
হস্তিনাপুরের রাজপ্রাসাদ। অজমাংস রন্ধন গার্ডেন পার্টির ওপেন এয়ার কিচেনে চলছে জম্পেশ। তত্ত্বাবধানে দ্রৌপদী স্বয়ং। খুশবুতে তার চঞ্চল সমগ্র মহাভারত যেন। সে খুশবু মন্থন করেই বুঝি উঠে আসছে নানা জমজমাট মহাকিস্সা। তবে ষড় নয় বরং পঞ্চরসে আপ্লুত সে মহাভারতের খানা অমৃতসমান। লিখছেন শমিম আহমেদ। দ্রৌপদী হস্তিনাপুরের রাজপ্রাসাদে বসে আছেন। হেঁশেল থেকে ভেসে আসছে রান্নার ঘ্রাণ। তবে এ হেঁশেল রসুইঘর ঠিক নয়, আজকের লব্জে গার্ডেনপার্টির ওপেন এয়ার কিচেন! কৃষ্ণা মাঝে মধ্যে গিয়ে সেসবের তদারকি করছেন। তাঁর তনু-মন থেকে উঠে আসছে সুগন্ধী রান্নার সুবাস। বায়ু অর্থাৎ কৃষ্ণার অন্যতম শ্বশুর বউমার চুল নিয়ে খেলছেন, তাই তিনি কিঞ্চিৎ অস্থির। এমন সময় রান্নার গন্ধ নিয়ে একটি কেশ হাওয়ায় ভেসে কোথায় যেন চলে গেল, বাতায়ন পেরিয়ে।
সেই কেশ কোন্ অলৌকিক উপায়ে পাতালে প্রবেশ করল, তা কেউ জানে না। নিদ্রিত বাসুকির বক্ষদেশে তা পতিত হল। এমন সুগন্ধী কেশের ঘ্রাণ পেয়ে নাগরাজের বারো বছরের নিদ্রা গেল ভেঙে। পাশে তাঁর পদ্মনাগিনী পত্নীবৃন্দ বাসুকিকে পাখার হাওয়া করছেন। নাগরাজ চুলের মধ্যে রান্নার সুঘ্রাণ পেয়ে উঠে বসলেন এবং ঠিক করলেন ওই কেশের মালকিনের কাছে যাবেন। তাঁর এখন চাই দ্রুতগামী অশ্ব।
ওদিকে হস্তিনার রাজপ্রাসাদের রসুইঘরে চলছে অজমাংসের রান্নার প্রস্তুতি। দ্রৌপদী বলে দিয়েছেন, একদম বেশি মশলা দেওয়া চলবে না ওই মাংসে, এমনকি তেলও নয়। কী করে বানাবেন অজমাংস, স্বল্প উপাদানে? অস্থির হয়ে পড়লেন রন্ধনবিদেরা। দ্রৌপদীর দাদাশ্বশুর ব্যাস ঠাকুরের প্রপিতামহ হলেন বশিষ্ঠ আর বশিষ্ঠ হলেন অজ-এর পুত্র। সেই অজ আজ দ্রৌপদীর রন্ধনশালায় পাক হবে।
‘অজ’ শব্দটি বেশ মজার—যে জন্মে না সেই অজ। পাঁঠা বা খাসি জন্মলাভ করে, তা হলে সে ‘অজ’ হল কী করে? বাস্তবে জন্মশূন্য কোনো প্রাণীই নেই। মৃত্যুশূন্য অবশ্য আছেন কয়েকজন। উদাহরণ, সপ্তচিরজীবী—অশ্বত্থামা, বলি, ব্যাস, হনুমান, বিভীষণ, কৃপাচার্য ও পরশুরাম। মৃত্যুহীন কিন্তু জন্মেছেন। চিরজীবীর তালিকায় ঈশ্বরের নাম নেই, তিনি মৃত্যুহীন কি না জানা নেই, তবে তিনি জন্মহীন। তিনিই অজ। কিন্তু তাই বলে ঈশ্বরের মাংস তো আর হতে পারে না! আবার ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরেরও আদি নেই। যার আদি আছে সে জাগতিক প্রাণী। তাকে ‘সাদি’ বলে। ঈশ্বর অনাদি। যার জন্ম হয়নি, হবেও না। সর্ব্বং সর্ব্বভূতানাং তন্মাদহমজঃ স্মৃতঃ (মহাভারত)।
ছাগল অনাদি নয়। দশরথের পিতা অর্থাৎ রঘুর পুত্র ব্রাহ্ম মুহূর্তে জন্মেছিলেন বলে ব্রহ্মার নামানুসারে তাঁর নাম রাখা হয় ‘অজ’। কিন্তু ছাগল ‘অজ’ হল কেন? আসলে এটি ঔপচারিক প্রয়োগ। দক্ষযজ্ঞ বিধ্বংসে ব্রহ্মা মেষরূপে পালিয়ে গিয়েছিলেন বলে ছাগলের নাম হয় ‘অজ’। আবার দক্ষ বা নিপুণের মাথা কেটে ফেলার পর ব্রহ্মার অনুরোধে শিব সেখানে ছাগলের মুণ্ড প্রতিস্থাপিত করেন। সেই থেকে দক্ষ বা নিপুণদের ছাগমুণ্ড। ছাগলের মুণ্ড চিবিয়ে খেতে ভালো। ছাগলের পল দিয়ে পলান্ন হয় খুব ভালো। পেটরোগাদের জন্য কুক্কুটমাংসের পলান্নের নিদান দিয়েছেন বৈদ্যরা।
মহাভারত বলে, রান্না করা হয় মূলত আহারের জন্য। আর আহারের প্রধান উদ্দেশ্য হল স্বাস্থ্যরক্ষা। তবে খাদ্যগ্রহণের সঙ্গে মানসিক ও আত্মিক সংযোগের কথাও মহাকাব্য স্বীকার করেছে। মানুষ যেমন তিন প্রকার হয়—সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক; তাঁদের খাদ্যও সেই প্রকারের হওয়া বাঞ্ছনীয়। মহাভারতীয় আয়ুর্বেদশাস্ত্র সেই খাদ্যের নানা বর্ণনা দিয়েছে। সদোপবাসী মানুষ দুবার ভোজন করবেন—দিনে একবার ও রাতে একবার। চাল এবং যব মহাকাব্যে প্রধান খাদ্য বলে বিবেচিত—ব্রীহিরসং যবাংশ্চ। মাছ, মাংস, দুধ, দই, ঘি, গুড়, পিঠে, টক, আচার ও বিভিন্ন রকমের শাকসবজি প্রভৃতির উল্লেখ রয়েছে মহাকাব্যে। মহাভারতে দেখা যায়, ব্রাহ্মণ থেকে শূদ্র প্রায় সকলেই সব রকমের মাংস খেতেন। যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞে ব্রাহ্মণদের শুয়োর ও হরিণের মাংস খেতে দেওয়া হয়েছিল। বনবাসের সময় পাণ্ডবদের প্রধান খাদ্য ছিল মাংস। ধৃতরাষ্ট্র দুর্যোধনকে সভাপর্বে বলছেন, পলান্ন খাওয়া সত্ত্বেও তুমি এত কৃশকায় হচ্ছ কেন? সুসিদ্ধ পলান্নের গুণাবলি প্রসঙ্গে রাজা নল ‘পাকদর্পণ’-এ ‘মাংসোদনস্য গুণাঃ’-তে বলছেন, ‘ইদং রুচিকরং বৃষ্যং পথ্যং লঘুবলপ্রদম্। ধাতুবৃদ্ধিকরত্বাচ্চ ব্রণদোষান্ প্রশাম্যতি।’ মাংসোদন বা পলান্ন হল সুস্বাদু, পুষ্টিকর, রতি-উদ্দীপক, উপকারী, হালকা, শক্তিবর্ধনকারী। শরীরের কোশজনিত কারণে যে ক্ষত তৈরি হয় তার নিরাময় করে পলান্ন।
প্রাক-মহাভারতীয় যুগে গোমাংস ব্যবহারের কথা উল্লেখ আছে মহাভারতে। তবে মহাভারতের যুগে গোরুর মাংস তেমন খাওয়া হত না। মহাকাব্যে বলা হয়েছে, প্রাচীনকালে গোমাংস খাওয়ার বহু উদাহরণ রয়েছে। রাজা রন্তিদেব প্রত্যেক দিন দুহাজার গোরু বধ করে মাংস দান করতেন। স্মৃতিশাস্ত্রে রয়েছে, অতিথির আগমনে মধুপর্কার্থ গোবধ বিহিত ছিল। সেই জন্য অতিথি অর্থাৎ যার নিমিত্ত গোবধ করা হয় তাঁকে ‘গোঘ্ন’ বলা হত। মহাভারতের যুগে গোরু, হাঁস, বক, চক্রবাক, মণ্ডুক প্রভৃতিকে অভক্ষ্য বলা হয়েছে। অবশ্য হবি প্রসঙ্গে ভীষ্মের উক্তিতে গোমাংসের কথা পাওয়া যায়। পিতৃগণকে উদ্দেশ করে যে খাবার দেওয়া হয় তা সাধারণত অতিথি ও দরিদ্র মানুষেরা ভক্ষণ করে থাকেন। ভীষ্ম পিতৃপুরুষের উদ্দেশে প্রদত্ত হবি প্রসঙ্গে অনুশাসনপর্বে বলছেন, নিরামিষ হবি পিতৃপুরুষকে এক মাস তুষ্ট করে, মৎস্য হবি দুই মাস, ভেড়ার মাংস তিন মাস, খরগোশ চার, ছাগল পাঁচ, বরাহ ছয়, হংস সাত, পৃষত আট মাস, রুরু নয় মাস, গবয় দশ, মহিষ এগারো এবং গোমাংস বারো মাস তুষ্ট করে। বাধ্রীণস (বৃহৎ ষাঁড়) বারো বছর, গণ্ডারের মাংস চিরদিনের জন্য। তিলের সঙ্গে যে-কোনো খাদ্য পিতৃপুরুষের উদ্দেশে দিলে তা অক্ষয় হয়। অজমাংস হবি হিসাবে গণ্য নয়।
অগ্নিদেবতার বাহন হল অজ। আবার সেই অগ্নিতে ছাগল পাক করে খাওয়া হয়। কে কার বাহন বোঝা মুশকিল!
ওদিকে নিজস্ব বাহন সৈন্ধব অশ্বে চড়ে রওনা দিচ্ছেন বাসুকি। তাঁর পত্নীদের নিষেধ অমান্য করে। যাঁর চুলে রান্নার এত সুগন্ধ লেগে থাকে না জানি সে কী অসামান্য রন্ধনপটিয়সী নারী! সেই স্ত্রীলোকের সান্নিধ্য না পেলে সারা জীবনই বৃথা। তাঁকে শুধু একবার চর্মচক্ষে প্রত্যক্ষ করেই আবার পাতালে ফিরবেন নাগরাজ। খুঁজতে খুঁজতে হস্তিনার ওপেন এয়ার কিচেন গার্ডেনে সেই কেশের মালকিনকে পেয়ে গেলেন বাসুকি। দ্রৌপদী তখন চম্পক বৃক্ষের নীচে বসেছিলেন। বাসুকিকে তিনি পথভ্রষ্ট পথিক ভেবে দাসীদের বললেন তাঁর পরিচর্যা করতে। দাসীরা তাঁর সেবা করতে উদ্যত হলে তিনি সবাইকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে দ্রৌপদীর দিকে এগিয়ে গেলেন। যাজ্ঞসেনী বাসুকির আঘাতে ভূপতিত হলেন।
ওদিকে দাসীরা রান্না করছেন। দ্রৌপদী বলে দিয়েছেন কেমন করে করতে হবে অজমাংস! অজ বা ছাগলের মাংস ‘বোটি’ করে নিতে হবে। ওটাকে ‘মাটন’ বলা যাবে না, মাটন হল ভেড়ার মাংস; অজমাংস হল ‘গোটমিট’। চার চামচ ঘি (বড়ো, টেবিলচামচ), প্রচুর পিপ্পলি, জল আর রকসল্ট, যা কিনা বাংলায় খনিজ লবণ আর সৈন্ধব লবণ দুই নামেই পরিচিত (স্বাদমতো)।
হে বঙ্গভাষী পাঠক! পিপ্পলির উল্লেখে কি পিলে চমকাল? চমকানোর কোনোই কারণ নেই। পাকাহারে ‘ঝাল’ রসের উৎস পিপ্পলি, সেযুগেও ছিল, এ যুগেও এ মহাভারত ভূখণ্ডের বহু অঞ্চলেই রমরমিয়ে চলে। খাঁটি ভারতীয় মশলা—Long pepper (Piper longum)। লকডাউন হোক বা না হোক, আমাজনেই মিলে যাবে হরেক কিসিমের।
প্রচুর পিপ্পলি, কারণ মহাভারতের যুগে লঙ্কার ব্যবহার এ মহাভারতে ছিল না। ধর্মসাহিত্যে ‘লঙ্কা’ শব্দ থাকলেও ‘চিলি’ ছিল না। শাস্ত্রের বাইরে ছিল লঙ্কা ধান; বহু পুরোনো। তবে সেটি ধানই, ‘ধানিলঙ্কা’ নয়। ‘লঙ্কা’ শব্দের ধাতু যে ‘রম’ তার অর্থ হল আসক্তি। আসক্তির দহন হল লঙ্কাদহন। তবে লঙ্কাকে ‘মরিচ’ও বলে থাকেন বহু মানুষ। মির্চমশালা। লাল মরিচ, হরি মরিচ। ‘হরিবোল’-এর হরির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না, এ হরি সবুজ! মরিশাস দ্বীপ থেকে এই নাম কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। মরিচের ঝোলের কথা পাওয়া যায় বহু লেখায়। চৈতন্যচরিতামৃতে চই-মরিচের কথা আছে। চই/ চৈ হল লতাবিশেষ ও তার মূল। চৈতন্য-চরিতামৃতের লেখক চই-মরীচ সুক্তার কথা বলেছেন। চই বা চৈ ছিল তরকারিতে ঝাল দেওয়ার অন্যতম উপকরণ। কটু বা ঝাল ছাড়া রান্নার কথা তো ইদানীং কালে ভাবাই যায় না! লঙ্কা মানে চিলি এককালে ছিল না ভারতে, অথচ এদেশে এখন লঙ্কা ছাড়া ব্যঞ্জন তৈরি হয় না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের যে-কোনো দশজন পর্যটককে ভারতীয় খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে ন-জন বলবেন একটিই শব্দ chilies। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ভারতীয় খাবার ও লঙ্কার বিয়ে হয়েছে এই সেদিন, মানে গত হপ্তায়। তাহলে ঝাল-স্বাদের জন্য কী ব্যবহার করা হত? একটি তো চৈ। আরও বহু কিছু ছিল, আছে—গোলমরিচ, পিপ্পল/পিপ্পলি ইত্যাদি।
পৃথিবীতে লঙ্কার ব্যবহার বেশ পুরোনো। খ্রিস্টপূর্ব পাঁচহাজার সালে মেক্সিকোতে লঙ্কাবাবুর জন্ম বলে পণ্ডিতরা জানিয়েছেন। কিন্তু এ মহাভারতে এসেছে এই সেইদিন, এখন থেকে মাত্র ৪৫০ বছর পূর্বে। গোয়ায় প্রথম লঙ্কা এনেছিলেন পোর্তুগিজরা। সেই ভারতে এখন সব থেকে বেশি লঙ্কা উৎপাদন হয়। ভারতীয়রা সবচেয়ে বেশি লঙ্কা খান। লঙ্কা-রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে ভারত এখন শীর্ষস্থান দখল করেছে। দেশের মোট লঙ্কার ৭৫ ভাগ হয় অন্ধ্রে। ঝাল তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। ভারতীয় লঙ্কার অন্তত ২০০ রকম প্রজাতি আছে, তাদের মধ্যে ৩৬-টি প্রজাতি হয় অন্ধ্রপ্রদেশে। সব যে খুব ঝাল বা ঝালবিহীন, এমন নয়। ঝালের রন্ধ্রভেদ আছে। ধানিলঙ্কা যেমন বেশ ঝাল তেমনি কাশ্মীরি লঙ্কায় ঝাল প্রায় নেই। যাকগে এ লঙ্কা-কাণ্ডের কাহিনি অন্য কোনোদিন।
এদিকে ভূপতিত দ্রৌপদীকে পাঁজাকোলা করে বাসুকি তুলে নিয়ে গেলেন শয়নকক্ষে। তারপর বললেন, আমি ক্লান্ত ও তৃষ্ণার্ত। দ্রৌপদী গরম জলে বাসুকিকে স্নান করালেন। বত্রিশ রকমের ব্যঞ্জন খাওয়ালেন। নাগরাজ তুষ্ট হলেন না; বললেন, আমার অজমাংসের রেসিপি চাই। দ্রৌপদী তা দেবেন না কিছুতেই। বাসুকি রাতে দ্রৌপদীর শয়নকক্ষে থেকে গেলেন। ইতিমধ্যে অর্জুন এসে পৌঁছেছেন, বাসুকির সঙ্গে তাঁর তুমুল যুদ্ধ হল। অর্জুনকে পরাজিত করে দেয়ালে হ্যাঙারের মতো ঝুলিয়ে রাখলেন নাগরাজ। বিছানার উপর পাশা খেলছেন বাসুকি ও যাজ্ঞসেনী। অসহায় অর্জুন দেখছেন। সকাল হল, নাগরাজ চলে গেলেন পাতালে।
আবার এলেন পরদিন রাতে। অজমাংসের রন্ধনপ্রণালী তাঁর চাইই চাই। এইভাবে প্রতিদিন আসেন বাসুকি। অর্জুন অসহায়। এবার দৃশ্যে প্রবেশ করলেন স্বয়ং সূর্যপুত্র। কর্ণ। তিনি প্রথমেই বাসুকির অশ্বটিকে ভস্ম করেদিলেন। পিতার কাছ থেকে যে অগ্নিছুরিকা উপহার পেয়েছিলেন তাই দিয়ে নাগরাজের নয়টি ফণার আটটিকে পুড়িয়ে দিলেন। বাসুকি কর্ণের পায়ের কাছে গিয়ে প্রাণভিক্ষা করলেন। তারপর হামাগুড়ি দিয়ে পাতালপ্রবেশ করলেন। যাজ্ঞসেনী কর্ণের পা ছুঁয়ে প্রণাম করে বললেন, হে প্রথম পার্থ! আমি না জেনে আপনাকে ‘সূতপুত্র’ বলে অপমান করেছি। আমি জানি কেশবের পর আর যদি কেউ আমার রক্ষাকর্তা থাকেন তাহলে সে আপনি। কর্ণ দ্রৌপদীকে আশীর্বাদ করে বললেন, হে কল্যাণী, আমিও বিদ্বেষবশত সভামধ্যে তোমাকে ‘বন্ধকী’ বলে গালি দিয়েছি, আমাকে ক্ষমা করো। আর-একটা কথা, ওই অজমাংসের রন্ধনপ্রণালী কিন্তু আমার চাই।
দ্রৌপদী বলতে শুরু করলেন, প্রথমে ঘি গরম করবেন। তারপর তপ্ত ঘিয়ে অজমাংস দিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সাঁতলাবেন। যখন লাল-মাংস বাদামি হয়ে আসবে, তখন খনিজ নুন ও পিপ্পলি বাটা মিশিয়ে দিন। তারপর রান্নার পাত্র ঢেকে দিন, অল্প আঁচে রাখুন আধঘণ্টা মতো। তারপর ঢাকনা খুলে অল্প অল্প করে জল দিন। সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। মাংস ভুনা বা ভাজা হবে না, আবার কারিও নয়। মাংসের গায়ে-গায়ে নুন-ঘি লেগে থাকবে, লঙ্কা থাকবে তার নিজের মতো। হনুমানের মতো লঙ্কাদহন করতে যাবেন না, তাতে মুখ পুড়বে।
কর্ণ বললেন, এত সহজ রান্না! কিন্তু ঝাল ঠিক কতটা হবে যাজ্ঞসেনী?
দ্রৌপদী জবাব দিলেন, “ঝাল স্বাদ মানে কটু স্বাদ। ঝাল হল জ্বালাকর।”
অগ্নির উত্তাপকেও ঝাল বলে, ভাষাগত মজার মিল এই যে, ইংরেজিতেও ঝালকে ডাকা হয় hot নামে। তাঁদের কাছে মহাভারতীয় রান্নার অপর নাম hot–নামা। কারণ ঝাল বা কটু স্বাদ কণ্ঠ আবৃত করে, সে হল Pungency। ঝাল কটু হল ষড়রসের অন্যতম—যাকে ভালো মতো আস্বাদন করা যায় তাই হল রস। মহাভারতের অন্যতম পাচক বাসূদনল জানাচ্ছেন, কটু হল পিপ্পলি। সৈন্ধব বা খনিজ নুন হল লবণাক্ত। ঘি মধুর রস। কষায় আর তিক্ত স্বাদ খুব অল্প পরিমাণে লাল মাংসে থাকে। ছ-রকম রসের মধ্যে বাকি রইল অম্ল বা টক। গন্ধরাজ লেবু রাখতে পারেন খাওয়ার সময়। ঘিয়ের সঙ্গে লেবুর সম্পর্ক অম্লমধুর হলেও তা না যোগ করাই ভালো। তাল কেটে যাবে। পঞ্চরসই এই রান্নার ইউএসপি।
রস্যতে আস্বাদ্যতে ইতি রসঃ।
সন্দীপন গাঙ্গুলী | 2409:4060:2097:e615:1a46:59a3:d5d5:***:*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৬:৪৩97289দারুণ সুন্দর।
এটা ভারী লোভনীয় লেখা।
S Sarkar. | 2401:4900:1040:99d4:60d9:fac9:12ed:***:*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৮:৩৮97298Beautiful.
ইশতিয়াক চৌধুরী | 2003:c6:5710:701:55f4:d59b:4e38:***:*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৯:৫৩97303শামিম আহমেদের আরো লেখা পড়েছি, উনি খুব ভালো লেখেন। ওঁর লেখা পড়ে আমি খুব খুশী হই। উনি যেন নিয়মিত লেখেন।
অরিন্দম দত্ত | 2401:4900:382b:e1a7:1:2:a838:***:*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:৪১97311বেশ লাগল।
s | 100.36.***.*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:৫১97317bhaal laagala. kintu madhur maane mishhTi na? ghi ki madhur kyaaTigarite parhabe? aar jaapaani kiujine Jaake umaami balaa haya sei rakam kono sbaad mahaabhaarate aachhe?
s | 100.36.***.*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:৫৪97318এ কি ? বাঙলা হরফ আসল না তো
ভাল লাগল। কিন্তু মধুর মানে মিষ্টি ন? ঘি কি মধুর ক্যাটিগরিতে পড়বে? আর জাপানি কিউজিনে যাকে উমামি বলা হয় সেই রকম কোনো স্বাদ মহাভারতে আছে?
বাংলা করে দিলাম
'গুরু পদ্ধতি' সিলেক্ট করা ছিল কি?
r2h | 73.106.***.*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:০৮97321নোটপ্যাডে ইংরেজি লিখে গুরুর কলে ফেললে আগে যেমন বাংলা হয়ে যেত সেটা নতুন গুরুর কলে হবে না। এমনকি খুব ঝড়ের গতিতে টাইপ করলেও চলবে না:)
kk | 97.9.***.*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:১৫97322বেশ ভালো লাগলো। কিন্তু বেচারা সমুদ্রের ঘোড়াটাকে বিনা দোষে মেরে ফেললো ? :'/
s | 100.36.***.*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:৩৬97326ধন্যবাদ পিনাকী. গুরু পদ্ধতি সিলেক্ট করা ছিল। কিন্ত এই গুগল পদ্ধতি এখনো রপ্ত হয় নি.
শুভদীপ রায় | 2409:4061:293:eacb:20e8:fc37:489b:***:*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৪:০১97340অসাধারণ।
সুকি | 165.225.***.*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:৪৬97342এই লেখাটা খুব ভালো লাগলো।
আশিস সেনগুপ্ত। | 2401:4900:314c:2f6b:0:6d:9c5d:***:*** | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৫:১২97403সম্পুর্ণ নতুন স্বাদের লেখ।। ভাল লাগ।।
Partha Chakraborty | 146.196.***.*** | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:৪৪97411শামীম , আপনার লেখনী সুন্দর. তবে rosotwirno হয়ে উঠতে পারেনি. সুকৌশলে ব্যঙ্গ করেছেন কিন্তু পৌরাণিক কাহিনীর মধ্যে আজ এত উপ - গল্পের অনুপ্রবেশ ঘটেছে যা পরবর্তী কাল এ প্রক্ষিপ্ত বলেই বিশ্বাস . মূল মহাভারত ২৪ হাজার শ্লোকের সমষ্টি বলেই জানি , বাকিটা আপনি সদৃশ মহাজন দ্বারা অলংকৃত. তবে অতি অলংকরণ মূল কাহিনীর মর্যাদা নষ্ট করে।
Partha Chakraborty | 146.196.***.*** | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:৪৪97412শামীম , আপনার লেখনী সুন্দর. তবে rosotwirno হয়ে উঠতে পারেনি. সুকৌশলে ব্যঙ্গ করেছেন কিন্তু পৌরাণিক কাহিনীর মধ্যে আজ এত উপ - গল্পের অনুপ্রবেশ ঘটেছে যা পরবর্তী কাল এ প্রক্ষিপ্ত বলেই বিশ্বাস . মূল মহাভারত ২৪ হাজার শ্লোকের সমষ্টি বলেই জানি , বাকিটা আপনি সদৃশ মহাজন দ্বারা অলংকৃত. তবে অতি অলংকরণ মূল কাহিনীর মর্যাদা নষ্ট করে।
শামিম | 2401:4900:16c9:cdfb:4a1e:d4b2:d2ef:***:*** | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৯:৩৮97428পার্থ, মূল হল ৮৮০০ শ্লোক। সৌতি ঠাকুরের মহাভারত ১ লক্ষ। অন্তত ৩০০ রকমের মহাভারত আছে, কোনটা আসল বলে মনে করেন? দলিত বা ভিলদের মহাকাব্য আপনার চোখে ব্যঙ্গই মনে হবে। ওঁদেরও আপনার বা আমার মহাকাব্যকে ব্যঙ্গ করার অধিকার আছে।
এই লেখাটা আগে ফেসবুকেই পড়েছি। দারুণ লেখা।
Atoz | 151.14.***.*** | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:৩৩97733আরে সেই শ্বশুর জামাই গুলিয়ে গিয়ে গন্ডগোল হয়েছিল, সে কি এই লেখকেরই লেখায় ? সেই যে জরাসন্ধ ! কংসের শ্বশুর না জামাই সে নিয়ে সে কী মারাত্মক কাণ্ড। :-)
বেশ লাগলো