অন্তর্ভেদী ব্যাখ্যা৷ তাঁর পাঠ শুনে মনে হত, সামনে বসে কথা বলছেন৷ খবর লোকালের কামরায় আম-মশলার বিক্রেতা সেই হকার ভদ্রলোকই ছিলেন দেবদুলাল, তরুণ, ভবেশ৷ তাঁর খবর, সমীক্ষার বিষয় ছিল সংসারের অর্থনীতি৷
বহু দিন হল, ট্রেনের কামরায় সেই হকার ভদ্রলোকের দেখা পাই না৷ হতে পারে আমার ট্রেনের সময় বদলেছে বলেই হয়তো দেখা হয় না৷ আশা করি সুস্থ আছেন৷ বাড়ি ছিল সম্ভবত পলতা বা ইছাপুরে৷ বছর পনেরো আগে একবার দেখা হয়েছিল। ওই দুই স্টেশনের কোনও একটি থেকেই উঠেছিলেন৷ কথা বলে জানলাম, অসুখবিসুখে জেরবার৷ শরীর আর দিচ্ছে না৷ তত দিনে দু’টাকা দামের সিগারেট বাজার থেকে উধাও। কিন্তু আম-মশলা আছে। ট্রেনের কামরায় আজও সেটারই বিক্রি বেশি। তবে ভাল-মন্দ মিশিয়ে বদলে গিয়েছে অনেক কিছুই। কেন্দ্র-রাজ্যের বিভেদ সত্ত্বেও রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মাইনে নেহাত্ কম নয়৷ বিয়ের বাজারে তাঁরাও কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছেন৷ সাধারণ পরিবারেও মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সাবজেক্ট পিছু এক জন করে গৃহশিক্ষক৷ টিফিনে রুটি-তরকারির জায়গা নিয়েছে চাউমিন, ডিম টোস্ট৷ শুধু তাঁরা কেন? রিকশাচালক, রান্নার মাসি, কামার, কুমোর, সবজি বিক্রেতা সব ঘরেই ফার্স্ট ডিভিশন, স্টার৷ আমরা তাদের বলি দুঃস্থ-মেধাবী৷ মেধাবী বটে৷ পরিবারও দুঃস্থ সন্দেহ নেই৷ কিন্তু সন্তানেরা? বাবা-মায়ের হাড়ভাঙা খাটুনির বিনিময়ে তারাও পাচ্ছে দু’চার জন প্রাইভেট টিউটর৷ জন্ম নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সাফল্য টের পাওয়া যায়। পরিবার পিছু একটি, বড় জোর দু’টি সন্তান৷ পাঁচটা-সাতটা থাকলে একটিরও এক জন প্রাইভেট টিউটর জুটত কি না সন্দেহ৷ সরকারি সমীক্ষা বলছে, প্রাইভেট টিউশনে পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে এক নম্বরে৷ আর ইচ্ছাপূরণের হরেক উপায় এখন হাতের মুঠোয়—লোন করো, ভোগ করো৷ অনটনের সংসার চালানোর টিপস এখন ব্রাত্য, বাতুলতা মাত্র৷
ট্রেনের কামরায় হঠাত্ দেখার মতো সেই হকার শিক্ষকের সাক্ষাৎ পেলে ভাল লাগবে৷ যিনি নিজের হাতে তৈরি আম-মশলা বেচতে এসে ট্রেনের কামরাকে করে তুলেছিলেন সাশ্রয়-শিক্ষার চলমান পাঠশালা। দিতেন টানাটানির সংসার চালানোর টিপস। প্রতিদিন স্মরণ করিয়ে দিতেন, সঞ্চয় আর সাশ্রয়ের ফারাক। আর বলতেন, আগে সাশ্রয়, পরে সঞ্চয়। প্রয়োজন ছাপিয়ে উদ্বৃত্ত হলে তবে সঞ্চয়। কিন্তু চাহিদার তুলনায় জোগান যখন কম? বাঁচাতে পারে সাশ্রয়ের সংস্কৃতি, বলতেন ভদ্রলোক।
তাঁর মতো সহজ করে বলতে পারতেন না বাকিরা। তবে বাকিদের কথাতেও থাকত মাছের খরচ বাঁচিয়ে মাংস খাওয়ার পরামর্শ। অনটনের সংসার সামলানোর এমন সহজপাঠ আর কোথাও মেলে কি? মলম কিনলে কলম ফ্রি, এটা কিনলে সেটা ফ্রি, লেগেই থাকত। কিছু না কিনেও মিলত অভাবের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচার রসদ। চাকার উপর বাঁচার লড়াইয়ের চলমান কর্মশালা।
এমনই সব অমূল্য প্রাপ্তির কারণেই বুঝি আমি বলে থাকি, হাওড়া, শিয়ালদা লাইনে লোকাল ট্রেনের নিত্যযাত্রীরা বাদে বাকিদের অর্ধেক জীবন। তারা দুর্ভাগা। আবার রেল হকারদের দুর্ভাগ্যও বলার নয়। হকার পুনর্বাসন নিয়ে সংসদে, রাজ্যে রাজ্যে, এই রাজ্যেও বিধানসভায় আইন পাশ হয়েছে। তাতে স্থান হয়নি রেল হকারদের। রেলে হকারদের পুনর্বাসনে আপত্তি কি শুধু রেলের?
আইনের চোখ দিয়ে দেখলে রেলের আপত্তি অন্যায্য নয়। কিন্তু আইনের পর্দা সরিয়ে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার চেষ্টাও কি কেউ করলেন? না, রেলের কামরায় বিকিকিনির অর্থমূল্য, বাজারমূল্য, মাপার চেষ্টা করেনি কোনও বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন। এমনকি শ্রমিক সংগঠনগুলিও না। অনেক খোঁজখবর করে ব্যক্তিগত উদ্যোগের একটি দৃষ্টান্ত জানতে পেরেছি। সোদপুরের কৌশিক ও কৃশানু ভট্টাচার্য, দুই ভাই, সেই নয়ের দশকের গোড়ায়, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে হাওড়া, শিয়ালদা সেকশনে নানা লোকালে এবং স্টেশনে ঘুরে ঘুরে রেল হকারদের সমস্যা বুঝতে সমীক্ষা চালিয়েছিলেন। রাজনৈতিক দল, ট্রেড ইউনিয়ন কোনও শিবিরেই নাম লেখাননি ওঁরা। হাতখরচের পয়সা জমিয়ে ছেপে বের করেছিলেন তাঁদের সমীক্ষা চিত্র—‘পশ্চিমবঙ্গের রেল হকারদের জীবন ও জীবিকা— একটি সমীক্ষা’। দাম চার টাকা। প্রকাশক অপর্ণা ভট্টাচার্য, গৃহবধূ, কৌশিক-কৃশানুদের মা। এই দুই ভাইকে নিয়ে দু’কথা বলা দরকার। ওঁদের বাবা প্রয়াত কানাই ভট্টাচার্য ছিলেন স্থানীয় একটি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের ছাত্র-দরদী প্রধান শিক্ষক। জাতীয় শিক্ষকের সম্মান অর্জন করেছিলেন তিনি। ওঁদের দুই ভাইয়ের এক জন এখন স্কুল শিক্ষক। আর এক জন জীবন বিমা নিগমের অফিসার। ছাত্র জীবনের ট্রেনযাত্রায় হকারদের জীবন সংগ্রাম নাড়া দিয়েছিল দুই তরুণ সহোদরকে। দুই ভাই মিলে ১৮৬ জন হকারের উপর সমীক্ষা চালিয়েছিলেন।
তাঁদের সমীক্ষাপত্রের একটি অধ্যায়ের শিরোনাম, রেল হকারদের ভবিষ্যৎ কি সুনিশ্চিত করা যায়? তাঁরা লিখেছেন, ‘এই নমুনা সমীক্ষার সামগ্রিক তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেশের জনসাধারণ ও সরকারের কাছে একটি প্রশ্নই তোলা সঙ্গত এবং তা হল— রেলওয়ে হকারদের ভবিষ্যৎ কি সুনিশ্চিত করা যায়? দেশের বেকার সমস্যার সমাধান হলে রেল হকারদের জীবন ও জীবিকার সমস্যারও সমাধান হবে, কারণ তখন এত রেল হকার থাকবে না। রেল হকাররাও উপযুক্ত বিকল্প খুঁজে পাবে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে সে রকম সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে কি?
এ অবস্থায় কী কী পদক্ষেপ নিলে রেল হকাররা খানিকটা সুরক্ষিত হতে পারেন তা সমীক্ষকরা পরিষ্কার করে বলেছেন। তার মধ্যে অন্যতম হল, রেল আইন সংশোধন করে রেল হকারিকে বৈধ ঘোষণা করা, তাদের পুঁজির সংস্থান করতে স্বল্প সুদে ব্যাঙ্ক ঋণের ব্যবস্থা, হকার কল্যাণ তহবিল গঠন প্রভৃতি।
তাঁরা লিখেছেন, ‘দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও সব ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনগুলি যদি এ দাবিগুলি সমর্থন করে ও তা আদায়ের জন্য সঠিক ভূমিকা নেয়, তবেই রেল হকারদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত হতে পারে। সংগঠিত প্রচেষ্টা ছাড়া এ ব্যাপারে এগোনো যাবে না। রেল হকাররা সমাজেরই অঙ্গ। কাজেই গোটা সমাজকে তাঁদের জন্য ভাবতে হবে।’
হকারি নিছকই পেট চালানোর পেশা মাত্র নয়, তা আসলে বিকিকিনির এক অনবদ্য শিল্প, ম্যানেজমেন্ট৷ বিশেষ করে রেলে হকারি। খবরের কাগজ, টিভি, ম্যাগাজিনের নানা পণ্যের নজরকাড়া ঘোষণায় চোখ বুলিয়ে বেশ বুঝতে পারি, বিজ্ঞাপনের কপিরাইট ট্রেনের কামরার কোনও হকারের। জামা-কাপড়-গামছা-গেঞ্জি-জাঙ্গিয়া-মোজা-রুমাল-কলম-মলম-চিরুনি-সেফটিপিন-বই-খাতা-ম্যাগাজিন, বর্ণপরিচয়-সহজ পাঠ-অক্সফোর্ড ডিকশনারি-শেকসপিয়র রচনাসমগ্র-পুরনো বাতের ব্যথা, দাঁত ব্যথা, পেট খারাপ, গ্যাস-অম্বল-কোষ্ঠকাঠিন্য-অনিদ্রার ওষুধ, খোকাখুকুর খেলনা, চপ-চানাচুর-বাদাম-ছোলাভাজা-মটরভাজা-লজেন্স-বিস্কুট-আম-কলা-আমসত্ত্ব-লিচু-আঙুর-ন্যাসপাতি-কমলালেবু-মুসাম্বি, স্বাস্থ্যবর্ধক বটিকা—ট্রেনই প্রথম চলমান শপিং মল৷ হকার-পণ্যে দিব্যি ধরা থাকে টাইমলাইন। করোনাকালে মিলছে হান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক। সাধারণ পরিবারে সংসারে কাজের ব্যস্ততায় মহিলাদের দীর্ঘসময় খালি পেটে থাকা, তা থেকে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা, আরও নানা অসুখ-বিসুখ, তথাকথিত মেয়েলি রোগ, তা নিয়ে পুরুষের চেতনায় ধাক্কা দেওয়া আগল ভাঙা কথাও প্রথম শুনেছি ট্রেনের কামরায় কোনও হকারের মুখেই। প্রাথমিকে তখনও ইংরিজি ফেরেনি। এই বিদেশি ভাষাটি জানা কত জরুরি সহযাত্রীদের ঝগড়া-বিবাদে তা হামেশাই বেশ টের পাওয়া যেত। দু’জন বা দু’দলের ঝগড়া লেগেই থাকত। বাকিদের জন্য তা হয়ে উঠত কাঙ্ক্ষিত বিনোদন, অনেকটা মরুভূমিতে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টির মতো, তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতেন। অনেক সময়ই বিবদমানদের একজন ফট ফট করে দু-লাইন ইংরিজিতে জবাব দিলেই পরিস্থিতি বদলে যেত। হয়তো বা সাহেবি গালাগাল, তাতে কী, ইংরিজি তো আফটার অল। ভিড় থেকে কেউ কেউ ইংরিজিতে জবাব দেওয়া যাত্রীর পক্ষ নিয়ে আর এক পক্ষকে একপ্রকার কাঠগড়ায় তুলে বলে উঠতেন, ‘অনেক তো হল, এবার খ্যামা দিন। ভদ্রলোকের সঙ্গে এমন খ্যাঁক খ্যাঁক করে ঝগড়া করছেন কেন?’ এমনও দিন গেছে, কামরার আর এক প্রান্তে কোনও হকার তখন বলে চলেছেন, ঘর বসে নিজে নিজে শিখুন আর ফটাফট বলুন—ইংরিজি। ভীতি কাটিয়ে বাঙালিকে ইংরিজি শিখতে সবচেয়ে বেশি অভয় জুগিয়েছেন রেল হকারেরাই।ট্রেনের কামরায় জেনারেল নলেজ আর চাকরির পরীক্ষার বইয়ের বিক্রি থেকে বেশ মাপা যেত বেকারির পাহাড় এবং বেকারত্বের অর্থনীতি।
টিভির পর্দায়, খবরের কাগজে পাতা জুড়ে ধূপকাঠির বিজ্ঞাপন দেখে মনে পড়ে পারুল ধূপের কথা৷ ট্রেনের কামরায় আগুন জ্বালানো নিয়ে আজকের মতো কড়াকড়ি ছিল না৷ দেদার মিলত গরম চা, ধূমধাম করে চলত ধূমপান৷ সোদপুরের উদ্বাস্তু পরিবারের দুই ভাই শিয়ালদহ থেকে উঠতেন৷ বড় ভাই রাইটার্সে কেরানি। অফিস শেষে সন্ধ্যার পর ছোট ভাইকে সঙ্গ দিতেন৷ ভিড়ে ঠাসা ট্রেনের কামরায় গুমোট পরিবেশে পারুল ধূপের সুবাস ছড়িয়ে দিতেন দুই ভাই৷ প্রথম কিনেছি, চার আনায় তিন প্যাকেট৷ সোদপুরে ট্রেন ঢোকার আগেই ব্যাগ খালি৷ তাঁদেরই মতো এক জন ধূপকাঠি নিয়ে উঠে বলতেন, ‘ধূপের গন্ধ শুধু দেবতার জন্য নয়, আমাদের মনকেও প্রশান্ত রাখে৷ বাড়িতে খটাখটি, রাগারাগি হলে একটা কাঠি জ্বালিয়ে দেবেন৷ দেখবেন, সব রাগ গলে জল হয়ে যাবে৷’
এক জন দাঁতের মাজন বিক্রি করতে উঠে বলতেন, আমি যে প্রশ্নটা করব, সঠিক জবাব দিতে পারলে বিনা পয়সায় দেব৷ তারপর প্রশ্ন ছুড়ে দিতেন, ‘বলুন তো দাঁত কখন মাজা উচিত?’ তার পর পাশের যাত্রীকে বলতেন, ‘বলুন, বলুন, একটা নয়, ঠিক উত্তর দিলে আপনাকে যা আছে সব বিনা পয়সায় দিয়ে যাব৷’ জবাবের অপেক্ষায় না থেকে সহযাত্রী কোনও ছোট ছেলেমেয়েকে প্রশ্ন ছুড়ে দিতেন, ‘তুমি বলো তো, মা-ঠাকুমা কী শিখিয়েছে? বইয়ে কী পড়েছ? সব ভুল, সব ভুল, ওই যে টিভিতে দেখায় না ঘুম থেকে উঠে, সব ভুল, সব ভুল৷ দাঁত মাজতে হয়, রাতে, ঘুমতে যাওয়ার আগে৷’ কোম্পানির দেওয়া একটা নাম ছিল বটে তাঁর মাজনটির। তিনি বলতেন, ‘রুপোলি হাসি’৷
এক জন জয়নগরের মোয়া বেচতে উঠে বলতেন, সামনেই বিধাননগর, আপনারা নিশ্চয়ই বিধাননগরের জয়নগরের মোয়া খেয়েছেন৷ এর পর আসবে দমদম৷ নিশ্চয়ই আপনারা দমদমে তৈরি জয়নগরের মোয়া খেয়েছেন৷ এর পর, বেলঘরিয়া, আগরপাড়া, সোদপুর, এ গাড়ি কৃষ্ণনগর যাবে৷ জানি, কৃষ্ণনগরের জয়নগরের মোয়াও আপনারা খেয়েছেন৷ বলি, জীবনে একবারটি অন্তত জয়নগরের মোয়া তো খাবেন৷’ ট্রেন বিধাননগর পৌঁছনোর আগেই তাঁর ব্যাগ খালি৷ প্যাকেটের গায়ে লেখা থাকত জয়নগরের একটি ঠিকানা, যা ছিল তাঁর ইউএসপি৷
দেখেছি উল্টো ছবিও৷ এক বিকেলে শিয়ালদহ সাউথ সেকশনের ট্রেনে উঠলেন এক যুবক৷ নিজের কথা বললেন খানিকক্ষণ৷ সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় ফেরত৷ ভাল নম্বর৷ বাবা বেসরকারি সংস্থার স্বল্প বেতনের কর্মী, হঠাত্ গত হয়েছেন৷ বাড়িতে মা এবং কলেজ পড়ুয়া বোন, ভাই৷ বললেন, দাঁত ব্যথা মুহূর্তে হাপিস করে দেওয়ার অব্যর্থ ওষুধ আছে তাঁর ঝুলিতে৷ ট্রেন পার্কসার্কাস, বালিগঞ্জ, ঢাকুরিয়া হয়ে যাদবপুরের দিকে এগচ্ছে৷ একজনও হাত বাড়লেন না৷ বিস্তর আকুতিমিনতিতেও এক জন যাত্রীর কাছে থেকে সাড়া না পেয়ে শেষে বললেন, ‘বিশ্বাস না হয়, নিয়ে যান, ব্যবহার করুন, তার পর পয়সা দেবেন৷ বাকিতে দিচ্ছি, বাকিতে৷’ তাতেও গলল না ক্রেতার মন৷ এক সহযাত্রী নিচু স্বরে বললেন, ‘এত প্যানপ্যানানির কী আছে? ভালো জিনিস হলে লোকে এমনিতেই নেবে৷’ ট্রেনের কামরায় ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্কেও কি তবে কনজিউমারিজম ঢুকে পড়ল? ‘পহলে ইস্তেমাল করো, ফির বিসওয়াস করো’ দামি ডিটারজেন্টের সাড়া ফেলে দেওয়া বিজ্ঞাপনের কথাগুলি শুনে সেই হকার যুবকের কথা মনে পড়ে। ট্রেনের কামরায় দাঁতের মাজন বেচতে উঠে এমন কথাই তো বলেছিলেন তিনি। মন পাননি এক জনেরও।
একজন হকারকে দেখছি প্রায় দু’আড়াই দশক৷ একটু রাতের দিকে শিয়ালদায় অপেক্ষমাণ ট্রেনে ওঠেন৷ যাত্রীদের মুখের সামনে নানা ধরনের ফাইল ধরে বলেন, ‘ভালো ফাইল আছে, লাগবে?’ এইটুকু বলেই সরে যান৷ ক্রেতার কথা শোনার তর সয় না তাঁর৷ কোনও দিন তাঁকে অনুনয় বিনয় করতে বা ফাইলের গুণগান গেয়ে বাড়তি একটি শব্দও খরচ করতে দেখিনি৷ আমি কিনিনি, দেখিনি কেউ তাঁর কাছ থেকে কিনেছেন৷
সোদপুরের ব্যানার্জিদা’কে এক ডাকে চেনে গোটা ট্রেন। শুকনো আমলকির প্যাকেট বিক্রি করেন। বিচিত্র মানুষ। না কিনলে বিন্দুমাত্র বিরক্ত হন না। অসম্মানিত বোধ করেন তাঁর এগিয়ে দেওয়া আমলকির নমুনা খেতে অস্বীকার করলে। আমার অনুমান, ব্যানার্জিদা যত যাত্রীকে নমুনা খাইয়েছেন, তাদের দশ শতাংশও যদি কিনতেন তাঁর আমলকির প্যাকেট, তা হলে এত দিনে দশতলা বাড়ি হয়ে যেত মানুষটির। গত বছর, লকডাউনের পর, ট্রেন চালু হলে এক দিন দেখা হল। সত্তর ছুঁয়েছেন। বয়সের ভার শরীর বইতে পারছে না। তবু বের হন। কথায় কথায়, বোঝা গেল, এ বছর ব্যানার্জিদা’র হকারির সুবর্ণজয়ন্তী।
খুব ভালো লাগলো। এনারা ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছেন আমাদের সাথে। তবে শিয়ালদা লাইনের (ভিড়ের ) সাথে হাওড়া লাইনের তুলনা করবেন না। কোয়ালিটি কোয়ান্টিটি দুটোই আলাদা।
খুবই ভাল লাগল। দীর্ঘকাল হাওড়া মেনলাইনের নিত্যযাত্রী হবার সুবাদে অজস্র মুখ মনে পড়ে গেল। ম্মহিলা কামরার হকারদের নিয়ে আলাদা গবেশণা হওয়া দরকার।
আর সেই আশির দশকের সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা 'আপনাদের নিয়েই ত আমাদের রাজনীতি'অলা আর সেই ভয়াবহ লোডশেডিং।
খুবই ভালো লেখা। আমারও ১৯৯৬ থেকে টানা সাত বছরের স্মৃতি ফেরত এলো। দু বছর আগেও লোকাল ট্রেনে চড়েছি, তবে অবশ্যই চেনা মুখ আর ছিল না। কিছু কিছু জিনিস একই রকম রয়ে গেছে। কিন্তু বদলে গিয়েছে অনেক কিছু।
তখন বিদ্যুত মন্ত্রী ছিলেন পাখি সেন ওরফে প্রবীর সেনগুপ্ত।
আশির দশকের শেষে বা নব্বই-এর গোড়ার দিকে শঙ্কর সেন এসে অবস্থা কিছুটা সামাল দেন।
ব্যানার্জী দা কে অনেক দিন দেখিনি।
খুব ভালো লাগলো আপনার এই উপস্থাপনা।
খুব ভালো লাগলো।
লোকাল ট্রেনের অভিজ্ঞ্তা কম, তবু সামান্য দেখার সঙ্গে এই অন্তরদর্শন বার বার মিলিয়ে নিচ্ছিলাম। জেনে ভাল লাগলো, নিত্য হকার কাম চলমান শপিং মল নিয়ে অনেকে ভেবেছেন।
এপারে লোকাল ট্রেন, বাসে ও লঞ্চে অল্প বিস্তর হকারের চেয়ে ফুটপাথের হকারই বেশী। দেশ ডিজিটাল হলো, বঙ্গবন্ধু সেটেলাইট উড়ান দিল, উন্নয়নের জোয়ার বইলো, কিন্তু হকারদের নিয়ে এখনো কেউ ভাবার টাইম পেল না!
আরও লিখুন
শুধু লোকাল ট্রেন নয় বামফ্রন্ট শাসনের বা অপশাসনের একটি সুপাঠ্য বয়ান।