এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  উৎসব ২০১৩

  • ধৃত-রাষ্ট্রের বালিকারা

    অদিতি ফাল্গুনী লেখকের গ্রাহক হোন
    ইস্পেশাল | উৎসব ২০১৩ | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ | ১১৯২ বার পঠিত
  • এক।।

    দূরে ধৃতরাষ্ট্র বর্মনের বাসায় রাতের হিমে তীক্ষ্ণ, মেয়েলি গলার আর্তনাদে আধা মাইলটাক দূরের কুয়াশা কেটে, বাঁশবাগানের মধ্য দিয়ে নিজের একচালা ঘরের মাটিতে মেয়ে টোকানিকে বুকে চেপে কেঁপে উঠেছিল দুলালী বেওয়া। অন্ধকারে ঘরে ঢুকে পড়ছিল সার সার জোনাক পোকা। ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ।  যাত্রাপালায় দেখা সেই রাজার মতই। অথবা অন্ধ বলেই তার বাবা-মা তাদের ধর্মের এক অন্ধ রাজার নামে তার নাম রেখেছিল। ইসশ্ ছোটবেলায় কত কষ্ট দিয়েছে তারা ধিরতুকে! খেলার মাঠে দুলালীরা কিছু হলেই তাকে গালি দিয়ে বলতো, ‘এই কানা - সরে দাঁড়া!’ ধিরতুকে গালি দিত সবাই। হিন্দু পাড়ার বাচ্চারাও দিত। মুসলমান পাড়ার বাচ্চারাও। তবু বেহায়ার মতো হাতে একটি লাঠি নিয়ে হাতড়াতে হাতড়াতে এসে দাঁড়াত ধিরতু। সবার গালি হাসি মুখে শুনতে শুনতে কাকাতো ভাই সঞ্জয়কে বলতো, ‘সঞ্জয়...এখন কি হবার নাগিছে মোক ক না বাহে!’ সঞ্জয় তখন লাগাতার ছেলেদের বাতাবিলেবু দিয়ে ফুটবল খেলা আর কখনো ছেলে-মেয়েদের মিশ্র কিত কিত খেলার গল্প বলতো। কখনো কখনো সঞ্জয় খেলার কথা জ্যাঠতুতো দাদাকে বলা ছেড়ে দিয়ে নিজেই নেমে পড়তো খেলার মাঠে। আর ধিরতু বলতো, ‘এ্যালা কার পাওত বল? মোক জানা বাহে!’ সঞ্জয় ততক্ষণে হয়তো ডান পায়ে বাতাবীলেবু ঠেলে দৌড়ানো শুরু করছে বা মেয়েদের সাথে কিত কিত খেলার ছড়া পড়ছে, ‘ইচিং বিচিং ঝাঁপিয়া ঝানা/অযুত ছেলের নয়ন কানা!’ সঞ্জয়ের সাড়া-শব্দ না পেয়ে একা একাই এগোনোর চেষ্টা করতে গিয়ে ধিরতু কারোর সাথে ধাক্কা খেলেই আবার শুরু হতো গালি, ‘এই কানা! তোমরা বর্মন পাড়ার চেংড়া-চেংড়িগুলান এই কানাটাকে আনিছ ক্যানো?’ তখন হঠাৎই কোত্থেকে সারাদিন মাছ আর হলুদ হাতে রান্নাঘর থেকে বেরনো ধিরতুর মা...তাদের সন্ধ্যামালতী মাসী...অন্ধকার হয়ে আসা মাঠের সামনে এসে চিৎকার করতো, ‘ভগমান মোকে তুল্যে নিচ্ছে না ক্যানো? ধিরতু...চ্যাংড়া...শরম নাই তোর? কানা চ্যাংড়া...নিলাজ চ্যাংড়া! সবাই কানা কহে তবু শরম নাই?’ চিৎকারের সাথে সাথে ছেলের উপর কখনো হাত দিয়ে আর কখনো উনুনের আধা-জ্বলন্ত, দগদগে কয়লার লাকড়ি দিয়ে চলতো পিটানি। আর অদ্ভুত ব্যপার হলো সবার গালিতেও কষ্ট করে মুখে হাসি ধরে রাখা ধিরতুর চোখ বেয়ে তখন গড়িয়ে পড়তো জল, ‘মোক না মারিস মাও! এ্যালা তোর পাও ধরি ... সবাই কহিলেও তুই মোক কানা না কহিস! মাও রে!’ মাসী মুখ ভেংচাতেন, ‘ওনাক কানা কহিবে না ত’ পদ্মলোচন কহিবে!’ বলতে বলতে আঁচলে চোখ মোছা আর হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে চলা ছেলেকে। পিছ পিছ দুলালীদের দৌড় আর ভেংচি। সেই দৌড়নো আর ভেংচি কাটা ছেলে-মেয়ের দলের সামনে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে, চিৎকার করতে করতে হলুদ আর লাল রঙের অজস্র সন্ধ্যামালতী ফোটা ধিরতুদের বাড়ির সামনে পৌঁছে যেতেন সন্ধ্যামালতী মাসী। আচ্ছা, আল্লাহ কি সেই পাপেই আজ দুলালী বেওয়ার এই হাল করেছেন? মানুষের সব পাপেরই নাকি হিসাব হয়। ছোটবেলায় না বুঝে করা পাপেরও। এক মায়ের মনে কষ্ট দেয়ার পাপেই কি আজ তার এই হাল? থেকে থেকে দূরের হিন্দু পাড়া থেকে কান্নাকাটি আর চিৎকার আসছে! কি এই ইলেকশনও হলো...