এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  অপর বাংলা

  • স্মৃতিতে শিলাইদহ

    মেঘ অদিতি লেখকের গ্রাহক হোন
    অপর বাংলা | ০৮ আগস্ট ২০১১ | ১০৩৯ বার পঠিত
  • বয়স যখন মাত্র তিন অর্থাৎ বোল ফুটেছে মুখে, তখন দিদিদের পাশে বসে চুষিকাঠির ফাঁক গলে আধো আধো বোলে যে গান গেয়ে উঠতাম তা নাকি ওদের কাছ থেকে শুনতে শুনতে শেখা রবীন্দ্রসঙ্গীত, বড় হতে হতে এরকমই শুনেছি। প্রথম স্টেজে ওঠার বয়স পাঁচ, তারপর যত দিন গেছে তত মনের মধ্যে কবিগুরুর অবস্থান আরও দৃঢ় হয়েছে। গান, কবিতা বা ছোট গল্প অথবা তাঁর উপন্যাস যাই হোক না কেন আমি তাতে ডুবে যেতে শিখে গেছি অনায়াসে। ২০০৮ এর নভেম্বর, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়এর "মনের মানুষ' পড়ে শেষ করেছি, শেষ করা মাত্রই ভেতর থেকে টের পেলাম কুষ্টিয়া যাবার চোরাটান। শুধু শিলাইদহ না, লালনের ছেউড়িয়াও আমাকে গভীরভাবে টানছিল। কিছুদিন আগে কবিগুরুর পূর্ববঙ্গে থাকাকালীন সময়ে তাঁর রচনাবলী নিয়ে ব্লগস্পটে শুরু করেছিলাম একটি ব্লগ "তুমি রবে নীরবে' যা করতে গিয়ে আমার কেবলই মনে হয়েছে এসব জায়গা নিজে না দেখে এলে এই কাজে আমার হৃদয়ের ছোঁয়া কখনও পাবে না। এইসব ভাবনাচিন্তায় জলহাওয়া দেবার কাজটি করল সেই উপন্যাস "মনের মানুষ'। দিনরাত তখন আমার একটাই চিন্তা আমাকে কুষ্টিয়া যেতে হবে।নভেম্বরের শেষদিকে একদিন টুপ করে এসেও গেল সেই সুযোগ আর অমনি তাকে মুঠোবন্দী করে ফেললাম।

    ২৮ নভেম্বর ২০০৮, সক্কালে ঢাকা থেকে বেরিয়ে গেলাম কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে। ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ার দূরত্ব সড়কপথে ২৭৭ কিমি, আনুমানিক সময় পাঁচঘন্টার কিছু বেশী লাগে। ঢাকার কল্যানপুর ও গাবতলীতে রয়েছে কুষ্টিয়া যাবার বাস কাউন্টার। এছাড়া কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সুন্দরবন ও ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে চিত্রা ট্রেনে যাওয়া যেতে পারে। রেলপথে গেলে কুষ্টিয়ার অদূরে অবস?হিত পোরাদহ রেল স্টেশনে নেমে বাসে করে শহরে যেতে হয়। আমরা নিজস্ব গাড়ি করেই বেরিয়েছিলাম। দেখতে দেখতে কখন যেন যমুনা সেতু পার হয়ে সামনে এগিয়ে চলেছি, চারদিকে কত রকমের সবুজ একেবারে চোখ জুড়িয়ে দেয়। দিগন্তরেখায় নীল আর সবুজের জাদুকরী ছোঁয়া মনকে আকুল করে তোলে। ভেড়ামারাতে দাঁড়িয়ে পাশাপাশি দেশের বৃহত্তম রেল সেতু হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম লালন শাহ সেতু। লালন শাহ সেতু পার হয়ে তারপর কুষ্টিয়ার পথ ধরে সামনে এগিয়ে চলা। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো, পথে খানা খন্দ কোথাও পড়েনি, ফেরী ঘাটে নামা নেই, নেই কোনো রাস্তার ক্লান্তিও, লালন শাহ সেতুটি চমৎকার। নভেম্বরের মিঠে রোদ মাখা দিনে এক সময় পৌঁছে গেলাম বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী নামে খ্যাত কুষ্টিয়ায়।

    কুষ্টিয়া শহরে দাঁড়িয়ে টেগোর লজ
    কুষ্টিয়া পৌঁছে সিধে চলে গেলাম পৌরসভা অফিসে। উদ্দেশ্য মেয়রের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ কেননা ঢাকা থেকে আমরা প্রথম যোগাযোগ করেছিলাম তাঁর সাথেই। অত্যন্ত অমায়িক এই ভদ্রলোক নিজে আমাদের গাইড করে ঘুরে ঘুরে দেখান কুষ্টিয়া পৌরসভা ভবন যা ১৮৮৬ সালে নির্মিত ও কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়ায় অবস্থিত টেগোর লজ । টেগোর লজে ঢোকার মুখেই চোখ পড়বে টেগোর লজের ফটকের একটিতে লেখা টেগোর লজ আরেকটিতে লেখা আছে কুষ্টিয়া কুঠিবাড়ি। দালানের আগেকার সেই লালচে রঙ আর খিলানের নকশা ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। একতলা থেকে দোতলায় ওঠার ঘোরানো সিঁড়ি। ল্যান্ডিংএ রাখা আছে কবিগুরুর বিশাল তৈলচিত্র। দোতলায় উঠেই যে ঘরটি সামনে পড়ে সেখানকার জানলার কপাটগুলো খোলা। ঘরে পা রাখতেই ঝিরঝিরে হাওয়া গায়ে এসে পরশ বুলিয়ে দিল মনে হলো কে যেন এইমাত্র এই ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে। বারান্দায় গোল টেবিল আর চেয়ার পাতা। দুপুরের রোদ কিছু এসে চেয়ার ছুঁয়েছে আলতো করে, বাকি রোদ লুটোপুটি খাচ্ছে মেঝেতে। হঠাৎ ঘোর জাগা মন বলে ওঠে এখুনি তিনি এসে বসবেন এখানে।


    টেগোর লজ সামনে থেকে


    ভেতরদিক


    দোতলার বারান্দায়

    বৃটিশ শাসনকালে কুষ্টিয়া শিল্প-কারখানার জন্য আদর্শ স্থান বলে তখন বিবেচিত হয়েছিল।১৮৬০ সালে তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কলকাতা থেকে কুষ্টিয়ায় সরাসরি রেললাইন স্থাপিত করে।১৮৯০ সালের শেষ ভাগে জমিদারির পাশাপাশি ঠাকুর পরিবারের ব্যবসা পরিচালনার জন্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কুষ্টিয়া রেলস্টেশনের দক্ষিণ পাশে "টেগোর লজ' নামে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। রেলস্টেশনের পাশে অর্থাৎ কবিগুরুর কলকাতা যাতায়াতের পথে টেগোরলজ নামের দোতলা বাড়িটিতে তিনি মাঝে মাঝে এসে থাকতেন। ভুসিমাল ও পাটের কারবারের জন্য কবিগুরু এখানে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন "টেগোর অ্যান্ড কোম্পানী'। ভুসিমালের কারবারের সঙ্গে এখানে কবি আখ মাড়াইকল ও পাটের গাঁট তৈরির কলও স্থাপন করেছিলেন। অনেক পরে তিনি খুলনার দক্ষিণডিহির শ্বশুরপক্ষের আত্মীয় যজ্ঞেশ্বরকে ব্যবসা দেখাশোনার দায়িত্ব দেন। পরবর্তীতে তিনি যজ্ঞেশ্বরকেই কোম্পানির সমুদয় যন্ত্রপাতি ও মালামাল দান করে দেন এবং টেগোরলজসহ এখানকার দুই বিঘা জমি বছরে ৫০ টাকা খাজনার বিনিময়ে বন্দোবস্ত করে দেন। পরে যজ্ঞেশ্বর এখানে "যজ্ঞেশ্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস' নামে একটি কারখানা গড়ে তোলেন যে কারখানা ভবনটি এখনও আছে।


    কারখানা

    এবার শিলাইদহের দিকে যাত্রা
    কুষ্টিয়া শহর থেকে মাত্র কুড়ি মিনিটের পথ শিলাইদহ কুঠিবাড়ি। দেখতে দেখতে গ্রামের রাস্তার আঁকাবাঁকা পথ ধরে ঢুকতে থাকলাম প্রাচীন শহর কুমারখালী উপজেলায় অবস্থিত শিলাইদহ কুঠিবাড়ির দিকে। একসময় গ্রামটির নাম ছিল খোরশেদপুর। এই গ্রাম ঠাকুররা কিনে নেওয়ার আগে এখানে একটি নীল কুঠি ছিল। প্রবাদ এই যে সেই কুঠিতে শেলী নামের এক নীলকর সাহেব ছিল। পদ্মা ও গড়াই নদীর সঙ্গমস্থলে একটি দহ সৃষ্টি হয়েছিল, সেই দহর সঙ্গে শেলীর নাম জুড়ে গ্রামটির নাম দাঁড়ালো শেলীদহ বা শিলাইদহ। ঠাকুরদের জমিদারী দেখাশোনা করার জন্য সেকালে শিলাইদহ, পতিসর ও শাহাজাদপুরে কুঠিবাড়ি ও কাছারিবাড়ি নির্মিত হয়,এরই একটি কুঠিবাড়ি এই শিলাইদহ কুঠিবাড়ি। কবিগুরু ১৮৯৯ ও ১৮৯০ সালে জমিদারী পরিদর্শনে এলেও ১৮৯১ সালে শিলাইদহে জমিদারী পরিচালনার দায়িত্ব নেন। কুঠিবাড়ি পৌঁছানো মাত্রই আমাদের জানানো হল কুঠিবাড়িতে ঢোকার আগে কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়রের নির্দেশে কুঠিবাড়ির কাছাকাছি অন্য একটি ভবনে আমাদের জন্য দুপুরের খাবারের যে আয়োজন করা হয়েছে তা সেরে নিতে। পেটে খিদে থাকলেও মন কিন্তু পড়ে আছে কুঠিবাড়ির দিকে। কোনোরকম দুগাল খেয়েই দৌড়ে ঢুকেছি সেখানে। দূর থেকেই ছিমছাম ভাবটি চোখে পড়ার মত। পদ্মার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা এই মূলভবনটির পূর্বের রঙ আর নেই, এখন তা ঘিয়ে সাদা রঙের। চারদিকে প্রচুর গাছপালা, আমবাগান, পুকুরঘাট, সব ঝকঝকে তকতকে করে রাখা হয়েছে। ৯.৯৩ একর জমির উপর এর অবস্থান। প্রধান ফটক থেকে ডানদিকে দেখি বেশ বড় একটা বাঁধানো জায়গা, জানা গেল কবিগুরুর গৃহবিদ্যালয়টি এখানেই ছিল। গৃহবিদ্যালয় শব্দটি এলই যখন, তখন "শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ' থেকে প্রমথনাথ বিশীর এই অংশটুকু উদ্ধৃতি না দিয়ে পারা গেল না- "বাল্যকালে বিদ্যালয়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা কবি ভোলেননি, তাই তিনি নিরস্ত হয়েছিলেন ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে। কিন্তু শিক্ষা তো দিতে হবে। তখন প্রতিষ্ঠা করলেন গৃহ বিদ্যালয়ের। গৃহ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে যাদের নাম আসে: লরেন্স নামের একজন ইংরেজী শিক্ষক, সংস্কৃত শিক্ষক শিবধন বিদ্যার্ণব, গণিত শিক্ষক জগদানন্দ রায়। সূক্ষ্মে নামলে দেখা যাবে এর প্রাণ ও প্রধান শিক্ষক স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। তিনি ছাত্রদের পড়াতেন বাংলা আর শিক্ষকদের শেখাতেন শিক্ষাদানের নতুন পদ্ধতি।
    অবিনবত্ব এই যে গৃহবিদ্যালয়টি একই সংগে গৃহ ও বিদ্যালয়,গৃহবিশেষে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় নয়।'



    কুঠিবাড়ি


    গৃহবিদ্যালয়

    অদূরে দাড়িয়ে আছে কুঠিবাড়ি মূলভবন। ধীরপায়ে এগোতে থাকলাম সেদিকে। হঠাৎ মনে হতে সাথের লোককে জিগ্যেস করলাম ক্যামেরা ঠিক আছে তো। সে যা জানাল তাতে আমার আক্কেল গুড়ুম, টেগোর লজের ছবি তুলতেই নাকি ব্যাটারির চার্জ খতম। এখন উপায়! গেটের বাইরে দেখে এসেছি ছোটো ছোটো খুচরো দোকানে ম্যালাই জিনিষপত্তর। ছুটলাম সেদিকে, খুজেঁপেতে দুখানা ব্যাটারি কপালে জুটলে ফের দৌড় কুঠিবাড়িতে। সেখানকার গাইড ততক্ষণে আমবাগান দেখিয়ে "দুই বিঘা জমি' থেকে আবৃত্তি শুরু করেছে।

    ধীর পায়ে সামনে এগোতে এগোতে মনে এলো এখানে বসে কত সৃষ্টিই যে কবিগুরু করেছেন। প্রমথনাথ বিশীর কথা আবার টানছি। তাঁর ভাষায়: "রবীন্দ্রজীবনের কিঞ্চিদধিক আশী বছর কালকে আটটি দশকে ভাগ করে বিচার করলে দেখা যাবে যে আলোচ্য চতুর্থ দশকটি তার কবিজীবনের সফলতম কাল। "সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালি, কণিকা, ক্ষণিকা, কল্পনা, কথা, নৈবেদ্য, চিত্রাঙ্গদা, মালিনী, গান্ধারীর আবেদন, বিদায় অভিশাপ, কর্ণ-কুন্তি সংবাদ, নরকবাস, সতী, লক্ষীর পরীক্ষা, ছোটগল্পের অনেকগুলি এবং ছিন্নপত্রাবলীর পত্রগুচ্ছ।'

    শিলাইদহ বাসের প্রথম চালানের ফসল "সোনার তরী,চিত্রা,চৈতালি'। তিনখানি কাব্যেই প্রাধান্য পেয়েছে নদী,নৌকা ও মাঝি।"গল্পগুচ্ছ' কবিজীবনের চতুর্থ দশকের বিশিষ্ট ফসল। "ক্ষণিকা, কল্পনা, কথা ও কাহিনী, নৈবেদ্য' শিলাইদহ বাসের শেষ কাব্যফসল। সমস্তই ১৯০০-১৯০১ সালের মধ্যে প্রকাশিত। "কথা ও কাহিনী' কাব্যের কাহিনী অংশের "গানভঙ্গ,পুরাতন ভৃত্য ও দুই বিঘা জমিতে' শিলাইদহ অঞ্চলের প্রত্যক্ষ দর্শন মেলে।

    হাঁটতে হাঁটতে ডানদিক দিয়ে এগিয়ে মোড় ঘুরতেই গাইড দেখাল টেনিস কোর্টের চিহ্ন আর আমার হঠাৎ কেন যেন মনে পড়ে গেল শেষের কবিতা'র কেটি মিত্তির কে। পিছনদিকেই একটা আলাদা করে ঘোরানো সিঁড়ি আছে, কাছাকাছি একলা হয়ে থাকা যে ঘরটি সেটি নাকি রসুই ঘর ছিল।


    টেনিস কোর্ট


    পিছনদিকের সিঁড়ি

    চারপাশ ঘুরে তারপর একতলার ভেতরে ঢুকে দেখি সিন্দুক, এখানেই জমিদারির টাকা জমা পড়ত। কাছারি আর বৈঠকখানা এই একতলায়। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে নজরে এল পালকি, সেটা কজন বেহারার ছিল তা এখন ঠিক করে মনে পড়ছে না। দোতলা জুড়ে বসবার ঘর, শোবার ঘর, খাট পালঙ্ক, টেবিল, চেয়ার, সোফা, কিছু তৈজসপত্র আর আছে পিয়ানো। এক অদ্ভুত অনুভূতিতে ছেয়ে যায় মন।


    সিন্দুক


    দোতলায় ওঠার সিঁড়ি

    পুরোনো জায়গার প্রতি আমার আকর্ষণ বরাবরের কিন্তু এখানে শুধু আকর্ষণ নয়, কাজ করছিল অন্য এক আবেগ- যে আবেগ শিশুকাল থেকে হৃদয়ে বসিয়েছিল তাঁকে, যে আবেগের বশবর্তী হয়ে জোড়াসাঁকোতেও আমি চাতালে বসে পড়ে আকুল হয়ে কেঁদেছিলাম। বারান্দায় বেরিয়ে দেখি বোট। এ সেই বোট যাতে করে কবিগুরু কত সন্ধ্যা কাটিয়েছেন পদ্মার বুকে। বুকে কি যেন ঘাই মেরে ওঠে, তেতলার ওঠার রাস্তা বন্ধ তাই ঘুরে আস্তে আস্তে নেমে আসি নিচে। পুকুরঘাট থেকে ভেসে আসা গানের সুর আমাকে ওইদিকে টেনে নিয়ে যায়।


    বারান্দায় রাখা বোট

    বাঁধানো ঘাটে বসবার জায়গা আছে, সামান্য দূরে ঘোড়া আর তার সহিস অপেক্ষায় যদি কোনো ক্ষুদে দর্শনার্থী ঘোড়ার পিঠে চড়তে চায়। আর সত্যি সত্যি আমার ছেলে সেখানে গিয়েই বায়না ধরল: ঘোড়ায় উঠব। ছেলে আর তার বাবা চলে গেল ঘোড়ার কাছে, আমি বসে রইলাম ঘাটে। একদল বাউল গায়ক সেখানে বসে গান গাইছিল, এদের গানের সুরে সুরেই আমার পুকুরঘাটে আসা। চুপ করে শুনছিলাম গান। জনা ছয়েকের একটা দল, সাথে অল্প বয়সী গায়কও আছে। গানগুলো রবীন্দ্রসঙ্গীতই কিন্তু তার সুর বাউলের গলায় গিয়ে বাউল সুরে পরিবর্তিত হয়ে এমন হয়েছে যে গানগুলো তার স্বকীয়তা হারিয়েছে। কুলফিওয়ালা ঘুরঘুর করছিল আশেপাশে, গান শুনতে শুনতে ওর কাছ থেকে কুলফি কিনে খেলাম। কিছু সময় পর ছেলে এসে হাজির। এবারে তাকে নদী দেখাও। চললাম তাই খুব কাছ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মার কাছে। এই যাওয়ার অবসরে বলি, নতুন করে কিনে আনা ব্যাটারি দিয়ে দুখানা মাত্র ছবি তোলার পরই ক্যামেরা কিন্তু নীরব হয়ে গিয়েছিল, ভেতরে ছবি তোলার নিয়ম নেই তবু বাকী ছবি আমার নকিয়া মিউজিক এক্সপ্রেসে আড়াল করে তুলে নিয়েছিলাম।


    গানের দল

    পদ্মার এপাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম ওপাশে ঝাপসা হয়ে থাকা পাবনাকে। মনে মনে ভাবছিলাম কবে আবার যেতে পারব শাহজাদপুর। সেই ভাবনা আর ভাবনাতেই আবদ্ধ থাকেনি,২০০৯ এ দক্ষিণডিহিতে মৃণালিনী দেবীর পিতৃগৃহ আর ২০১০ এর জানুয়ারীতে আমি শাহজাদপুর কাছাড়িবাড়ি ঘুরে আসার সুযোগ পাই। যারা এখনও দেখেননি তাদেরকে বলি সময় সুযোগ করে একবারটি শিলাইদহ, শাহজাদপুর, পতিসর আর দক্ষিণডিহি ঘুরে আসবেন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • অপর বাংলা | ০৮ আগস্ট ২০১১ | ১০৩৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন