
লকডাউন বিষয়ে কিছু কথা বলে নেওয়া যাক -
১. লকডাউন, সে যত দীর্ঘমেয়াদীই হোক না কেন (না, বছরখানেক ধরে লকডাউনের হিসেবে আনা হচ্ছে না), নিজে নিজেই কোনো সমাধান নয়। লকডাউনের মধ্যেই আমাদের নতুন করে আক্রান্তদের খুঁজে বের করতে হবে, তাঁদের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন তাঁদের চিহ্নিত করতে হবে, আলাদা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে - এগুলো না করা হলে স্রেফ লকডাউন দিয়ে বিশেষ লাভ হবে না। আর, লকডাউনের চোটে এই বেসিক কাজগুলো যদি বিঘ্নিত হয়, তাহলে লকডাউন উল্টে বিপদ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
কথাটা আমার নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হর্তাকর্তারা বলেছেন।
২. ন্যূনতম গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু না রাখলে বাকি যেসব পরিষেবা চালু রয়েছে বলে জানানো হয়েছে, সেগুলোও ঝামেলায় পড়ে যেতে পারে। যেমন ধরুন, গত দুদিন ধরে, কাজের জায়গায় পৌঁছাতে স্বাস্থ্যকর্মীদের কালঘাম ছুটে যাচ্ছে।
অল্পসংখ্যক সরকারি বাস চলুক - বাসে চাপার সময় দেখে নেওয়া হোক সচিত্র পরিচয়পত্র, যাচাই করে নেওয়া হোক সত্যিসত্যিই তিনি আপতকালীন পরিষেবার সাথে যুক্ত আছেন কিনা - কিন্তু, শহরের মধ্যে বাস চালু থাকা জরুরী।
৩. যেসব জায়গায় সফলভাবে লকডাউন কার্যকর করা গিয়েছে, সেখানে লকডাউনের দিনগুলোতে বাড়তি কিছু বন্দোবস্ত ছিল - যে ব্যবস্থাগুলো না থাকলে লকডাউন সফল হতে পারত না।
সফল লকডাউনের মাধ্যমে অসুখ নিয়ন্ত্রণে আনার সেরা উদাহরণটি চিনদেশের - শুধু সেকারণেই সেদেশের উদাহরণ দিচ্ছি - চিনপ্রেমের পেছনে অন্য কোনো কারণ খুঁজতে বসবেন না, প্লীজ। সেদেশে, উহান অঞ্চলে, লকডাউনের সময় প্রতিদিন যাঁরা ঘরবন্দী ছিলেন, তাঁদের বাড়িতে বাড়িতে দুবেলা খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। করোনার উপসর্গ ছাড়া অন্যান্য অসুস্থতার ক্ষেত্রে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে অসুখের দাওয়াই জানানো ও ওষুধ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল। এদেশে এই কাজগুলো এতখানি নিখুঁতভাবে করা সম্ভব কিনা জানি না - কিন্তু, অনুরূপ কোনো ব্যবস্থা ছাড়া লকডাউন ব্যর্থ হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা।
ঘরবন্দী মানুষের প্রাত্যহিক প্রয়োজন মেটানোর কোনো বন্দোবস্তের উল্লেখ ছাড়া, দেশ জুড়ে শুধুমাত্র লকডাউনের কথা বলে দেওয়া, প্রায় নজিরবিহীন।
৪. শেষ পয়েন্ট হিসেবে বললেও, এটিই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের বাকি দেশগুলো, যেখানে লকডাউন নিয়ে ভাবনাচিন্তা হয়েছে - প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রে সাথেসাথেই ঘোষিত হয়েছে লকডাউনের সময় কাজ হারানো মানুষগুলোর জন্যে বিকল্প বন্দোবস্ত - আর্থিক সহায়তা, খাবার, ভাতা ইত্যাদি। এদেশে এই কাজ আরো জরুরী, কেননা দেশের নাগরিকদের অধিকাংশই কাজ করেন অসংগঠিত ক্ষেত্রে - এবং কাজে না যেতে পারলে, তাঁদের আয়ও নেই। এই রাজ্যে, রাজ্য সরকার এধরণের কিছু ভাবনার কথা বললেও, দেশব্যাপী লকডাউনের ঘোষণার সাথে সাথে কেন্দ্রীয় স্তরেও এবিষয়ে কিছু ভাবনার উল্লেখ ছিল জরুরী - দুর্ভাগ্যজনক, তেমন কিছুই জানা গেল না। এই বন্দোবস্ত ছাড়া দীর্ঘ লকডাউন লাগু করার অর্থ - বিপুল সংখ্যার মানুষকে নিশ্চিত অনাহারের দিকে ঠেলে দেওয়া - এদেশে করোনা মহামারীর আকার নিলে কজন মারা যেতে পারেন, তার পূর্বাভাস দিতে না পারলেও, উপযুক্ত ব্যবস্থা ছাড়া গরীব মানুষের উপর দীর্ঘমেয়াদী লকডাউন নামিয়ে আনলে অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যাটা তার চেয়ে কম কিছু দাঁড়াবে না। এবং, দ্বিতীয়ত, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অনাহারক্লিষ্ট মানুষ যে-করেই-হোক কিছু উপার্জনের আশায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লে লকডাউনের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হওয়া নিশ্চিত।
আবারও বলি, লকডাউন নিজে নিজেই কোনো সমাধান নয়। লকডাউন অসুখ সারায়ও না, অসুখের বিরুদ্ধে সমষ্টিগত প্রতিরোধের ক্ষমতাও তৈরী করে দেয় না। বাকি সব ব্যবস্থাগুলোর সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করা গেলে লকডাউন, অবশ্যই, খুব কার্যকরী ব্যবস্থা - কার্যকরী মহামারীর ভয়াবহতা ঠেকানোর ক্ষেত্রে, কার্যকরী একজন মানুষ থেকে অন্যজনের শরীরে সংক্রমণ ঠেকিয়ে রাখতে, কার্যকরী অসুস্থ মানুষের সংখ্যা কমিয়ে রাখতে, যাতে আমাদের পরিকাঠামো দিয়ে সেই সীমিতসংখ্যক মানুষের সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা যেতে পারে - কার্যকরী, আরো প্রস্তুত হওয়ার জন্যে সময় কিনতে। কিন্তু, মনে রাখুন, এগুলো সবই হতে পারে - যদি লকডাউনের সাথে সাথে বাকি ব্যবস্থাগুলোও নেওয়া হয়, তবেই।
লকডাউনের বিপদগুলোও কিন্তু মনে রাখুন। ফাঁকফোকড় রয়ে গেলে, বা কোনো না কোনো কারণে লকডাউন ভেঙে পড়লে আচমকা মহামারী ভয়ঙ্কর আকার নিতে পারে - একদিকে প্যানিকগ্রস্ত মানুষ আর অন্যদিকে মহামারী-অনাহার-দারিদ্র্য, দুইয়ে মিলে আইনশৃঙখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া সম্ভাবনাও প্রচুর।
লকডাউন কার্যকরী অস্ত্র - বর্তমান অতিমারীর ক্ষেত্রে পরীক্ষিত অস্ত্রও বটে - কিন্তু, উপযুক্ত প্রয়োগপদ্ধতি ছাড়া এই অস্ত্র ভালোর চেয়ে খারাপ হয়ে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাটিও মাথায় রাখুন।
মুশকিল এই, গত কয়েকদিন ধরে শুধুই লকডাউন আর লকডাউনের মেয়াদ নিয়েই ঘোষণা শুনে চলেছি - আনুষঙ্গিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর কথা কিছুই কানে এলো না।
নাকি, গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো আমিই শুনতে পাই নি?? একটু জানাবেন, প্লীজ??
Shibshankar Upadhayay | 162.158.***.*** | ২৫ মার্চ ২০২০ ১৬:০৪91750
Rajkumar RAychaudhuri | 172.69.***.*** | ২৫ মার্চ ২০২০ ১৬:৩৬91751
Raju | 172.69.***.*** | ২৬ মার্চ ২০২০ ০৪:৩১91758
Raju | 14.***.*** | ২৬ মার্চ ২০২০ ০৫:১০91759
Raju | 14.***.*** | ২৬ মার্চ ২০২০ ০৫:১৮91760
Raju | 172.69.***.*** | ২৬ মার্চ ২০২০ ০৫:২৭91761
সৈকত | 188.114.***.*** | ২৬ মার্চ ২০২০ ১১:১৫91771