মার্কো পোলোর পিতা নিকোলো পোলোকে তাতার সম্রাট কুবলাই খান বলেছিলেন জেরুজালেমে যিশুর সমাধির উপর জ্বলে থাকা প্রদীপের তেল নিয়ে আসতে। আর কয়েকজন ধর্ম প্রচারক মানুষকে তাঁর দেশে নিয়ে যেতে। নিকোলো পোলোর কাছে পাশ্চাত্যের কথা শুনে অবাক হয়েছিলেন তাতার সম্রাট। নিকোলাই পোলো তাঁর ভাইকে মেফিও পোলোকে নিয়ে কনস্ট্যান্টিনোপল থেকে পুবে যাত্রা করেছিলেন। পৌছেছিলেন তাতার দেশে। সে ১২৫৬ সালের কথা। ফিরেছিলেন ১২৬৯-এ ভেনিস শহরে নিজের বাড়িতে। সেই প্রথম বাবার সঙ্গে মার্কোর দেখা। ১২৭১ সালে ১৭ বছরের মার্কোর প্রথম বাণিজ্য যাত্রা। সঙ্গে বাবা এবং কাকা। জয়িত্রি এসব জানে। জয়িত্রি এসব বলেছে মার্কোকে। মার্কো তার অতীত বিস্মৃত হয়েছে। অথবা এই অতীত তার অতীত নয়। নয়ই তো। মার্কো কোনো কিছুতেই স্পষ্ট কিছু বলতে পারে না। সে এক ভেনিস যাত্রী। যাত্রাপথে ভেনিস ভেবে কাযান শহরে এসে পড়েছিল ভোলগার ওপার থেকে। এখন জয়িত্রির কাছে নিজের অতীতের কথা শুনতে শুনতে মার্কোর ভিতরে ভেনিস জেগে উঠছে। কিন্তু কোন ভেনিস তা জানে না। এক সমুদ্রতীরের কথা বলছিল জয়িত্রি, মেক্সিকোর সমুদ্র উপকূলে রোদ পোহাচ্ছে কুমির। সে ইন্টারনেট সার্চ করে পেয়েছে। এখন ইন্টারনেট তাকে বিমর্ষ করে। ফেসবুক তাকে ভয় দেখায়। মার্কোর এসব নেই। মার্কোর আছে শুধু ভেনিস। আর ভেনিস ভেবে যে শহরে পা রেখেছে সেই শহর। কলকাতা থেকে আস্তানা, আস্তানা থেকে এই কাযান শহর।
লকডাউনের পর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের টুরিস্ট স্পট জনশূন্য। আর সেই সুযোগে সেই স্থানগুলিতে ফিরে আসছে সেখানকার আদি বাসিন্দারা। নিজেদের হারানো বাসস্থান যেন ফিরে পাচ্ছে বন্যপ্রাণীরা। মেক্সিকোর ওয়াক্সাকার সমুদ্র সৈকত। এখন দখল নিয়েছে সারি সারি কুমির। বনের পশু বেরিয়ে এসেছে। হাজার বছর ধরে গুহায় লুকিয়ে থাকা বাঘডাঁশা দিনমানে পথে ঘুরছে।
খবরিয়ার খবর ঃ
দূর পৃথিবীর কথা থাক, বরং মফঃস্বলে কী হচ্ছে তা দেখি।
দুপুর থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। টেলিভিশন বলছে দক্ষিণবঙ্গে ঝড়-বৃষ্টি হবে। কোথাও কোথাও হয়েছে নিশ্চয়। ঠাণ্ডা বাতাস আসছে। বৃষ্টি নেমেছিল কয়েক ফোঁটা, কিন্তু তেমন হলো না। তবে আবহাওয়া শীতল হয়েছে অনেক। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টি যেন মহাবিপর্যয়ের আতঙ্ক নিয়ে আসে। অনেক রোদ্দুর চাই। চাই অনেক উত্তাপ। উত্তাপ যেন আমাদের বাঁচিয়ে দেবে এমন ভাবনা আমাকে ঘিরে রেখেছে সব সময়। সেই রোদ্দুর নিয়ে এল সুবীর।
কোচবিহারবাসী কবি সুবীর সরকার বলছেন এক বয়স্ক দম্পতির কথা। তাঁদের একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়েছে অসমের নলবাড়িতে। দম্পতির বেঁচে থাকার অবলম্বন বাড়িতে পোষা কয়েকটি গরুর দুধ। দুধ বেচে সংসার চলে। বাড়িতে গরু পোষেন কয়েকটি। জামাই মাসে কিছু পাঠান। বয়সের কারণে কিছু ওষুধ খেতে হয় নিয়মিত। লকডাউনের দিনে উপযুক্ত গো-খাদ্য জুটছে না। দুধের ব্যবসাও মার খেয়েছে। জামাইয়ের টাকাও আসেনি এই মাসে। ওঁদের আগামী ছয় মাসের পুরো দায়িত্ব সুবীর ও তার স্ত্রী নিয়েছে। এই দম্পতি ভালো কীর্তন গাইতে জানেন। সুবীর তাঁর কীর্তন শুনে এসেছে এই যত্নের বিনিময়ে।
এবার দেখি আর এক ছবি। আসানসোলে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করার জন্য পুলিশ এবং সরকারি কর্মচারী গিয়েছিল। জামুরিয়ায়। উশৃঙ্খল জনতা কিংবা কিছু ব্যক্তি পুলিশকে আক্রমণ করে। আহত হয়েছেন পুলিশের এস আই। কদিন আগে, ১৪-ই এপ্রিল পাতিয়ালায় একটি সন্দেহজনক গাড়িকে আটকাতে গেলেন পুলিশ অফিসার। তাঁর হাত কাটা গেছে। কী ভয়ানক হয়ে গেছে কিছু মানুষ। লকডাউন মানে সব থামিয়ে রাখা। থামিয়ে ঘাতকের গতি রুদ্ধ করে দেওয়া। এইভাবে সে মরবে। কিন্তু মানুষ তা মানে কই ? পুলিশ এবং চিকিৎসককে আক্রমণ চলছে। চলছেই। সব কিছু লণ্ডভণ্ড করে দিতে চাইছে কেউ। কে জানি না ? হ্যাঁ, এর পাশে অন্য চিত্রও আছে। নিরীহ লোককে কতবার লাঠি পেটা করতে হবে ? হিংস্রতা, স্বার্থপরতা আমাদের ছেয়ে ফেলেছে কীভাবে এই মহামারির কালে তার এক কাহিনি বলি।
এক পুলিশ মার খাচ্ছে ডিউটি করতে গিয়ে, অন্য দিকে পুলিশ লুটে নিচ্ছে সামান্য তরমুজ বিক্রেতার সর্বস্ব। লকডাউনে কেন বেরিয়েছে সে ? উপায় নেই। তার খিদে কে মেটাবে ? যেখানে কাজ করত, সেই কাজ বন্ধ, তাই তরমুজ নিয়ে যাচ্ছে বাড়ি বাড়ি। তরমুজ তাঁর নিজের ফলানো ফসল। না বেচতে পারলে সব নষ্ট হবে।
এমন সময় রাস্তায় থেকে পুলিশ ডেকে বলল , এই কী করছিস, জানিস না লকডাউন - বাইরে বেরোনো নিষেধ
তরমুজওয়ালা ভীত হয়ে বললেন স্যার এই ফসল নষ্ট হলে বাঁচবো কী করে ?
পুলিশ টাকা আদায় করে ছাড়ছে। তরমুজওয়ালার ছিল ৩৮০ টাকা। ২০০ টাকা নিয়ে ছাড়ল। যা হয়ে থাকে তাইই হচ্ছে অনেক জায়গায়। এই অভিযোগ শুনেছি অনেক। সত্য মিথ্যা যাচাই করা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। তাঁদের বাইরে এইসব দুর্নীতিপরায়নরা আছেন।
মহামারি, যুদ্ধ, বন্যার সময়ে, আপৎকালীন অবস্থায় দু’রকমই ঘটে থাকে। ভালো এবং মন্দ। বাংলাদেশে তো ত্রাণের চালচুরি নিয়ে কত সংবাদ বেরিয়ে আসছে। গরিব মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছে না। আমাদের এখানেও এই অভিযোগ কম নয়। এই উপমহাদেশে তা ঘটেই থাকে। এদেশে ওদেশে। কিন্তু আরো মর্মান্তিক ঘটনার কথা ভেসে এল। মানুষের আতঙ্ক কতদূর রক্তের ভিতরে প্রবেশ করলে এমন হতে পারে। বাংলাদেশে এমন ঘটেছে। এদেশেও তা ঘটতে আরম্ভ করেছে।
ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে করোনায় মৃত পিতার লাশ নিতে অস্বীকৃতি জানালো সন্তান।
বাবা মারা যাওয়ার পর লাশটি এভাবেই ফেলে রেখে চলে যায়। PPE পরা সন্তানটিকে জানাজায় অংশগ্রহণ করবে কিনা জানতে চাইলে সে সাফ জানিয়ে দেয়, যাবে না’।
লাশ না নিলেও হাসপাতাল ছাড়ার আগে বাবার পেনশনের টাকা পাওয়ার জন্য সন্তানটি শুধুমাত্র ডেড সার্টিফিকেট নিয়ে চলে গেল। বাবার পেনশনের টাকা সন্তান ঠিকই গ্রহণ করবে, কিন্তু বাবার লাশ সন্তান গ্রহণ করবে না!
টাঙ্গাইলের সখিপুরে এরচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দেখা গেছে। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এমন সন্দেহে গভীর রাতে এক নারীকে জঙ্গলে ফেলে চলে গেলেন স্বামী এবং সন্তানরা। সোমবার (১৩ এপ্রিল) রাতে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাদিঘী গ্রামের এ হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে। পরে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ, নিয়ে যায় হাসপাতালে। তিনি সুস্থ হয়েছেন।
আবার দু’দিন আগেও চট্টগ্রামের পটিয়ায় করোনাভাইরাসে মৃত ৬ বছরের শিশুটির লাশ রেখে পালিয়ে যেতে পারেনি “বাবা”। এরই নাম হয়ত 'বাবা' এরই নাম হয়ত 'মা'।
সন্ধ্যায় কলকাতার এবং তার চারদিকে, দক্ষিণবঙ্গের কোথাও কোথাও ঝড় বৃষ্টি হয়েছে। টেলিভিশনে তার পূর্বাভাষ ছিল। আমাদের বেলগাছিয়ায় হয়নি। ঠাণ্ডা বাতাস পেলাম। দূরে কোথাও বৃষ্টি নেমেছে হয়ত। সন্ধে গেল নানা ভয়ের খবর শুনতে শুনতে। কোভিড-১৯, লাফাতে পারে তের ফুট। জলে বেঁচে থাকতে পারে, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এইসব কথা সত্য নয়। ভুল ব্যাখ্যা করেছেন টেলিভিশন চ্যানেল। বাঘ সংক্রামিত হয়েছে নিউইয়র্কে। আবার কুকুরেও সংক্রামিত হতে পারে। কুকুর থেকে কি মানুষে ছড়াবে? কলকাতার রাস্তা কুকুরে ভর্তি। আমার পাশের বাড়িতে গোটা চারেক ভয়ানক কুকুর। তারা আবার পথের কুকুরকেও খাওয়ায়। ভয় জাগছিল। কেউ কিছু স্থির করে বলতে পারছে না। তবে একজন আশ্বস্ত করল, কুকুর থেকে মানুষে সংক্রমণ হবে না। টেলিভিশনে শুনেছি ২০২২ হবে মুক্তি পেতে। এসব এত অনুমান করে লাভ নেই। কোভিড-১৯ থাকবে, আমরাও থাকব। আমাদের দেশে শতকরা ৮৫ ভাগের বয়স ৩৫-এর নিচে। আমরা কত মহামারি পার করেছি। আমরা অত সহজে হার মানব না। বরং ধীরে ধীরে সাবধান হয়ে উৎপাদন শুরু করতে হবে।
১৬.০৪
সকালে কবি তুষ্টি ভট্টাচার্য লিখলেন সেতার সরোদের তারের কথা। কথাটি সুরে বাঁধা, আলাদা। তারে বাঁধা। কে জানত সেতার, তানপুরা, সরোদ, একতারার তার বানানো হয় তুষ্টির বাড়ি শেওরাফুলির আগের ষ্টেশন বৈদ্যবাটি অঞ্চলে। সেখানে বাদ্যযন্ত্রের তার বানানোর কারখানা আছে। তিনি লিখছেন, যে তারে সুর বাসা বাঁধে, সুর বোনা হয় যে তারে, সেই তার যদি না থাকত, তবে কেমন করে বেজে উঠত সেতার, সরোদ, তানপুরা, একতারা? বীণাপানির হাতে তারহীন, বলা উচিত সুরহীন বাদ্য--এও কি সম্ভব? আসলে সেই নোটবন্দির সময় থেকে তার ছিঁড়ে গেছে কোথাও। বৈদ্যবাটীর তার তৈরির ছোট কারখানাগুলো তখন থেকেই ধুঁকছিল। যেহেতু কাঁচামাল আসে জার্মানি, অ্যামেরিকা থেকে। শুল্ক ঘাড়ে বোঝা হয়ে বসেছিল মালিকদের। এখন তো কর্মীরা প্রায় নিরন্ন দিন কাটাচ্ছে। লকডাউনের পরে ফিরে পাবে কি এই কুটিরশিল্প নিজের স্বরূপ? আবার কি দেশবিদেশের বাদ্যযন্ত্রগুলো ঝঙ্কৃত হবে নিখুঁত সুরে, তালে? যেহেতু এখান থেকে তৈরি হওয়া তারগুলো দেশেবিদেশে ছড়িয়ে পড়ত। মালিক, কর্মী সকলেই বিলাসে না থাকুক, সুখে শান্তিতে ছিল সুরের আঁতুরঘরে। জানি না, পরিণতি কী এরপর...
যার যেখানে তার বাঁধা, তিনি সেখানের কথাই লিখবেন। লকডাউনের কালে জানলাম তারের কথা। যে তারে সুর বাঁধে তার কথা। কতরকম পেশা মানুষের, সবই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এই ভয়ানক মহামারির দিনে। তার না হয়, মানুষের খাদ্য নয়, চাল, ডাল, তেল, নুন নয়। কিন্তু সেই সব শ্রমিকরা, যারা এই কাজ করেন, তাঁদের তো খাদ্য চাই। মানুষই সুরস্রষ্টা। মানুষ যেমন পৃথিবীকে ধ্বংস করেছে, মানুষ তেমন এই পৃথিবীকে সুর দিয়েছে, গল্প দিয়েছে, উপন্যাস দিয়েছে, চিত্রকলা দিয়েছে। দিয়েছে তাজমহল, নোতরদাম গির্জা, অজন্তা ইলোরা, সূর্য মন্দির। অন্ধকারে একা একা মনে হয়, বেটোফেনের নাইন্থ সিমফনি, হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়ার সং অফ দ্য রিভার, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর কন্ঠসুধা, লিওনারদো দ্য ভিঞ্চির মোনালিসা, তলস্তয়, দস্তয়েভস্কি, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দের উপন্যাস কবিতার পুণ্যে মহাপৃথিবী, প্রকৃতি মা আমাদের বাঁচিয়ে দেবে। সুর সুর সুর, সুরে সুরেই অদৃশ্য ঘাতক বিদায় নেবে।
আমি গতকাল ইপ্সিতা পাল ভৌমিকের সঙ্গে কথা বলেছি। ও আই সি এম আর--ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকাল রিসারচ এর বিজ্ঞানী। আমাকে চমৎকার ভাবে বুঝিয়ে দিল কীভাবে এর শৃঙ্খল ভাঙতে ভাঙতে নির্মূল করতে হবে কোভিড-১৯ ভাইরাসকে। গুরুচণ্ডালী গোষ্ঠী এক নাগাড়ে পোস্ট দিয়ে যাচ্ছে। ডাঃ নবনীতা নাগ যা লিখেছেন তা আমি শেয়ার করলাম। সাহস পেলাম।
কাদের করতে হবে COVID19 সনক্তিকরণ পরীক্ষা?
প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে মোকাবিলা করতে ICMR (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ) এর নির্দেশিকা অনুযায়ী নিম্নলিখিত সকলের জন্যে সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া আবশ্যক। ৩
১) সকল রোগী যারা (জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট উপসর্গ আছে) গত ১৪ দিনের মধ্যে বিদেশ থেকে ফিরেছেন।
২) সকল মানুষ যারা সরাসরি রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন।
৩) সকল স্বাস্থ্যকর্মী যারা সরাসরি রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন।
৪) সকল রোগী যারা গুরুতর অবস্থায়ে তীব্র শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা (জ্বর এবং কাশি এবং / বা শ্বাসের-স্বল্পতা) সহ সমস্ত হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
৫) উপসর্গহীন প্রত্যক্ষ এবং উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ যোগাযোগ, যিনি সরাসরি ভাবে COVID19 রুগীর সান্নিধ্যে এসেছেন তিনি যোগাযোগে আসবার ৫-১৪ দিনের মধ্যে একবার পরীক্ষা করণীয়।
প্রত্যক্ষ এবং উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ যোগাযোগ অন্তর্ভুক্ত হলেন, COVID19 রুগীর পরিজন যাঁরা রুগীর সঙ্গে গৃহবন্দি ছিলেন ও স্বাস্থ্যকর্মী যারা WHO নির্দেশিত পর্যাপ্ত সুরক্ষা অবলম্বন করে রুগীর শনাক্ত প্রক্রিয়া করেননি।
তাহলে সকলের জন্য টেস্ট করা প্রয়োজন নেই। র্যাপিড টেস্ট র্যাপিড টেস্ট করে সরকারকে বিঁধে লাভ নেই। তাঁদের অনেক চিকিৎসক উপদেষ্টা আছেন। ইপ্সিতা যা বলেছিল লকডাউন সরকারকে সময় দেবে করোনা হাসপাতালের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে। এই ফ্লুতে বৃদ্ধদের ঝুঁকি বেশি। যারা নানা অসুখে ভুগছেন, তাদের ঝুঁকি বেশি। যৌবন এই ফ্লুতে নিশ্চিন্ত। আমাদের এক বন্ধু আই ডি হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছে। তার বয়স ৬৪। মধ্যমগ্রামের প্রবীণ কাউন্সিলর ফিরে এসেছেন সুস্থ হয়ে। সুতরাং স্বাভাবিক বৃদ্ধদের ক্ষেত্রেও বিপজ্জনক নয়। আমাকে কবি ঋজুরেখ চক্রবর্তী বললেন, অমরদা, ফেসবুক যেন আতঙ্ক ছড়ানর জায়গা হয়ে গেছে। তুমি তোমার নিজের জীবনের নানা কথা লেখ। করোনা মোকাবিলা সরকার করুক। কথা ঠিক। একজন লিখেছেন করোনা জয়নগরে এসে গেছে। ২৭ কিলোমিটার মাত্র। যেন সকলের সন্নিকটে যাবে, আমার থেকে দূরে থাকবে। আগুন যখন লাগে দেবালয় থেকে প্রাসাদ, পর্ণ কুটির সব আক্রান্ত হয়। আমার বাসস্থানের ৫০০ মিটার দূরে সংক্রমণ হয়েছে বস্তিতে। হয়েছে হয়েছে। খুব কষ্টের জীবনযাত্রা বস্তিতে। ঘিঞ্জি। হয়েছে বলে ভয়ে বালিতে মুখ লুকোব ? বরং জানতে পারছি, সাবধানতা অবলম্বন করব আরো বেশি।
সকালে আর এস পি দলের মনোজ ভট্টাচার্য মশায় ফোন করেছিলেন। অনেকক্ষণ কথা হলো। সেই ৪৩-এর মন্বন্তরও উঠে এল। সেই মহামারির জন্য শুধুই ব্রিটিশ সরকার কেন, দেশীয় ধান-চালের ব্যবসায়ীদের, জমিদার জোতদারদের দায় কম নয়। মরেছিল নিম্নবর্গের মানুষ। এই মহামারি বস্তিতে প্রবেশ করছে উড়ান বাহিত হয়ে এসে, এবারও মরবে গরিব মানুষ। তবে এইসব মানুষের অন্তর্গত প্রতিরোধ ক্ষমতা এদের বাঁচিয়েও দিতে পারে।
১৭.০৪
মধ্যরাতে খুব মেঘ ডেকেছে। বাজ পড়েছে। ঘুম ভেঙে উঠে বসেছিলাম। জানালার ফাঁক দিয়ে বিদ্যুতের ঝলকানি ঢুকে পড়ছিল ঘরে। ভয় করল কাছাকাছি যদি বজ্রপাত হয়। মনে হচ্ছিল মহা বিপর্যয় আসন্ন। মেঘের এমন আক্রোশ যেন শুনিনি বহুদিন। কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলাম। তারপর তা থেমেও গেল,শুয়ে ঘুমিয়েও পড়লাম।
সকালের বাতাস ঠাণ্ডা। মনোরম। রোদ উঠেছে বেশ। সকালে ধারাবি বস্তি নিয়ে একটি লেখা পড়লাম অগ্নি রায় মশায়ের। পড়তে গিয়ে বাইরের আকাশ যেন ধোঁয়া-ধুলোয় ভরে গেল। দম আটকে আসতে লাগল। আমাদের বেলগাছিয়া বস্তি অমন নয়। ঘিঞ্জি বটে, তবে নরক নয়। ভিতরে খোলা চত্বর আছে। চমৎকার দোকান-বাজার আছে। চারতলা বাড়িও আছে। একটি বড় ওষুধের দোকান আছে যা সারারাত্তির খোলা থাকে। খুব জরুরি থাকায় আমি মধ্যরাতে গিয়ে ওষুধ এনেছি। উর্দু কবিদের সভায় গেছি। ভিতরে উর্দু ইস্কুলও আছে। কিন্তু ঘিঞ্জি বসতি, দিন আনি দিন খাই মানুষের সংখ্যাই বেশি। কতরকম মিস্ত্রিদের যে বাস ওখানে। কত রকম কাজ তাঁরা জানেন। ধারাবির সঙ্গে এর তুলনা হয় না।
অগ্নি রায় লিখেছেন...
‘এশিয়ার দ্বিতীয় মহাবস্তি এই বম্বের ধারাভি। নিয়তির ছ্যাঁকা লাগা। মোবিল, চামড়া, গদের আঠা, কাবাব, খোলা ড্রেন, কর্পূর এর বিচিত্র পাঁচমেশালি গন্ধের জনপদ। জটিল গলি, রেলিং, সিঁড়ি, উঠোন রান্নাঘর দোকানপাটের মধ্যে চলে পুতুলের মাপের সংসার, রান্নাবাটি। পুতুলের নাচ। বান্দ্রা সি লিঙ্কের দর্পিত স্কাই লাইনের ছায়ায় পড়ে থাকা আদ্যন্ত নরক আসলে।
কভিড ১৯ এখানে কামড় বসিয়েছে। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। নিঃসন্দেহে শবের সংখ্যাও।অবিশ্বাস্য ঘন এই বস্তিতে আগুন ধরলেই নেভাতে বহু মানুষের প্রাণ গিয়েছে বারবার। আর করোনা তো অদৃশ্য! ভাবতেও গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।
একবছর আগে এই এপ্রিলেই ভোটবাবুদের কভার করতে এখানকার বেড়া টিন কাঠ পাথর দিয়ে বানানো খুপড়িগুলো ঘুরেছিলাম। যেখানে এক বালতি জলের জন্য প্রাণকসম যুদ্ধ।
কেমন আছেন সাবিত্রী বড়েগরি এখন ? বা নেহা শরমিন ? একটি খোঁদলে, একমানুষ আঁটা দোকানে বসে সেলাই কল চালিয়ে সংসার নির্বাহ করেন সাবিত্রী। এত অনটনেও যিনি হাসলে পাঁচশো ওয়াটের আলো জ্বলে। সাবিত্রীদের মত অনেকেই রেশন কার্ড, বিজলি বিল-সহ যার যা কাগজ রয়েছে তা ব্যাগে পুরে মাথায় দিয়ে রাতে ঘুমোতে যান। নালার এ পাশে ও পাশে ছটাক জায়গা বের করে, একরাশ পাঁপড় বেলে রোদে রেখে শরমিন বলেছিলেন, ভোটবাবুরা বলেছেন এখানকার বস্তি ভেঙে বড় ফ্ল্যাট হলে সেই স্বচ্ছ ভারতে একটি পাকা বাসা পাবেন তাঁরা। তখন কাগজ তো লাগবে!
স্যনিটাইজার, মাস্ক বা কোনও স্বাস্থ্যবিধি ধারাভিকে বাঁচাতে পারবে না, যদি বরাত জোর এবং জন্মাবধি লড়াইয়ে তৈরি হওয়া সেল্ফ ইমিউনিটি মাঝে এসে না দাঁড়ায়। জন্মাবধি লড়াইও শুধু নয় বোধহয়। জন্মাবধি স্বপ্নও। একের পর এক বলিউড, হলিউড, টলিউড (তামিল)-এর বায়োস্কোপওয়ালারা এসেছেন এখানে, কাজ শেষ করে তাঁবু গুটিয়ে চলেও গিয়েছেন। কিন্তু তার রূপকথার স্মৃতি কাঁচের টুকরোর মত ছড়িয়ে রয়েছে। অন্ধকার ঘরগুলিতেও তা চিকমিক করতে দেখেছি আমি।
করোনা যেন এর সবটুকু কেড়ে না নেয়।'
আমার দরকার ছিল আটা, সাবানগুঁড়ো, সাবান, গোলমরিচ, বিস্কুট ইত্যাদি। একটু দেরি করে বের হলাম কেন না সব্জি সকালে বসলেও মুদিখানা দেরি করে খোলে। দোকান বন্ধ দোকানি সমর বাড়ি চলে গেছে ভয়ে। অন্য তিনটি দোকান আছে বটে বাজারে। একটি পুঁজির অভাবে মাল রাখে না বেশি। পারে না দোকানি। অন্য দুটির একটি নাকি আজ খুলবে না। অন্যটি কত দেরি করে খোলে। দুটি বন্ধ। স্বল্পপুঁজির দোকানি কিছু মাল এনেছে। তার কাছেই অনেকটা পেয়ে ফিরে এলাম কিছু ডিম কিনে। পাতিপুকুরের মাছের পাইকিরি বাজার বন্ধ। এ বাজারে মাছ আসবে না। ডিমেই চলবে। বস্তির দিকে অর্থাৎ বেলগাছিয়া মোড়ের দিকে কেউ যাচ্ছে না। ওদিকটা আটকে দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু ব্যাঙ্কে তো কাজ মিটছে না কারো। ন’টার সময় ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে দামী অ্যানড্রয়েড ফোন খুটখুট করছেন যে সুবেশা তরুণী তিনি কি অভাবী? পোশাক দেখে মনে হচ্ছে না তিনি ধুবুলিয়ার ন্যাশানাল হাইওয়ে ধরে সাতমাইল হেঁটে চলেছেন ৫০০ টাকার জন্য। সেই পাঁচশো টাকার জন্য আসেননি। কে কাকে নিবৃত্ত করবে ?
সাংবাদিক স্বাতী ভট্টাচার্য লিখেছেন সেই কথা...
'ধুবুলিয়ার দিকে যাচ্ছিলাম, দেখি এক বৃদ্ধা দুপুর রোদে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছেন। জাতীয় সড়ক দিয়ে হেঁটে হেঁটে কোথায় চলেছেন? হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, নাতনির মুখে শুনেছেন, অ্যাকাউন্টে নাকি ৫০০ টাকা দিয়েছে সরকার। খোঁজ নিতে হাঁসাডাঙা থেকে ধুবুলিয়া সাত কিলোমিটার হেঁটে ব্যাঙ্কে যাবেন বলে বেরিয়েছেন পঁয়ষট্টি বছরের সনকা ঘোষ। কাঠফাটা রোদ থেকে বাঁচতে ময়লা আঁচলটা মাথায় জড়িয়েছেন। ঘরে পাঁচটা লোক, রেশনের দশ কেজি চাল ছাড়া কিছু নেই। রাজনৈতিক দলের লোকেরা কিছু পরিবারকে সাহায্য করেছে, কিন্তু সনকারা পার্টি করেন না, তাই পাননি কিছু। রাস্তায় তখন ট্রাক ড্রাইভারদের খাবার ও জল দেওয়া হচ্ছিল। সনকাদেবীকেও দেওয়া হল।
আমার বাড়ির পাশের ব্যাঙ্কে কেন প্রতিদিন এত মানুষ জানি না। পাসবই এখন আপডেট হবে না, কেন হবে না ? বুঝুন ধুবুলিয়ার সনকা ঘোষ এঁরা নন। ব্যাঙ্কে আসা মানে সব নিষেধাজ্ঞা ভেঙে আসা। নিষেধাজ্ঞা ভাঙতে আমরা ভালোবাসি খুব। ব্যাঙ্কে ঘুরেই যেন আনন্দ। অথচ ব্যাঙ্কের কর্মচারীরা কী আতঙ্ক নিয়েই না পরিষেবা দিচ্ছেন। '
~~~
আমার এই দিনলিপি আমার একার নয়। সকলের দিনলিপি। সকলে কেমন আছেন এই পৃথিবীতে তা আমি লিখে রাখতে চাইছি আমার সাধ্যমতো। বুক ভেঙে গেল লাতিন আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের কথা জেনে।
বছরের এই সময় ইকুয়েডরের গুয়াকুইল শহরের রাস্তায় ভিড় জমে থাকে। এবার জনমানব শূন্য। সড়কগুলো খা খা করছে। কিন্তু রোজই রাস্তা থেকে কারও না কারও লাশ গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন। বাড়ির কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে তাঁকে রাস্তায় শুইয়ে দিয়ে যাচ্ছেন স্বজনে। হাসপাতালে আর জায়গা নেই। এই মারণ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শক্ত পরিকাঠামো নেই দেশটির। ইকুয়েডর যেন করোনা মহামারির সামনে হাঁটুমুড়ে বসে পড়েছে। যুদ্ধে হার স্বীকার করে নিয়েছে ইকুয়েডর।
ইকুয়েডর পুলিশ জানিয়েছে, তাদের দেশে করোনা মহামারির এপিসেন্টার গুয়াকুইল শহর থেকে গত তিন সপ্তাহে অন্তত ১ হাজার ৪০২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৭৭১টি ও হাসপাতাল থেকে ৬৩১টি লাশ। রাস্তায় যেখানে সেখানে পড়ে রয়েছে বেওয়ারিশ লাশ। অন্তেষ্টিক্রিয়ার সময়ও বাড়ির লোকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সেই সব লাশের শেষ আস্তানা হচ্ছে গণকবর। মহামারির সঙ্গে লড়াইয়ে হেরে যাচ্ছে প্রশাসন। ইকুয়েডর সরকার প্রকারান্তরে বলেই দিচ্ছে তার কিছু করার ক্ষমতা নেই। মরদেহ উদ্ধারকারী দলের প্রধান জর্জ ওয়েটেড জানিয়েছেন, দেশে মোট করোনা আক্রান্তের ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ গুয়াকুইল শহরের বাসিন্দা। গুয়াসেসের উপকূলীয় এই শহরটিতে এখনও পর্যন্ত ৪ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
গুয়াকুইল শহরের বাসিন্দারাই রাস্তায় এদিক ওদিক পড়ে থাকা মরদেহ তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য খবর দিচ্ছেন প্রশাসনকে। দেশজুড়ে কারফিউ জারি হয়েছে। চলতি মাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা করছে ইকুয়েডরের প্রশাসন।
~~~
বেলা বারোটা নাগাদ দিল্লিতে থাকা লেখক বোধিস্বত্ব ভট্টাচার্যর সঙ্গে কথা হলো। বোধি থাকে বসন্তকুঞ্জে। সদ্য বিবাহিত। দেড়-দুমাস আগে দিল্লির দাঙ্গায় ভয় পেয়েছিল খুব। গুজব, গুজব ভেসে আসছিল নিরন্তর। এখন ঘরে বসেই কাজ করছে। করোনায় সংক্রামিত হয়েছে তাদের ফেস-১ সংলগ্ন ফেস-২ এর এক বাসিন্দা। দিল্লিতে একটা সুবিধে আছে সব লেনদেন অনলাইনে করা যায়। পে-টিএম বা গুগুল পে দিয়ে দাম মেটাচ্ছে, বাড়ির দরজায় প্রয়োজনীয় দ্রব্য রেখে যাচ্ছে দোকানি। অনেক কথা হলো। সে আমাকে সাহস দিতে লাগল। আমার ভয় নেই বোধি। আমিও বারবার বলতে লাগলাম এই কথা। মেটিয়াবুরুজের শান্তনু ভট্টাচার্যর সঙ্গে কথা হলো তারপর। বলল, আক্রা ফটকে এক ইরানি পোশাক ব্যবসায়ী এসেছিলেন। তাঁকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। করোনা টেস্ট নেগেটিভ বেরিয়েছে। এমনিতে কোনো সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু বস্তি এলাকায় পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে। এক শ্রেণির মানুষ আছে যারা আইন মানতেই চায় না। এই রাজ্যে পুলিশ এত আক্রান্ত হয় কেন ? দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে এত ঘটনা ঘটত না।
দিল্লিতে বৃষ্টি হয়েছিল বিকেলে। বর্ষা থেমে যাওয়ার পর আকাশজুড়ে রঙের খেলা, রামধনু দেখা যেতে আতঙ্কিত, উদ্বিগ্ন রিমি মুৎসুদ্দি লিখল,
এইমাত্র বারান্দা থেকে রামধনু দেখলাম। সাত রঙা একটা অর্ধবৃত্ত। দিল্লির দূষণমুক্ত আকাশে রামধনু প্রথমবার দেখলাম। ছবি তুলতে ভুলেই গেছিলাম।
ওই যে সেই হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালাটা আমি ঘুমিয়ে পড়লেই জেগে ওঠে। কানের কাছে শুধু বলতে লাগল 'ছবি তোল ছবি তোল'। রামধনু ততক্ষণে অর্ধবৃত্ত ভেঙে ফেলেছে.. এখন বোধহয় দূরে অশ্বত্থ গাছের পেছনে খানিক জিরান অথবা গল্পগাছা...।
~~~
ভিবজিয়র! মার্কো বললেন, একবার গঙ্গার মোহনায় সুন্দরবনের নদীতে, নদীর নাম গোমর হতে পারে, নদীর নাম বিদ্যা হতে পারে…
কথা কেড়ে নিয়ে জয়িত্রি বলল, নদীর নাম ভোলগা হতে পারে।
হাসলেন মার্কো, বললেন, ভোলগার উপরে চাঁদনি রাতে সাতরঙের ধনুক দেখেছিলে তুমি।
জয়িত্রি বলল, হ্যাঁ, তাই, আমি আর অ্যালেক্স, আমরা ভোলগায় একটি বজরায় ছিলাম, পূর্ণিমা রাত্রি ছিল, চাঁদের আলোয় নদীর জল রূপালি স্রোতে বয়ে যাচ্ছিল, তখন বৃষ্টির পর এপার ওপারে সেই সাতরঙের ধনু, পৃথিবী এক এক সময় এত সুন্দর হয়ে ওঠে!
তুমি সুন্দরকে সুন্দর বলে চিনতে পার, তাই সুন্দর, তুমি সুন্দর না বললে সুন্দর হতো কী করে সে ?
জয়িত্রি বলল, কয়েক মিনিট পরে চাঁদের আলো ভেঙে সেই সাতরঙের ধনু হারিয়ে গেল।
মার্কো বললেন, এই রূপকে রূপ বলে চিনিয়ে দিতে মানুষকে রাখতেই হবে এই পৃথিবীতে, আমি ভেনিসের রূপ দেখতেই ভেনিসে যাচ্ছি জয়িত্রি।
জয়িত্রি চুপ করে আছে।
মার্কো জয়িত্রির মুখখানি দেখছিলেন সেই অপরাহ্ন বেলায়। আজ অঙ্কশাস্ত্রের অধ্যাপক অ্যালেক্স ফিরবে গ্রামের বাড়ি থেকে। জয়িত্রি সন্ধ্যায় তার সঙ্গে কাফেতে দেখা করবে। তারপর তারা আইজ্যাক অসিমভের গল্প নিয়ে কথা বলবে ঠিক আছে। মার্কো তাঁর ঘরে ভেনিসের ছবি তৈরি করবেন মনে মনে। ভেনিসের আকাশে রামধনু। দূরে বটবৃক্ষ। দূরে বহুতল। জানালায় মানুষের মুখ, হাতে গিটার, বাজিয়ে চলেছে সকলে। নিস্তব্ধ নগর জুড়ে বাজনা। গান। ভেনিসের ক্যানেলে পূর্ণিমা রাত্রি।
এই লেখা আরো দীর্ঘায়িত হোক। সাহিত্যিকের চোখে দেখা অতিমারীর জীবন্ত দলিল !
অসামান্য লেখা টি।
করোনা শুধু প্রাণে মারছে না, মেকি মুখোশও খুলে দিচ্ছে, আবার সামনে নিয়ে আসছে অনেক অখ্যাত মহৎ প্রাণ।
এই রাক্ষুসি শুধু নিচ্ছেই না, দিচ্ছেও অনেক। এ-এক চরম শিক্ষা।
ভয়াবহ জীবনের দলিল মেলে ধরলেন দাদা। প্রণাম আপনাকে।