ভোটে ‘সোনালী শীষ’ জিতিলো কি না জিতিলো ত’ দুই দিন ধরে গ্রামে থেকে থেকে চিৎকার! হিন্দু পাড়াগুলো থেকে শুধু আগুন লাগানোর ধোঁয়া। সেই পোড়াগন্ধ বুঝি তাদের পাড়াতেও এসে নাকে লাগে না? প্রথমে মুসলমান পাড়ার মসজিদ, ফসলী ক্ষেত, গায়ে গা লাগোয়া অবস্থাপন্ন ঘরগুলো হয়ে এই বাঁশবাগানের ভেতর সে একা বিধবা বেটি আর তার বারো বছরের টোকানি...সেখানেও বুঝি আগুনপোড়া গন্ধ নাকে আসে না? পাল পাড়ায় থেকে থেকে মানুষ যাচ্ছে এই পাড়া থেকে লাঠি-সড়কি হাতে। চিৎকার...নারী-পুরুষের কান্নাকাটির শব্দ ত’ না শুনতে চাইলেও কানে আসছে। কিন্তু আজকের চিৎকার যেন সবকিছুর থেকে আলাদা! নাহ্, একা ঘরের ভেতর আর ত’ দুলালী থাকিতে না পারে! মেয়ে মানুষ হয়ে এই চিৎকার সে চেনে। এমন চিৎকার যে ছয় বছর আগে সে-ই করেছিল যখন এক সকালে ও গাঁয়ের সাঁওতাল পাড়ার রঞ্জিতা মুর্মু প্রথমে আর তারপর একে একে আরো কয়েকজন এসে বললো যে দূরে চোদ্দ মাইলের পাশে সকালবেলা পুলিশের গাড়ি থেকে একটা মেয়ের লাশ রেখে গেছে রাস্তায় ভ্যানের উপর। রঞ্জিতা মুর্মু ভোর রাতে সরিষা খেতের আইলে খেজুর গাছের পাশে নিমের দাঁতন দিয়ে দাঁত মাজতে যাবার সময় মেয়েটিকে দেখেছে। গতকাল মাঝরাতে মেয়েটা নাকি চোদ্দমাইলের সামনে চায়ের দোকানে বসেছিল। ঢাকায় এক বাড়িতে সে কাজ করে। বাড়ি তার আশপাশের এক গ্রামেই। শহরে বাসাবাড়িতে নাকি তার হাঁফ ধরছিল। তাই মালিকের বাসায় কিছু না বলে সন্ধ্যার বাসে উঠে পড়ার পর সেখানে একটা হিন্দু ছেলে তার দায়িত্ব নিয়ে তাকে চোদ্দ মাইল অবধি পৌঁছে দেয়। এখানে চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে দোকানের লোকদের সাথে আলাপ করে ছেলেটি ঠিক করে ভোররাত অবধি তারা এখানে থাকবে। ভোর হলেই সে মেয়েটিকে তার মায়ের কাছে পৌঁছে দিয়ে তার নিজের রাস্তায় চলে যাবে। দোকানের লোকরাও তাদের চা আর বিস্কুট দিতে দিতে বলে, ‘সেই ভাল বাহে! ফজরের আজানের ওক্তেই বাহির হইয়া, এ্যালা একখানা ভ্যান গাড়ি ঠিক করিয়া যাইয়ো!’ চায়ের দোকানের লোকেরা ত’ নিশাচর। তারা জানে রাত যত বাড়ে, যত দূরের বাস-ট্রাক-গাড়ির অস্থির সওয়ারিরা আসে, ততই তাদের দোকানে লক্ষ্মীর আনাগোনা। এ শুধুই পৌষ মাসের ফসলী ক্ষেতের উপর দিয়ে লক্ষ্মীপেঁচার ডানায় ভর করা ধনদেবী লক্ষ্মী না, মা লক্ষ্মী এখন কৃষির পাশাপাশি ব্যবসায়ীর দোকানেও পা রাখে। রাতের ক্লান্তি ত’ স্টেশন বা রেল লাইনের পাশের ক্ষুদে দোকানীদের কাটাতে হয় দূর-দূরান্তের যাত্রীদের চলার পথের বিচিত্র নানা গল্প শুনেই। আজ রাতটা এমনি নতুন দুই অতিথির গল্প শোনা যায় না হোক। তা’ এমন সময় এক পুলিশের ভ্যান নাকি চায়ের দোকানের সামনে নেমে, অতগুলো ছেলের ভেতর একটি মেয়েকে দেখে, জিজ্ঞাসাবাদ করে আর সব গল্প শুনে বলে যে তারা মেয়েটিকে তাদের জিপে তুলে তার বাড়ি পৌঁছে দেবে। তখন চায়ের দোকানের মানুষদের কেমন ভয় ভয় হয়। কিন্তÍ তারা পরমূহুর্তেই সে ভয় ঝেড়ে ফেলে ভাবে যে পুলিশের গাড়িতে ভালভাবে বাড়ি পৌঁছে গেলে ক্ষতি কি?

    নাহ্...আর ভাবিবে না দুলালী বেওয়া! আর কিছু মনে করিবে না! টোকানি তখন ছয় বছরের। টোকানির হাত ধরে সে, রঞ্জিতা মুর্মু আর ধিরতুর বউ শান্তি কুমারী বর্মন মিলে ছুটেছিল চোদ্দ মাইল মূল সড়কের সামনে। সেখানে তার বড় বেটি কুড়ানী যে ছিল। ভ্যানগাড়ির উপর হাত-পা মেলে। মুখে রক্ত। টোকানি হাতে তালি দিয়ে বলেছিল, ‘বুবু- বুবু এ্যাংকা ঘুমায় রছে, মাও!’ আর তখন মেয়ের সদ্য ওঠা দুই কিশোরী বুকের মাঝে মুখ গুঁজে সে যেমন চিৎকার করেছিল, তেমন চিৎকারই কি ভেসে আসছে বর্মন পাড়া থেকে? কার্তিকের দুপুরে চিল ছানা হারিয়ে ফেলা সোনালী রঙা মা চিলের আর্তনাদের মত?  টোকানি ঘুমে কাদা। মেয়েকে ঘুম থেকে তুলে মা-মেয়ে এক সাথে ছুটবে নাকি দুলালী একাই যাবে? আল্লা চাহে ত’ টোকানির কোন ক্ষতি হবে না। কোন বাঘডাঁশ এসে তার এই হাঁসের ছানার মত মেয়ের পালকে কামড় দেবে না! আল্লাহ চাহে তো? বাইরে থেকে শেকল তুলে দিয়ে সেই মাঝ রাতে সে ছুটেছিল শান্তি-ধিরতুদের বাড়ি। শান্তি দুলালীর ছোট বেলার সই। মাটির শিব গড়ে ভাল বরের পূজা করতে করতেই ধিরতুকে তার ভাল লেগেছিল। শান্তির বিবাহ ঠিক হয়েছিল অংপুর শহরে ‘নিউ লক্ষ্মী বস্ত্রভান্ডার’-এর আড়তদার লক্ষ্মীনারায়ণ বর্মনের সাথে। কিন্তু অন্ধ হলেও দারুণ ফর্সা ধিরতুর কম্পনহীন সবুজাভ-নীলচে চোখের মণি, একহারা দীর্ঘ গড়ন টেনেছিল শান্তিকে। গায়ে হলুদের সন্ধ্যায় হবু শাশুড়ি সন্ধ্যামালতী মাসীর পায়ে পড়ে সে কেঁদেছিল। পাজি দুলালীরা এ নিয়ে শান্তি কুমারীকেও কম কথা শুনায় নি, ‘তুই এ্যালা গান্ধারির মতো চোখে একখান কাপড় বান্ধিব্যি শান্তি? তোর বরের যে চক্ষু নাই! গান্ধারির মত একশ’ চ্যাংড়ার মা হবি?’ শান্তি কুমারী এ কথার উত্তরে হাত জোড়া করে কপালের কাছে নমস্কার করে বলতো, ‘ওনারা স্বর্গের দেবী।’


    দুই।।

    শান্তি-ধিরতুদের বাড়ির সামনে গিয়ে দুলালী বেওয়া যত অবাক হয়েছিল তত অবাক নিজের গর্ভের বেটি কুড়ানীকে ভ্যানের উপর মৃত, নিষ্পন্দ শুয়ে থাকতে দেখেও সে হয় নি। ইউনিয়ন পরিষদের ‘সোনালী শীষ’ দলের মেম্বারের ছেলে, ‘তুলাদন্ড’ দলের উপজেলা চেয়ারম্যানের দুই ভাইপো আর আরো একদল ছেলে মিলে শান্তিকুমারীর মেয়ে জ্যোৎস্না রাণীকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তাদেরই ঘরের ভেতরে। ঘরের বাইরে অগ্রহায়ণ মাসের হিমে যাত্রাপালার অন্ধ রাজার মত বসে আছে ধিরতু। বাপের রং আর কটা চোখের মণিতে শ্যামলা মায়ের চঞ্চল চাহনীর জ্যোৎস্নার মুখে কাপড় গোঁজা। আর শান্তিকুমারী থেকে থেকে কাঁদতে কাঁদতে, ছেলের বয়সী এক/একজনের হাত-পা ধরে বলছে, ‘বাপেরা...তোমরা একজন একজন করিয়া যান! মোর চেংড়িখানা ছোট!’ দুলালী বেওয়ার মাথায় তখন ট্রেনের হুইসেল বাজার মত সশব্দ কম্পন অভিঘাতে বহু আগে গ-গোলের সালটায় নানা বাড়িতে ছোট খালাকে টানতে থাকা একদল লম্বা গোরা খানসেনার কথা মনে পড়েছিল। তখন কত বয়স তার? বছর নয়? আহ্, এইভাবেই... এইভাবেই বুঝি তিনটা পুলিশ মিলে চৌদ্দ মাইলের চায়ের দোকানের সামনে থেকে তার চেংড়িটাকে জিপগাড়িতে তুলে...ধিরতু, ত্ইু না বাপ? তুই না শান্তির মরদ? আমার মরদখান না হয় বহুকাল হয় মরিয়াছে।

    ‘তোর বেটাখান কোথায়?’ শান্তিকে ভয় পাওয়া গলায় ফিসফিসিয়ে শুধিয়েছিল সে।

    ‘অংপুর শহরত। চায়ের দোকানে কাম করে না উ?’

    ‘কাল সকালত থানায় যাওয়া নাগিবে। শান্তি?’

    শান্তির গায়ে জোর ঝাঁকুনি দিলেও শান্তি কিছু বলে না। আর ধিরতু...নাহ...ছোটবেলার মত কাকাতো ভাই সঞ্জয়ের কাছে সে বাতাবীলেবুর ফুটবল খেলার বর্ণনা শুনতে চায় না। যাত্রাপালার সেই অন্ধ রাজার মতো জোর গলায় জিজ্ঞাসা করে না, ‘ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে সমাগত কৌরব পাণ্ডব/ বিস্তারিয়া বলো সঞ্জয়/ পুরাও এই অন্ধের অভিলাষ!’ ও ধিরতু, তুই কিছু দেখিবার পাও না কেন? তোরই ঘরে তোর বেটির কাপড়খান বিবস্ত্র করিছে  ‘সোনালী শীষ’ আর ‘তুলাদণ্ড’ পার্টির চেংড়ারা...তুই কিছু কহিস না...আমার বেটিটার কাপড় খুলিয়া জিপগাড়িতে উকে ভোগ করিয়া খুন করিলো তিন পুলিশ...তুই কিছু কহিস না...তোর অন্ধ চোখে তুই কিছু দেখিবার না পাও...গণ্ডগোলের বছরে ছোট খালাকে তুলিয়া নিয়াছিল আ (রা)জাকার আর খানেরা...ছোটখালার লাশ ভাসিয়া উঠিয়াছিল ধরলার পানিত...তবু তুই কিছু কহিলি না...তুই এ্যাংকা কানা সেই কানাই রহিলি... 

    ‘রাজা ধৃতরাষ্ট্র! শ্বশুর মম,
    কহি আমি দ্রৌপদী তব কুলনারী!
    দুঃশাসনেরে ফিরাও আজিকে...
    নয় ভস্ম হইবে এ হস্তিনাপুর নগরী!’

    এক হাতে শাড়ির আঁচল বুকে চেপে ধরতে ধরতে জোর গলায় পার্ট বলতো যাত্রার দ্রৌপদীরা! দু:শাসন, দূর্যোধন, শকুনী আর কর্ণের হাসি আর দ্রৌপদীর শাড়ি ধরে টান। ছেলেদের শিস। আজ কত বছর যাত্রা হয় না! হুজুররা বলে যাত্রা দেখা গুনাহ। যাত্রা শেষে প্যান্ডেলের পেছনে হেরোইনের ফলস বুক ফেলে বিড়িতে টান দেখার দৃশ্য অবাক চোখে দেখে দুলারী বেওয়া ভাবত মা-চাচীরা তাদের জিনিসগুলো দিনের শেষে এক টানে ফেলে দিলেই পারে!

     

    তিন।।

    ধিরতু, শান্তি কুমারী, সাত দিন রক্ত শরীরে শুয়ে থাকা জ্যোৎস্না আর অংপুর শহর থেকে খবর পেয়ে আসা ভাই শ্যামল সাত দিন পরই বর্ডারের রাস্তায় পাড়ি দিয়েছিল। জ্যোৎস্নাকে নিয়ে থানায় যেতে শান্তিকে রাজি করিয়েছিল দুলালীই, ‘হামার কুড়ানীর ইজ্জত নিলো পুলিশ। খুন হইলো। তবু এ্যালা মুই বিচার পাইছু। আজার কুর্টে বিচারখান দিতে হবে তোমাক।’ নাহৃদুলালী বেগমের কেস পুলিশ নিলেও শান্তি কুমারী আর তার মেয়ে জ্যোৎস্নার কেস পুলিশ নিলই না! গাঁয়ের লোকে বলে শান্তি কুমারীরা ফি ইলেকশনে ‘নৌযান’কে ভোট দেয় বলেই ‘সোনালী শীষ’ আর ‘তুলাদণ্ডে’র লোকেরা তাদের উপর এত গোঁসা! তাই পুলিশ তাদের কেস নেয় না। কারণ সরকার এখন ‘সোনালী শীষ’ আর ‘তুলাদণ্ডে’র। ছোট খালাকে খানেদের হাতে তুলে দেওয়া আয়নাল আজাকার এখন ‘তুলাদণ্ড’ দলের উপজেলা চেয়ারম্যান। ‘সোনালী শীষ’ আর ‘তুলাদণ্ডের’ সরকার এলেই বর্মন পাড়া যে খালি হতে থাকে, তা’ বুঝি দুলালী বেওয়া জানে না? তা’ ভালয় ভালয় উহারা সকলে কুচবিহার পৌঁছাক। বর্ডার পার ত’ কি? ওপারের নদী করলা আর এপারের নদী ধরলা। ধরলা করলা দুইটি গাঙ যেন দুইটি বোন। একই তিস্তার চর ওপারেও, এপারেও। করলা যেন শান্তিকুমারী আর ধরলা সে দুলালী বেওয়া। যাত্রাপালার বিধবা রাণী কুন্তির মতোই সে বেওয়া। আর শান্তিকুমারীর স্বামী গান্ধারির স্বামীর মতই অন্ধ। ওপারে যেন শান্তি বাকি জীবনটা কোনমতে কাটাইয়া দেয়। এপারে সে তার মেয়ে টোকানিকে বড় করিতে থাকুক।

    ‘তুই মাও রোজ বর্ডারখান পার হও, মোর বড় ডর লাগে!’

    ‘ডর কিবা মাও? বর্ডারখান পার হয়্যা ম্ইু ওপারের মহাজনদের ভাত রান্ধিবার কাম করি। বেলা গেলে আবার এপারে ফিরিয়া আসি। কাম না করিলে খাব কী মাও?’

    দুলালী বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়ের পাতে ভাত আর মরিচ ভর্তা তুলে দেয়, ‘কয় বছর আগত শ্যামলরা যখন ওপারত যাবা নিছিল তখন কাঁটাতারের ওপারত পুলিশ এপারত জ্যোৎস্না চেংড়িটাক গুলি করে।’

    ‘তারা না হিন্দু?’

    ‘শান্তির হাতত শাঁখা-সিঁন্দুর থাকিলেও এপারের বেটাগুলার ভয়ে শাঁখা-সিঁন্দুর খুলিছে আর মুছিছে...জ্যোৎস্না মাথাত তোর মত ছিল...সেলোয়ার কামিজ পিন্ধনে...বিএসএফ গুলি করিবার নাগিছে...শরীরে বল পাও নাই...এ্যালা লুটাইয়া পড়িছে...ওপারত শ্মশানে দাহ করিছে...শ্যামল গত বছরত আসিয়া জানাইছে মোরে...শান্তির মাথা নষ্ট! ধিরতু...তোর ধিরতু কাকা ত’ জন্ম কাণা!’

    ‘ডর না করিস মাও! হামি উঁচা উঁচা বরই গাছত বাইবার পাও। এ্যালা পুলিশ গুলি করিতে আসিবেক ত’ ম্ইু কাঁটাতারের উপর উঠিবা নাগিব! মাও?’

    ‘কহো?’

    ‘কত চেংড়িগুলানের কত সোন্দর নাম! মোর নাম টোকানি ক্যানে? বুবুর নাম কুড়ানী?’

    ‘হামার পরথম দুই বেটা হইছিল, কহিছি না? রাজা আর সম্রাট নাম। ওলা বিবির দয়ায় উহারা মরিলো। এ্যালা মোক আর তোর বাবাক সবাই কহিলো কি তোদের ভাল নাম না রাখিতে। য্যান ওলা বিবির নজর না লাগে! ঐ বর্মন পাড়াতও গেছি আর মা শীতলার থানে ফুল-বাতাসা ছিটাবার নাগিছি...য্যানো চেংড়ি দুইটা মোর বাঁচিবারে পাও!’

                    তবু ‘ধৃত-রাষ্ট্রে’র মানুষেরা ‘পাণ্ডু’র রাষ্ট্রে যায়।

    আর ধরলা আর করলা ছিল দুই বোন। দুই শাখা নদী। তারা পরস্পর গলাগলি করে বয়ে গেছে বহু বহু যুগ। অথবা তারা ছিল দুই সখী। শান্তিকুমারী বর্মন আর দুলালী বেওয়া। দুলালীর স্বামী মন্তাজের ছিল জন্ডিস। প্রায়ই জন্ডিস হতো তার। মুখ-চোখ ফ্যাকাসে, হলুদ কি রীতিমতো পাণ্ডুর বর্ণ হয়ে থাকত। এক মঙ্গায় অসুখে ভুগে সে মারাই গেল। তাকে বাঁচাতে অনেক চেষ্টা করেছে কুন্তী...উঁহু...না, দুলালী! গেণ্ডারির রস, গলায় ফকির-সন্ন্যাসীর দেওয়া মালা যা ধীরে ধীরে ছোট থেকে বড় হয়...তবু বাঁচে নি। আর গান্ধারি থুক্কু শান্তিকুমারীর স্বামী ধৃতরাষ্ট্র ছিল ‘জন্মান্ধ।’ মহাকবি ব্যাসদেব বলেন যখন পাণ্ডবেরা হস্তিনাপুর থেকে বিতাড়িত হয়ে ময়দানবের সাহায্যে খান্ডবদাহনের মাধ্যমে ‘ইন্দ্রপ্রস্থ’ নগরী তৈরি করলেন, তখন থেকেই ‘ধৃত-রাষ্ট্র’ আর ‘পাণ্ডু’পুত্রদের বা ‘পাণ্ডু’র রাষ্ট্র আলাদা হয়। তারও বহু শতাব্দী পরে মহামতি র‌্যাডক্লিফ বাসনা করলেন যে এ অঞ্চলের সকল নদী, অরণ্য ও মানুষ দ্বি-খন্ডিত হোক। যেন বৃক্ষ, তরুলতা, পশু, পাখি ও পুষ্পসকল ভিন্ন দুই ধর্মের চিহ্নে চিহ্নিত ও স্বতন্ত্র হয়। অনন্তর মানুষের ভাগ ও ধর্মভেদে দেশভাগের পর ফসলী জমি, নদী, বৃক্ষ ও অরণ্যানীর ভাগ হওয়া শুরু হলো। সে ভাগ আজো অবধি শেষ হয় নি। কারণ বস্তুতঃ নদীর প্রান্তে অবিভাজ্য ও অ-বশ্য। ধরলা করলার প্রান্তে মানুষের তৈরি কম্পাস-কাঁটা ও স্কেলের হিসাব প্রায়ই তীব্র আক্রোশে ঠেলে ফেলতে চায়। তখন নদীতে বাঁধ দেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে। অগ্রহায়ণের ধান ক্ষেতে যখন বাতাসের হিল্লোল দেখা দেয়, তখন এক জন্মান্ধ ও এক পাণ্ডুর...এই দুই ভাইয়ের সন্তানদের মাঝে রাষ্ট্রের দখলি স্বত্ত্বের চিহ্ন নিয়ে প্রায়ই ঝামেলা দেখা দেয়। আরো বিশেষতঃ প্রকৃতি ও ধর্ষিতা বা ক্ষুধার্ত বালিকাদের কোন রাষ্ট্রীয় শাসনই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কাজেই ধরলা ও করলা নদী প্রায়ই পরস্পরকে আলিঙ্গন করতে ছোটে। তখন ধর্ম রক্ষার্থে ও আইনের শাসন নিশ্চিত করতে সৈনিকদের জ্যোৎস্না কুমারী বর্মন বা টোকানির মত সীমান্ত না মানা বালিকাদের হত্যা করতে হয়। হত্যা করাটা খুবই জরুরি হয়ে পড়ে। পুলিশের গাড়িতে কুড়ানীর মৃত্যুর পর দেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় জ্যোৎস্না কুমারীর মৃত্যুটা খানিকটা আমাদের চোখের আড়ালেই ঘটে। টোকানির মৃত্যুর দৃশ্য পাণ্ডুরাষ্ট্রের ছবিঅলারা তুলে ফেললে আমাদের ধৃত-রাষ্ট্রেও খুব হৈ চৈ পড়ে যায়। মিডিয়াগুলো সরব হয়ে ওঠে। ফেসবুকের সামনে কফি কাপ হাতে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাই। আমরা হস্তিনাপুরে ইন্দ্রপ্রস্থের অর্থাৎ ধৃত-রাষ্ট্রের রাজধানীতে পাণ্ডুরাষ্ট্রের হাইকমিশন যে সড়কে অবস্থিত, সেই সড়কের নাম ‘টোকানি’ সড়ক রাখতে চাই। তখন কেউ কেউ জ্যোৎস্না কুমারী আর কুড়ানীর কথা তুলে বলে তাহলে ত’ তাদের নামেও সড়কের নাম হওয়া উচিত। গবেষকরা গবেষণা শুরু করেন যে কেন দেশে খাবারের ফলন আগের চেয়ে অনেক ভাল হওয়া সত্ত্বেও এখনো ধৃত-রাষ্ট্রের বালিকারা ভাত রেঁধে মাস শেষে বেতনের আশায় কাঁটাতার ডিঙ্গিয়ে পাণ্ডু-রাষ্ট্রে যায়। আমরা নিজেদের নিজেরা প্রশ্ন করি যে  ‘মহাভারতে’র ধৃতরাষ্ট্র কি আসলে ‘ধৃত-রাষ্ট্র’? এবং ‘ধৃত-রাষ্ট্র’ অর্থ কি ‘অন্ধ রাষ্ট্র’ যার প্রিয়জনেরা কেউ শকুনি আর কেউ দুঃশাসন? আমরা তখন সফোক্লেসের ‘অয়দিপাউস’ নাটকে মাতৃসম্ভোগকারী রাজা অয়দিপাউসের চোখে মা তথা স্ত্রীর চুলের কাঁটা বিঁধিয়ে অন্ধ হওয়ার দৃশ্যের সাথে সাথে মর্মভেদী আর্তনাদ ‘আর কোন যন্ত্রণা দেখতে হবে না তোমায়/ এই মূহুর্ত থেকে তুমি অন্ধ/ এই মূহুর্ত থেকে তুমি চির অন্ধকারে’) ও ‘মহাভারতে’র অংশ বিশেষ অর্থাৎ ‘শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতা’র প্রথম অধ্যায়ে সঞ্জয়ের কাছে অন্ধ সম্রাট ধৃতরাষ্ট্রের যুদ্ধক্ষেত্রের অবস্থান জানতে চাওয়া শ্লোকটি আন্ডারলাইন করি (ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে সমবেতা যুযুৎসবঃ/ মামকাঃ পান্ডবাশ্চৈব কিমকুর্বত সঞ্জয়...) আর এই ধৃত-রাষ্ট্রের অগণিত ক্ষুধার্ত ও ধষির্তা বালিকারা ধৃত ও পাণ্ডু রাষ্ট্রের মধ্যবর্তী বৈদ্যুতিক কাঁটাতারে প্রকাণ্ড পেন্ডুলাম ঘড়ির মত অনিবার্য দুলতে থাকে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ | ১১৯২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • sosen | ***:*** | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ ০১:২১77916
  • আবার পড়তে হবে।
  • sosen | ***:*** | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ ০১:২৬77917
  • মিশ্রণ বড় স্মুথ হয়নি, তৃতীয়বারের পড়ায় মনে হলো। কিন্তু এই লাইন-"বাপেরা...তোমরা একজন একজন করিয়া যান! মোর চেংড়িখানা ছোট!’ " মাথার মধ্যে ঘুরছে।
  • | ***:*** | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ ০১:২৯77918
  • ওটা হুমায়ুন আজাদের একটা অতি বিখ্যাত লাইন, একটু রিফ্রেজ করা।
  • sosen | ***:*** | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ ০১:৩২77919
  • দমুদি-একটু সোর্স দাও।
  • aranya | ***:*** | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ ০১:৪৪77920
  • পাক সার জমিন সাদ বাদ - হুমায়ুন আজাদের
  • sosen | ***:*** | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ ০২:০৩77921
  • থ্যাঙ্ক ইউ অরণ্য দা, শুধু নাম -ই জানি-পড়িনি ; কেন কে জানে। পড়ি-
  • I | ***:*** | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ ০৪:৪২77922
  • আমার খুব ভালো লেগেছে। ঐ ডায়ালেক্টের ব্যবহার !
  • সে | ***:*** | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ ০৫:৪৫77914
  • চমৎকার।
  • aranya | ***:*** | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ ০৬:২৯77923
  • শাহবাগ আন্দোলনের সময় মনে হচ্ছিল দেশ এবার ঠিক পথে চলছে, সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার কমবে, জানি না ভবিষ্যতে কি আছে ...
    অদিতির লেখাটি খুবই ভাল লেগেছে, যদি 'ভাল' শব্দ-টা মন খারাপের লেখার জন্য ও ব্যবহার করা যায়
  • nina | ***:*** | ১৫ অক্টোবর ২০১৩ ১২:৫০77915
  • খুব ভাল লাগল---আবার পড়ব।
  • Kaushik Ghosh | ***:*** | ১৭ অক্টোবর ২০১৩ ০২:৫৩77924
  • অসাধারন লেখা!

    থাপ্পড় মেরে বাস্তবের সামনে দাঁড় করায়। অদিতি কে আমার সেলাম।
  • aranya | ***:*** | ১৭ অক্টোবর ২০১৩ ০৩:১৭77925
  • হুমায়ুন আজাদ-কে মৌলাবাদীরা কুপিয়ে প্রায় মেরেই ফেলেছিল, পাক সার জমিন সাদ বাদ বইটি তার ওপর আক্রমণের একটি বড় কারণ।
    পরে জার্মানীতে মারা যান, অনেকে বলে বাংলাদেশী মৌলবাদীরাই জার্মানীতে গিয়ে ওঁকে হত্যা করে
  • Audity Falguni | ***:*** | ১৭ অক্টোবর ২০১৩ ০৩:৪৮77926
  • Dear Readers, thanks for your comments! No, Humayun Azad did not write any line out of imagination. He used it from a newspaper reporting. Mother of a Hindu teenaged girl urged the gang rapists in 2001 to go one by one to her daughter as she is too minor.

    I have another novella "Troy Shahar er Meyera" where a college teacher's wife-sister-daughter get raped (it's also from real life newspaper reporting). The college teacher was just translating "Trojan Women" by Euripides where the plight of rape and sexual slavery of Trojan women at hands of Greek soldiers was narrated.

    Again many thanks to Ipsita, Guruchandali and the readers!
  • Wriju Roy | ***:*** | ১৭ অক্টোবর ২০১৩ ০৪:১১77927
  • গল্পটি ভালো৷ বিষয় বেছে নেওয়া হয়েছে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী থেকে৷ যা আসলে অনেকটা সংবাদপত্রের ধাঁচ৷ যদিও রাজনৈতিক বক্তব্য বা অভিযোগ সেভাবে পরিস্ফুটন পেয়েছে বলে মনে হলনা৷ তবে একটা বিষয় স্পষ্ট, নারী দৃষ্টিভঙ্গীর বিকাশ বড় চমৎকার৷
  • JAHAN | ***:*** | ১৮ অক্টোবর ২০১৩ ১২:২০77928
  • পাঠককে দর্শকের আসনে রেখে রিপোর্টিং এর আঙ্গিকে সমাজের হত দরিদ্র পশু সুলভ মননশীলতার সাথে লেখকের কথোপকথন ...........কি বিবেককে কিছুক্ষণ হলেও মেরুদন্ডবিহীন করে ফ্যালে না ? সেখানেই তো লেখনীর দৃঢ়তা,..
  • i | ***:*** | ২৫ অক্টোবর ২০১৩ ১০:১১77929
  • তীক্ষ্ণ লেখা। আমার মত সাধারণ পাঠকের মতে ধার বহুগুণে বাড়তে যদি লেখাটি আরও বিস্তার পেত। স্বল্প পরিসরে বহু কিছুর সমাহারে তীক্ষ্ণতা হ্রাস পেয়েছে -মনে হল।
  • i | ***:*** | ২৫ অক্টোবর ২০১৩ ১০:১২77930
  • * ধার বহুগুণে বাড়ত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন