সুভাষ মুখোপাধ্যায়, লেখকের চটি পায়ে গলিয়ে নিয়েই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। আমরা জানি, চটিতে রক্তপিপাসু পেরেকের বাস, এবং সন্দেহ নেই, তাঁর চটি-জোড়াতেও পেরেক ছিল, কিন্তু, এই কথাটি আজ বিশেষ করে স্মরণ করবার, প্রত্যেকটি পাটিতে এক জোড়া করে ডানাও চিক্ চিক্ জ্বলত; তাদের উপর ভর করে, তাঁর অনিন্দ্যসুন্দর কান্তির সাহচর্য গ্রহণ করে এবং না-করে, তিনি এক শতাব্দী পার করে দিলেন। কবির জন্মশতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে তাঁর স্নেহধন্য জয় গোস্বামী-র সম্পাদনায় ও অভীক মজুমদার-এর সহ-সম্পাদনায় ‘ফুল ফুটুক’ শীর্ষক এক বৃহদায়তন স্মারক-সংকলন প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি। কোনো আলোচনা-গ্রন্থ ঘিরে স্বতন্ত্র আলোচনার আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে কি না, বর্তমান আলোচকের কাছে এর সদুত্তর না-থাকলেও ‘গুরুচণ্ডা৯’ সংস্থার ‘পড়া-বই’ বিভাগের পরিচালকদের সঙ্গে একমত হতেই হয় যে, নানাসময়ের নানাজনের অভিমত একত্রিত করা এইরকম একটি স্মারক-সংকলনের লক্ষ্য, এবং আশা জাগে, এর ভিতর দিয়েই বাংলা কবিতায় সুভাষ মুখোপাধ্যায়-র স্থানাঙ্ক স্পষ্টতর ফুটে উঠবে। আলোচ্য বইটিতে ভিন্নমুখী লেখাগুলিকে সম্পাদকদ্বয় এমনভাবে পাঁচটি গুচ্ছে বেঁধে, সাজিয়ে দিয়েছেন যে, পাঠক তাঁর নিজস্ব প্রয়োজন অনুসারে পাঠ্যবস্তু নির্বাচন করে নিতে পারবেন।
যুগপৎ সুদীর্ঘ এবং নিবিড় আত্মনিবেদনের কারণে, অন্তত চার প্রজন্মের কবিতাপাঠকের সঙ্গে সুভাষ মুখোপাধ্যায়-এর সংযোগ ঘটেছে। প্রবোধচন্দ্র সেন (১৮৯৭-১৯৮৬), নীহাররঞ্জন রায় (১৯০৩-১৯৮১), অরুণ মিত্র (১৯০৯-২০০০) প্রমুখ প্রবীণ রসজ্ঞগণ যেমন রয়েছেন একদিকে, তেমনই, অপর প্রান্তে রয়েছেন আজকের রাকা দাশগুপ্ত ও অন্যরা। এত দীর্ঘ সময় জুড়ে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করার কাজটি সহজ নয়, এবং কেবল এই নিরিখেই তাঁর লেখার গুণমানের একটা স্পষ্ট ছবি দৃশ্যমান। ওদিকে, সময়ের চেহারাও বহুরঞ্জিত। পাঁচের দশকে জন্মগ্রহণ করা সাধারণ কোনো কবিতাপাঠক সুভাষ মুখোপাধ্যায়-এর প্রথম চারটি বইয়ের কোনোটারই প্রথম সংস্করণ চোখেও দেখেননি; ‘বিশ্ববাণী প্রকাশনী’ কর্তৃক প্রকাশিত সংস্করণগুলির উপর, অথবা হাত-ফেরতা বইয়ের বাজারের উপর তাঁকে নির্ভর করতে হত। সাতের দশকের গোড়ায় কেবল ১৯৬৬-তে ‘ভারবি’ কর্তৃক প্রকাশিত ‘কাল মধুমাস’-এর প্রথম সংস্করণ দোকানে পাওয়া যেত; তাঁর নতুন কবিতার বই বলতে ‘এই ভাই’ (১৯৭১) এবং চাঞ্চল্যসৃষ্টিকারী ‘ছেলে গেছে বনে’ (১৯৭২) বোঝাত। সুভাষ মুখোপাধ্যায় থেমে থাকেননি, কিন্তু কলেজ ক্যান্টিনের দেয়ালে এবড়ো-খেবড়ো হস্তাক্ষরে, লাল কালিতে আঁকা ‘প্রিয়, খেলবার দিন নয় অদ্য’ পঙ্ক্তিটি দেখে-দেখে যাঁদের চিত্তে একদা এক অন্যরকম ব্যঞ্জনা তৈরি হয়েছিল, তাঁরা অনেকেই তাঁর সঙ্গে আর পথ চলতে পারেননি, পুরোনো কবিতার আঁচেই তাঁরা বেঁচে রয়েছেন। ছয়ের দশকে জন্মগ্রহণ করা পাঠকদের অভিজ্ঞতা ও স্মৃতি হয়তো অন্যরকম; যে-ছেলেমেয়েরা আটের দশকে জন্মেছেন, তাঁদের পাঠ নিশ্চিত ভাবে আরও অন্যরকম। বহির্বিশ্বের চলনবলন এর চেয়েও বহুমাত্রায় দুর্জ্ঞেয়; আটের দশকের অন্তিম প্রান্তে বার্লিনের প্রাচীর ভেঙে পড়ল, এবং সে-ঘটনার মাত্র তিন বছর পর, দ্রষ্টা প্রিন্স পিটর ক্রপট্কিন-র ১৯১৯-র ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে-অক্ষরে ফলে গেল, ছিন্নবিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিঁড়ে পড়ল গোটা সোভিয়েত রাষ্ট্রব্যবস্থাটাই, এমনকি, মুছে গেল ‘লেনিনগ্রাদ’ নামটিও। সুভাষ মুখোপাধ্যায় এত কিছু দেখেছেন। ছশো আশি পৃষ্ঠার স্মারক-সংকলন ‘ফুল ফুটুক’ও এই সমস্ত ঘটনাবলির নীরব সাক্ষী।
এই সংকলনের চতুর্থ পর্বে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার পুনর্মুদ্রিত হয়েছে যাদের মধ্যে ‘আশি বছরের ভাবনাচিন্তা’ এক অত্যাশ্চর্য দলিল। সৃষ্টিশীল মানুষদের ভিতর এমন কিছু ভাবনাসূত্র রয়ে যায়, যা তাঁদের দৃষ্টিতে এতটাই প্রত্যক্ষ যে তা স্বতন্ত্র ভাবে উল্লেখ করার প্রয়োজনই তাঁর অনুভব করেন না। নিজের লেখার উৎসমুখ সম্পর্কে সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলছেন:
‘ ...আমার জীবনে কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তর একটা লেখা খুব ভাবিয়েছিল। সেটা হচ্ছে যখন সকলেই শুনতাম যারা লেখক কবি বা সাহিত্যিক তারা এই ধরনের একটা ভাব দেখাতেন যে তাদের সব কিছুই ভেতর থেকে আসে। যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত লিখেছিলেন যে আমার সব কিছুই বাইরে থেকে আসে [,] নিজের বাইরে থেকে [,] চারপাশের মানুষজন, জীবন, সেখান থেকেই আমার যা কিছু আবেগ প্রেরণা এ সমস্ত আসে। কথাটা আমার কাছে বরাবর খুবই মনে হয়েছে সত্যি, কেন-না যে ভাষা আমরা লিখি, যাকে আমরা নিজের ভাষা বলি [,] আসলে সে ভাষা তো নিজের নয়, চারপাশ থেকে নেওয়া, এবং ভাষা দিয়েই আমরা ভিতরের সঙ্গে বাইরের সম্পর্কটা বজায় রাখি।... ’ (‘ফুল ফুটুক’ পৃষ্ঠা ৪৫৯) ।
লেখকের এই পকেটকম্পাস-বিষয়ে সুভাষ-বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিতরূপে জানেন, কিন্তু তা জনসমক্ষে তুলে ধরে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে বিবেচিত হয়েছে, এমন মনে হয় না। কবির বজবজ পর্বের স্মৃতিরোমন্থনের সূত্রে ‘সালেমনের মা’-র সালেমন-এর বিবরণও এই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে। বাস্তব জগতের সালেমন-এর কথা অনেকেই জানেন, যাঁরা জানেন না, তাঁদের কথা ভেবে নিজের ভাষ্য পেশ করে আমি রসহানি ঘটালাম না, কেবল একটিই কথা তাঁদের জানাবার, কথক ঠাকুর সুভাষ মুখোপাধ্যায় এখানে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়-কেও পিছনে ফেলে এসেছেন।
এই সংকলনের দ্বিতীয় পর্বে নানা বয়সের পাঠক তাঁদের নিজ-নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে কবি, ছড়াকার, গদ্যকার ও নবপর্যায়ের ‘সন্দেশ’ পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুভাষ মুখোপাধ্যায়-এর কাজ বিচার করেছেন। ‘পরিচয়’, ‘শ্লোক’, ‘সুভাষ মুখোপাধ্যায়: কথা ও কবিতা’ প্রভৃতি কয়েকটি সর্বজনপরিচিত উৎসের সাহায্য নেওয়া হলেও, এখানেই সম্পাদকদ্বয়ের পরিশ্রম সর্বাধিক। ১৯৪২ থেকে ২০১৯, এই সুদীর্ঘ পরিসর থেকে অনধিক চল্লিশটি লেখা নির্বাচন করা, সব দিক থেকেই এক দুরূহ কাজ। এই অংশের অনেক লেখাই পাঠকের অভিনিবেশ দাবি করে, স্থানাভাবের কারণে আমরা মাত্র দুটি লেখার গুণ গাইছি; ‘দিগ্বিজয়ী পদাতিক’ শীর্ষক ইস্কুলসহপাঠী রামকৃষ্ণ মৈত্র-র দীর্ঘ স্মৃতিরোমন্থন এবং প্রবোধচন্দ্র সেন-র সুখ্যাত সন্দর্ভ ‘বাংলা ছন্দের নূতন সম্ভাবনা’। ‘দিগ্বিজয়ী পদাতিক’-র গল্পগাছা শুরু হচ্ছে ১৯৩৮-এ, ভবানীপুরের শাঁখারিপাড়ায়, এবং শেষ হচ্ছে আনুমানিক কুড়ি বছর পরে, উত্তর কলকাতার হেদুয়া-র সাঁতার-শেখার ইস্কুল-সংলগ্ন মাঠে; বাল্যবন্ধুর স্মৃতিচারণ পাঠান্তে গভীর সন্তোষ জাগে আমাদের মনে, এবং অসন্তোষ, ভাবি, বাড়তে-বাড়তে লেখাটি কেন একটা গোটা বই হয়ে উঠতে পারল না!
প্রবোধচন্দ্র সেন-র সন্দর্ভটি, ১৯৪২-এ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত কর্তৃক সম্পাদিত ‘পরিচয়’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এর দু-বছর পূর্বে, একুশ বছর বয়সের সুভাষ মুখোপাধ্যায়-এর ‘পদাতিক’, ভিন্ন-ভিন্ন কারণে হলেও, সর্বত্র ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল। প্রবোধচন্দ্র-ও বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছিলেন যে এক নতুন কণ্ঠস্বর বাংলা কবিতায় উপস্থিত, কিন্তু, একজন প্রকৃত তত্ত্বজ্ঞানীর মতোই, তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেননি। আলোচ্য সংকলনগ্রন্থে প্রবোধচন্দ্র-র লেখাটির একটি অংশ পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। সুভাষ মুখোপাধ্যায়-র ‘কবিতাসংগ্রহ’ সম্পাদনার সূত্রে সুবীর রায়চৌধুরী ওই লেখাটিরই অন্য অংশ উদ্ধার করেছেন (‘কবিতাসংগ্রহ ১’, গ্রন্থপরিচয় দ্রষ্টব্য)। দুটি অংশ আজ মিলিয়ে পড়লে মনে হয় কবির ছন্দশৈলী-বিষয়ে প্রবোধচন্দ্র-র মনে অসম্মতির ভাগই যেন বেশি। দুটি আপত্তি আমরা এখানে বেছে নিলাম; প্রথমত, স্বরবৃত্ত/প্রাকৃত ছন্দের স্বাভাবিক বাহন হচ্ছে চলতি বাংলা, এবং, এর বিপরীতে, মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্তের/যৌগিক ছন্দের স্বাভাবিক বাহন, সাধু বাংলা। প্রবোধচন্দ্র-র মতানুসারে, সুভাষ মুখোপাধ্যায় মাত্রাবৃত্তে এবং অক্ষরবৃত্তে/যৌগিক ছন্দে লেখার সময়ে চলিত বাংলার ক্রিয়াপদ ব্যবহার করে ছন্দের নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন। যে-নিয়মের উল্লেখ তিনি করেছেন সেটি এক সময়ে মান্য করা হত, এ-বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু, আমরা লক্ষ করি, সাধু ক্রিয়াপদের ব্যবহার কমে আসার সঙ্গে-সঙ্গে পুরোনো নিয়মটিই অচল হয়ে পড়েছে। প্রবোধচন্দ্র-র দ্বিতীয় আপত্তিও আজকের পাঠক স্বীকার করবেন না। ‘চীন: ১৯৩৮’ শীর্ষক কবিতাটির প্রথম স্তবকের তৃতীয় ও চতুর্থ পঙ্ক্তি উদ্ধার করে তিনি দেখিয়েছেন “মুক্তির ডাক” ও “সম্মান পাক” পর্ব-দুটিতে পুরো ছয় মাত্রা দিয়ে ও-দুটিকে নিরেট ভাবে ভরতি করে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু ও-ভাবে ভরাট করে দিলে অনেক স্থলে আমাদের কানে ধ্বনি-প্রসারের অবকাশ থাকে না, ফলে শ্রুতিমাধুর্য ব্যাহত হয়। তিনি আরও প্রস্তাব রেখেছেন যে, মূল লেখাটি অন্যভাবে সাজালে ধ্বনি-সৌন্দর্য ফুটে উঠত।
মূল পাঠ:
‘লাল নিশানের । নীচে উল্লাসী । মুক্তির ডাক
রাইফেল আজ । শত্রুপাতের । সম্মান পাক’
প্রবোধচন্দ্র কর্তৃক প্রস্তাবিত বিকল্প পাঠ:
‘লাল নিশানের । নীচে উল্লাসী । মুক্তি ডাক
রাইফেল আজ । শত্রুপাতের । সে মান পাক’
কবিতাপাঠক অনেকদিন আগেই মূল পাঠের দৃপ্ত ভঙ্গিমার সপক্ষে তাঁর সুচিন্তিত রায় দিয়েছেন, আমাদের কাছে নতুন কোনো ভাবনাসূত্র নেই। কবির সেই পুরোনো মন্ত্র আমরা স্মরণ করি: রাস্তাই একমাত্র রাস্তা।
‘চড়ানো ছিটানো’ শীর্ষক পঞ্চম পর্বে কবির ছেচল্লিশটি বাংলা ও তিনটি ইংরেজি অগ্রন্থিত রচনা সংকলিত হয়েছে; বলা বাহুল্য, এটিই স্মারক-সংকলনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিভাগ। রাজনীতির, কাব্যের, ব্যক্তিজীবনের ও বন্ধুপ্রীতির রসে সিক্ত এই রচনাগুলি পড়তে-পড়তে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে; মনে হয়, একটার পর একটা স্বীকারোক্তি শুনতে-শুনতে, প্রত্যয়ের উপর নেমে আসা একটার পর একটা আঘাত মাথা পেতে নেওয়া দেখতে-দেখতে, একজন সৃষ্টিশীল মানুষের ভাঙনেও আমরা যেন সুষমার কাতর মূর্তি দর্শন করছি। আমাদের মনে পড়ে যায়, জীবনানন্দ শতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত সাহিত্য-প্রশাসকদের ভরা সভায় তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘পুরানো পরিচিতরা জানেন কেন আমার কাছে এই মঞ্চ কিছুটা কাঠগোড়ার সামিল। আকৈশোর জীবনানন্দের অন্ধভক্ত হয়েও একটা সময় সঙ্কীর্ণ মতবাদের মাদকতায় আমি ছোটমুখে বড় কথা বলার স্পর্ধা দেখিয়েছিলাম।’ ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও কবি সের্জেই এস্নিন আত্মঘাতী হওয়ার পর, চরম দুর্দশাগ্রস্ত ভ্ল়াদিমির মায়াকভ্স্কি একটি কবিতায় লিখেছিলেন, মরে যাওয়ার চেয়েও বেঁচে থাকা কঠিনতর দায়। সুভাষ মুখোপাধ্যায়, নিজের মতো করে, এই সুকঠিন ব্রত অক্ষরে-অক্ষরে পালন করে গেছেন। তাঁর লেখায় উদ্দীপনার বর্ণ যত ফিকে হয়ে এসেছে, তত কঠোর হয়ে উঠেছে নিজের যৌবনের দিকে নিক্ষিপ্ত নিজের বার্ধক্যর দৃষ্টিপাত। ক্ষমতাবিস্তারের বিষ হতে নির্গত অমরতার উচ্চাশা মানুষের শুদ্ধতম ভাবনাকে টেনে নামায় ধুলোয়, মানুষের সমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা মুখ থুবড়ে পড়ে, স্পষ্ট বোঝা যে, সব যুদ্ধজয়ই আসলে পরাজয়ের পূর্বাবস্থা, কিন্তু তার অর্থ নিশ্চিতরূপে এই নয় যে, সাম্যপ্রতিষ্ঠার ও ন্যায়ধর্মের আদর্শ ম্লান, অথবা নিশ্চিতরূপে এও নয় যে, শার্ল ফুরিয়ে মনুষ্যসমাজকে ভুল বুঝেছিলেন।
‘ফুল ফুটুক’ স্মারক-সংকলনটিকে যাঁরা তাঁদের রচনা দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন, যাঁরা দুষ্প্রাপ্য লেখার নকল সরবরাহ করেছেন, সম্পাদনা ও আনুষঙ্গিক কর্মে যাঁরা আত্মনিয়োগ করেছেন, তাঁদের সকলের প্রতি পাঠকের ঋণ অপরিশোধ্য। পরিশেষে, দুটি বিষয়ে সম্পাদকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এক, বর্তমান সংকলনে কবির জীবনীপঞ্জি অনুপস্থিত। এপার বাংলার পাঠকদের ক্ষেত্রে এই রকম তথ্য-সহায়ক বাহুল্য বিবেচিত হলেও, যে-বিপুল তথ্যভাণ্ডার এই গ্রন্থের সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে, তারই একটা সংক্ষিপ্ত রূপ হাতের কাছে থাকলে ওপার বংলার পাঠকসমাজ উপকৃত হতেন। দুই, হিরণকুমার সান্যাল ও সুভাষ মুখোপাধ্যায়-র যৌথ সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘কেন লিখি’ কবির নবীনবয়সের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যার উল্লেখ থাকলে আজকের পাঠকরা হয়তো উপকৃত হতেন।
যাক এতদিনে বইটির প্রসঙ্গ কেউ আলোচনা করলেন। এটি যথার্থ ই একটি আকর কাজ হয়েছে। সমালোচক কে ধন্যবাদ।
"ক্ষমতাবিস্তারের বিষ হতে নির্গত অমরতার উচ্চাশা মানুষের শুদ্ধতম ভাবনাকে টেনে নামায় ধুলোয়, মানুষের সমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা মুখ থুবড়ে পড়ে, স্পষ্ট বোঝা যে, সব যুদ্ধজয়ই আসলে পরাজয়ের পূর্বাবস্থা,"
-- সমীক্ষাটি গুরুত্বপূর্ণ; চর্বিতচর্বণ নয়। সমালোচককে ধন্যবাদ।