মাংসল কবিতা
মিতুল দত্ত
--------------
নরমাংস মুখে দাও। নারীমাংসে শুদ্ধ করো দ্বার
মেয়ের একান্ন স্থান টেনে ছিঁড়ে মেশাও নিজের
লীলাপুষ্ট অণ্ডছাল। কাকপক্ষী পায় না যেন টের
সাধনার রীতি এই। যে সাধন অানন্দের সার
অানন্দ অানন্দ ওই কাঁচামাংস ভাগ করে খাওয়া
জন্মে যারা মরে যায়, মরে যারা ফের বেঁচে ওঠে
বেজন্ম পেয়েছে যারা, রক্ত মোছে সবীর্য ল্যাঙটে
তাদের কোটর থেকে অাবডালে সরে গেছে হাওয়া
হাওয়া জানে, কাল রাতে বিসর্জিত পাড়ার প্রতিমা
অাবার উঠেছে ভেসে। চোখে তার অাদিগঙ্গাজল
যে গঙ্গা নর্দমা নয়। যে পাহাড় বাণিজ্যসফল
তাদের জিজ্ঞেস করি, কতদূর অানন্দের সীমা
অানন্দ অানন্দ তার কাঁচামাংসে কাদের দখল
বৈশাখ
চিরশ্রী দেবনাথ
--------------
বৈশাখ এসেছে, দ্বারে দাঁড়িয়েছে
রাস্তা গিলে এসেছে, গিলে এসেছে চৈত্রের প্রতিবাদ।
মাংস রান্না হচ্ছে, চন্দন সুবাস।
একটি মেঘকুঞ্জ জমছে, জমছে অনেক জায়গায়,
শহরে , গ্রামে অক্ষম হস্তীর বৃংহণে।
আষাঢ় মাসে বছরের গায়ে জল জমবে, কাদা, ক্লেদ, মাঠ ভরে প্রসূতির মেলা,
সব পেটে যাবে, গর্ভে লুটোপুটি খাবে, স্থুল তারা, অনাবৃষ্টির ছায়া কোলে দিয়ে যাবে!
ভালোবাসো কি তারে?
উদ্ধত বক্ষ কেটে ফেলেছে সে, শাণিত লুন্ঠন এক আগাপাশতলা।
বৈশাখ এসেছে,
এসেছে বৈশাখ।
দ্বারে দাঁড়িয়েছে,
রাস্তা ছুঁয়ে এসেছে, ছুঁয়ে এসেছে ঝড়, মেঘের দ্বৈরথ।
পেয়েছে একটি ঘর, অবেলার।
ঐ যে সে, গালে হাত দিয়ে বসেছে, চূর্ণ ঠোঁটে রাগ দেখাচ্ছে।
কারণ ছাড়া কাঁপছে কেউ, যেন পৃৃথিবী আমার যুগলবাহুতে।
এই অধিকার যেন কার, আরো কার কার?
যার চোখে বন্ধক রাখা চক্ষুজোড়া, যার পকেটে খয়েরি চাবি,
সোনালী জং ধরা ...
আলারা বেগম
সোনালী সেনগুপ্ত
--------------
মাসি, একটু চা খাবে? বসিয়েছি
(মাসি পাশ ফেরে। চোখদুটি ফিরে আসে কোনো
ছায়াচ্ছন্ন বরষার বন থেকে, ওষুধের গন্ধে মাখা
ভিজে ফ্ল্যাটে, পুরোনো দেওয়ালে
ছোটো ছোটো হস্তচ্ছাপে) ওমা, এসেছিস এলা?
দিবি? তা বেশ
বৃষ্টি হয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে এলি বুঝি? জানলায় দেখলুম
ওবাড়ির বৌটিও ফিরে এল। ভিজে শাড়ি, ছাতা
বুঝি ভুলে গেছে। হি হি করে
(এলারো ঠান্ডা লাগে। বাটিকের চাদরটি আরেকবার
জড়িয়ে নিয়েছে গায়ে)
মোড় থেকে পেঁয়াজি আনালে হত।( দুটো হাতে ভর দিয়ে
অবশ শরীরখানা ঠেসা দিয়ে বসে
চটা রং, পুরোনো খাটের শিথানেতে)
এই ভরা হেমন্তের বৃষ্টি। মনে পড়ে গোয়াবাগানের
লেডিজ হস্টেল। কত জল হত, এলা
তোর মা বৃষ্টি ভালবাসে বড়। ছাতে গিয়ে তুলে আনত ফুল
মাথার কাপড় ফেলে ফুর্তি তার কত। হন্যে হয়ে ভিজে পুড়ে
খাতাগুলো বাঁচিয়ে কি কাপড় হাঁটুতে তুলে ফিরে আসতেই
গরম চা ও মুড়ি, হাসিমুখ, দিদি, কুড়কুড়ে আলুও ভেজেছি!!
রাতভোর টেবিলেতে গন্ধ দিত ভেজা শাদা যুঁই।
(অন্ধকারে শ্বেতীময় অযত্নিত দেহ জেগে উঠে
সুবাতাসে অকস্মাৎ বাসবদত্তার ন্যায় প্রণয় জাগাত
ট্রাম থেমে গেলে, নিশ্চুপ কলকাতা, ঝমঝমে বৃষ্টি বুকে
ভালোবাসা ডেলিভারি দিত
লেডিজ হোস্টেলে)।
(বাড়ি ফিরতে নটা হত মা’র।
দরমার দেওয়াল, আর নীল প্লাস্টিকের মধ্যে দিয়ে
চুঁইয়ে আসত জল, কাদায় বাথরুম যাওয়া মানা
মা আসবে, তারো পরে বাবা আসবে, রান্না বসবে
খিচুড়ি ও তরকারি, বৃষ্টিরাতে
বাবার কাশিটা আরো বেড়ে যাবে। তারই মধ্যে গহন আঁধারে
ছোটো বোনটার গায়ে হাত রেখে এলা দেখবে, নীল প্লাস্টিকের মধ্যে দিয়ে
মায়াবী আলোর মধ্যে কাশতে কাশতে বাবা
মায়ের উপর উঠে আসে। বুক দুটো চটকায়
বাইরে বিদ্যুৎ খেলে। পাশ ফিরতে গিয়ে
এলারো ভীষণ লোভ হয়। কাল ভোরে মার বুকে একবার
হাত দেবে ঠিক। নরম, তুলোর মত বুক।
মা হাত ছিটকে দেবে, তাও। মাকে ছুঁতে ইচ্ছে হয়না বুঝি?
সকালে থাকে না কেউ। হাঁড়িতে খিচুড়ি থাকে
বারোয়ারি কলঘরে লাইন অনি:শেষ। এলা স্কুলে যায়।)
-মাসি চা নাও। আর এই দেখো
আজ স্কুলে অনিমেষ ঝাল কচুভাজা এনেছিল।
চুপিচুপি আমায় দিয়েছে। যা সব রাক্ষস!
ভাল না?
(মাসি মাথা নাড়ে) খুব ভাল, কতদিন খাইনিরে!
আবার আনিস তো। হ্যাঁরে
অনিমেষ তোকে পছন্দ করে? এটা সেটা
প্রায়ই তো আনিস দেখি। যা না একটু সিনেমা, বেড়াতে
বিয়েটা হলে তোর, মনটায় শান্তি পাই। পড়ালেখা
চাকরি, সবি তো হয়েছে! আমি মলে একা কোথা যাবি!
(তুমি থামো মাসি! ঝির মেয়ে, তার কত শখ!)
আগে মরো, হাড়কটা জুড়োক আমার! তারপর
দেখা যাবে। পেনশনের কাগজটা ভরে রেখো কাল।
একটি ঝিয়ের মেয়ে। একজন রাজকন্যা, শুধু একটু দাগী।
বাইরে বৃষ্টির স্রোতে বয়ে যায় ট্রামরাস্তা ধরে
মরা মায়েদের গল্প, হেঁপো বাবাদের গল্প, পালানোর, পালিয়ে চলার গল্প ক্রমাগত।
হারানো বোনেদের, হারানো ঘরের গল্প। আদিগঙ্গা জেগে ওঠে
এমনই বৃষ্টির রাতে। আলারা বেগম হয় এলা
না হওয়া মায়েরা সব, স্বপ্ন দেখে। মিছে স্বপ্ন, মিঠে স্বপ্ন
(এলা, বুকটা বড় ধড়ফড় করে মাঝে মাঝে)
কই দেখি। (বুকে হাত রাখে এলা)
নরম, তুলোর মত বুক। আজো।
কিলিং ইন্সটিংক্ট
চৈতালী চট্টোপাধ্যায়
--------------
হাত-পা সকলই খুব উতলা করছে।
শরবতে চুমুক দিতে গিয়ে আমি মৃত বালিকার ছায়া দেখে ফেলছি ।
ফোর প্লে খেলব কী,পুরুষাঙ্গ ধরলে বমি পায়।
সারারাত ক্রোধ ছটফট করে,
নিশিযাপনের গলি, নির্জন হাইওয়ে-সফর,সব,
মেয়েদের মৃতদেহে গুম্ মেরে গেছে!
আমিও এখন আর মানুষ নই গো,রক্ত চাইছি।
ফাঁসি হোক,ফাঁসি হোক...ফাঁসি হোক ধর্ষকের –
হৃদয়কে অতি কষ্টে গলা টিপে রাখলাম,
পাছে কথা বলে,
পাছে সে খুনির জন্য গলে যেতে থাকে
পৃথিবী
কল্পর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়
--------------
আমার মৃত্যুর কাল কিছুকাল মনে রাখে ধ্রুবতারা
বাকি ছায়া শিকারীর। চন্দ্রের কিরণ লেগে
নিহতের বেদনায় বাতাস উঠেছে জেগে
প্রেতের প্রত্যাশা নিয়ে, নিচু হিম টিলাটির পাশে
উঁচু গোবরাটে
যদি আজ থেমেছ নিশীথ শীতের পোশাকে
বলো বলো এইভাবে এজীবনে কত আর উপমা সম্ভব
দূরে দূরে ওরা কারা? পানিপ্রার্থী? ছদ্মবেশ
যেভাবে লুকোয় নখ বাঘের থাবায়
মনে হয় ধর্ষিত সুন্দর তুমি খনন চেয়েছ
চেয়েছ সিঞ্চনের মতোন প্রতিভা ব্যাধের
জংশন
হিন্দোল ভট্টাচার্য
--------------
বসন্ত সহসা আসে, দুয়ারে লোকাল ট্রেন যেন
আচমকা সবুজ হয় পতাকা তোমার
নীরব গার্ডের হাতে সমস্ত সিগন্যাল যায় উত্তরের দিকে
রক্তের ভিতরে কোন যাযাবর মনখারাপ করে
খাঁচায় বাঘিনীলোভী একা একা পায়চারির মত?
এও কী আদিম ডাক? সমস্ত ঋতুর যাওয়া আসার ভিতর
কোন সে ইঙ্গিত তুমি ভেবেছ কখনও?
তোমার চোখের মধ্যে লক্ষ লক্ষ বছরের রাস্তা পড়ে আছে।
সুদূর দক্ষিণ থেকে এই হেঁটে আসা
ফুরোবে ভেবেছ? তবু বেহাগে বসন্ত বেজে ওঠে
যখন প্ল্যাটফর্ম ছাড়ে উত্তরের ট্রেন
তুমি থাক একাকী দক্ষিণ।